মাতলামি ভাল, না আঁতলামি ভাল, এই নিয়ে দ্বিমত আছে। কেন দ্বিমত, তা নিয়েও দ্বিমত আছে। এ বলবে এর মত, তো ও বলবে ওর মত। ফলে ব্যাপারটা সেই আদিম যুগ থেকেই কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে থেকে গেছে। কেন কে জানে!
যাঁরা আঁতলামিকে ভাল বলেন, তাঁরা বলেন যে আঁতলামিতে পয়সা খরচা হয় না, কথা জড়িয়ে যায় না (যদিও অনেকে আবার জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলাটাকেই আঁতলামি ভাবেন, তবে তা আপাতত থাক), থাম ধরতে হয় না, নর্দমায় পড়তে হয় না ইত্যাদি, ফলে আঁতলামি নাকি মাতলামির থেকে ঢের ঢের ভাল! বিশেষ করে ওই নর্দমায় পড়ার ব্যাপারে তাঁরা রীতিমত আতঙ্কিত!
আঁতেলদের নিয়ে এটাই মুশকিল! তাঁরা এটা সেটা নিয়ে অহরহ চিন্তা করেন, সভা করেন, লেখালেখি করেন, কিন্তু নিশ্চিন্তে নর্দমায় শোয়ার যে কী আনন্দ, সেটিই তাঁরা আজ অবধি উপলব্ধি করতে পারলেন না! যার ফলে সেদিন শুনলুম কিছু আঁতেল নাকি একত্রিত হয়ে মাতালদের হাত থেকে নর্দমাগুলিকে রক্ষা করবার জন্য একটি “নর্দমা বাঁচাও আন্দোলন” গড়ে তোলবার প্রস্তাব দিয়েছেন। কী মেধা!
যাই হোক, এসব অবান্তর কথা এখন থাক, ফিরে আসা যাক আসল ব্যাপারে। অবশ্য বলা যায় না, কিসের থেকে কী হয়, কাজেই কোনটা অবান্তর, সেটাও সবসময় স্পষ্ট নয়। এই ধরুন না কেন রায়নার কথা – এবার ইংল্যান্ডে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ে অবান্তর হয়ে গেল, ফলে বেজায় দুঃখ পেল, কিন্তু তাতে কী হল? তাতে রায়না দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যান্দের মত ঝোলাল না, ফলে এক দিনের খেলায় আবার ডাক পেল, সেখানে প্রচুর রান করল, এবং প্রচুর বাহবা পেল, একেবারেই আর অবান্তর রইল না!
আবার ফিরে আসি আসল কথায়, আর আসল কথা হচ্ছে আমাদের পাড়ার কয়ালের মাঠের কথা। পাঁচুর মায়ের চোলাইয়ের দোকানের পেছনেই কয়ালদের মস্ত বড় মাঠ, ইতিহাসের গোড়ার ঠিক পর থেকেই সেখানে নাকি পাড়ার (এবং বেপাড়ার) মাতালরা হিসি করে এসেছেন। সেই নিয়েও কিছু আঁতেল কিছুদিন হল বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এবং এদের উস্কে দিচ্ছেন কিছু দুষ্ট প্রোমোটার। ফলে ইদানীং বেশ কটা জনসভা হয়ে গেল পাড়ায়, কয়ালের মাঠ নাকি ঘিরে দেওয়া হবে, সেখানে আর হিসি করা চলবে না, সেখানে নাকি ফুলবাগান হবে, ইত্যাদি!
তবে মাতালরাও ছাড়বার পাত্র নন, তা সে তাঁরা নর্দমাতেই শুয়ে থাকুন, বা থামই ধরুন! তাঁরাও “অ্যাকশন ও রি-অ্যাকশন”এর স্বাভাবিক কারনে গর্জে উঠেছেন ইদানীং! তাঁরাও এখন একত্রিত হয়ে শুনছি একটি “হিসিজমি সংরক্ষণ সমিতি” (“হিসস”) গড়ে তুলেছেন, যাদের একমাত্র দাবি – কয়ালের মাঠে হিসি করতে দিতে হবে, দিতেই হবে। ফুলবাগান যদি হয় হোক, তাতে কোনও অসুবিধা নেই, বরং মাতালদের হিসিতে অ্যামোনিয়ার ভাগ নাকি দারুন, ফলে এতে ফুলগাছেদের বেজায় উপকার হবে।
আঁতলামির সঙ্গে মাতলামির এই দ্বন্দ্ব চিরকালের, এ দ্বন্দ সহজে মিটবার নয়। যুগ যুগ ধরে আঁতেলরা মাতালদের হেয় করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গান লিখে, পদ্য লিখে, পোস্টার বানিয়ে, লেকচার দিয়ে, সব রকম ভাবে! ফলে মাতালদের চিরকালের বদনাম! তবে কয়ালের মাঠের ঘটনার পর আপাতত বেশ জোর দিয়েই বলা যায়, অবশেষে মাতালরাও জেগে উঠেছেন। মাতালদের জন্য বিশেষ স্কুল ও কলেজ খোলা হয়েছে – যেখানে সব রকমের মাতলমি সহজ ভাবে শেখানো হবে। মিন্টো পার্কের কাছে লা মাতালিয়া স্কুলে এখন ছাত্র ছাত্রীর কী ভিড়! আর লেক রোডে দারুচন্দ্র কলেজও নাকি দারুন চলছে।
খেলা জমে উঠেছে – দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে জেতে।