২০১২-এর ডিসেম্বর — এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের ডাক্তাররা জেনেরিক নামের ওষুধ লিখছিলেন যা সদ্য হাসপাতালে খোলা ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে পাওয়া যায়। স্থানীয় ওষুধের দোকান ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার নিয়োজিত গুন্ডারা তাঁদের শারীরিক নিগ্রহের হুমকি দেয়। ডাক্তাররা পুলিশে রিপোর্ট করেন, কয়েকজন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে।
২১শে জানুয়ারী, ২০১৩ পশ্চিমবাংলার ওষুধ দোকানীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিসিডিএ — বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য জুড়ে প্রায় ৩০ হাজার ওষুধের দোকান বন্ধ রেখে, আনুমানিক ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা ছেড়ে পথে নামেন ওষুধ বিক্রেতারা। তাঁদের সাত দফা দাবি —
বিসিডিএ সাতটা দাবীর কথা বললেও তাঁদের আসল কথা—সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার বিরোধিতা।
সরকার যে বিসিডিএ-র আন্দোলনকে পাত্তা দিতে চায় না বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিক তার পরদিন মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে এস এস কে এম হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান উদ্বোধন করিয়ে।
তারপর রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার কিছু ওষুধ দোকানীর কৈফিয়ৎ তলব করেছেন কেন তাঁরা ঐ দিন দোকান বন্ধ রেখেছেন জানতে চেয়ে।
সরকারের অনমনীয় মনোভাবের সামনে, সরকারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের চাপে বিসিডিএ ঘোষণা করেছে যে সরকার ঘোষিত ১৪২ ধরনের ওষুধ তার সদস্যরা ৩০-৭০% ছাড়ে বিক্রি করবেন।
আরেকটা পন্থা তাঁরা অবলম্বন করেন—ন্যায্য মূল্যের দোকানে সব ওষুধ পাওয়া যায় না, কেউ ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনলে তাঁকে প্রেসক্রিপশনের বাকি ওষুধ বিক্রি করতে তাঁরা অস্বীকার করতে থাকেন।
সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাদের নিয়ে তিনি হানা দিয়েছেন এস এস কে এম-এর বিপরীতের ওষুধের দোকানগুলোতে, দোকানীদের সাবধান করেছেন, সরকারি ডাক্তারদের লেখা কিছু প্রেসক্রিপশন বাজেয়াপ্ত করেছেন, যাতে জেনেরিক নামে ওষুধ না লিখে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ লেখা হয়েছে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান সরকারের কাছে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হয়ে উঠেছে।
জনসাধারণকে কম দামে ওষুধ যোগানোর জন্য সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের দোকান
২০১২-র জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট আহ্বান করে ৩৫ পাতার এক দলিল প্রকাশ করেন, উদ্দেশ্য নির্বাচিত কিছু সরকারি হাসপাতালে পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নায্য মূল্যের দোকান স্থাপন করা, যেখানে ওষুধ, চিকিৎসায় ব্যবহার্য সামগ্রী (consumables) এবং শরীরে স্থাপনযোগ্য সামগ্রী (implants) সর্বোচ্চ খুচরো দামের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা হবে।
যে সব হাসপাতালে এই সব ন্যায্য মূল্যের দোকান খোলা হবে বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে—কলকাতার ৫টা মেডিকাল কলেজ-সহ মোট ৬টা হাসপাতাল; দার্জিলিং জেলায় নর্থ বেঙ্গল মেডিকাল কলেজ সহ ৩টে হাসপাতাল; উত্তর ২৪ পরগণা, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে মেডিকাল কলেজ সহ ২টো করে হাসপাতাল; নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হুগলি, বীরভূম ও পূর্ব মেদিনীপুরের ২টো করে হাসপাতাল; মালদার মেডিকাল কলেজ হাসপাতাল; হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ১টা করে হাসপাতাল। অর্থাৎ মোট ৩৫টা হাসপাতালে।
এখন অবধি ৩২টা দোকান খোলা হয়েছে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন দু’মাসের মধ্যে সংখ্যা দাঁড়াবে ৫২।
কী কী পাওয়া যাবে এসব দোকানে?
তালিকা ঘেঁটে দেখা গেল—
একটা বিষয়ে অন্তত সরকার আইন ভাঙায় প্রশ্রয় দিচ্ছে
ফার্মাসিস্ট ছাড়া আইন অনুযায়ী ওষুধের খুচরো দোকান চালানো যায় না। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলা থাকবে ২৪ ঘন্টা। ৮ ঘন্টা কাজের সময় ধরলে অন্তত তিন শিফটে তিন জন ফার্মাসিস্ট লাগে একেকটা দোকানে। নির্দেশিকায় কিন্তু দোকান-পিছু একজন ফার্মাসিস্ট ও অন্তত চারজন সহায়কের কথা বলা হয়েছে, তার মানে হয় দিনে ১৬ ঘন্টা ফার্মাসিস্ট থাকবেন না অথবা ফার্মাসিস্টদের ৮ ঘন্টার বেশি সময় খাটানো হবে।
একটা বিষয়ে লুকোছাপা নেই — ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান হল পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ
স্বাস্থ্য দপ্তর কী দেবে?
ব্যবসায়ী কী করবেন?
পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আমরা বিরোধী কেন না তাতে সরকারি জমিতে, সরকারি নানা সুবিধা ও মদতে ব্যবসা চালিয়ে মুনাফা লোটে পুঁজিপতি জনসাধারণের ঘাড় ভেঙে। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে তা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। কেন এমনটা বলছি জেনেরিক ওষুধের দাম নিয়ে আলোচনা করার সময় বোঝা যাবে।
যে ভাবে সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের দোকান খোলা হচ্ছে তাতে ছোট ব্যবসায়ীরা অবলুপ্ত হয়ে যাবেন, মুনাফা লুটবে বড় ব্যবসায়ীরা।
এই ব্যবস্থায় ছোট ওষুধ দোকানি, পাইকারি বিক্রেতা বা সরবরাহক প্রতিযোগিতায় নামতেই পারবেন না বলাই বাহুল্য। সরকারি জমিতে, সরকারের যোগানো খদ্দেরদের ওষুধ বেচে আরও ফুলে ফেঁপে ঊঠতে পারবে কেবল অ্যাপোলো, ফ্র্যাংক রস, প্রভৃতির মত ওষুধের দোকানের চেন।
৪০-৭০% ছাড় আসলে কোনও ছাড়ই নয়
বর্তমানে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ৪০-৭০% ছাড়ে বিক্রি করছে।
আমি যে সংগঠনের সঙ্গে কাজ করি, সে সংগঠন গরীব মানুষদের জন্য কম খরচে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার কয়েকটা ক্লিনিক চালায়। আমাদের ড্রাগ লাইসেন্সযুক্ত ওষুধের দোকানে কী দামে ব্র্যান্ডেড জেনেরিক ওষুধ কিনি, কীই বা তাদের MRP—উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না।
ওষুধের নাম | যে দামে কিনি | MRP | মুনাফা কতটা হতে পারে? | মুনাফা (%-এর হিসেবে) |
এমোক্সিসিলিন ২৫০ মিগ্রা ক্যাপসুল | ১ টাকা ২৯ পয়সা | ৩ টাকা ৯০ পয়সা | ২ টাকা ৬১ পয়সা | ২০২.৩২% |
এমোক্সিসিলিন ৫০০ মিগ্রা+ ক্ল্যাভুলিনিক এসিড ১২৫ মিগ্রা ক্যাপসুল | ৮ টাকা ৬৫ পয়সা | ৪১ টাকা ৬৭ পয়সা | ৩৩ টাকা ২ পয়সা | ৩৮১.৭৩% |
সেট্রিজিন ১০ মিগ্রা বড়ি | ১৯ পয়সা | ২ টাকা | ১ টাকা ৮১ পয়সা | ৯৫২.৬৩% |
ডমপেরিডন ১০ মিগ্রা বড়ি | ২৫ পয়সা | ৩ টাকা ১০ পয়সা | ২ টাকা ৮৫ পয়সা | ১১৪০% |
গাবাপেন্টিন ১০০ মিগ্রা বড়ি | ১ টাকা ৫০ পয়সা | ৪ টাকা ২০ পয়সা | ২ টাকা ৭০ পয়সা | ১৮০% |
এমিট্রিপ্টিলিন ১০ মিগ্রা বড়ি | ৩০ পয়সা | ১ টাকা ১০ পয়সা | ৮০ পয়সা | ২৬৬.৬৬% |
এটেনেলল ৫০ মিগ্রা বড়ি | ২২ পয়সা | ২ টাকা ১৫ পয়সা | ১ টাকা ৯৩ পয়সা | ৮৭৭.২৭% |
এম্লোডিপিন ৫ মিগ্রা বড়ি | ৩০ পয়সা | ২ টাকা ২০ পয়সা | ১ টাকা ৯০ টাকা | ৬৩৩.৩৩% |
এনালাপ্রিল ৫ মিগ্রা | ৪৮ পয়সা | ৩ টাকা | ২ টাকা ৫২ পয়সা | ৫২৫% |
যেখানে ১৮০% থেকে ১১৪০% লাভ হয় সেখানে ৪০-৭০% বা ৩০-৭০% ছাড় আসলে কোনও ছাড়ই নয়।
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের চালাকি
অধিকাংশ ওষুধ জেনেরিক নামে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় ব্র্যান্ডেড জেনেরিক রূপে—কোম্পানির জেনেরিক ডিভিশনের উৎপাদন, যার একটা নাম দেওয়া হয়েছে, যে নাম কোম্পানি ডাক্তারদের কাছে প্রচার করে না, সরবরাহ করে হাসপাতাল বা অন্য প্রতিষ্ঠানে।
একই ওষুধের ব্র্যান্ডেড জেনেরিক বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন MRP-তে বিক্রি করে।
বিনোদ কুমার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর এক প্রকল্প www.medguideindia.com ওষুধ সম্পর্কে তথ্য যোগানোর এক নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট। সেখানে দুটো বহুল-ব্যবহৃত ওষুধের তথ্য দেখছিলাম—জ্বর ব্যথা কমানোর প্যারাসিটামল আর জীবাণুনাশক সিপ্রোফ্লক্সাসিন।
ওয়েবসাইটে ১৫৩টা কোম্পানির প্যারাসিটামল (৫০০ মিগ্রা)-এর খবর পেলাম। সবচেয়ে কমদামের জেনেরিক এসিকেম ল্যাবরেটরিস-এর, একটা বড়ির দাম ২২ পয়সা। সবচেয়ে বেশি দামের জেনেরিক ইউনিভার্সাল ড্রাগ হাউস প্রাইভেট লিমিটেড-এর, একটা বড়ি ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। সবচেয়ে কমদামি ব্র্যান্ড কিন্তু সবচেয়ে কমদামি জেনেরিকের চেয়েও কমদামি এলবার্ট ডেভিড-এর Parazine, একটা বড়ি ১৫ পয়সা।
ওয়েবসাইটে ৫৩১টা কোম্পানির সিপ্রোফ্লক্সাসিন (৫০০ মিগ্রা) আছে। সবচেয়ে কমদামের জেনেরিক ক্যাডিলা-র, একটা বড়ির দাম ১ টাকা ৫৪ পয়সা। সবচেয়ে বেশি দামের জেনেরিক এগ্রন রিমেডিস প্রাইভেট লিমিটেড-এর, একটা বড়ি ৬ টাকা ১৮ পয়সা। সবচেয়ে কমদামি ব্র্যান্ড সবচেয়ে কমদামি জেনেরিকের চেয়ে অনেক কমদামী আল্ট্রামেডিক্স-এর Ciplac, একটা বড়ি ৬০ পয়সা।
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলো বেশি দামের ব্র্যান্ডেড জেনেরিকস স্টক করছে। তাতে ছাড় দিয়েও যা দাম দাঁড়াচ্ছে, তা অনেক কোম্পানির ব্র্যান্ডেড ওষুধের দামের চেয়েও বেশি।
এছাড়া একেক সরকারি হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে একেক রকম ছাড়তো আছেই।
সরকার ডাক্তারদের ব্র্যান্ড নাম লেখা বন্ধ করতে চান
মেডিকাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ২০০২ সালে কোড অফ এথিকস-এ বলেছে ডাক্তারদের যথাসম্ভব জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা উচিত। বিভিন্ন সময় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি ডাক্তারদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করতে বারণ করেছে।
তাহলে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে কেন? বাজারজাত হচ্ছে কেন? একদিকে সরকার ব্র্যান্ড নামের ওষুধ, অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে দেবে আর ডাক্তারদের বলবে এসব লেখা যাবে না — এমনটা হয় নাকি!
সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তেমনটা করত যেমন করেছিল আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার — অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিষিদ্ধ করে।
সরকার কী করতে পারে?
স্বাস্থ্যখাতে সরকারি ব্যয় বর্তমানের জিডিপির ১.৪% থেকে বাড়িয়ে দ্বাদশ পরিকল্পনার শেষে অন্তত ২.৫% সরকার সমস্ত নাগরিকের জন্য প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও উচ্চস্তরের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারে তা হিসেব করে দেখিয়েছেন ডা শ্রীনাথ রেড্ডি-র নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনা কমিশনে স্বাস্থ্য বিষয়ক উচ্চেস্তরীয় কমিটি।
তাঁদের সুপারিশ—
তাঁদের মতে ওষুধ মানুষের নাগালে আনতে—
কেন্দ্র সরকারই বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ মানে নি। রাজ্য সরকারেরও দায় নেই মানার।
রাজ্য সরকার কী করতে পারত?
সরকারি উদ্যোগের সমর্থক যাঁরা তাঁরা বলছেন—সরকার নিজে ওষুধ বেচা শুরু করলে দুর্নীতির উৎসমুখ খুলে যাবে। সরকারি কর্মচারীরা নানা স্তরের দুর্নীতিতে লিপ্ত হবেন।–এ প্রসঙ্গে একটা কথাই বলার সরকারি উদ্যোগ-প্রতিষ্ঠান তুলে দিয়ে বেসরকারিকরণের প্রবক্তারা কিন্তু এই একই যুক্তি হাজির করেন।
এত সব বলার পরও ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানকে আমি স্বাগত জানাব এ কারণে যে — সরকারের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ওষুধ-ব্যবসায়ীদের স্বরূপ চিনতে আমাদের সাহায্য করেছে, তেমনই আমরা চিনতে পারছি আমাদের সরকারকে!