দুপুরে স্টলে এল সব্যসাচী। এন আর সি নিয়ে কথাবার্তা বলল। হাসিখুশি। বলল ঘুরে আসছি। বিকেলে জাতীয় সম্মেলনের কয়েকজন। একটা লিফলেট দিল। এনারসি বিরোধী। 'তোমাকে দিয়েই শুরু করলাম। আজ লিফলেটিং আছে। করে আসি'। আমি বললাম, এসো। আর পাভেল তো স্টলেই থাকে। বিকেল অবধিই ছিল, কখন বেরোলো টের পাইনি। গান-্টান গাইবে, বা স্লোগান-্টোগান দেবে, ভেবেছি। এসব তো মেলাতে হয়েই থাকে। লিফলেট বিলি, গান, গজল্লা। আমাদেরই তো কাল একটা অনুষ্ঠান ছিল। নতুন তো কিছু না। কিন্তু তখন আর কে জানত, আজকের দিনটা আলাসা। কে জানত সন্ধ্যেবেলায়ই এদের কেউ মার খাবে, কেউ বসে থাকবে পুলিশি লক- আপে।
অথচ আলাদা কিছু হয়নি। একদল লিফলেট বিলি করছিল। আর সব স্টলের সামনে যেমন, তেমনই ভিএইচপির স্টলের সামনেও। আরেকদল বিজেপির স্টলের বাইরে এনারসি বিরোধী স্লোগান দেবে বলে মনস্থ করে। সবই ছাড়াছাড়া। আর আরেকদল এনারসি বিরোধী গান বাজনা করছিল, লিটল ম্যাগাজিন প্যাভেলিয়নে। তার সামনেই আবার জনবার্তার স্টল, সেখানে আবার রাহুল সিনহা না কোন মাতব্বরের আসার কথা।
এইসব টুকটাক জিনিস সেরে ঘুরে সবাই ফিরে আসবেই বলেছিল। কারণ হিন্দুত্বের ল্যাজওয়ালা মহাপ্রভুরা এখন সংওস্কিতি করছেন, লেখক ধরে টরে বইও বার করছেন সুবিপুল ব্যয়ে, এ এখন সবাই জানে, কিন্তু তাঁদের সংওস্কিতিই যে এখন থেকে বইমেলায় চলবে, সেটা কারোরই জানা ছিলনা। সে খবর জানত শুধু বিধাননগর পুলিশ। আমি নিজে এই সময় ঘটনাস্থলে ছিলাম না, কিন্তু অকুস্থলে উপস্থিত লোকজনকে বারবার জিজ্ঞাসা করে যেটা জানা গেল, যে, লিফলেট বিলি করতে দেখেই ভিএইচপির মাসলম্যানদের গোঁসা হয়, এবং তারা তেড়ে মারতে আসে। আর গান-বাজনা কিংবা স্লোগান কিংবা দুটো শুনেই রাহুল সিনহা বা ওই জাতীয় কারোর ক্রোধ তৈরি হয়। সে অবশ্য খুব স্বাভাবিক। গণতন্ত্র বা শিল্প কোনোটাই ওঁদের ঠিক হজম হবার কথা নয়।
আমি ঘটনাস্থলে ছিলামনা, কিন্তু একটা কথা চেনা ছেলেমেয়েরা বারবার বলেছে, যে, তারা বিজেপির কোনো স্টলে ঢোকেনি। হামলা তো দূরস্থান। মারটা শুরু হয় হিন্দুত্ববাদীদের দিক থেকেই। বইমেলায় লিফলেট বিলি করতে গেলে যে মার খেতে হবে এ ধরণের সংস্কৃতির সঙ্গে আমরা কেউই পরিচিত নই। ফলে এই ছেলেমেয়েরা কেউই তেমন তৈরি ছিলনা। অস্বীকার করে লাভ নেই, যে, হিন্দুত্বদাবী মাসলম্যানদের কাছে ছেলে-মেয়েরা গুছিয়ে মার খায়। বিশেষ করে মেয়েরা। এই সব ব্যাপারে ওঁরা রাবণ পন্থী। চুলের মুঠি ধরে, লাথি মেরে ফেলে মারা হয় কয়েকজনকে। এমতাবস্থায় সিনে আসে পুলিশ। এবং হামলাকারীদের ধরার পরিবর্তে তারাও এনারসি বিরোধীদের মারতে শুরু করে। যেন রামের দোসর সুগ্রীব। এবং দুটি স্টল থেকে অন্তত দুজনকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এনে বসিয়ে রাখে।
স্বভাবতই এবার বিক্ষোভ শুরু হয় পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে। এর আগে পর্যন্ত গোটা মেলায় কোথাও মিটিং মিছিল স্লোগানিং হয়নি। মারধোর হয়েছে, সেটা করেছে হিন্দুত্ববাদীরা, কিন্তু মারপিট হয়নি। তা, এইবার পুলিশের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। এই পর্বের পুরোটারই আমি প্রত্যক্ষদর্শী। এক সাংবাদিকের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে এসে দেখি পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে ভিড়। সামান্য স্লোগানিং হচ্ছিল, এবং তর্কাতর্কি। চেনা ছেলেমেয়েরাই করছিল। তাই দেখতে যাই ব্যাপারটা। এবং বিধাননগর পুলিশ এই পর্যায়ে যেটা করে সেটা ন্যক্কারজনকের চূড়ান্ত। বস্তুত তারা কাঁচা খিস্তি দিতে শুরু করে। প্ররোচনা দিতে শুরু করে। এবং তারপর তেড়ে মারতে শুরু করে দেয়। তখনও তাদের হাতে লাঠি ছিলনা। হঠাৎই তর্ক-বিতর্কের মাঝে কয়েকজন বীরপুরুষ এবং মহিলা তেড়ে এসে কলার-্টলার ধরে কয়েকজনকে মারতে শুরু করেন। চোরের মার মারা হয়। কেউকেউ পড়ে যায়। হাত-পা ভেঙে যাওয়াও আশ্চর্য না, যদিও সেটা জানার কোনো উপায় ছিলনা। কারণ পুলিশ মারতে মারতে টেনে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করেন, গ্রেপ্তার করা হল। তারপর তাদের কাউকে আটকে রাখা হয় ওই কন্ট্রোল রুমে, কাউকে গাড়ি চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সেটা আটকাতে গিয়েও আবার গ্রেপ্তার হন কেউ কেউ।
বস্তুত পুরো ব্যাপারটা মর্মান্তিক ইয়ার্কিতে পরিণত হয় কিছুক্ষণ বাদেই। পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে। এঁদের ছবি ও ভিডিও বিস্তর আছে। এই গোটা পুলিশি আচরণ এবং বিশেষ করে এই দুজন 'নেতা'র কাজকর্ম তদন্তের আওতায় আসা উচিত, যদি অবশ্য নিরপেক্ষ কোনো তদন্তের আদৌ কোনো পরিসর থেকে থাকে।
সব মিলিয়ে যা ঘটতে থাকে, তা ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরি চূড়ান্ত ক্যাওস। পুলিশ কাকে মারছে, কাকে গ্রেপ্তার করছে, কাকে থানায় তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কতজন আটক, কে হাসপাতালে গেছে বোঝা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মারধোর খেয়ে জখম হতে চোখের সামনে কয়েকজনকে দেখেছি। পুলিশ চিৎকার করে রিপোর্টারদের জানাচ্ছে, যে, তাদের থাকার দরকার নেই, নিজের কানে শুনেছি। আবার পরিচিত কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা গভীর রাত পর্যন্ত জানতেই পারিনি।
এরই মধ্যে পুলিশি বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকাকে। লাঠি, হেলমেট সহ ছোপ-ছোপ উর্দিরা নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে মেলার। মধ্যে মধ্যে চলতে থাকে মার এবং গ্রেপ্তারি। আর মেলা পুলিশি মেলায় পর্যবসিত হয়। বস্তুত গুরুচণ্ডালির স্টলের সামনে পুলিশ মোতায়েন হয়। গভীর রাতে মেলা ছাড়ার আগে পর্যন্ত পুলিশ দেখে এসেছি সেখানে। যেন আমরা গভীর কোনো ষড়যন্ত্রমূলক কাজে ব্যপ্ত।
রাত হয়। মেলার ভিড় পাতলা হতে থাকে। এরই মধ্যে পরস্পরবিরোধী খবর আসতে থাকে থানা নিয়ে। কল্লোলদা সহ কয়েকজন থানায় গিয়েছিলেন, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনও হয়, কোনো দুর্ব্যবহারের কোনো খবর পাইনি। অন্য আরও একদল গিয়েছিলেন থানায়। শোনা যায় পুলিশ তাঁদের বেধড়ক ঠেঙিয়েছে। অন্য ভারসান শোনা যায়, যে, আসলে তারাই প্রাথমিক ভাবে পুলিশের উপর চড়াও হন। আমি যেহেতু ঘটনাস্থলে ছিলাম না, কাজেই, এর ঠিক বেঠিক বলা সম্ভব নয়। যদি ধৈর্য হারিয়ে কেউ থানায় গিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে থাকেন, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়, কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে, আইনশৃঙ্খলা এবং মব কন্ট্রোল পুলিশের কাজ, সাধারণ মানুষের নয়। এবং কেউ ধীর্য হারালেও, এইটা মিথ্যে হয়ে যায়না, যে, গোটা মেলা জুড়ে পুলিশ যেটা চালিয়েছে সেটা তান্ডব ছাড়া আর কিছু নয়। বস্তুত, অন্তত ২৫ বছর ধরে নিয়মিত বইমেলায় যাচ্ছি। প্রায় প্রতি বছর, প্রায় প্রতি দিন। এ জিনিস কখনও দেখিনি। কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপরে যে কালি লেপল বিধাননগর পুলিশ, এমনকি আস্ত বইমেলা পুড়ে যাওয়াও তার কাছে নগণ্য। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। সজোরে এবং এখনই।
ঘটনাটা পড়ে হতবাক হয়ে গেছি। গুরুচণ্ডা৯-র পাশে আছি।
অর্জুন এর বক্তব্যকে সমর্থন।
প্ততিটি লেখায়, ভিডিও ক্লিপিং এ পুলিশের অন্ধ আক্রোশ স্পষ্ট। তাহলে কলকাতা পুলিশের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন?
সিএএ, এনার্সি নিপাত যাক।
In this place Bd Govt Job Circular 2020 you will find new and latest Govt Job Bd, because here we are published everyday new Government Job Circular. Government Job Bd Hello Everyone In This Categories You Will Find All Type of Government Jobs Circular, Government Bank Jobs Circular, Govt Job Scheduled, Govt Job Seat ... Govt Job In Bangladesh Bd Government Job Circular 2020: Latest Govt Job In Bangladesh, This is our main property of the job finding site in the Bangladesh. Palli Biddut Samity Job Circular here you will find latest and New Government Job Circular & Vacancies in 2020 for Male & Female both gender’s person in Bangladesh. Palli Biddut Samity Job Circular Also see the bangladesh army job circular bd 2020.