এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পর্যালোচনা (রিভিউ)  ওয়েব সিরিজ

  • "ছোটলোক" নিয়ে ছোট করে দু চার কথা

    মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | ওয়েব সিরিজ | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭৫৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    যেখানে একজন সম্ভাব্য খুনীর বাড়ির সামনে নজরদারিতে দুজন সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়, সেই খুনী মহিলার পাঠানো ভয়েস রেকর্ডিং শুনে যখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এটা আত্মহত্যার আগের শেষ জবানবন্দী... তখন ড্রাইভারকে গাড়ি তাড়াতাড়ি চালাতে বলার সঙ্গে সঙ্গে বা তার আগে পরে সেই নজরদারিতে থাকা পুলিশদের ফোন করে মহিলার ফ্ল্যাটে গিয়ে আত্মহত্যা আটকানোর চেষ্টা করতে বলাই স্বাভাবিক হত হয়ত, হয় নি।

    ভয়েস রেকর্ডিং এ যখন খুনী বলে যে, খুনটা করতে গিয়ে তার ভেতরে তোলপাড় হয়েছে... সেটাও খুব অকারণে চাপিয়ে দেওয়া জাস্টিফিকেশন মনে হয়েছে। এটার দরকার ছিলো না। কারণ গল্পের শুরু থেকে শেষ অবধি সেই বিষয়টাই বলা হয়েছে। এবং খুন হওয়া মেয়েটা যে আসলেই মরত, সেটা বলার মধ্যেও সেই একই খুনীর ভার লাঘবের কার্য কারণ পরম্পরা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং এখানেই একটু নীতিবোধ, একটু জ্ঞান...আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা না পোষালেও খুব বাড়াবাড়ি রকম জ্ঞান সেটা বলা চলে না।

    আসলে "ছোটলোক" সিরিজটা এককথায় খারাপ বা ভালোর খোপে ফেলে দেওয়াটা একটু মুশকিল।

    আর পাঁচটা অন্য সিরিজের ক্ষেত্রে যেখানে ঠগ বাঁছতে গা উজাড় হয়ে যাবে বলে ছোট ছোট অসঙ্গতি নিয়ে মাথা মোটেই বিচলিত হয় না, সেখানে "ছোটলোক" এর কিছু কিছু দৃশ্যের অসঙ্গতি দেখে ব্যক্তিগত ভাবে খারাপ লাগবে কারণ কোথাও গিয়ে সিরিজটা একটা সামাজিক, রাজনৈতিক আর মানবিক একটা গল্প বলে।

    একটা থ্রিলার দেখবো ভেবে দেখতে বসলে, ওয়েব সিরিজের ধর্ম অনুযায়ী প্রথম এপিসোড সেভাবে টানটান না লাগতেই পারে, এমন কী প্রথম এপিসোডের শেষে পরের এপিসোডের শেষে যাওয়ার যে অব্যর্থ "হুক" সেটাও আপনি পাবেন না প্রথম বা দ্বিতীয় এপিসোডে....আসলে এটা বর্তমানে বহুল প্রচলিত, অকারণ গুলি এবং গালি "সমৃদ্ধ" ওয়েব থ্রিলার সিরিজ নয়। এটা মাথায় রাখলে সিরিজ দেখতে বসার আগেই একটা প্রাক নির্ধারিত এড্রেনালিনের ক্ষরণ সম্ভাবনা সরিয়ে রেখে ধীরে ধীরে গল্পের ভেতরে ঢোকার পদ্ধতিটা আপনি উপভোগ করতে পারবেন হয়ত। কিছুটা বোরিংও লাগতেই পারে প্রথম দিকে। কিন্তু, যদি আপনি দেখেন শেষ অবধি, তাহলে আপনি একটু অন্যরকম, সারাদিন পরে একটু হাঁফ ছেড়ে, একটু থিতু হয়ে বসে দেখার মত একটা গল্প পাবেন।

    পুরো সিরিজে অভিনয়ের গড় মান বেশ উঁচুর দিকেই। দামিনী বেনী বসু অভিনীত সাবিত্রী মন্ডল দু একটি সামান্য সময়ে পালিশবিহীন মোড়ক থেকে বেরিয়ে সফিস্টিকেটেড ব্যক্তি পরিচয়ে উঁকি দিয়ে ফেললেও, সেটুকু সহজেই ভুলে যাওয়া যায়। বিশেষ করে একটু দুর্বল, অসহায় মুহুর্তগুলোতে তিনি অনবদ্য। তাঁর অভিনয় নিয়ে অনেকেই বলছেন, আমার ব্যক্তিগত ভাবে ছোট পুতুল দাসের ভূমিকায় অভিনয় করা শায়েরি, ফারুক কাকার ভূমিকায় লোকনাথ দে, রাজা গৌরব চক্রবর্তী, রূপসা ঊষশি রায়, বাসু জিৎসুন্দর এঁদের প্রত্যেকের অভিনয় যথাযথ ও বেশ ভালো লেগেছে। সাবিত্রীর চরিত্রটি রূপায়ণে তার সহকারী জামিলের চরিত্রে প্রতীক দত্তর শান্ত সংযত সঙ্গতটুকুও প্রশংসার দাবীদার। খুব সহজ ও সাবলীল। গোটা সিরিজেই এই সহজ ভাবটাই ভালো লেগেছে আসলে। অকারণ কায়দা না করে একটা সহজ ভাবে গল্প বলাটা ভালো লেগেছে। ভাঁড়ামি বিহীন কৌতুক রসের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার একটা বড় পাওনা। এবং অবশ্যই সাবিত্রীর স্বামী ও শাশুড়িকে হিরো বা ভিলেন রূপে সংস্থিত না করার জন্য পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীকে ধন্যবাদ।

    এই সিরিজ আসলে বহু দিক থেকেই পলিটিক্যালি কারেক্ট এবং সেটা হওয়ার একটা সচেতন প্রচেষ্টা আছে। আর প্রথমে উল্লিখিত ওই প্রান্তিক এবং সাব অল্টার্ন খুনীর অপরাধকে আলাদা করে ন্যায্য প্রতিপন্ন করতে যাওয়ার সমস্যা হয়ত সেখান থেকেই উদ্ভূত। তবু...

    যে সিরিজে পুলিশ লাজুক হেসে জুনিয়রের কাছে স্বীকার করে যে মারতে গিয়ে তার নার্ভাস লাগছিল আর বুক ঢিপ ঢিপ করছিল... সেটা কোথাও গিয়ে যেন আমাকে একটু স্বস্তি দিলো!
    আমার মত এরকম বাইরে খুব "স্ট্রং" কিন্তু আসলে ভেতরে নরম আর ভীতু ভীতু আরও অনেককেই দেবে আশাকরি। অনেক মেয়েকেই! মুচকি হেসে লড়াইটা জারি রাখবে যদিও তারা সব্বাই তবু কোথাও ওই বুক ঢিপ ঢিপানিটুকু স্বীকার করতে পারার সঙ্গে একাত্ম হতে পারার পরিসরটুকু খুব প্রয়োজনীয় ভরসা যোগায়। কে জানে হয়ত মা কালীরও কখনো কখনো বুক ঢিপঢিপ করে ...

    একটু ঠিক করে লিখি আরেকবার... যে সিরিজে মহিলা পুলিশ... ইত্যাদি। ওই যে লিঙ্গ পরিবর্তন করতাম ছোটবেলায় ক্লাস থ্রি থেকে... কবি - মহিলা কবি, পুলিশ - মহিলা পুলিশ!!! হ্যাঁ, এখানে মহিলা শব্দটা আলাদা করে উল্লেখযোগ্য! কোন পুরুষ পুলিশ কি অপরাধ কবুল করানোর জন্য কারোর অফিসে গিয়ে তাকে মারার সময় হুমকির সম্মুখীন হয়ে উল্টে চাপ দিতে পারে এই বলে যে বড়জোর সাসপেন্ড হবে, চাকরি চলে যাবে? যাবে তো যাবে...তার স্বামী, শাশুড়ি তো দুই বাচ্চার মাকে সমানেই বলছে এই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য! এখানেই এই সিরিজটা আমাকে কোথাও আশাপূর্ণা দেবী আর লীলা মজুমদারের কথা মনে পড়িয়ে দিলো। বারবার তাঁদের লেখায় এসেছে যে, যুগযুগ ধরে একটা জাতিকে যে সব অস্ত্রে দমিয়ে রাখা হয়েছে, তারা কখন যে সেটাকেই নিজেদের ঢাল এবং অস্ত্র দুটোই বানিয়ে ফেলেছে টেরটিও পাবে না! স্বামী শাশুড়ির এই চাকরি ছাড়তে বলায় কান্নাকাটি না করে এমন অব্যর্থ অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করতে একমাত্র এই মেয়েরাই পারে!

    আরো বেশ কয়েকটা কেস আসুক না এস আই সাবিত্রী মণ্ডলের হাতে। উচ্চ বর্ণের উচ্চ বর্গের পুরুষের পরিবর্তে একজন ছাপোষা প্রান্তিক দুই সন্তানের মা, সংসারী মহিলা পুলিশ আর তার সঙ্গে আরেক তথাকথিত সংখ্যালঘু পুরুষের এই স্বাভাবিক সহকর্মী জুটি যত বেশি প্রকাশ্যে আসে ততই ভালো। ছোটখাটো ত্রুটি বিচ্যুতি অসঙ্গতি তো জীবনেও থাকে। জীবনের গল্প বলাতেও একটু আধটু থাকুক না হয়, সেসব শুধরে নেওয়ার অবকাশ তো থেকেই যাচ্ছে।



    ওয়েব সিরিজ: ছোটলোক
    পরিচালনা: ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী
    প্রযোজনা: চেরিপিক্স মুভিজ এবং ফ্লিপবুক
    স্ট্রিমিং : জি ফাইভ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পর্যালোচনা (রিভিউ) | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২৯525976
  • বাংলার একটা ওয়েব সিরিজ অনেকদিন পর খুব ভালো লাগলো। আমি তো বলবো মুম্বাইয়ের সাথে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে মানে। খুব সুন্দর করে যত্ন করে বানানো। সবারই অভিনয় ভালো লেগেছে। দামিনী বসু রায় আর প্রতীক দত্ত বিশেষ করে।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩০525977
  • সাবিত্রী মন্ডলকে অবশ্যই আবার নতুন সিজনে দেখতে চাই। ইন্ট্রোর গ্রাফিক্সটাও ভালো লেগেছে।
  • সৃষ্টিছাড়া | 103.85.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১১525983
  • সাবিত্রীর মাটিতে বসে স্বামীর সাথে বন্ধুত্ব উদযাপন সূচক মদ্যপানের দৃশ্যটি দুই সন্তানের জননী ইমেজে এক বালতি দুধে পাঁচ ফোঁটা চোনা।
    তাছাড়া, বেণী আমার মত অসহায় কলমচির ছোটো বোন।
  • Rouhin Banerjee | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২০:১৫526007
  • খুবই ভালো স্টোরিটেলিং। সাটল বক্তব্যগুলি মন ছুঁয়ে যায়। বহুদিন বাদে এই সাটল গল্প বলার ভঙ্গী বাংলা ছবি / সিরিজে দেখলাম, উচ্চকিত চিৎকারের বদলে।
     
    অবশ্যই আরও সীজন হোক।
  • r2h | 134.238.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৫২526010
  • সৃষ্টিছাড়ার কমেন্টটা বোঝার চেষ্টা করছি। সন্তানের জননীদের স্বামীর সঙ্গে বন্ধুত্ব উদযাপন বা মাটিতে বসে মদ খাওয়া মানায় না - এমন কিছু ব্যাপার নাকি...

    লেখাটা ভালো লাগলো, সিরিজটাও। আরও সিজন হোক, অবশ্যই।
    ভালো ভালো কাজগুলি নিয়ে আলোচনা, প্রচার ইত্যাদিও খুব দরকার।
  • dc | 2401:4900:1cd1:2be5:d66:d9f1:f743:***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৬526012
  • আমি মাঝে মাঝে বৌএর সাথে বসে ওয়াইন, ভোদকা ইত্যাদি খাই। আমার বৌ অবশ্য এক সন্তানের জননী, কারন আমি এক সন্তানের বাপ। এই পয়েন্টটায় বেঁচে গেছি। আরেকটা পয়েন্টে বেঁচে গেছি বাবা, আমরা সাধারনত মাটিতে বসে খাই না, চেয়ারেই বসি, বা সোফায়। যাক তাহলে আমাদের দুধের বালতিতে চোনা পড়ছে না। 
  • হে হে | 2a0b:f4c2:1::***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২১:১৯526016
  • এই দাদু মনে হয় এসোশুই পাট্টির লোক। ওরাই অইরম হয়।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪২526023
  • সিরিজ অসাধারণ লেগেছে। রিভিউ ভালো‌। 
     
    সৃষ্টিছাড়ার মন্তব্যর কিছুই বুঝিনি।
  • দীমু | 182.69.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০১:২৭526029
  • যাচ্চলে, গত সপ্তায় সিরিজটা দেখে একটা লেখা ড্রাফট করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম কেউ তো কিছু লিখছে না , একটা টই খুললে হয়। ফাঁকতালে আজকে একেবারে ডিরেক্ট বুবুভা বেরিয়ে গেছে!!
  • r2h | 134.238.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:০০526031
  • :D ঐ জন্যেই শুভস্য শীঘ্রম বলে, আবার ঐজন্যেই অধিকন্তু ন দোষায়-ও বলে, অস্যার্থ হলো আপনার লেখাটিও পড়তে ইচ্ছুক।
  • দীমু | 182.69.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৯526034
  • "the society has gone to the dogs, বোঝলেন?"

    সিরিজের শুরুর দিকেই এই কথাটা খেয়াল করলে সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাওয়া উচিত এই ওয়েব সিরিজ আদৌ গতানুগতিক ক্রাইম থ্রিলার নয়। বরং যে সমাজ অপরাধের জন্ম দেয় , সেই সমাজের ক্ষতস্থান আপনাকে দেখানো। গত দশ পনেরো বছরে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি সমাজের সেই বিবর্তন , যা বাংলা ওয়েব সিরিজ নির্মাতারা এযাবৎ দেখাতে সাহস পাননি। এক অদ্ভুত বাস্তব দুনিয়া যেখানে সবাই সবাইকে ব্ল্যাকমেল করে বেঁচে থাকে। 

    পুরসভার চেয়ারম্যানের চরিত্রটি তার ঘুষখোর সরকারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে বাঁচাতে তাকে শরীর খারাপের ভান করে হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে চায়। সেই ছেলেকে লকাপের অন্য একজন কয়েদী বলে - "একটু বলে দেবেন তো দাদা। আমাদের খাবারটা যাতে একটু পাল্টে পাল্টে দেয়। রোজ এই আলু আর ঢ্যাঁড়স। এই লকাপ কি আর আপনাদের জন্য তৈরী হয়েছে?” পার্টিতে তার মায়ের উল্টোদিকের লবির দেবেশ চট্টোপাধ্যায় কথায় কথায় পার্টির হাইকমান্ডের ফোনের উল্লেখ করেন। বড়লোকদের কালো টাকার হ্যান্ডলারের কাছে রাখা থাকে শহরের প্রভাবশালীদের হাওয়ালার ডায়েরি। মডেলের খুনের তদন্তকারী পুলিশের সাব ইন্সপেক্টরের উর্দ্ধতন থানার বড়বাবুকে বলতে শোনা যায় - "ওপর থেকে আসা নোংরা চাপগুলো সাবর্ডিনেটদের কাছে পাস করে দিতে আমার একটুও ভাল লাগে না। কিন্তু মেয়েটা সামনের বছর স্যাট দিচ্ছে। আমেরিকায় পড়ানোর অনেক খরচ , বাবা হিসেবে যদি এটুকুও না করতে পারি..." সেই থানাতেই আরেক অফিসার তার অধস্তন কনস্টেবলকে বলে -"আজকাল তো সব কোটার কেস। এই , তুই কোটায় এই চাকরি পেয়েছিস ?" চেয়ারম্যানকে ব্ল্যাকমেল করার সময় লোকনাথ দেকে বলতে শোনা যায় - "এটাও কিন্তু ইলেকশনের খরচ। দেখুন আমরা হলাম ছোটলোক। ওসব বড় বড় ব্যাপার আমাদের ঠিক আসেনা।" ব্যাংক থেকে মোটা লোন নিয়ে বিউটি পার্লারের নামে ফুল বডি ম্যাসাজ চালানো পুলিশ কেস খাওয়া ভাই তার দিদির বাড়িতে এসে লুকিয়ে থাকে আর তার লোন মকুব হয়ে যায়। একজন অটোচালক ভদ্রলোকদের স্কুলের ডিরেক্টরের ঘরে রবীন্দ্রনাথের বড় দেওয়ালে টাঙানো ছবির সামনে বসে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে - "ভদ্দরলোকেরা সারাদিন বাড়িতে বসে মাল খায় আর ঝি দের হাত ধরে টানাটানি করে , এই কি ভদ্দরলোকদের কাজ ?" , পরে বাইরে করিডোরে বসে সে যখন শব্দ করে চায়ে চুমুক দেয় , দুজন ভদ্রঘরের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ে। পুরোনো বাড়ি ভেঙে পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ফ্ল্যাটের প্রেসিডেন্ট মডেলের ফ্ল্যাটের দরজায় বেল বাজিয়ে বলে - "দেখুন মিস ঘোষ , ভুলে যাবেন না এটা একটা রেস্পেক্টেবল রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স।" পাড়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট টিভি ক্যামেরায় বাইট দেবার সময় বলে - "আমার ভালো নামই ডলার। ডলার পোদ্দার।" পুলিশ অবাঙালি বস্তির ঘরে গিয়ে বলে -"এ রাজু , তোরা বাড়িতে লোক এলে চা টা খাওয়াস না নাকি"

    প্রেগনেন্সি টেস্ট , ফ্রিজিডিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের পুরো সময়টা জুড়ে প্রতীক দত্তের এমনিতে স্মার্ট চরিত্রটি অদ্ভুত অপ্রস্তুত আচরণ করে এবং সেখান থেকে বারবার উঠে যাওয়ার চেষ্টা করে যেন দুজন নারীকে কথা বলার প্রাইভেট স্পেস দিতে চায়। এস আইয়ের অদ্ভুত শান্তভাবে কথা বলা স্বামীকে অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বই পড়তে দেখা যায়। স্থানীয় থানার পুলিশের আড়ম্বরহীন জিজ্ঞাসাবাদের ঘরে বড় ক্যালেন্ডার ঝোলে , পিছনে কাঁচের জানলায় সাঁটানো থাকে পাতি খবরের কাগজ। স্টিলের আলমারির গায়ে পুরনো আধ ছেঁড়া সরকারি নোটিস , সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের ফ্লেক্স। মোবাইল চোর রাজু বজরঙ্গি আর কালেবর সিংয়ের ঘরে হনুমান , লক্ষ্মী , কৃষ্ণের ছবি ঘিরে লাল নীল সবুজ শস্তা এলইডি জ্বলে নেভে। 

    "কিস্যু শোনে না হালায়। ২৪×৭ ইন ব্রহ্মলোক" বলে সিরিজটি আসলে কাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে চাইল? আম দর্শকদের দিকে যারা আজগুবি টুইস্ট আর জখম অতীতওয়ালা পুলিশ দেখতে অভ্যস্ত? সিরিজ জুড়ে শান্ত ভাবে কথা বলে চলা এক একটা চরিত্র মাঝে মাঝে ধৈর্য্য হারিয়ে অস্বাভাবিক জোরে চেঁচিয়ে উঠে যেন বারবার সেই চোখ খুলে ঘুমোনো ভেঙে দিতে চায়। সিরিজ জুড়ে চরিত্রদের মধ্যে কথাবার্তার সময় স্ক্রিনে দেখানো মুখের তালে তালে ক্যামেরাও অদ্ভুতভাবে কখনো বাঁদিক ডানদিক, কখনো ওপর নিচে কাঁপে। ইচ্ছাকৃতভাবে যেন ক্যামেরার মাধ্যমে তৈরী একটা ডিস্টার্বেন্স দর্শককে বারবার এই বাস্তবের ঝাঁকুনি দিতে চায়। 
  • :|: | 174.25.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০৪526042
  • চাট্টে ঊনপঞ্চাশের লেখায় এই লাইনটা ভাবলো বটে -- "ভদ্রলোকদের স্কুলের ডিরেক্টরের ঘরে রবীন্দ্রনাথের বড় দেওয়ালে টাঙানো ছবির ..."
    রবীন্দ্রনাথের বড় দেওয়াল? 
  • দীমু | 106.2.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:২৫526080
  • :|: , রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো দেওয়াল বানান নি cheeky
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন