এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মিউমিউ না করা প্র‌্যাকটিস করুন 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১০৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • দেখুন, মিউমিউ করে লাভ নেই, স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করেই বলতে হবে। সোনালী খাতুন ফেরত আসছেন, খুব আনন্দের কথা। সোনালী একা না, সাংসদ সামিরুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়ে না হলেও আরও জনাপঞ্চাশেক লোককে ফেরত এনেছেন।  কিন্তু এটুকুই তো যথেষ্ট না। কথাটা হল, এদের যে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল, সেটাই তো অন্যায় এবং বেআইনী। তার প্রতিকার তখনই হবে, যখন সমস্ত দোষীরা শাস্তি পাবে। দোষী যেই হোক, নিরাপত্তাবাহিনীর কোনো হোমরাচোমরা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো মাথা, এই অপরাধীদের শাস্তি চাই। যদি না দেওয়া হয়, বুঝে নিতে হবে, ইচ্ছাকৃত ভাবে এই বেআইনী গুণ্ডামি করা হচ্ছে। বাঙালির বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করা হয়েছে। এই কথাটা স্পষ্ট করে বলা দরকার। 

    এই যুদ্ধঘোষণার যারা দোসর সেই গোদি-মিডিয়াকে নিয়েও একদম সোজা করে বলা দরকার। গোদি মিডিয়ার মনসবদাররা দেশব্যাপী বাঙলি-ঠ্যাঙানো দেখতে পাননি, সোনালী বিবিদের ঠেলে সীমান্ত পার করা দেখতে পাননি, কেবল ডেমোগ্রাফির বদল দেখতে পাচ্ছিলেন। এঁরা হিন্দিভাষী দেখতে পাননা, কিন্তু চোখে সম্ভবত এক্সরে আই, প্যান্টুল ভেদ করে মুসলমান ঠিক চিনে নেন। আর মেজর কর্নেলরা বোধহয় নিজেদের পশ্চদ্দেশে ফুটোস্কোপ লাগিয়ে দেখছিলেন, সীমান্তের চেকপোস্টে মানুষের মিছিল। কালো-কালো মাথার সারি, এসআইআরের ভয়ে মানুষের ঢল। বলতে গিয়ে সে কী আবেগ, বাপরে বাপ। সন্দেহ ছিলই, কারণ গুলবাজিতে ওঁরা পিএইচডি, সে তো লাহোর-করাচি দখল করে ফেলা থেকেই আমরা জানি। গতকাল দেখা গেল সন্দেহটা ঠিক। কাঁসিরামের এই ঢোলটাও ফেটে গেছে। বিএসএফ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত তিনমাসে সীমান্ত পেরিয়েছেন, ১৮৬ জন মানুষ। জানিনা, নিজেরা যাদের ঠেলে পাঠিয়েছে, সেটা ধরে কিনা। কিন্তু কথা যেটা, সেটা হল তিনমাসে ১৮৬ মানে, দিনে দুটো লোক। কোথায় গেল মানুষের মিছিল? তো, 'খবর'এর নামে এই গুলবাজি নিয়ে স্পষ্ট করে বলা উচিত। সাংবাদিকতার গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে এই মেজর-কর্নেলরা জোকারির পর্যায়ে টেনে নামিয়েছেন। এবং সেটা স্রেফ একটা নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডায়। বাঙালিদের যখন একদল ঠেলে ওপারে পাঠাচ্ছে, সেই আর্তনাদ ধাপাচাপা দিতে এঁরা ঢাক-ঢোল নিয়ে অনুপ্রবেশ-অনুপ্রবেশ করে চেঁচাচ্ছেন। সেই ব্রিটিশ আমলের গোড়ার দিকে এরকম হত। একজন ছটফটিয়ে মারা যাচ্ছে, আর ধামাধরারা কাঁসি-ঢাক-ঢোল নিয়ে লাফাচ্ছেন "কী পুণ্য কী পুণ্য" বলে। এটাকে স্রেফ জোকারি বলে ছেড়ে দেওয়া যায়না। এটা  বাঙালির বিরুদ্ধে নৈতিক অপরাধ, এবং এই মীরজাফরপনার কথা স্পষ্ট করে না বলার কোনো কারণ নেই।

    সামগ্রিকভাবেও অনুপ্রবেশ নামক ঢপবাজি নিয়েও স্পষ্ট করে বলা দরকার। ১৯৪৬ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত অজস্র মানুষকে সীমানা টপকাতে হয়েছে। সাধ করে নয়, বাধ্য হয়ে। এঁদের আমরা উদ্বাস্তু বলি। উদ্বাস্তুরা অনুপ্রবেশকারী তো নয়ই, এমনকি করুণা প্রার্থীও না। ভারতের এবং তদানীন্তন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনদের উদ্ভট ক্ষমতালিপ্সার জন্য দেশটা দু-টুকরো হয়েছিল, এমনভাবে হয়েছিল, যাতে এসব অনিবার্য ছিল। উদ্বাস্তুরা তার শিকার। এর দায় তাঁদের নয়। দায় যাদের, অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারের সেই দায় স্বীকার করা উচিত। দেশভাগ এতদিন পরে বাতিল করা সম্ভব না হলে, অন্তত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবাধ যাতায়াত চালু করা উচিত, যেমন আছে ভারত-নেপালের মধ্যে। এবং চালু করা উচিত নিঃশর্ত এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব। এর সঙ্গে বাঙালিকে দেওয়া উচিত দেশভাগের ক্ষতিপূরণ, যে সাহায্য পাঞ্জাবিরা পেয়েছে, সুদে-আসলে তার পুরোটাই অনুপাতিক হারে বাঙালির পাওয়া উচিত। 

    এবং আরও একটা কথা সুস্পষ্টভাবে বলা উচিত। বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশী ভাষা বলা হচ্ছে নানা নথিতে, সেটা সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী। বাঙালি দেখলেই ধরা হচ্ছে সরকারি অথবা বেসরকারি ভাবে, সেটা বেআইনী। এই বেআইনী কাজ এবং তাতে মদত দেওয়াই আসলে রাষ্ট্রবিরোধিতা। বৈধ নাগরিকদের উচ্ছেদ করার চেষ্টাই রাষ্ট্রবিরোধিতা। বাংলাদেশী বলে কোনো ভাষা নেই। বাঙালি বলে একটা জাতি আছে, যা দ্বিখণ্ডিত। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে বাঙালি মাত্রেই সম্ভাব্য বাংলাদেশী। তেমন কেউ আখ্যা দিলে খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার, যে, হিন্দি আর উর্দু কোনো আলাদা ভাষা নয়। বাংলাভাষী মানে সম্ভাব্য বাংলাদেশী হলে হিন্দিভাষী মানেই সম্ভাব্য পাকিস্তানি। বলিউড থেকে পাড়ার ভাসান - এই হিন্দিভাষার দাসত্ব করার সময় গেছে। 

    সবকটা কথাই জোরেসোরে বলা উচিত, কারণ, আমরা তো সুভাষ বোসের জাতির লোক, মিউমিউ করাটা আমাদের শোভা পায়না। সুভাষকে কংগ্রেস তাড়িয়েছিল, পয়সা খাবার অভিযোগ আনা হয়েছিল, শ্যামাপ্রসাদের মতো হিন্দুত্ববাদীরা দেশবিরোধী বলেছিল, খবরের কাগজরা পিছনে লেগেছিল, কিন্তু ওঁর বলা আটকায়নি। দেশ ছেড়ে গিয়ে আজাদ-হিন্দ-ফৌজ বানিয়েছিলেন, সেটা অতিমানবিক ব্যাপার, আমাদের দ্বারা ওর ভগ্নাংশও হতনা, কিন্তু মিউমিউ না করাটা তো আমরা করতেই পারি। মিউমিউ না করা প্র‌্যাকটিস করুন। রোজ। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন