এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি ও তার তাৎপর্য্য

    মিঠুন ভৌমিক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ | ২৮৪৬ বার পঠিত
  • পদার্থবিদ্যার অনেকদিনের জটপাকানো সমস্যা মহাকর্ষ। গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স বা মহাকর্ষীয় বল আমাকে আপনাকে পৃথিবীর সাথে জুড়ে রেখেছে, কিন্তু তার ভূমিকা আক্ষরিক অর্থেই সুদূরপ্রসারী। গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র ছাড়িয়ে, ছায়াপথের প্রান্ত পেরিয়ে আরো দূরে বিস্তৃত তার ভূমিকা। আমাদের ছায়াপথ মিল্কি ওয়ে, তার কেন্দ্র থেকে ২৬০০০ আলোকবর্ষ দূরে (2.5x10^20 m) পৃথিবীর অবস্থান। কিন্তু এই বিশাল দূরত্বের বাইরেও মহাকর্ষের প্রভাব আছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ইন্টার-গ্যালাক্টিক স্পেস (দুটি ছায়াপথের মাঝের জায়গা) বলে, সেইসব পেরিয়েও বজায় থাকে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ, সেই টানে পরষ্পরের সাথে বাঁধা থাকে একাধিক ছায়াপথ। এই দূরত্বের হিসেব দেওয়ার জন্য উদাহরণস্বরূপ আমরা অ্যান্ড্রমিডা ছায়াপথের কথা ভাবতে পারি। ২৩ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অ্যান্ড্রমিডা ছাড়িয়ে আরো দূরে, সদাপ্রসারণশীল মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুকণাকে একসাথে ধরে রাখে মহাকর্ষ। অবশ্যই দূরত্ব অনুসারে এই টান কমবেশি হয়, কাজেই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই যে যতদূরেই যাই মহাকর্ষীয় বল একইভাবে কাজ করবে। ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরও মহাকর্ষের এক আশ্চর্য কীর্তি। সূর্যের থেকেও বেশ খানিকটা বড়ো কোন নক্ষত্রের “মৃত্যু” হলে তার কণাগুলির মধ্যেকার মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য নক্ষত্রটি নিজের মধ্যে কোল্যাপ্স করে। এই বিশাল ভরের মৃত নক্ষত্রই কৃষ্ণগহ্বর। এই নিজের মধ্যেই কোল্যাপ্স করা, তাও সূর্যের থেকেও ভারি একটা নক্ষত্রের --- এ আমাদের রোজকার অভিজ্ঞতায় ভেবে ওঠা কঠিন। তাই আবারো জাগতিক উদাহরণের কাছে ফিরে যাই। ধরা যাক সূর্যের থেকে দশগুণ ভারি একটি নক্ষত্র নিভে আসছে, কারণ যে হাইড্রোজেন জ্বালানি থেকে তার আলো ও তাপ, তা ফুরিয়ে আসছে। বহু লক্ষ বছর ধরে জ্বলার পরে এক সময় জ্বালানি ফুরোলে এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে (একেই পরিভাষায় সুপারনোভা বিস্ফোরণ বলে) কখনো কখনো তৈরী হয় কৃষ্ণগহ্বর। সূর্যের থেকে অন্তত আটগুণ ভারি নাহলে কৃষ্ণগহ্বর তৈরী হয়না। আবার সুপারনোভা এক্সপ্লোশানের পরেও নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ যা পড়ে থাকে তার ভর সূর্যের তিনগুণের থেকে কম হলে কৃষ্ণগহ্বর তৈরী হয়না। এই বিষয়ে পরে আবার ফিরে আসছি।


    লুমিনেতের কম্পিউটার সিমুলেশনে কৃষ্ণগহ্বরের যে ছবি আঁকা হয়েছিলো চল্লিশ বছর আগে।


    সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে, কৃষ্ণগহ্বর আসলে বিশাল পরিমাণ পদার্থকে ঠেসেঠুসে রাখা এক বস্তুপিন্ড। ঘনত্ব বোঝাতে আবারো আমাদের উদাহরণে ফিরে যাই। যে নক্ষত্রটি নিয়ে আমরা কথা শুরু করেছিলাম, সেই সূর্যের থেকে দশগুণ ভারি যে, তাকে যদি ঠেসে নিউ ইয়র্ক শহরের চৌহদ্দির মধ্যে পুরে দেওয়া হয় তাহলে যেরকম ব্যাপার হবে, একটা ব্ল্যাক হোলের ঘনত্ব অনেকটা সেরকম। কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষীয় বল এতই বেশি (কারণ প্রচন্ড বেশি ভর) যে তা আসেপাশের সমস্ত বস্তুপিন্ডকে গ্রাস করতে থাকে। অন্য নক্ষত্র যদি কাছে চলে আসে তবে তারও সেই হাল হয়। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা, কৃষ্ণগহ্বরের থেকে আলো পর্যন্ত নিস্তার পায়না। ফলে কৃষ্ণগহ্বর দেখতে ঠিক কেমন -- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন অন্ধকার এক বস্তুপিন্ডের কথা। চল্লিশ বছর আগে জঁ পিয়ের লুমিনেত কৃষ্ণগহ্বরের রূপ কেমন হতে পারে কম্পিউটার সিমুলেশনে তার একটা ছবি এঁকেছিলেন। তার কেন্দ্র গভীর কৃষ্ণবর্ণ, তাকে ঘিরে উজ্জ্বল সাদার বলয়। সদ্য তোলা ছবিতে কৃষ্ণগহ্বরের যে রূপ ফুটে উঠেছে তাতে দেখা যাচ্ছে লুমিনেতের ছবি খুবই কাছাকাছি ধারণাই করেছিলো। কিন্তু ছবির কথা পরে। আগে জেনে নেওয়া যাক যে বস্তুটির ছবি নিয়ে এত কান্ড সেই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের বিশদ পরিচয়।

    সাধারণভাবে কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে তৈরী হয় সেটা আমরা সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করেছি। এখন দেখা যাক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল, অর্থাৎ সবথেকে বড়ো কৃষ্ণগহ্বর কী। অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোন কৃষ্ণগহ্বরের ভর যদি সূর্যের ভরের অন্তত একশো হাজার (10^5) গুণ হয় তাহলে তাকে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল বলা যাবে। সুপারম্যাসিভই শ্রেণীবিভাগে সবথেকে বড়ো ব্ল্যাকহোলের জায়গা, এবং এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর সূর্যের ভরের কয়েক বিলিয়ন গুণ পর্যন্তও হতে পারে (এক বিলিয়ন = 10^7)। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কীভাবে তৈরী হয় সে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতবিরোধ আছে, এবং গবেষণার বিষয়। বলা হয় যে সমস্ত ছায়াপথের কেন্দ্রেই একটি করে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে। আমাদের মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রে যেমন স্যাজিট্যারাস এ* নামের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আছে। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল তৈরীর একটা থিওরি বলে ছায়াপথের কেন্দ্রে যখন কোন ব্ল্যাকহোল অবস্থান করে, তখন তা আরো পদার্থ নিজের দিকে টেনে আনে, একে বলে অ্যাক্রিশন। যেসমস্ত বস্তুকণা এইভাবে জমা হতে থাকে, সেগুলো কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূরত্বে এক একটা বলয়ের আকৃতির পথে জমা হয়, ঐ বলয়গুলির পোষাকি নাম অ্যাক্রিশন ডিস্ক । অন্যান্য পদার্থের মত আরো ব্ল্যাকহোলও এইভাবে আকৃষ্ট হয়ে পরষ্পরের সঙ্গে জুড়ে যেতে পারে। এইভাবে ক্রমশ বড়ো হতে হতে একসময় "সাধারণ" ব্ল্যাকহোল, সুপারম্যাসিভ বা অতিকায় হয়। ১০ই এপ্রিল ২০১৯ এইরকম একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল বা অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তোলা গেছে ইভেন্ট হরাইজন টেলেস্কোপে। ইতিমধ্যে প্রায় সবাই দেখে ফেলেছেন সেই ছবি, যেখানে একটা কালো বৃত্তাকার অংশকে ঘিরে উজ্জ্বল কমলা/হলদে বলয় দেখা যাচ্ছে। ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্র যেমন দেখতে হওয়ার কথা বলা হয়েছিলো, অর্থাৎ আলো যেখান থেকে ফেরত আসেনা সেই জায়গা যেমন হওয়ার কথা সেরকমই দেখতে। পদার্থবিজ্ঞানে যাঁরা আদর্শ কৃষ্ণ বস্তু সম্পর্কে পড়েছেন তাঁদের মনে থাকতে পারে, সেখানেও একই জিনিস হচ্ছিলো। যাই হোক, এই ছোট পরিসরে সেসব বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছিনা। বরং জেনে নেওয়া যাক ইভেন্ট হরাইজন কাকে বলে। ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের অন্ধকারময় অংশ যেখান শেষ হয়ে প্রথম আলোর বৃত্ত শুরু হয়, সেই সীমারেখার নাম ইভেন্ট হরাইজন। ইভেন্ট হরাইজন গোলাকার। অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের সাথে অন্যান্য অপেক্ষাকৃত ছোট কৃষ্ণগহ্বরের তফাৎ হলো, অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের আয়তন খুবই বেশি, ফলে ঘনত্ব বেশ কম। কোন কোন ক্ষেত্রে তা জলের থেকেও কম ঘনত্ববিশিষ্ট হতে পারে।


    কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম তোলা ছবি যা নিয়ে এত হইচই।


    এবার একেবারে সরাসরি ঢুকে পড়া যাক ১০ই এপ্রিলের খবরে। কী হলো, কেন হলো, হয়ে কী লাভ হলো ইত্যাদিও জেনে নেওয়া যাক।

    যে ছবি নিয়ে বিশ্ব তোলপাড়, তা একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের। ৫৫ মিলিয়ন (৫৫০ লক্ষ) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের সূর্যের থেকে সাড়ে ছয় বিলিয়ন গুণ ভারি। আমরা আগেই জেনেছি অতিকায় কৃষ্ণগহ্বর ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকে। আলোচ্য অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরটি মেসিয়র ৮৭ বা M87 নামের জান্তব ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত।

    একথা সহজেই বোধগম্য যে এতদূর থেকে, আলো পর্যন্ত মুক্তি পায়না এমন বস্তুর ছবি তোলা, তাও খুব উচ্চমানের ছবি যাতে কৃষ্ণগহ্বরের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করা যাবে -- এর জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপ দরকার ছিলো। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপই সেই যন্ত্র, বা যন্ত্রসমষ্টি। এমন নামের কারণ, এই টেলিস্কোপের রিজোলিউশন ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনের সমতুল্য। গোটা পৃথিবী জুড়ে আক্ষরিক অর্থেই "বিছিয়ে" রাখা হলো আটটি টেলিস্কোপ, যা একে আরেকটির থেকে বেশ খানিকটা দূরে দূরে অবস্থিত। এর ফলে যে টেলিস্কোপ-সমষ্টি তৈরী হলো তা আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর সমাজ আকারের না হলেও কার্যকারীতায় সেরকমই অবিশ্বাস্য আকারের একটি টেলিস্কোপের সাথে তুলনীয়। অঙ্ক কষে আগেই দেখা গেছিলো যে এই আকারের টেলিস্কোপই প্রয়োজনীয় রিজোলিউশন দিতে পারে। তারপর শুরু হলো ডেটা নেওয়া। বলা হচ্ছে কদিন আগের বহু আলোচ্য এল এইচ সি এক্সপেরিমেন্টে এক বছরে সংগৃহীত তথ্যের সমান তথ্য দু সপ্তাহেই জমে উঠেছে। সব মিলিয়ে কয়েক পিটাবাইট তথ্য (১০০০ টেরাবাইটে এক পিটাবাইট)। এই বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করতে সময় লেগেছে অনেক। আটটি টেলিস্কোপের নেওয়া অসংখ্য ছবি আসলে মূল ছবির এক একটি টুকরো। এরপরের কাজ ছিলো সেই টুকরোগুলো থেকে কৃষ্ণগহ্বরের ছবি "রিকনস্ট্রাক্ট" করা। ২০১৭ সালের একটি বক্তৃতায় এম আই টির গবেষক কেটি বাওম্যান কীভাবে অজস্র টুকরো ছবি জুড়ে মূল রূপে পৌঁছনো যায় তা ব্যাখ্যা করেন। কেটি যে কম্পিউটার অ্যালগোরিদম নিয়ে কাজ করছিলেন তা সরাসরি ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু যে তিনটি আলাদা বিজ্ঞানীদলের সম্মিলিত কাজের ফল ১০ই এপ্রিলের ছবি, তার মধ্যে কেটিও ছিলেন। এম৮৭ ছাড়াও মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রের অতিকায় কৃষ্ণগহ্বরের ছবিও তোলা হয়েছে, যা এখনও বিশ্লেষণের অপেক্ষায়।


    এখনকার কম্পিউটার সিমুলেশনে আঁকা কৃষ্ণগহ্বরের ছবি ও বিভিন্ন অংশের পরিচয়।


    ১০ই এপ্রিলের আলোড়ন তোলা খবর বেরোনোর পরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ঘোষণা ইমেইল মারফৎ আমাদের কাছে পৌঁছয়। তাতে খুবই আনন্দের সাথে জানানো হয়েছে চার মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা যে বিশাল বিজ্ঞানী দল এই মহাযজ্ঞে ব্যস্ত তার মধ্যে একজন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস গ্যামি। অধ্যাপক গ্যামি ও তার ছাত্রদের বিষয় তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞান। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য আইনস্টাইনের জেনেরাল থিওরি অফ রিলেটিভিটির প্রত্যক্ষ প্রমাণ খোঁজা। বিভিন্ন বস্তুসমূহ কীভাবে কৃষ্ণগহ্বরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তাদের গতিপথ কীভাবে বদলাচ্ছে এই বিষয়ে তাত্ত্বিক গবেষণার পথিকৃৎ গ্যামি। শুধু তাই না, যে বিজ্ঞানীদল প্রথম আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষ্ক্ষিকতাবাদ তত্ত্বকে কৃষ্ণগহ্বর সংক্রান্ত তাত্ত্বিক মডেলের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিলেন সেই দলেও গ্যামি অন্যতম নাম। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউজ ব্যুরো সম্পাদককে অধ্যাপক গ্যামি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কৃষ্ণগহ্বরের হাই রিজোলিউশন ছবির তাৎপর্য। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে কৃষ্ণগহ্বর যেমনটি দেখতে হওয়ার কথা সেটা বাস্তবে সেরকমই কিনা, বা তার বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত কী ঘটে চলেছে তা জানা এই প্রোজেক্টের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো। কৃষ্ণগহ্বর শুধু আসেপাশের সমস্ত বায়বীয় পদার্থ প্রবলবেগে আত্মসাৎ করে না, তার থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তির উদ্গীরণও ঘটে, প্লাজমা জেটের আকারে। স্টিফেন হকিং এর গবেষণা থেকে আমারা আগেই একথা জেনেছি। সেই সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক নতুন তথ্য পাবেন এই ছবিটির থেকে। দূরতম এম৮৭ এবং আমাদের নিজস্ব মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত ছায়াপথে অবস্থান্কারী কৃষ্ণগহ্বরের ছবি এই একই প্রোজেক্টে তোলা গেছে। "কাছের" এই কৃষ্ণগহ্বরটির ছবি বিশ্লেষণ করা শুরু হলেই আরো কিছু নতুন তথ্য উঠে আসবে, এবং অপেক্ষাকৃত জটিল স্ট্রাকচার বিশিষ্ট হওয়ায় আরো ভালোভাবে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। প্রায় একশো বছর আগে (১৯১৫) আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে বলেন কীভাবে বিপুল ভরবিশিষ্ট কোন বস্তু তার চারপাশের স্থান-কালকে প্রভাবিত করে। এই খটমট ব্যাপারটা সহজে বোঝাতে টেক্সট বইতে সচরাচর একটা উদাহরণ দেওয়া হয়। ধরা যাক চারটে খুঁটির সাহায্যে একটা চাদর বা ট্র্যামপোলিন টানটান করে বেঁধে রাখা হয়েছে। এবার চাদরের মাঝখানে একটা ভারী পাথর রাখলে, কেন্দ্রের সেই অংশটি ঝুলে পড়বে বা অন্তত একটি "ডিপ্রেশন" তৈরী হবে। এবার যদি দ্বিতীয় আরেকটি অপেক্ষাকৃত কম ভরের পাথর কেন্দ্র থেকে সামান্য দূরে এনে রাখা হয় তাহলে দেখা যাবে দ্বিতীয় পাথরটি প্রথমটির দিকে গড়িয়ে চলে যেতে চাইছে বা না যেতে পারলেও তার গতিপথের সম্ভাব্য অভিমুখ সেদিকেই। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বলে, এইভাবে বিপুল ভরের কোন বস্তু আমাদের স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম বা স্থান-কাল জালিকাকে প্রভাবিত করে, যা মহাকর্ষীয় বলের কারণ। স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম বা স্থান-কাল জালিকার আরেকটা উদাহরণ হিসেবে সেফটি নেটের কথা ভাবা যেতে পারে। ট্র্যাপিজের খেলায় যাতে খেলোয়াড় নিচে পড়ে গিয়ে চোট না পান তাই একটা জাল টাঙানো থাকে দেখেছেন? একেবারে শেষে ঐ জালে খেলোয়াড়েরা নেমে আসেন। যে যে অংশে তাঁরা নেমে এসে দাঁড়ান সেই অংশগুলোয় অবিকল একইরকম ডিপ্রেশন তৈরী হয় যেমনটা বিপুল ভরের বস্তুর জন্য স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়ামের ক্ষেত্রে হওয়ার কথা।

    নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র মহাজাগতিক কিছু কিছু ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারেনা, যা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। এর মধ্যে অন্যতম হলো গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং যার ফলে এক বা একাধিক বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্রিয়ায় আলোর গতিপথ বেঁকে যায়। ফলে একই বস্তুর একাধিক প্রতিবিম্ব তৈরী হয়। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং এর প্রমাণ পেয়েছেন (১৯৭৯ সালের Twin QSO পর্য্যবেক্ষণ, যেখানে একই মহাজাগতিক বস্তু ও তার প্রতিবিম্ব একই সঙ্গে ধরা পড়ে)। বলা বাহুল্য, সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব খুবই জটিল ও বিমূর্ত তত্ত্ব, ফলে এই ছোট পরিসরে তা বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব না। আগ্রহীরা নিচের লিংক থেকে আরো দেখতে পারেন, অডিও-ভিস্যুয়ালের সুবিধা পেলে আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে পারা যাবে।


    স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম অনেকটা সেফটি নেটের মত আচরণ করে। ভারী বস্তু সেই জালে তৈরী করে "ডিপ্রেশন", ফলে অপেক্ষাকৃত হালকা বস্তু টান অনুভব করে।


    একেবারে শুরুতে আমরা কীভাবে কৃষ্ণগহ্বর তৈরী হয় সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। এখন সেখানে আরেকবার ফিরে যাই। কৃষ্ণগহ্বর তৈরী হওয়ার পটভূমিকা আরো একটু বিশদ করা প্রয়োজন, কারণ তা কাঠামোর দিক থেকে একটি নক্ষত্রের জীবনচক্রের সাথে সম্পর্কিত। বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রগুলিকে তাদের ভর অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেন। সূর্যের ভরকে (M0, solar mass) একক ধরলে 0.5M0 বা তার থেকে কম ভরের নক্ষত্রদের বলে very low mass stars, তার থেকে একটু ভারিদের low mass stars, তারপর intermediate-mass এবং সবশেষে massive stars, যারা সবথেকে ভারি সূর্যের থেকে ৭-১০ গুণ ভারী। সাধারণত এই শেষোক্ত শ্রেণীর নক্ষত্ররাই সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোল্যাপ্স করে। অপেক্ষাকৃত হালকা শ্রেণীর নক্ষত্ররা (লো মাস এবং ভেরি লো মাস শ্রেণী) অন্তিম অবস্থায় পরিণত হয় "হোয়াইট ডোয়ার্ফে", যা আসলে নক্ষত্রের একেবারে কেন্দ্রস্থ অংশটুকুর পরিভাষাগত নাম। প্রচন্ড ঘনত্বের (হোয়াইট ডোয়ার্ফের থেকে এক চা চামচ খুবলে নিয়ে তার ভর মাপলে দেখা যাবে শ'খানেক টন !!) এই মহাজাগতিক বস্তুটিকে নিয়ে প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখরের অসামান্য গবেষণা আছে। চন্দ্রশেখরই প্রথম অঙ্ক কষে দেখিয়ে দেন সূর্যের ভরের 1.4 গুণ অবধি নক্ষত্ররাই অন্তিমে হোয়াইট ডোয়ার্ফ হয়। তার বেশি ভর হয়ে গেলে তারা কোল্যাপ্স করে। এই গবেষণা চন্দ্রশেখর লিমিট নামে বিখ্যাত। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি চন্দ্রশেখরের নামে পরিচিত হলেও এর সাথে আরো দুজন বিজ্ঞানীর নাম জড়িয়ে আছে (অ্যান্ডারসন এবং স্টোনার) যাঁরা ১৯২৯ সালে ঐ একই হিসেব প্রকাশ করেন। তিনজন বিজ্ঞানী স্বাধীনভাবে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেও সমকালীন বিজ্ঞানীমহল তা উপেক্ষা করেছিলো, কারণ ঐ তত্ত্ব ঠিক হলে কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে হত, যা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিলো।

    কৃষ্ণগহ্বরের আলোচনা তার ভরের মতই অসীম, কাজেই এই লেখাও ক্রমশই বেড়ে উঠছে। নিচের লিংকে আরো অনেক কিছুর সঙ্গে এই বিষয়ে লেখা আরেকটি প্রবন্ধের হদিশও রইলো, দ্য টেলিগ্রাফে বেরোনো লেখাটিতে খুব সুন্দরভাবে এই কাজের তাৎপর্য্য আলোচিত হয়েছে।

    আর কথা না বাড়িয়ে আমরা বরং গত কয়েকদিনে আমাদের সামনে এসে পড়া ঘটনাবলী সংক্ষেপে দেখে নি। যে নিরলস প্রচেষ্টায় পদার্থবিদরা এই মহাবিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করছেন, তারই সাম্প্রতিকতম মাইলফলক কৃষ্ণগহ্বরের ছবি। মহাকর্ষ কীভাবে কাজ করে, ব্রহ্মান্ড কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, মহাজাগতিক যেসব ঘটনা টেকনোলজির অভাবনীয় উন্নতির জন্য ক্রমশ আমাদের কাছে ধরা পড়ছে ---এগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য কৃষ্ণগহ্বরকে চাক্ষুস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আটটি টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক (ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ) ছবিটি সম্পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গেই একটি অভূতপূর্ব এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। পরিভাষায় যাকে বলে পাথব্রেকিং কাজ, এই এক্সপেরিমেন্ট একেবারে তাই। এর ফলে নতুন যেসব তথ্য উঠে আসছে ও আসবে, সেগুলো ব্যবহার করে পদার্থবিদেরা তাঁদের তাত্ত্বিক গবেষণার ভুলভ্রান্তিগুলো শুধরে নিতে পারবেন। আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন বিমূর্ত গণিতের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোন ফলাফল। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন গবেষণায় যার অস্তিত্ব পরোক্ষভাবে প্রমাণিত, তার ছবি চোখের সামনে ফুটে ওঠার ঘটনা শুধু অভাবনীয় সাফল্যের গল্পই না, তা বহু মানুষের স্বপ্নপূরণেরও দিন।


    তথ্যসূত্র:
    1. https://www.sciencenews.org/article/black-hole-first-picture-event-horizon-telescope
    2. https://eventhorizontelescope.org/
    3. https://en.wikipedia.org/wiki/Black_hole
    4. https://www.dailymail.co.uk/sciencetech/article-6912301/Simulation-black-hole-created-40-YEARS-AGO-surprisingly-close-real-thing.html
    5. https://www.nature.com/articles/d41586-019-01155-0
    6. https://news.illinois.edu/view/6367/772550
    7. https://www.telegraphindia.com/science/the-dark-knight/cid/1688765?fbclid=IwAR2rTcnfMm-vNXQGkD57bxE7RPNY8LeeOVO0ljlYAvzXTstncadzHo6O2Ms
    8. https://www.space.com/17661-theory-general-relativity.html

    ছবি
    1. https://www.engadget.com/2017/04/19/black-hole-image-jean-pierre-luminet/
    2. https://en.wikipedia.org/wiki/Black_hole
    3. https://www.express.co.uk/news/science/1112398/black-hole-first-image-picture-photo-event-horizon-telescope-release-live-updates-ESO
    4. http://www.thegophysics.com/space-time/


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ | ২৮৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • MB | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৩০78179
  • সবাইকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।:)

    এস এমের প্রশ্নের উত্তরেঃ কৃষ্ণগহ্বর তো একটা ত্রিমাত্রিক জিনিস। আকাশে একটা কালোজাম গোছের ব্যাপার ভাবুন। যেদিক থেকেই দেখবেন, কালোজাম। ব্ল্যাকহোল গোলাকার ত্রিমাত্রিক। যে আলো দেখা যায় ছবিতে তার উৎস দুটো। এক, অ্যাক্রিশন ডিস্কের পদার্থসমূহ। দুই, গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং এর কারণে ব্ল্যাকহোলের পেছনের অন্য আলোক উৎস থেকে আসা আলো। যেদিক থেকেই দেখা যাবে ছবিটা একই থাকার কথা।
  • | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৪৯78174
  • ধীরেসুস্থে পড়ব। আপাতত ভাসিয়ে দিয়ে যাই অভিজ্ঞ জনতার পড়ার জন্য।
  • sm | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:০০78175
  • খুব ভালো লেখা।সহজবোধ্য।একটা সম্মোহনী ভাব আছে।বাংলায় যাকে মেসমেরাইজিং বলে।এরকম আরো লেখা চাই।
  • sm | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:১৮78176
  • কিছু প্রশ্ন।
    কৃষ্ণ গহ্বর তো বুঝলাম।মানে কাগজ,ম্যাগাজিনে পড়ে যেটুকু ধারণা ছিল,তার সঙ্গে এই ছবি মিলেমিশে যাচ্ছে।
    প্রশ্ন হলো এই কৃষ্ণ গহ্বরের শেষ কোথায়?
    তার পশ্চাদ্দেশ টি কিরকম?
    বিজ্ঞানীরা বলেন কোন কিছু সঠিক জানতে পেছন দিক,ফ্লিপ সাইড বা বাংলায় আগাপাশতলা খতিয়ে দেখা উচিত।
    তা,টেলিস্কোপ খালি সামনের দিকের ছবি তুললো কিন্তু পেছন দিকটি কোথায়?তার স্বরূপ কি?
    দুই,কৃষ্ণ গহ্বর কে যদি পারদ কনার মতো ভাবি।অর্থাৎ একে অপরের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে।
    তবে শেষের সে দিন, মানে কোন এক কল্পিত ক্ষণে মহাশূন্যের সবকটা ব্ল্যাক হোল একসঙ্গে জুড়ে গেলে কি হবে?
  • সুকি | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৪৫78177
  • পড়লাম এবং খুবই ভালো লাগল। সহজ ভাষায় জটিল জিনিস ব্যাখা করা একটা আর্ট বলেই আমার মনে হয়, আর লেখক সেটা করতে পেরেছেন।
  • Chamotkaar | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৪৭78180
  • বেশ লেখা।
    একটা খটকাঃ হকিং রেডিয়েসান তো উইক বলে শুনেছিলুম - ধরা বেশ মুশকিল।
  • শক্তি | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৫১78178
  • বিজ্ঞান খুব কম বুঝি ।এখনো যে খুব বুঝেছি তা নয় ।আমি মিঠুনের লেখা মন দিয়ে পড়ি ।মনে হলো একটু বুঝেছি ।আবার তাপস একজন বিজ্ঞানী ।তারও দেখলাম ভালো লেগেছে ।এইখানে লেখক হিসেবে সার্থক ।
  • i | ***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৫৫78181
  • কবিতা, গল্প, কি বিজ্ঞান বা রাজনীতি বিষয়ে অথবা ক্রীড়া প্রসঙ্গে -অতীব দক্ষ ও স্বচ্ছন্দ এই লেখক।
    সে অনায়াস বিচরণই আবার প্রত্যক্ষ করলাম এই প্রবন্ধে।
    সব সময় মুগ্ধতা, প্রশংসা জানা হয়ে ওঠে না। এবারে না লিখলে অন্যায় হয়।
  • Tতন্বী হালদার | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৬78190
  • অসম্ভব ভালো একটি বিষয়। বিজ্ঞান তো নাই কিছু ই বুঝি বলে নিজের মনে হয় না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বর এ একাকী আমি নামে একটা গল্প লিখছিলাম। তখন কিছু পড়াশোনা করে ছিলাম। এখন আরও অনেক জানলাম
  • Tতন্বী হালদার | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৬78189
  • অসম্ভব ভালো একটি বিষয়। বিজ্ঞান তো নাই কিছু ই বুঝি বলে নিজের মনে হয় না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বর এ একাকী আমি নামে একটা গল্প লিখছিলাম। তখন কিছু পড়াশোনা করে ছিলাম। এখন আরও অনেক জানলাম
  • MB | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৯78182
  • চমৎকার,
    আমি যতদূর জানি হকিং রেডিয়েশন এখনও ডিটেক্টেড হয়নি (একটা ক্লেইম আছে কিন্তু সেটা নিয়ে বিতর্ক চলছে)। আপাতত সবই তাত্ত্বিক প্রমাণ।
  • Tim | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১১78183
  • ছোটাইদি, কি আর বলি, কৃতজ্ঞতা। ঃ-)
  • Sumit Roy | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩৯78184
  • @SM

    লেখাটি খুব ভাল হয়েছে। SM এর প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে আমি কিছু উত্তর দিতে চাচ্ছি। লেখা একটু বড় হয়ে যাবার জন্য দুঃখিত।

    (১) এই কৃষ্ণ গহ্বরের শেষ কোথায়?

    এই কৃষ্ণগহ্বরের শেষ কোথায় বলতে কি কৃষ্ণগহ্বরটি আকারের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন নাকি, কৃষ্ণগহ্বরের মৃত্যু কবে হবে এই ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন?

    আকারের ক্ষেত্রে বলতে পারি, M87 ছায়াপথের এই বৃহদায়তন কৃষ্ণগহ্বরটি আমাদের নিজস্ব ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলের কৃষ্ণগহ্বরটির চেয়ে অনেক বড়। এর ভর সূর্যের ভরের তুলনায় ৬.৫ বিলিয়ন গুণ বেশি এবং এটি ৪০ বিলিয়ন কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ইএইচটি এটির যে ছায়া ধারণ করেছে (ছবিটির ভেতরের কালো অংশটি) তা সেই কৃষ্ণগহ্বরের তুলনায় ২.৫ গুণ বড়।

    কৃষ্ণগহ্বরের মৃত্যুকে ব্ল্যাকহোলের ইভ্যাপোরেশন বলা হয়। হকিং রেডিয়েশন এর তত্ত্ব অনুযায়ী ব্ল্যাক হোল থেকে সামান্য হলেও রেডিয়েশন হয়। তার মানে আস্তে আস্তে ফোটন ও অন্যান্য পার্টিকেল হারিয়ে এর ক্ষয় হবে আর এটি সংকুচিত হবে। এভাবে ব্ল্যাক হোক এর ক্ষয় হতে হতে এটি নিঃশেষ হবে। তবে একটি সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোলের নিঃশেষ হতে 2×10^100 বছর সময় লাগে।

    (২) তার পশ্চাদ্দেশ টি কিরকম? টেলিস্কোপ খালি সামনের দিকের ছবি তুললো কিন্তু পেছন দিকটি কোথায়?তার স্বরূপ কি?

    যেখান থেকেই ছবিটা তোলা হোক একে দেখতে একই রকম লাগবে। এই ছবির ব্যাপারে আর ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্তের ব্যাপারে জানলে হয়তো বিষয়টা একটু পরিষ্কার হবে।

    অবশ্যই, ছবিটি সরাসরি কৃষ্ণগহ্বরের নয়, বরং তার ছায়া (কৃষ্ণগহ্বরের প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে, কেন কৃষ্ণগহ্বরের ছবি নেয়া অসম্ভব)। কৃষ্ণগহ্বর এত শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র উৎপন্ন করে যে, কোন কিছুই, এমনকি দৃশ্যমান আলোও তাদের থেকে পালাতে পারেনা। পরিবর্তে, এই ছবিটি কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্ত এবং তার ভেতরে কৃষ্ণগহ্বরের ছায়াকে দেখায়। এখানে ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরের দ্বারা শোষিত হবার আগে তাকে ঘিরে থাকা ধুলো, গ্যাস, তারা ও আলোর ঘূর্ণি যা কৃষ্ণগহ্বরের প্রান্তে চক্রাকারে (ত্রিমাতৃকভাবে ভাবুন) ঘোরে। ঘটনাদিগন্তের এই উপাদানগুলোর মধ্যে আলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই আলোর ঘুর্ণি না থাকলে ছবিটাই ওঠানো যেত না।

    ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন হল সেই অঞ্চল যেখানে আসলে আর পালানোর উপায় নেই। যখন কোনও বস্তু কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের কাছে আসে, তখন এটি একটি ঘুর্ণায়মান চাকতি (এই ছবিতে চাকতি, আসলে ত্রিমাত্রিক গোলকপৃষ্ঠ) তৈরি করে। এই চাকতির ভেতরের বস্তুগুলো তার কিছু শক্তিকে ঘর্ষণে রূপান্তরিত করবে কারণ এটি সেখানকার অন্য বস্তুগুলোর সাথে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে। এটি চাকতিকে উষ্ণ করে, ঠিক যেমন আমরা ঠান্ডা দিনে আমাদের দুই হাত একসাথে ঘষে গরম করি সেরকম। এই ঘর্ষণের ফলে ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি থাকা বস্তুগুলো অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং এর তাপমাত্রা শতশত সূর্যের তাপমাত্রার মত হয়ে যায়। এই ঐজ্জ্বল্যকেই ইএইচটি বা ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ ধরতে পেরেছে, সাথে ধরেছে কৃষ্ণগহ্বরের ছায়াটিকে।

    এখন কথা হচ্ছে এই ঘটনা দিগন্ত কৃষ্ণগহ্বরের সব দিকেই থাকবে, সামনে পেছনে ডানে বামে উপর নিচে সব জায়গায়। তাহলে যেখান থেকেই দেখুন সেখান থেকেই এরকম ছবিই দেখতে পারবেন, মানে ভেতরে ছায়া আর বাইরের ঔজ্জ্বল্যের ব্যাপারটা দেখবেন।

    (৩) শেষের সে দিন, মানে কোন এক কল্পিত ক্ষণে মহাশূন্যের সবকটা ব্ল্যাক হোল একসঙ্গে জুড়ে গেলে কি হবে?

    এখানে আপনি শেষের সে দিন বা আল্টিমেট ফেইট অফ দ্য ইউনিভার্স এর ক্ষেত্রে ধরেই নিচ্ছেন যে মহাবিশ্ব ছোট হতে হতে এটির সব ছায়াপথ, ব্ল্যাকহোল একসাথে মিলিত হবে, মহাবিশ্ব কলাপ্স করবে, আর বিগ ক্রাঞ্চ হবে। কিন্তু বাস্তবে এর সম্ভাবনা কম। কেন এভাবে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম, আর অন্যভাবে মহাবিশ্বের মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি সেটা আগে বলে নেই, পরে ব্ল্যাক হোল জুড়ে গেলে কী হবে সেদিকে যাব।

    মহাবিশ্বের আকার কয়েক রকম হতে পারে, ওপেন, ক্লোজড আর ফ্ল্যাট। এখন মহাবিশ্ব যদি ক্লোজড হয় তাহলে বিগ ক্রাঞ্চ হবে, মানে সব কিছু কাছে আসতে আসতে কলাপ্স করবে, যেটা আপনি বললেন। যদি ওপেন আর ফ্ল্যাট হয় তাহলে এরকম হবে না। বরং মহাবিশ্ব আরও বড় হতে থাকবে, একে অপরের থেকে দূরে যেতে থাকবে, আর এই দূরে যাবার এক্সিলারেশনও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এখন গবেষণা করে দেখা গেছে (কয়েক বছর হল মাত্র গবেষণাটির) কিছু এক্সপেরিমেন্টাল এরর বাদ দিয়ে মহাবিশ্বকে ফ্ল্যাট বা সমতল বলা যায়। (ওমেগা এর মান 1 হলে ফ্ল্যাট হত, এক্সপেরিমেন্টাল এরর সহ এসেছে 1.00±0.02) তার মানে মহাবিশ্ব খুব সম্ভব ফ্ল্যাট, তা যদি নাও হয় তাহলে ফ্ল্যাটের খুবই কাছাকাছি। এই অবস্থায় মহাবিশ্বের মৃত্যু আপনি যেভাবে বললেন সেভাবে বিগ ক্রাঞ্চ এর মত না হয়ে হিট ডেথ (বা বিগ ফ্রিজ) বা বিগ রিপ এর মাধ্যমেই হবার সম্ভাবনা বেশি।

    এবার আসা যাক ব্ল্যাক হোল গুলো একত্রিত হলে কী হবে সেই প্রশ্নে। মহাবিশ্বের পরিণতি সেরকম না হলেও যে দুটো ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মার্জার হবে না সেটা বলা যায় না। ছায়াপথ, ব্ল্যাক হোল এগুলোর একে অপরের সাথে একত্রিত হবার ব্যাপারটাকে মার্জার বলে। সিমুলেশনে দেখা যায় দুটো ব্ল্যাকহোল সর্পিল গতিতে মার্জ করে, আর মার্জ করার আগে যখন এরা একে অপরের চারদিকে ঘোরে, এই ঘটনাটিকে বলে বাইনারি ব্ল্যাক হোল। এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
    https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/transcoded/a/a4/BBH_gravitational_lensing_of_gw150914.webm/BBH_gravitational_lensing_of_gw150914.webm.480p.vp9.webm

    দুটো ব্ল্যাক হোল মার্জ করলে খুব ভায়োলেন্ট রেজাল্ট আসবে, প্রচুর গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ এর বিকীরণ ঘটবে। এই বিকীরণটা ঘটে মার্জারের পর রিং ডাউনের সময়। মানে দুটো ব্ল্যাক হোল একত্রিত হয়ে একটা বড় ব্ল্যাক হোল হল, এরপর তাদের মধ্যে রিংগিং হবে। রিংগিং জিনিসটা কীভাবে বোঝাই? মানে ব্ল্যাকহোলের গোলকটা ওসিলেট করবে, একবার সম্প্রসারিত গোলক হবে, একবার ফ্যাটেন্ড গোলক হবে। এই ভিডিওটি দেখলে বুঝবেন।


    কিন্তু ধীরে ধীরে এই অসিলেশন কমতে থাকে যাকে বলে রিং ডাউন, মানে এর ড্যাম্পিং হয় আর এটি স্থির হয়। এই রিং ডাউন করার সময়ই গ্র্যাভিটেশনা ওয়েভ এর বিকীরণ হয়। আগে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, ২০১৫ সালে দুটি ব্ল্যাকহোলের মার্জারের ফলে একে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। বিস্তারিত আমার এই দুটি আর্টিকেল পড়লে পাবেন।
    http://www.bibortonpoth.com/2315
    http://www.bibortonpoth.com/2425

    এখানে আরেকটা কথা গুরুত্বপূর্ণ। সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করে। কাজেই এরকম দুটো ব্ল্যাক হোল এর মার্জ করা মানে হল দুটো গ্যালাক্সির মার্জ করা। সুতরাং দুটো গ্যালাক্সির মার্জার হলে কী হবে সেটাও বিবেচনায় আনা উচিৎ। দুটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির মধ্যে মার্জার ঘটলে তাদের তাদের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা খুবই কম, প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুলো যদি কেবল নক্ষত্র নিয়েই গঠিত হত তবে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হতই না বলতে গেলে। কারণ গ্যালাক্সিগুলো অনেক বড়, দুটো নক্ষত্রের মধ্যে প্রচুর দূরত্ব থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গ্যালাক্সিগুলো কেবল নক্ষত্র নিয়েই গঠিত হয় না, দুটি নক্ষত্রের মধ্যে অনেক গ্যাস ও ধূলিকণা থাকে। ছায়াপথগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলে দুই ছায়াপথের মহাকর্ষের ফলে এই পদার্থগুলোর মধ্যে ইন্টারেকশন ঘটতে পারে, যার ফলে গ্যালাক্সিগুলোর আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়।যেমন দুটো সর্পিলাকার ছায়াপথ একত্রিত হয়ে উপবৃত্তাকার ছায়াপথে পরিণত হতে পারে। আবার ছায়াপথগুলোতে থাকা গ্যাসের মধ্যে ফ্রিকশনও ঘটতে পারে, যারফলে শক ওয়েভ ছড়াবে ও তার ফলে নতুন নক্ষত্রও তৈরি হতে পারে। যাই হোক, একটা জিনিস মাথায় রাখার দরকার, তা হলে গ্যালাক্সিগুলোর মার্জিং খুব অল্প সময়ের ঘটনা না, এই মার্জিং হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগে যায়। গ্যালাক্সি মার্জিং নিয়ে এই ছবিটা দেখতে পারেন:
  • MB | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৪78185
  • সুমিতবাবু,

    লেখা আর প্রবন্ধের লিন্কের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখবেন।
  • Sumit Roy | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৩৭78186
  • ম্মিঠুন বাবু, আপনাকেও ধন্যবাদ এত সুন্দর লেখাটি লেখার জন্য। নিশ্চই লিখব।
  • | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৪৫78187
  • খুব ভালো লেগেছে মিঠুন। অভিনন্দন। সুমিত বাবু কে ধন্যবাদ। সুমিত বাবু গুরু চন্ডালি তে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখুন, বিষয়, যা আপনার খুশি , বিজ্ঞান হলে বেশি খুশি হব।
  • Sumit Roy | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:০৩78191
  • @খ, ধন্যবাদ। আমি লিখছি নিয়মিত। এই গত পরশুই তো নোতরদাম অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এখানে একটা লেখা দিলাম। বিজ্ঞান বলতে সেখানে, এরকম ক্যাথিড্রালে কিকরে আগুন লাগতে পারে, আর আগুন লাগলে কীরকম ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সেই বিষয়ে কিছু আলোচনা ছিল, বিজ্ঞানের বাইরেও ছিল।

    @sm, প্রশ্ন করুন, উত্তর জানলে সময় করে অবশ্যই উত্তর দেব। এই সুযোগ, মহাবিশ্ব, বিশেষ করে ব্ল্যাক হোল নিয়ে আলোচনা সাধারণ আলোচনার পরিসরে অনেক কম হয়।

    আর আমাকে কেউ দয়া করে "সুমিত বাবু" বলে ডাকবেন না, শুধু সুমিত বলে ডাকলেই ভাল হয়। :)
  • sm | ***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:২৭78188
  • অসংখ্য ধন্যবাদ সুমিত বাবুকে।আপনার লেখা পড়ে ও দেখেই বোঝা যায় ভীষণ গুণী মানুষ।লেখার মাধ্যমেও আপনার সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হলাম।
    আরো কিছু নভিশ প্রশ্ন আছে।পরে করবো।
    আলোচনা চলুক।
    লেখক কেও ধন্যবাদ এই বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য।
  • দ্রি | ***:*** | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৭:৩৪78192
  • আচ্ছা, ব্ল্যাক হোলের এই ছবিটা কতদূর বিশ্বাসযোগ্য? এটা তো আলো দিয়ে তোলা ছবি নয়। রেডিও ওয়েভ দিয়ে তোলা। এবং রিকন্স্ট্রাক্টেড। রিকন্স্ট্রাকশান প্রোসেসটাও কি খুব ট্রান্সপারেন্ট?

    এটা কি রিপ্রোডিউসিবল?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন