এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ঈদের কথা

    সামরান হুদা
    আলোচনা | বিবিধ | ৩১ অক্টোবর ২০০৬ | ৯০১ বার পঠিত
  • ঝুলি ঝেড়ে তুলে আনা এই লেখাটি "আলোচনা" নয় কোনোভাবেই। তবু গুরুচন্ডা৯র পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যেই ২৫শে অক্টোবর ২০০৬ থেকে ২৯শে অক্টোবর ২০০৬ এর মধ্যে লিখিত অংশগুলি একত্রে গ্রন্থিত করে ছাপা হল এই বিভাগে। ----- সম্পাদক

    ঈদ ও রাজনীতি
    ========
    ঈদের দিন সকালে আব্বুকে ফোন করলাম ঈদের সালাম টেলিফোনেই সারবো বলে। আস-সালামু-আলাইকুম ওয়ালাই-কুম-সালাম পরে ঈদ মুবারক বলতেই আব্বু বললেন, তোমাদের কি ইদ আজকে নাকি? আমি খুব অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি, আপনাদের ঈদ নয় আজ? বললেন, না, আমরা তো আজও রোযা!

    এখানে, কোলকাতায় রোযা আমরা যেদিন থেকে শুরু করেছিলাম, বাংলাদেশে ওঁরা তার আগেরদিন থেকে রোযা শুরু করেছিলেন। মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছিল, চাঁদ দেখা গেছে, কাল থেকে রোযা। সেই হিসেবে ওঁরা রোযা একদিন এমনিতেই বেশি করছেন!

    ৩১ রোযা আমি এই প্রথম শুনলাম, অন্তত আমার স্মরণে আসে না রোযা ৩১শে হয়েছে, এরকমটি কখনই শুনেছি বলে।

    এখানে ঈদ নিয়ে প্রতিবছরই একটা কনফিউশন থাকে। ঈদের জন্যে সরকারী ছুটি একদিন। দিন-তারিখ হিসেব করে ক্যালেন্ডারে তারিখটা লাল কালিতে লিখে দেওয়া হয়, ছুটির দিন হিসেবে। তবে ক্যালেন্ডারের ঐ লাল কালি দেওয়া তারিখটিতে ছুটি কমই পড়ে। তিরিশদিনের রোযার হিসেবে ছুটি নির্ধারিত হয় কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই রোযা ২৯দিনে শেষ হয়। যেহেতু চাঁদের উপর নির্ভর করে তাই চাঁদ দেখার খবর পাওয়া মাত্রই পরদিনটি ছুটির দিন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিছু কিছু অফিস তাও খোলা থাকে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা এই অঘোষিত ছুটির দিনটিতে কাজ-কর্ম করেন, ক্যালেন্ডারের লাল দাগ অনুসারে তারা পরদিন ছুটি উপভোগ করেন।

    গতকাল যেমন সন্ধ্যেবেলায় কোথাও থেকেই চাঁদ দেখার কোন খবর পাওয়া যায়নি ( যদিও ফোনে আমি একটা উড়ো খবর পেয়েছিলাম, চাঁদ দেখা গেছে বলে) তাই মসজিদে মসজিদে তারাবীর নামাজও পড়ানো হয়েছে। কিন্তু রাত প্রায় ১১টার সময় মসজিদ থেকে জানানো হয়, চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ থেকে মাইকে বলে দেওয়া হয়, সকালে কোথায় কোথায় নামাজ হবে।

    অনেকেই রাজনীতিকে দোষারোপ করেন, এই প্রায় মাঝরাত্তিরে ঈদ ঘোষণা করা নিয়ে। দিল্লির জামে মসজিদের ইমামকে দোষারোপ করেন, তিনি নাকি রাজনৈতীক কারণে প্রায় প্রতিবছরই ২৯রোযার পরেই ঈদ ঘোষণা করেন সত্যি-মিথ্যে আল্লাহ জানেন আর জানেন মসজিদের ইমাম আর রাজনৈতীকেরা, আমরা জন সাধারণেরা মসজিদের ঘোষণা শুনে রোযা শুরু করি আবার ঘোষণা শুনেই ২৯/৩০ দিনের রমযান শেষ করে ঈদের আনন্দে মাতি।

    ছেলেবেলার ঈদটাই আনন্দের ছিল। বাড়ির গিন্নিরা এইদিনে কেবল রাঁধে-বাড়ে, খায় আর খাওয়ায়। ছেলেরা তবু ঈদগাহে-ময়দানে ঈদের নামাজে যায়। সেখানে চেনা অচেনা অনেকের সাথে দেখা হয়। গিন্নিরা এদিন ব্যস্ত শুধুই হেঁসেলে।

    ছেলেবেলায় রোযার প্রথম দিন থেকেই শুরু হত ঈদের অপেক্ষা। খুব ছোট যখন ছিলাম ,রোযা রাখার মত বড় হইনি, তখনও বায়না করতাম রোযা রাখব বলে। দাদী শিখিয়ে দিয়েছিলেন, কল্‌সীতে হাঁ দিয়ে তোমার রোযা কল্‌সীতে রেখে ঢাকা চাপা দাও, আর তারপরে তুমি খেয়ে নিয়ে কল্‌সীর মুখ থেকে নিজের রোযা আবার নিয়ে নাও। এই করে তোমার একদিনে তিনটে রোযা হয়ে যাবে! তো আমি প্রতিদিনই তিনটে করে রোযা রাখতাম।

    ঈদের কেনাকাটা শুরু হত রোযার প্রথম দিন থেকেই। আমাদের বিশাল যৌথ পরিবার। সক্কলের জন্যে জামা কাপড় কেনা হত, বাচ্চা থেকে বুড়ো। সবার জন্যে। আমাকে নিয়ে আব্বু যেতেন একেবারে চাঁদরাতে। আর প্রতিদিনই আব্বু ইফতারের জন্যে বাড়ি এলেই আমার ঘ্যানঘ্যানি শুরু হয়ে যেত: আব্বু, চল না! কবে জামা কেনা হবে? মার্কেটে তো সব শেষ হয়ে যাবে! কিছু কি আর থাকবে?

    আর ঐ চাঁদরাত আসার আগেই আমার হয়ে যেত আট-দশখানা নতুন জামা। সাথে জুতো, ফিতে আর পুতুল। মামাবাড়ি থেকে আসতো, কাকারা দিতেন, পিসিরা দিতেন। আর সবার শেষে আব্বু। মা নিজের হাতে বানাতেন ফ্রক, নিজের হাতে ওতে কাজ করতেন।

    ঈদের আগে হাতে মেহেদি পরতাম। বাড়ির সব মেয়েরাই পরেন। রাতে মেহেদি পরে ঘুম দাও। যত বেশি সময় থাকবে তত লাল! বিছানায়, শরীরে সেই মেহেদি মাখামাখি ঘুমের মধ্যে।

    ছেলেবেলার ঈদ
    ========
    এখন যেমন কোণ দিয়ে লিকুইড মেহেদি পরা হয়, সেই মেহেদি তা ছিল না। গাছ থেকে মেহেদির পাতা তুলে শিলে মিহি বেটে নিয়ে সেই মেহেদি দিয়ে হাতে নানা ডিজাইন আঁকা হত। আমার দাদি হাতে মেহেদির ডিজাইন করতেন না। হাতের গোটা পাতায় মেহেদি লেপে দিতেন আঙুল সহ আর এদিকে হাত উল্টে নখগুলো ও মেহেদি দিয়ে ঢেকে দিতেন। তারপর দুই হাতের মাঝে একটা পানপাতা রেখে হাতদুটো একসাথে জোড় করে রাখতেন। সে এক দেখার মত জিনিস ছিল।

    আমরা রোযার পুরো একমাস ছুটি পেতাম। রোযা শুরু হওয়ার দু-চারদিন আগে স্কুল ছুটি হয়ে যেত, ঈদের ও আরও হপ্তা দশদিন পরে স্কুল খোলার একটা তারিখ দিয়ে। এই সোয়া মাস ছুটি মানে পড়াশোনা? একদমই নয়! সোয়া মাস ধরে উৎসব। মায়ের তাগিদে বই নিয়ে বসতে হলেও দাদি মাকেই বকে দিত, সারা বছরই তো পড়ছে, এখন থাকতে দাও না কদিন শান্তিতে!! ভোর রাত্তির থেকেই শুরু হয়ে যেত হুল্লোড়। ভোর রাত্তির মানে সেই রাত তিনটে! আমার তো কল্‌সীতে হাঁ দিয়ে রোযা, ভোরে উঠে সেহরী ( রোযা রাখার জন্যে ভোররাতে উঠে খাওয়া) না খেলেও চলে কিন্তু আব্বু তুলবেই। আর দাদিও বলে, সেহরী খাওয়াও পুণ্যের কাজ! অতএব উঠে পড়ো রাত তিনটেয়! মা এই ভোরবেলায় ডাকতে চাইতো না, কারন আমরা, এই পোলাপানেরা ভোরে আর ঘুমাতে চাইতাম না। সেহরী খেয়ে মা যে একটু ঘুমুবে তার বারোটা বাজিয়ে দিতাম আমরা হই হুল্লোড় করে।

    আমার দাদু, দাদি দুজনেই দেশের বাড়িতে থাকতেন। আমরা তাই ঈদ করতে দেশের বাড়ি চলে যেতাম প্রায় প্রতি বছর। দেশের বাড়িতে যাওয়াটা এমনিতেই একটা উৎসব তায় আবার সে যদি হয় ঈদ তো সে এক বিরাট ব্যাপার।

    ঈদের কথা বলতে গেলেই মনে পড়ে যাকাতের কথা । মোটামুটি রোযা হপ্তাখানেক হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যেত এই যাকাত দেওয়া। আমার সেই ছেলেবেলায় যাকাত হিসেবে আমাদের বাড়ি থেকে কাপড় বিলি হত। বিশাল বড় বড় কাপড়ের গাট আসতো যাকাত দেওয়ার জন্যে। দু গাট শাড়ি হলে সম পরিমান লুঙ্গি-পাঞ্জাবি। দাদুর ঘরে রাখা থাকত সেই কাপড়ের গাটগুলো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো সেই যাকাতের কাপড় নিতে। দাদু হয় তার বিছানায় নয় জানালার পাশে চেয়ারে বসে থাকতেন। চেনা-অচেনা নারী পুরুষেরা এসে জানালার পাশে দাঁড়ালেই দাদু উঠে এসে কাপড়ের গাট থেকে কাপড় বার করে জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দিতেন। যে কাপড় নিতে এসেছে সে মহিলা হলে জিজ্ঞেস করতেন, ছাপা না চেক, নাকি সাদা নেবে? মানুষটি বুড়ো হলে সে চাইতো সাদা, অল্প বয়েসীরা চেয়ে নিত তার পছন্দের চেক কিংবা ছাপা শাড়িটি।

    যতদিন ঐ গাটগুলোতে কাপড় থাকতো তদ্দিন কোন সমস্যা হত না, সমস্যাটা হত কাপড় শেষ হয়ে গেলে। কাপড় শেষ হয়ে গেছে, এবছরের মত যাকাত দেওয়া শেষ বললেও কিছুতেই তারা মানতে চাইত না যে সত্যিই শেষ। দাঁড়িয়েই থাকতো। দাদি তখন নিজের আলমারি থেকে কাপড় বার করে দিয়ে দিতেন, বাড়ির মেয়েদের কাছ থেকে চেয়ে নিতেন পুরনো শাড়ি, দিয়ে দিতেন যাকাতের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে। প্রতি বছরই দাদুর উপরে চেঁচাতেন, এই কাপড় বিলি না করে কেন টাকা দিয়ে দেওয়া হয় না তা নিয়ে। দাদুর যুক্তি ছিল, টাকা দিয়ে দিলে ঝামেলা কম হয় বটে তবে তা দিয়ে এই মানুষগুলো তো কাপড় কিনবে না, খরচ করবে অন্য কাজে, ঈদে এদের কারোরই নতুন কাপড় হবে না তাহলে।

    দাদু চলে যাওয়ার পর এই কাজটা দাদি করেছেন। জানালার পাশে চেয়ারে বসে থেকে কাপড় বিলি করার কাজটা। এখন আব্বু করে। আমার সেই ছেলেবেলায় কোন বছর হয়ত আমরা দেশে যেতাম না। রোযার প্রথম সপ্তায় আব্বু বাড়ি গিয়ে যাকাতের কাপড়ের ব্যবস্থা করে আসত কিন্তু পরে, দাদু চলে যাওয়ার পর প্রতিটি ঈদেই আব্বু দেশে যায় সবাইকে নিয়ে। দাদু, দাদির শূণ্যস্থান এতে পুরণ হয় না কিন্তু যে কাজটা ওরা করতেন সেটা থেমে যায়নি।

    ঈদের সকালে বাড়ির পুরুষেরা ঈদের নামাজের জন্যে জন্যে বেরিয়ে গেলে বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত দুপুরের রান্নার আয়োজনে আর দাদি যেতেন পুকুরে স্নান করতে। দাদি বরাবর পুকুরেই স্নান সারেন। দাদির স্নান করাটাও বেশ মজার ছিল। পুকুরে নেমেই সাঁতার দিয়ে সোজা মাঝপুকুরে, তারপর পাক খেয়ে ঘুরে আবার ফিরে আসা ঘাটে। সিড়িতে উঠে বসে সাবান মাখা গায়ে, বাঁধানো সিড়িতে পা ঘষা আর তারপর নেমে দাঁড়িয়ে তিনখানা ডুব। স্নান শেষ। উঠে পুকুরের পাশেই কাপড় পাল্টনোর জায়গায় গিয়ে কাপড় পাল্টে চলে যেতেন বাড়ির ভেতর। যেতে যেতে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে যাওয়া, কদ্দুর এগোলো কাজ। নামাজ থেকে সবাই ফিরলো বলে!

    দাদি ঘরে এসে পরতেন তার ঈদের শাড়িটি। স্নানের জায়গায় দাঁড়িয়ে দাদি কখনও তার নতুন শাড়ি পরতেন না। পুরনো শাড়ি পরে ঘরে এসে তারপর নতুন শাড়ি পরা। আটপৌরে ভাবে পরা নতুন শাড়ির আঁচল আলতো করে মাথায় টানা, ফুলহাতা ব্লাউজে দাদি যেন শরৎচন্দ্রের নায়িকা। দু'হাত রাঙা মেহেদির গাড় লাল রঙে, চোখে গাঢ় করে টানা সুর্মা, নতুন চটি পায়ে দাদি এসে বসতেন বারান্দায় পেতে রাখা তার হাতলওয়ালা চেয়ারটিতে। দাদির ঘরে টেবিলে ততক্ষণে এসে গেছে বড় গামলায় করে সেমুইএর পায়েস আর পাশেই উপুড় করে রাখা আছে একথাক ছোটো বাটি। একটু পরেই পাড়ার সব ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে আসবে। আর আসবে অন্য সবাই নামাজ ফেরত দাদিকে সালাম করতে, ঈদ মুবারক জানাতে। দাদি সালাম নেবেন আর উঠে গিয়ে সবাইকে একবাটি করে দেবেন শির।

    ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। বিভিন্ন রকম পিঠে তৈরী হয়। মিষ্টি, নোনতা। কোরানো নারকোল চিনি জিয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরী হয় সমোসার পুর। ময়দার রুটি বেলে পছন্দমত আকারে কেটে নিয়ে তাতে নারকোলের পুর দিয়ে তৈরী হয় সমোসা। বিভিন্ন আকারের। কোনটা তেকোণা, কোনটা পুলির মত তো কোনটা আবার দোকানের সিঙাড়ার মত দেখতে। ভাজা হয়ে গেলে ঘন করে জ্বাল দেওয়া চিনির রসে ডুবিয়ে তুলে রেখে দাও বড় গামলায়। ঈদের দিনে শরবত আর সেমুইএর সাথে এই সমোসাও দেওয়া হবে মেহমানদের। সাথেই ভেজে রাখা আছে খাস্তা নিমকি। যে মিষ্টি সমোসা খাবে না , তার জন্যে!

    ভোরের আজানের সাথেই উঠে পড়েন মা, চাচি আর ফুফুরা। ফজরের নামাজ সেরে অন্ধকার থাকতেই তারা ঢুকে পড়েন রান্নাঘরে। পুরুষেরা মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ সেরে এসে হাঁক-ডাক শুরু করেন, এই পোলাপান, এখনও ঘুমাইতেছস? শিগগির ওঠ! সকাল হইয়া গ্যাসে তো! গোসল কইরা রেডি হ সব, নামাজে যাবি না? মাঝরাত পার করে ঘুমুতে যাওয়া সব ছেলে-মেয়ে, আমরা, চোখমুখ কচলে সোজা পুকুরে। মুখ ধুয়ে ঘরে আসতে আসতে টেবিলে হাজির আগের দিনে তৈরী করে রাখা সব সমোসা, নিমকি আর এক্ষুনি রান্না করা সেমুই, সুজির হালুয়া। এই সুজির হালুয়াটা দাদুর ফেভারিট। ঘরে বানানো, কিনে আনা যত খাবারই থাকুক, দাদুর সুজির হালুয়া চাইই চাই। ফ্লাস্ক ভর্তি চা আর ট্রেতে রাখা সব কাপ ডিশ। আমরা পোলাপানেরা তখন চা পেতাম না। আমাদের জন্যে জাগে আছে গরম দুধ। দুধ আমি একদম পছন্দ করি না, আমি চা ই খেতে চাই, কিন্তু চাইলেও কি পাওয়া যায়? দাদি বলে, চা খেলে নাকি আমি আরও কালো হয়ে যাব! অগত্যা: দুধ!

    ভেতরবাড়ির উঠোনে তখন কাকার তদারকিতে কসাই খাসির মাংস টুকরো করছে। ভোরেই জবাই হয়েছে খাসি। কাজের বুয়ারা ঘুরঘুর করছে আশে-পাশেই। খাসির কলিজা, দিল, মগজ এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্যে। একটা ঝাল ঝাল কষা হবে লুচির সাথে খাওয়ার জন্যে।সেটা মা রাঁধবে। খাওয়ার ঘরে তিন-চারজন বসে বেলছে লুচি। মা মাঝে মাঝেই রান্নাঘর থেকে উঠে এসে দেখে যাচ্ছে লুচি বেলার কদ্দূর কি হল। কুলোতে খবরের কাগজ পেতে রাখা হচ্ছে বেলা লুচি, কুলো ভরে উঠলেই এক ছুট্টে আমি সেটা রান্নাঘরে নিয়ে যাচ্ছি ভাজার জন্যে, ( আমিও বসে লুচি বেলছি কি না! ) সেখানে চাচি লুচি ভাজছে। এই লুচিগুলো বেশ বড় বড়। আর ভাজাও হয় একটু কড়া করে। অত লোকের বাড়িতে সকলের নাশতার জন্যে ছোট ছোট লুচি বেলতে বেলতেই নাকি রাত হয়ে যাবে, তাই দাদির পরামর্শে লুচিগুলো আকারেও বড় আর ওজনেও ভারী!

    চন্দ্রবৎসরের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছরই রোযা দশ দিন করে এগিয়ে আসে। ছেলেবেলায় রোযা হত পুরো গরমকালে। যদ্দূর মনে পড়ছে আগষ্ট -সেপ্টেম্বর মাস ছিল সেটা। কিংবা হয়ত আরেকটু আগের কথা বলছি। জুলাই-আগষ্ট। দিন তারিখগুলো বেশ ভালই গুলিয়েছে বুঝতে পারছি। তখন চাঁদ দেখা নিয়ে এত ঝামেলা ছিল না। সবাই আশা করতেন যে রোযা তিরিশ দিনেই শেষ হবে, আর বেশিরভাগ তাই হত। কোন বছর ২৯দিনেই চাঁদ দেখা যেত। মসজিদের ঘোষণার প্রয়োজন হত না আর চাঁদ দেখা কমিটিও তখন ছিল না। গরমকালের পরিস্কার আকাশে আমরা বারান্দা থেকেই দিব্যি চাঁদ দেখতে পেতাম। ছোট্ট একসুতো বাঁকা চাঁদ। আকাশের এক কোণে মুখ বাড়িয়েছে খানিকক্ষণের জন্যে। নিয়ে এসেছে খুশির ঈদের খবর। একমাসের সিয়াম সাধনা শেষ। কাল ঈদ। দাদি উঠে যেতেন ছাদে, চাঁদের দিকে তাকিয়ে দু হাত তুলে রেখেছেন বুকের কাছে প্রার্থনার জন্যে। এটা নাকি চাঁদ দেখার দোয়া। দাদির দেখাদেখি আমরাও হাত দু হাত বুকের কাছে তুলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দাদি কি দোয়া পড়ছেন কিছুই জানি না, দাদির প্রার্থনা শেষ হলে হাত দুটো নিজের গোটা মুখে বুলিয়ে 'আমীন' বলে প্রার্থনা শেষ করেন, আমরাও তাই করি। নিচে তখন রেডিওতে বাজছে নজরুলের সেই অবিস্মরণীয় গান,

    রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
    আপনাকে তুই বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
    তোরা সোনা-দানা, বালাখানা সব রহে ইল্লিল্লাহ
    দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
    ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
    আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
    যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
    রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
    আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হত মেলাও হাতে,
    তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।
    রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।
    যারা জীবন ভরে রাখছে রোযা, নিত্য উপবাসী
    সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
    রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
    আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
    এলো খুশির ঈদ এলো, এলো খুশির ঈদ। এলো খুশির ঈদ,
    ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ।

    বাংলাদেশের প্রাতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামে ঈদগাহের মাঠ আছে, যেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। বেশ বড় মাঠ দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া থাকে। যেখানটায় দাঁড়িয়ে ইমাম ঈদের নামাজ পড়ান, সেখানে বেশ কারুকাজও করা থাকে, যেমনটি মসজিদে থাকে। এই ঈদগাহের মাঠ আছে প্রায় প্রতি গ্রামে জেলা শহরে আর বড় শহরে। ঈদের নামাজ মানুষ বড় জমায়েতে পড়তে পছন্দ করেন বলে পাড়ার মসজিদে ছোটখাট জামাত হয় না। বড় বড় মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত হয় কিন্তু গ্রামে সকলেই ঈদগাহে নামাজ পড়েন। দাদু, আব্বুরা ঈদ্‌গাহ থেকে ঈদের নামাজ সেরে ফেরার সময় চলে যান কবরস্থানে।

    যেখানে শুয়ে আছেন পূর্বপুরুষেরা সব। আত্মীয়-বন্ধু, পড়শী। কারও বা সন্তান। কবরস্থানে দাঁড়িয়ে সমবেত নীরব প্রার্থনা করেন ঈদগাহ ফেরত সব মানুষ। কবরবাসী মানুষগুলোর জন্যে। তাদের আত্মার শান্তির জন্যে। নতুন পাঞ্জাবী লুঙ্গি আর টুপি পরিহিত সব পুরুষেরা, বাচ্চা ছেলেরা। সুগন্ধী আতরের সুবাস ছড়িয়ে যায় গোটা কবরস্থানে। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করে কবরস্থানে। কারও হয়ত সদ্য হারানো কোন প্রিয়জন শুয়ে আছে এই কবরস্থানে, তার গাল বেয়ে নামে জলের ধারা। নি:শব্দ সব মানুষ বাড়িমুখো হন কবরস্থানকে পিছনে ফেলে।

    ঈদ-উল-ফিৎর। 'ফিৎর' শব্দটার মানে আমি অনেক খুঁজেও পেলাম না মানে আমার কাছে যা বই-পত্তর আছে 'ফিৎর' বা ফিৎরা নিয়ে আর সবই লেখা আছে ( মানে নিয়ম-কাকুন আর কি ), নেই যা তা হচ্ছে, শব্দটার অর্থ। গুগলি করলে হয়ত পাওয়া যাবে, তবে আমি বেশ একটু অলস আছি। এখন এই মানে খুঁজতে আর ভাল্লাগছে না। মোদ্দা ব্যপারটা হল , ঈদের দিনে একটা ছোট্ট দান করতে হয়। সেই দানেরই নাম 'ফিৎর' আমাদের মুখে মুখে যা এখন হয়ে গেছে 'ফিৎরা' বা ফেৎরা। আর সেই থেকেই এই ঈদের নাম ঈদ-উল-ফিৎর। রোযার ঈদ আমরা বলি বটে, তবে এর পোষাকী নাম হল এই। ও হ্যাঁ, ফিৎর শব্দটার মানে খুঁজতে গিয়ে আরেকটা ব্যাপার জানলাম, তা হচ্ছে, রমযানের সাথে ফিৎর'এর কোনও যোগাযোগ নেই। 'ফিৎর' বা ফিৎরা একটি সম্পূর্ণ আলাদা ইবাদত ( পড়ুন , দানরূপে প্রার্থনা) ( বেহেশতী জেওর, প্রথম পর্ব, পৃষ্ঠা-ন:৩৪৪)।

    ফিৎরা দেওয়া সবার জন্যে প্রযোজ্য নয়। মানে যাদের কাছে ঠিকঠাক পয়সা কড়ি আছে তাদের উপরেই এই 'ইবাদত' ( পড়ুন দান ) বাধ্যতামুলক। যারা যাকাত নেয় তারা ফিৎরাও নিতে পারে। একদমই যারা নিম্নবিত্ত মূলত তারাই এই দান নেন। একটু বুঝিয়ে বলি, মাথা গুনে দান করতে হয়, সোয়া দু কিলো সোনালী গম বা যব'এর দাম যা হয় সেই পরিমান টাকা একজনের নামে ফিৎরা হিসেবে দেওয়া হয়। যেমন এবছর সেটা ছিল ২৭টাকা (প্রতি বছরই গমের দামানুসারে এই টাকাটা বাড়ে)। গম বা যবএর বদলে চাল, ছোলা বা যবএর ছাতু ও দেওয়া যায় ফিৎরা হিসেবে, আর এই জিনিসগুলোর মূল্য অনুসারে কোনটা কতখানি দিতে হবে তাও বলে দেওয়া আছে ঐ বইয়ে। বাংলাদেশে কিংবা এখানে, এই কোলকাতায়, সোয়া দু কিলো গমের মূল্যই দেওয়া হয় ফিৎরা হিসেবে। একজনের ফিৎরা একজনকেই দেওয়া হয়। ঈদের দিন 'সুবেহ সাদিক' ( সূর্যদয়েরও আগে দিনের আলোর আভাস যখন মাত্রই আকাশের বুক চিরে দেখা দেয়, ঐ সময়টাকে 'সুবেহ সাদিক' বলে) পরে যে শিশু ভূমিষ্ট হয়েছে তার ফিৎরাও দিতে হয়। আর এই সুবেহ সাদিকের আগে যিনি মারা গেছেন তার ফিৎরা মাফ।

    রচনা লিখছি বলে মনে হচ্ছে নিজেরই! তো ঈদের নামাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথেই পুরুষেরা ফিৎরা দিয়ে আসেন। ঈদাগহের ময়দানে ইমাম ঘোষণা করে দেন, এবছর ফিৎরা কত ঠিক হয়েছে। সেইমত দান সেরে বাড়িতে ঢোকা। অর্থাৎ কীনা যাঁর বাড়িতে আজ পোলাও মাংস, সেমুই হবে না তাঁদের ব্যবস্থাও হয়ে গেল।

    ঈদের জন্যে যে এতগুলো জামা-জুতো হল তা একদিন মানে ঐ শুধু ঈদের দিনে পরে তো শেষ করা যায় না! আমরা, এই পোলাপানেরা তাই ঈদের দু দিন আগে থেকেই নতুন জামা পরতে শুরু করি! আর পরীটি হয়ে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াই। কার ক'টা নতুন জামা হল সেই খোঁজও নিই, কিন্তু কেউই সহজে বলতে চাইতো না যে তার ক'টা জামা হল আর কে কে দিলো! আমি নিজেও অবশ্য কাওকে বলতাম না! তখন বন্ধু-সমবয়েসীদের উপর খুব রাগ হত, আমি দেখাচ্ছি না সে ঠিক আছে, কিন্তু ওরা কেন দেখাবে না? মাকে এসে বললে মা উল্টে বকে দিত, বলতেন, তুই দেখিয়েছিস? অগত্যা আমি চুপ! সকালে ঈদগাহ থেকে নামাজীরা ফেরার আগেই সবর স্নান সারা হয়ে নতুন জামা-জুতো ফিতে চুড়ি পরা সারা। দাদি তার রূপোর সুর্মাদানী থেকে চোখে সুর্মা টেনে দিতেন। সুর্মাদানী হাতে নিয়েই দাদি তার চেয়ারে বসে থাকতেন, সব নাতি নাতনিদের চোখে সুর্মা পরিয়ে দেবেন বলে। আর পাশেই রাখা থাকত বেশ কয়েক রকম আতরের শিশি(দাদির ভাষায় এগুলো সব বিলিতী আতর!)। যেগুলো বেরিয়েছে তাঁর কাঠের সাজবাক্স থেকে। সব্বার গায়ে একটু করে আতর ছড়িয়ে দিতেন দাদি।

    দাদির এই সাজবাক্সটা এক অদ্ভুত সুন্দর আর মজার জিনিস। বেশ বড়, একটা ছোট স্যুটকেসের মাপের, ডালাটা পেছনে কব্জা দিয়ে লাগানো। এই বাক্সে কোন হাতল নেই আর কোন তালা চাবিরও ব্যবস্থা নেই। ভেতরে ছোট-বড় সব খোপ কাটা। ভেতরে একের উপরে এক দুটো ভাগ। খোপগুলোয় ধরে উপরের দিকে টানলে আরেকটা ডালা উঠে আসে আর তার নিচে আরও বেশ কিছু খোপ। এই দ্বিতীয় ডালাটি আলগা, পুরো উঠে হাতে চলে আসে। প্রথম ডালায় থাকে দাদির প্রসাধনী সামগ্রী, যেমন- রকমারী সুগন্ধী আতর, চন্দনের টুকরো, টুকরো সুর্মা, (যেগুলো দাদি হামানদিস্তায় গুড়ো করে সুর্মাদানীতে ভরে রাখে ) আর থাকত ছোট ছোট সব কৌটোয় ভরা ক্রীম। দাদির ভাষায় বিলিতি ক্রীম! আর ঐ যে নিচের ঐ গোপন চেম্বার, তাতে দাদির সব গয়না। গলার তক্তি, মাদুলিছড়া, মাথার সিতাপাটি ( টায়রা ) বিনুনিছড়া, খোঁপার কাটা আর আরও সব হাবিজাবি। ঈদের দিনে দাদি তার এই সাজের বাক্স খুলে বসত, আর এক এক ঈদে এক এক নাতনি সুজোগ পেত দাদির ঐ গয়না পরার। সে এক অদ্ভুত সুন্দর। বাচ্চা একটা মেয়ে, আধুনিক সব জামা-জুতোর সাথে পরে আছে তার দাদির যুবতী বয়েসের গয়না। মাথায় সিতাপাটি, হাতে বাজু, গলায় তক্তি আর পায়ে তোড়া। দাদির এই তোড়াটা শুধুই গয়না ছিলো, নুপুর ছিলো না কারণ এতে ঘুঙরু ছিল না। ছম ছম শব্দে বাড়ির বৌ ঘুরে বেড়াবে সেটা নাকি দাদির দাদি শাশুড়ির পছন্দ ছিল না, তাই ঘুঙরু ছাড়া তোড়া! এক বছর আমি পরলাম দাদির গয়না সব। আর মায়ের সে কি চিন্তা! কোথায় কোনটা আমি খুলে ফেলে দিয়ে আসব! আর আমি? সোনায়, রুপোয় নিজেকে জড়িয়ে ফোঁকলা দাঁত সব বের করে দাদির চেয়ারের পাশে আরেক চেয়ার পেতে দুপুর অব্দি বসা!

    আমার মা আর চাচি? ঈদ তো তাদেরও ! যেখানে বাড়ির পুরুষেরা সক্কাল বেলাতেই দু প্রস্ত নাশতা সেরে ঈদগাহ থেকে ঘুরে চলে এলেন, আমরা , সব পোলাপানেরা স্নান সেরে জামা কাপড় পরে দাদির হাতে প্রসাধন সেরে পরীটি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, মা আর চাচি তখনও রান্নাঘরে। কাজের বুয়াদের সাথে নিয়ে কাঠের আগুনে রেঁধে চলেছেন একের পর এক সুস্বাদু সব খাবার। খাসির রেজালা, মুর্গীর রোষ্ট, শামি কাবাব আর পোলাও। একফাঁকে বেরিয়ে এসে যাঁর যাঁর ছানা-পোনাকে স্নানও করিয়ে দিয়ে গেছেন। দুপুর গড়িয়ে যায় মায়েদের স্নান সারতে। দাদি মাঝে মাঝেই এসে বলে যাচ্ছেন, তুমরা গোসলডা কইরা তারপরে বাকি কাম সারো না! মা আর চাচি বলে, এইতো আম্মা, হইয়া গেসে, যাইতেসি! কিন্তু তখনও বাকি কাবাব ভাজা, স্যালাড কাটা। স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে আবার রান্নাঘরে যাবেন? তাই একেবারে কাজ সেরে বেরুবেন সব!

    ঈদের সকালের প্রতীক্ষায় রাত যেন আর ভোর হয় না! চোখ বন্ধ করতেও ভয় লাগে, ঘুমিয়ে পড়লে যদি সকল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়? সকালবেলাতেই তো সব ঈদের সালামী দেবে। আব্বু, চাচু, দাদু, দাদি, চাচি। সবাই হাতের মুঠোয় টাকা লুকিয়ে রেখে দেয় আগে থেকেই। সালাম করলেই সালামী! সব্বাইকে পা ছুঁয়ে একটা করে সালাম আর তারপরেই কড়কড়ে দশ টাকার একটা করে নোট! যতগুলো সালাম ততগুলো নোট! মামা তো খামের মুখ বন্ধ করে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে, জামা-কাপড়ের সাথে। মাকে চিঠি লিখে দিয়েছে প্রতিবারের মত এবারেও, মামার সালামটা আমি যেন মা'কে করি আর তারপরেই মা যেন আমাকে খামটা দেয়! টপাটপ মা'কে দু'বার সালাম আর তারপরেই খাম হাতে! ভেতরে একটা কার্ড, ঈদ মুবারক লেখা, একটা চিঠি আর একটা নতুন পঞ্চাশ টাকার নোট! আমি কার্ড চিঠি আর টাকা হাতে নিয়ে সারা বাড়ি একপাক ঘুরে আসি ছুট্টে, জনে জনে কার্ড চিঠি আর টাকা দেখিয়ে। মা বলে, চিঠিটা তো পড়! কিন্তু আমি তো জানি, মামা চিঠিতে কি লিখেছে! মামা যে প্রতিবছর একই কথা লেখে! মামা লিখেছে,

    মা আমার ,
    ঈদ মুবারক। লক্ষ্মী হয়ে থাকিস, একদম দুষ্টুমি করিস না!
    ইতি, বেটা।

    মামা যে আমার বেটা ছিল আর আমি মামার 'মা'। আমি অপেক্ষায় থাকি, কালকের। মামা যে কাল আসবে।

    সালামী মা আর চাচিও পায়। রান্নাঘরের পাট চুকিয়ে স্নান সেরে নতুন শাড়িতে দুজনে দাদুকে যখন সালাম করতে আসে তখন প্রায় দুপুর। দাদু তাঁর হাতবাক্স থেকে দুখানা একশ টাকার নোট বার করে দুজনকে দেয়। আমি বুঝতে পারি না, সালামী পেয়েও মা কিংবা চাচি কেন সেটা নিতে চায় না, বারে বারেই বলে, থাক না আব্বা কি দরকার! একপাটি দাঁতহীন দাদু আমার হেসে বলেন, রাখ না সোনা ( দাদু মা'কে 'সোনা' বলে ডকতেন) , আমি যদ্দিন আছি, তদ্দিনই তো! এরপর তোমারে আর কে সালামী দেবে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩১ অক্টোবর ২০০৬ | ৯০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 14.139.***.*** | ১৫ মে ২০২১ ১৬:০৬106017
  • তুললাম। ঈদের কথা। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন