এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ইমরান খান

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | ১৬৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ইমরান বল করতে দৌড়লেই ব্যাপারটা নৈসর্গিক হয়ে যেত, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। কিন্তু সে জন্য ইমরান নায়ক নন। কত লোকই তো খেলে, কতজনকেই চমৎকার দেখতে লাগে, স্টেফি গ্রাফের ফোরহ্যান্ডও একই মাপের নৈসর্গিক। ইমরানের নায়কত্ব তাঁর দেখার ভঙ্গীতে, আর সামনে থেকে বুক চিতিয়ে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতায়। বুলেটটা খেলে আমি আগে খাব, এই যার ভঙ্গী, সে নায়ক ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা। পাকিস্তান যেবার বিশ্বকাপ জিতল, তখনও ক্রিকেট দেখতাম। সেমিফাইনাল বা ফাইনাল, কোনো একটায় অল্প রানে দুই উইকেট পড়ে গেছে পাকিস্তানের, ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে নেমে পড়লেন ইমরান। বোধহয় সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই খেলায়। পাকিস্তান জিতেছিল। 

    শুধু ক্রিকেট হলে বলা যেত, ওটা স্ট্র‌্যাটেজি। এইটুকুতে কেউ নায়ক হয়না। ঠিকই। কিন্তু ইমরানের পুরো জীবনচর্যাই তো এই। উপমহাদেশে একবার যে অধিনায়ক ক্রিকেট-চ্যাম্পিয়ন করে নিজের দলকে, লোকগাথায় তার নাম পাকা হয়ে যায়, সে আমি যতই অপছন্দ করি। কিন্তু ওইটুকু  স্থাবর সম্পত্তিতে ইমরানের বিশ্বাস ছিলনা। যে সম্পদ আমাকে অমরত্ব দেবেনা, তাহা লইয়া কী করিব? ফলত, তার পরে এল ক্যান্সার হাসপাতাল। সেটা তৈরি হল, ধ্বংসও হল। এবং লোকগাথাকে ছেঁড়া কাগজের বাক্সে ফেলে একদিন ইমরান নেমে পড়লেন পাকিস্তানকে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে। 

    ইমরানের দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ কী ছিল খোঁজ নিইনি তখন, কারণ, বাকি সবার মতো আমিও ভেবেছিলাম, ব্যর্থতার উপাখ্যান হতে চলেছে জিনিসটা। উপমহাদেশে রাজনীতি অন্য জিনিস। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো ভেঙে পড়া রাষ্ট্রে। ওখানে প্রতিষ্ঠানে নাক গলানো অসম্ভব। এবং প্রত্যাশা মতোই ইমরান প্রথম ভোটে হারলেন। সেখানেই হাহুতাশ করে শেষ করে দেওয়া যেত, কিন্তু ইমরান অন্য ধাতুতে তৈরি। বিবাহবিচ্ছেদ হল, স্ত্রী-সন্তান ফিরে গেল ইংল্যান্ডে। ওটা কি বিচ্ছেদ ছিল, নাকি পূর্বাশ্রম চুকিয়ে ফেলে বুক চিতিয়ে ঝাঁপ দেবার প্রস্তুতি? কে জানে। ইমরান তো জানতেন রাষ্ট্র কী বস্তু। কিন্তু ওই, বুলেটটা খেলে আমি আগে খাব।

    এবং এই ভঙ্গীতেই, সবাইকে আশ্চর্য করে ইমরান প্রধানমন্ত্রীও হয়ে গেলেন একদিন। কোন যাদুতে খোঁজ নিইনি। রাজনীতিতে রগড়ানো, বিশেষ করে উপমহাদেশে, ক্রিকেটের থেকে অনেক কঠিন। তবু হলেন। সে সময়  ভারত-পাক একটা খুচরো সংঘর্ষ হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক পাইলট ধরা পড়লেন পাকিস্তানের মাটিতে। ইমরানের সরকার তিনদিনের মধ্যে তাকে ফেরত দিল। এবং টিভিতে উনি একটা বক্তৃতা দিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের এই অর্থহীন হিংসা-প্রতিহিংসার চক্রাকার রাজনীতি নিয়ে কোনো রাজনীতিকের এত সাহসী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বক্তব্য তার আগে শুনেছি বলে মনে হয়না। এর এক-চতুর্থাংশ  কথা বলেই, এপারে আদবানির চাকরি গিয়েছিল। আর ওপারে তো আরও কঠিন অবস্থা। শুধু চাকরি নয়, মুন্ডুও যেতে পারে।

    পাকিস্তানের ভিতরে ঠিক কী বদল আনতে চেয়েছিলেন জানিনা, কিন্তু এই সাহসী বক্তব্যের দিকে এক-পা এগোলেও, পাক রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের তাঁকে সহ্য করার কথা নয়। সেটা দূর থেকে বসেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। ইমরান ভিতরে বসে নিশ্চয়ই আরও ভালো জানতেন। কিন্তু আবারও ওই, বুলেটটা খেলে আমি খাব। হলও তাই। জেলে গেলেন। কিন্তু নায়কদের ব্যাপারই হল, যত পীড়ন, জনপ্রিয়তা তত বাড়ে। ভোটে দস্তুর মতো ভালো ফল হল। জেলে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এল। ইমরানের খবরই বাইরে আসা বারণ হয়ে গেল। কিন্তু যত আড়ালে সরানো হল, জনপ্রিয়তার মাত্রা তত চড়চড়িয়ে বাড়তে লাগল। এই অবস্থায়, নায়ক হয় স্পার্টাকাস হয়, কিংবা জেল ভেঙে বেরিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানকেই গুঁড়ো করে দেয়। কোনটা হয়েছে জানিনা। জেল-ভেঙে বেরোননি তো দেখতেই পাচ্ছি, স্পার্টাকাস হয়েছেন কিনা জানিনা। তবে এইটা জানি, মানে বিশ্বাস, যে, ওঁর ভঙ্গী বদলায়নি। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেব। প্রথম বুলেটটা খেলে আমিই খাব। নায়করা এরকমই হন। 

    উনি বেরোবেন কিনা জানিনা। বেঁচে আছেন কিনা জানিনা। সব বদলে দেবেন কিনা তাও জানিনা। ডান না বাম তাও ভালো করে জানিনা। তবে এইটা জানি, যে, গোটা উপমহাদেশে তাণ্ডব চলছে। পূর্বে বাংলাদেশে বাকি সব ধ্বংস করে এখন চলছে বাউলদের উপর আক্রমণ। বলা যায় রাষ্ট্রীয় মদতেই। মাঝখানে ভারতে জেলবন্দী উমর খলিদরা, আজও। আর পশ্চিমে পাকিস্তানে যা টিকে আছে, তাকে আদৌ গণতন্ত্র বলা যায় না। এর মধ্যে ইমরানদের দরকার। যিনি খুব স্পষ্ট করে বলবেন, এই অনর্থক অস্ত্র-প্রতিযোগিতায়, এই অনর্থক হিংসা-প্রতিহিংসার চক্কর, যুদ্ধের নামে এই গণউন্মাদনা তৈরি,  পুরোটাই একটা লুজ-লুজ গেম। এই গোলচক্করটা থেকে বেরোনো উচিত। কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম উপমহাদেশে অবাধ চলাচল এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে। শুধু ভারত-বাংলাদেশে নয়, গোটা উপমহাদেশেই দরকার। লাহোর থেকে অমৃতসর কতটা দূর? ঢাকা থেকে কলকাতা কতটুকু? ভারতবর্ষের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এইসব জায়গার মধ্যে অবাধ চলাচল কখনও বন্ধ হয়নি। এই আশি বছরে আমরা কী বিরাট তীর মেরে ফেলেছি, যে, সব বন্ধ করে দিতে হবে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৬736194
  • আহ ইমরান!  আমার ছেলেবেলার ক্রাশ।  খুন হবার খবরটা সত্যি কিনা কে জানে! আগেও একবার রটেছিল। 
  • MP | 2409:4060:2d92:36d4:ac8f:416d:9a5e:***:*** | ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১১:০৭736196
  • খুব প্রাসঙ্গিক লেখা l লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ l 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন