১. প্রসঙ্গ
বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিটে ভিনদেশি একটি মসজিদের
পুড়ে যাওয়া ছবিকে কেন্দ্র করে জ্বলে ওঠা
রামুর অনাকাঙ্ক্ষিত আগুন কি আপনার
অসাম্প্রদায়িক চৈতন্যে আজও রোরুদ্যমান?
২. অপ্রসঙ্গ
আপনি কি মুসলিম?
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান??
নাকি শুধুই মানুষ একজন???
একাকি নিঃসঙ্গ মানুষ - নিঃসঙ্গ একাকি মানুষ!
৩. অথ একটি মিনি সাক্ষাৎকার
৩অক্টোবর, Daily Star পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে রামুর ইতিমণি নামের এক শিশুর সাক্ষাৎকারটির প্রশ্ন-উত্তর ছিল এরকম--
প্রশ্নঃ আক্রমণের রাতে তুমি কোথায় ছিলে?
উত্তরঃ সুপারিবাগানে লুকিয়ে ছিলাম।
প্রশ্নঃকেন লুকিয়ে ছিলে?
উত্তরঃ তারা আসছিল বলে।
প্রশ্নঃতারা কেন আসছিল?
উত্তরঃআমাদের হত্যা করতে।
প্রশ্নঃকেন তোমাদের হত্যা করবে?
উত্তরঃআমরা বৌদ্ধ বলে।
প্রশ্নঃকারা তোমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল?
উত্তরঃমুসলমানরা।
শিশু ইতিমণি ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ওইদিন সুপুরিবাগানে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল,কীভাবে তার স্বপ্নের বাড়ি এবং পবিত্র মন্দির আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।হয়তবা ঈশ্বরের নামে জ্বালিয়ে দেয়া সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে (???)পুড়ে গেছে লাল টুকটুকে কাপড়ে মোড়ানো ইতিমণির ছোট্ট মাটির পুতুলটিও। ( সাপ্তাহিক পত্রিকা) ।
৪. হায় রাম!থুক্কু হায় জিউস!
হায়! কী কুক্ষণে যে পৌরাণিক দেবতা জিউস মানুষের হাতে আগুন তুলে দিয়েছিলেন - সেই থেকে শুরু,যেন এর কোন শেষ নেই! হ্যাঁ,আগুনের রাজনীতি এখন সারা পৃথিবীতেই দৃশ্যমান। আর কে না জানে,সম্প্রতি আমাদের দেশেও আগুনের দাপট ক্রমশ অসহ হয়ে উঠছে। তদুপরি, একথাও ভুললে চলবে না যে,রামুর আগুন কিন্তু আদৌ আকস্মিক নহে,বরং তাহা হয় শতভাগ পূর্বপরিকল্পিত।জানা যায়,পরিকল্পনাকারিদের দোসর বা আগুনবাজ এজেন্টরা কমপক্ষে ৪টি বাসযোগে দা-লাঠি-ব্লক-বিটুমিন-পেট্রল- গানপাউডার ইত্যাদি নিয়ে রামুর অতিপ্রাচীন বৌদ্ধবিহারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাংচুর করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর,আগুনে পুড়িয়ে দেয় ১২টি বৌদ্ধমন্দির আর লুঠ করে নেয় ৪শতাধিক বুদ্ধমূর্তিসহ অগণন নামিদামি তৈজসপত্র। অথচ এই দীর্ঘ আয়োজনের প্রস্তুতি বা প্রাকপ্রস্তুতির বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামি সরকার বাহাদুর কিম্বা ক্রমপ্রসারমান তথাকথিত মিডিয়াসমূহ উপর্যুপরি ব্যর্থতার পরিচয়ই শুধু দেয়নি অঘটনটি ঘটার পর তারাও রাজনৈতিক দলসমুহের মতই একেঅপরকে দোষারোপ ও সমালোচনা করেছে। এমনকি এখনো তারা স্রেফ বাণিজ্যের ধান্দায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের পাঠক পটানো স্বভাবসুলভ সক্রিয়তা এবং লম্ফঝম্পও জারি রেখেছে।
৫. রামুর আগুন কি সাম্প্রদায়িক না রাজনৈতিক?
রামুর আগুন কি সাম্প্রদায়িক?-এবিষয়ে ঘোর অস্বচ্ছতা আর তর্ক -বিতর্কের অবকাশ যৎসামান্য থাকলেও প্রকটভাবেই রামুর আগুন যে ঢেরবেশি রাজনৈতিক তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, এদেশের মানুষেরা মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ বসবাস করে আসছে।কিন্তু অপরাজনীতির বেহায়া বেনিয়ারা স্বীয় স্বার্থ হাসিলে বারংবারই সে প্রতিবেশের ক্ষতি সাধনে সচেষ্ট থেকেছে। হ্যাঁ,রামুর আগুনও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে পার্থক্য হচ্ছেঃ রামুর আগুনে ক্ষতির পরিমান সত্যিই অপরিমেয় এবং অপূরণীয়ও বটে। এমনকি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসররাও এতোটা ক্ষতি করতে পারে নাই। রাজনীতির ছত্রছায়ায় রামুতে বর্বর আগুনবাজেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অতীব ধূর্ততায় পুড়িয়ে দিয়েছে আমাদের শতসহস্র বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। যা বর্বর মার্কিনীদের ইরাকীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধ্বংস-যজ্ঞের কথাই মনে করিয়ে দেয়। রামুর ধ্বংস-যজ্ঞেও সভ্যতাবিনাশী ওই দেশটির ভূমিকা থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা তাদের কাছে রামুর ভৌগলিক গুরুত্বও যথার্থই লোভনীয়। এছাড়া তাদের সহযোগিতায় তো রয়েছেই '৭১এর পরাজিত ভূতসহ এদেশীয় অনুগত ডান-বাম-মৌল...এজেন্টরা। অবশ্য এক্ষেত্রে থোড়বড়িখাড়া-খাড়াবড়িথোড় সূত্রে শধুই 'চ্যাং মাছের' দোষ দেয়াটা আদৌ যৌক্তিক হবে না।
তদুপরি,এতদ্বিষয়ে সময়ের সাহসি ও সত্যনিষ্ঠ প্রাবন্ধিক বদরুদ্দীন উমরের 'বাংলাদেশ ও ভারতে সাম্প্রদায়িকতা' শিরোনামের একটি লেখা থেকে হুবহু তুলে দেবার লোভ সম্বরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি, হে পাঠক!
'বাংলাদেশে এখন দুর্নীতি, চুরি, ঘুষখোরি, সন্ত্রাসের রাজত্ব। এখানে ১৯৭২ সাল থেকে মানুষের চরিত্রের অদৃষ্টপূর্ব অধঃপতন হয়েছে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের গৌরব করার মতো কিছুই নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের গৌরব বোধ করার জায়গা একটাই আছে। তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মূলোত্পাটন করেছে।এক্ষেত্রে সব থেকে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই যে, এখানে ধর্মীয় প্রভাব ১৯৭২ সালের পর ধীরে ধীরে এমনভাবে তার থাবা বিস্তার করেছে যা ইংরেজ বা পাকিস্তান আমলে দেখা যায়নি। এখন দেশে নামাজ-রোজা, হজ করা লোক এবং মাথায় হেজাব ও বোরকা পরা স্ত্রীলোকের সংখ্যা দারুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়েছে এবং দিন দিন এ অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তা মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। কিন্তু এই ধর্মীয় তৎপরতা বৃদ্ধি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবেই উস্কানি দেয়নি, দিতে পারেনি। এর মূল কারণ, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করার সঙ্গে সমান্তরালভাবে এখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রাম দানা বাঁধে এবং ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা মুসলমান সংখ্যাগুরুর শাসনের অধীনে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৪৭ সালে আগস্টের আগেই দলে দলে পূর্ব বাংলা ত্যাগ করতে শুরু করেন। জমিদার, জোতদার, মহাজন, উকিল, মোক্তার, সরকারি কর্মচারী, এমনকি শিক্ষকরা পর্যন্ত দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। কাজেই অর্থনীতি, সামাজিক প্রতিপত্তি, রাজনীতি ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই থাকল না। মুসলমানদের সার্বভৌমত্ব সর্বক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হলো। এটাই ছিল পূর্ব বাংলায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের বাস্তব ভিত্তি। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে না পেরে বাংলাদেশে মৌলবাদী প্রভাব বৃদ্ধিকেই অধিকাংশ লোক সাম্প্রদায়িকতা বলে ধরে নেন। এটা এক মহা ভ্রান্তি। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার অনেক রকম।তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা অন্যতম।' (দ্রোহ , লিটল ম্যাগাজিন)
৬. 'সব শিয়ালের এক রা' কিম্বা খেলা দেখে যান বাবু...
নিঃসন্দেহে,ধর্ম যার যার কিন্তু এদেশ এবং রাষ্ট্র সবার,সবারই। হ্যাঁ,জন্মসূত্রে আমরা কেউ মুসলিম,কেউ হিন্দু,কেউ খৃষ্টান আর কেউ বৌদ্ধ। কিন্তু আমরা সকলেই তো এদেশেরই নাগরিক। আর মুসলিম হিসেবে আপনার যেমন ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে অন্য সবারও। তাছাড়া যত দূর জানি,ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। এধর্মে উগ্রতা,অসাম্যতা কিংবা সাম্প্রদায়িক অপরাধের মত সহিংসতার কোন সুযোগই নেই। সর্বোপরি,সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ইসলাম ধর্মে তো নয়ই,পৃথিবীর কোন ধর্মেই বিষয়টি গ্রহণীয় নয়।
তদুপরি,প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে,যারা আগুন দিয়েছে আর ধংসযজ্ঞে সক্রিয় থেকেছে তাদের একটি বড়ো অংশই ছিল স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের। তার মধ্যে প্রায় সবগুলি রাজনৈতিক দলেরই কর্মীরা ছিল। বিএনপি’র এমপির লোকেরা যেমন ছিল,তেমনই ছিল আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকেরাও। হ্যাঁ,শুরুতেই উত্তেজনা সৃষ্টিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। পাশাপাশি এলাকাটিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে আরও উদ্যোগী ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও মার্কিনী মদদপুষ্ট RSOসহ একাধিক NGO এবং ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের কর্মীরা,আর এক্ষেত্রে মসজিদকেও ব্যবহার করা হয়েছে উদ্দেশ্যজনকভাবে,যা সত্যিই দুঃখজনক আর নিন্দনীয়ও বটে।
জানা যায়,রাত সাড়ে ন'টার দিকে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা সাদ্দাম হোসেন, আমজাদ হোসেন,রুস্তম আলী এবং জিন বাবুর নেতৃত্বে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এই মিছিলটিই চৌমুহনীতে এসে সমাবেশে রূপ নেয়। মিছিলে যোগ দেন রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম সেলিম (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা)। এরপর সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপিদলীয় সাংসদ লুৎফর রহমান কাজল, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুশরাত জাহান মুন্সী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতেও জামায়াতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। জানা যায়,ওইদিন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ আলম,কায়সার আহমেদ,নুরুল আলমের নেতৃত্বে একটি মিছিলও বের করা হয়। মিছিলের শেষে মন্দিরগুলোতে হামলা করা হয়। এ হামলায় সুলতান আজিজুল ইসলাম উলুম মাদ্রাসার ছাত্ররাও অংশ নেয়। তদুপরি,প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগীরা আতংক আর ভয়ে কোন কিছুই বলতে চাইছেন না। বিশেষত সরকারদলীয় আওয়ামীলীগ,ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এমনকি আরাকান থেকে রোহিঙ্গারাও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৭. ক্ষতের উপর নুনের ছিটা! অসাম্প্রদায়িক(!?)ফানুস-আগুনে আবারও পুড়লো রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়!!
২৯ সেপ্টেম্বর ধ্বংসযজ্ঞের পর রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করায় এ বছর রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রবারনা পূর্ণিমার দিনে ফানুস উড়ায়নি। হয়নি ঐতিহ্যবাহি জাহাজ ভাসা উৎসবও। কিন্তু প্রবারনা পূর্ণিমার দুইদিন পর (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রামু খিজারী হাই স্কুল মাঠ থেকে উড়ানো হয়েছে ফানুস। এসময় উপস্থিত বেশীরভাগই ছিলেন, রামু উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফানুস উড়ানোর ঘটনায় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ধংসযজ্ঞের শিকার রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই এবারে তারা প্রবারনা পূর্ণিমা উদযাপন করেছে অনাড়ম্বরভাবে। শুধুমাত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তারা পালন করেনি কোন উৎসব। আকাশে উড়ানো হয়নি ফানুস। বাঁকখালী নদীতে উদযাপন হয়নি জাহাজ ভাসা উৎসবও। বরং রামুর হাজারো বৌদ্ধ নর-নারী কালো ব্যাজ ধারণ করে শোকাবহ আবহে শান্তি শোভাযাত্রা করেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে অনেক বুদ্ধমূর্তি পুড়ে যাওয়ায় তারা পালন করেছে শোক।
কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফানুস উড়ানোর ঘটনায় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত বলেও মনে করছেন বৌদ্ধধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।তাঁদের অভিযোগ, ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনের এক শান্তি সমাবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয়ায় বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলের দূরত্ব তৈরী হয়।এঘটনার পর গতকাল তার নেতৃত্বেই অসাম্প্রদায়িক ছাত্র মঞ্চের ব্যানারে এসব ফানুস উড়ানো হয়েছে।এসময় উপস্থিত ছিলেন,রামু-কক্সবাজার আসনের মহিলা সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ, কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা, উপজেলা সহকারী কমিশনার আবুল কালাম, রামু থানার ওসি গাজী শাখাওয়াত হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নী, কক্সবাজার যুব মহিলা লীগ সভানেত্রী আয়েশা সিরাজ, রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল ইসলাম সেলিম সহ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ। রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফানুস উড়ানো বৌদ্ধদের ধর্মীয় রীতি-নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু গতকাল যেভাবে ফানুস উড়ানো হয়েছে। এটা ধর্মীয় অনুভূতির উপর এক ধরনের আঘাত। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রতিহিংসার আগুনে পুড়েছে। আর এখন পুড়লো ফানুসের আগুনে। (রামু নিউজ রিপোর্ট)।
প্রান্ত কথন কিংবা সভ্যতার পোড়া ঘ্রাণ
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি?