কিছু গুরুগম্ভীর বিতর্কপ্রজনন পদ্ধতি জাতীয় দামড়া শব্দসকল লিখে ফেলেছিলাম বিরক্ত হয়ে, কিছু আগে। ওসব দুষ্টু কথাবার্তা থাক। আমি অনাবিল নামক দেবতা, যা হারিয়ে যাচ্ছে বা বুজিয়ে বাড়ি করা হচ্ছে, তার শরণাগত হতে স্মার্ত হলাম। প্রত্যেক বছর বইমেলার সময় দুটি অবধারিত কথা মাথায় আসে ১) শালা, এ বছর বইমেলাও দেখে ফেলতে পারলাম তাহলে!! ২) সামনের বছর বইমেলায় পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব বজায় রাখা? নো চান্স!! বস, লাস্ট বইমেলা হয়ে গেল লাইফে। দুর্গাপুজোর সময়েও এই এক, দুই আসে নাচতে নাচতে। সে কথা থাক। জীবনের নানান বিশুদ্ধ ভিরকিটিগুলি ডকুমেন্টাশান করা হয়নি, বড় ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ধমক ধামক দিতে গেলে অর্জুন প্রায়শই বলে “অর্জুন একটা গাছের নাম” (ভিজয় দীননাথ চৌহান স্টাইলে)।
অর্জুন ডার্লিং, আমার ভারি ভালো লাগে। ভাবি আম্মো বলবো, কিছু ভুল করলেই, অর্জুনের কান পকড়ে ‘বুঝলি, শিশু একটা গাছের নাম’। পাশ থেকে ইন্দ্রকণ্ঠ ভেসে আসে, ‘হ্যাঁ, সাঁওতাল পরগনায় দেখা যায়, ভল্লুক ঘামাচি হলে তাতে পিঠ চুলকোতে যায়’।
এই তো আমার গেছো হওয়ার সমস্যা। জীবনে মজা দিয়ে দিয়ে মারার প্ল্যান করেছে শ্রী শ্রী যমবাবা। এ্যতো মজা আসে যে স্রোতের সাঁতার, মজার সাঁতার একাকার হয়ে যায়। একলামানুষের এ্যাত মজা! হ্যামলেটের পরণে লুঙ্গির মতো বেয়াড়া কম্বো হওয়ার হাই চান্স থাকে। তাও হলোনা। কারণ দারু খেয়ে দেবদারু হওয়ার কথা মাথাতেই আসেনা, বরং ট্যাক্সিওয়ালার কাছে দারুগা হতে ভারী ভালো লাগে। টু বি অর নট টু বি বলতে বলতে থ্রি সি বাই ওয়ান ধরে বাড়ি ফেরার মতো কাব্যিক মহাকীর্তিও করা হলোনা কোনদিন (উদয়ন ঘোষ আর মোহিত চট্টোপাধ্যায় করতেন, টুবি অর নট টুবি বলতে বলতে টুবি বাস ধরতেন ওয়েলিংটন থেকে। একবার সেই বাসে পাদানিতে দাঁড়িয়ে মোহিত চট্টোপাধ্যায় কাতরভাবে কন্ডাকটরকে জিজ্ঞেস করলেন, “দাদা, আমি কি উঠেছি?”, উত্তর না পেয়ে একের পর এক বসন্ত প্যাসেঞ্জারকে সেম প্রশ্ন। জীবনজিজ্ঞাসা। শেষে একজন নাকে রুমাল, মুখে বিরক্তি, “হ্যাঁ উঠেছেন, উঠে ধন্য করেছেন"। মোহিত পালটা, “আপনি আমাকে চেনেন?”। “না চিনিনা, এইসব মাতাল পাগলদের চিনতেও চাইনা”। “তাহলে কী করে বললেন আমি উঠেছি? ইউ লায়ার!!!”। বোঝো কাণ্ড!!!) তো অর্জুন, ডিয়ার অর্জুন, আমার আর শিশুগাছ হওয়া হলোনা। বড় হাসি পায় যে ! আর হাসলে গাছের শিকড় নড়ে যায়। বলবি এবার, তোর পেছনে কেন লাগলাম হঠাৎ! নারে, এই ভোরে গোমড়া গোমড়া কিছু লেখার প্রাচিত্তির করতে বসে হঠাৎ তোর কথা মনে হলো। মনে হওয়ামাত্র অর্জুনগাছ মনে এল। অর্জুনগাছ মনে এলেই আমার অর্জুন গাছের ছাল সেদ্ধ জলের কথা মনে পড়ে, মাগো মা, কী বিকট বিটকেল জিনিস, আয়ুর্বেদে আছে নাকি, আমাকে খেতে হয়েছিল...
নাঃ এ অবান্তর আর নয়। ফের হাসি আসে। আশিকি আশিকি হাসি (কিঞ্চিৎ বিপর্যয় করে হাসিকি হাসিকি আসি বললেই আমার উড়েপন উজ্জ্বল হয়ে উঠতো) ফিরে যাই স্মৃতি স্টেজে, স্মার্ত, সামান্য দিন পূর্বে... কলকাতা বইমেলা ২০১৪, একটি শিশুমন্তাজ। উপভোগ করা যেতে পারে কি??
মোবাইল হারিয়ে গেছে, ম্যাচিউরিটি হারিয়ে গেছে, জয়দীপও নেই, আমি একা একা লিখতে পারি -
আজ এসেছে নীলাদ্রিদা... ওহ্, কী আনন্দটাই না হয় যখন স্যার দেখি, কাঁচাপাকা চুল, মরিচ মরিচ গোঁফ... আর সমস্ত অন্তরাল অবধি কী আনন্দিত হয়... আমার কোন ছেলে বা মেয়ে বেঁচে নেই, আমার নীলাদ্রিদা আছে, বুড়িদি আছে, আমার কুটুম, ইষ্টিকুটুম বৃষ্টি আছে, ল্যাম্পপোস্ট আছে, লাইটহাউস আছে (ল্যাম্পপোস্টের অভিযোগ, লাইটহাউস নাকি সবকিছু খায়, সব খেয়ে নেয়, তাই ও খেতে পায়না)... আমার আজ ফোন হারালো, চুরি গেল... আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভেউভেউ করে কাঁদলো... কারণ আমাদের পোস্টার নাকি কে খেয়ে নিয়েছে সবটা, কৌরবের স্টলে... নীলাদ্রিদা আমার বাড়িতে থাকার কথা ছিল... আমিও নীলাদ্রিদাকে শিয়ালদহ থেকে আনবো বলে স্বপ্ন দেখলাম, কারণ আমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম... নীলাদ্রিদা ফোন করে না পেয়ে উঠলো সাধু লজে... খুব সুন্দর দেখতে বাসস্থান সাধু লজ... কিন্তু আমি শিয়ালদহ চত্বরে ঋষি লজ খুঁজছিলাম, পেয়েওছিলাম, কিন্তু তাতে জি-৫ ছিলনা... অর্থাৎ নীলাদ্রিদাও ছিলনা... আমি নীলাদ্রিদাকে খুঁজে টাওয়ার গেলাম, টাওয়ার একটা হোটেল, ওখানে আমি সোডা খেলাম(র নয়, কিছু না কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে)... নীলাদ্রিদা দুখানা মাছভাজা খেল... অর্জুন এলো... অর্জুনের জ্বরও এলো... আমরা গেলাম জয়শ্রী প্রেসে... মাঝপথে মাঝপথ হারিয়ে ফেললাম, অর্জুন আর নীলাদ্রিদা ভাবলো আমি ওদের কাটিয়ে কোন বাংলার দোকানে ঢুকে গেছি... ওরা ঠিক ভাবেনি... ওদের আগে আমি প্রেসে পৌঁছলাম... চেয়ারে বসেছিলাম... অর্জুন ঢুকলো আর বললো “ও মাল টাল খেয়ে আউট হয়ে আছে, ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দাও”...অর্জুনের তখনো জ্বর ছিল, আর আমি শুনে ফেললাম অর্জুন কি বললো, আমার খুব কান্না পেল... আমি সম্ভবত ন্যাকা লোক, আমি কেঁদে ফেলি লজেঞ্চুস না দিলে বা কেউ চুপিচুপি বললে “ওর খুব কৃমি হয়েছে, দাঁত কিড়মিড় করে”... আমি গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদা না করার চেষ্টা করলাম, নীলাদ্রিদা ঢুকলো... আমরা বেরোলাম, বইয়ের প্যাকেট, যার খুব ওজন, বেরোলো, আর দেখলাম একটা অটো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত হয়ে আছে...অটোটাতে নাকি আমাদের স্থান হবে বইমেলা অবধি... আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে বললাম “তোমাকে আজ থেকে দেখছি??” “তোমাকে আজ থেকে দেখছি??” বলতে বলতে বইমেলা পৌঁছে গেলাম..... অটোটাকে আমরা আজকেই দেখেছি, তাই ওকে কিছু বলিনি... তারপর তো বলছিলাম প্রথমে, আমার বন্ধু খুব কাঁদলো, আমার মোবাইল চুরি গেল, মাঝখানে আমি একজনকে আমার বন্ধুর কবিতার বই বিক্রি করলাম, এবং অর্জুন খুব সুন্দর লিখে আমাকে ওর বই দিল... আমার মনে খুব ভালো লাগলো... সঙ্ঘমিত্রাকে বললাম “উদুম লিখেছিস, দীর্ঘ-ঈ আমার অকল্পনীয় ভালো লেগেছে”, সঙ্ঘমিত্রা বললো “দীর্ঘ-ঈ তোমার ভালো লাগবে আমি ভাবতে পারিনি”... কত মানুষ আমাকে নিয়ে ভাবে!! আমি আবার খুব খুশী হলাম... আজকে নীলাদ্রিদার হোটেলের দিকে যখন যাচ্ছিলাম, একজন তিলক কাটা, কন্ঠীপরা বোষ্টুমি হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে “ও আমার কালাচাঁদ, ও আমার কেষ্ট ঠাকুর”বলে পায়ে দুম করে পড়ে গেল...এখন আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি, তাই পকেটে দশটাকার বেশী পয়সা থাকেনা, তাই ওকে টাকা না দিয়ে বিরক্তি দিয়ে চলে গেলাম...। একটু এগিয়ে আমার খুব দুঃখ হলো..... তারপর ভাবলাম, ও কালাচাঁদ বলে আমার গায়ের রঙ নিয়ে মস্করা করেছে, আমার দুঃখ হাসি দিয়ে কেটে গেল... তারপর তো সবাইকে ফিরতে হয়, কিন্তু আমার ফোন নেই তাই কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম না... অনীকদা, অনীক রুদ্র আমাকে এগিয়ে দিলেন, অনীক রুদ্র খুব ভালো... আমি গত তিনদিন ইনটু দ্য থিন এয়ার নামে এভারেস্ট ক্লাইম্ব ও তার অদ্ভূত রাগের ফলে ৬ জন মানুষকে মরে যাওয়া করে দেওয়ার গল্প পড়ছিলাম...। ওখানে রব হল এর কথা পড়েছিলাম ১৯৯৬ সালে যিনি সামিট করে ফেরার পথে মারা যান... আমি গুগল খুলে ইমেজ সার্চ করে খুঁজছিলাম রব হল আর স্কট ফিশারের বডি গুলো ওখানে কেমন অবস্থায়... খুঁজেও পেয়েছিলাম... আমি বোধহয় অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণ... এই ভেবে আমি রাবণকে, হনুমানকে ভাবলাম... সদ্য একটি রিসার্চ করতে গিয়ে জেনেছি যে চৈতন্যদেবের পায়ে কাঁচ ফুটে ভয়ঙ্কর সেপটিক হয়ে গেছিল, তখন একদিন সন্ধ্যেবেলা অশ্বিনীকুমারেরা এসেছিলেন একবাটি বিশল্যকরণী ও একবাটি সুশীতল দিব্য তৈল নিয়ে... বিশল্যকরণী লাগিয়ে পায়ের ঘা, পুঁজ সব সেরে গেছিল এবং দিব্য তৈল চোখে লাগানোর ফলে উনি ভূত বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব দেখতে পাচ্ছিলেন... এবং সে জন্যই সখা নিত্যানন্দকে গৌড়ে ফিরে গিয়ে সংসারধর্ম পালন করে হরির নাম নেড়া-নেড়িদের মধ্যে প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন...চৈতন্যদেব ছাড়া হৃৎপিণ্ড-ভাঙা নিত্যানন্দ গৌড়ে ফিরে, সম্ভবত রাগে, দু দুটি বিয়ে করে ৬ টি ছেলেমেয়ে উৎপন্ন করেছিলেন... হঠাৎ মনে পড়লো চৈতন্যদেবের শেষ পঞ্চসখার মধ্যে অচ্যুতানন্দ (এটি বৈষ্ণবদের একটি গোত্রেরও নাম, পূর্ণদাস, নবনীদাস বাউল এঁরা অচ্যুতানন্দ গোত্রের বৈষ্ণব, এটি সুধীর চক্রবর্তী মশায় পূর্ণদাসের ভাই লক্ষণদাসের বাড়িতে গিয়ে রাধাকৃষ্ণ জীউর ভজনা হচ্ছে দেখে ভারি কষ্ট পেয়েছিলেন এবং এই তথ্যটি আবষ্কার করেছিলেন। উনি বাউলেরা নিরাকার ব্রহ্মে বিশ্বাস করেনা দেখলে খুব কষ্ট পান), তো অচ্যুতানন্দ ভারতের নষ্ট্রাডামুস... অসংখ্য ভবিষ্যদবাণী করে গেছেন তাঁর ‘মালিকা সাহিত্য’তে, একটি বই...
আমি একা একা ফিরলাম, না, আমি একা একাই বাড়ি ফিরলাম না, নীলাদ্রিদার হোটেলের রুমে ঢুকে গেলাম, এবং আমাকে রাস্তায় বের করে যখন দিচ্ছিল, ঠিক তখনই বাইরে নীলাদ্রিদা আর অর্ঘ্যকে দেখা গেল... নীলাদ্রিদা খুব ভালো, অর্ঘ্যও খুব ভালো... অর্ঘ্য চলে গেলে নীলাদ্রিদা আরো মাল কেনার চেষ্টা করছিল, আমি জোর করে টেনে এনে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিলাম আর নিজে ল্যাপটপ খুলে লিখতে বসলাম...
এখন নীলাদ্রিদা নাক দিয়ে আগ্নেয়গিরির সক্রিয় হওয়ার শব্দ করছে আর আমি শালা মানুষ না, আমার বাচ্চা হয়ে গেছি এই লেখা লিখতে লিখতে... তাই শালা একটা আমি একটা পাঁড় আমার বাচ্চা বেবীর মতো থোবড়াগুলোর কয়েকটা ছবি তুলে খুশী হলাম। আমি দেখাব,হার্ডকোর আমার বাচ্চা ধরনের প্রাণী হলেও আমাকে দেখতে খারাপ লাগছেনা ছবিতে। কিন্তু বাবাই-মা র মতো দেখতে অতো ভালোও লাগছেনা আমি জানি, তবুও দেখাবো...।
ফিরতবেহুলা -
বড় ঘটনাবহুল গেল... কিছু মনখারাপ, কিছু অভিমান, কিছু আনারস সময়, কিছু মিষ্টি মারামারি, কিছু ঝগড়া, কিছু ভুল, এবং অবশ্যই এক ভালোবাসা সহ দুর্ধর্ষ দুশমন নিজস্ব শ্লাঘা খানের অতর্কিত আক্রমণ, অনর্গল ঘটতে ঘটতে কাটিয়ে ফেললাম গতজন্ম। বিরক্তিতে তিতির অপেক্ষায় ছিলাম, অনেক শিহর অনেক ম্যাজিক ও আলোদের ফটোগ্রাফ কোন খবর না দিয়ে বেজিঝক চলে এলো। সঙ্গে তার দুই ভাই, বেইন্তেহা আর বেপনাহও ছিল। আমার বড্ড বাসি হলো রে, মায়া ও মায়াবী দুজনেই হলো।
এক মানুষ লম্বা স্থান অধিকার করে আছি, শুধু এই কারণেই কত নতুন মানুষ হলো আমার। গর্বের জন্য মিনিমাম কোয়ালিফিকেশান অনেকটা বেড়ে গেল। আমি যে এক বিচিত্র ঘটনা, তা খুব একটা অজানা নেই আমার। তবু এ্যাতো এ্যাতো জনের অপরিচয় কেটে গেল, ভাবা যায়না... সেই ফাঁকতালেই খুঁখার উগ্রপন্থী শ্লাঘা খান ঢুকে গেছিল... চৌকন্না থাকতে হয় খুব.... তবে চৌকন্না ছিলাম বলেই বহুদূর থেকে ভেসে আসা এক জিনিয়াসিনির স্পর্শে ফিসফিস হয়ে গেলাম....কিছু পরে তাও নয়, খালি ঠোঁটনৃত্যের সাহায্যে বাজে বকা নামিয়ে রাখলাম তার পায়ে... কিন্তু কী বিতিকিচ্ছিরি এই মানবমনের সংস্কার, একজন ঠোঁটনৃত্য বা ফিসফিস করলে অন্যজনও ফিসফিসে মগ্ন হয়ে যায়। কী আপদ, এতে যে ভেঙানো হচ্ছে বোঝে না??
বেসিক্যালি আমার একটা মানুষ হয়েছে...