এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • পরমাণু দুঃস্বপ্ন আজও অব্যাহত (হেলেন ক্যালডিকটের সাক্ষাৎকার )

    জিতেন নন্দী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ জুন ২০১১ | ৭৯৭ বার পঠিত
  • ২৫ মার্চ ২০১১ রেডিও ইকোশক-এ অ্যালেক্স স্মিথ বিশ্বখ্যাত পরমাণু-বিরোধী ব্যক্তিত্ব চিকিৎসক হেলেন ক্যালডিকটের একটি সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারটি এখানে বাংলায় অনুবাদ করে ছাপানো হল। অনুবাদক জিতেন নন্দী।

    অ্যালেক্স স্মিথ: ডা: ক্যালডিকট, আপনাকে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়ে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।

    হেলেন ক্যালডিকট: ধন্যবাদ অ্যালেক্স।

    অ্যালেক্স স্মিথ: জাপানে ১১ মার্চ ভূমিকম্প ও সুনামির পরে যে পরমাণু বিপর্যয় ঘটেছে, সে সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি কী বলব? একটা স্তরচ্যুতির (ফল্টের)[১] ওপর নির্মিত ৬টি অভিনব --- বরং বলা যেতে পারে ত্রুটিপূর্ণ --- জেনারেল ইলেকট্রিকের চুল্লি বসানো হয়েছিল জাপান বরাবরই ভূমিকম্প-প্রবণ বলে পরিচিত। এত বড়ো বিপর্যয় এর আগে ঘটেনি। বিপর্যয় এখনও কাটেনি, ঘটে চলছে। বাস্তবে কেউই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না কতদিন তা ঘটে চলবে। আমি বলতে চাইছি, হয়তো আমি জানি না, বছরের পর বছর এটা চলতে পারে। যদি খুব বেশি পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে কিংবা চুল্লির কেন্দ্র (কোর) গলতে থাকে এবং জাপানের ওপর দিয়ে বাতাস বয়ে চলেছে --- এত ছোটো একটা দেশ --- এরকম ঘটে চলতেই পারে।

    চের্নোবিলের চুল্লি মাত্র তিনমাস ধরে চলছিল, তাতেই ইউরোপীয় ভূখণ্ডের (ল্যান্ড মাস) চল্লিশ শতাংশ বিপর্যস্ত হয়েছিল। সেখানে যে খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হবে, তা শত শত বছর ধরে তেজস্ক্রিয়তায় দূষিত হবে। নিউ ইয়র্ক অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর দলিল থেকে জানা যাচ্ছে, চের্নোবিলের ঘটনায় ১০ লক্ষের ওপর মানুষ মারা গেছে।

    এখানে (ফুকুশিমায়) ৬টি চুল্লি রয়েছে, শীতল করার জন্য রয়েছে ৬টি জলাধার এবং আরও দুটি খুব বড়ো জলাধার। সবগুলোতেই এখন বিপদের সম্ভাবনা। আর প্রত্যেকটা চুল্লি থেকে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়, তার চেয়ে অনেক বেশি ছড়ায় এই শীতল করার জলাধারগুলো থেকে।

    অতএব এসব দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রথমে যখন আমি সত্যিই বুঝলাম, ঘটনাটার তাৎপর্যটা কী, ব্যাপারটা গুরুতর। আর আমি আপনাকে এটাই বলতে পারি, এই তাৎপর্যের একটাই অর্থ, পরমাণু শিল্পের ইতি টানা। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! এবার ইউরেনিয়াম খননের অবসান হোক। হয়তো এবার মানবজাতি আর একটু এগিয়ে উপলব্ধি করবে, শেষপর্যন্ত বুঝবে যে পরমাণু অস্ত্র বিলোপ করা দরকার। আমাদের রয়েছে ৬টি কুলিং কোর, এবং একটা খুব বড়ো ... পরমাণু অস্ত্র বিলোপের

    অ্যালেক্স স্মিথ: হয়তো এখান থেকেই পরিচ্ছন্ন শক্তিকে (এনার্জি) বিকশিত করার একটা আন্তরিক চেষ্টা সত্যিই শুরু হতে পারে।

    হেলেন ক্যালডিকট: তাই তো। আমার মনে হয় আমরা কানাডার দিকে চেয়ে দেখতে পারি। সেখানে আপনি প্রচুর ভূ-তাপীয় শক্তি (জিওথার্মাল এনার্জি) পাবেন। সর্বত্রই বাতাস আপনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, কিন্তু আলবার্টার হাওয়াটা অন্যরকম কাজে লাগে। এমনকী শীতকালের মাঝামাঝি সময়েও এত সূর্যের আলো পাওয়া যায়, যা দিয়ে কানাডার প্রত্যেক বাড়িতে সৌরশক্তি ব্যবহার করা যায়। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়োগ করা যায়, মোট উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং প্রত্যেকেই তাতে সত্যকার সুখী হবে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: ফুকুশিমা দাইচি প্রকল্পের সমস্যা যখন প্রথম জানা গেল, পরমাণু নিয়ে যারা উদ্যোগী, যেমন অস্ট্রেলিয়ার ডা: ব্যারি ব্রুকের মতো লোকেরা সমস্বরে আলতোভাবে ঘটনাগুলো অস্বীকার করছিল ...

    হেলেন ক্যালডিকট: ওহ্‌, ওঁর সম্পর্কে না বলাই ভালো। উনি হলেন একজন পরিসংখ্যানবিদ। তিনি জীববিজ্ঞান, প্রজননবিদ্যা বা চিকিৎসাবিদ্যা কোনোটাই জানেন না। যেভাবে তিনি কথা বলেন, তার কোনো অধিকারই তাঁর নেই।

    অ্যালেক্স স্মিথ: যাই হোক, আমাদের বলা হয়েছিল, সবটাই সামলে নেওয়া যাবে, কোনোরকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই। প্রকৃত অবস্থাটা রিপোর্ট হতে এতদিন লাগল কেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পেরেছিলাম। অনেকেই তা পেরেছিল। আমার কাছে বহু ই-মেল আসছিল। আমি ফেসবুক এবং সমস্ত ধরনের তথ্যে ভেসে যাচ্ছিলাম।

    পরমাণু শক্তির বিষয়টা নিয়ে যাদের নিজেদের কাছে গভীরভাবে বোঝাপড়া রয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারছিল কী ঘটছে। পরমাণু-শিল্প সেই বোঝাপড়াকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। এব্যাপারে যারা বিশেষজ্ঞ, তারা মাঠে নেমে পড়েছিল। তাদের পিছনে কোটি কোটি ডলারের মদত রয়েছে। কিন্তু ক্রমশই বোঝা যাচ্ছিল, তারা কোনোরকম সুবিধা করতে পারবে না।

    ওরা বলছিল, তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কম আর আমি উত্যক্ত হয়ে উঠেছিলাম। আপনারা জানেন, সঙ্গে সঙ্গে বিপদ কিছু হবে না। কিন্তু যদি আপনি স্ট্রনশিয়াম ৯০, সিজিয়াম ১৩৭, তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিশ্বাসের সঙ্গে বা মুখের মধ্যে টেনে নেন, পাঁচ বছরের মধ্যে আপনার লিউকোমিয়া হবে না। অতএব "অপরিহার্যভাবে' সঙ্গে সঙ্গে বিপদ নেই।

    সঙ্গে সঙ্গে বিপদ বলতে যেসব হতভাগ্য মানুষ চুল্লির আধারগুলোতে কিছু কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা হল মৃত মানুষ, যারা হেঁটে চলেছে। এদের অনেকেই চরম তেজস্ক্রিয়তা জনিত অসুস্থতায় ভুগে দু'সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবে। অতএব সঙ্গে সঙ্গে বিপদ তাদের। বাদবাকি সকলেই দীর্ঘকালীন বিপদে আক্রান্ত হবে, ক্যানসার বা লিউকোমিয়া হবে কিংবা তাদের অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ের জিনের পরিবর্তন ঘটবে, যার ফলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভুগবে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: হ্যঁ¡, আমরা তো দেখেছি, চের্নোবিলের ঘটনার পরে যারা ওখান থেকে আসত, লোকে তাদের এড়িয়ে চলত। কেউ তাদের বিয়ে করতে চাইত না। এমনকী তারা চারপাশে থাকুক, এটা পর্যন্ত লোকে চাইত না। লোকে ভাবত, ওদের জামাকাপড়েও হয়তো তেজস্ক্রিয়তা থাকতে পারে। আমরা এই ফুকুশিমা ছেড়ে চলে আসা মানুষের ক্ষেত্রেও সেরকমটা দেখতে চলেছি। এই মানুষেরা হয়তো আর কখনোই ঘরে ফিরতে পারবে না। ওদের অবস্থাটা আপনি কেমন বুঝতে পারছেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: এটা এত দুর্ভাগ্যজনক আর দু:খের, কেন না হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে "হিবাকুশা'-দের[২] ঠিক এই অবস্থাটাই হয়েছিল। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোমা ফেলেছিল, তাদেরই পরিচালিত "অ্যাটমিক বম্ব ক্যাজুয়ালটি কমিশন' সমীক্ষা করে দেখেছিল, ওই আক্রান্ত মানুষেরা অসীম আগ্রহে নিজেদের অবস্থাটা বুঝতে চেয়েছিল। কারণ তারা ছিল গিনিপিগ, কিন্তু কোনো চিকিৎসা তারা কখনই পায়নি।

    লোকে এদেরও এড়িয়ে চলত। এদের অনেকেরই ক্যানসার হয়েছিল। কেউ এদের বিয়ে করতে চায়নি, কারণ এদের জিন হয়তো আক্রান্ত হয়েছিল এবং তার পরিবর্তন ঘটেছিল। তারপর চের্নোবিলে সেই একই ঘটনা ঘটেছে আর এখানে আবার সেই চরম বিপর্যয় ঘটে চলেছে। এই বিপর্যয় গোটা উত্তর গোলার্ধকে দূষিত করতে চলেছে, যেমনটা চের্নোবিলে ঘটেছিল।

    অ্যালেক্স স্মিথ: বাস্তবে আমরা ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে (কানাডা) এবং পশ্চিম উপকূল বরাবর তেজস্ক্রিয়তা পেয়েছি। কিন্তু আইসল্যান্ডেও তা মাপা হয়েছে, যেটা ফুকুশিমা থেকে এসে পৌঁছেছে ...

    হেলেন ক্যালডিকট: ওহ্‌ সত্যি!

    অ্যালেক্স স্মিথ: ওরা বলছে, এখন খুব কম পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এর জেরটা ওরা টের পাবে। অতএব আমরা যে কথাটা এখানে বলছি, উত্তর গোলার্ধ জুড়ে এটা ছড়িয়ে পড়বে।

    হেলেন ক্যালডিকট: আচ্ছা, ওরা যখন বলে কম পরিমাণ, আপনারা কি জানেন, এক গ্রামের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ প্লুটোনিয়াম যদি আপনি ফুসফুসে টেনে নেন, আপনার ক্যানসার হবে। ওরা গাইগার কাউন্টার নিয়ে চারদিকে ঘুরে বাইরের গামা তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করে। কিন্তু ওরা মোটেই ওদের পরিমাপ করা তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে সমস্ত ধরনের আইসোটোপের উপস্থিতির ইঙ্গিত আপনাকে দেয় না। ওরা জানে না, কী নিয়ে ওরা কথা বলছে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: এটাই আমার পরের প্রশ্নের অংশ এবং এই বিষয়টার সঙ্গে চিকিৎসক হিসেবে আপনার বিশেষজ্ঞতার যোগ রয়েছে। যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে, তার সঙ্গে বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের তুলনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের খাদ্যের মধ্য দিয়ে অথবা বাতাসের সঙ্গে গ্রহণ করা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাইরে থেকে শরীরে আসা তেজস্ক্রিয়তার চেয়ে অন্যভাবে ক্রিয়া করে। আপনি কি এই বিভ্রান্তিটা পরিষ্কার করতে পারেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: হ্যঁ¡, আমি পারি। চুল্লিতে ইউরেনিয়াম ফিশনের সময় প্রায় দু'শ নতুন পদার্থ তৈরি হয়। এর সবগুলোই তেজস্ক্রিয় এবং মানুষের তৈরি। এর কোনোটা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী, কোনোটা কোটি কোটি বছর বেঁচে থাকে। এখন এর মধ্যে অনেকগুলো এক্সরে-র মতো গামা তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করে। কিন্তু অনেকেই তা করে না। অতএব যখন বাইরে থেকে আসা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করা হয়, অর্থাৎ আপনাকে একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থের আবরণে ঢেকে ফেলা হয়, আপনি এক্স-রে ধরনের কোনো বাইরে থেকে আসা মাত্রা পান। কিন্তু এটা সকলের বোঝা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি আপনি প্লুটোনিয়াম, আমেরিসিয়াম, কিউরিয়াম বা তেজস্ক্রিয় আয়োডিন নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন, যদি পদার্থগুলো খাদ্য-শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে --- অ্যালগি, ক্রাস্টাসিয়ান, ছোটো মাছ, বড়ো মাছ, মানুষ ---- অথবা উদ্ভিদ, যেমন লেটুস, পালং, ঘাস থেকে গরুর শরীরে ও গরুর দুধে --- জৈবগতভাবে সঞ্চিত হয়, তাহলে আপনি আপনার শরীরের ভিতরে এইসব পদার্থ গ্রহণ করে নিচ্ছেন। এগুলো থাকছে, যেমন স্ট্রনশিয়াম ৯০ জমা হচ্ছে হাড়ে। সেখানে এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমাণ একটি পরিচালন-জিনকে একটি কোষে পরিবর্তিত করে, যার থেকে পাঁচ বছর পরে আপনার লিউকোমিয়া হয়, কিংবা পনেরো বছর পরে হয় ক্যানসার। আর এই ব্যাপারটা অন্য সকল পদার্থের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই লোকে অস্পষ্টভাবে মাপা কিছু বাইরে থেকে আসা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার সঙ্গে অভ্যন্তরে বিকিরণকারী তেজস্ক্রিয়তার তফাতটা বোঝে না। আর তাই সকলকেই আভ্যন্তরীণ বিকিরণকে বুঝতে হবে। আমি আমার "নিউক্লিয়ার ম্যাডনেস' এবং সম্প্রতি প্রকাশিত "নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইজ নট দ্য আনসার টু গ্লোবাল ওয়ার্মিং' বই দুটোতে এই বিষয়টা নিয়ে লিখেছি যাতে সকলে বুঝতে পারে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আমরা জেনেছি --- অনেকে অবশ্য এই প্রথম জানছি --- তথাকথিত "পোড়া' পরমাণু জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) খুবই বিপজ্জনক। আমাদের এই পরমাণু জঞ্জাল (নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট) ভর্তি আধারগুলো সম্পর্কে বলুন।

    হেলেন ক্যালডিকট: প্রতি বছর ওরা চুল্লি থেকে এক-তৃতীয়াংশ জ্বালানি-দণ্ড সরিয়ে নেয়। কারণ সেগুলো অতিমাত্রায় গরম --- তেজস্ক্রিয়ভাবে গরম --- হয়ে ওঠে। সেগুলো আর বিক্রিয়া ঘটানোর কাজে লাগে না। তাই ওগুলোকে বলে "পোড়া' জ্বালানি। এগুলো শীতল করার জলাধারে রাখা হয়, পরমাণু শিল্পে নরম করে এগুলোকে বলে সুইমিং পুল। আপনারা দেখবেন, বছরে ত্রিশ টন পোড়া জ্বালানি সরিয়ে ফেলা হয়। ফুকুশিমায় ছ'টি চুল্লি রয়েছে, তার মধ্যে কিছু চল্লিশ বছরের পুরনো আর কিছু প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরের পুরনো।

    আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন, কতটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ওরা এইসব জ্বালানি-জলাধারে জমা করেছে? এখন, অতি স্বল্পমেয়াদি আইসোটোপগুলো ক্ষয়ে কোনো কিছু হয় না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি আইসোটোপগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক --- সিজিয়াম, স্ট্রনশিয়াম, ইউরেনিয়াম, আমেরিসিয়াম, প্লুটোনিয়াম, কিউরিয়াম, নেপচুনিয়াম --- আমি বলছি সত্যিই বিপজ্জনক। এগুলোই জ্বালানি ভর্তি চৌবাচ্চাগুলোতে থাকে। প্রিন্সটনে ভন হিপ্‌ল একটা সমীক্ষা করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, একটা জ্বালানি ভর্তি জলাধারে যদি ফাটল ধরে, তার থেকে এক বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়, যা চের্নোবিলের মতো চুল্লির কেন্দ্র গলে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ।

    অ্যালেক্স স্মিথ: "ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্টস'-এর ড: ডেভিড লচবাম জানিয়েছেন, পোড়া জ্বালানির চৌবাচ্চাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুকুশিমার মতো একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, এইসব জলাধারের জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ কুলিং পাম্প এমনকী ডিজেল ব্যাকআপ জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং কোনোটারই ব্যাটারির ব্যাকআপ বিদ্যুৎ নেই। আপনি কি আমাদের মার্কিন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিপদের ঝুঁকি সম্পর্কে বলবেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমার মনে হয় এগুলোর অবস্থা জাপানের মতোই। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান! ডেভিড চমৎকার একজন মানুষ। তিনি আমার সর্বশেষ বইয়ের জেনারেশন ফোর রিঅ্যাকটর সংক্রান্ত অধ্যায়টা লিখতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু আমি জানতাম না যে ওখানে পোড়া জ্বালানির জলাধারগুলো শীতল করার জন্য আপতকালীন কুলিং পাম্প নেই, ব্যাকআপ জেনারেটর বা ব্যাটারি নেই। এসব আমি জানতাম না। কতখানি ভয়ঙ্কর দায়িত্বজ্ঞানহীন এই শিল্প! এই লোকগুলো ইঞ্জিনিয়ার আর প্রায়শই এই ইঞ্জিনিয়ারেরা চরম খারাপ সম্ভাবনার জন্য কাজ করে। অর্থাৎ "সেতুর দুর্বলতম অংশ কোনটা জেনে আমরা সেতুকে নিরাপদ করে তুলব', এটাই ওদের কাজ। অথচ এরাই সবচেয়ে অবধারিত সমস্যাগুলোকে অবজ্ঞা করে চলেছে। আমার মনে হয়, এটা এমন এক শিল্প যাকে এই ধরনের লোকেরা পছন্দ করে, কারণ এটাই হল আণবিক শক্তির ক্ষমতা। এই ক্ষমতা নিয়ে এরা খেলাধুলা করতে ভালোবাসে, যেমন লোকে রেসিং কার চালাতে বা ওই ধরনের কোনো কিছু ভালোবাসে। আপনি কি বুঝতে পারছেন, আমি কী বলতে চাইছি? আমার মনে হয় এর পিছনে কাজ করে একটা মনস্তত্ত্ব, যেটা একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার কাছে আশ্চর্যজনক।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আমি আপনাকে অবগত করতে চাই এবং যারা আমাদের কথাবার্তা শুনছে, তাদের জানাতে চাই, আমি এনএইচকে ওয়ার্ল্ড টেলিভিশনে সবেমাত্র শুনেছি একটা রিপোর্ট, টোকিওতে পানীয় জলে আয়োডিন পাওয়া গেছে। এটা বাচ্চাদের আরও পান করানোর সুপারিশ করা হয়নি। ওরা মনে করে, দূষিত নদীগুলোর মধ্য দিয়ে এই আয়োডিন জলের ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছে।

    একজন অধ্যাপক ফুকুশিমা প্ল্যান্টের ৪০ কিমি উত্তরে জমি পরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন, মাটির পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই তেজস্ক্রিয়তা মাটিতে কমপক্ষে ত্রিশ বছর থেকে যাবে। অতএব আমাদের এটা বলার সময় হয়েছে যে, জাপানের এক বৃহদংশ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা হয়তো পুনরুদ্ধার করা যাবে না।

    হেলেন ক্যালডিকট: না, এটা পুনরুদ্ধার হবে না। এই দুর্ঘটনা নিরন্তর চলতেই থাকে, কারণ প্লুটোনিয়ামের অর্ধ-জীবন হল ২৪,৪০০ বছর। এর আয়ু পাঁচ লক্ষ বছর। চের্নোবিল থেকে ত্রিশ টন প্লুটোনিয়াম বেরিয়ে এসেছিল।

    এরপর রয়েছে সিশিয়াম ১৩৭। এর অর্ধ-জীবন ত্রিশ বছর। ৬০০ বছর টিকে থাকে এই পদার্থটি। একই বৈশিষ্ট্য স্ট্রনশিয়াম ৯০-এর। আমি এইভাবে তালিকাভুক্ত সমস্ত পদার্থের পিরিয়োডিক টেবিল ধরে বলে যেতে পারি। ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকে। যদি কোনো পুরুষের জিন তার অণ্ডকোষের মধ্যে পরিবর্তিত হয় --- যে জিনগুলোর ওই অঙ্গটির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে --- সেই ক্ষতিগ্রস্ত জিনগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্লুটোনিয়ামকে বয়ে নিয়ে চলে। সেই মানুষটিকে কবরস্থ করার পর অন্য কোনো মানুষ নি:শ্বাসের সঙ্গে তা শরীরের মধ্যে গ্রহণ করে নিতে পারে। সেই প্লুটোনিয়াম চলে যায় তার অণ্ডকোষে আর প্রক্রিয়াটা অন্তহীনভাবে চলতে থাকে।

    অতএব আপনি জিনগত রোগের সংখ্যাগত বৃদ্ধি দেখতে পাবেন। এখন এই ধরনের ২৬০০ রোগ রয়েছে --- যেমন, ডায়াবেটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ডোয়ার্ফিজ্‌ম ইত্যাদি। আমার বিশেষজ্ঞতা সিস্টিক ফাইব্রোসিসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকবে। আর সেই ঐতিহ্যই আমরা রেখে যাচ্ছি ---

    অ্যালেক্স স্মিথ: সারা পৃথিবীর ছবিটা কি এরকম, এটা কি বলা সঠিক যে বিশ্বের বেশিরভাগ পরমাণু চুল্লি সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত, বড়ো সুনামির সীমানার মধ্যে?

    হেলেন ক্যালডিকট: হ্যঁ¡ তাই। কিন্তু হ্রদের ওপরও এগুলো রয়েছে। অন্টারিও হ্রদের ওপর যথেষ্ট সংখ্যায় রয়েছে। আসলে আমি আগামীকালই ডার্লিংটন শুনানিতে যাচ্ছি। ওদের আমি কী বলতে যাচ্ছি? "আপনারা কি সত্যিই জটিল মনোবিকারগ্রস্ত? আপনারা অন্টারিও হ্রদের ওপর আরও দুটো চুল্লি তৈরি করতে চাইছেন? পোর্ট হোপ-এর ঠিক কাছেই তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের (টেলিং) ওপর এগুলো তৈরি হচ্ছে।' আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে কী বলতে যাচ্ছি ওদের?

    অ্যালেক্স স্মিথ: ওই প্ল্যান্টগুলো বানাতে লেগেছিল প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। এখন নতুন খরচ পড়বে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যাই দাম লাগুক না কেন পরোয়া নেই, আমাদের ওগুলো বানাতেই হবে। কিন্তু কেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: হ্যঁ¡, সেই একই যুক্তিতে ওরা পরমাণু অস্ত্র বানিয়েছিল। আপনি জানেন, আমার প্রথমদিকের একটা বই ছিল "ক্ষেপণাস্ত্রের ঈর্ষা', একটা লোক ঠকানো ব্যাপার ছাড়া কিছুই নয়।

    আমার মনে হয় এর নিদানতত্ত্ব বা পারমাণবিক অসুস্থতার কারণ হল কিছু মানুষের মগজের মধ্যে সরীসৃপশ্রেণীর মধ্য মস্তিষ্কের উপস্থিতি। হালফিল মস্তিষ্কের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে পড়লে খুবই আশ্চর্য লাগে। দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবস্থায় যে হরমোন (প্রাণীদেহজ রসবিশেষ) তৈরি হয়, যা অনেকটাই মরফিয়ার মতো --- যে দুই প্রবৃত্তি থেকে ওই আশ্চর্য হরমোন উৎপন্ন হয়, যার মাধ্যমে আমরা পুরুষদের ভয়ানক বলে অনুভব করি, সে দুটি হল যৌনতা আর হিংসা। পরমাণু অস্ত্র এবং তারই প্রশাখা পরমাণু শক্তি, যাদের একই প্রযুক্তি --- এই দুইয়ের মধ্যেই নিহিত থাকে হিংসা।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আর সম্ভবত মস্তিষ্কের সমস্যা থেকেই এর উৎপত্তি।

    হেলেন ক্যালডিকট: না, এটা মস্তিষ্কের সমস্যা নয়, এটা নিছকই এক স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় সমস্যা, যা আমাদের মধ্যে মানুষের গুহাবাসের সময় থেকে উদ্ভুত হয়েছে। আমার এরকমই মনে হয়।

    অ্যালেক্স স্মিথ: ঠিক। আমি এক মিনিটের জন্য রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা সম্পর্কে বলতে চাই। আপনি জানেন, প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার আগে আমরা ওহিও-র পরমাণু কেন্দ্রে তাঁর সফর নিয়ে একটা সংবাদ প্রচারমাধ্যমে পেয়েছিলাম। তখন থেকেই আমরা জানতে পারি, তাঁর প্রচারের কাজে এক্সেলন-এর মতো পরমাণু শক্তি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট অর্থ পাওয়া গেছে। তিনি স্টিভেন চু নামক এক পরমাণু-পন্থী পদার্থবিদকে এনার্জি সেক্রেটারি পদে মনোনীত করেন। এরাই আরও পরমাণু শক্তির জন্য ওকালতি করে চলেছে, এমনকী এই দুর্ঘটনার পরেও। সেই বারাক ওবামাকে আপনি পরমাণু শক্তির প্রশ্নে কোথায় পাবেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি দু:খিত। আমি সত্যিই এই লোকটার সম্পর্কে কিছু আশা করেছিলাম। সে এত বুদ্ধিমান, এত ভালো মানুষ। অথচ তাকে এইসব পরমাণু-মানবেরা গিলে ফেলল। আমি শুনেছি, সে যখন চিলিতে ছিল, এই ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পরেও, সে চিলিকে চুল্লি বিক্রি করার একটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। আমি এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, কিন্তু আমি তা শুনেছি। আমি দু:খিত, কিন্তু ওবামার ওপর আমার বিশ্বাস ভেঙে গেছে। এটা মর্মান্তিক।

    অ্যালেক্স স্মিথ: দ্বিতীয় যে যুক্তি খাঁড়া করা হয়ে থাকে, এশিয়ার প্রত্যেক মানুষ আলো, ফ্রিজ ইত্যাদি যে জীবনযাত্রা আমরা এখানে উপভোগ করি, সেটা চায়। যদি শক্তি-পীপাসু চীন আর ভারত এতগুলো পরমাণু শক্তি কেন্দ্র না বানায়, তাহলে তারা কয়লা ব্যবহার করবে, অর্থাৎ আবহাওয়া-হত্যার পথে এগিয়ে যাবে। আপনার কী মনে হয়?

    হেলেন ক্যালডিকট: বেশ! একই সঙ্গে তারা ক্যানসার, লিউকোমিয়া, বিকলাঙ্গ শিশু, জিনগত রোগাক্রান্ত বাচ্চা পাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। সেটাও নিশ্চয় একটা ভালো ব্যাপার?

    এগুলো সবই স্বাস্থ্যগত বিষয়। আমরা চিকিৎসকেরা যখন পরমাণু যুদ্ধের স্বাস্থ্যগত ফলাফল নিয়ে কথা বলতে শুরু করি, সংবাদমাধ্যম হতবাক হয়ে যায়। ওরা বলে, "কী জন্য আপনারা এসব কথা বলছেন? এটা দেশের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, আর্মি জেনারেল আর যুদ্ধের প্রশ্ন।' আমরা তখন বর্ণনা করতে শুরু করি, বোস্টনের ওপর একটা বোমা এসে পড়লে তার ফলটা কী হতে পারে। তিন মাইল পর্যন্ত লোকে সম্পূর্ণ উবে যাবে। কুড়ি মাইল পর্যন্ত লোকেরা থার্ড ডিগ্রি মাত্রায় পুড়ে যাবে। হঠাৎ লোকে জেগে উঠে বলে, "ওহ্‌ ভগবান! পরমাণু যুদ্ধ আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ' ---- এগুলো সবই স্বাস্থ্যের ব্যাপার। পরমাণু শক্তি জনস্বাস্থ্যের পক্ষে এ যাবৎ পৃথিবীর দেখা সবচেয়ে ক্ষতিকারক বস্তু।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আপনি কি বলবেন কয়লার চেয়েও খারাপ?

    হেলেন ক্যালডিকট: ওহ্‌, হ্যঁ¡ অনেক বেশি খারাপ। কিন্তু যেটা আমরা বলি, কয়লা পোড়ানো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। মাটি খুঁড়ে কয়লাজাত আলকাতরা (কোল-টার) বের করাও একটা ভয়ানক ব্যাপার। আমাদের কার্বন পোড়ানো বন্ধ করার দিকেও যেতে হবে। তাই আমি সুদক্ষ পদার্থবিদ অর্জুন মাকিজানিকে দিয়ে "কার্বন-মুক্ত, পরমাণু-মুক্ত' নামে এক সমীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছিলাম। এটা ieer.org–এ আপনারা পাবেন। বর্তমান পুনর্নবীকরণ প্রযুক্তি --- যেটা খুবই সস্তা --- ২০৪০ সালের মধ্যে আমেরিকার শক্তি-চাহিদা পুরোটাই মেটাতে পারে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আর আমরা এখন দেখছি, আমেরিকা ৪০ বছরের পুরনো প্রযুক্তির বোঝা এখনও টেনে যাচ্ছে। কিন্তু কেউই একটা পরমাণু কেন্দ্র বন্ধ করতে এবং জঞ্জাল সাফ করতে পারছে না। আপনি কি আমাদের ডিকমিশনিং নিয়ে বলতে পারেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: ওহ্‌, বেশ। একটা চুল্লিকে ডিকমিশনিং করতে হলে আপনাকে সেটা তেজস্ক্রিয়ভাবে শীতল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় চল্লিশ বছর পর কেউ সেটার ধারে ঘেঁসতে পারবে। আসলে এটার যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে ফেলা হয় রোবোটদের মাধ্যমে রিমোট কন?ট্রোলে, এত তেজস্ক্রিয় এই চুল্লি। তারপর একে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়। অর্থাৎ আপনি কখনই পরমাণু বর্জ্যের হাত থেকে রেহাই পাবেন না। আপনি কেবল এক জায়গা থেকে অন্যত্র সেটা বয়ে নিয়ে যাবেন, আরও বেশি বেশি সংখ্যায় শ্রমিকদের --- সাধারণত পুরুষদের --- তেজস্ক্রিয়তার পরিধির মধ্যে উন্মুক্ত করবেন, তাদের পুরুষাঙ্গ এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলো আরও বেশি বেশি তেজস্ক্রিয়তার শিকার হবে। একটা খুব বড়ো পরমাণু চুল্লি কখনই ডিকমিশন করা যায় না।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আর আমি এটাও জেনেছি, যদিবা সেটা করা যায়, তার খরচ নতুন করে একটা পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করার খরচের সমান।

    হেলেন ক্যালডিকট: ঠিক বলেছেন। অথবা তার চেয়েও বেশি। আমি আমার বই "নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইজ নট দ্য আনসার'-এ ডিকমিশনিং এবং তার খরচ নিয়ে লিখেছি।

    অ্যালেক্স স্মিথ: ঠিক, এক মিনিট এই বইটা নিয়ে আমাদের বলুন। আমার মনে হয় এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

    হেলেন ক্যালডিকট: প্রথম অধ্যায়ে যে বিষয়টা ধরা হয়েছে সেটা হল, পরমাণু শক্তি নিজ কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ বিশ্ব-উষ?ণায়ন গ্যাস সৃষ্টি করে। যেহেতু এই শক্তিকে এক বিশাল শিল্পকাঠামোর ওপর নির্ভর করতে হয়, কোটি কোটি টন ইউরেনিয়াম খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। কানাডায় কী হচ্ছে আপনারা জানেন। আপনাদের ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল ট্রিনিটি, ফ্যাট ম্যান ও লিট্‌ল বয় নামক তিনটি বোমাতে, যেগুলো হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা হয়েছিল। এই ইউরেনিয়াম ১৯৫৭ সাল অবধি আমেরিকার তৈরি সমস্ত বোমায় ব্যবহার করা হয়েছিল। আপনারা তো সেটা জানেন।

    এই কোটি কোটি টন ইউরেনিয়াম গুঁড়িয়ে একটা মিহি পাউডারে পরিণত করা হয়। খনি থেকে পাওয়া ইউরেনিয়াম মাটি থেকে বেছে আলাদা করে নিতে হয়। এরপর ইউরেনিয়ামকে এনরিচ বা সমৃদ্ধকরণ করা হয়। প্রথমে পোর্ট হোপের ক্যামেকো প্ল্যান্টে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড তৈরি হয়। সেটা পাঠানো হয় কেন্টাকির পাদুকাহ্‌-তে। সেখানে দুটো বিশাল কয়লা-চালিত প্ল্যান্টে ইউরেনিয়াম এনরিচ করা হয়। অতএব জ্বালানি-শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে প্রচুর পরিমাণ বিশ্ব-উষ?ণায়ন গ্যাস তৈরি হয়।

    পরের অধ্যায়টা হল খরচ নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে লুকোনো খরচ। এতে সরকারের মদত থাকে। পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে বিমা করানো যায় না। সরকার এটা জোগায়, কিন্তু মোটেই তা যথেষ্ট নয়। আমেরিকাতে এটাকে বলে প্রাইস-অ্যান্ডারসন আইন। এর বেশিরিভাগটাই চলে যায় ব্যবহারিক খরচে, যারা মরতে থাকে এবং মারা যায় সেই লোকেরা বা তাদের পরিবার পায় না।

    এর পরের অধ্যায় তেজস্ক্রিয়তার মূল বিষয় নিয়ে, কীভাবে শরীরের অভ্যন্তরস্থ বস্তুর বিকিরণ থেকে ক্যানসার হয় এবং কীভাবে তা জিনগত রোগের কারণ হয়ে ওঠে। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রথম বর্ষের প্রাথমিক পাঠ, কিন্তু সহজেই বোঝা যায়।

    এর পরে আমি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের চুল্লির বিষয়ে আলোচনায় গেছি। আমি শিল্পের ভিতর ঢুকেছি এবং দেখেছি কীভাবে তারা বরাবর মিথ্যাচার করে এবং তথ্যগুলোকে আবছা করে রাখে। এরপর আমি যে বিষয়ে গেছি, সেটা হল লোকে এ নিয়ে কী করতে পারে। এটা দ্রুত পড়ে ফেলা যায়। কিন্তু বইয়ের পরিসংখ্যানগুলো যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি যে কারও সঙ্গে তর্ক করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী হার্পারের সঙ্গেও এবং তাঁকে হারিয়ে দিতে পারেন।

    অ্যালেক্স স্মিথ: এই বইয়ের নামটা হল ...

    হেলেন ক্যালডিকট: "নিউক্লিয়ার পাওয়ার ইজ নট দ্য আনসার টু গ্লোবাল ওয়ার্মিং', এটা নিউ প্রেস প্রকাশ করেছে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: ঠিক। এবার আমরা টোকিওতে ফিরে আসি। সেখানে টোকিও পাওয়ার কোম্পানি ঘোষণা করেছে যে, মে মাস পর্যন্ত একটানা ব্ল্যাকআউট চলবে, তারপর গ্রীষ্মে তা ফের হবে, যখন এয়ার-কন্ডিশন চালানোর সময় হবে। বহু পরমাণু শক্তিকেন্দ্র শাট ডাউন করে দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের হাতে জাপানের পূর্ণ উৎপাদন চালানোর মতো বিদ্যুৎ থাকবে না। অতএব ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে, যদি এই ধরনের দুর্ঘটনা একবার ঘটে, তাহলে অর্থনীতিকে দারুণভাবে বিপন্ন করতে পারে পরমাণু শক্তি।

    হেলেন ক্যালডিকট: ঠিক তাই। এক অর্থনৈতিক বৃহৎশক্তি হিসেবে জাপান শেষ হতে চলেছে। যদি সত্যিই চুল্লিতে গলন (মেল্ট ডাউন) হয়ে থাকে, যেমনটা চের্নোবিলে ঘটেছিল, তা জাপানময় ছড়িয়ে পড়বে। সেখানেই জাপানের শেষ।

    অ্যালেক্স স্মিথ: হ্যঁ¡, এটা একটা ছোট্ট দ্বীপ। আমি সবসময় ভাবি, যদি ফ্রান্স ঠিক এরকম সম্পূর্ণ অচলাবস্থার মুখে পড়ে, তাদের ৭৫% বিদ্যুৎ আসে পরমাণু শক্তি থেকে, যদি সেই সুন্দর দেশটার ওপর কিছু দুর্যোগ এসে পড়ে এবং জনতা বিদ্রোহ করে, ফ্রান্স কীভাবে তার মোকাবিলা করবে?

    হেলেন ক্যালডিকট: আপনি জানেন, ফ্রান্সের প্রতিটি কোণে গেলেই আপনি বিশাল বিশাল কুলিং টাওয়ার দেখতে পাবেন। ফরাসিরা তাদের খাবার, ওয়াইন, চিজ ভালোবাসে। এগুলোর কিছুটা অন্তত তেজস্ক্রিয়। কারণ পরমাণু শক্তিকেন্দ্র স্বাভাবিকভাবে চলাকালীন সবসময় রুটিনমাফিক বাতাস ও জলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিকিরণ করতে থাকে। আর প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। তার ফলে তাদের হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি তেজস্ক্রিয়তা সেখান থেকে নির্গত হয়।

    আমার এক ফরাসি নাতি রয়েছে, সে একজন কাউন্ট --- এই ফরাসিদের উদ্ধত হওয়ার ঝোঁক রয়েছে। এরা পরমাণুর ব্যাপারটাতে ভয়ানক অজ্ঞ, কারণ সমস্ত ফরাসি চুল্লিগুলোর নির্মাতা ফরাসি সরকার। "লা মদ' জাতীয় খবরের কাগজগুলো চালায় সরকার। এরা পরমাণু শক্তির সম্বন্ধে কিছুই জানে না। কিন্তু তারা বুঝতে শুরু করেছে।

    এটা একটা বিপর্যয়। পরমাণু শক্তি যুদ্ধকে অচল করে দিয়েছে। ইউরোপ ভর্তি পরমাণু চুল্লি। যদি আজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হত, ইউরোপ চিরকালের মতো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ত। এটা এই পৃথিবীর বাকি সময়কালের পুরোটার জন্যই সত্য, কারণ চুল্লিগুলো যদি শাট ডাউন করে দেওয়া হয়, তাহলেও আমরা বিপুল পরিমাণ, শত শত হাজার টন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পাব, যা চিরকাল টিকে থাকবে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: হেলেন, ইতিমধ্যেই আমেরিকান কোম্পানিগুলো বলছে যে টেক্সাস, মেরিল্যান্ড এবং অন্যান্য অঞ্চলে নতুন পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করা আর্থিকভাবে সুবিধাজনক নয়। এক কোম্পানির সিইও বলেছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পড়ে যাওয়ায় পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করা আর একটা দশক স্থগিত রাখা যেতে পারে। এটা ইদানীং সৌর বিদ্যুতের সঙ্গেও এমনকী প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছে না। হেলেন ক্যালডিকট, আপনি এখন বাস্তবের দিকে তাকিয়ে পরমাণু শিল্প সম্পর্কে কী বলবেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি এই অনুষ্ঠানে আগে যা বলেছি, আমার মনে হয় এর শেষ হতে চলেছে। পরমাণু শিল্পের অবসান হবে এবার। যখন আমি এই দুর্ঘটনার কথা শুনতে পেলাম, আমার মনে হল, এর শেষ। ইউরেনিয়াম মাইনিংয়েরও শেষ। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

    আমি চল্লিশ বছর আগে এই খেপামোর কাজটা শুরু করেছিলাম, আমি সবসময় বলে গেছি: একটা বড়োসড়ো গলন (মেল্ট ডাউন) ঘটলে এই শিল্পের শেষ হবে। আর এখন যা ঘটল, ছটা চুল্লিতে গলন, একই সঙ্গে শীতল করার জলাধারগুলোও।

    অ্যালেক্স স্মিথ: পরমাণু বিরোধী প্রচারকেরা এখন কোনদিকে জোর দেবে? তাদের মূল জায়গা এবং বিষয়গুলো কী হবে?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমার ওয়েব পেজ nuclearfreeplanet.org–এ গিয়ে দেখুন। আপনি প্রচুর তথ্য পাবেন ওখানে। ড: হেলেন ক্যালডিকট-এর নামে আমার একটা ফেসবুক রয়েছে। সমস্ত হালফিল প্রবন্ধ পেলে আমরা ওখানে সেটা রেখে দিই যাতে সকলে তা জানতে পারে। তথ্য হল অস্ত্র। জেফারসন বলেছেন, একটা তথ্যসমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারে। পরমাণু বিকারগ্রস্ততার বিরুদ্ধে একটা পরমাণু বিপ্লব আমাদের দরকার। তার মানে একটা মিশর বা উইসকিনসন আমাদের দরকার, কিংবা যেটা আমরা ১৯৮০-র দশকে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানোর জন্য করেছিলাম সেই ধরনের কিছু। অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমবেত প্রতিবাদ দরকার। এটা হবে শান্তিপূর্ণ, বিচক্ষণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন আন্দোলন --- কিন্তু এটা আমরা ঘটাতে পারি!

    অ্যালেক্স স্মিথ: হেলেন, ব্যক্তিগত স্তরে আপনার এখনকার কর্মসূচি কী?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি একটা সফরে যাচ্ছি এখন। আমি মনট্রিলে একটা বক্তৃতা করেছি। বোস্টনে আমি এখন একদিন বিশ্রাম নিচ্ছি। আগামীকাল আমি ডার্লিংটনের শুনানিতে যাব। এরপর আমি ওটাওয়াতে সম্ভবত একটা সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেব এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে একটা হাসপাতালে কথা বলব। শনিবার ওটাওয়াতে সারাদিন ধরে একটা বড়ো সম্মেলনে আমি এবং আমার সহকর্মীরা অংশ নেব। সেখানে আমরা পরমাণু দুর্ঘটনার স্বাস্থ্যগত ফলাফল নিয়ে কথা বলব। যদি আপনি Global Physicians for Survival–এর ওয়েবসাইটে যান, এই সম্মেলন সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং সেখানে আসতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে একটা রেডিও প্রোগ্রাম If You Love This Planet–এ আমি অংশ নিই। এটা বোধহয় সব দেশে সব রেডিও স্টেশনে বাজানো হয়, কারণ এটা মূলত বিশ্ব উষ?ণায়ন, পরমাণু শক্তি ও অস্ত্র এবং তার স্বাস্থ্যগত ফলাফল নিয়ে করা হয়।

    আমার ওয়েবপেজ সত্যিই যুবসমাজের নাগালের বাইরে। ওরা পরমাণু নিয়ে কিছুই জানে না, কারণ সেই অজ্ঞতার মধ্যেই ওরা বেড়ে উঠেছে। কিন্তু ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে ওরা জানতে শুরু করেছে। তাই আমার আশা, ওদের হৃদয়, মন আর মগজে আমি প্রবেশ করতে পারব --- আমার মনে হয় এই বিশাল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সেটা ঘটবে।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আমাদের কথাবার্তা গুটিয়ে নেওয়ার আগে আপনি কি শ্রোতাদের আর কিছু জানাতে চান?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমি চাই কানাডিয়ানরা ঊঠে দাঁড়াক এবং সঠিক কাজটা করুক। ওরা চমৎকার ভালো, সৎ আর নরম স্বভাবের মানুষ। এখন ওদের কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে পথে বেরিয়ে পড়া দরকার, এই উন্মাদনাকে বন্ধ করা দরকার। আপনারা বিশ্বের বৃহৎ এক ইউরেনিয়ামের যোগানদার। পোর্ট হোপের ক্যামেকো সারা বিশ্বকে পরমাণু জ্বালানি দণ্ড যোগান দেয়। আর তারি নাম পোর্ট হোপ --- আশার বন্দর! অতএব এটাকে বন্ধ করুন। ক্যামেকো বন্ধ হোক। আপনার দুটো জিনিস রপ্তানি করেন। গম রপ্তানি করেন বেঁচে থাকার জন্য, আর মৃত্যুর জন্য রপ্তানি করেন ইউরেনিয়াম।

    অ্যালেক্স স্মিথ: আপনি জানেন, আমাদের অর্ধেকের বেশি শ্রোতা আমেরিকান, তাদের কাছে কী বলবেন?

    হেলেন ক্যালডিকট: আমেরিকান বন্ধুরা, আপনারা আপনাদের হৃদয় আর মনের গভীরে বিপদটা সম্পর্কে জানেন। আপনারা সমস্ত পরমাণু চুল্লি বন্ধ করুন। যদি রাতারাতি না পারেন, সামনের সপ্তাহের মধ্যে করুন। এখন আমি সত্যিই গভীরভাবে চিন্তিত। এটা অত্যন্ত জরুরি স্বাস্থ্যগত একটা বিষয়। আপনারা তার আঁচ পেয়ে গেছেন। তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিন।


    [১] স্তরচ্যুতি বা ফল্ট: ভূমিকম্প সাধারণত হয় মাটির তলায় এই ফল্ট বা স্তরচ্যুতির কারণে।

    [২] হিবাকুশা একটি জাপানি শব্দ, এর অর্থ হল "বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত মানুষ'। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোসিমায় এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত দুই শহরে যারা বেঁচে গিয়েছিল তারাই আজ হিবাকুশা নামে পরিচিত। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪,২০,০০০ হিবাকুশা মারা গেছে, জাপান সরকারের হিসেবে এখনও ২২৭,৫৬৫ জন হিবাকুশা বেঁচে রয়েছে। এদের অনেকেই রয়েছে জাপানে, বেশ কয়েক হাজার জাপানি ও জাপানি নয় এমন হিবাকুশা ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে। সূত্র: উইকিপিডিয়া।


    সংবাদ মন্থনে পূর্বপ্রকাশিত

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ জুন ২০১১ | ৭৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন