এটা কে আপনারা কেন এত বড় করে তুলছেন জানি না, এটা তুচ্ছ ঘটনা, আর দিল্লি তে যা হয়েছে তারপর এরকম হয়ে থাকতেই পারে । দিল্লিতে এস এফ আই-এর বিক্ষোভের মুখে মাননীয় প্রাক্তন প্রেসিডেন্সিয়ান অমিত মিত্র যদি পড়েন, তাঁর গায়ে যদি হাত পড়ে, তো তার জের প্রেসিডেন্সি পড়বে না তো কোথায় পড়বে? স্বতঃস্ফূর্ততা বলে একটা ব্যাপার আছে তো নাকি!
আর টি এম সি পি-র প্রধান মাননীয় শঙ্কুদেব পাণ্ডা মহাশয় তো বলেই দিয়েছেন যে ওনারা ‘গান্ধীজীর পায়ের তলায় বসে অহিংস পথে আন্দোলন’ করছেন । অহিংস আন্দোলন চলবে আর প্রচারে প্রেসিডেন্সি যাওয়া হবে না ? করা যায় নাকি!
নিন্দুকে ওরকম বলবে, বলবে যে প্রেসিডেন্সিতে বন্ধ গেটের তালা গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা হয়েছে , বলবে যে তাই পরেরদিন অর্থাৎ, ১১ তারিখ থেকে একটা ব্র্যান্ড নিউ গোদরেজের তালা শোভা পাচ্ছে ! বলবে ছুরি, বর্শা(!) নিয়ে লোকজন এসেছিল , বলবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মারা হয়েছে, বলবে সামনে যে মহিলাকে পেয়েছে তাকেই তাড়া করেছে, বলেছে ধর্ষণ করবে । বলবে মহিলা ডিন অফ স্টুডেন্টস কে তাড়া করেছে গুণ্ডারা, ওনাকে আড়াল করে থাকা ছাত্রছাত্রীদের বলেছে ‘মাগি’ টাকে বের করে দিতে, ওরা ধর্ষণ করবে । বলবে শতাব্দী প্রাচীন বেকার ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি ভাংচুর করেছে, বলবে দরজা জানলা ভেঙে দেওয়া হয়েছে । বলবে জগদিশ্চন্দ্রের বেকার ল্যাব,প্রফুল্লচন্দ্রের বেকার ল্যাব, মেঘনাদ সাহার বেকার ল্যাব তছনছ করা হয়েছে । কিছু নিন্দুকে এও বলতে পারে, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যাপকের বিশেষ ক্লাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে এবং সেই অধ্যাপক বাধা দিতে এলে তাকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে । বলবে পুলিশ সামনে ছিল, তাও কিছু করে নি, কারণ তাদের কিছু করার ‘অর্ডার’ ছিল না(নাকি অর্ডার ছিল, কিছু না করার?), বলবে ভাঙা গেটের সামনে ছাত্রছাত্রীদের ব্যারিকেডে দাঁড়ানো মহিলাদের সবাইকে ক্যাম্পাসের বাইরে রেপ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে? বলবে ওরা টি এম সি পি-র ফ্ল্যাগ নিয়ে মিছিল করছিলো, বলবে ওরা ‘ফ্রাসট্রেটেড এস এফ আই’(ডেরেক উবাচ) নয়, কারণ তৃনমূলের কাউন্সিলর পার্থ বসু টিভি ফুটেজে প্রকট ভাবে দৃশ্যমান যেখানে তিনি প্রেসিডেন্সির বন্ধ গেট ধরে ঝাঁকানোর ভঙ্গীতে শোভা পাচ্ছেন ।
কিন্তু, আসল ব্যাপারটা মোটেই এরকম নয়, এই ‘অহিংস’ ঘটনা ঘটার দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সির বন্ধ গেটের বাইরে সাধন পাণ্ডে মহাশয়ের নেতৃত্বাধীন জনসভার বক্তব্য থেকে আসল ব্যাপার পরিস্ফুট হয় । ‘চক্রান্ত’-এর অন্ধকার কেটে আলোর দ্যাখা পান ডিরোজিয়ানরা এবং অন্যান্য মূঢ় ব্যক্তিবর্গ । আসলে তৃনমূল ছাত্র পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রেসিডেন্সি থেকে বেরিয়ে ছাত্রছাত্রীরা হামলা করে, যে জন্য মিছিলে উপস্থিত লোকজন বাধা দিতে বাধ্য হন । যে কারণে পরের দিন প্রেসিডেন্সির হাজারে হাজারে ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক-কর্মচারী-প্রাক্তনী যখন পথে নামেন, তখন প্রেসিডেন্সির ছাত্র দেবর্ষি চক্রবর্তী এবং প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী ছন্দক চ্যাটারজির বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করে টি এম সি পি , ১৪৭, ১৪৮ ও ১৪৯ নং ধারায়, দাঙ্গা বাধানো এবং উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে । এই দেবর্ষি চক্রবর্তী আগেরদিন হাসপাতালে গেছিলেন আহত হয়ে ? ও সে তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে লেগে গেছিল । আরেকজন ছাত্রকেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল না? ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছিল । সিম্পিল ।
যে বর্শা পাওয়া গেছে ওটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই পরের বছরের স্পোর্টসএর প্র্যাকটিস করছিল , যে কাচ ভেঙ্গেছে সেটা মাঠের উঁচু বেড়া এড়িয়ে ক্যাম্বিস বল লেগে হয়ে থাকতে পারে , ডিন ম্যামকে তাড়া করার ঘটনা স্রেফ ‘সাজানো’, ভিসি বলছেন লোকজন টি এম সি পির ফ্ল্যাগ নিয়ে এসছিল উনি দেখেছেন ? এক্ষুনি ওনার ‘ইতিহাস, ভূগোল’ খতিয়ে দেখতে হবে সুব্রতবাবুর নির্দেশমতো, তাহলেই ওনার বক্তব্যের সত্যতা জলের মত পরিষ্কার!
অথচ সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী, শিক্ষক, পুস্তকবিক্রেতা । অথচ সেদিন ভাঙ্গা গেটে ছাত্রছাত্রীদের ব্যারিকেডের সামনে থেকে পিছু হটতে বাধ্য হল হামলাকারীরা । অথচ ঘটনার তীব্র নিন্দায় সমস্ত মিডিয়া (চ্যানেল টেন বাদে) । অথচ সে দিন ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হল ঘটনার পর । অথচ পরেরদিন পথে নামলেন হাজার হাজার লোক । মিছিলে পা মেলালেন অরুণাভ ঘোষ, রতন খাসনবিশ, অসীম চট্টোপাধ্যায় সহ রেজিস্ট্রার , ডিন, ভিসি সহ প্রেসিডেন্সির অসংখ্য প্রাক্তনী । আই সি-এস এফ আই-অরাজনৈতিক দলাদলি ভুলে প্রেসিডেন্সির সম্মিলিত চেহারা দেখল কলকাতাবাসী । দুজন নিরপরাধ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা আনায় ধিক্কারে ফেটে পড়ল সবাই । মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রেসিডেন্সি, সেন্টার অফ এক্সেলেন্সের পথিক প্রেসিডেন্সিতেই তাণ্ডব ওনার সংগঠনের ছাত্রশাখার । যেখানে সমস্ত ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত করাই ওনার একমাত্র লক্ষ্য(একই দাবি মাননীয় ব্রাত্য বসুরও) সেখানে এই ঘটনা । আশ্চর্য, অমিত মিত্রের প্রেসিডেন্সি, ব্রাত্য বসুর প্রেসিডেন্সির দু’শ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহিরাগত ছাত্রদের(পড়ুন ত্রিশোর্ধ লোকজন) আক্রমণের ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে । মিছিলের পরে রাজ্যপালকে জমা দেওয়া ডেপুটেশনের প্রেক্ষিতে কলেজ পরিদর্শনে আসেন রাজ্যপাল । এখন এই একুশে আইনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্সির লড়াই । আসলে, প্রেসিডেন্সি তো শিক্ষা দেয়, আঘাত যদি নেমেই আসে পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দাও ।
----------------------------------------------------------------------------------------
লেখিকা প্রেসিডেন্সির ছাত্রী, গত পরশুর ভাঙচুরের প্রত্যক্ষদর্শী।