প্রথম কথাই হচ্ছে, যে, তাঁকে ছবির জগৎকে একটা মান্যতা দিতে হবে, এই মান্যতা দিয়েই শুরুটা করতে হবে। এটাও জানতে হবে যে চিত্রজগত বা দৃশ্যজগত বলে কোনো জগত আছে। সেই জগতটা আর তার যে পারিপার্শ্বিক জগতটা হচ্ছে অকৃত্রিম প্রাকৃতিক জগত আর দুটোই দৃশ্য জগত। আর যে দৃশ্য জগতে সে যাচ্ছে সেটা কৃত্রিম জগত। মানে artificial world। এই কৃত্রিম জগত এবং অকৃত্রিম প্রাকৃতিক জগতের সাথে যে বিরোধ আমরা মনের ভিতর তৈরী করি সেখানেই আসল গন্ডগোল বাঁধে। অর্থাত আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার প্রাকৃতিক জগতের সাথে এই অভিজ্ঞতার বাইরের দৃশ্য জগতকে মেলাতে চাই। সাযুজ্য করাতে যাই। এই সাযুজ্য খুঁজতে গেলেই কতটা সাযুজ্য পাওয়া গেল আর কতটা পাওয়া গেল না সেটা দেখতে চাই। এবার যখন সাযুজ্য পেলাম না বা গড়মিল পেলাম, ঐ কাজটার সাথে ঠিক মিলছে না, গাছটা গাছের মত হচ্ছে না, পাখীটা পাখীর মত মনে হচ্ছে না, তখন এই সমস্যাগুলো দেখা যায়।
ধরা যাক এই পাখীর কথা হল, পাখীরা একটা জীব, অনেক রকম পাখী হয়। কিছু পাখী উড়তে পারে, কিছু পাখী উড়তে পারে না, যেমন অস্ট্রিচ উড়তে পারে না। তো এইটা পাখীর কিছু অভিব্যক্তিজনিত অবস্থানে উড়ছে, অর্থাত কোনো উড়ন্ত জিনিসকে পাখী বলে ভ্রান্তি হতে পারে। শিল্পী মনে করতে পারেন যে এই রেখাটা একটা উড়ন্ত রেখা, সেটা পাখীর মত। সেটা পাখীর আকার নিয়েছে কি না, পাখীর কোনো Anthropological category এসেছে কি না এটা গুরুত্ব পেল না। গুরুত্ব পেল তার ধর্মটা। উড়ে যাবার ধর্ম বা ওরকম কিছু। সেরকম গাছের ধর্ম হচ্ছে গাছ একটা জায়গা থেকে, মাটি থেকে উপর দিকে ওঠে। উপর দিকে ওঠার তার কটা চাহিদা আছে, সে জল চায়, আলো চায়। এই যে growing pattern, উঠে যাবার যে ভঙ্গী সেই ভঙ্গীটা তাকে গাছ বলে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট। এবার আমি যদি সেটা কাঁঠাল গাছ, আম গাছ এভাবে বিচার করতে যাই, তখন তার কতগুলো অন্য সমস্যা দেখা যায়।
এইগুলো…….মানে, একজন দর্শক যদি এই ধরণের চর্চা করে থাকেন…...যেমন একজন শ্রোতা…...সে একটা যদি আমাদের রাগ সংগীত শুনতে যায়…...তার প্রথমেই মনে হচ্ছে যে রাগ সংগীতের পরিচিত কথাগুলি…...যাতে আমি বুঝতে পারি, সেরকম কোনো কথা এখানে বলছে না…...একটা বন্দিস করছেন যার কোনো কথা আমি বুঝতে পারছি না…….তো তখন শ্রোতার একটা বিরক্তি হবে । তার তো নিজের মধ্যে রাগ সংগীতের প্রতি একটা অনীহা জন্মাবে।
কিন্তু রাগ সংগীতের প্রতি তার আগ্রহ থাকতে থাকতে তার নিজস্ব আগ্রহ যদি জন্মায়, রাগ সংগীত বার বার শুনতে শুনতে বা নির্বোধ হয়ে বার বার বিচার বিবেচনা না করে যদি সে শুনতে থাকে একটা সময়ে সেই সংগীত তার মনের এমন একটা স্তরে পৌঁছাবে যেখানে সে আস্তে আস্তে দেখবে, যে, সে কথাগুলো বুঝতে পারছে, বন্দিসটা বুঝতে পারছে। তারপর রাগকে চিহ্নিত করতে পারবে। রাগ কি করে কোন সময়ের কথা বলছে,সেই সময়কে চিহ্নিত করতে পারবে। তখন সেই উপলব্ধির জায়গাটা আসবে। এই ধৈর্য এবং চর্চা, এই দুটো জিনিস এখানে খুব জরুরি।
শিল্পের ক্ষেত্রেও এই ধৈর্য এবং চর্চা দুটোই খুব জরুরি।
প্রথম হচ্ছে যে, শিল্পীকে তৈরি করা হয়। আমরা আগে জানতাম যে শিল্পী প্রতিভা নিয়ে জন্মায়, আজকের দিনের কথা হচ্ছে যে, শিল্পী তৈরি করা হয়, শিল্পী কিছু নিয়ে জন্মায় না। শিল্পীকে বানিয়ে তোলা হয়। একটা দল, দলের কতগুলি ভাবনা, শৃঙ্খলা আছে, সেই শৃঙ্খলা দিয়ে শিল্পীকে তৈরি করা হয়। An artist been made, been born না, সেই ‘মেড’ যেহেতু তখন তার নিশ্চয় কোনো শৃঙ্খলা থাকবে, কার্যকারণ থাকবে, সেই কার্যকারণ দিয়ে শিল্পী তৈরি করা হয়।
এবার এই যে শিল্পের জগত যে জায়গাটা, সে জায়গাটা খুব বিচিত্র। সে জগত সম্বন্ধে তোমাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়। স্টেটসে একটা শিল্প বিদ্যালয়ে পড়তে গেলে একজনের ভারতীয় টাকায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লাগবে। তো পঞ্চাশ লক্ষ টাকা কোনো পরিবারে যদি শিল্পী তৈরি করার জন্য লাগে, তাহলে সেই পরিবারের সংস্কৃতি কি হবে? সেই পরিবারের সেই ছেলেটির আকৃতি বা ভাবনা…...তার শৈশব কেমন হবে, কৈশোর কেমন হবে?
এটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা…..তো তার দেখার জগত টা কি হবে? সে নিশ্চয়ই সাঁওতাল সমাজে গিয়ে ছবি আঁকছে না বা গুগলি খাচ্ছে না বা হাঁড়িয়া খাচ্ছে না। এই যে প্রোডাক্টটি মানে ওই কোট আনকোট শিল্পীটি…….যিনি এত টাকা দিয়ে শিল্প শিক্ষা করে এলো, তাহলে তাকে এমন একটা সমাজে শিল্প বিবেচনা করতে হবে যে সমাজ এরকম একটা ভ্রান্তি…...ঐ সমাজের উপর মহলের ভেসে থাকা মেঘের মত থাকতে পারে। সে নীচের দিকে নামবে না। নীচের দিকে তাকাবে না। এবার এটা থেকে যে আর্ট-ই হোক, তা সে কন্সেপচ্যুয়াল আর্ট হোক, ধারণা শিল্প হোক, স্থাপনা শিল্প হোক, শিল্পের বিরোধিতা হোক, বিপ্লব হোক……...মিউজিয়াম উইদ্যাউট ওয়াল যে কন্সেপ্টটা এসেছিল, যে জাদুঘর ভেঙে ফেলা হোক……..সবটাই এসেছিল এরকম একটা সমাজ থেকে। যে সমাজের সমস্যাটাই হচ্ছে এই…..যে…..ব্যক্তির আবেগ, ব্যক্তির অভিব্যক্তি…...সেটার জায়গা থেকে এই কল্পনার জগতটাকে সরিয়ে নিয়ে তাকে একটা চূড়ান্ত কৃত্রিম জগত এবং সম্পূর্ণভাবে একটা পুঁজিবাদী সমাজের হিস্যা করা হবে। কারণ পুঁজিবাদ থেকেই তো এই ইয়েটার জন্ম হয়েছিল।
আরেকদিকে, আমি যখন আর্ট কলেজে এসেছিলাম ষাটের দশকে, তখন আমার প্রাত্যহিক বরাদ্দ ছিল এক টাকা। একশো পয়সা, তখন একশো পয়সা মানে ছিল ষোলোআনা। তো একশো পয়সার মধ্যে আমার যাতায়াত এ লাগতো কুড়ি পয়সা, দশ পয়সা ট্রাম বা বাসে লাগত, আর সেকেন্ড ক্লাসে গেলে লাগত আট পয়সা, ফার্স্ট ক্লাসে গেলে দশ পয়সা, আমাদের জিনিসপত্র, ক্যানভাস ট্যানভাস নিয়ে অনেক সময় সেকেন্ড ক্লাসে উঠতে হত, ফার্স্ট ক্লাসে উঠতে দিত না, কিছু আবার ফার্স্ট ক্লাসে উঠতে দিত, সেকেন্ড ক্লাসে উঠতে দিত না - সেসব ছিল, যাইহোক অনেক সময় হয়েছে ক্যানভাস কাঁধে করে নিয়ে হাঁটতে হয়েছে, ট্রামে উঠতে দেয় নি। সেরকম বহুদিন গেছে, ট্রামে উঠতে দেয়নি। তো এইটা ছিল, আর বাকি আশি পয়সার মধ্যে তিরিশ পয়সা ক্যান্টিনের সাবসিডিয়ারি খাবার, তাহলে হয়ে গেল তিরিশ আর কুড়ি পঞ্চাশ পয়সা, আর পঞ্চাশ পয়সা বাঁচলো, তাতে রং কাগজ কেনা।
আমরা তখন কিলো দরে কাগজ কিনতাম আর পেন কালি জোগাড় করতাম। এখন এই, যে……..এটাকে তো এক কথায় সবাই আর্থিক দৈন্যতা বলবে…….কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে বা ভাবনার মধ্যে কোনো দৈন্যতা বা আমরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছি, এ ভাবনাটা কাজ করেনি। কী ভাবনা তাহলে কাজ করেছিল ? কাজ করেছে, যে, আমার সামনে একটা পরিবেশ আছে, পরিস্থিতি আছে, তার সাথে আমাকে মানিয়ে কাজ করতে হবে, তার যেটুকু চাহিদা তা পূরণ করতে হবে কলেজে থাকার জন্য, সেইটা করার জন্য যত রকম ভাবে পরিশ্রম করা যায় করবো। এবার অনেক কাজ করতাম…….অনেক কাজ করে নিয়ে আসতাম…….সেইভাবে নিজেকে তৈরি করেছি…….সবটাই ওই বানিয়ে…….কল্পনার জগতে তৈরি করেছি।
একটু অন্যিভাবে ভাবা যাক ।আসলে বাজারকে আমরা প্রচলিত ধারণায় বাজার বলি…..মানে একটা চত্বর….হাট-বাজার। গ্যালারি একটা বাজার….প্রদর্শন কক্ষ একটা বাজার। সেইগুলো শারীরিকভাবে না থাকলে আমাদের মনে হয় বাজার নেই। কিন্তু ডিজিটাল আর্ট শুধু বাজার নিয়ন্ত্রিত আর্ট নয়….. এই আর্ট বাজার সর্বস্ব।
প্রথমত ডিজিটাল….যা কম্পিউটার নামক একটি যন্ত্র থেকে উৎপাদিত হয়। সেই যন্ত্রের কার্যকরণ সফটওয়ার বা নরম পানীয়ের মত নরম কার্যপদ্ধতি…..যা বাজার বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা উৎপাদিত। সমস্ত সফটওয়ার…..তা পাইরেটেড হোক বা জাল হোক বা খাঁটি…..তা সংগ্রহ করতে হয়। বাজার সেখানে আছে। যা উৎপাদিত হল….তা সর্বজনের সামনে দেখাতে হলে আন্তর্জালের মাধ্যম লাগে….যা বাজার নিয়ন্ত্রিত। তাকে সামনে দেখা যায় না কিন্তু সে ভীষণভাবে উপস্থিত। দ্যাখো, এই যে হোয়াটসঅ্যাপ….নেট….কোনওটাই তো বিনামূল্যে আসে না, আমাদের পকেট অলক্ষ্যে কাটা হয়। এবং পকেটটি পিছনের পকেট। বাজার বহুরূপী এবং নানা রঙ মেখে মনোরঞ্জন করে।
এবার খাঁটি বা অরিজিনালের প্রশ্ন। এই খাঁটি কথাটা কতটা খাঁটি…...সেও তো বিভ্রান্তিমূলক। আজকাল তার প্রচারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য….বা কপিরাইট আটকাতে…..ওয়াটারমার্ক দেওয়ার রেওয়াজ। ওয়াটারমার্ক ছাপ নিতে গেলে কড়ি গুনতে হয়। হাই রেজোলিউশন বা লো রেজোলিউশনের ব্যবস্থা আছে। কোনও ইমেজকে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে লো রেজোলিউশনে নির্বাচন করে….অনুমতি চাইলে…..কড়ি গুনে দিলে তবেই হাই রেজোলিউশন বা ব্যবহারযোগ্য ইমেজ পাওয়া সম্ভব হয়। ডাউনলোড তখনই সম্ভব….কড়ি দেওয়ার পর। তাহলে দেখা যাচ্ছে বাজার তার পোষাক পাল্টেছে মাত্র।
এবার অরিজিনাল বা কপির প্রসঙ্গ…..এই কথাটাও তো উঠছে প্রচলিত ধারণা থেকেই। অরিজিনাল কাকে বলে, নানা অবস্থানে তার নানা রূপ। এই যেমন ধরো, একবার বিড়লা একাডেমিতে ফরাসী পোস্টারের খুবই দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়েছিল। যিনি সংস্থার আধিকারিক তাঁর বক্তব্য ছিল, সমস্ত পোস্টারই ছাপা পোস্টার এবং প্রতিলিপি, মূল কাজগুলি ফরাসী সরকার দেয়নি। সেই ভদ্রমহিলার আর্ট কলেজের বার্ষিক প্রদর্শনীর পোস্টারগুলো যা ছাত্রদের ক্লাস ওয়ার্ক এবং হাতে আঁকা, দেখে মনে হয়েছিল, পোস্টার শিল্পটি বোধ হয় সব দেশেই অমন হাতে আঁকা হয় এবং তার প্রতিলিপি হয়। অশিক্ষার ফল এই সব। পোস্টার শিল্পটি একটি ছাপ-যন্ত্রের উৎপাদন। সেই ছাপ-যন্ত্রে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকগুলি স্তর আছে। তাতে আলোকচিত্র আছে, হস্তলিপি আছে। নানা যন্ত্রের ব্যবহার আছে, সম্মিলিতভাবে যাকে প্রি-প্রেস বলে। তারপর মূল শিল্পকর্মটি উৎপাদিত হয় ছাপ-যন্ত্রে। তাই তার কোন অরিজিনাল অবস্থানই নেই। তা একটি চিত্রকলা নয় যাকে সংরক্ষিত করতে হয়। এখানে ওই উৎপাদিত ছাপা পোস্টারটিকেই অরিজিনাল ধরা হয়। এবং নানা সময়ে ব্যবহারে তা নষ্ট হয়, হারিয়ে যায়, এবং দুষ্প্রাপ্য হয়ে হয়ত একটি দুটি সংরক্ষণ করা যায়। পোস্টারটি ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত হয়েছিল, তাই তার সামগ্রিক ব্যবহারেই তার সার্থকতা। সংরক্ষণের জন্য তো সেই পোস্টার উৎপাদিত হয়নি।
কম্পিউটারে উৎপাদিত ইমেজ বা তথাকথিত চিত্রটিও ঠিক তাই। তাকে ছাপযন্ত্রে নিয়ে এলে…. রঙ….পিগমেন্টেশন...বা ইত্যাদির জন্য সমস্ত ছাপাই এক হয় না। পালটে যায়। যেমন ধরো, প্রিন্ট মেকিং, এচিং, লিথো, উডকাট ইত্যাদি অনেকগুলি ছাপা হয়। কিছু আর্টিস্ট প্রিন্ট নামে অভিহিত হয়। প্রিন্টের নীচে সংখ্যা বসানো হয়। এবং ছাপা হয়ে গেলে….মূল ধাতু বা প্লেটটি নষ্ট করে তারও ছাপ নেওয়ার রীতি….প্রমাণ করা যে যতগুলি সংখ্যা বা ছাপ নেওয়া হয়েছে….তার প্রমাণস্বরূপ…..মানে, যতোগুলো বলা হয়েছে তার বেশী প্রিন্ট নেওয়া হবে না….এখানেই বাজার বা অর্থমূল্য এসে গেল। যে অর্থমূল্য ধরা হয়েছে….তাকে….বা তার শর্ত অনুযায়ী...সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত। তা অনন্ত নয়। এবার ধরা যাক যন্ত্রে নির্মিত দৃশ্য, তার ছাপ নেওয়া হল। তার লিমিটেড এডিশন করা হল, শিল্পী স্বাক্ষর করলেন তাতে। তারপর সেই মূল্ রেন্ডারিং ডিলিট করে দেওয়া হল, গুগল স্টোরে তার কোন চিহ্ন রাখা হল না, কোন ব্যাক আপ রাখা হল না। তার প্রমাণ পেশ করা হল এবং অর্থমূল্য ধার্য হল। বাজার ঢুকে পড়ল। বাজার তো একটি অদৃশ্য প্রতিষ্ঠান, আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের স্বপ্নও নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের অদৃশ্য শৃঙ্খল হাতে পরানো আছে।
শিল্পবাজারের ওপর….আলাদা করে….কোনও অভিঘাতই নেই। মঞ্চে অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাকে ক্যামেরাবন্দী করা হচ্ছে। তারপর তার ছাপ বা ডিভিডি বাজারজাত করা হল, যাকে নকল করা কঠিন। হ্যাক তো সবই হয়। কিন্তু হ্যাক করতেও যন্ত্র লাগে, যা আসলে পণ্য। বাজার-পণ্য, যার জন্য অর্থমূল্য দিতে হয়েছে। মুক্তি নেই।
তুলি যেমন একটি যন্ত্র, বাটালি যেমন একটি যন্ত্র, তেমনি কম্পিউটার একটি যন্ত্র, যা মানুষ নামক আরেকটি জটিল ও প্রকাণ্ড যন্ত্র ব্যবহার করে। সমস্ত সোলার সিস্টেমের বাহ্যিক রূপ একটি মনুষ্যমূর্তি। তাই এর নানা রূপ…..নানা কর্মপদ্ধতি। হস্তও যন্ত্রচালিত।
দ্যাখো, জল আগামী দিনেও ওপর থেকে নীচেই নামবে। কৃত্রিমভাবে তাকে আকাশে ছুঁড়ে দিলে সে নীচে নেমে আসবে। তাই শিল্পের ও কল্পনার মৃত্যু নেই। মনুষ্যসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও তার ধ্বংস হয়না।
হয়তো ঈশ্বর কিছুকালের জন্য তিরোধানে যান, আবার ফিরেও আসেন।
--গুরুচণ্ডা৯ থেকে কিছুদিন আগে প্রকাশিত বই 'রং নাম্বার' এর অংশবিশেষ