'বিজেপিকে একটিও ভোট নয়' এই স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পথ হাঁটলেন কাতারে কাতারে মানুষ। মাস দুয়েক আগে ভারতসভা হলের এক নাগরিক কনভেনশনে গঠিত হয় 'ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা' নামের মঞ্চ। শুরু থেকেই যার পরিচিতি তৈরি হয়েছে মূলত 'নো ভোট টু বিজেপি' এই স্লোগানের মাধ্যমে। পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত থাকলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই মঞ্চের প্রচারে সাড়া দিয়েছেন সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষ। সম্ভবত বিজেপিই হল দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল, যার বিরুদ্ধে ভোট না দেওয়ার বার্তা নিয়েই প্রচার অভিযান সংঘটিত হলো।
এই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে সুদূর সিংঘু সীমান্ত থেকে এসেছিলেন সদ্য একশো দিন অতিক্রম করা নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনের সাত জন নেতা। পাঞ্জাবের 'ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন' সংক্ষেপে বিকেইউ এর ডাকোণ্ডা শাখার পক্ষ থেকে ছিলেন মনজিৎ ধানের, ডোয়াবা শাখার তরফে এসেছিলেন মনজিৎ সিং রাই। রাজস্থানের 'গ্রামীণ কিষান মজদুর সভা'র তরফ থেকে বক্তব্য রাখেন রজনীত সিং। এছাড়াও ছিলেন অভিমন্যু কোহার, হরিয়ানার 'সংযুক্ত কিষান মোর্চা'র প্রতিনিধি এবং 'কীর্তি কিষান ইউনিয়ন' এর রামিন্দর সিং। বক্তারা সকলেই একযোগে কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। রামিন্দর সিং স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা আর পাঞ্জাবের যোগসূত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে এই কৃষক বিরোধী বিজেপি সরকারকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান রাখেন।
চাঁচাছোলা পাঞ্জাবি উচ্চারণে 'কমল কা ফুল' কে একেবারে নর্দমায় ছুড়ে ফেলতে বলেছেন মনজিৎ ধানের। নয়া কৃষি আইন যে আসলে আম্বানি আর আদানির স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই সুকৌশলে আনা হয়েছে তার সবিস্তার ব্যাখ্যার পাশাপাশি সারা দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন আরও তীব্র করার বার্তা দিয়েছেন তরুণ নেতা অভিমন্যু কোহার।
কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বদের পাশাপাশি এনআরসি, সিএএ, এনপিআর নিয়ে বক্তব্য রাখেন অসম থেকে আসা নাগরিকত্ব আন্দোলনের কর্মী কমল চক্রবর্তী। সর্বনাশা এই আইন যেভাবে রাতারাতি আসামের সতেরো লক্ষেরও বেশি জনকে রাষ্ট্রহীন করেছে, এ রাজ্যের মানুষকে সেই ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সিপিআই এম এল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাম আন্দোলনের কর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। মঞ্চের তরফ থেকে বক্তব্য রাখেন গণ আন্দোলনের কর্মী কুশল দেবনাথ, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এ রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি কে ভোট না দিয়ে পরিবর্তে যে কোন দলকে ভোট দেওয়ার আবেদন রাখেন তাঁরা। সভার একেবারে শেষ বক্তা ছিলেন দীর্ঘদিনের মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র। কেন বিজেপি আর পাঁচটা দলের থেকে আলাদা তার সবিস্তার ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিজেপির গণ আন্দোলনের বদলে গণতন্ত্র বিরোধী ভূমিকার কথা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি।
সভার সঞ্চালক কস্তুরী এনআরসি সিএএ নিয়ে এগারো দফা দাবিকে সামনে রেখে আগামী দিনে বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এদিনের মিছিলে ছাত্র যুবদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বিভিন্ন জেলা থেকেই মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিদ্যাধরপুর থেকে আসা শ্যামলী মণ্ডল বললেন, 'আর যাকেই ভোট দিই না কেন অন্তত বিজেপি-কে ভোটটা দিচ্ছিনা'। মঞ্চের প্রচার অন্তত এটুকু বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে।