রিসার্চ গাইড যে বইখানি হাতে ধরিয়ে দিলেন, সেটার যে মলাট বাদে আর কোনো কিছু আমার চোদ্দপুরুষেরও বোধগম্য হবে না সেটা বেশ বুঝি। কিন্তু মোগলের সাথে পড়লে নাকি খানা খেতে হয়, তাই ব্যাগে ভরে ঘরে ফিরলাম।
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর বাউন্ডুলে ফ্রান্স গেলেও ঘুরেই বেড়ায়। আমারও তাই দশা। ছুটিছাটা পেলেই প্যারিসের লং ডিসটেন্স বাস ডিপো থেকে কোনো একটা বসে উঠে অজানা জায়গায় যাই। কদিন আরামে নিজের সাথে কাটিয়ে আবার ফিরে আসি। এবারে ভাবলুম, ট্রেন ব্যবহার করি। বাসওয়ালাগুলোও বোধয় এতো দিনে চিনে গেছে আমাকে। তাছাড়া ট্রেনের ভাড়া বাসের থেকে বেশ কম শুনেছি। আমার তখন সম্বল বলতে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া কটা ইউরো আর এক বাংলাদেশী মাইয়ারে বাংলা পড়াইয়া যা কিছু পাই, তাই। তার অর্ধেক তো চলে যায় ওরই বাপের রেস্তোরাঁতে ইলিশ ভাত, মাংস ভাত খেতে। কত আর পাউরুটি চিবোবো।
বইটি হস্তগত করে, একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম। দেখি চোখ কোন দিকে যায়, আমিও সেই দিকগামী হবো। তবে দুগ্গার কৃপাকে এইভাবে abuse করলে মাও যে আর বেশিদিন রক্ষে করবেননে সেটা বুঝি।
কোথায় যাচ্ছি ঠিক করার একটা দারুণ উপায় মাথায় এলো। ট্রেন স্টেশনে মানচিত্র দেখে যে অজানা নামটা বেশ সুন্দর লাগলো, সেটার একটা টিকেট কেটে উঠে বসলাম। ট্রেনে ভিড় তেমন ছিল না। ছাড়ার ঠিক আগে আমার সামনে এসে বসলেন যিনি তার সুগন্ধী থেকেই হলফ করে বলতে পারি, এনারা ট্রেনের লোক নন, দায়ে পড়ে ট্রেনে উঠেছেন। বছর পঞ্চাশেক বয়স হবে। এমনিতে ফ্রেঞ্চরা বেশ মিশুকে, ইনি দেখলাম এসেই একটা ম্যাগাজিন খুলে মুখের সামনে ধরলেন। আমি বেশ করে উল্টো দিকের পাতা পড়তে লাগলাম। ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছে।
কখন ঢলে পড়েছিলাম জানি না। একটা স্টেশন আসতে চোখটা খুললো। দেখি সামনের মহিয়সী নেই, কখন নেমেছেন জানি না, শুধু ম্যাগাজিনখানি আমার ব্যাগের উপর রাখা আর তাতে লিখে গেছেন, পড়া বেশ অভ্যাস, ছাড়বেন না। শুভ যাত্রা।
মধ্যে টিকেট চেকার এসে বলে গেলো, আর তিনটে স্টেশন পরেই আমার স্টেশন। খিদেয় পেট চোঁচোঁ করাও ছেড়ে দিয়েছে। যখন নামলাম, তখন সূর্য তখন নিজের প্রতাপ বেশ করে বোঝাচ্ছেন।
স্টেশন এর বাইরে সরাইখানা খুঁজতে গিয়ে আমি চিত্তির। এ কী ভাষা রে বাবা। না জর্মন, না ফ্রেঞ্চ, একটা অদ্ভুত জগাখিচুড়ি ভাষা, তার এক বর্ণও বুঝছি না। এমনিতেই আমার জর্মনের জ্ঞান সিলেটি চাষার ফার্সি জ্ঞানের থেকেও খারাপ। Guten Tag এর পরেই আমাকে German Made Easy হাঁতড়াতে হয়। আর এই অপূর্ব মিশ্রনের ফলে, ফ্রেঞ্চটাও ভুলে যাবার জোগাড়। কী করবো ভাবছি, এমন সময়, বেশ পষ্ট শুনলুম, একজন নিখুঁত ফ্রেঞ্চে বলে উঠলো, দেখ আজ আবার শহুরে বাবু এয়েচেন। ঘুরে দেখি এক ছোকরা বেশ মজা নিচ্ছে আমার হালের্। আমার মুখখানি দেখে তার মায়া হলো কিনা জানি না, আমাকে বললে, জেরার্ডরে খুজেঁন মশাই। এই রাস্তায় গিয়ে যে তেমাথায় মিশছে, ওখানে গিয়ে কাউকে জিগান, দেখায় দেবে। আমার জ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করে, জর্মনে ধন্যবাদ জানিয়ে এগোলুম।
কেঁদে ককিয়ে জেরার্ড মহাশয়ের বাসার দেখা যখন পেলুম, তখন মনে হলো, ফেরার টিকেট কেটে ভাগি প্যারিস। নিচে বার, উপরে বোধয় হোটেল। সাইনবোর্ডে শুধু বারটুকু টিকে আছে। ভিতরে গিয়ে দেখি "কেউ নেই, কিছু নেই সব আলো নিভে গেছে", শুধু কাউন্টার এর উপরের আলোটুকু ছাড়া। সেখানে বসে এক মহাশয় হিসাব মেলাচ্ছেন বা ওইরকমই কিছু করছেন। সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বললুম, মহাশয় কি জেরার্ড নাম পরিচিত?(ফ্রেঞ্চ ভাষাটা এমনই, একটু সন্মান দিতে গেলেই বেশ পেঁচিয়ে বলতে হয়)।
মুখ তুলে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। মুখটা অনেকটা ৩ কেজি দইয়ের গোল ভাঁড়কে উল্টিয়ে বসানো, গোঁফটা দিয়ে অনায়াসে বার এর মেঝে ঝাড়ু দেওয়া যায়, হাতগুলো দেখে মনে হলো সিঙ্গাপুরি কলা ঝুলিয়ে রেখেছে দুই ছড়া। চশমার উপর দিয়ে, নিচে দিয়ে এমন ভাবে দেখতে লাগলেন যেন আমি এই মাত্র চাঁদ থেকে নেমে এসেছি। তারপর বললেন, আজ্ঞে,কী দরকার? (টোন শুনে মনে হলো বললেন, কী ধান্দায় এসেছিস বল)
বললুম, থাকার রুম চাই।
এতে কাজ হলো দেখলুম। উঠে বসে, একটা রেজিস্টার বার করলেন। কইলেন, কী রুম চান? আমি মনে মনে বললুম, তুই কি প্যারিসের হিল্টন হোটেলের রিসেপশনিস্ট নাকি রে? মুখে বললুম, দেখুন আমার পকেটে যা আছে তা দিয়ে আপনার বাইরের ওই বারান্দায় শোবার মতো পয়সা দিতে পারবো। এবারে হাসলেন। ঠা ঠা করে খুব এক চোট হেসে বললেন, কবি নাকি? আমি বললুম, যখন হালকা গোফ উঠেছিল, তখন ক্লাসের ঐশীকে গোটা দুয়েক পদ্য লিখিছিলুম বটে, কিন্তু ওই বদঅভ্যাস বহুকাল আগেই ছেড়েছি। মুখ কুঁচকে বললেন, ঐশী কে? তারপর আবার সেই হাসি। বললেন, বুজিছি বুজিছি। অমন কটা চিঠি আমিও মারিকে লিখেছিলাম। আসলে কমাস আগে, একজন এই আপনার মতোই এসেছিলো। ওদের জামাকাপড় আর গায়ের গন্ধেই বোঝা যায় পদ্য লেখে। (আমি আর বললুম না, তোর মুখের রসুনের গন্ধে আমি ডেস্কের এদিকে দাঁড়াতে পারছি না, চটিয়ে লাভ নেই, সাকুল্যে এই একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই)। রুম নিয়েছিল। যাবার পর দেখি রুমের দামি ফুলদানিটা গায়েব। তারপর থেকে কবিরা interdit (অর্থাৎ not allowed)। বলে আবার সেই হাসি। আমি কাঁচুমাঁচু মুখে বললাম, আমি খোদার কসম খেয়ে বলছি, আমি কবিতা লিখি না। হেসে বললেন, নাম কী? আমার নামটা নিয়ে ফ্রেঞ্চরা যেরকম জট পাকায়, শুধু মাঝের নামটা বললাম। লিখে নিয়ে বললেন, চলুন রুম দেখাই।
সে রুমের বর্ণনা নাহয় নাই বা শুনলেন। জরুরি না। বাঙালি তো, দুপুরে স্নান না করে থাকতে পারি না। নেয়েধুয়ে করে বেশ সুন্দর একটা eau de toilet লাগিয়ে নেমে এলাম যখন তখন প্রায় বিকেল। দুএকটা লোক এসে গেছে বারে। জেরার্ডকে এক ফাঁকে বললাম, কিছু খাবার পাওয়া যাবে? বললে, ডিনার সেই আটটায়। তবে দাঁড়ান দেখি, বলে চলে গেলো। দেখি খানিক বাদে দুটি চীজ স্যান্ডউইচ পাঠিয়েছে।
রাত এগারোটা বাজে। গাঁগঞ্জের চরিত্র আমাদের বাংলায় যেমন, ফ্রান্সের গ্রামেও তেমন। সবাই চলে গেছে। জেরার্ড দেখি ধুচ্ছে গ্লাস, টেবিল এই সব। আমি খেয়েছি এর মধ্যে, বাইরে গিয়ে যে সস্তার সিগারেটটা খাই তখন, সেটা খুঁজে পেতে কিনেও এনেছি। বসে বসে তাই ফুঁকছি আর জেরার্ড এর কাজ দেখছি। যে বইটা বগলদাবা করে এনেছি, সেটা পড়ার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। বুঝি না বুঝি, গোটা দুয়েক random লাইন quote করে নিজেকে বোদ্ধা হিসাবে চালিয়ে দিতে ক্ষতি কি!
এতশত ভাবছি, এমন সময় এর মধ্যে জেরার্ড এসে বসলো টেবিলে। বললো, কবি নয়, তো করো কী? আমি বললাম, ফ্রান্স সরকার গোটা দুনিয়া থেকে কিছু আজব জীব ধরে এনেছে। কোন চিড়িয়াখানায় আমাদের রাখা হবে সেই নিয়ে তর্ক চলছে। ততদিন আমাদের ছেড়ে রাখা হয়েছে। বললে, কি রকম? দেখলুম এ ছাড়বে না। বললুম, আমার মতো কিছু অকালকুষ্মাণ্ডকে এনে আমাদের দিয়ে রিসার্চ করাচ্ছে। (আসলে আমার মনে হয় আমাদের নিয়ে রিসার্চ করছে, সেটা বেমালুম চেপে গেলুম)। এবারে বুঝলো, হেসে বললো, তাই বলুন,আপনি ডক্টরেটে করছেন। অনেক পড়তে হয় শুনেছি। কিন্তু এতো পড়ে করবেন কি?
আমি দেখি পাছে এ আবার শুরু করে, চাকরিবাকরির ধান্দা করো, বে-শাদী করো, তাই বললুম, জ্ঞানই তো জীবন। বললে, তাই নাকি? একটা গল্প শুনবি? তবে উপরে চল। কোন বাঙালি গল্প শোনার, থুড়ি, আড্ডা মারার লোভ সামলাতে পারে। পিছু পিছু গেলাম। বেশ বুঝলুম, এ এবারে আমার রাতটা বরবাদ করবে, তও গেলুম। নিয়ে গেলো নিজের কামরায়। অতি সাধারণ একটা কামরা, সাধারণ কিছু আসবাব আর এক মহিলার ছবি চোখে পড়লো। যে স্নিগ্ধতার উপর আমাদের বাঙালি মেয়েরা একচেটিয়া মৌরসীপাট্টা নিয়ে বসে আছে, সেই স্নিগ্ধতা আছে মুখটায়। মারকাটারি সুন্দরী কিছু নয়, এমন মেয়ে আকছার ঘুরে বেড়াচ্ছে প্যারিসে। কিন্তু মুখটা দেখলে যেন বিশ্বাস জন্মে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে বললেন, এই মেরি। বস।
আমি বসলুম। একটা হুইস্কির বোতল বার করলেন। তারপর শুরু হলো গল্প।
ছোট থেকেই এই গ্রামেই থাকি। এই বার আমার বাপের ছিল। তাই, পড়াশোনা কিছুই করিনি, কাজ শিখেছি শুধু মদ মেশানো আর বেচা। বাইরের রাস্তা ধরে সোজা বাঁদিকে চলে গেলে গ্রামের একমাত্র ফার্মেসী, রুডলফ বুড়োর। তার মেয়ে মেরি। কেমন দেখতে সেটা তো দেখেইছিস। কিন্তু পড়াশোনায় অসামান্য। আশপাশের সবাই বলতো, রুডলফ শেষ বয়সে মারির সাথে প্রাসাদে থাকবে। সেই মারি যখন আমার প্রেমে পড়লো, রুডলফ কম গাল দেয়নি ওকে। কিন্তু মেয়ের এক জেদ। রুডলফ হেরেছিল, মেরি আর আমি জিতেছিলাম।
ও স্কুল পাস্ করতেই আমরা বিয়ে করলুম।
এই গ্রামে তখন কলেজ গেছে শুধু পোস্টমাস্টারের ব্যাটা। গরবে পা মাটিতে পড়েনা। খুব দেমাক। আমার মনে হতো, মেরি চাইলে ওকে দু দিনে পেরিয়ে যাবে। সাদ্ধিসাধনা করে ওকে ভর্তি করলাম প্যারিসের অমুক (নামটা বলবো না- লেখক) কলেজে। রোজ আসা যাওয়া করতো। রেজাল্ট এলো যখন ফার্স্ট ইয়ারের, তখনই বুঝলাম, মেরি আমার গর্ব রাখবে। আর পোস্টমাস্টারের থোঁতা মুখ ভোতা করে দেবে। আস্তে আস্তে সময় কাটতে লাগলো। আমি এই বার নিয়ে থাকি, মেরি পড়াশোনা নিয়ে। আর কাজের মধ্যে অকাজ করতাম একটা, তখন বুঝিনি। যাকে পারি ধরে ধরে শোনাতাম মারির কথা। একদিন তো পোস্টমাস্টারকেও কথায় কথায় শুনিয়ে এলাম।
এই যে তুই দিব্বি আমার ফ্রেঞ্চ শুনে বুঝতে পারছিস,এই শুদ্ধ ফ্রেঞ্চও মেরিই শিখিয়েছিলো আমাকে। খেয়াল করে দেখলুম, সত্যিই তো, এতক্ষন খেয়ালই করিনি যে সেই উদ্ভট জর্মন মেশানো ফ্রেঞ্চ এটা নয়।
বলে চললেন জেরার্ড, এরই মধ্যে এক দিন রাত্রে, তখন মেরি পড়ে থার্ড ইয়ারে, আমাকে বললো, খাটের পাশে একটা ছোট দোলনা লাগাতে হবে শিগগিরই। বলি তোকে শোন্, পাক্কা দশ মিনিট এক নিস্বাসে চুমু খেয়েছিলাম। পরের দিন থেকে, ট্যাক্সি ঠিক করলাম, ট্রেন আর নয়। ওর কথায় কানই দিলাম না।
একে এত ভালো রেজাল্ট, তার উপর এই খুশি, সেবারে খ্রীষ্টমাস পার্টি দিলাম যেমন আমাদের গ্রামে কেউ কোনো দিন দেখেনি। পয়সা কম পড়তে বাবার পুরানো ট্যাঁক্ঘড়িটা বন্দক দিয়ে দিলাম। মারির জন্য সব কবুল।
সেই রাতে সবাই মদ খেয়েছিলো বটে। আর নেচেওছিলো। বুড়ো বুড়ো লোকগুলো জোয়ান ছুড়িদের সাথে গোড়ালি ঠুকে ঠুকে , চক্কর কেটে কেটে, লাফ মেরে নাচ কি সে, না দেখলে তুই বিশ্সাস করবিনা। মারির বাপ কি কম নেচেছিল! শেষে ওর মা যখন পারলে না, তখন হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ের সাথে নাচতে লাগলে।
মেরির এক মামাতো না খালাতো ভাই এসেছিলো। তার ঘর মাইল দশেক দূর। মধ্যে মেরি বললো,ওরা চলে যাবে গো, দাড়াও তুলে দিয়ে আসি।ওদের গাড়িটা বড় রাস্তার ওপারে আছে। আমি বললাম যাও।
নাচ তখনও চলছে, সময়ের খেয়াল কারুর নেই। হঠাৎ কে যেন ছুটে এসে বললে, জেরার্ড বাইরে আয়। আমি তখন নাচের আর মদের ঘোরে আসতে চাইনি। জোর করে নিয়ে এলো।
দেখি ছোট একটা জটলা। আমার তখন মদের ঘোর কেটে গেছে। তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, মেরি শুয়ে আছে। রাস্তায়। শুধু ঘাড়টা অদ্ভুত ভাবে বাঁকা। কসম বলছি, বুঝতে পারিনি, মেরি হঠাৎ রাস্তায় কেন শুয়েছে। তুলতে গেলাম, হুইস্কির গ্লাসে একটা লম্বা চুমুক দিলো জেরার্ড, তখন বুঝলাম, ওর শরীরের নিচে রক্ত জমে আছে।
জেরার্ড চুপ। আমি চুপ। মারির ছবিটাও চুপ।
- নিজে হাতে ওর খোলা চোখ দুটো বন্ধ করেছিলাম। হাহাকার করে উঠেছিলাম। ঈশ্বরকে গালাগালি দিতে গিয়েছিলাম। এক মুহূর্তে আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের সব স্বপ্ন , মেরির অধ্যবসায় , ওর হৃদয়ে সঞ্চিত জ্ঞান আর আমাদের বাচ্চা। জেরার্ড যখন কথাগুলো বললো, মনে হলো ওর আওয়াজটা অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে।
আমার মনে পড়লো মুমতাজকে হারানোর পর শাহজাহানের অশ্রুভেজানো খেদোক্তি। বলতে গিয়েও বললাম না। জ্ঞান ফলানোর অনেক জায়গা পাবো।
আমার খুব কাছে ঝুকে এলো জেরার্ড। ওর মুখের হুইস্কির গন্ধটা কমে গেছে তখন। বললো, তাই বলি ডক্টর , কী করবি বই পড়ে? পারলে জীবন পড়, মানুষের জীবন পড়।
সত্যিই তো, সুর অসুরের যুদ্ধে, আর্কিমিডিসের গলা কাটতেও লেগেছিলো একটি কোপ আর এই উজবুকের গলা কাটতেও এক কোপই লাগবে।
প্যারিস ফিরেছিলাম পরের দিন ভোরের ট্রেনে। আর হ্যাঁ, ওই বইটা আর সে রাতে খুলিনি।