আমি ছোটবেলায় এইভাবে মনে রাখতাম- অ্যানাবলিক মানে যে আনে আর ক্যাটাবলিক মানে যে কাটে। অ্যানাবলিক স্টেরয়েড শরীরে পেশির ঢেউ আনে। বডিবিল্ডিং কম্পিটিশন বা WWE জাতীয় খেলায় যে সব দৈত্যাকৃতি লোকেদের দেখা যায় তাঁদের বেশিরভাগই এই অ্যানাবলিক স্টেরয়েড নেন। শোনা যায়, আমাদের সিনেমা স্টারদেরও অনেকে স্টেরয়েড নিয়ে রাতারাতি টাফ অ্যান্ড মাসকুলার হয়ে যান।
ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখতে পাবো '৫৬ অলিম্পিকে রাশিয়ান অ্যাথলেটদের স্টেরয়েড-সাফল্যে সারা পৃথিবী চমকে যায়। আরও শক্তিশালী ও বলবর্ধক ওষুধের খোঁজ শুরু হয়। আমেরিকান ফিজিশিয়ান Dr Ziegler-কে বডিবিল্ডিং-এর দুনিয়ায় স্টেরয়েড আনয়নের হোতা বলা যেতে পারে। যত্রতত্র পেশীতে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন নেওয়া আরম্ভ হয়। প্রফেশনাল অ্যাথলেট থেকে স্কুল পড়ুয়া টিন-এজার সবাই এই নতুন ম্যাজিক-শক্তিতে আসক্ত হতে শুরু করে। এক ধরনের 'মাসল ডিসমরফিয়া' (হঠাৎ করে শরীরের কোনও একটা পেশী বেখাপ্পাভাবে বেড়ে ওঠা) জন্ম নেয়। আক্রান্ত ব্যক্তি ভাবতে থাকেন তিনি বুঝি বড্ড দুর্বল, খর্বকায় অথচ হয়ত তাঁর শরীর যথেষ্ট পেশীবহুল। ফলে আরও আরও স্টেরয়েড...
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। খেলার দুনিয়ায় কড়াকড়ি শুরু হয়। খেলা শুরুর আগে অ্যাথলেটদের মূত্রের নমুনায় নিষিদ্ধ ওষুধ আছে কিনা পরীক্ষা শুরু হল। সাথে সাথে রমরমিয়ে গড়ে উঠলো আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেরয়েড সাম্রাজ্য।
কয়েকটা শব্দ শিখে নেওয়া যাক-
Doping- অ্যাথলেটদের শক্তিবর্ধক নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার
শতাচকিং- দুই বা ততোধিক স্টেরয়েড কম্বিনেশন প্রয়োগ
Blending- স্টেরয়েডের সাথে অন্য নিষিদ্ধ ওষুধ একসাথে নেওয়া
cycling- কয়েক সপ্তাহ স্টেরয়েড নিয়ে বন্ধ করে আবার নতুন করে শুরু করা
Pyramiding- ক্রমশ উচ্চতর মাত্রার স্টেরয়েড নিয়ে আবার ডোজ কমিয়ে আনা
Juicing- স্টেরয়েড আসক্তি
Roid- এক ধরনের স্টেরয়েড সাইকোসিস। মাত্রাতিরিক্ত রাগ।
আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেরয়েড গুরুরা মনে করেন ব্লেন্ডিং, পিরামিডিং এসবের মাধ্যমে স্টেরয়েডের ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা কম করা যায়। যদিও তার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
এবার আসুন, খেলার দুনিয়ার দিকে তাকাই। অনেক নামীদামী খেলোয়াড় ডোপ করে নির্বাসিত হয়েছেন বা শাস্তি পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য নাম-
ল্যান্স আর্মস্ট্রং (সাইক্লিং)
মারিন চিলিচ (টেনিস)
শেন ওয়ার্ন (ক্রিকেট)
টাইসন গে (স্প্রিন্ট)
অত্যধিক স্টেরয়েড প্রয়োগে সাংঘাতিক সাইড-এফেক্টের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। একটি সূত্র অনুযায়ী আমেরিকায় দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্টেরয়েড-আক্রান্ত। স্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ মানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ২-৪% স্টেরয়েডের শিকার।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড অ্যাবিউজ মূলত পুরুষ প্রধান। একটা ধারণা গেঁথে দেওয়া হয় পুরুষ হবে ইস্পাতের মত বজ্রকঠিন, শরীরে কিলবিল করবে পেশী আর নারী মানেই বার্বি ডলের মত জিরো ফিগার। অথচ স্বাভাবিক সুস্থতার ধারণা এসবের সাথে মেলে না। তার ফলে অল্প বয়স থেকে টিন-এজাররা নিজেদের পুরুষালি বানানোর উদগ্র ইচ্ছেয় স্টেরয়েড নিতে শুরু করে। সঙ্গে মাত্রাছাড়া শারীরিক কসরত।
কয়েকজন স্টেরয়েডের শিকার বডিবিল্ডারকে চিনে নেবো-
Ronnie Coleman- আটবারের মিস্টার ওলিম্পিয়া চ্যাম্পিয়ন। এখন প্রায় অথর্ব। হার্নিয়া, অজস্র অস্থিসন্ধি ও মেরুদন্ডের আঘাত, অসংখ্য সার্জারি।
Greg Valentino- বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাইসেপস পেশী ছিল তাঁর। বাইসেপসে সাংঘাতিক ইনফেকশন হয়ে পুঁজ জমে যায়। মৃত্যুর হাত থেকে ফেরেন।
Andreas munzer- অস্ট্রিয়ান বডিবিল্ডার। পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পেটের মধ্যে সাংঘাতিক রকম রক্তক্ষরণ আরম্ভ হয়। দেখা যায় লিভার বলে আর কিচ্ছু আস্ত নেই। বাঁচানো যায় নি।
Chris Benoit- স্টেরয়েড সাইকোসিসের শিকার। স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করেন। নিজেও আত্মঘাতী হন।
গা ছমছম করছে না?
অথচ অন্যরকম হতে পারতো। এই অ্যানাবলিক স্টেরয়েড দিয়েই হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া কিংবা দ্রুত পেশীক্ষয়ের (বিশেষত এইচআইভি সংক্রান্ত) চিকিৎসা হয়। কী অদ্ভুত বৈপরীত্য, তাই না?
ভারতের দিকে তাকাই। যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে বেআইনি জিম। সেখানে দেদার ব্যবহার হচ্ছে স্টেরয়েড। যারা খাচ্ছেন তাদের সাইড এফেক্ট সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। চটজলদি মাচো হওয়ার নেশায় বড় কঠিন মূল্য চোকাতে হচ্ছে। অনেকে ভেবে নিচ্ছেন, কদিন নিয়ে ঠিক ছেড়ে দেবো। তারপর প্রথম সিগারেট আর মদের গ্লাসে নেওয়া 'অল্প খাবো'র শপথের মত ভুলে যাচ্ছেন।
অর্থাৎ আরো একবার একবার প্রমাণ হয়ে গেল, স্টেরয়েড নিজে থেকে ভালো বা খারাপ কিছুই নয়।
স্টেরয়েড ঘুড়ি মাত্র। লাটাই যার, তার।
ফর্সা হওয়ার ক্রিম ও দাদের মলম
আপনি কি সেইসব মহুয়াদের চেনেন যারা 'কৃষ্ণকলি' বলে কাব্যে আদিখ্যেতা আর বাস্তবে স্কুল-কলেজ-রাস্তাঘাটে উপহাসের পাত্রী হয়? আপনি কি সেইসব ফতেমাদের চেনেন যাদের গায়ের রঙ কালো বলে বিয়ে ভেঙে যায় বারবার? আপনি কি সেইসব সুস্মিতাদের চেনেন দুগালে ব্রণ নিয়ে যারা মারাত্মক অবসাদে ভোগে? আর উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট নেয়? আপনি কি সেইসব নিত্যযাত্রী সুকুমারদের চেনেন যারা বছরভর দাদ নিয়ে জেরবার হয়? আর ফিরিওলা বা হাতুড়ে চিকিৎসকের দেওয়া মলম লাগিয়েই চলে? এ মা! ছি ছি! ওসব জায়গার দাদের কথা কাউকে বলা যায় নাকি?
এবারে তাদের নিয়ে কথা বলা যাক। আগের কথাগুলো মূলত পুরুষপ্রধান সমস্যা নিয়ে ছিল, এবারেরটা মূলত মহিলাদের সমস্যা। নারীবাদীরা অকারণে হেঁ হেঁ করে উঠবেন না। 'মূলত' কথাটা খেয়াল করুন। এদেশে সৌন্দর্যের ধারণার সাথে গায়ের রঙ ফর্সা হওয়া অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে আছে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে তো বটেই। আর সেখান থেকেই যেনতেনপ্রকারেণ গায়ের চামড়া সাদা করার উদগ্র প্রয়াস। এই মানসিকতার সুযোগ নিয়ে এদেশে কোটি কোটি টাকার অনৈতিক ব্যবসা ফেঁদে বসেছে ফেয়ারনেস ক্রিমের কোম্পানিগুলো। ফলত, কৃষ্ণকলির 'কালো হরিণ চোখ' ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে ঢেকে যায়।
সোজাসুজি টপিকে আসি। ফেয়ারনেস ক্রিমে কী থাকে?
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্টেরয়েড
হাইড্রোকুইনোন
ট্রেটিনোইন
প্যারাবেন
লেড
মারকারি... ইত্যাদি ইত্যাদি
মাথায় রাখবেন অনেক কোম্পানিই তাদের ক্রিমের সব কাঁচামাল কম্পোজিশনে লেখে না। সেগুলিকেও সরল মনে বিশ্বাস না করাই ভালো। এরা ফর্সা করে না। মূলত চামড়ার আসল রঙ সরিয়ে চামড়া ফ্যাকাশে করে দেয়। স্টেরয়েড দীর্ঘদিন ব্যবহার (অবৈজ্ঞানিকভাবে) করলে চামড়া পাতলা ও লাল হয়ে যায়। সহজেই বারবার ইনফেকশন হতে থাকে, ব্রণর সম্ভাবনা বাড়ে। হাইড্রোকুইনোন এক ধরনের ব্লিচিং এজেন্ট। যেমনভাবে জামাকাপড়ের নোংরা দাগ তোলা হয় এরাও সেরকম ভাবে স্বাভাবিক চামড়ার রঙ ফ্যাকাশে করে দেয়। প্যারাবেন প্রিজারভেটিভ। অ্যালার্জিক র্যাশ করতে পারে। লেড, পারদের মত ভারী যৌগ স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। মূলত লিপস্টিকে লেড বেশি ব্যবহার হয়।
আবার বলি, সব কোম্পানি কম্পোজিশন ঠিকঠাক লেখে না। লুকিয়ে রাখে।
দীর্ঘদিন অবৈজ্ঞানিকভাবে স্টেরয়েড ব্যবহারের আর একটি কুফল হচ্ছে, স্টেরয়েড ঠিক মদের নেশার মত। আপনি স্টেরয়েড ছাড়তে চাইলেও সে আপনাকে ছাড়বে না। বন্ধ করতে গেলেই র্যাশ, ব্রণ ইত্যাদি বেরিয়ে সে আপনাকে ব্যবহার চালিয়ে যেতে বাধ্য করবে। আপনি তখন স্টেরয়েডের হুকুম তালিম করা প্রজামাত্র!
অথচ,
১. ফর্সা করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ফেয়ারনেস ক্রিম বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ।
২. পাশ করা মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া স্টেরয়েড বিক্রি বে-আইনি।
৩. গায়ের রঙ নিয়ে খোঁটা দেওয়া বা তামাশা করা এক ধরনের অপরাধ।
৪. হাইড্রোকুইনোন জাতীয় স্কিন-ব্লিচার হাইপারপিগমেন্টেশনের কার্যকরী ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। কিন্তু ফেয়ারনেস ক্রিম হিসেবে এর অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের মত উন্নত জায়গাগুলোতে নিষিদ্ধ।
এবার দাদের মলমের কথায় আসি। বাজারচলতি একটা ছত্রাক মারার, একটা ব্যাক্টিরিয়া মারার ওষুধ সঙ্গে স্টেরয়েড মার্কা যে মলমগুলো বিক্রি হয় সেগুলোর মাথা-মুন্ডু-বিজ্ঞান-যুক্তি কিচ্ছু নেই। অথচ রমরমিয়ে চলে। এসব খিচুড়ি ওষুধ বিক্রির একটাই কারণ থাকতে পারে- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওই বিশেষ চর্মরোগটির কারণ বুঝতে না পেরে একটি সর্বঘটের কাঁঠালি কলা ধরিয়ে দিয়েছেন। যাতে তুক কে তাক কোনও একটায় কাজ হয়ে যায়। কিন্তু এভাবে হয় না। এদেশে সবাই নিজেকে ডাক্তার ভেবে ফেললেও আসলে ডাক্তারিটা ছোলা, পেঁয়াজ, লেবুর চাঁট বানানোর চেয়ে খানিকটা হলেও কঠিন। এসব ব্যবহারের হলে যে দাদ একেবারে নিরীহ হয়ে শরীরের অন্ধিসন্ধির ঘামে ভেজা জায়গায় লুকিয়ে থেকে বাঙালির আরামের, সময় কাটানোর মনোরম চুলকুনির জোগান দিয়ে গেছে এতকাল, সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়ায় নি, একবার দাদের মলম লাগালেই ভয়ে দৌড়ে পালিয়েছে... সেই দাদও হয়ে উঠেছে ভয়ংকর! বাস, ট্রেনের হকারের জাদু-মলম আর পাড়ার হাতুড়ে চিকিৎসকের না বুঝে দেওয়া মলম ব্যবহারের অবিমৃষ্যকারিতায় দাদ এখন সাধারণ দাদবিনাশী ওষুধে সারতেই চায় না।
আবারও বলে রাখি- ত্বকরোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া ওষুধ যদি কিছু থাকে সেটা স্টেরয়েড। অজস্র ডার্মাটাইটিস, অসংখ্য ক্রনিক স্কিন ডিজিজ স্টেরয়েডের কল্যাণে আজ অনেকটাই মানুষের বশীভূত। আবার সেই স্টেরয়েড ত্বক-ধ্বংস করতে পারে অবলীলায়!
আরও একবার বলি...
স্টেরয়েডের সৃষ্টি-স্থিতি-লয় স্বয়ম্ভূ নয়, তার পেছনের মহাকাল আপনি। হ্যাঁ, আপনিই।
স্টেরয়েডকে কীভাবে চালনা করতে হবে?
★ স্টেরয়েড কী কী ভাবে নেওয়া যায়?
'যত মত তত পথ' স্মরণ করুন। শরীরে যত রাস্তা আছে সব দিয়েই স্টেরয়েড নেওয়া যায়। মুখে খাওয়া, প্রশ্বাসের মাধ্যমে, পেশী বা শিরায় ইঞ্জেকশন, চামড়ায় ইঞ্জেকশন, অস্থিসন্ধির মধ্যে, চোখের ড্রপ, মলম ইত্যাদি প্রায় সম্ভাব্য সব রাস্তাতেই স্টেরয়েড নেওয়া যায়।
★ মোটামুটি কত দিনের মধ্যে সাইড এফেক্ট দেখা যায়?
সাধারণত দু-সপ্তাহের বেশি স্টেরয়েড ব্যবহার করলে মূল সাইড-এফেক্টগুলো আসতে শুরু করে।
★এবার মূল সাইড এফেক্টগুলো কী কী?
গ্লুকোকর্টিকয়েড
ওজন বৃদ্ধি, পাকস্থলীর ঘা, হাড়ের ক্ষয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, পেশীর দুর্বলতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, চোখে ছানি, গ্লকোমা, ইনহেলারের মাধ্যমে নিলে মুখে ছত্রাক সংক্রমণ, গলা খসখসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড
রক্তবাহের মধ্যে চর্বি জমে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, পুরুষের অস্বাভাবিক স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি, শুক্রাশয় ছোট হয়ে যাওয়া, বীর্যে শুক্রাণু হ্রাস, লিভারের টিউমার, সাইকোসিস ইত্যাদি। মহিলা অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত রজঃস্রাব,বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
স্টেরয়েড মলমের সাইড এফেক্ট নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি।
সাইড এফেক্ট কমানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে?
১. ভরা পেটে স্টেরয়েড খান। সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মত অ্যাসিড ক্ষরণ কম করার ওষুধ।
২. সম্ভব হ'লে দিনে অনেকবার অল্প ডোজে না খেয়ে একবারে খেলে সাইড এফেক্ট কম হয়।
৩. প্রতিদিনের ডোজের চেয়ে একদিন ছাড়া ছাড়া খাওয়া সম্ভব হলে ক্ষতি কম হয়।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ মত ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়ামের ব্যবহার হাড়ের ক্ষয় কমায়।
৫. ব্যায়াম ও পরিমিত আহার পেশী ও হাড়ের ক্ষতি কমায়।
৬. রক্তচাপ কমানোর ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
৭. চোখে আবছা দেখলেই ডাক্তার দেখান।
৮. অনেকদিন স্টেরয়েড চললে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিন।
৯. মুখে খাওয়া বাদে অন্য রাস্তায় স্টেরয়েড দেওয়া সম্ভব হবে কিনা আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। বিশেষ করে হাঁপানি-শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে অনেকের ভুল ধারণা থাকে স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা ভালো নয়, অভ্যেস হয়ে যায়..ইত্যাদি। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইনহেলারে খুব অল্প পরিমাণ ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে। সাইড এফেক্ট কম হয়।
১০. স্টেরয়েড ইনহেলার নিলে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে নিন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে জল দিয়ে একটা আঙুল দিয়ে পুরো মুখ পরিষ্কার করে দিন। এতে ছত্রাক সংক্রমণ কমে যায়।
কয়েকটি গোল্ডেন টিপস
ক. পাশ করা মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া স্টেরয়েড খাবেন না। আশেপাশের বন্ধু, বাড়ির সদস্য, সহকর্মী কিংবা সহযাত্রীদেরও নিষেধ করুন।
খ. বাজারচলতি যে সব কাগজে মোড়া পুরিয়া, ওষুধের নাম না লেখা কাচের শিশি, শেকড়-বাকড়, সর্বরোগহর বটিকা পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। এতে স্টেরয়েড মেশানো থাকতে পারে।
গ. মাথায় রাখুন সমগ্র বিশ্বে একমাত্র সর্বজনস্বীকৃত ও বিজ্ঞানসম্মত ফার্মাকোলজি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি হল বর্তমান মডার্ন মেডিসিন। এর বাইরে ওমুক-তমুক প্যাথি বলে যা যা চলে তার কোনোটাই বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে প্রতিনিয়ত ঘষে ঘষে তৈরি নয়। স্টেরয়েড প্রেস্ক্রিপশন আইনত পাশ করা মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তার ছাড়া কেউ করতে পারেন না।
ঘ. নিজে থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। কিছুটা সময় আর অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
ঙ. পারলে আপনার ডাক্তারের কাছে স্টেরয়েড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্য সাইড-এফেক্ট নিয়ে আলোচনা করুন। যদিও এত বিপুল সংখ্যক রোগীর মাঝে দাঁড়িয়ে অনেক সময়ই ডাক্তার সেটা করে উঠতে পারেন না।
সর্বোপরি, আবার একবার বলি- স্টেরয়েড নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না কিন্তু সতর্ক থাকুন। স্টেরয়েড একটি আশীর্বাদ। স্টেরয়েড আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অন্যতম স্তম্ভ। স্টেরয়েডের যুক্তিযুক্ত ব্যবহার অসংখ্য মানুষকে রোগমুক্তি দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে। এবং, এটা ভাবুন- যখন লাভক্ষতির হিসেব করবেন তখন যদি লাভের ঘরে অনেক বেশি জমে তাহলে সামান্য সাইড-এফেক্টের দুশ্চিন্তা ভুলে থাকাই শ্রেয়। দুর্ঘটনা এড়ানোর ভয়ে কে কবে রাস্তায় নামা বন্ধ করেছে?
সচেতনতা ছড়িয়ে দিন। সুস্থ থাকুন।
প্রবন্ধের দুটি কিস্তিই অতি চমৎকার। আমাদের মতো লেম্যানরা অনেক জানতে পারবেন। বোঝানোও হয়েছে অতি চাঁছাছোলা ভাষায়, প্রাঞ্জল ভাবে।
দুটো কিস্তি পড়ার পর অনেক ভুল ধারণা দূর হলো। অত্যন্ত সাবলীলভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য ধন্যবাদ।।