এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • তুমি তো প্রহর গোনো, তারা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি

    অতনু চক্রবর্তী 
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৭ জুলাই ২০২২ | ১৪৬৩৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৪ (৭ জন)
  • রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট  তোলপাড় তুলে উদ্ধার কোটি কোটি টাকা,  দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার  পার্থ চট্টোপাধ্যায় যিনি রাজ্য মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি । শুধু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীই নন, তিনি তৃণমূল দলের বিরাট মাপের এক নেতা, শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির চেয়ারম্যান ও বটে । শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যার উপর দল  সঁপেছিল তিনিই এতো বড় কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন --- নির্মম পরিহাসের এর থেকে বড় উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে রয়েছে কিনা সন্দেহ আছে । তাঁর সাঙাততন্ত্রের  কদর্য চেহারাও  দেখলো গোটা রাজ্য। কিভাবে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিলাসবহুল আবাসন থেকে উদ্ধার হল গুপ্তধন, কোটি কোটি টাকা,  অঢেল বিদেশি মুদ্রা ও সোনার অলঙ্কার! মিলল কি বিপুল স্থাবর  সম্পত্তির হদিশ । কুৎসিত বৈভবের নির্লজ্জ প্রদর্শনী চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল ক্ষমতার অলিন্দে থাকা এই সমস্ত হোমরা চোমরা নেতা - মন্ত্রী কত বড় বহরের অন্যায় - অবিচার - কে গোপনে সংগঠিত করেছিল বছর বছর ধরে। এতোবড় দুর্নীতির সাথে নাম জড়ানো  সত্ত্বেও রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে পার্থবাবুকে বরখাস্ত করা হল না। বোঝাই গেল, দুর্নীতির প্রশ্নে শূন্য সহনশীলতার নীতি আমাদের নীতিবাগিশ  মুখ্যমন্ত্রীর না- পসন্দ। আর তারপরেও সবাইকে  অবাক করে  মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি নাকি এই সমস্ত কিছুর বিন্দু - বিসর্গ ও জানতেন না!!  

    কিন্তু, এতো বড় অন্যায়ের শিকার যাঁরা হলেন, তাঁদের কি হবে?  রাজ্যের সাধারণ ঘরের অগুনতি  ছেলে মেয়েরা বহু পরিশ্রম করে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় নাম ওঠার পরও দেখলেন তাঁদের চাকরি হলো না। উল্টে তা বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেল।   এদিকে, ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।  বঙ্গ - সম্মান প্রদানের মঞ্চকে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের মঞ্চে পরিনত করে অবলীলায় জানালেন যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি আগে কিছুই জানতে পারেননি। অথচ কে না জানে, ২০১৯ সালের এসএলএসটি - র মেধা তালিকায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে- র নাম হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসল আর তিনি চাকরি পেয়ে গেলেন "যাদুকরী"  স্পর্শে।  গেজেট অনুযায়ী নিয়োগ না করার প্রতিবাদে ২০১৯ -র ২৮ শে ফেব্রুয়ারি কলকাতার মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে ' যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ' এর ব্যানারে দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে শুরু হয় অনশন আন্দোলন। ২৯ দিনের মাথায় হঠাৎ অনশনস্থলে আবির্ভূত হলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি এসএসসি কে ঘুঘুর বাসা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সেখানে গঠন করেন একটা কমিটি ---- আর, সেখানে তাঁদেরই রেখে দিলেন  যাঁরা ইতিমধ্যেই দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত।  কে না জানে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এসএসসি - র মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে যে পরীক্ষা হয়, তাতেও লেপ্টে ছিল দুর্নীতির বড়সড় অভিযোগ। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে যে এলো, তাও কি মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না?  হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি - র নিয়োগ দুর্নীতি যাচাই করতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এটাও কি জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী? হাইকোর্ট নিযুক্ত বাগ কমিটি এসএসসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে আঙুল তুলেছিলেন, তাও কি শুনতে পাননি মুখ্যমন্ত্রী?  না কি শুনতে চাননি? একদিকে   ক্ষমতার দম্ভ ও দাপটের মিশেল, অন্যদিকে ঠগ খুঁজতে দল উজাড় হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নীতিহীন আপোষ করেছেন দুর্নীতির সাথে। 

    ২০১৫ সালে সংঘটিত আপার প্রাইমারি প্যানেলের মধ্যে বিরাট অসঙ্গতি থাকায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল অবিলম্বে তা সংশোধন করতে।   আজও ওই প্যানেলের নিয়োগ সম্পন্ন হলো না। ফলে, প্যানেলের মধ্যে থাকা চাকুরিপ্রার্থীরা ২০১৫- ২০২২ - --- এই দীর্ঘ সাত বছর ধরে যে স্বপ্ন সযত্নে লালন পালন করেছিলেন, তার ভ্রূণ হত্যা হল। টেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসলেও তার সমাধান আজ পর্যন্ত হল না। এদিকে,  সংকট থেকে পরিত্রাণ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রী আদালতের দিকে দায় ঠেলে দিলেন। হাইকোর্ট ও শিক্ষা সচিবের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে কোন কোন শূন্যপদ পূরণ আদালতের রায়ের কারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা হলফনামা পেশ করে জানাতে। 

    সাম্প্রতিক দুর্নীতি কান্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রাজ্যে আতঙ্কজনক কর্মহীনতার ছবি। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় ঘনিয়ে ওঠা সরকার - সৃষ্ট নৈরাজ্য, পড়ুয়া -পিছু শিক্ষকদের লজ্জাজনক ঘাটতি, রাজ্য সরকারি - আধা সরকারি - স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণে শূন্যপদ না পূরণ করার আখ্যান। পড়ুয়া - শিক্ষক অনুপাতের চরম দৈন্যতা আজ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গিলে খাচ্ছে। সংবাদে প্রকাশ, মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাকার ঘাট জুনিয়ার হাই স্কুলে উচ্চ প্রাথমিকে ৭৭২ জন পড়ুয়া পিছু শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১! এটা কোন ব্যতিক্রমী উদাহরণ নয়। বহু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মাত্র এক বা দু' জন শিক্ষকের উপর পঠন পাঠনের পুরো দায়ভারটি ন্যস্ত। এমনও দেখা যায়, সেই এক বা দু'জন শিক্ষক ছুটিতে গেলে স্কুলের গ্রুপ -  ডি কর্মীকে ক্লাস নিতে হয়। কখনও বা আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করে এই অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলে। শিক্ষার প্রতি এই নির্দয় অবহেলা অপরাধসম। শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলে ক্লান্তিহীন বিজ্ঞাপন যতই দেওয়া হোক না কেন, এই রাজ্য সরকার তিলে তিলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছয় মাস পার হওয়া সত্ত্বেও  ২০২১ সালের টেট লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা কর্মপ্রত্যাশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুই করা গেল না। আরও উল্লেখ্য, এই নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কোন ধরনের মামলাই দায়ের করা হয়নি।

    শুধু পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবই নয়, সরকার এবং সরকার - পোষিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ, পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। নেই পর্যাপ্ত স্কুল ঘর, কোথাও খোলা আকাশের নীচে চলছে পঠন পাঠন, কোথাও শিক্ষক নেই, নেই শৌচাগার - পরিশ্রুত পানীয় জল - এমনই করুন অবস্থা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। গোটা শিক্ষাক্ষেত্র জুড়ে কত শূন্যপদ রয়েছে ( শিক্ষক - অশিক্ষক পদে)  তার কোন সরকারি হিসাব আজ পর্যন্ত পেলনা রাজ্যবাসী। অথচ, তুমুল মস্করা করে, ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন রাজ্যে নাকি ৩০ হাজার চাকরি তৈরি! সরকার নাকি শুধুমাত্র নিয়োগ পত্র দেওয়ার অপেক্ষায়। আর, ঠিক ক'দিন আগে সংবাদে প্রকাশিত হল রাজ্যে কর্মসংস্থানের আরেকটি মর্মান্তিক ছবি। সংবাদে প্রকাশ, মালদায় সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্র পরিচারিকাদের জন্য একটা প্রশিক্ষণ শিবির সংগঠিত করে, যাতে অংশ নেয় ৪০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মহিলারা। 

    এতো বড় একটা ঘটনার পরও রাজ্যের নাগরিক  সমাজ নীরব নিশ্চল! ক্ষমতার উদ্ধত চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন তোলার মূল্যবোধ এ রাজ্যে যেন বড়ই বিষম বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, যে সমস্ত টগবগে প্রাণ কাউকে তোয়াক্কা না করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশকে পরিনত করেছেন তাঁদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের তীর্থস্থান, এক গণ আদালত, এক গণ সংসদে -- সেটাই আগামীতে রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনবে এক ফুটন্ত সকাল! সেই অবিচল, অবিনশ্বর বিশ্বাসের উপর ভর করেই উত্তাল সমুদ্রে বেয়ে চলেছে নবজীবনের তরনী। সমস্ত বাধা বন্ধনকে উপেক্ষা করে।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৭ জুলাই ২০২২ | ১৪৬৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • দীপ | 2402:3a80:1989:381a:578:5634:1232:***:*** | ১৭ মার্চ ২০২৫ ১৬:২০541749
  • যতো ইস্লামিক মৌলবাদকে তোষণ করবেন, বিজেপি ততো শক্তিশালী হবে! 
    না বুঝলে কিছু করার নেই!
     
  • দীপ | 2402:3a80:196f:aa31:878:5634:1232:***:*** | ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:২১541773
  • এতো দিন দেখেছি জমি কেনা থেকে বাড়ি করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমতি (পড়ুন টাকা দিতে হয়) নিতে হতো লোকাল ক্লাবের! লোকাল ক্লাব না বলে বলা ভালো এলাকার শাসক দলের তথাকথিত দাদাদের কাছ থেকে।
    আজ দেখলাম প্রেম করতে গেলেও নাকি এলাকার অনুমতি নিতে হবে, শুধু প্রেমই নয়, বিয়ে করতে গেলেও লাগবে অনুমতি। আর সেই অনুমতি দেবে কারা? না শাসক দলের কচ্চি নেতারা! (খড়দহের এই ঘটনায় তাঁদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ঘটনা ও তাঁদের নাম উল্লেখ করলাম না)
    আরও আশ্চর্য যে এই ঘটনার সমর্থনে আর এক নেতা বলছেন, এটা ইউরোপ নাকি? এই নিয়ে নাকি সালিশিও বসে ছিল(সেটি সেই নেতা মিডিয়ার সামনে বুক ফুলিয়ে বলছেন)! কত বড় আস্পর্ধা। আচ্ছা সমস্যা কোথায়? দুজন প্রপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে ৩ বছর ধরে প্রেম করছে(এটি প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার), পরের সপ্তাহে তাঁরা বিয়ে করতে চলেছে। এখনে নোংরামির কী আছে? নাকি মেয়েটি আগে বিবাহিত ছিলো তাই? নাকি মেয়েটি ছেলেটির থেকে বয়সে বড় তাই?
    এর উত্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, "পাত্রীর বয়স পাত্রের থেকে বেশি। তাছাড়া পাত্রীর আগে বিয়ে হয়েছিল। তার তিন সন্তানও রয়েছে। এই ধরনের সম্পর্কে এলাকার যুব সমাজকে প্রভাবিত করবে" (এই শেষের লাইনটি মন দিয়ে পড়ুন)। বাহ্ কী সুন্দর উত্তর! যুব সমাজকে প্রভাবিত করবে! একটি জেনারেশনের চাকরী খেয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে বলছে কী না প্রেম করলে যুব সমাজ প্রভাবিত হবে....!
    এর পরেও নচ্চি দা এসে ২১ এর মঞ্চে গান গাইবে,'রাজ্যটা এখনও ইউপি, গুজরাট হয়ে যায় নি।' আমরা তালি দেবো (?)
    ধুর ঘুম পাচ্ছে ব্রাআআ!
    দুয়ারে মদ প্রকল্প এখনও শুরু হল না কেন কে জানে?
     
    -ফেসবুক
  • দীপ | 2402:3a80:196c:5734:778:5634:1232:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৫ ২২:১৮541962
  • আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যানার্জিদি একজন অত্যন্ত সেনসিটিভ এবং উচ্চমার্গের ইন্টেলেকচুয়াল। দিনের পর দিন অত্যন্ত সুচারুভাবে তিনি বামপন্থীদের কয়েক দশকের তৈরি মেধার দম্ভ ভেঙেই চলেছেন। তিনি দেখিয়ে চলেছেন আসলে এইসব পুঁথি পড়া বুলি কপচানো গাদা গাদা তথ্য দিয়ে তৈরি কিছু প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের খেটে খাওয়া আধপেটা মানুষের বালটাও ছেঁড়া যায় না। রাজনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করেছেন, সাধারণ মহিলাদের মধ্যে নিজের ক্যারিশমা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, পাওয়ার প্লে তে পুরুষদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সর্বোচ্চ শিক্ষিত, ডিগ্রিধারী, ক্ষমতাশালী লোকজনকে নিজের চারপাশের বাঁদরনাচ করাচ্ছেন, এবং তারা গ্রীড এবং স্টুপিডিটির যে ব্যাপক উলঙ্গ ডিসপ্লে করে চলেছে, তাতে সমাজতন্ত্রের লড়াইয়ের যে ইতিহাস, যে ত্যাগ এবং অভাবনীয় রেসিলিয়েন্স এর উদাহরণ, সবটা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে। যে পরিমাণ প্রোপাগান্ডা গত তেরো বছরে তৃণমূল আইটি সেল ছড়িয়েছে, তাকে নস্যাৎ করার চেষ্টাটুকু শুরু অবধি করা সম্ভব হয়নি বামপন্থীদের পক্ষে। মানুষের স্মৃতি থেকে সত্তরের ইতিহাস মুছে যাচ্ছে। এটা গত চল্লিশ বছর ধরে উনি করছেন। ছোট ছোট স্টেপে। এই প্রজন্মের কাছে বামপন্থাকে একটা ইউটোপিয়া তে পরিণত করেছেন তিনি। 
    উল্টোদিকে এই লড়াইয়ে মুখোমুখি দাঁড়াবার শক্তিটুকু পর্যন্ত বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা জড়ো করতে পারছেন না। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইত্যাদিদের লেগাসি অবধি চাড্ডিদের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে প্রচার করতে হচ্ছে! গতকাল এক তৃণচাড্ডির কেলগ এর অনুষ্ঠানের বর্ণনা সমেত একটি পোস্ট প্রায় হাজার শেয়ার হয়েছে। বামপন্থীরাই করছেন।
    জন্মভিটা হারিয়ে আন্তর্জাতিক হওয়া যায় না। নিজের ঘরের মানুষের লাশ পেরিয়ে কোনো পিংক ওয়েভের অংশ হওয়াটা আসলে হাস্যকর দ্বিচারিতা। মালদা থেকে উত্তরবঙ্গ, কোনো সাংগঠনিক শক্তি নেই, একথা গত পাঁচ বছর ধরে আমি লিখছি, বলছি। আমার পোস্টে বিধিবামগণ এসে জ্ঞান দিয়ে যান। কিন্তু সংগঠন নিয়ে কারুর মুখে একটি কথাও শুনিনা। সবাই ফাটকা খেলছে। ফাটকা শেয়ার করছে, ব্যক্তিনির্ভর পপুলারিটির রসে মজে আছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। আজ নিখুঁত গণিতের মত বিজেপির সাম্প্রদায়িক মানচিত্র তৈরি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এর দায় একমাত্র বামপন্থীদের। ছাত্র রাজনীতি ক্ষমতার গর্ভে চলে গেছে। কমিউনিজম বলে এ রাজ্যে আর কিছু নেই। থাকার কথাও না। কিন্তু দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্লু প্রিন্টও যদি দক্ষিণপন্থীদের থেকেই ধার করতে হয়, তাহলে এই যে চারিদিকে বাম স্তাবক তৈরি হচ্ছে, যারা কোনরকম স্বাধীন চিন্তা করে না, কোনোভাবেই মানুষের কাছে পৌঁছনো নিয়ে চিন্তিত না, শুধু নেতাদের তালে তাল দিচ্ছে, এরা সবাই মিলে তৃণমূল অথবা বিজেপিতে ঢুকে গেলেই হয়। টাইম অ্যান্ড স্পেস এর প্রবাহ বামপন্থার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারেকশন প্যারামিটার। লেনিনের "কি করিতে হইবে" ১৯০২ সালে লেখা। আরো একবার ঝালিয়ে নিতে অসুবিধা নেই। সুভাষ চক্রবর্তীর স্পর্ধা প্রয়োজন। সুশীল কর্পোরেট বামের হায়ারার্কি না।

    ২৮ মার্চ, ২০২৫
  • দীপ | 2402:3a80:196c:5734:778:5634:1232:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৫ ২২:১৯541963
  • লিখেছেন তপারতি গঙ্গোপাধ্যায়।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন