এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • আমাদের শোচনীয় বিচ্ছেদ

    আলিজাই জাফর লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ | ৬৯৫ বার পঠিত
  • অদ্ভুত লাগে, ভারতের সঙ্গে এই মিলটা খুবই অদ্ভুত লাগে। আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া উনসত্তর বছরের পুরোনো দুটো টুকরো; সামান্য প্ররোচনায় তাদের একটার দিক থেকে অন্যটার দিকে ঘৃণা আর ক্রুরতার ছোঁড়াছুঁড়ি দেখে আমি উত্তরোত্তর হতাশ হয়ে পড়ছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টুকরোগুলো পাথর হয়ে উঠেছে আর তাদের চাপে কেই বা গুঁড়িয়ে না যাবে !

    তবে ভারতের সঙ্গে এই সাদৃশ্যটা খুবই অদ্ভুত। অমিতাভ বচ্চন যখন হসপিটালে, তখন আমরা তাঁর সেরে ওঠার জন্য প্রার্থনা করি; রণবীর কাপুরের ছবি হিট করলে নীতু আর ঋষি-র চেয়ে আমাদের বেশী গর্ব হয়; আমরা কোনদিন অস্বীকার করি না কিশোর আর রফির গলার মত আবেদন আর কেউ আনতে পারেন না; তাদের বিষয়ে সবাই একমত যে তাঁদের নিজেদের গানের জগতের ছায়া আমাদের ওপরে পরে না; যদি বাইরের কারুর সঙ্গে কথা বলতে হয়, তখন শুধু এই ‘পরদেশি’ দের আমরা ‘দেশি’ শ্রেণীতে রাখি; তাঁদের স্তম্ভে আমাদের ইতিহাস লেখা থাকে, আমাদের ভাষায় তাঁদের শিকড় রয়েছে।

    ভারতের সঙ্গে এই মিলটা আরও বেশি অদ্ভুত। পিঠোপিঠি ভাইবোনের মত আমরা পরস্পরের প্ররোচনায় উত্তেজিত হচ্ছি, মারামারি করছি। শেষ অবধি পরস্পরের প্রতি আচরণে আমরা একই মাত্রায় আবেগপ্রবণ আর অধৈর্য হয়ে পড়ছি, “দ্যাখ ! তোরা কাশ্মীরে কি করেছিস !’ ‘আর তোরা বালোচিস্তানে কি করছিস !’ ‘তোরা উরিতে আমাদের আগে আক্রমণ করেছিস !’ ‘আর তোরা বুঝি কার্গিলের কথা ভুলে গেছিস ?’ ‘তুই আগে শুরু করেছিস !’ ‘না, তুই আগে করেছিস !’

    অনাথ আশ্রমে পালিত শিশুদের মত, আমরা অনুভব করি আমরা মুক্ত, আমাদের অধিকার আছে কিন্তু কি ভাবে সেটা ব্যাবহার করতে হয় আমরা জানি না। মুসলিমরা গোরুর মাংস খাওয়ার কারনে খুন হলে ওরা সেটাকে পাত্তা দেয় না; রমজান মাসে ইফতারের আগে খাবার খেয়ে নেওয়ার কারণে খ্রীষ্টান আর হিন্দুরা নির্যাতিত হলে আমরাও চোখ বুঁজে থাকি। আমরা বলি ওরা কাশ্মীর ধ্বংস করছে, কাশ্মীরীদের স্বাধীন হওয়ার (অথবা অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার !) অধিকার আছে, কিন্তু আমরা কিভাবে বাংলাদেশের গলা টিপে ধরেছিলাম- সংখ্যাগুরু যেখানে বাংলাভাষী তেমন একটা দেশ কেন উর্দুকে জাতীয় ভাষা বলে মেনে নেবে না !- সেকথা আমরা ভুলে যাই। আমরা কখনোই সে বিষয়ে কথা বলি না, বলি কি ! নাকি বড্ড তাড়াতাড়ি আশা করে ফেলছি বোধহয়।

    আমি যখন গত দশ বছরে আমার সবচেয়ে হাসিখুশি দিনরাত্তিরগুলোর কথা ভাবি, তার অর্ধেকের বেশিই সীমান্তের ওপারের ভাইবোনেদের কাটানো; একসঙ্গে খাওয়া, গান শোনা, রাজনীতির কথা আলোচনা, হাসি, গল্প আরও কতকিছু; কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল তার মধ্যেও যে সীমারেখা আমাদের বিভক্ত করে রেখেছে তার বিরুদ্ধে একটা তীব্র চাপা প্রতিবাদ আমরা টের পাচ্ছিলাম। 

    এখন এই কথা ভাবলে মনে হয় ভারতের সঙ্গে এই মিলটা আদৌ অদ্ভুত নয়। আমাদের চিরপ্রণম্য যে পিতা বা প্রভু, সেই মহাশক্তি যা আমাদের শাসন করে, সেই ‘পশ্চিম’ হল আমাদের অদৃশ্য অভিভাবক, আমরা প্রতিনিয়ত যাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু যিনি কোনওদিনই প্রকৃত অর্থে আমাদের ভালোবাসেন নি। আমাদের পরস্পরের জন্য যদি সত্যি বলতে যে শুধু আমরাই আছি, সেইটা স্বীকার করতে আমাদের অদ্ভুত এক অনিচ্ছা। 

    আশ্চর্য এটাই যে সুদুর অতীতে নেওয়া এক সিদ্ধান্তের বোঝা আমরা বয়ে চলি; যে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আলাদা একটা সামাজিক-রাজনৈতীক পরপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে একজন তৃতীয় ক্রুর শত্রুপক্ষ এটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল যাতে আমরা পরস্পরকে শত্রু / আক্রমণকারী হিসেবেই দেখি আর হ্যাঁ, আমরাও সেটাই করে চলেছি এখন পর্যন্ত। যেটা অবাক করে সেটা হল আমাদের সামনে পড়ে থাকা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার দিকে আমরা চোখ বুঁজে থাকি আর আমাদের যাবতীয় রাগ-হতাশা-বিষাদ আমাদের কাছে শত্রু হয়ে দেখা দেয়।

    সত্যি বলতে কি, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অদ্ভুত ব্যাপার হল আমাদের ঘন ঘন চেহারা (ভূমিকা) বদলানোর প্রবণতা। বিশ্বের কাছে বেশির ভাগ সময়ে, আমরা সহোদর ভাই-বোনের মত; সারাক্ষণ বাবার নেকনজরে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে বাবা বেড়াতে নিয়ে যায় কি একটা খেলনা কিনে দেয় কি আরো ভালো হয় যদি হাতখরচের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেয়। আর বাকি সময়ে আমরা বিবাহবচ্ছিন্ন দম্পতির মত, একসঙ্গে থাকছি, সারাক্ষণ পরস্পরের পেছনে লাগছি, পরস্পরকে দোষারোপ করছি যে কার জন্য একসঙ্গে থাকা যাচ্ছে না, কিন্তু কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছি না যে আমরা আর একসঙ্গে নেই আর সেইমত সমঝোতাতেও আসতে পারছি না। মনে হয় যেন আমাদের ভাগাভাগির ক্ষত এখনও এত জীবন্ত, এত যন্ত্রণাদায়ক যে আমরা যে ছেড়ে এসেছি তা ওরা মেনে নিতে পারে না, আর ওরাই যে আমাদের ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছে আমরাও এটা মেনে নিতে পারি না । এইরকম একটা ক্ষেত্রে আমরা শুধু এই ভেবেই শান্তি পেতে পারি যে অন্যজনও আমার মতই আহত হয়েছে; সর্বপ্রকারে সেই চেষ্টা করাই এখন আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

    আজ আমি পড়লাম যে ভারত দাবী করেছে যে তারা পিওকে-তে একটা সার্জিক্যাল অ্যাটাক করেছে। কথাটা হাস্যকর। তক্ষুণি আমি কতগুলো একইরকম হাস্যকর পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াও দেখলাম। অনেকেই অনৈতিক কাজ করছে, কেউ এও যে বলছে সীমান্তের ওপারের গণহত্যার নায়কদের কাছ থেকে আর এর চেয়ে বেশি কি আশা করা যায়! হঠাৎ করে যেন সবাই নিজেদের রাজনীতিকদের গৌরবময় চরিত্রের প্রতি খুবই ক্ষমাপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। এটা সত্যিই খুব অদ্ভুত যে অন্যের দিকে আঙুল তোলার সময় কত তাড়াতাড়ি আমরা ভুলে যাই যে দুদিকেই সরকার কত ঝামেলার মধ্যে আছে।

    আমি নিশ্চিত যে এই খবরটা একমাসের মধ্যে আমার মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু আমার মাথা থেকে যেটা বেরয় নি সেটা হল যুদ্ধপরিস্থিতি এড়াতে একটা ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি (Head of State) দিল্লীতে এসেছেন; কিম্বা দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমাতে একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ তাঁর পাকিস্তানি সহরাজনীতিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন; কিম্বা সেই সময়ের কথা যখন সৌরভ গাঙ্গুলী স্বীকার করছেন আক্রামের থেকে বড় বোলার আর হয় না; বা যখন সোয়েব মালিক সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করছেন; বা সেই সবচেয়ে সুন্দর রাজনৈতিক মিলনের ছবি যেখানে ওয়াগা সীমান্তে দু দেশের রক্ষীরা হোলি উপলক্ষে আলিঙ্গনে বেঁধেছেন পরস্পরকে। আমার মনে হয় এটা সম্ভব এই কারণেই যে আমাদের মধ্যে অনেকেই শান্তি চায়, আমরা তার আশাতেই থাকি কিন্তু অন্যেরা যুদ্ধ চায়।

    আমার মনে হয়, আমি বলতে চাইছি যে, ২০ বছর পরে উরি পাঠ্য বইয়ের একটা ঘটনামাত্র হয়ে থাকবে। আমাদের সংকলিত ইতিহাসের পাতায় এটা আর একটা সেইরকম সময় হিসেবে চিহ্নিত হবে যখন ভারতের সঙ্গে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ প্রায় ‘গরম’ হয়ে উঠেছিল। আমার কাছে এটা হবে আমার ভারতীয় বন্ধুদের চিনে নেওয়ার আর একটা সুযোগ (এবং উল্টোটাও)। আমার বুড়ো কাকার কছে এটা শুধু মাত্র আর একটা সেইরকম ঘটনা, পাকিস্তানের ব্যর্থতার সময় একটু মন ভালো করার জন্য যে বিষয়ে আলোচনা করে সান্ত্বনা পাওয়া যায় এই ভেবে যে দেশভাগটা হয়েই সবচেয়ে ভালো হয়েছে আর ভারতকে ছেড়ে আমরা ভালোই আছি।

    কিন্তু যেটা কখনই ‘আর একটা ঘটনামাত্র’ হবে না, সেই কথাটা আমরা কেউ খেয়াল করি না। ঘটনাটা হল যে আমরা এখন বিচ্ছিন্ন আর সেই বিভাগটা আমাদের দুজনের কাছেই যন্ত্রণাদায়ক। ঘটনা হল একসময় যেখানে দুপক্ষের মধ্যে ঐক্য ছিল, পারস্পরিক গর্বিত হওয়ার মত কিছু বিষয় ছিল, এখন সেখানে শুধুই ঘৃণা। ঘটনা হল আমরাই একটা বাইরের শক্তি কে এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছি এবং নিজেরাই তাদের শিকার হয়ে পড়েছি। আর ঘটনা হল এটাই যে আমরা নিজেদের যতটা ভাল করে জানি ততটা আর কেউই জানে না কারণ একসময় আমরা একটি অস্তিত্বই ছিলাম।

    একটা কথা ভেবে ভাল লাগছে যে আমি যখন সীমান্তে ওপারে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে আমাদের সরকারের এই নিজেদের সর্বশক্তিমান দেখাবার প্রবণতা নিয়ে আমার উদ্বেগের কথা লিখলাম, সে লিখল, ‘ওরা যাই করুক না কেন আমি সবসময়ই তোমাকে ভালোবাসব’। এটা একধরণের স্বস্তি যে কুড়ি বছর পরে তুমি যদি পাঠ্যবইয়ের বাইরে এসে তোমার ধর্মগ্রন্থের দিকে তাকাও, তোমার এটা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগবে না যে তারা একটাই বাণী প্রচার করতে চাইছে, একটামাত্র বার্তা আমাদের মন দিয়ে অনুসরণ করতে হবে আর সেই বার্তাটা হল ভালোবাসা।


    আলিজাই জাফর ইসলামাবাদের বাসিন্দা, একজন অ্যাক্টিভিস্ট। অনুমতিক্রমে ব্লগটি অনুবাদ করেছেন অনিকেত পথিক। 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ | ৬৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | ***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৭81821
  • বাঃ। ব্যালান্সড লেখা।
  • Sayantani | ***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২২81822
  • ভালো লাগলো
  • ranjan roy | ***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:২১81823
  • সময়োপযোগী লেখা। অ্যাডমিনকে ধন্যবাদ।
  • Blank | ***:*** | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:৫২81824
  • ভাল লেখা
  • Prativa Sarker | ***:*** | ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৩৩81825
  • লেখাটা যেমন আন্তরিক, অনুবাদ তেমনি স্বচ্ছন্দ। ভালবাসা খুব কঠিন কাজ, আবার ওতেই লুকিয়ে আছে সমস্ত দ্বন্দ্ব সমাধানের চাবিকাঠি ।
    লেখাটা পড়ে মন ভালো হয়ে গেল !
  • কৌশিক দত্ত | ***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২১81826
  • প্রয়োজনীয় লেখা। প্রকাশ করার জন্য সম্পাদককে সাধুবাদ জানাই।
  • Prativa Sarker | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৮ ০৯:৪০81827
  • ভালো অনুবাদ। রাজনৈতিক পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে সেনাবাহিনীর মুঠি, জানি না এই মানুষগুলোর কি হবে !
  • Tim | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:০২81828
  • ভালো লাগলো লেখাটা, খুব আন্তরিক ও স্বচ্ছ। অনুবাদও খুব সাবলীল, বুঝতেই পারিনি অনুবাদ পড়ছি।
  • Bishan Basu | ***:*** | ০২ মার্চ ২০১৯ ০৬:০৮81829
  • এই লেখাটা অসামান্য। অনুবাদটাও।
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ০২ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩৮81830
  • ভালো লাগল. এই ধরণের লেখা আরো পড়তে চাই.
  • Rsnjusri mandal | ***:*** | ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪০81831
  • প্রয়োজনীয় লেখা।।।ভালো লাগলো।।।
  • শিবাংশু | ***:*** | ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৩81832
  • পাওয়ার অফ ডার্কনেস
    ------------------------------
    দেশ যখন ভেঙে গিয়েছিলো, আমার জন্ম হয়নি। তখন আর পাঁচটা 'নীলরক্ত' ভারতীয়র মতো আমার কষ্ট পাওয়ার অবকাশ ছিলোনা। কষ্ট শুরু হয়েছে পরবর্তীকালে। বিশ্বের তো ছেড়েই দিচ্ছি, এশিয় আর্থিক নিরিখেও অন্যতম দরিদ্র জাতি ভারতীয়দের (পাকিস্তানিসহ) রক্তের নীল আসে তাদের 'মেজাজ' থেকে। এই মেজাজের বয়স নেই নেই করেও হাজার তিনেক বছর হলো। অথচ কী বালখিল্যসুলভ প্রতিক্রিয়াসমূহ মেধার উচ্চতম স্তর থেকে গড়িয়ে আমাদের আমাদের শ্বাসরোধী পরিবেশে ঠেলে দিচ্ছে। ক্ষমতাদখলের লড়াই জিততে কত স্বাভাবিকভাবে দুদিকের লোকজন ভিত্তিহীন জাতীয়তাবোধ, রুচিহীন গালাগালি, লাঠালাঠি, নরহত্যায় মেতে উঠছেন। না উঠলে মনে হয় যেন যথেষ্ট 'দেশপ্রেমিক' হইলো না। অভিজ্ঞতা বলে, আবার সব 'ঠিক' হয়ে যাবে। 'হয়েই' যায় তো।

    অজিতেশের 'পাপপুণ্য' দেখার পর তলস্তয়ের 'পাওয়ার অফ ডার্কনেস' পড়েছিলুম ইংরিজি অনুবাদে। সূর্যহীনতার চেয়েও অনেক তীব্র মানুষের অহমের অন্ধকার। দ্বিতীয় রিপুতাড়িত বল্গাহীন অন্ধকারের তাণ্ডব। একবার প্রকাশ্যে নিয়ে এলে এই দানব কি আর গুহায় ফিরে যায়? জানিনা। হয়তো যায়। অনেকে বলছেন যখন, তখন যায় হয়তো। কিন্তু এই মুহূর্তে যা ঘটছে, তা আমার অনন্ত আশাবোধের সীমার ওপারের উপকথা। জানিনা জীবৎকালে সেই সক্ষম মানুষের পৃথিবীতে আর পৌঁছোতে পারবো কি না।

    একই যন্ত্রণা দুপক্ষে। গহনঘন ছাওয়া এই অন্ধকারের একটি রুপোলি রেখা হলো মানুষের এইসব প্রতিক্রিয়া। ভবিষ্যতের দেশ এই শিক্ষাটি পারলে কাজে লাগাবে। ছলনাময়ী বা কুহকিনী, যাই হোকনা কেন, আশা তোমাকে আমরা ছাড়তে পারিনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন