
জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যাকাণ্ড — ঔপনিবেশিকতার নৃশংস চিত্র ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল সংঘঠিত হওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজও চর্চা অব্যাহত। বিগত ১০০ বছরে যখনই পৃথিবীর নানা প্রান্তে শাসকের নৃশংসতায় মানবাধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে ততবারই উঠে এসেছে জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রসঙ্গ। মাইকেল ও' ডায়ার এবং অ্যাক্টিং ব্রিগেএডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার গণহত্যাকারীদের তালিকায় ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন পেলেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্তরে প্রধান সংগঠক সম্পর্কে আজও স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। জালিয়ানওয়ালাবাগের তাৎপর্য কী? তার শিক্ষাই বা কী? এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলি ঠিক কী রকম ছিল? 'রক্তের শপথ জালিয়ানওয়ালাবাগ' বইটিতে লেখক কৃশানু ভট্টাচার্য চারটি অধ্যায়ে এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করেছেন। বইটি পড়লে নানা টুকরো-টুকরো ঘটনার অভিঘাত কিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কাজ করেছিল তা প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। শত শহীদের রক্তে রাঙা জালিয়ানওয়ালাবাগ শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্মারকে পরিণত হয়েছে। যদি আমরা ইতিহাসকে শিক্ষক মনে করি তবে দেখা যাবে জালিয়ানওয়ালাবাগে ভারতীয়রা কোনো সংকীর্ণ ধর্মীয় কিংবা জাতিগত পরিচয়ের সূত্রে নয়, বৃহত্তর ঐক্যের সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। ভারতবর্ষের এই মূলগত সংহতিই আজ প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ১০০ বছর পরেও জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের কাছে এক দৃঢ় শপথের বার্তা নিয়ে আসে।
ভারতের নানা ভাষা, সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠানের কথা আমরা সকলেই কমবেশি জানি। তবু তারই মাঝে প্রবহমান জাতীয় ঐক্যের সুর বিভিন্ন মাধ্যমের মত প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। বলা হয়ে থাকে যে সাহিত্য হল দেশ কাল সমাজের প্রতিচ্ছবি। ভাষা সংসদ থেকে প্রকাশিত ‘নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ভারতীয় গল্প’ বইটি পড়লে এই মূলগত ঐক্যের সুরটি চমৎকার ভাবে প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। এই বইটিতে সাহিত্য অকাদেমী স্বীকৃত তেইশটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় ভাষার নির্বাচিত গল্পের অনুবাদ সংকলিত হয়েছে। যে সব ভাষা থেকে গল্পগুলি অনুদিত হয়েছে সেগুলি হল : অসমীয়া, উর্দু, ওড়িয়া, কাশ্মীরি, কন্নড়, কোঙ্কনি, গুজরাটি, ডোগরি, তেলুগু, তামিল, নেপালি, পাঞ্জাবি, বোড়ো, মৈথিলী, মনিপুরী, মারাঠি, মালয়ালাম, রাজস্থানি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, সিন্ধি, হিন্দি এবং ভারতীয়দের লিখিত ইংরেজি গল্প। যেহেতু নির্বাচিত অনুবাদ গ্রন্থ তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষার কোন গল্প এখানে প্রকাশিত হয়নি। গল্পগুলির অনুবাদ অত্যন্ত সাবলীল হয়েছে। সংকলনটি বাংলা ভাষার পাঠককে বহুভাষাভিত্তিক ভারতীয় সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় তো করাবেই, তার পাশাপাশি সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ক্ষেত্রেও এর জরুরি ভূমিকা থাকবে।
শোভাবাজার রাজপরিবারের ইতিহাস এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা পুরনো কলকাতার কাহিনি এই বই। বইয়ের একেবারে শুরুতে রাজপরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য স্বপনকৃষ্ণ দেব শোভাবাজার রাজবাড়ির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা শোভাবাজার নামের ইতিহাস সন্ধান করেছেন। মহারাজা নবকৃষ্ণ দেবের উত্থান ও পলাশী যুদ্ধের পরে পরেই তাঁর হঠাৎ বড়লোক হয়ে যাবার পিছনে বহু মনগড়া মিথ প্রচলিত রয়েছে। বইটিতে সেই ২৬০ বছর ধরে চলে আসা ধারণাগুলিকে তথ্যের ভিত্তিতে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। মহারাজা নবকৃষ্ণের নামের সঙ্গে দেশদ্রোহী তকমাটা জোড়া হলেও, সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব হিসেবে দেখানোর মানসিকতাই এই তকমা সৃষ্টির মূলে বলে দাবি করেছেন লেখক চয়ন সমাদ্দার। এছাড়াও সাম্প্রতিক সংযোজন করে মহারাজা নবকৃষ্ণ দেবের একটি বংশলতিকা যুক্ত হয়েছে। বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি এ বইটির অন্যতম আকর্ষণ।