এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সুভাষ নন, ওটেনকে মারেন অনঙ্গমোহন

    Koushik Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ জুলাই ২০২৫ | ১৩৯ বার পঠিত
  • পুস্তক সমালোচনা

    বই: সুভাষ নন, ওটেনকে মারেন অনঙ্গমোহন
    লেখক: সুকুমার মিত্র
    প্রকাশক: তহমিনা খাতুন স্মৃতিরক্ষা কমিটি, নতুনপুকুর দাসপাড়া, ছোটোজাগুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ।
    যোগাযোগ: ৯৮৩০৩৫৩৫৮০
    ইমেল: sukumar.mitra14march@gmail.com
    ISBN: 978-93-92251-94-8
    বিনিময়: ১৫০ টাকা
    প্রথম প্রকাশ: ২৯ শে জুন ২০২৫

    লেখক পরিচিতি: সুকুমার মিত্র আদতে অশোকনগরের (হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা) বাসিন্দা। পরবর্তী কালে শ্রী চৈতন্য কলেজের পড়ুয়া। স্থানীয় পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য স্তরের বহুল প্রকাশিত দৈনিকের সাংবাদিকতা করেছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বহু জাতীয় ও আন্তর্জতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর লেখক স্বত্তার বিকাশের প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৯১ সালে প্রকাশিত বই "মন্দির-মসজিদ বিতর্ক: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাজানো গল্প"। শ্রী মিত্র চিরকালই একটু আলাদা ধরনের লেখক ও গবেষক। প্রান্তিক বিষয় যা নিয়ে সাধারণত একাডেমিকদের বিশেষ আগ্রহ থাকে না, সেই সব বিষয়ে তাঁর আগ্রহ চুড়ান্ত। তাঁর গবেষণা প্রবন্ধগুলি যে কোনও সফল গবেষকেরও উৎসাহ এর কারণ হতে পারে। "উত্তর ২৪ পরগনার নদ - নদী ও প্রাচীন সভ্যতা" প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। গোটা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ঘুরে সমস্ত নদনদীর উৎস ও তাদের বিলয় নিয়ে এই গবেষণা আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্রচার বিমুখ এই লেখক রয়ে গেছেন প্রাপ্য স্বীকৃতি ছাড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত ডিগ্রী ছাড়াও যে এই রকম উচ্চ-মানের গবেষণা করা সম্ভব তা শ্রী মিত্রর প্রকাশিত বইগুলি পাঠকরা পড়লেই বুঝতে পারবেন এই সমালোচক কোনও অতি উক্তি করছেন না! বর্তমান বইটি ও সেই ধারার নতুন সংযোজন।

    বাংলা ভাষায় প্রকাশিত তথ্যনিষ্ট গবেষণা প্রবন্ধ খুবই কম, বিশেষ করে সময়ের গর্ভে তলিয়ে গেছে এই রকমের বিষয় নিয়ে।

    লেখক সুকুমার মিত্র যে বিষয় নির্বাচন করেছেন তা খুবই জনপ্রিয় ও প্রায় লোকগাথাতে পরিনত একটি ব্রিটিশ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনা যার সঙ্গে বাঙালির গর্বের বিপ্লবী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নাম বিজড়িত। ঘটনাটি হলো "Oaten incident" অর্থাৎ ১৯১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ফার্লে ওটেন কে নিগ্রহ করা। এই প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেছেন ওই ঘটনায় নেতাজির সহযোদ্ধা "বাঙাল" ও শ্রীলেটি অনঙ্গমোহন দামের ভূমিকা। বিপ্লবী অনঙ্গমোহনও সুভাষের মতোই কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন, পরবর্তী সময়ে গ্রেফতারও হন। এই বইতে তথ্য দিয়ে শ্রী মিত্র দেখিয়েছেন যে, ঘটনায় মূল ভূমিকায় ছিলেন বিপ্লবী অনঙ্গমোহন। একথা নেতাজিও স্বীকার করেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও বিপ্লবী অনঙ্গমোহন স্বদেশী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্র ১৯০৫ সাল থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।"ওটেন ঘটনা"র পরও এই সক্রিয়তা বজায় থাকে। '৪৭ এর পর তিনি তাঁর জন্মস্থান শ্রীহট্ট থেকে কলকাতা, তারপর বেশ কিছুকাল অশোকনগর (উ: ২৪ পরগনা) এ অতিবাহিত করেন। শেষ পর্যন্ত সোদপুরে ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

    শ্রী মিত্র তাঁর বইতে বার বার আক্ষেপ করেছেন যে এই ঐতিহাসিক বিপ্লবীকে না অশোকনগরের বর্তমান প্রজন্ম না সোদপুরের মানুষ মনে রেখেছেন বা তাঁকে নিয়ে গর্বিত বোধ করেন। এই বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া বিপ্লবীকে পুনরুদ্ধার করার জন্য শ্রী মিত্রকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে যখন বর্তমানের কলেজের ছাত্রনেতাদের অবস্থা সম্পর্কে পাঠক মহল এর সম্যক ধারণা আছে। বাংলার ছাত্র-সমাজ ব্রিটিশ যুগ থেকেই যে নেতৃত্বর জন্ম দিয়ে ছিল তার অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র এর দৃষ্টান্ত বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম। আশাকরি পাঠকসকল বইটি পড়ে সমৃদ্ধ হবেন।

    শ্রী মিত্র এই বই উৎসর্গ করেছেন তহমিনা খাতুনকে তাঁর ৫৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে। বিশিষ্ট নারীবাদী, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াকু ও লেখিকা তহমিনা সুকুমার মিত্রের সহযোদ্ধা ও সহধর্মিনী (স্ত্রী অর্থে, কারন দুজনেই পুরোপুরি অধার্মিক)। লেখক বই প্রকাশের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন The Statesman প্রত্রিকার কমলেন্দু ভট্টাচার্য, সাংবাদিক অঞ্জন সাহার। বইটির প্রুফ সংশোধন করেছেন সাংবাদিক দিলীপ রায় (মানিক)। গেটওয়ে পাবলিশিং এর তন্ময় ধর দ্রুত বইটি প্রকাশ করেছেন। তিনি ঋণ স্বীকার করেছেন বিপ্লবী অনঙ্গমোহনের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রী আশিসকান্তি দাম, শ্রী উৎপল আইচ, নরেন্দ্রনারায়ন চক্রবর্তীর লেখা নেতাজি সঙ্গ ও প্রসঙ্গ, শ্রীহট্ট সম্মিলনী কলকাতা,শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ বেলুড় এবং দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার। বইটি সম্পাদনা করে লেখক কে সাহায্য করেছেন বিশিষ্ট লেখক অপূর্ব সাহা।

    শ্রী সুকুমার মিত্র আদতে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক। তিনি দৈনিক স্টেটসম্যান সহ বহু নামী সংবাদ পত্র সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৫ জুলাই ২০২৫ ১১:১৯732294
  • বেশ ইন্টারেস্টিং। এই বিষয়ে আর একটা বই আছে ''সুভাষ কি ওটেনকে মেরেছিলেন''।
    সুকুমার মিত্রের বইগুলো এই মেলে বা নম্বরে যোগাযোগ করলে পেতে পারি?
    আর ওঁর অন্য বইগুলো কি এখন পাওয়া যায়?
  • Koushik Chatterjee | ০৫ জুলাই ২০২৫ ১১:৪১732295
  • @কৌতূহলী ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। ওই মেলে বা নম্বরএ যোগাযোগ করলে পেতে পারেন। অন্য বই গুলিও সম্ভবত পাওয়া যাবে।
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৫ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৪732296
  • ধন্যবাদ কৌশিকবাবু
  • Koushik Chatterjee | ০৫ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৫732297
  • " মন্দির - মসজিদ বিতর্ক: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাজানো গল্প" বইটি ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর দাঙ্গা শুরু হবার আগেই লেখা।
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ০৫ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৯732298
  • ১৯৯১ সাল, মানে তখন দানা পাকছে, ঠিক একবছর পরেই রায়ট শুরু হবে সারা দেশে। ১৯৮৬ থেকেই দানা বাঁধা শুরু হয় রাজীব গান্ধীর তালা খুলে দেওয়ার পর থেকে। 
    এ নিয়ে অশোক মুখোপাধ্যায়ের মন্দির মসজিদ বিসম্বাদ পড়েছি, এটাও পড়ার ইচ্ছে আছে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন