আপনি নিশ্চয় আমার মতোই ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহক। আজীবনের সঞ্চয় গচ্ছিত রেখেছেন পরম বিশ্বাসে। তাহলে জেনে রাখুন আপনার লকার বা একাউন্টস তাক করে রয়েছে জালিয়াত কর্পোরেটের সিঁদকাঠি।
না, আমি বেইল ইন ইত্যাদি সংক্রান্ত বহুচর্চিত ব্যাপার নিয়ে বলছি না। বিপদ কতো দিক দিয়ে ঘনিয়ে আসছে তা আমরা ধারণাও করতে পারি না।
হয়তো একটি ভাইরাল হয়ে যাওয়া ইংরাজি হোয়াটসএপ মেসেজের দৌলতে আপনার কানে এতক্ষণে পৌঁছে গেছে রিলায়েন্স পেমেন্ট ব্যাঙ্কের নাম। শাসকের মাসতুতো ভাই মুকেশ আম্বানীর ব্যাঙ্ক। এরই নামে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি আর স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গাঁটছড়া বেঁধে দেবার কাজ চলছে অতি দ্রুতগতিতে। আঠারো সালের গোড়াতেই আপনি হঠাৎ জানতে পারবেন আপনার গচ্ছিত সঞ্চয়ের অছি আর স্টেট ব্যাংক একা নয়।
যতোই রাগ করে গাল দিই না কেন কাউন্টারের ওপারে বসা অলস কর্মীটিকে ( হাতের পাঁচ আঙুল কি আর সমান হয় !), মনে রাখবেন বিশ্বের পঞ্চাশটি সেরা ব্যাংকের অন্যতম আমাদের স্টেট ব্যাংক। এর মোট শাখার সংখ্যা ২৩,৫৫৬ আর চোদ্দ সালেই সক্রিয় গ্রাহক একাউন্টসের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২২কোটি ৫০ লক্ষ।
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের আর্থিক সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া এই মহাকায় কুবেরকে ধূপধুনো সহযোগে তুলে দেওয়া হচ্ছে জালি রিলায়েন্সের হাতে।
জালি কেন ? আসুন তবে দেখে নিই গঙ্গারাম পাত্র কেমন। এই কোম্পানিটি ঘুষ দেওয়া, অন্যভাবে কলকাঠি নাড়ানো, রাজনীতিজ্ঞ ও বুরোক্র্যাটদের কিনে নেবার কাজে বড়ই দড়। আইন ভাঙতে ওস্তাদ। বিশ্বাস না হয় গুগল করে দেখে নিন পাবলিক একাউন্টস কমিটি(PAC) এবং কমপ্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনেরাল অব ইন্ডিয়ার (CAG) রিপোর্ট। ক্রিমিনাল চার্জ আছে ভুরি ভুরি আর কোম্পানীর সিনিয়র একজিকিউটিভদের জেল জরিমানা হয় আকছারই। এদের মুখোশ পুরোপুরি খুলে গিয়েছিল 2G স্পেকট্রাম স্ক্যামে। বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা আর জালিয়াতির দায়ে। ২০০৭ সালে SEBI বেআইনী শেয়ার কেনাবেচার দায়ে অভিযুক্ত করে রিলায়েন্সকে আর লাভের গুড় ৪৪৭ কোটি টাকা ফেরত দেবার আদেশ জারী হয়। ২০১৪ সালে ONGC দিল্লি হাইকোর্টকে জানায় কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনে গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্রের ১৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার জায়গা জাস্ট ঝেড়ে দিয়েছে রিলায়েন্স।
আরো জেনে রাখুন, পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কে ঋণখেলাপিতে ফার্স্ট বয় আম্বানী লাভের গুড় বেশিটাই চালান করেছে বিদেশে। আর আমাদের সরকার বাদবাকিটাও মাফ করবার জন্য রেভিনিউ ফরগন ( revenue forgone) নামে এক আজব প্রকল্প খুলেছেন। তাতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত রিলায়ান্স।
তাহলে কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা ? স্টেট ব্যাঙ্কের মতো বিশাল মজবুত স্বয়ংভর সংস্থার অংশীদার হবে এই গুণধর রিলায়েন্স। সরকারী অজুহাত, RLI ( reliance industries limited) আর SBI পরস্পরের দোসর হলে রিলায়েন্স জিও র লেটেস্ট টেকনোলজির দ্বারা উপকৃত হবে দুর্গম এলাকার গ্রামীণ মানুষ।
একেবারেই বাজে যুক্তি, কারণ স্টেট ব্যাঙ্ক নিজেই ১,৫০,০০০ কর্মী নিয়োগ করেছে যারা কাজ করছে প্রান্তিক অঞ্চলে। এর ফলে কর্পোরেটটির হাতে বিনা আয়াসে পৌঁছে যাচ্ছে একটা বিশাল কর্মী- নেটওয়ার্ক। কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই।
মদতপুষ্ট এই অসৎ সংস্থার মিউচুয়াল ফান্ড, জেনেরাল ইন্সিওর্যান্স ও লাইফ ইন্সিওর্যান্স ফান্ড বিক্রি করতে চুক্তি অনুযায়ী বাধ্য থাকবে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মীরা। তাহলে স্টেট ব্যাংকের এই ধরণের নিজস্ব প্রকল্প গুলির বিক্রি বাড়বে না কমবে ? কোনভাবে লাভবান হবে আমার আপনার স্টেট ব্যাংক?
এখনো সন্দেহ থাকলে স্টেট ব্যাংক অফিসার্স এসোশিয়েসনের জেনেরাল সেক্রেটারি থমাস ডি ফ্র্যাঙ্কোর এই ইস্যুতে বক্তব্য দেখুন। ফ্রন্টলাইনেও বিস্তারিত বেরিয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক হাতবদল হয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। আমরা শুধুই ঘুমায়ে রই।