এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  গান

  • ফসিল্‌স ---- বাংলা রকগান

    ইশান, সোমনাথ ও রজত
    আলোচনা | গান | ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ | ১৫৫৩ বার পঠিত
  • ইশান:

    ১।
    উনিশশো নব্বইয়ের গোড়ায় সুমন চট্টোপাধ্যায় যখন তাঁর ব্যারিটোন কন্ঠস্বর সমেত একা একটি আস্ত মঞ্চ জুড়ে আছেন, বোঝা ক্রমশ: কঠিন হয়ে যাচ্ছে, স্টেজে কলকাতার সফলতম একক অভিনয় হচ্ছে, না শুধু একখানি গান, ফসিল্‌স তখন কোথায়? গলা নয়, সুমনের গোটা শরীর দিয়ে যখন চুঁইয়ে পড়ছে ভদ্রলোক মধ্যবিত্তের জীবন কাহানিয়া, জীবন ও যৌবন, যৌনতা ও ফ্রাস্টেশন, যখন উচ্চারিত হচ্ছে "ভিডিয়ো ক্যাসেটে আর নিল সোফাসেটে বসে মিঠে খুনসুটি' ফসিল্‌স তখন হরিদাসের ডানার সুপ্তিতে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চুলোয় যাক এই ভদ্রজনোচিত রবীন্দ্রগান, এই বাস্তবধর্মী সুচারু অভিনয়শিল্প, এই সোচ্চার স্লোগান তখনও আস্তিনের আড়ালে। "এসব কি গান না জগঝম্প?' এই অভিযোগে এর পর একদিন কলামন্দিরের স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে হরিদাসের ডানাকে, এবং আলোকিত মঞ্চে আসবেন অঞ্জন দত্ত -- সেসব তখনও ফিউচার টেন্স। তখনও জানা নেই এসবের কুড়ি কি পঁচিশ বছর পরে সমবেত সুধীজনের সঙ্গীতপ্রিয় কানে ভিখিরি কুকুরের চিৎকারের মতো বর্ষিত হবে বাংলা রকগান -- " মগজে স্মৃতি আর পেচ্ছাপ/করোটিতে লেখে কেচ্ছা/ মা-বোন হয়েছে বেশ্যা/ আমি বাইসাইকেল চোর'। নজরুল মঞ্চে গাওয়া হবে "জোড়া সাইকেল সিটে/পারি তোমাকে লিফট দিতে/যৌনতা দেব ফ্রিতে/যদি সতীত্ব না চাস', আর হাজার খানেক যুবক-যুবতী তার গলা মেলাবে সেই উন্মত্ত উচ্চারণের সঙ্গে। রূপমের চুল ক্রমশ: লম্বা হবে, আর রকগান ও বিদ্রোহের ঝান্ডা নিয়ে ফসিল্‌স ক্রমশ: জ্যান্ত হয়ে উঠবে।

    ২।
    এখানেই দুম করে প্রশ্ন উঠতে পারে, বিদ্রোহ কার বিরুদ্ধে? রকভাষা কি ও কেন? এর উত্তর অত্যন্ত সোজা। রক একটি ভার্চুয়াল ভূমি, যেখানে নাকি বকাটে ছেলেপিলেরা আড্ডা দেয় দুপুরের ধুমকিতে। রকের ভাষাই অতএব রকভাষা, যথা, "কি জিনিস গুরু', যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারীবিষয়ক (যৌন) ওয়ানলাইনার। বা আরেকটু পরিশীলিত রকভাষার উদাহরণ "বিগ ব্যাং - বিগ ক্রাঞ্চ' -- বলে না দিলে বোঝা যাবেনা, ইহা, হেঁটে চলে যাওয়া যুবতীর পশ্চাদ্দেশের বর্ণনা, যেখানে প্রতিনিয়ত: সৃষ্টি ও ধ্বংস হচ্ছে দুনিয়াদারি। তো, বলার প্রয়োজন নেই, তবুও উল্লেখ থাক, এই ভাষা বঙ্গীয় সংস্কৃতি-সুধার পৃথিবীতে স্ল্যাং নামে পরিগণিত, অতএব অপাঙক্তেয়। এই অনার্য ভাষা, যা মূলত: অনার্য পৃথিবীর একমাত্র আত্মপরিচয়, তার প্রকাশ্যে আসা, বিদ্রোহ ছাড়া কি?

    ৩।
    তাহলে রক আর rock কি একই বস্তু? ফর্ম, কনটেন্ট আর সকল প্রকার সারপ্লাস মিনিং সহ? কলোনিওয়ালাদের rock আর কলোনাইজডের একফালি গুমোট রক কি এক? খেতে একরকম হতে পারে, কিন্তু নিউইয়র্কের ম্যাকডোনাল্ডস আর কলকাতার ম্যাকচিকেন কি একই বস্তু? হতে পারে? নিউইয়র্কে যারে ম্যাকডোনাল্ডস কয়, সে অতি দুচ্ছাই জিনিস, রাস্তার ধরের একচিলতে ঘুগনির দোকানের ডেলিশন ঘুগনির সঙ্গে তুলনীয়। নেহাৎই গরীব লোকের খাদ্য। আর কলকাতা বা ব্যাঙ্গালোরের ম্যাকচি হল দেবভোগ, দেবতার উচ্ছিষ্ট প্রসাদ। এর দায় ম্যাকডোনাল্ডসের নয়। প্রভুর লো-এন্ড মাল কলোনিপাড়ায় চিরকালই হাই ফাই জিনিস।

    অতএব। সাহেবি অনার্য খাদ্য কলোনিপাড়ায় গাঁইয়াদের কাছে হেভি কেতার জিনিস। সাহেবি হাগা হল গন্ধসুধায় ঢাকা। আর সাহেবি অনার্য উচ্চারণও আসলে অনার্য নয়, হাইফাই হাই এন্ড জিনিস।

    ৪।
    অতএব। rock ও রক এক নহে। রকভাষা ও রকের ভাষা এক নহে। fuck you এই সাহেবি (অনার্য) রকভাষার বাংলা বড়জোর "তোমার সাথে শোবো', যা আদতে বঙ্গের রকের ভাষা নয়। বরং কলোনিওয়ালার রকের ভাষা মিমিক্রি। যা একপ্রকারের বাঁদরনাচ। ডুগডুগি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কলোনিপ্রভু, তিনি বলিলেন "মনা, এবার একটু বিদ্রোহ করে দেখাও তো' , এবং পোষা বাঁদর উগরে দিল শেখানো বিদ্রোহের দাঁতখিচুনি। বাংলা রকগান এইরূপ বিদ্রোহ। যা বিদ্রোহের মিমিক্রি।

    ৫।
    এইভাবে বিদ্রোহ ক্রমশ: বিদ্রোহের মিমিক্রি হয়ে যায়। উন্মত্ত চিৎকার খুঁড়লে দেখা যায় কলোনির ফসিল। বাংলা রকভাষার আর রকের ভাষা হয়ে ওঠা হয়না, সে শেষমেশ মার্জিনের এধারেই থেকে যায়।

    সোমনাথ:
    দুটো শব্দ ওলটপালট হয়েছে, মগজে নয়, মস্তিষ্কে, আর ডবল নয় চোরাই। ফসিল্‌স, হ্যাঁ মাঝের হসন্তটা শুদ্ধু ফসিল্‌স। সব গানের লিরিক ও মিউজিক রূপমের, শুধু প্রথম ক্যাসেটে ""নিষ্ক্রমণ"" গানটার মিউজিকে দীপের হাত সঙ্গে আছে।

    রূপম থেকেই শুরু হোক, কারণ "হরিদাসের ডানা" এবম্বিধ তার রক গানের দলের নাম আমার জানা ছিল না। "শঙ্খচিল" ও নয়, যা কিনা শোনা যায় রঞ্জনপ্রসাদকে পাশে নিয়ে হেঁটেছিল। কুকুর ভিখিরি হলে কত জোরে চিৎকার করে বা তার সারপ্লাস মিনিং-এর চাদরের বাইরেই দাঁড়িয়ে, যখন ফসিল্‌স-এর অ্যালবাম বেরোয়নি, কিন্তু নাম শোনা গেছে, প্রেসিডেন্সী কলেজে, মিল্যুতে, কি আশ্চর্য তখনও মঞ্চে অঞ্জন দত্ত, এবার আগেই অবশ্য, আর রাত বাড়লে মেট্রো পাওয়া যাবেনা, হোস্টেলে ফেরার তাড়াও থাকবে, তাই হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর জুড়ে গড়ে উঠতে থাকা অজস্র গানের দলের একটাকে নেহাৎ উপেক্ষা করেই, ফিরে আসা - ফেরাটাই থেকে যায় স্মৃতিধার্য। ২০০৫ এ দাঁড়িয়ে ২০ কি ২৫ বছর আগের কথা বলা, মানে ১৯৮০-৮৫, অজানাই থাকে তাই রূপমের প্রথম বা দ্বিতীয় ব্যাণ্ড, শুধু মনে আছে ১৯৯৮ তে বেরিয়েছিল ওর একক অ্যালবাম, আর ২০০০ -এ -- এই তো বললাম, প্রেসি-র মঞ্চে ফসিল্‌স গাইছে, নামিয়ে দেয় নি কেউ, মিল্যুর রাতে গান আর কার কানে যায় - চোখের ইঙ্গিতে হাত-পা ছোড়ার খেলায় বন্ধুর সঙ্গে তখন হাতবদল অচেনা স্লিভলেস।

    রক ও Rock এর ভাষার সমীকরণ গড়া, যার একটু পরেই টেনে আনবো অসমীকরণ - এ ট্রাপিজের বাইরেই থাকি কারণ ভাষার এই ঔদ্ধত্য আমার মনে হয়নি নেহাৎ অবচেতন অনুকরণ। এ এক দীর্ঘ প্রস্তুতি, বাঙালীর কিংবা মিয়ানো বাংলা ভাষায় ক্লান্ত কলমগুলোর, কারণ ফসিল্‌স-২ তে "ত্যারো" কিংবা "অ্যাক" লেখার ছয় বছর আগেই রূপমের সোলো অ্যালবামের ইনলে-তে গান লেখা হচ্ছে, যার বানানে "গ্যাছে", "দ্যায়" লেখা। অথচ লেখা হচ্ছে "ইক্যুয়ালটু", "রিফিউজাল", আর ফসিল - ২ তে এসে আমরা দেখবো ইস্তেহার - ""এই Album -এ ব্যবহৃত বানানের ক্ষেত্রে উচ্চারণভিত্তিক পদ্ধতি অনুসৃত হ'ল। অবশ্য "অ" এবং "ও", বর্ণদ্বিত্ব এবং "(য-ফলা)" উচ্চারণের সব অসঙ্গতি দূর করা যায় নি। English শব্দ ( Proper name ) বাদে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে English হরফেই লেখা হ'ল। অবশ্য হিন্দি শব্দ হিন্দি হরফে ছাপা গ্যালো না।""
    এমন নয় প্রথম ক্যাসেট - "তোর ভরসাতে"-র Inlay card -এ ইংরেজিতে লেখা যেত না। "ভাঙা তরণী" গানের রেফারেন্স এ লেখা তো ছিলই - "" ( This song is based on the theme and dialogues of TITANIC ) ""।
    তবে? রূপম ভাঙছে। তিন বছরে গানের লিখিত রূপ নিয়ে ওর চিন্তা বদলেছে একটু হলেও। তিন বছর- কেননা ফসিল্‌স প্রথম ক্যাসেট বেরোয় ২০০১-এ।
    লেখ্যরূপ নিয়ে এই ভাবনা কি প্রভাব ফ্যালেনি গানের ভাষায়? শুধুই বকাটে ছেলেপিলেদের রকের অনার্য শব্দ আমদানিতেই এর বিদ্রোহ শুরু এবং শেষ! কারণ অনার্য এই শব্দ - ধরা যাক "বাওয়ালি" প্রথমবার যা ক্যাসেটবদ্ধ গানে শুনলাম ফসিল্‌স-২ তে - তা বহনের এই উত্তরাধিকার কি বহুদিন আগে সেই সন্দীপন থেকে শুরু হয়ে জয় শ্রীজাত চন্দ্রবিন্দু এমনকি শিলাজিৎ নচিকেতায়ও অর্পায়নি? বিদেশী rocksong এ ব্যবহৃত ভাষার অনুকরণে লেখা শব্দাবলী - যা কিনা বাঙালীর রকের ভাষা নয় - গানে এলে তা ব্যর্থতার দ্যোতক তখনই যদি ম্যানিফেস্টো দাবি করে অনার্য শব্দের হ্যালোজেনায়নই তার মোটো। ফসিল্‌স-এর প্রথম ম্যানিফেস্টো কি বলে? -
    "চলমান এবং স্থবির সময়ের, দ্বিধাগ্রস্থ সংশয় ও নির্লজ্জ অভিনয়ের বরফ শীতলতা এবং অসহনীয় উত্তাপ সহ্য করেছি। এই চিরন্তন সর্ব্বংসহা এবং প্রতিশোধস্পৃহী existence -এর পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। এই মুহূর্ত্তে extreme close-up । প'ড়ে নাও অনাবিষ্কৃত হরফে .... ""
    এখানে কোথায় উত্তর কলকাতার প্রত্নরকভাষা উদ্ধারের হাহাকার - যে ব্যর্থতার সংকীর্তনে নীল হয়ে যেতে চাইব!!

    ফসিল্‌স-২ তে ""ক্যানো করলে"" --তে স্নিগ্‌ধতা, বন্ধক, তীব্রতা, অ্যাক বিশ্ব বিস্ময়, নিহন্তা, শাস্তি যাবজ্জীবন, রাজকন্যা, দীর্ঘশ্বাস, যামিনী --- রকের ভাষা!!
    "মানববোমা"- য় ""তোমায় ভালোবাসবো বলে / দেখতে চাইনা আর তোমায় / তুমি বয়ে যেতে পারো / বেছে নেওয়া নর্দমায়""
    এই লেখাকে মুখের ভাষা বলে স্বাগত জানাতাম, কিন্তু রূপমের প্রায় সব গানের মতোই এখানেও লিরিক বা পদ্যভাষার ডিকটেশন চোখে লাগে। "তোমায় আর দেখতে চাইনা" - এই গদ্যবন্ধ এড়িয়েই যায় রূপম। মুখের ভাষা থেকে তবু দূরেই রয়ে যায় ফসিলের গান - কিংবা স্বীকৃত কাঁচা হাতের পদ্য পর্যন্ত এগোতে পারে।

    মিলের সহজ প্রত্যাশায় লেখা হয় "ছাল" গানে --- "পেলে ক্ষিধে / ক্রুশে বিঁধে / ছুরিকাঁটায় / ছাল ছাড়াবো" । এখানেও "ক্ষিধে পেলে" শুনতে পাইনা। "হারানো পদক"এ রূপম লেখে - " এ বস্তুবাদের আবাদে/ তোমার পুনর্জন্ম হোক/ পড়ে মৃত্যুপুরীতে/ তোমার হারানো পদক" বা "আত্মাকে পিছু ফিরতে মানা করিনি/ কোনও তীর্থে দেওয়া হয়নি পিণ্ডদান/ কবরে চিতাতে তার দেহ আমি নষ্ট করিনি/ তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সাজিয়েছি মকান"। "তৃতীয় বিশ্ব" গানে আসে "অবুঝ বিপদগামী", "তোমার থাকা তোমার খাওয়া/ নগদ টাকা দেবো মাসে/ চারটে দেওয়াল অ্যাকটা দরজা/ অ্যাকটা হৃদয়ও surplus -এ/ মৃত শহরের যত খুশি রাস্তা/ ধূসরতা ধুয়ে দেবো/ শুধু অযোগ্যদের স্বপ্ন/ থেকে তুমি কেড়ে নেবো"।

    আমার মনে হয় রূপমের লেখায়, যা কিনা ফসিল্‌সের গান ও বটে, কোনো অনার্য ভাষা বা শব্দাবলীকে সামনে নিয়ে আসার আকুতি নেই, আছে একটা প্রবল ঘৃণার প্রথম সফল গীতিরূপায়ন। ওরা website -এ নেগেটিভ এনার্জি, অ্যান্টি এস্ট্যাবলিশমেন্টের কথা বলে, দাবি রাখে ভালোত্ব, সুস্থতার বাণী দিয়েই যে সামাজিক ক্ষতগুলোর মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় এ বিশ্বাসের বেড়া পেড়িয়ে ওরা এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে নেগেটিভ কে নেগেট করে আরেক নেগেটিভ। ব্ল্যক মিউজিক আক্ষরিক অর্থে হয়তো পুরোটা নয়, তবু ফসিল্‌স -২ তে গানগুলো বাঁক নিয়েছে প্রবল ঘৃণা আর বেপরোয়া ব্যঙ্গে, যেমন নর্দমায় থুতু ফেলতে অস্বস্তি থাকে না। আশ্চর্য, শব্দচয়নে কিন্তু ফিরে আসছে প্রচুর তৎসম অনুরাগ, যুক্তাক্ষর বাহুল্য। মনে পড়ে গণসঙ্গীতগুলো, হেমাঙ্গ বিশ্বাস আমলে ফিরে গিয়ে, যে ধ্বনিগুলো বিশ্বাস, আদর্শ কে আয়না দেখাত - কয়ারের গানের মতো, পার্টির ম্যানিফেস্টোর মতো, একেবারে তাত্বিক অভিধান ঘেঁষা, "কেন্দ্রীয় অর্থনীতি/ ব্যস্ত আগলাতে সম্প্রীতি" "সাম্যবাদী উঞ্ছবৃত্তি/ কারণ চোখ টানে সমৃদ্ধি" -- রূপমের কলমে ঘৃণা ক্রমশ: প্রাত্যহিক মৌখিক ভাষার বিপ্রতীপে এক লিখিত ভাষাকে, এক সাহিত্যমিথানুগ ভাষাকে আঁকড়ে ধরে, যার গায়ে অথচ লেপ্টে রয়েছে ইংরেজি, বহু ইংরেজি word যেন সরকারী আফিসের দেওয়াল পানের পিকে ছোপ ছোপ কুষ্ঠ নিয়ে, তবুও সাবলীল! - "নেপথ্যে প্রেম আর ঘৃণা সম্মুখে/ আত্মমৈথুনের ঘৃণ্য শহরে" "তার বিক্ষিপ্ত বাজে বকওয়াজ/ মাঝে মাঝে ওত।। হয়ে যায়/ উৎক্ষিপ্ত কোনো উপগ্রহের ফেরে/ প্রেম হয়ে ফের রাধাকে কাঁদায়"।

    ফসিল্‌সের দাবি মিউজিকে অনন্যতা, নির্লজ্জ টোকা সুর নয় , জানিনা কারণ খুব বেশি English Rock শোনা নেই, Hard Rock তো আরও নয়, কিন্তু অবাক হয়ে দেখি কলমের অপরিণতি কিভাবে ঢেকে দেয় সুর আর যন্ত্রানুষঙ্গ। সোজাসুজি বলা যাক রূপমের লেখার হাত কিছু অসাধারণ ভালো নয়, কবি-র নয়। প্রচুর লাইন শুরু হয় স্বরবর্ণে বা "ক" দিয়ে, প্রচুর পরপর লাইনে একই শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণে ঘুরে ফিরে আসে, মিলের জন্যে সস্তা বাক্যবন্ধ চলে আসে - "প্রেম ভালোবাসা নামে এই বাওয়ালির/ চেয়ে ঢের সোজা সালভাদর দালি-র/ ছবি বোঝা" (শাস্তি) "সেই জেহাদির মাথার দামটা কত;/ কত'ই বা দাম কথার/ অ্যাক দাম নাকি দরদাম হতে পারে/ তার সেই নাশকতার" -তিন লাইনে চার বার "দাম" শব্দটা, "আমার পুড়িয়ে দিয়েছে সব শুদ্ধতা/ আমার ভুলিয়ে দিয়েছে সব মুগ্‌ধতা/ আমি যে কবে শিকল ভেঙেছি/ আমি যে কবে রক্তে রেঙেছি" - এসব লাইন অনেক দূরে সরে যায় সৈকত কুণ্ডু, চন্দ্রিল-অনিন্দ্যের কাব্যঘেষা লিরিক থেকে। স্লোগান মুখর দমচাপা এই গানের শরীর - না - বিগ ব্যাং বিগ ক্র্যাঞ্চ এর সূক্ষ্মতাকেও আশ্রয় করে না, বস্তুত চড়া স্থুলতাই এর আশ্রয় - আপাত মনে হয়।

    তাই চমকে উঠি, যখন "কোনো প্রেমিকের কঙ্কাল পুজো হয়/ কোনও Museum -এ" র মতো কৃত্রিম লাইনের পরেই শুনি " কোনও নিহতের নামে ক্ষমা চেয়ে চিঠি/ আসে রোজ নীল খামে" "শাস্তি দে , দে শাস্তি দে, দে শাস্তি দে" লাইনটা হঠাৎ করে আক্রমণ করে আমায়। আপাত শোনা কেতাবি শব্দগুলোর পিছনে একটা "ব্লব" নড়তে থাকে, একটা "লেভিয়েথন" জাগতে চায়। দৃশ্যত: ""জোড়া বাইসাইকেল Seat -এ" যখনই প্রকৃত প্রস্তাবে " চোরাই বাইসাইকেল Seat -এ/ পারি তোমাকে Lift দিতে" হয়, সংকটের চেহারা পাল্টায়, "যৌনতা দেবো Free তে/ যদি সতীত্ব না চাস" লাইনদুটো একটা মানে পায়, গায়কের রকভাষা নয়, এ এক চোরের মূল্যবোধের অনুলিপি, তার ভাষ্যে তাই - ফালতু, কেচ্ছা, বেশ্যা, মাল, খিস্তি খেউড়, তাবড় সবই অক্লেশে ঢুকে যায়। ক্লাস এইটে উঠে যে জন্যে কেউ চক নিয়ে দেওয়ালে লিখে ফেলে "পেচ্ছাপ" শব্দটা, তার থেকে রূপমের গান আলাদা হতে থাকে যখন পুরো লাইনটা লেখা হয় - "মস্তিষ্কে স্মৃতির পেচ্ছাপ" - ভিখিরি কুকুরের অনুষঙ্গে আসা স্ল্যাং নয়, তিনটে শব্দে প্রথম আর তৃতীয়টির যুক্তাক্ষরের উচ্চাবচে "মগজে স্মৃতির " এই মাত্রাবৃত্তীয় ফ্ল্যাট তাল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় লাইনটি, আর শব্দ তিনটে - সারপ্লাস মিনিং বললে তাইই - গভীরে খুঁড়তে থাকে অন্যতর অর্থাবলী।

    লেখা হয় -" মায়াবী দণ্ড আসলে বাদ্যযন্ত্র/ তাতেই লুকিয়ে রাখি গোপন মন্ত্র/ আদিম সে মন্ত্রের কলাকৌশলে/ ফিরে যেতে চাই ফের তৃণবল্কলে/ যাতে ক্ষমাহীন ক্ষোভগুলো/ (সব) কমে তুকতাকে" "দেওয়ালের মুখে নয় সমাজের মুখে/ অন্যের মুখে নয় আয়নার মুখে/ মন্ত্র অ্যাকটাই অ্যাসিড ছোঁড়ো মুখে"। চোখে পড়ে বারবার কি দুর্বলতায় ব্যবহার হচ্ছে "মন্ত্র" শব্দটা, "মুখে" শব্দটা, অথচ ছাপিয়ে ওঠে রূপমের দেখার চোখ, ভাবতে চাওয়ার বিস্তৃতি।
    অবাক লাগে, প্রথম ক্যাসেটে ফসিল্‌স কে - এই পরিণতির দিকে যাবে - চিনে নেওয়া প্রায় যায়ই না "নেমেসিস" আর "বিষাক্ত মানুষ" ছাড়া। তখনো তারা যে কোনো ব্যাণ্ড, কেবল গান শুনতে গিয়ে চিনে নেওয়া যায় রূপমের পেন - "তোর ভরসাতে" চেনা পেন - যা বিষাক্ত হয়ে গেছে হঠাৎই যেন - ""আমি ভালবাসি যাকে/ সে বিষাক্ত মানুষ/ সবুজ তার শিরা/ ফ্যাকাসে আঙুল/ নীলাভ তার ঠোঁটে/ সাপের ছোবল/ নিলয়ে অলিন্দে/ খামখেয়ালি প্রবাহ" .... " বীভৎস শরীরে/ বিষাক্ত ক্ষত/ অবিশ্বাস ও ঘৃণার/ প্রতিমা শাশ্বত" ... "সে চ্‌ক্রব্যূহে আজও/ বন্দী হয়ে আছি/ সে চোরাবালি আজও/ গ্রাস করছে আমাকে/ ভালবাসি তাকে/ তার নিষিদ্ধ অসুখের/ একরোখা টভক্ষয়ড় -এ/ মরে যাওয়ার আশায়" -- এরকম ভয়ঙ্কর সিনিক শব্দাবলী বাংলা গানে আগে আসেনি বলতে দ্বিধা কোথায়? "ডাকিনী-বিদ্যা থাবা মারে চেতনায়, বেশ্যাবৃত্তি দুপুরের বিছানায়/ বেশ তো ছিলাম/ তোকে আদরের ব্যস্ততায়।/ ঠিক কোন নিষিদ্ধ বিষাক্ত আপেলে/ আজ তুই বন্য দাঁতে চিহ্ন রেখেছিস/ সময় আমার তরফে/ লিখছে স্পষ্ট হরফে/ তোকে ধ্বংস করতে আসছে নেমেসিস" এই অভিশাপ কেউ রাখেনি আগে বাংলা গানে -- "জানিনা সবাই তোর মতন কিনা/ অর্থাৎ তোর মতো হৃদয়হীনা" -- হয়ত ব্যক্তিগত ক্ষতস্থান চোঁয়ানো পুঁজরক্ত, বিষ, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি "অমৃতজলে" এ "আর্সেনিক" না মিশলে বাংলা গানের পুতুপুতু কৌমার্য যৌবনের উদ্ধত স্পর্ধায় জেগে উঠতে কিঞ্চিৎ বেগ পেতই।

    একে গন্ধসুধায় ঢাকা সাহেবি হাগা, বা বিদ্রোহের মিমিক্রি যাই বলুন একবার অন্তত: খোলা মনে হাততালি দিয়ে ওঠার উদারতাও থাকুক, নইলে বাংলা ভাষায় নতুন রাস্তা খোঁজার, অন্যরকম ভাবার সাহসের আগুন এই ন্যাতানো সময়ে বেশিদিন জ্বলার উৎসাহই হারিয়ে ফেলবে।

    রজত:
    ঈশান কে ধন্যবাদ এই বিষয় টা শুরু করার জন্য। কিন্তু ওর লেখার বক্তব্য টা ঠিক ধরা গেলো না। যুক্তিনির্ভর আলোচনা করলে আলোচনা চলে। কিন্তু এ যেন চুড়ান্ত আক্রোশ এ hypertension র রোগীর গালাগালির মতো শোনালো। গালাগালিকে গুছিয়ে বলার চেষ্টা করলেও গালাগালি গালাগালি ই থাকে। তা অমৃত বাণী হয়ে যায় না যা পড়ে পাঠকের তৃপ্তি হতে পারে।

    ঐ আলোচনাতে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে ফিরে এসেছে স্ব উদ্ভাবিত কিছু ধারণা আর তাকে সমর্থণ করার জন্য নিম্ন রুচির কিছু শব্দ প্রয়োগ।ঐ শব্দ গুলো নিয়ে আলোচনার কুরুচি আমি আর দেখাচ্ছি না। কিন্তু বাকি বক্তব্যগুলো নিয়ে কিছু কথা না বলে থাকতে পারছি না।

    আমার কাছে পরিষ্কার নয় ঈশানের আপত্তির কেন্দ্রস্থল। হরিদাসের ডানা কে stage থেকে নামিয়ে দেওয়া কি সে সমর্থন করে? stage থেকে নামিয়ে দেওয়া থেকে কি প্রমাণ করা হল এখানে? মহীনের ঘোড়াগুলি কেও তো ৭৫ সালে ঢিল খেতে হয়েছিল। তাতে কি প্রমাণিত হয়? জানিনা ঈশান মহীন শুনেছে কিনা। তবে নতুন গান করতে গিয়ে কেউ ঢিল খেয়েছে একথা শুনে তার উচ্ছসিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

    হঠা'ত করে Fuck You র বাঙ্গলা সমীকরণ কোথা থেকে এল আলোচনার মধ্যে? মনে হয় ঈশান এর মাধ্যমে বাঙ্গলা ভাষার কোমলতার কথা বোঝাতে চেয়েছে। তা নয় হল কোমল। তা বলে আমর যখন ভালবাসা, কাম, ক্রো¡ধ ইত্যাদি প্রকাশ করি তখন কি তাতে ভাবের ভাগ কম থাকে? ইঙ্গরাজি তে ভালোবাসা বললে কি বেশি ভালবাসা যায়? ইঙ্গরাজি তে কাম ভাব প্রকাশ এ কি তৃপ্তি বেশি মেলে? ইঙ্গরাজি তে রাগ প্রকাশ করলে কি বিরোধী সহজে ধরাশয়ী হয়? বাঙ্গলা ভাষা কোমল বলে কি যূগ যূগান্ত ধরে বাঙ্গলা গান প্রকাশের ভাষার দারিদ্র্যে ভুগেছে? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে আজ প্রবল প্রেম বা প্রবল ঘৃণা প্রকাশে বাধা কোথায়? আর হল ঊয়দয ঢষয় র কথা। রক সঙ্গীত র মতো একটা বিশাল ক্ষেত্রে কে ঈশান র দুটো শব্দে বা খুব বেশী দুটো প্যারাগ্রাফে ধরে ফেলার চেষ্টা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যেতে হয়। রক কি বাঙ্গালর ৫ নাকি যে - ""ঐ তো দেখে নিয়েছি - বাঁকা মতন "" বললেই হয়ে গেল। ঈশান তার বক্তব্য কে একটু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলে বোধ করি সবার উপকার হত। কটা বিশ্বখ্যাত রক গানে সে ঐ ধরনের শব্দের যথেচ্ছ ব্যাবহার শুনেছে তার কাছ থেকেই বোধহয় জানতে পারব। আশা রাখি তা বলে সে google search মারবে ন। আমি অন্তত Nirvana আর GnR র ২-১ টি গান ছাড়া আর মনে করতে পারছিনা। যাই হোক ঈশাণ র রক সম্পর্কে ধারণা অতলে তলিয়ে আছে। তাকে আলো দেখাবার সাহস Curt Cobain র ভূত ও দেখাবে না। তবে আপনারা কেউ যদি ওর সাথে সহমত পোষণ করেন নিচে একটা লিস্ট দিলাম। গান গুলো জোগার করে শুনে ফেলুন। গান আরও হাজার হাজার আছে। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা এগুলো আগে শোনা দরকার। আজকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তো বটেই। গান গুলো যারা শুনেছেন তারা জানেন এগুলো গানের মহিমাতেই গান। কথা, সুর, যন্ত্রসঙ্গীতের আবহের দৌলতে আপনি হাজার কুচুটে হলেও - এ গান তো ওর গান, এ গান তো অন্য দেশের গান এইসব চিন্তা মনে আসবে না।

    সুমন চট্টোপাধ্যায় যখন Bob Dylan বা Paul Simon র অনুবাদে ব ভাবাবলম্বনে তৈরি করেন 'কতটা পথ পেরলে' ( Blowin' in the wind -BD ), 'গানওয়ালা' ( Tambourine Man - BD ),'স্তব্ধতার গান' ( The Sound of Silence - PS ) আশা করি সেটা বাঙ্গলা ই হয়। মহীনের 'পৃথিবীটা নাকি' আর মৌসুমী ভৌমিক র 'ভাগ্যলিখন' রক র ব্যাকরণ অনুযায়ীই ২ টি typical রক এর ঊদাহরণ। গান গুলো কি খুব খারাপ? নাকি যুক্তি এরিয়ে যাব এই বলে যে ঐ ২ টো বাদে ওদের বাকি গান গুলো ভাল।

    জেনেসি্‌স আর প্রধান বিরাজ স্থান english এ হলেও এর বর্তমান রূপ ও definition অনুযায়ী রক র ingredient ভাষার ভূমিকা নেই বললেই চলে। এটি একটি সর্বব্যাপী genre of music হয়ে দাড়িয়েছে। একটি রক গান ভাল রক গান হয়ে ওঠার পিছনে এরকম কিছু উপাদান থাকে ১) অন্যধরনের বক্তব্য - প্রাত্যহিকতাকে অন্যভাবে দেখা, not necessarily তাতে বিপ্লব থাকতেই হবে। অনেক এ ভুল ধরতে পারেন রক এ জেনেসি্‌স র পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু আমি বর্তমান definition র কথা বলতে চাইছি। ২) উপযুক্ত ভাবে গানের সুর ও তাল এ Inconsistency র প্রয়োগ, বিশেষ করে বক্তব্য র সাথে তাল মিলিয়ে।
    ৩)সুষ্ঠ বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ যেমন - drum, bass guitar, electric guitar(with distortion sometimes), keyboard ইত্যাদি। ৪) উপযুক্ত rock rhythm এবং সঠিক chord progression র প্রয়োগ।অনেকক্ষেত্রে ভলসক্ষষৎভড়নধ প্রয়োগ। রক র প্রচুর শ্রেণী বিভাগ আছে। এই কটা কথায় সব ধরার সামার্থ্য আমার নেই।

    রক র গুরুত্ব কেউ মানতে না চাইলে বা ওয়াকিবহাল না থাকলে ২ টি জিনিস করার আছে। ১)সময় থাকলে একটু পড়াশোনা করা।২)প্রচুর গান শোনা।এইটুকু না করে ২ ছত্রে রক কে ধরার চেষ্টা করে ঈশাণ র মতো হাস্যস্পদ হয়ে উঠবেন না দয়া করে।

    List:
    1)Led Zepplin - Stairway to Heaven
    2)Pink Floyd - Julia Dreams (Album - Relics), Shine on you crazy diamond (Wish you were here), High Hopes (Divison Bell)
    3)Guns N' Roses - Patience, November Rain
    4)Dire Straits - Romeo and Juliet, Ride across the river
    5) Scorpions - Still loving you, winds of change.
    6) REM - diminished, losing my religion
    7) Nirvana - Come as you are, Polly

    ইশান:

    ১।

    এটা বিশেষ করে রজতকেই লেখা। ফসিলসের উপর আমার "আক্রমন' এ যে আহত হয়েছে। হবার কোনো কারণ ছিলনা যদিও। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে যতক্ষণ জাগ্রত, আমার ঢ্যাপসা মিউজিক সিস্টেমে বেজে চলেছে ফসিলসের জগঝম্প। শুনছি এবং শুনছি, কই বোর হচ্ছিনা তো? বলা বাহুল্য মনে হলেও, সহজপাঠের সুবিধার্থে বলা যাক,যে "জগঝম্প' এখানে প্রশস্তিবাক্য। নিন্দা নয়। জীবৎকালে ভ্যান গঘের প্রায় কোনো ছবি ই বিক্রি হয়নি, মহীনের ঘোড়াগুলিকে ৭৫ এ ঢিল মারা হয়েছিল, হরিদাসের ডানাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্টেজ থেকে, এগুলি ও প্রশস্তিবাক্য। এমনকি, রজত বিশ্বাস করুক বা না করুক, "ভিখিরি কুকুরের চিৎকার' ও প্রশস্তি ই।ব্যজস্তুতিও বলা যেতে পারত, কিন্তু সে বড়ো কঠিন সংস্কৃত শব্দ। এই লেখালিখিতে ঐ শব্দ যায়না।

    কেন যায়না? রকেরও যেমন একটি genre আছে, এই লেখালিখিরও আছে। সেটা না বুঝলে রক তো না ই, ছক-বাঁধা সাদা-কালো সহজপাঠের পৃথিবীর বাইরে একটি পাও যাওয়া যাবেনা। কারণ, এইসব আলোচনা, লেখালিখি, সহজ পাঠ নয়, যে প্রথম শ্রেণীর শিশুর বোধগম্যতার কাছেও তার আবেদন থাকবে। যিনি পড়বেন তাঁকে প্রস্তুত হয়ে আসতে হবে পড়ার জন্য। অনিচ্ছুক ঘোড়াকে জলাশয়ের কাছে ঘাড় ধরে নিয়ে যাবার কোনো দায় এই টেক্সটের নেই। অতএব যে কোনো আলোচনায় যাবার আগে এই genre টির সঙ্গে পরিচিত হোন, রজত। সেটাই প্রথম শর্ত।

    ২।

    রজতের বক্তব্যের কয়েকটি পয়েন্ট একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক।

    এক। রক একটি সর্বব্যাপী genre of music হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    দুই। রকের বক্তব্য অন্য ধরণের বক্তব্য - প্রাত্যহিকতাকে অন্য ভাবে দেখা not necessarily তাতে বিপ্লব থাকতেই হবে।

    এই দুটি পয়েন্টকে আমি আক্রমন করব। এক। রক একটি সর্বব্যাপী সাঙ্গীতিক জঁর হয়ে উঠেছে। সর্বব্যাপী, উইথ বোল্ড এবং আন্ডারলাইন। এখানে দুটি গানের উদাহরণ নেওয়া যাক। ধরা যাক পিংক ফ্লয়েডের দেয়াল। এবং বেগম আখতারের জোছনা করেছে আড়ি। এই দুখানি গানের সম্পূর্ণ আলাদা রকম দুটি আবেদন আছে, কিন্তু যখন কানে শুনি, তখন দুটি আবেদনকেই বিশজনীন মনে হয়। যেকোনো বাঙালি সঙ্গীতপ্রেমিকই আমার সঙ্গে একমত হবেন এ ব্যাপারে। এদের একটি রক ধারায় পুষ্ট, আরেকটি ভারতীয় ধ্রুপদী ধারায়। কিন্তু আবেদন বিশ্বজনীন।

    কিন্তু মজা হচ্ছে, এদের মধ্যে একটি ঘরাণা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে একটি "সর্বব্যাপী' ঘরাণা হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যটি ভারতবর্ষের বাইরে বেরোতেই পারেনি। সারা পৃথিবী জুড়ে একই রকম সুরে রকগান গেয়ে চলেছে অজস্র যুবক-যুবতী, কিন্তু ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের উত্তরাধিকার বলতে সেই একখন্ড রবিশংকর। বিটলসের দু-একটি প্রচেষ্টার কথা তুলবেননা আশাকরি, তারে ভারতীয় মার্গসংগীতের যা মান, সেটাকে শিক্ষানবিশীর বেশি নম্বর দেওয়া যায়না।

    তো, এটা একটা প্রক্রিয়াকে সূচিত করে। যা চরিত্রে রাজনৈতিক। যে, সংস্কৃতির প্রবাহ মূলত: একমুখী, দ্বিমুখী নয়। যাকে রাজনৈতিক আধিপত্য বলা যায়। এই আধিপত্য কিভাবে প্রবাহিত হয়? রজতের পয়েন্ট নম্বর দুই। প্রাত্যহিকতাকে অন্য ভাবে দেখা। কিভাবে দেখব? তাকে ডিকটেট করবে এক সর্বব্যাপী genre of music । আমি ভাবব আমি দুনিয়াকে অন্যভাবে দেখছি, কিন্তু আসলে তা আমার দেখা নয়। ঐ genre ডিকটেট করছে, কিভাবে দেখতে হবে। সেভাবেই দেখছি, ভাবছি দৃষ্টিভঙ্গীতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছি, কিন্তু আসলে পর্দার আড়ালে যা ঘটছে, তা একটি উৎকৃষ্ট বাঁদর নাচ। ঐ genre of music এর আড়ালে, বকলমে পশ্চিম নাচাচ্ছে, এবং আমরা নাচছি।

    ৩।

    এ কিন্তু ফসিলসকে গাল পাড়া নয়। একদম নয়। আমি আপনিও এ জিনিস করি, করে চলি, ডিকটেটেড হই, হয়ে চলি, যখন কথার ফাঁকে গুঁজে দি ই সুইট ইংলিশের আমসঙ্কÄভাজা, বা গলাবন্ধ টাই পরে কলকাতা শহরে ঘামতে ঘামতে মিনিবাসে চড়ি। বা আরও বৃহত্তর ভাবে দেখতে হলে আমাদের গোটা ভাষাটাই এইভাবে নির্মিত হয়েছে। সে অন্য আলোচনা, এখানে সেসব থাক। এখানে আমার বক্তব্য একটাই, যে, এই প্রক্রিয়ার একটি অসহায় শিকার হিসাবেই দাঁড়িয়ে আছে ফসিলস, কোনো ব্যতিক্রম হয়ে নয়।

    ৪।

    তিনেই শেষ করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু আবার মিস ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে ভেবে আরো কটা লাইন। এই নয় যে পশ্চিম বর্জনীয়। সত্যাগ্রহ টহের ফান্ডা আমার একদম নেই। বরং পশ্চিম ছাড়া বাঁচা যাবেনা এটাই বাস্তব। হাগা হিসি ও যৌনতা সহ আমাদের সর্বত্র পশ্চিম। গানেও যে থাকবে, সে আর আশ্চর্য কি? গানে অবশ্যই রক প্রভাব আসবে। নিশ্চয়ই আসবে। নচেৎ মার্কেটে কিভাবে টেকা যাবে? জাস্ট যাবেনা।

    কিন্তু একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, তিনি যখন সৃষ্টি করছেন, শুধু নিখুঁত একটি কপি বানাবেননা বিদেশি কোনো আঙ্গিকের। বা বানালেও, সেখানে থেকে যাবে একফোঁটা বেদনা, যে, হায় আমি, সেই সোনালী ডানার চিল, শুধু টুকে গেলাম, শুধু টুকে টুকে পাশ করলাম। সেটুকু থেকে যাবে তার সৃষ্টিতে। সেই বেদনাটুকুই তাঁর ক্রিয়েটিভিটির স্বাক্ষর। তৃতীয় বিশ্বের একজন মানুষের কলোনিয়াল বিদ্রোহ, যাকে অনেকে নিজস্বতা বলেও ভুল করতে পারেন।

    এই বেদনাটুকু ফসিলসে নেই। শুধু খোলসটুকু থেকে গেছে। এই হল বক্তব্য।

    রজত:

    মিস ইনটারপ্রিটেশনর প্রশ্ন তখনি আসে যখন ইনটারপ্রিটেশন হতে পারে। আমি আবার ধন্ধয়। ঈশাণ আমার পয়েন্ট কে আক্রমন করতে চেয়েছে। কিন্তু কেন? যাইহোক তার আগে ২-১ টা কথা বলা যাক।

    ওর প্রথম বক্তব্যের উপর বলি।। এই আলোচনার genre মানে কি?
    ১)যুক্তিহীন গালাগালি? -- যা আগেই আলোচিত হয়েছে।
    ২)বক্তব্যের যুক্তি তে না দাড়িয়ে থেকে, ফুলঝুরির মতো আরও হাজার অপ্রাসঙ্গিক কথা?
    ---আমি ফসি্‌লস নিয়ে দু:খ পেয়েছি বুঝে গেলেন ঈশাণ? ফসি্‌লস ভাল লাগুক আর না লাগুক আমি যা বলেছি রক গান নিয়ে। ফসি্‌লস সম্পর্কে কিছু তো বলিনি। ঈশান র বক্তব্য র পরিপ্রেক্ষিতে বলবার প্রয়োজন বোধ করিনি।
    -প্রশস্তিবাক্যর প্যারাগ্রাফ টর বক্তব্য বা প্রসঙ্গ কি? অন্য কেউ বুঝে থাকলে আমাকে বোঝাবেন দয়া করে?
    -আমি কখন বললাম রকের উপরে ভর করেই আমাদের অন্য রকম ভাবতে হবে বা রকই আমাদের ভাবাবে? আমি বলেছি একটি রক গান ভাল গান হয়ে উঠতে গেলে ঐ উপাদানটা চাই। আমি তো বলিনি অন্য কোন গানে বা কথায় ঐ উপাদান থাকে না বা দরকার নেই।

    ৩) genre সম্পর্কে পরিচিত না থাকার চোখরাঙ্গানি? --গুরুচন্ডালি তে লেখার genre নিয়ে বক্তব্যের ঐ লাইন গুলো শুধুই ঝাল মেটানোর। না মিটে থাকলে দু:খিত। কিন্তু আমার কি করার আছে বলুন। কিছু করার নেই। আলোচনা নিÖপ্রয়োজন।

    আরও কিছু কথা বলার আছে। আক্রমন? কিসের আক্রমন? আমি বা আমার পয়েন্ট কেউই আক্রান্ত হইনি। কিকরে? গানের কথার পয়েন্ট টা আগেই লিখেছি। এবার আসি ওর সর্বব্যাপি র প্রশ্নে? আমি সর্বব্যাপি বলেছি,কেন সর্বব্যাপি হয়েছে সে সব আলোচনা তো করিনি আমরা। না তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। আলোচনা চলতেই পারে। কিন্তু তাতে আমার বক্তব্য আক্রান্ত কি করে হয়? যাইহোক ঈশাণ কে ২-১ টা প্রশ্ন বা এই প্রসঙ্গে ২-১ টা কথা বলি।

    দ্বিমুখী প্রবাহ মানে কি একমুখী প্রবাহ কে বাধা দেওয়া না দ্বিমুখী প্রবাহকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা? আমি দ্বিতীয় ব্যাপারটি নিয়ে কোন দ্বিমত পোষন করি এমন তো বলিনি। তবে বাঙ্গালিরা কি ইঙ্গরাজি সাহিত্য পড়িনা? সিনেমা দেখিনা? নাকি গোসা করে বসে থাকি এই বলে যে কলকাতা/ বাঙ্গলা ভাষা কে নিয়ে কেন ইঙ্গরাজিতে বেশি লেখা হয় না। দ্বিমুখী প্রবাহর প্রকাশ ঈশান কিভাবে চাইছে? ১) হাজারে হাজারে ইঙ্গরাজি রক গায়ক এসে বাঙ্গালি কে নিয়ে ইঙ্গরাজিতে গান করলে? ২) হাজারে হাজারে ইঙ্গরাজি রক গায়ক এসে বাঙ্গালি কে নিয়ে বাঙ্গালায় গান করলে? ৩) ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ধারায় ইঙ্গরাজি গান হোলে? ৪) না কি অন্য কিছু? আশা করবো ঈশান আমাদের ঠিক পথ প্রদর্শণ করবেন। তবে বলে রাখি এসব হয়তো সম্ভব, হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু তার সাথে আমাদের আলোচনার বিরোধ কোথায়? আমরা কাফকা, মার্কেজ পড়তে গেলে কি আক্ষেপ করি,- কেন এই সময়টা বাঙ্গলা পড়লাম না বা কেন ওরা বাঙ্গলায় লিখল না, কেন আমি এত অভিভূত হয়ে পড়ি, ওরা তো আমাদের লেখা পড়ল না, এইসব ভেবে? আর কিছুতে দোষ নেই কারণ তাতে আঁতলামির গরিমা আছে। নতুন কিছু সেখানে ‘post-modern’ । শুধু গানই জগঝম্প অর আসামী।রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে মহীন, কবিতা থেকে শুরু করে গান, সাহিত্য, নাটক, সিনেমা সবকিছুতে অন্য দেশের ছন্দরীতি, সঙ্গীতের ছাপ, ভাবনা, বক্তব্য, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ, তাল র প্রয়োগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসরণ হয়নি? Spanish guitar ওপার থেকে এসে আমাদের হাতে হাতে ওঠেনি? আমরা অন্য দেশ বা অন্য ভাষাভাষীদের রাজনৈতিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হইনি? সব কিছু কপি হয়ে গেছে? মিথ্যে হয়ে গেছে? আমি যদি আমার বক্তব্যে সম্পূর্ণ ভুল হই ঈশান দেখান দ্বিমুখী ধারার পথ, তুলে ধরুন উদাহরণ বা ইচ্ছে। খুব আনন্দিত হব। তবে অনুগ্রহ করে যুক্তির ঘেরাটোপে থেকে আর আপনার রাগের শব্দ গুলো ব্যবহার না করে। তাতে তাৎক্ষণিক পড়ার মজা মিলতে পারে, কিন্তু কোন মানে দাড়ায় না।

    সোমনাথ:

    আমার মনে হয়, রজত, ভালো লাগে কে স্রেফ "ভালো লাগে" বলায় মজা নেই, যেমন টেবিলকে টেবিল দেখলেই সব শেষ - ব্যতীত একটি দ্বিমাত্রিক ক্যানভাস - তার চেয়ে হাতি দেখলে খেলা এগোয়। তো, আমি টেবিলকে হাতি বলব, তার গায়ে কালি ছিটিয়ে পরখ করব ঝর্ণাকলমের ভার্জিনিটি, আর মেনকা গন্ধী বন্যজন্তুর চর্মবিকৃতির মামলা ঠুকবেন - এ এক প্রবল কনফিউশন, তাই genre , তাই ইন্টারপ্রিটেশন। "আক্রমণ"কে আক্রমণ ভাবলেই আপনি প্রবল হ্যাটা, মাঝরাস্তায় এক পায়ে মোজা, দুপায়ে লাল নীল হাওয়াই চপ্পল পড়ে নিতম্ব চুলকানিরত অনশ্বর খোরাক। প্রখর অ্যাকাডেমিক যুক্তির কেতাবি ভাষ্যের ওয়ান লাইনারে বিতর্কসভা ঝলসানো প্রবৃদ্ধ কাপ্তেন দাড়ি চুমরোন আর টইপত্তর ধূসর হয়ে যায়, তাই genre , তাই ইন্টারপ্রিটেশন। ইউনিভার্সিটির ডেফিনিশন টেনে সহজপাঠ্য হাত ধরাকে খিস্তি ভাবলেই, রজত, আমরা দূরে সরে যাচ্ছি, ছায়াপথ ছায়াপথ দূরে।
    ঈশানী পড়ে আমার উপলব্ধি -
    ১) রক - এমনকি আরো বহুতর শিল্পমাধ্যম - এর বৈশিষ্ট্য পশ্চিম নির্দেশিত, ঔপনিবেশিকতায় ভর করে প্রচারিত (তথাকথিত "বহুব্যপী"করণ)। এগুলোর অনুসরণেও নেপথ্যে দাঁড়িয়ে থাকে সাহেবি ডিকটেশন - সাংস্কৃতিক একমুখি আধিপত্য কায়েম।

    সমভাবে, রকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য - "অন্যরকম বক্তব্য, প্রাত্যহিকতাকে অন্যভাবে দেখার"-র "অন্যরকম"/"অন্যভাবে" টা পশ্চিম ডিকটেটেড। অন্তত:/এমনকি ফসিল্‌স-এর গানে।

    ২) ঈশানের মতে, এই অসহায় কপি করা বা ডিকটেটেড হয়ে যাওয়া ছাপিয়ে ঋজু হয়ে ওঠে স্রষ্টার অনন্যতা, স্বাতন্ত্র্য যখন copy ত্বের "বেদনা" চলকে ওঠে তাঁর সৃজনে। এখানে ফসিল্‌স অন্তত: ব্যর্থ।

    ফসিল্‌স-২ শুনে এই বক্তব্যের বিপ্রতীপে দাঁড়ানোর মত - ফসিল্‌স-এর হয়ে - সাহস পেলাম না। কিন্তু, ঈশানকে জিজ্ঞাস্য থেকেই যায়, ফসিল্‌সের প্রথম অ্যালবামটা শুনেও কি একই রকম মনে হল? ধারণা গড়ে ওঠা, গান শুনে তার অ্যানালিসিস, ইন্টারপ্রিটেশন আলাদা হতেই পারে, শুধু কতটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি বুঝে নিতে চেয়েই এই প্রশ্ন। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ফসিল্‌স-১ ঈশান শোনে নি!!

    ইশান:

    সোমনাথকে ৯০ শতাংশ ডিটো দিলাম। আমার কি-বোর্ডের ঝকমারি কমল। এমনকি এটা যে ফসিল্‌স ২ শোনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, সেটাও ঠিক। শুধু এক শুনলে অন্য কিছু লেখা হত, এরপর তিন শুনলে হয়তো আরও অন্যকিছু লিখব। কিন্তু আপাতত: দুই।

    রজত:

    আমি সত্যিই টইপত্তরের আলোচনার genre টা ধরতে পারিনি। আমার অন্য লেখাগুলো পড়া ছিল না। কিছু লেখা পড়লাম। কিছু বেশ ভাল লাগল। আমি একটু বেশিই আক্রমনাত্মক হয়ে পড়েছিলাম। তার জন্য দু:খিত।
    যাইহোক, কথায় কথায় অনেকগুলো পয়েন্ট উঠে এসেছে।আমি ফসি্‌লস কে ডিফেন্ড করছি বা করছি না সেটা থেকে বড় প্রশ্ন আমার কাছে অন্য।সেটা হল, বাঙ্গলায় রক র সফল উপস্থাপন যদি সম্ভব হয়।সেটা ফসি্‌লস করুক বা অন্য কেউ করুক তাতে ক্ষতি কোথায়? আমার মনে হচ্ছে আমরা সবাই ধরে নিচ্ছি রক সঙ্গীতের ধারা একটি বর্জনীয় বস্তু। তা কিভাবে? ইনডিপেনডেন্ট ভাবে লেখা একটি বাঙ্গলা কবিতা একটি রক গান হতে পারেনা এমন কোন কথা নেই। আমি প্রস্তর (যদিও এই রকের সাথে প্রস্তরের কোন সম্পর্ক নেই)গীতিকারদের নাম ধাম উল্লেখ করেছি কারণ ওগুলো জানা থাকলে হয়ত এই ধারনাটা বদলাতে পারে। আমদের আলোচনাতে সবাই যেসব কথা বলেছে তার কিছু কিছু বক্তব্যর সাথে আমিও একমত নই তা নয়। কিন্তু ঐ কথাগুলোর সবই আমাদের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক ছিল তা আমার সবক্ষেত্রে মনে হয়নি।

    ইশান:

    এসেই যখন গেল, তখন কিঞ্চিৎ পোকো-পোমো হয়ে যাক।

    এই আলোচনার genre মানে কি? কয়েকটা পয়েন্টে লেখা যাক।

    এক। খুব ছোটো করে, এককথায়, ইউনিভার্সালিটিকে অস্বীকার করা। "সর্বব্যাপী', ইউনিভার্সাল কিছু অর্ডার অফ থিংস তৈরি হয়ে আছে দুনিয়ায়, সেগুলোকে উল্টে দেওয়া। বা সেই অর্ডার নিয়ে খেলা করা। কিভাবে? জনৈক কলেজছোকরা যখন দুচোখে মুগ্‌ধতা নিয়ে তার বান্ধবীকে বলে, "কি ভয়ংকর দেখতে তোকে', তখন সে আবহমান কাল ধরে চলে আসা "ভয়ংকর' শব্দটির সর্বব্যাপী ইউনিভার্সাল আবেদনকে অস্বীকার করে। যখন খাবারের প্রশংসায় বলা হয় "বীভৎস' খেতে হয়েছে, তখন "বীভৎস' বর্গটিকে আসলে উল্টে দেওয়া হয়।

    এটি ই সেই "কথ্য' genre , যাকে লেখালিখিতে নিয়ে আসার চেষ্টা। এই কনটেক্সটেই ব্যবহৃত হয় "অনার্য' বা "অসভ্য' এই জাতীয় শব্দগুলি। ইউনিভার্সালি এরা একটি বিশ্বব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে। যে, অনার্য, বা অসভ্য মানে এনলাইটেনমেন্টের বাইরে। অতএব, পংক্তিভোজনের অনধিকারী। এদেরকে যখন উল্টে দেওয়া হয়, তখন এই বিশ্বজনীন অর্ডার অফ থিংসকে অস্বীকার করা হয়। অনার্যরা তখন বলার অধিকার পায়। অসভ্যতা হয়ে ওঠে এক্সপ্রেশনের মাধ্যম।

    দুই। কোনো বিষয়কে সম্পূর্ণ জেনে ফেলব, তাকে সম্পূর্ণ সংজ্ঞায়িত করব, তারপর আলোচনা শুরু করব, এই অবস্থানকে অস্বীকার করা। সম্পূর্ণতা বলে কিছু হয়না। যা হয় তা আসলে একটি মিথ। অতএব খন্ড খন্ড করে দেকুন। হাতির পা দেখুন, মাথা দেখুন, শুঁড়ও দেখুন, কিন্তু আলাদা করে। পুরো হাতিকে একসঙ্গে দেখতে গেলে বিপদ আছে।

    জিনিসটা একটু ইলাস্ট্রেট করা যাক। একটি রক গান ভালো রক গান হয়ে ওঠার পিছনে কয়েকটি উপাদানের কথা লিখেছেন রজত:
    ১) অন্য ধরণের বক্তব্য,
    ২)উপযুক্তভাবে গানের সুর ও তালে Inconsistancy র প্রয়োগ।
    ৩)সুষ্ঠু বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ।
    ৪)রক রিদম এবং সঠিক কর্ড প্রগ্রেশনের প্রয়োগ।

    রজতের এই চারখানা পয়েন্টে আদতে রকের কিছুই বোঝা যায়না। এগুলি রকের ক্ষেত্রে যেমন ভাবে সত্য ততটাই সত্য জ্যাজ বা ব্লুজের ক্ষেত্রে। সেই অন্য বক্তব্য, সেই ইনকনসিস্টেন্সি, সেই সুষ্ঠু বাদ্যযন্ত্র এবং সঠিক রিদম। এমনকি, এখান থেকে কর্ড প্রগ্রেশন আর বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের নামগুলো বাদ দিয়ে দিন, ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের সংজ্ঞা বলেও একে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যাবে।

    তাহলে? রককে সংজ্ঞায়িত করব কিভাবে? রজত লেখেননি, কিন্তু তাঁর লেখার ঘরাণাটা আমাদের পরিচিত। বোঝা যায়, যে এভাবেই একটি সম্পূর্ণ তালিকা বানিয়ে ফেললে রক গানকে নিখুঁত ভাবে সংজ্ঞায়িত করে ফেলা যাবে একদিন, এরকম একটা অ্যাসাম্পশান আছে। যা আসলে অবাস্তব। অবাস্তব, কারণ, যত বেশি বেশি করে ক্যাটাগরাইজ করে পাকড়ে ধরতে যাবেন জিনিসটাকে তা ততই পিছলে বেরিয়ে যাবে। কিরকম? ধরুন,তিন নম্বর পয়েন্টটা। সুষ্ঠু বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ। এটাকে স্পেসিফিক করার জন্য ধরুন drum, bass guitar, electric guitar(with distortion sometimes), keyboard ইত্যাদি ইত্যাদি সকল বাদ্যযন্ত্রের একখানি কমপ্লিট সেট বানালেন। বানানো মাত্রেই আমি ক্যাঁক করে ধরব, সেতার কেন নয়? তখন আপনাকে আমতা আমতা করে বলতে হবে, হ্যঁ সুষ্ঠু ভাবে ব্যবহার করলে সেতারও সম্ভব। এবার আমি অন্য একটি বাদ্যযন্ত্রের নাম করব, এবং এইভাবে চলবে পৃথিবীর শেষ তম যন্ত্রটি অব্দি। এবং সব শেষে হাতে পড়ে থাকবে হারিকেন, অর্থাৎ ঐ "সুষ্ঠু ভাবে'। মানে সবই বাজানো যেতে পারে, কিন্তু সুষ্ঠু ভাবে বাজাতে হবে। এবার আমরা "সুষ্ঠু ভাবে'র সংজ্ঞা দিতে চাইব। ধরুন বললাম সুষ্ঠু ভাবে মানে ই ঊ ঋ এই কর্ড প্রগ্রেশন (কথার কথা)। রাম তখন এসে বলবে কেন ডি মাইনর নয়, অমুক তো বাজিয়েছে দিব্যি। তখন ঢোঁক গিলে বলতে হবে হ্যাঁ ডি মাইনরও চলবে। এরপর শ্যাম বলবে এফ শার্প মাইনর কেন নয়, তমুক তো সেটাও বাজিয়েছে। অতএব এফ শার্প মাইনরও চলবে। এইভাবে আবার সেই পুরোনো সিকোয়েন্স, এবং আল্টিমেটলি দেখা যাবে সব কর্ড সিকোয়েন্সই দিব্যি চলবে।

    অতএব, সব মিলিয়ে যা দাঁড়াবে, তা হল যে কোনো বাদ্যযন্ত্র যেমন খুশি বাজালেই রক হয়ে গেল। যা সত্য কথন নয়। কানে শুনলে দিব্যি বুঝতে পারি কোনটা রক, আর কোনটা ব্লুজ আর কাϾট্র কি। কিন্তু বিপদে পড়ব যদি গোটা জিনিসটাকে সম্পূর্ণ বুঝে ফেলতে যাই।

    অতএব পার্টে পার্টে দেখুন। কাটাছেঁড়া করুন। কিন্তু পুরো বুঝে ফেলতে যাবেননা।

    দেখুন, আমার আলোচনায় একদম এই দুটো পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে গোড়া থেকে। rock কি বুঝে ফেলার কোনো চেষ্টাই নেই। সংজ্ঞাদানের চেষ্টা তো একেবারেই নেই। শুধু একটা বিশেষ জায়গা ধরে খামচাখামচি। আর কিচ্ছু না।

    রজত:

    এই খামচাখামচির মত এতো আনন্দ অন্য কিছুতে নেই। এখানে বয়স্যের স্বাধীনতা আছে। তার সাথে আছে শৈশবের নির্ভরযোগ্য গন্ডী। পেরিয়ে ওপারে যাওআর ইচ্ছে নেই। তাই বিপদে পড়ার ভয়ও নেই। এখানে ইউনিভার্সালিটিকে অস্বীকার করে সব অর্ডার অব থিংস্‌ কে উল্টে দেওয়া হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই খেলার বিষয়েরও অভাব নেই। সব কিছু উল্টে দেব ভাবতে ভাবতে এখানে আমাদের খেলাগুলো ও নিজেরাই এক একটা 'অর্ডার অব থিংস্‌' হয়ে যায়।

    এখানে যা পাই হাতের কাছে ভাঙ্গি। যা কিছু ইচ্ছে করে জোড়া লাগাই। ভেঙ্গে জুড়ে বালিশ বানাই, তোষক পাতি, ধুলো দিয়ে খাবার বানাই। এখানে খাবার, রস, কষ কিছুর অভাব নেই। শেয়াল যায় বারবার আঙ্গুর খেতে। আমরা তো বুদ্ধিধারী মানুষ। তাই ও চেষ্টা আমরা চালাই না। আমরা জানি সবকিছু। ওতো গল্পেই লেখা আছে। ঐ বললাম না 'গন্ডী' আছে।

    গন্ডীর বাইরে assumption থাকেনা। চেষ্টা থাকে। বোঝার।বোঝানোরও। আবার বক্ত্যবের শেষে বিনীত স্বীকারোক্তিও থাকে।বোল্ড এবং আন্ডারলইনে কোন কিছু শুনতে থাকার উপলব্ধি ও প্রয়োজনীয়তার কথা থাকে।অনেক প্রশ্ন থাকে। উত্তর সব জানা নেই বলে জানার ইচ্ছেও থাকে। খেলতে খেলতে খেলার বস্তু বল হারিয়ে কেউ জল দিয়ে লক্ষ্যভেদী কামান দাগলে অবাক লাগে।

    না। হরিণ ও ঘোড়া দুই প্রজাতিরই পা, চোখ, নাক, মুখ, লেজ (বড় লিস্ট বানানো যায়)আছে বলে হরিণ ঘোড়া নয় বা ঘোড়াও হরিণ নয়। লিস্ট শুধু এটা প্রমাণ করার জন্য যে ঐ বস্তুগুলি ওদের আছে। বস্তুগুলোর গঠনের বৈচিত্রে তারা দুটি আলাদা প্রাণী। কিন্তু এর জন্য ঘোড়া নামক ঐ সামগ্রিক বস্তুটিকে দেখা যে প্রয়োজন। 'প্রচুর' শোনা, থুড়ি, দেখা প্রয়োজন।

    ওসব কথা থাক। গন্ডীর ভিতরে শুধু 'দেওয়াল'এ আটকে আমরা কিন্তু ঘোড়ার anatomy বিচার করে যাবো। দেওয়ালের ওপার দেখতে পারছিনা বলে কখনও ঘোড়াকে হরিণ বলব। কখনও হরিণকে ছাগল বলব। কখনও 'ইউনিভার্সালিটিকে' উল্টে দিয়ে ঘোড়াকে কিছুই বলব না। আর হঠাৎ করে দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে কোন গুফো cowboy উঁকি মারলে দেওয়ালের ভিতর দিকে পোস্টার ফেলে দেব post-colonial ঘোড়ার বিরুদ্ধে। খেলাচ্ছলে।

    ইশান:

    পুরোনো লেখার দ্বিতীয় অংশে রজত আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। দ্বিমুখী প্রবাহটা কি এবং কেন। সেটা কিভাবে সম্ভব?
    ১) হাজারে হাজারে ইঙ্গরাজি রক গায়ক এসে বাঙ্গালি কে নিয়ে ইঙ্গরাজিতে গান করলে?
    ২) হাজারে হাজারে ইঙ্গরাজি রক গায়ক এসে বাঙ্গালি কে নিয়ে বাঙ্গালায় গান করলে?
    ৩) ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ধারায় ইঙ্গরাজি গান হোলে?
    ৪) না কি অন্য কিছু?

    এসব প্রশ্নের একখানা উত্তর একরকম করে রজতের লেখায়ই আছে। যে, "এসব হয়তো সম্ভব নয়'। এই উত্তরের সঙ্গে আমরা একমত হব। এসব সম্ভব নয়। লেখায় যতই পৃথিবীর অর্ডার অফ থিংসকে উল্টে দেব বলে লাফাইনা কেন, পৃথিবী ওল্টাবেনা। পশ্চিমী এক্সপ্রেশনগুলোকেই ধীরে ধীরে আমরা আমাদের "নিজস্বতা' বলে চিনে নেব এবং নিতে থাকব। যেভাবে ডিরোজিও আমাদের যুক্তি শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই আর্চিজ গ্যালারি শেখাবে ভ্যালেন্টাইনস ডে, এবং আমরা চিৎকার করে বলব "ভালোবাসা মানে আর্চিজ গ্যালারি'। অত:পর, চিন্তন হয়ে উঠবে স্মার্ট, জিন্স পরিচিত যুবক, যুবতীটির কানে কানে অন্তর্জাতিক ভাষায় ভালোবাসার কাহিনী শোনাবে। শীৎকারেও ক্রমশ: হেভি মেটাল শব্দ শোনা যাবে।

    এসবে কিছু দোষ নেই। ফলে গিটার বাজিয়ে রকগান গাইলেও কোনো দোষ নেই। যেমন দোষ নেই এম টিভিতে। বা হলিউডি ফিল্মে। দীর্ঘ দীর্ঘদিন ধরে মানুষের এক্সপ্রেশনগুলিকে কাটাছেঁড়া করে যে মিডিয়াম অফ এক্সপ্রেশন তৈরি হয়েছে/করা হয়েছে, তা সুবিধেজনক,কনভিনিয়েন্ট, ইউজার ফ্রেন্ডলি। যেমত মাইক্রোসফট উইন্ডোজ। কে অস্বীকার করবে তার বন্ধুত্ব? আপত্তি শুধু এটুকুতেই, যদি উইন্ডোজকে একটি "বৈজ্ঞানিক' জিনিস হিসাবে চালানো হয়। জানেন কি, ইশকুলে ইশকুলে মাইক্রোসফট উইন্ডোজকে একটি শ্রেষ্ঠ এবং "বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাপ্রসূত উদ্ভাবন' বলে পড়ানো হয় পশ্চিম বাংলায়? আপত্তি সেইটুকু তে। যে, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ একটি ন্যাচারাল বা বৈজ্ঞানিক বস্তু নহে। কম্পিউটারের পৃথিবীতে মাইক্রোসফট একটি স্বীকৃত "সর্বব্যাপী' স্ট্যান্ডার্ড নয়।

    রকের ক্ষেত্রেও অবিকল একই বক্তব্য। যে, রক একটি "সর্বব্যাপী স্বীকৃত' genre of music নয়। রক যা, তা শুধু শিল্পগুণেই নয়, তার পিছনে আছে অন্যতর একটি প্রক্রিয়া (যাকে আমরা একমুখী প্রবাহ বলেছি), যা রককে একটি সর্বব্যাপী স্ট্যান্ডার্ড বানিয়ে তুলতে চায়। এই প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক, অতএব এর বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্সও রাজনৈতিক। এবং এই রেজিস্ট্যান্সের সম্ভাব্য genre এই রক নামক সর্বব্যাপী ইউনিভার্সালিটিকে অস্বীকার করেই বেড়ে উঠবে।

    অতএব, এর আগের পোস্টে, ইউনিভার্সালিটিকে অস্বীকার করা বিষয়ে যে দুটি পয়েন্ট দিয়েছি, তারা একটি প্রতিবাদের ভাষা। একমুখী প্রবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা। রজত, আপনি দ্বিমুখী ধারার পথ দেখতে চাইছিলেন। লক্ষ্য করুন, যে genre টির কথা লিখেছি, তা একমুখীতাকে রেজিস্ট করার পথ। যে পথের সন্ধান আপনি করছিলেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ | ১৫৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন