এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • আজাজিল

    মাসুদা ভাট্টি লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ২৯৯৮ বার পঠিত
  • মাসখানেক শান্ত ছিল সে, কিন্তু কাল রাত থেকে আবার তার হাবভাবে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অবশ্য এই পরিবর্তন শুধু জামাল সাহেবই বুঝতে পারেন, আর কেউ ধরতেই পারে না। কম দিন তো হল না, সে জামাল সাহেবের সঙ্গে আছে; এই এতটুকু এসেছিল, এখন সে প্রায় ছয় হাত লম্বা, হৃষ্টপুষ্টু, চকরাবকরা শরীরটা নাদুস-নুদুস; ওর ঠাণ্ডা শরীরটায় হাত বুলিয়ে জামাল সাহেব যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আনন্দ পান।

    জামাল সাহেবের মনে আছে ওকে যেদিন তিনি নিয়ে আসেন সেদিন বাড়ির সবাই কেমন আঁতকে উঠেছিল, বিশেষ করে জামাল সাহেবের স্ত্রী শাহিদা আখতার তো রীতিমতো কেঁদেকেটে একসা। তখনতো জামাল সাহেবের মা বেঁচে আছেন, কিন্তু তিনি তার ছেলের কোনো কাজ নিয়ে কোনও দিনই কথা বলেননি, সেদিনও চুপ ছিলেন। একমাত্র শাহিদা আখতারই রাগ মেশানো গলায় বলেছিল, “ওই অজগর সাপের সঙ্গে এক ঘরে আমি থাকতে পারব না। হয় তুমি ওই অজগর রাখবে, নয় আমি”।

    জামাল সাহেব যতোই বোঝানোর চেষ্টা করেন ততোই শাহিদা আখতার ক্ষেপে ওঠে। শেষ পর্যন্ত জামাল সাহেবও স্বমূর্তিতে ফিরে এসেছিলেন। গলার স্বর পরিবর্তন করে বলেছিলেন, “তোমার ইচ্ছা হইলে থাকবা নইলে থাকবা না, এই অজগর এই ঘরে থাকবে, আমার বিছানায় ঘুমাবে, আমি এরে পাইলা-পুইষা বড় করবো – এর পরে আর একটা কথা কইলে তোমারে টুকরা টুকরা কইরা কাইটা এরে খাওয়াইয়া দিবো”।

    জামাল সাহেবের গলায় কি ছিল কে জানে, শাহিদা আখতার এর পরে আর কোনো কথা বলেনি। তখনও তাদের প্রথম সন্তানের বয়স মাত্র সাড়ে চার বছর। মানুষটিকে খুব বেশি ঘাটায় না শাহিদা আখতার, বিয়েটা দিয়ে তার চাচা একরকম বেঁচে গিয়েছেন ধরে নিয়ে শাহিদা আখতার জামাল সাহেবের সব কথা, সব আদেশ মেনে নিয়েই সংসার শুরু করেছে। দু’একবার অবশ্য কথা কাটাকাটি হয়েছে কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জামাল সাহেবের কথার সুর যায় বদলে এবং সেই সুর শুনে শাহিদা আখতারের মনে হয়, তার সামনে একটা খরিস সাপ ফোঁস ফোঁস করছে।

    তার মনে আছে, একবার তাদের পাশের বাড়ির ময়না দাদির মুরগির খোপে একটা খরিস ঢুকেছিল। ময়না দাদির খোপে শাহিদা আখতারদেরও দু’তিনটা মুরগি থাকতো, যে কারণে প্রতিদিন সকালে শাহিদা গিয়েই মুরগির খোপ খুলত। একদিন সকালে মুরগির খোপ খুলতে গিয়ে শাহিদা দেখে খোপ থেকে মুরগি বের হচ্ছে না, অন্য দিন খোপ খুলে দেওয়ার আগেই কার আগে কে বেরুবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় মুরগিগুলোর মধ্যে।

    কিন্তু সেদিন সেগুলো বেরুচ্ছে না দেখে শাহিদা খোপের সামনে মাটিতে বসে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখে দরোজার সামনেই মরে পড়ে আছে একটা মুরগি। টেনে বের করে আবার হাত ঢুকিয়ে আরেকটি মুরগি হাতে লাগে, সেটিও মৃত। শীতের সকালের তির্যক রোদ এসে পড়েছে খোপের ভেতর। আর সেই রোদেই ঝিকমিক করছে কী যেন একটা খোপের ঠিক মাঝখানে। শাহিদা ওই ঝিকিমিকি দেখে ভয় পেয়ে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে ফোঁস ফোঁস ফোঁস শব্দে শাহিদার বুঝতে বাকি থাকে না যে মুরগির খোপের ভেতর সাপ ঢুকেছে। ততোক্ষণে অনেকেই এসে গেছে এবং মাটির খোপের ছাদ শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলেছে কেউ। ভেতরে তিন চারটে মুরগি গিলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে একটা খরিস সাপ। হলুদের ওপর সাদা ফোঁটা ফোঁটা চিহ্ন, যেহেতু মুরগি পেটে নিয়ে নড়তে পারছে না খুব একটা তাই ফোঁস ফোঁস করছে খুব। শাহিদার ভেতরটা তখনো কাঁপছে, ওর মনে হচ্ছিলো, এই মাত্র ও খোপের ভেতর হাত দিয়ে টেনে টেনে মুরগি বের করছিল, যদি কোনো ভাবে সাপটির মুখের সামনে ওর হাত পড়ে যেত তাহলে?

    রাগের মুহূর্তে জামাল সাহেবের কথা বলার সুরটি অবিকল সেই খরিস সাপের মতো, আর তার মুখের সামনে দাড়িয়ে শাহিদা তখন সত্যিকার অর্থেই কাঁপতে থাকে, নারকেলের লম্বা পাতায় শয়তান ভর করলে যেমন অনবরত কাঁপতে থাকে, ঠিক তেমনই। শাহিদাদের নারকেল গাছের আর সব পাতাগুলো যখন নিথর থাকে, শুধু একটি মাত্র পাতা যখন অনবরত কাঁপতে থাকে তখন ওর দাদি বলেন, “শয়তানের ভর হইছে, একখান কাচি পোড়া দিয়া থো”– শাহিদা তখন একটা কাচি চুলোর ভেতর গুজে দিত। সেসব দিন শাহিদা আখতার ভুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, আজকাল তো সে আর শুধু শাহিদা নয়, শাহিদা আখতার। জামাল সাহেব কখনওই তাকে শুধু শাহিদা ডাকেন না, ডাকেন শাহিদা আখতার বলে।

    তারপর থেকেই অজগরটা জামাল সাহেবের কাছে আছে। প্রথম প্রথম ওর জন্য ইঁদুর ধরে আনতেন জামাল সাহেব, তারপর একটু বড় হতেই আর ইঁদুরে হয় না, মুরগি কিংবা হাঁস কিনে আনতে হয়। নিজেদের বাজার করার সময় জামাল সাহেবের হাতের ফাঁক গলে পয়সা বের হয় না প্রায়ই, শাহিদা যখন দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা তখনও ওর জন্য মাছ কিংবা মাংস কিছুই আসেনি ঘরে, কিন্তু অজগরটির জন্য প্রতি সপ্তাহে মুরগি কিংবা হাঁস এসেছে নিয়মিত, দিনে দিনে ও গায়েগতরে বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে তার চাহিদা। ক্ষিদে পেলেই ও বিচিত্রভাবে মোচড়ামুচড়ি শুরু করে, ওর চেরাজিহ্বাটা তখন এমন ভাবে বের হয় আর ভেতরে ঢোকে যে মনে হয়, ও যা কিছু দেখছে তাইই খেতে চাইছে। শাহিদা শুনেছে, সাপ নাকি জিহ্বা দিয়ে স্বাদ, গন্ধ, শব্দ টের পায়। তার মানে ওর সামনে দিয়ে তখন যে কেউ হেঁটে গেলে তাকেই ও খাবার মনে করে কিনা কে জানে? নইলে ওভাবে জিহ্বাটা বের করবে আর ঢোকাবে কেন?

    আর তখন জামাল সাহেব যে ভাষায় অজগরটির সঙ্গে কথা বলেন তা আসলেই দেখার মতো। তখন তাকে কেউ দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না যে, এই মানুষই যখন শাহিদার সঙ্গে কথা বলেন তখন কতটা বদলে যান। সাপটিকে তখন পাশে নিয়ে অনবরত ওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন জামাল সাহেব আর মুখে বলেন, “এইতো, এক্ষণি নিয়া আসতাছি, একটু সবুর করো। আহারে শরীরটা শুকাইয়া কেমন দড়ি দড়ি হইয়া গেছে”– মুখে চুক চুক শব্দ করতে করতে জামাল সাহেব বেরিয়ে যান বাজারের উদ্দেশ্যে।

    এরকমই একদিন জামাল সাহেব তখন বাসায় ছিলেন না, হঠাৎ করেই শাহিদার বড় ছেলে বনি আমিনের চিৎকারে আশেপাশের বাসা থেকেও মানুষ ছুটে এসে হাজির। শাহিদা তখন কোলের মেয়েটিকে রান্না ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে শুইয়ে রেখে রান্না করছিলো। ছেলের চিৎকার শুনে শাহিদা ছুটে এসে দেখে সবাই ওদের ঘরের মেঝের দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। আর সেখানে বনি আমিনের চামড়ার বলটিকে আমূল গিলে ফেলেছে অজগরটি। অতোবড় বলটিকে কি করে সে পুরোপুরি মুখের ভেতর নিয়ে নিয়েছে তা নিয়ে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করছে। গলার কাছটা পুরোপুরি ফুলে আছে, সাদাকালো রঙের বলটি যেন হলুদকালো ডোরা রঙের হয়ে গেছে। শাহিদা ছোঁ মেরে তার ছেলেকে ওখান থেকে টেনে বের করে এনে সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে দরোজাটা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাতে কি? ওর ভেতর থেকে চিন্তাটা কখনওই যায় না, সারাক্ষণ একটা ভয়ের মধ্যে থাকে, ছেলেটা যখন যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুমিয়ে যায়, মেয়েটাকেও মাঝে মাঝেই মেঝেতে শুইয়ে রাখে। নিজেও গরমের দিনে মেঝেটা মুছে নিয়ে তারপর একটা মাদুর বিছিয়ে দুপুরে একটু জিরিয়ে নেয়। কিন্তু এর পর কি আর এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাবে?

    সেদিন অবশ্য জামাল সাহেব বাড়ি ফিরে পশু ডাক্তার ডেকে এনে তারপর অপারেশন করিয়ে সেই চামড়ার বল বের করিয়েছিলেন অজগরের পেট থেকে। বল বের করে ছেলের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, “এই নে তোর বল, আর যদি কখনও এই বল মাটিতে পইড়া থাকে আর সে যদি আবার এইটা গিল্লা ফালায় তাইলে বলটা বাইর কইরা তরে ওর সামনে ধরুম, বুঝলি?” তারপর থেকে ছেলেটা আর সেই বল নিয়ে খেলা তো দূরের কথা, সারাদিন ঘরেই ঢোকে না, বাইরে বাইরে থাকে, সন্ধের পর ঘরে ফিরে এসে ভাতটা খেয়েই বিছানায় চলে যায়, আর বার বার মাকে ডাকতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শাহিদা বিছানায় আসে ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুমায় না, জেগে থাকে। পাশে শুয়ে থাকা বোনটিকে জড়িয়ে ধরে রাখে।

    ঘরের মধ্যে আজাজিল ছাড়াই থাকে সব সময়। এঘর-ওঘর করে, আর তখন সারা ঘরে যেন হিম ছড়ানো থাকে, যেন ঘরটা অস্বাভাবিক রকমের ঠাণ্ডা। বনি আমিনতো বটেই শাহিদা নিজেও পারতপক্ষে ঘরে ঢুকতে চায় না। বিশেষ করে সেই সময়গুলোতে যখন ওর ক্ষিদে পায়, দিনরাত এঘর থেকে ওঘরে, কখনও বাইরেও চলে আসে। আশেপাশের কারো বাড়ির মুরগি উঠোনে ঢুকলে তাদের ধরার জন্য এগিয়ে যায়, মুরগিগুলো তখন ভয়ে দৌড়ে পালায় কিংবা পারলে উড়াল দিয়ে ওই উঠান থেকে চলে যায়।

    পাশের ঘরে শাহিদা তার ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুমুতে পারে না। মনে হয় এই বুঝি খাটে উঠে আসছে আজাজিল, তারপর গিলে খেয়ে ফেলবে বনি আমিন বা ছোট্ট আসমাকে। প্রায় রাতেই মেঝেতে ফোঁস ফোসঁ শব্দ শোনা যায়, ঘষটে ঘষটে চলার শব্দও কানে আসে। জামাল সাহেব গভীর রাতে সাপ নিয়ে বাইরে যান, কোথায় যান কে জানে? শাহিদা কখনওই এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাক, সাপটা চিরদিনের জন্য বিদায় হলে বাঁচা যায়। ঘরের মধ্যে, মেঝেতে, দরজার ওপাশে এরকম সাক্ষাত মৃত্যু নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?

    শাহিদা মাঝেমাঝেই ভাবে বনি আমিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে, কিন্তু ছেলের লেখাপড়া নিয়ে জামাল সাহেবের কোনো ভাবনাচিন্তা নেই, বরং বল গিলে ফেলার ঘটনার পর ঘরের মেঝেতে কিছু ফেলে রাখলে কিংবা অজগরটির জন্য এনে রাখা ডিম কখনও সখনও ছেলেমেয়েদের ভেজেটেজে দিলে জামাল সাহেব কুরুক্ষেত্র বাঁধান। মাঝেমাঝে এমন ভয়ঙ্কর আচরণ করেন যে শাহিদার মনে হয়, হয়তো কোনওদিন শাহিদাকে কিংবা ছেলেমেয়েদের সত্যিসত্যিই সাপটির মুখের সামনে দিয়ে দেবেন।

    একদিন শাহিদা বারান্দায় বসে বসে চাল বাছছিল, কাঁকর আর মরা চাল ভর্তি, আর পানি গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাল থেকে বের হয় দুর্গন্ধ, সেই চাল একটু না বেছে চুলোয় দেওয়া যায় নাকি। মনে মনে ভাবছে আর তখনই ভেতরে জামাল সাহেবের গলা।

    “এই দ্যাখেন আজাজিল আপনার জন্য সরকারি সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছি। এখন আর আপনাকে পালার জন্য আমাকে কেউ কিছু কইতে পারবে না। আপনার জন্য আমি এখন বৈধভাবেই খাবারের ব্যবস্থা করতে পারব, দরকার হইলে আপনার জন্য আমি একদিন আসল খাবার নিয়ে আসব। কেউ জানতে পারবে না, বুঝতেও পারবে না, আপনি শুধু গিলা ফেলবেন, আপনার পেটের মইদ্যে কি আছে তা কি কেউ জানবে? জানবে না। আর বেশি দেরি নাই, একটু অপেক্ষা করেন আজাজিল, আপনারে আমি আসল খাবার শিগ্‌গিরই আইন্যা দিমু। আইজ থিক্যা আপনার নাম দিলাম আজাজিল, আপনার স্বজাতিইতো শয়তানেরে মুখের মইদ্যে বেহেশ্‌তে লইয়া গেছিল, তাই ওই নামই আপনেরে মানায় খুব, কী বলেন?”

    কুলোর ভেতর চাল নিয়ে শাহিদা বাছছিল, বিকেলের আলো ম্লাণ হয়ে এসে পড়েছিল মফস্বল শহরে ওদের বাড়িটির এক চিলতে উঠোনে। ঘরের ভেতর জামাল সাহেবের কথা শুনে চালের ভেতর শাহিদার আঙুল থেমে যায়। শাহিদা ভুলে যায় ও কি করছিল, বুকের ভেতর ওর সেই ভয়ঙ্কর কাঁপুনিটা শুরু হয় তীব্র ভাবে। ও বুঝতে পারে না কি করবে। ‘আসল খাবার’ বলতে জামাল সাহেব কী বোঝাচ্ছেন, তা যেনো আর কেউ না বুঝুক শাহিদা বুঝেছে। কিন্তু ওর তো কিছুই করার নেই, কীই বা করতে পারে ও, ঘরের ভেতর বসে দ্যাখা ছাড়া। বিকেলের আলো আরো ম্লান হতে থাকে, শাহিদা চাল বাছা আর হয় না। সন্ধের মুখে ছেলে ফিরে এলে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। ছেলেও যেনো কিছু একটা বুঝতে পেরে মায়ের বুকের সঙ্গে লেপ্টে দাড়িয়ে থাকে। দূরে মসজিদে আজান হয়, একসঙ্গে অনেকগুলো মসজিদে। কিন্তু শাহিদার কানে আজানের শব্দের বদলে ফোঁস ফোঁস শব্দই কেবল বাজতে থাকে, যে শব্দ শাহিদাকে তার ছেলেমেয়ে শুদ্দু পাকে পাকে বেঁধে ফেলে। শাহিদার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকে খুব, কিন্তু তখনই জামাল সাহেব চা দেওয়ার জন্য হাঁক দেন। শাহিদা অনেক কষ্টে নিজেকে মুক্ত করে ছেলের কোলে মেয়েকে দিয়ে উঠোনেই একটা কাঠের জলচৌকি পেতে বসিয়ে রেখে চা বানাতে রান্নাঘরে ঢুকে যায় কিন্তু ওর শ্বাসকষ্ট যেন বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে। সে রাতে শুতে গিয়েও ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরে থাকে অনেক রাত অবধি, ঘুম আসে না ওর।

    গভীর রাতে যখন জামাল সাহেব ওঘর থেকে ডাকেন তখন শাহিদা অনেকক্ষণ তার ডাকে সাড়া দেয় না। মড়ার মতো পড়ে থাকে। তারপর একসময় উঠে গিয়ে জামাল সাহেবের বিছানায় বসে, পাশে শুয়েও পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জামাল সাহেবের হাত শাহিদার শরীর খুলতে শুরু করে, শাহিদার মনে হয় ওর শরীর বেয়ে ওঠানামা করছে সাপের মতো শীতল কিছু একটা, দাঁতে দাঁত চেপে শুয়ে থাকে শাহিদা, ও জানে, এই বিছানারই এক কোণে বিড়া পাকিয়ে শুয়ে আছে জামাল সাহেবের আজাজিল। অথবা সেই মুহূর্তে জামাল সাহেব নয়, আজাজিলই– শাহিদা অবশ্য কিছু ভাবতে পারে না, চায়ও না, চুপচাপ শুয়ে থেকে সহ্য করে, তারপর অজগর নেমে গেলে ও নিজেও উঠে কলতলায় গিয়ে বালতির পর বালতি ঠাণ্ডা পানি ঢালে শরীরে। যতক্ষণ না ওর মনে হয় ও শান্ত হয়েছে, ততক্ষণ পানি ঢালতেই থাকে। গভীর রাতে বিছানায় ফিরে এসে আবার ছেলেমেয়েদের বুকের ভেতর টেনে নেয়, ওদের শরীরের উষ্ণতায় ওম্‌ খোঁজে শাহিদা।

    সকালে উঠে জামাল সাহেব আজাজিলকে প্রথমে টেনে নিয়ে আসেন বাইরে, বারান্দায় এক চিলতে রোদ এসে পড়ে, সেখানেই টান টান শুইয়ে রাখেন। আজকাল আর তাকে উঁচু করে তুলে আনতে পারেন না জামাল সাহেব, ঘাড়ের সঙ্গে পেঁচিয়ে তারপর বারান্দায় এনে একটা একটা করে প্যাঁচ খোলেন তিনি। তারপর রোদে নামিয়ে রেখে নিজে যান অফিসের জন্য তৈরি হতে। গোসল করে, খেয়েদেয়ে, অফিসের জামাকাপড় পরে তারপর আবার কাঁধে জেনারেলকে পেঁচিয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে গিয়ে একটা কাঠের তৈরি বাক্সের ভেতর তাকে রেখে অফিসে বেরিয়ে যান।

    এর মাঝে একদিন বিকেলের দিকে আজাজিল ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে প্রায় উঠোনে নেমে যাচ্ছিল। বাড়িতে তখন কেউ নেই, শাহিদা একা, উঠোনে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে এগিয়ে এসে দ্যাখে ওই অবস্থা। আজাজিল নেমে এসেছে উঠোনের একেবারে মাঝখানে। শাহিদা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, চিৎকার করে যে কাউকে ডাকবে তাও ভেবেচিন্তে ঠিক করতে পারছিল না, যদি জামাল সাহেব এসে মনে করেন যে, আজাজিলকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই শাহিদা চিৎকার করে লোকজন জড়ো করেছিল, তখন? সাত-পাঁচ ভেবে শাহিদা মোটা মোটা দু’টি চটের বস্তা ছুড়ে দেয় সাপটির ওপর, তারপর বারান্দায় বসে থাকে ঠায়। যতক্ষণ না জামাল সাহেব ফিরে আসেন। ততোক্ষণ অবশ্য কুকুরটিও সমানে ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছিল। বাড়ি ফিরে জামাল সাহেব কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে প্রচণ্ড বিরক্ত হন প্রথমে তারপর উঠোনে চটের নীচ থেকে আজাজিলকে বের করে ঘরে নিয়ে আসেন। তার পরেরদিনই অবশ্য এই কাঠের বাক্স বানিয়ে আনেন, সেদিন থেকেই অফিসে যাওয়ার আগে ওই বাক্সের মধ্যেই আজাজিলকে রেখে যান।

    কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনার দু’একদিন পরের ঘটনার কথা শাহিদা ভাবলে ওর শরীরের সব রোম একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়, বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে। রাত তখন ক’টা হবে কে জানে, মফস্বল শহরের রাত, ন’টা সাড়ে ন’টাতেই মনে হয় অনেক রাত। হঠাৎ বারান্দায় কুকুরের কুঁই কুঁই শুনে শাহিদা বাইরে এসে দ্যাখে, জামাল সাহেব সকালের সেই কুকুরটিকে কি যেন খেতে দিচ্ছেন আর তার খুব কাছেই অজগরটি ওঁত পেতে আছে, আবছা আলো-আঁধারিতে দেখা যাচ্ছে ওর চেরা জিহ্বা মুখের ভেতর ঢুকছে বেরুচ্ছে। এই ভঙ্গিটি শাহিদার খুব পরিচিত, যখনই অজগরের সামনে কোনও খাবার ধরেন জামাল সাহেব তখনই এরকম তেরচা হয়ে কিছুক্ষণ খাবারের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ছোবল দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শরীর দিয়ে খাবারকে পেঁচিয়ে ধরে। তারপর আস্তে আস্তে গিলে ফ্যালে।

    শাহিদা চোখ ফেরাতে পারছিল না, জামাল সাহেব শাহিদাকে দেখতে পাননি, ওর দিকে পেছন ফিরে কুকুরটিকে কি যেন খাওয়াচ্ছিলেন। চোখের পলকে অজগরটি কুকুরটিকে ছোবল দিল, এবং মুহূর্তের মধ্যেই কুকুরটির গোটা শরীরটা পেঁচিয়ে ফেলল। কুকুরটি প্রথমে একটি চিৎকার দিয়েছিল কিন্তু তারপর ওর গলার স্বর ক্ষীণ শোনাল, মনে হলো ওর গলা চেপে ধরেছে কেউ। ওই দৃশ্য দ্যাখার পর কেউ সেখানে দাড়িয়ে থাকতে পারবে না হয়তো, কিন্তু শাহিদার পা নড়ছিল না, যেন শক্ত কোনও আঁঠা দিয়ে কেউ ওর পা আঁটকে দিয়েছে।

    কিন্তু শাহিদার মনের ভেতর প্রচণ্ড ভয়ও ছট্‌ফট্‌ করছিল, এই বুঝি জামাল সাহেব ঘুরে তাকান, তারপর? তারপর কী হবে? ভাবতে ভাবতে শাহিদা তাড়াতাড়ি পেছন থেকে সরে এসে বিছানায় ছেলেমেয়েদের পাশে শুয়ে পড়ল।

    তারপর অনেকক্ষণ কোনো সাড়া শব্দ নেই। একসময় জামাল সাহেব ঘরে ঢুকলেন, টের পেল শাহিদা, সে তখনও ঘুমোয়নি, এমনকি সেদিন সারাটি রাতই শাহিদা ঘুমুতে পারেনি। সকালে উঠে বারান্দায় পেট ফোলা অজগরটিকে দেখে ওর গা গুলিয়ে উঠছিল শুধু। দিন নেই রাত নেই যে কুকুরটি ওদের উঠোনে শুয়ে থাকত, কারণে অকারণে ঘেউ ঘেউ করত, কখনও কখনও বনি আমিনের পেছন পেছন দৌড়ে বাইরে যেত আবার আসত, সে রাতের পরে তাকে আর কেউ দেখেনি। বনি আমিন অনেকবার প্রশ্ন করেছে শাহিদাকে, শাহিদা উত্তর দেয়নি, দিতে পারেনি। কী বলবে ও? প্রায় দিন পনেরো মতো ওই বারান্দায় শুইয়ে রাখার পর যখন আজাজিলের মোটা পেট আবার চিকন হয়ে গিয়েছিল তারপর তাকে বারান্দা থেকে ঘরে নিয়ে এসেছিলেন জামাল সাহেব। কিন্তু বারান্দায় এ ক’দিন প্রায়ই সাপটির বিষ্ঠা পড়ে থাকত, শাহিদা লক্ষ্য করে দেখেছে সেগুলোর মধ্যে শেয়াল রঙের লোম। শাহিদার চিৎকার করতে ইচ্ছে করত খুব, কিন্তু ওর গলায় যেন কোনো জোর নেই, নেই শরীরেও কোনো শক্তি। ও যেন প্রতিদিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছিল।

    কারও সঙ্গে কথা যে বলবে সেরকমও কাউকে পাচ্ছিল না, এই বাড়িতে অজগর আছে জেনে কেউই আর এ বাড়ির ছায়া মাড়ায় না। এমনকি স্কুলে বনি আমিনের সঙ্গে অন্য বাচ্চারা খেলাধুলাও করে না। ছেলেটা মাঝে মাঝে এসে মাকে বলে কিন্তু এতেও শাহিদার কীই বা করার আছে? কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জামাল সাহেব একটি তের চৌদ্দ বছরের মেয়েকে নিয়ে হাজির। “এই যে শাহিদা আখতার, তোমার জন্য নিয়া আইলাম। একা একা কাজকাম করো, ছেলেমেয়ে নিয়ে তোমার খুব অসুবিধা হয়, তাই ভাবলাম গ্রাম থিক্যা এরেই নিয়া যাই। আমার দূর সম্পর্কের ভাগনি হয়। বাপটা মইরা গেছে। মা এর ওর বাড়ি কাম কইরা খায়। গ্রামে খাবারদাবার কিছুই পায় না, তাই ভাবলাম তোমার কামে আইবো। খাইবোদাইবো কাম করবো।” তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই যে মালেকা, তুই তোর মামিরে সাহায্য করবি, ছেলেমেয়ে দুইটারে দ্যাহাশুনা করবি, আর কি, থাকবি, খাবি, বুঝলি?” মেয়েটি মাথা নাড়ে শুধু, কথা বলে না।

    লিকলিকে শরীরের মালেকার দিকে তাকিয়ে থাকে শাহিদা, ওকে আগে কখনও দ্যাখেনি, নামও শোনেনি, তারপরও ওর মনে হয়, যাক এতোদিনে কাউকে একজন পাওয়া যাবে কথা বলার। কাজ কতটা কি করবে সেটা শাহিদা জানে না কিন্তু সারাদিন ওর এই যে একা একা একটা আজদাহা সাপের সঙ্গে কাটানোর ভয়াবহতা তো কাটবে, কেউ না কেউ তো আশেপাশে থাকবে ওর, এই চিন্তাতেই খুশী হয় শাহিদা। এক থালা উঁচু করে ভাত বেড়ে, অনেক করে তরকারি বেড়ে দিয়ে খেতে দেয় মেয়েটিকে। জামাল সাহেবও দেখে বলেন, “আহারে গ্রামে কয়দিন না খাইয়া ছিল কে জানে? শাহিদা আখতার মাইয়াডারে বেশি কইরা কয়দিন খাইতে দিও। শরীরডা শুকাইয়া বষ্টি লাইগ্যা রইছে। কয়দিন ভালোমতো খাওয়াদাওয়া করলে ঝাড়া দিয়া উঠব দ্যাখবা।”

    জামাল সাহেব বলুন বা না বলুন, শাহিদা কিন্তু মালেকাকে এমনিতেই বেশি করে খেতে দেয়। আর মেয়েটিরও না নেই, পাতের ভাত শেষ হলে আরও ভাত ঢেলে দিলে ও কখনওই না বলবে না। শাহিদার মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে মেয়েটি কত খেতে পারে সেটা পরীক্ষা করে দেখে, কিন্তু ইচ্ছে করেই করে না। মানুষের বাচ্চা নিয়ে এরকম তামাশা করাটা ঠিক হবে না। তবে সত্যি সত্যিই অল্প কয়েক দিনেই মেয়েটার সেই লিকলিকে ভাবটা চলে গেল, লক লকে পুঁই ডগার মতো মালেকার শরীরও যেন মাচা ছাড়িয়ে যেতে চায়, ঝলমল করছে স্বাস্থ্য। ইদানিং শাহিদার সঙ্গে দু’একটা কথাও বলে মালেকা। সবচেয়ে বড় কথা হল, শাহিদার চোখের সামনে থেকে এক চুলও নড়ে না সে। যমের মতো ভয় পায় সাপটিকে। কিন্তু এই বাড়ির ভাতের থালা রেখে চলে যাওয়ারও সাহস ওর নেই। তাই সারাক্ষণ শাহিদার পায়ে পায়ে ঘোরে, শাহিদার মেয়েটিকে কোলেও রাখে সারাদিন। শুধু দুপুর বেলা ভাত খাওয়া হলে শাহিদা ছেলেমেয়েদের নিয়ে চৌকিতে আর মালেকা মাদুর বিছিয়ে নীচে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নেয়।

    ছুটির দিনে পাশের ঘরে তখন জামাল সাহেবের মৃদু নাক ডাকার শব্দ শোনা যায়। কিন্তু একদিন হঠাৎ এরকমই এক ছুটির দিনের দুপুরে শাহিদার ঘুম ভেঙে গেলে মেঝেতে চোখ পড়ে গেলে যে দৃশ্য ওর চোখের সামনে ফ্রেমের মতো আঁটকে থাকে তা দেখার পর ওর ভেতর আবার সেই কষ্টের দাপাদাপি শুরু হয়।

    ঘুমের মধ্যে মেয়েটা হঠাৎ কেঁদে ওঠায় শাহিদা চেয়েছিল মালেকাকে পাঠিয়ে মেয়ের জন্য একটু দুধ গরম করিয়ে আনাবেন। সবেমাত্র দুধ ছেড়ে মেয়েটি একটু একটু ভাত খেতে শুরু করেছে। কিন্তু তখনও মাঝে মাঝেই বিশেষ করে ঘুমুতে যাওয়ার আগে কিংবা ঘুমের ভেতর বোতলে দুধ ভরে দিলে খেয়ে নেয়। কিন্তু মালেকা ডাক দিতে গিয়ে মেঝের দিকে তাকাতেই শাহিদার চোখে পড়ল যেখানে মালেকা শুয়ে থাকতো সেখানে মালেকার বদলে অজগরটি শুয়ে আছে, তার হা করা মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে মালেকার দু’টি পা।

    শাহিদা কী করবে ভেবে পায় না, চিৎকার করে কাউকে ডাকতে ইচ্ছে করে খুব কিন্তু ওর মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হয় না। তারপরও ওর গলা দিয়ে কোনো স্বর বেরিয়ে থাকবে, আর তখনই পাশের ঘর থেকে জামাল সাহেব বেরিয়ে আসেন। শাহিদা আর মালেকাকে ধমকে ওঠেন, “এতো চিল্লাচিল্লি কিসের? দুইফরে এট্টু যে ঘুমামু, তারও জো নাই। আরে আজাজিলরেও আমি আইজ ছাইড়া দিচ্ছি, বেচারা সারাদিন বাক্সের মইদ্যে বন্দী হইয়া থাকে, আইজ ছুটির দিন, আমি ঘরেই আছি, এট্টু ঘুইরা-ঘাইরা বেড়াক না হয়” – বলতে বলতে আজাজিলকে ওই অবস্থায় দেখে শাহিদার দিকে চোখ ফেরান। তারপর তার সেই ভয়ংকর ফোঁস ফোঁস শব্দ করা খরিস গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, “এই কথা যেন কেউ না জানে, কাউরে কইলে আমি সবাইরে এর খাবার বানাইয়া দিমু কইয়া দিলাম। খালি পশুপক্ষি খাইয়া তার জিহ্বার স্বাদ নষ্ট হইয়া গেছিল। আমারে সে স্বপ্নে কইয়া দিছে, সে মানুষ খাইতে চায়। এ্যাহন থিকা সে খালি মানুষ খাইব। তোমারে সাবধান কইরা দিতাছি, এই কথা যেন কেউ না জানে, কেউ না। এই চাইর দেওয়ালের বাইরে এই কথা গেলে তোমার খবর আছে, প্রথমে তোমার ছেলে, তারপর তোমার মেয়ে আর সবশেষে তুমি, মনে রাইখো কইলাম”।

    শাহিদার চিৎকারে বনি আমিন জেগে উঠেছিল, ও হয়তো জামাল সাহেবের কথা শুনে থাকবে, শাহিদা টের পায় বনি আমিনের একটি হাত তার হাতকে শক্ত করে ধরে আছে। মনে হচ্ছে বনি আমিনের আঙুল শাহিদার শরীরের ভেতর ঢুকে যাবে। শাহিদা তাই আর কোনও কথা না বলে বনি আমিনের পাশে শুয়ে পড়ে, মেয়েটার কান্নাও কখন যেন থেমে গিয়েছিল। জামাল সাহেবও ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। শুধু মেঝেতে তখনও হিঁস হিঁস একটা শব্দ হচ্ছিল।

    তারপর ওর মোটা শরীরটা জামাল সাহেবের ঘরে যেখানে তার কাঠের বাক্স তার পাশেই লম্বালম্বি পড়ে ছিল মাস খানেক আর সেবার আজাজিলের ত্যাগ করা বিষ্ঠার সঙ্গে লেগে থাকা চুলের রঙও ছিল কালো– শাহিদা অবশ্য তা নিয়ে আর প্রশ্ন করেনি। প্রশ্ন করে কী হবে? প্রশ্ন করে কখনওই কিছু হয় না।

    কিন্তু বছরখানেক পরে হঠাৎই একদিন শাহিদার ভেতর প্রচণ্ড ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়ে, একটা দৃশ্য দেখে। গরমের দিনের দুপুর, কেমন ঝিমিয়ে পড়া সবকিছু। বনি আমিন স্কুলে, মেয়েটাও ঘুমিয়েছে। শুধু শাহিদাই ঘুমুতে পারে না, ওর ঘুম আসে না। ভয় লাগে খুব, যদি ঘুমিয়ে গেলেই অজগরটা ওর ছেলেমেয়েদের কিংবা ওকেই গিলে ফ্যালে, সেটা ভেবেই শাহিদার চোখ থেকে ঘুম চলে গিয়েছে একেবারেই। সেদিনও শাহিদা বারান্দায় একটা মোড়ায় বসে চাল বেছে নিচ্ছিল। হঠাৎই চোখ পড়ল ঘরের দিকে, ও যেখনে বসেছিল সেখান থেকে জামাল সাহেবের খাট স্পষ্ট দেখা যায়। ছুটির দিনের দুপুর বলে জামাল সাহেব ঘুমিয়েছিলেন, তার নিঃশ্বাসের ওঠানামা দ্যাখা যাচ্ছে। আর তার পাশেই লম্বালম্বি শুয়ে আছে অজগরটি। ওর শরীর তখন ছিমছাম, চকরাবকরা শরীর বিছানার সাদা চাদরের ওপর ফুটে আছে, শাহিদা শুধু ওর শরীরের একটা পাশ দেখতে পাচ্ছে, একটা চোখ জ্বলজ্বল করছে যেমন করে ওর ক্ষিদে পেলে, চেরা জিহ্বাটা ঘন ঘন বেরুচ্ছে আর ঢুকছে মুখের ভেতর। জামাল সাহেবের মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বালম্বি শুয়ে আছে অজগরটি, লম্বায় জামাল সাহেবের চেয়েও কয়েক হাত বাড়তি, বোঝা যাচ্ছে।

    দৃশ্যটি শাহিদার ভেতরে আনন্দের ঘুড়ি উড়িয়ে দিল। এতোদিন হাতের কাছে যা পেয়েছে এমনকি পুরনো ঠোঙা পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজে সাপ সম্পর্কে যা কিছু লেখা সবই পড়েছে ও। ওর আর দৌড় কতোদূর, তবু এই মাত্র কিছুদিন আগেই পুরনো কাগজে একটি খবর পড়েছিল শাহিদা। সেখানে লেখা ছিল, অজগর কোনও বড় শিকার করতে চাইলে আগে নিজের শরীরের সঙ্গে শিকারের শরীরের মাপ দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয়, তারপরই আঘাত হানে। শিকারটা হজম করতে হবে তো!

    অনেকক্ষণ ওই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থেকে শাহিদা কুলোর ওপরে আবার দৃষ্টি টেনে আনে, ওর হাতের আঙুলে কুলোয় তোলা চাল অন্যরকম ঠেকে, খুবই অন্যরকম।

    "নির্বাচিত গল্পপাঠ (প্রথম খণ্ড)" থেকে নেওয়া (https://www.guruchandali.com/book.php?&page=3 )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ২৯৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৪ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫০92322
  • ১) বিনীতভাবে জানাই, সহ-ব্লগার মাসুদা ভাট্টির এসব প্রায় পরাবাস্তব ললিপপ ফ্যান্টাসির সাথে আন্তত বছর ২০ ধরে পরিচিত। এমন সুখপাঠ্যে সাহিত্যের উপকার হয় কী? হলেও হতে পারে, তবে অপকার হয়তো নাই,  সেসব সাহিত্যের রথি-মহারথিরা  বলবেন। কিন্তু চণ্ডাল কাঁচ-কে কাঁচ ও কোদাল-কে কোদালই বলে অভ্যস্ত।

    ২) সাধারণ ব্লগ লেখালিখর কালে, কিছু ছেদ দিয়ে টানা আওয়ামী জামানায়, আমাদের আপা হঠাৎ বিলাত ফেরত সরকারি কলামিস্ট হয়ে ওঠেন (গুগল করে দেখুন), সে-ও পড়তে ভালই লাগে, বিশেষ করে আল্লাহর দুনিয়ায় যখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কিছু নাই।

    ৩) অফটপিকে জানাই, বুকের ভেতর কাঁটা বিঁধে থাক অন্য জায়গায়। ….

    বেশ কিছুদিন আগে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পাহাড়ি জনপদে অগ্নি সংযোগের সরেজমিন তদন্ত রিপোর্টের কালে মানবাধিকার গোষ্ঠীর ভেতর আমাদের আপাও ছিলেন। কিন্তু বোধগম্য কারণেই, তিনি ঢাকায় ফিরে এ নিয়ে এক বর্ণও কোথাও লেখেননি।

    বিনীত ভাবে জানাই, এ নিয়ে একাধিক সরেজমিন সংবাদের পর চণ্ডলের একটি ব্লগ নোট এখানে :

    https://biplobcht.blogspot.com/2011/08/blog-post.html

  • পাঠক | 162.158.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:০৩92324
  • কেখিকার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কুটনামি করাকে পরচর্চা বলে। কাচ বা কোদাল কিস্যুই বলে না। ব্যক্তিচর্চা করে মন্তব্য করলে সেটা কোথাও একবিন্দুও ভ্যালু অ্যাড করে না। বিপ্লব রহমানের মন্তব্যটা একেবারেই অবাঞ্চিত।

  • স্বাতী রায় | 162.158.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:১৯92325
  • এই গল্পটা প্রথম যেদিন পড়েছিলাম, অনেকক্ষণ নড়তে চড়তে পাারি নি। থম ধরে বসে ছিলাম। সুধু আভাসে এই ভাবে অসহায়তা বোনা যায় তা সব সময় মনে পড়ে না।  আজ আবার পড়ে একই রকম ভালো লাগল। যদিও মাঝে সময় বয়ে গেছে অনেক।

  • বিপ্লব রহমান | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৯92326
  • @পাঠক (?),

    লেখিকার ব্যক্তিজীবন বা কূটনামি পাইলেন কই? বরং তার বিবিধ লেখায় এবং না লেখায়  থম মাইরা আছি, পাঠক হিসেবেই। আপ্তজ্ঞানে  আপ্লুত না হইয়া নিজ নাম পরিচয়ে লগিন কইরা মন্তব্য করলে ভ্যালু এডের হেডম হইতো, বেকুবি ছাড়া। 

  • একলহমা | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩১92328
  • মাসুদার লেখনী শক্তিশালী, প্রত‍্যাশামতই। তবে এই গল্প অতিরিক্ত লম্বা লেগেছে, ক্লান্ত করেছে।

  • Jsl | 108.162.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৮92330
  • ওহ আবার সেই নাম পরিচয় লগিনের বিরক্তিকর দাবি।

  • Feku | 162.158.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৮:২৩92338
  • কেন বাবা লগিন বাহানা? ফেকুদের কী যা খুশী বালছাল বলার অধিকার নেই? 

  • সে | 172.69.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:১০92364
  • কে বলছেন, কি বলছেন? দুইই গুরুত্বপূর্ণ। তাই লগিন আর আন লগিন পোস্টে পার্থক্য আছে।

    ফেসবুক, ব্লগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণত ফেক আইডি থেকেই ঝামেলা করা হয়। কারণ, মাস্ক পরে ঢিল ছোড়া অনেক সহজ।  

    তাই বিপ্লব কটুক্তি করলেও বেশ করেছেন। নিজের মত স্পষ্ট জানিয়েছেন। তবে হয়তো সব সত্যিকথা সব সময় বলতে নেই। করোনা কালের চাপও আছে।

    মাসুদার অনেক ভাল লেখার মধ্যে এটিও একটি। কিন্তু তাকে নিয়ে অনেক লন্ডন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অনেক বিতর্ক চলছে। শুধু সরকারি লেখক বলেই নন,  কিছুদিন আগে তসলিমা নাসরিনও তাকে একহাত নিয়েছেন, বেশ উপভোগ্য!  

    https://www.jugantor.com/national/103277/&

  • বিপ্লব রহমান | ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৯:১২92401
  • "বিপ্লব কটুক্তি করলেও বেশ করেছেন। নিজের মত স্পষ্ট জানিয়েছেন। তবে হয়তো সব সত্যিকথা সব সময় বলতে নেই। " 

    হ! (হাই তোলার ইমো) 

  • কাগজ আমি দেখাবো না | 172.69.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৪২92404
  • "সে" যদিও নাম পরিচয়হীন লগিনহীন  নিক তবুও সমর্থন করেছে বলে তার "হ্যাডম" চেকের বাতেলা আসে নি। 

    পষ্টাপষ্টি লিখলেই তো হয় "আমার লেখা  বা মন্তব্যের প্রসংশা করবেন শুধু। কোনরকম বিরূপ কথা বললেই  আধার কার্ড দেখতে চাইব"।  

    অ্যাডমিন বিপ্লব রহমানের  লগিনের সাথে কোটের মধ্যের মেসেজটা জুড়ে দিতে পারে। 

  • হ্যাডম | 172.69.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৫৮92418
  • আপনি ঠিক বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। 

  • r2h | 162.158.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:০৫92421
  • হ্যাডম, আমাদের ওদিকে বলে হাডান।

    বিপ্লবদার ১ আর ২ এর মানে ঠিক বুঝলাম না, ওঁর সাহিত্য উপকারী না, আর উনি সরকারী কলমচি?
    আসলে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধিসন্ধি না জানলে এগুলো বোঝা মুশকিল।

    ওদিকে তসলিমা যে মিথ্যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেটা তো গোলমেলে ব্যাপার, যতই মহান কারনে হোক, তাও অচেনা মানুষের জন্যে। অয়াসাইলামের জন্যে নানান গোলমেলে ব্যাপার হয় সেসব কি তসলিমা জানতেন না নাকি?

    নাম বেনাম ইত্যাদির দাবীগুলি নিতান্তই ব্যানাল। গুরুচণ্ডালির একটি বড় লক্ষণ এই সেরকম কিছু ট্র‌্যাকিং ছাড়াই ব্যবহারকারীদের গুডউইল, সেল্ফ সেনসর ইত্যাদির ওপর ভরসা করে এত বছর টগবগিয়ে চলা। নামের দাবী এই ব্যাপারটারই উল্টোদিকে।

    নির্বাচিত গল্পপাঠ বইদুটি খুবই মূলবান সংকলন হয়েছিল।
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:০৫92422
  • হেসে গেলাম। মুখোশের কদর বাড়ছে।... 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন