
রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট তোলপাড় তুলে উদ্ধার কোটি কোটি টাকা, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার পার্থ চট্টোপাধ্যায় যিনি রাজ্য মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি । শুধু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীই নন, তিনি তৃণমূল দলের বিরাট মাপের এক নেতা, শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির চেয়ারম্যান ও বটে । শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যার উপর দল সঁপেছিল তিনিই এতো বড় কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন --- নির্মম পরিহাসের এর থেকে বড় উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে রয়েছে কিনা সন্দেহ আছে । তাঁর সাঙাততন্ত্রের কদর্য চেহারাও দেখলো গোটা রাজ্য। কিভাবে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিলাসবহুল আবাসন থেকে উদ্ধার হল গুপ্তধন, কোটি কোটি টাকা, অঢেল বিদেশি মুদ্রা ও সোনার অলঙ্কার! মিলল কি বিপুল স্থাবর সম্পত্তির হদিশ । কুৎসিত বৈভবের নির্লজ্জ প্রদর্শনী চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল ক্ষমতার অলিন্দে থাকা এই সমস্ত হোমরা চোমরা নেতা - মন্ত্রী কত বড় বহরের অন্যায় - অবিচার - কে গোপনে সংগঠিত করেছিল বছর বছর ধরে। এতোবড় দুর্নীতির সাথে নাম জড়ানো সত্ত্বেও রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে পার্থবাবুকে বরখাস্ত করা হল না। বোঝাই গেল, দুর্নীতির প্রশ্নে শূন্য সহনশীলতার নীতি আমাদের নীতিবাগিশ মুখ্যমন্ত্রীর না- পসন্দ। আর তারপরেও সবাইকে অবাক করে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি নাকি এই সমস্ত কিছুর বিন্দু - বিসর্গ ও জানতেন না!!
কিন্তু, এতো বড় অন্যায়ের শিকার যাঁরা হলেন, তাঁদের কি হবে? রাজ্যের সাধারণ ঘরের অগুনতি ছেলে মেয়েরা বহু পরিশ্রম করে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় নাম ওঠার পরও দেখলেন তাঁদের চাকরি হলো না। উল্টে তা বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেল। এদিকে, ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। বঙ্গ - সম্মান প্রদানের মঞ্চকে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের মঞ্চে পরিনত করে অবলীলায় জানালেন যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি আগে কিছুই জানতে পারেননি। অথচ কে না জানে, ২০১৯ সালের এসএলএসটি - র মেধা তালিকায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে- র নাম হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসল আর তিনি চাকরি পেয়ে গেলেন "যাদুকরী" স্পর্শে। গেজেট অনুযায়ী নিয়োগ না করার প্রতিবাদে ২০১৯ -র ২৮ শে ফেব্রুয়ারি কলকাতার মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে ' যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ' এর ব্যানারে দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে শুরু হয় অনশন আন্দোলন। ২৯ দিনের মাথায় হঠাৎ অনশনস্থলে আবির্ভূত হলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি এসএসসি কে ঘুঘুর বাসা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সেখানে গঠন করেন একটা কমিটি ---- আর, সেখানে তাঁদেরই রেখে দিলেন যাঁরা ইতিমধ্যেই দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত। কে না জানে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এসএসসি - র মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে যে পরীক্ষা হয়, তাতেও লেপ্টে ছিল দুর্নীতির বড়সড় অভিযোগ। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে যে এলো, তাও কি মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না? হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি - র নিয়োগ দুর্নীতি যাচাই করতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এটাও কি জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী? হাইকোর্ট নিযুক্ত বাগ কমিটি এসএসসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে আঙুল তুলেছিলেন, তাও কি শুনতে পাননি মুখ্যমন্ত্রী? না কি শুনতে চাননি? একদিকে ক্ষমতার দম্ভ ও দাপটের মিশেল, অন্যদিকে ঠগ খুঁজতে দল উজাড় হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নীতিহীন আপোষ করেছেন দুর্নীতির সাথে।
২০১৫ সালে সংঘটিত আপার প্রাইমারি প্যানেলের মধ্যে বিরাট অসঙ্গতি থাকায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল অবিলম্বে তা সংশোধন করতে। আজও ওই প্যানেলের নিয়োগ সম্পন্ন হলো না। ফলে, প্যানেলের মধ্যে থাকা চাকুরিপ্রার্থীরা ২০১৫- ২০২২ - --- এই দীর্ঘ সাত বছর ধরে যে স্বপ্ন সযত্নে লালন পালন করেছিলেন, তার ভ্রূণ হত্যা হল। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসলেও তার সমাধান আজ পর্যন্ত হল না। এদিকে, সংকট থেকে পরিত্রাণ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রী আদালতের দিকে দায় ঠেলে দিলেন। হাইকোর্ট ও শিক্ষা সচিবের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কোন কোন শূন্যপদ পূরণ আদালতের রায়ের কারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা হলফনামা পেশ করে জানাতে।
সাম্প্রতিক দুর্নীতি কান্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রাজ্যে আতঙ্কজনক কর্মহীনতার ছবি। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় ঘনিয়ে ওঠা সরকার - সৃষ্ট নৈরাজ্য, পড়ুয়া -পিছু শিক্ষকদের লজ্জাজনক ঘাটতি, রাজ্য সরকারি - আধা সরকারি - স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণে শূন্যপদ না পূরণ করার আখ্যান। পড়ুয়া - শিক্ষক অনুপাতের চরম দৈন্যতা আজ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গিলে খাচ্ছে। সংবাদে প্রকাশ, মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাকার ঘাট জুনিয়ার হাই স্কুলে উচ্চ প্রাথমিকে ৭৭২ জন পড়ুয়া পিছু শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১! এটা কোন ব্যতিক্রমী উদাহরণ নয়। বহু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মাত্র এক বা দু' জন শিক্ষকের উপর পঠন পাঠনের পুরো দায়ভারটি ন্যস্ত। এমনও দেখা যায়, সেই এক বা দু'জন শিক্ষক ছুটিতে গেলে স্কুলের গ্রুপ - ডি কর্মীকে ক্লাস নিতে হয়। কখনও বা আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করে এই অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলে। শিক্ষার প্রতি এই নির্দয় অবহেলা অপরাধসম। শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলে ক্লান্তিহীন বিজ্ঞাপন যতই দেওয়া হোক না কেন, এই রাজ্য সরকার তিলে তিলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছয় মাস পার হওয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালের টেট লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা কর্মপ্রত্যাশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুই করা গেল না। আরও উল্লেখ্য, এই নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কোন ধরনের মামলাই দায়ের করা হয়নি।
শুধু পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবই নয়, সরকার এবং সরকার - পোষিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ, পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। নেই পর্যাপ্ত স্কুল ঘর, কোথাও খোলা আকাশের নীচে চলছে পঠন পাঠন, কোথাও শিক্ষক নেই, নেই শৌচাগার - পরিশ্রুত পানীয় জল - এমনই করুন অবস্থা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। গোটা শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে কত শূন্যপদ রয়েছে ( শিক্ষক - অশিক্ষক পদে) তার কোন সরকারি হিসাব আজ পর্যন্ত পেলনা রাজ্যবাসী। অথচ, তুমুল মস্করা করে, ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন রাজ্যে নাকি ৩০ হাজার চাকরি তৈরি! সরকার নাকি শুধুমাত্র নিয়োগ পত্র দেওয়ার অপেক্ষায়। আর, ঠিক ক'দিন আগে সংবাদে প্রকাশিত হল রাজ্যে কর্মসংস্থানের আরেকটি মর্মান্তিক ছবি। সংবাদে প্রকাশ, মালদায় সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্র পরিচারিকাদের জন্য একটা প্রশিক্ষণ শিবির সংগঠিত করে, যাতে অংশ নেয় ৪০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মহিলারা।
এতো বড় একটা ঘটনার পরও রাজ্যের নাগরিক সমাজ নীরব নিশ্চল! ক্ষমতার উদ্ধত চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন তোলার মূল্যবোধ এ রাজ্যে যেন বড়ই বিষম বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, যে সমস্ত টগবগে প্রাণ কাউকে তোয়াক্কা না করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশকে পরিনত করেছেন তাঁদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের তীর্থস্থান, এক গণ আদালত, এক গণ সংসদে -- সেটাই আগামীতে রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনবে এক ফুটন্ত সকাল! সেই অবিচল, অবিনশ্বর বিশ্বাসের উপর ভর করেই উত্তাল সমুদ্রে বেয়ে চলেছে নবজীবনের তরনী। সমস্ত বাধা বন্ধনকে উপেক্ষা করে।
দীপ | 2402:3a80:198b:7cae:678:5634:1232:***:*** | ২১ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৫৫733539
দীপ | 2402:3a80:198f:5ad9:878:5634:1232:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৪৩734072
দীপ | 2402:3a80:197f:ced9:878:5634:1232:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:০৬734158
দীপ | 2402:3a80:1979:8764:778:5634:1232:***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৫৫734209
দীপ | 2402:3a80:1989:81f2:578:5634:1232:***:*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫১734298
দীপ | 2402:3a80:1979:e649:778:5634:1232:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:১৭734362
দীপ | 2402:3a80:1979:67a0:778:5634:1232:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৩১734363
দীপ | 2402:3a80:198d:c3f7:778:5634:1232:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০১734369
দীপ | 2402:3a80:1989:8d5b:578:5634:1232:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৬734388
দীপ | 2401:4900:16cb:1843:c77a:df03:f3e6:***:*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:৫২734391
দীপ | 2401:4900:16cb:1843:c77a:df03:f3e6:***:*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১৫734397
দীপ | 42.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০৬734453
দীপ | 2402:3a80:198b:3065:678:5634:1232:***:*** | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:০৮734533
দীপ | 2402:3a80:1973:fc04:578:5634:1232:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৫৮734676
দীপ | 2402:3a80:1979:cc85:778:5634:1232:***:*** | ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৪৮734693
দীপ | 2402:3a80:198d:5037:778:5634:1232:***:*** | ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:০৫734705
দীপ | 2402:3a80:1cd5:95ca:678:5634:1232:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২৮734790
দীপ | 2402:3a80:1cd5:8fce:678:5634:1232:***:*** | ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২৪734809
দীপ | 2402:3a80:4310:7a6f:578:5634:1232:***:*** | ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৪৩734813
দীপ | 2402:3a80:4310:7ffb:578:5634:1232:***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৫১734899