এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • চক্রান্ত চক্রান্ত

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২৮ জুন ২০০৯ | ২২২২ বার পঠিত
  • চক্রান্ত একটা আছেই, কারণ, কেস খুবই গোলমেলে। একদিকে ভারত সরকার গোটা দেশে মাওবাদীদের নিষিদ্ধ করার পর সিপিএমের বড়ো কর্তা প্রকাশ কারাত বড়ো গলায় জানালেন, যে, তাঁরা এই নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রী সেই আইনে লোককে বাটাম দিয়ে জেলে পুরছেন। একদিকে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমেই নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাব, অন্যদিকে আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, আসলে কেন্দ্র নামক অবোধ শিশুকে সিপিএম ন্যাজে খেলাচ্ছে। একদিকে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিন্দায় মুখর, অন্যদিকে প্রখ্যাত বিদ্রোহী গায়ক-সাংসদ কবীর সুমন চুপচাপ ঘরে বসে গান-বাজনা করছেন। একদিকে "মাও-মমতা-মহাজোট' এর অভিযোগ, অন্যদিকে "মাওবাদ-টাওবাদ সব সিপিএমের চক্রান্ত'। একদিকে "অপারেশন লালগড়' নামক যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আপামর মিডিয়ার সমর-বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা, অন্যদিকে জঙ্গল মহলে মিলিটারি বুটের পদচারণা। খবরের কাগজে পড়া যাচ্ছে, যে, মাওবাদী দমনে মার্কিন উপগ্রহ প্রযুক্তিরও নাকি সাহায্য নেওয়া হয়েছে, যথারীতি, মার্কিনবিরোধিতার পেটেন্ট নেওয়া আজিজুল হক সে ব্যাপারে নীরব।

    সব মিলিয়ে, চক্রান্ত একটা আছেই। কিন্তু কোন ব্যাটা সেটা করেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। ওবামা-মনোমোহন-বুদ্ধদেব-আজিজুল জোট, নাকি মমতা-মাওবাদী-অপর্ণা সেন-এলটিটিই-সিয়া জোট এই লালগড়ের চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বাজারে পুলিশ কর্তা দলবল নিয়ে আদিবাসী হয়ে ক্যামুফ্লেজ করে মাওবাদীদের বাড়ি-বাড়ি ঢুকে গুচ্ছের পিটিয়ে আসছেন। কারণ, শোনা যাচ্ছে, মাটিতে নাক ঠেকিয়ে দন্ডি কেটে পঁচিশ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে লালগড় পৌঁছনোর পর, তিনি মনে করছেন, পুরোটাই আসলে ছত্রধর মাহাতোর চক্রান্ত। পুরোটাই কায়দা করে পুলিশকে লাকে খত দেওয়ানোর ছক। এবং এই চক্রান্ত তিনি ধরে ফেলেছেন। এবার ছত্রধরকে দেখতে পেলেই উচিত শিক্ষা দেবেন। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য তাঁর সঙ্গে একমত নন। একদল বলছেন, কে জানে, এটা আসলে বিমান বসুর চক্রান্তও হতে পারে। ছোটো থেকে বিমান "বাংলা হবে ভিয়েতনাম' বলে স্লোগান দিয়েছেন, বাংলাকে ভিয়েতনাম বানানো তাঁর বয়:সন্ধির স্বপ্ন। কদ্দিন গদী থাকবে কে জানে, আগেভাগেই তাই "বাংলা হল ভিয়েতনাম' পালার এই সুপারহিট প্রযোজনা, রিমেক হলেও, যা, যথাযথ এবং ছোটো স্কেলে যতটা করা যায়, রিয়েলিস্টিক। একে তো জায়গার নামই লাল গড়, তার উপরে জঙ্গলে জঙ্গলে ছয়লাপ অবিকল মিনি ভিয়েতনাম, সেই জঙ্গলের মধ্যে একদিকে আধ ন্যাংটো আদিবাসী আর বর্বর "কমি'দের বুবিট্র্যাপ আর গেরিলা যুদ্ধ, অন্যদিকে হাইফাই সৈন্যবাহিনী, কামান, মর্টার, হেলিকপ্টার প্লেন। পালার শেষদৃশ্যে যেই জিতুক বা না জিতুক, মাওবাদী নেতা কিষাণজীর "সেনারা ঢুকছে বটে, কিন্তু বেরোবে কি?' হুমকিটিও অবিকল এক। যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক।

    অন্য আরেকদল বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, বিমান বসু টসু ফালতু কথা, আসলে পুরোটাই একটা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। শারদ পাওয়ার থেকে শুরু করে গ্রেগ চ্যাপেল পর্যন্ত আইসিসির একটা বড়ো অংশ এর সঙ্গে যুক্ত। আইসিসি শুনে চমকে উঠবেন না। ক্রিকেটের সঙ্গে এই গোলমালের সম্পর্ক অতি নিবিড়। শুধু লালগড়ে নয়, সেই নন্দীগ্রামের আমল থেকেই এটা দেখা যাচ্ছে। ২০০৭ এর কথা স্মরণ করুন। সেই ১৪ই মার্চে পুলিশ নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়েছিল, আর এর তিনদিন পরে ভারত বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল। সব ঠিকঠাক চললে ভারতের বিশ্বকাপ জয়, নিদেনপক্ষে ফাইনালে ওঠার কথা ছিল, আর বিশ্বজয়ের আনন্দে ভেসে যাবার কথা ছিল এইসব খুচরো হাবিজাবি পুলিশি অভিযান আর গোটা কতক চাষাভুষোর মৃত্যুর খবরের। কিন্তু তা না হয়ে, লক্ষ্য করুন, ভারত প্রথম রাউন্ডেই গাড্ডু খেল, আর যেসব অবোধ মুখগুলোর ক্রিকেট দেখে পাকিস্তানের মুন্ডপাত করে ফাটিয়ে দেবার কথা ছিল, সব ব্যাটা জড়ো হল নিউজ চ্যানেলের সামনে। নন্দীগ্রাম নিয়ে হট্টগোল হল, নিউজ চ্যানেলের টিআরপি বাড়ল, বুদ্ধিজীবীদের নাচন-কোঁদন হল, মাঝখান থেকে মাঠে মারা গেল নন্দীগ্রাম দখলের পবিত্র পরিকল্পনা। সে সময়ে এটাকে অনেকে কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু, এবার আর সেটা বলা যাচ্ছেনা। লক্ষ্য করে দেখুন, লালগড়ে অভিযানের আগেও টি টোয়েন্টিতে সেই একই ঘটনার রিপিট শো। অনেক আশা জাগিয়ে ধোনি বাহিনী খেলা শুরু করল, মিডিয়ায় হট্টগোল পড়ে গেল, পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট গজল্লার চোটে কান পাতা দায় হল। ওমা তারপর কোথায় কি, সেই প্রথম রাউন্ডেই গাড্ডু, আর নিউজ চ্যানেলে মাওবাদী বিকাশের প্রাদুর্ভাব। নির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, একদল বিশেষজ্ঞ, এর পিছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্‌চিত। এ এক বিরাট ষড়যন্ত্র। বাঙালিকে হীনবল করে দেওয়াই যার লক্ষ্য। এই কারণেই ভারতীয় ক্রিকেট টিম থেকে প্রথমেই বাদ দেওয়া হয় সৌরভ গাঙ্গুলীকে। কোচ করা হয় গ্রেগ চ্যাপেলকে। হীনবল করে দেওয়া হয় ভারতীয় ক্রিকেট শক্তিকে। যাতে করে, প্রয়োজনের সময় ক্রিকেট বাহিনী আর পুলিশ বাহিনীর পিছনে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে না দিতে পারে। ডালমিয়া থেকে গ্রেগ চ্যাপেল, শারদ পাওয়ার থেকে আইসিসি, সব্বাই এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত।

    কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য চক্রান্তটিকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখছেন। একটা রাজ্য নিয়ে ভাবলেই হয়না, তাঁদের গোটা দেশ চালাতে হয়। তাঁরা উপর থেকে বড়ো স্কেলে দেখেন। লোকাল নয়, গ্লোবালে বিশ্বাস করেন। তাঁদের কাছে পুরোটাই দেশের "আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা' বিঘ্নিত করার জন্য মাওবাদীদের চক্রান্ত। লালগড় তো আর দেশে একটা নয়। না-না গুলতাপ্পি দেওয়া হচ্ছেনা, মিডিয়া রিপোর্ট থেকে যতদূর জানা যাচ্ছে, যে, লালগড় শুধু পশ্‌চিমবঙ্গেই নেই। এদিকে যখন বাংলার বুকে আধ ন্যাংটো আদিবাসীদের "বিদ্রোহ' ছুটিয়ে দিতে হাজারে হাজারে সেনা নেমেছে সমরে, আকাশে উড়ছে হেলিকপ্টার আর মাটিতে হামাগুড়ি দিচ্ছেন পুলিশ সুপার, ঠিক তখনই উড়িষ্যায় চুপচাপ শুরু হয়ে গেছে আরেকপিস "লালগড়' কান্ড। একা রামে রক্ষে নাই, রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে শ পাঁচেক কিলোমিটার দূরে দেখা যাচ্ছে আরেকটি সুগ্রীবের দাপাদাপি। কোরাপুট জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এবং, এখানেও, তুলকালাম বাধিয়ে, যথারীতি, কালপ্রিট স্থানীয় আদিবাসীরা, যাদেরকে মাওবাদীরা "ভুল বোঝাচ্ছে'। কোরাপুটের নারায়নপেটনা ব্লক এবং সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় আদিবাসীদের "চাষী মুলিয়া আদিবাসী সংঘ' কেটে দিয়েছে সমস্ত যোগাযোগের রাস্তা। ফেলে দেওয়া হয়েছে গাছ। আদিবাসীরা প্রশাসনকে আর পাত্তা দিচ্ছেনা। নিজেদের "দখল' হয়ে যাওয়া জমি পুনর্দখল করছে স্রেফ ঝান্ডা পুঁতে। আর "দখলদার' অ-আদিবাসীরা দলে দলে এলাকাছাড়া। অবরোধ সরাতে যাওয়া পুলিশের গাড়ি উড়ে গেছে মাওবাদী মাইনে। এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে আছেন পুলিশ, "বিশেষ বাহিনী' এবং সিআরপিএফ'র তিন শতাধিক জওয়ান।

    এই দেশব্যাপী মাওবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে, কেন্দ্রীয় সরকারের ওষুধ একটাই। কেটে যাক বা ছড়ে, পুড়ে যাক বা উড়ে, ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার করুন সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম। ম্যালেরিয়া হোক বা ডায়েরিয়া, জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে ঠুসে দিন একই রকম তরতাজা গরমাগরম অ্যান্টিবায়োটিক। দরকারে ডোজ বাড়ান। পুলিশে না পোষালে সিআরপিএফ। তাতে না হলে কোবরা, গ্রে হাউন্ড, এনএসজি, বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। কোবরার ট্রেনিং এর জন্য এক কথায় দিয়ে দিন ১৩০০ কোটি টাকা। বেড়ালের বিয়ে অর্থাৎ ভারতবাসীর ইউনিফায়েড আইডির জন্য খরচা করুন লক্ষাধিক কোটি টাকা। হাড়জিরজিরে কালো বডিতে এলএমজির বুলেট ঠুসে দিয়ে চেখে দেখুন কালো শরীরে লাল রঙের অনুপম কনট্রাস্ট। মানুষকে বাঁচাতে যেখানে পয়সা যায়না, সেই কোরাপুট-কালাহান্ডি-লালগড়ে মানুষকে মারতে খরচা করুন জলের মতো টাকা, কেননা, কে না জানে, মানুষের চেয়ে গণতন্ত্রের দাম অনেক বেশি।

    এখানে প্রাসঙ্গিকভাবেই বলে রাখা ভালো, কোরাপুটে লোকগুলো খামোখা জমি দখল কেন করছে, সে খবর না পাওয়া গেলেও, এই সর্বভারতীয় চক্রান্ত সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ খবর আমরা পাচ্ছি জাতীয় ও আঞ্চলিক মিডিয়া থেকে। যেমন, "বাজারি পত্রিকা' আনন্দবাজার এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, যে, বঞ্চনা, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ নয়, পুরোটাই আসলে পাতি গুন্ডামি, "লুটপাট' আর "শক্তি জাহির' করা। ""দু'দিনের সফরে চিদম্বরমের কোরাপুট, মালকানগিরি, রায়গড়, নবরঙ্গপুর ও কন্ধমাল ঘুরে দেখার কথা। চিদাম্বরমের সফরের একেবারে মুখেই ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানোটা মাওবাদীদের তরফে সরকারের প্রতি বিশেষ "সংকেত জ্ঞাপন' বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে রাজ্য পুলিশ।'' দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্য অনার্যদের এই চক্রান্ত সম্পর্কে আমাদের অবহিত করার পর, আনন্দবাজার জানাচ্ছে, যে, প্রশাসন কড়া হাতেই দমন করবে বিদ্রোহীদের। অন্যদিকে, বামদিকে ঘেঁষা "হিন্দু' জনৈক সিপিএম নেতাকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, চক্রান্ত একটা আছে বটেই, কিন্তু সেটা ঠিক মাওবাদীদের নয়, বরং বুর্জোয়াদের চক্রান্ত। "উড়িষ্যার মাওবাদীরা বুর্জোয়াদের গেমপ্ল্যানের ফাঁদে পড়ছে', জানিয়ে হিন্দু আমাদের এই চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন করে দিচ্ছে।

    মানে, চক্রান্ত একটা আছেই। কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, ডান হোক বা বাম, বঙ্গ হোক বা উড়িষ্যা, সে নিয়ে সব্বাই একমত। চক্রান্তটা কি অবশ্য ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। কারণ কেস খুব খুবই গোলমেলে। এই বাজারে, বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে, নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। অনেকে সেগুলিতে গুরুত্ব দিয়ে বিভ্রান্তও হচ্ছেন। বুর্জোয়া চক্রান্ত সম্পর্কে হিন্দু আমাদের সতর্ক করে দেবার পর, "হিন্দু' কিকরে একটা বামঘেঁষা সংবাদপত্রের নাম হয়, এই নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে এটা কি বামেদের বিরুদ্ধে বিজেপির চক্রান্ত? "দুর্গের ভিতর থেকে দুর্গ দখল' করার জন্য? প্রথম দর্শনে সন্দেহটা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও, দুর্গ-দখল বিশেষজ্ঞ শ্রদ্ধেয় শ্রী আজিজুল হক এ নিয়ে কিছু না লেখায়, আমরা নিশ্‌চিত হতে পারি, যে, তেমন কিছু নয়। দুর্গ দখল টখল, অন্তত: এখুনি হচ্ছেনা। এই একটিই নয়, বিভ্রান্তির সুযোগে অন্যান্য গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে। বামপন্থী কবি শ্রী জয়দেব বসু, আজকাল নামক একটি পত্রিকায়, করেঙ্গে প্লাস মরেঙ্গে, অর্থাৎ লড়ুন এবং মরুন, এর ডাক দেবার পর অনেকে ভেবেছিলেন, যে, সিপিএম আসলে আরেকটি বিপ্লবের চক্রান্ত করছে। কিন্তু সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, সেটিও আসলে গুজব। সিপিএমের দৌড় আসলে হার্মাদ বাহিনী থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যন্ত। এবং ঐ উদ্দীপক স্লোগানটি আসলে আধা-সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল, যার মূল কথা হল, হে আধা সামরিক ও পুরো সামরিক বাহিনীর ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, আপনারা লড়ুন ও মরুন, আমরা বাইক নিয়ে আপনাদের পিছনে আছি। এবং এর সঙ্গে চক্রান্তের কোনো সম্পর্ক নেই।

    কোনো সন্দেহ নেই, যে, এসব গুজব আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঘোলা জলে মাছ ধরার চক্রান্ত। আসল চক্রান্তটিকে লুকিয়ে ফেলার চক্রান্ত। আসল চক্রান্তটা কি অবশ্য ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। এখনও। মাওবাদী-মমতা-সুশীল সমাজ যে বদের বাসা সেটা বিলক্ষণ বোঝা গেলেও, ঠিক কোন চক্রান্তের কারণে, দলে-দলে কালো, হাড় জিরজিরে শরীরগুলি "ধুর শালা যথেষ্ট হয়েছে এই বেঁচে থাকা' বলে বিনা দ্বিধায় দলে দলে হাতে মান্ধাতার আমলের তীর-ধনুক বা হাল আমলের বন্দুক তুলে নিচ্ছে, সেটা অজানাই থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ওটা আসলে উন্নয়নের সমস্যা। তাতেও পুরো ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। আদিবাসী এলাকায় অনুন্নয়নের সমস্যা নতুন নয়। কিন্তু বিশেষ করে, ঠিক, এই একবিংশ শতাব্দীতে, যখন উন্নয়নের রথ পাঁই পাঁই করে দৌড়চ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস, যে, তা থেকে যে টুকু চুঁইয়ে পড়বে, তাতেই এইসব চাষাভুষো আদিবাসীদের বিলক্ষণ উন্নতি হবে, ঠিক সেই সময়েই কেন, উন্নয়নের বিরুদ্ধে লোকগুলো বিদ্রোহ করছে সেই চক্রান্তটা বোঝা যাচ্ছেনা। নাকি এই অশিক্ষিত গরীবগুর্বো হাফ নেকেড জানোয়ারগুলোর উন্নয়ন বলে যে ব্যাপারটা চালানো হচ্ছে, তাতেই আপত্তি? কে জানে। তা যদি হয়, তবে ওদের মাথায় বুলেট ঠুসে দেওয়াই ঠিক আছে। মালগুলো দেশে থাকবে, উন্নয়নে হ্যাঁ বলবেনা, জঙ্গলে থাকবে, গণতন্ত্রের মর্ম বুঝবেনা, চিরকাল গরুর মতো হাম্বা বলবে, সুইট ইংলিসে হাউ আর ইউ ডুয়িং বলবেনা, ওদের টিকিয়ে লেখে লাভ কি? কৃষি থেকে শিল্প, জঙ্গল থেকে শহর, এটাই সভ্যতার পথ। সভ্যতার খাতিরে আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া সর্বত্র অ্যাবরিজিনিদের খতম করা হয়নি? আমরা শাইনিং ইন্ডিয়া, খাচ্ছি দাচ্ছি, ইন্টারনেটে তক্কো করছি আর চক্রান্ত খুঁজছি, আসুন আপাতত: একটু চোখ বুজে থাকি। এখন জঙ্গলে চিরুনি অভিযান চলছে। টিপে টিপে মারা হচ্ছে বিপথগামীদের। ওসব আবোলতাবোল জিনিসের দিকে, আমাদের নজর না দিলেও চলবে।

    জুন ২৯, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২৮ জুন ২০০৯ | ২২২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন