জীবন থেকে, রাজনীতি থেকে ধর্ম, স্পিরিচুয়ালিটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলে রক্ষণশীলতার প্রতিক্রিয়া কীভাবে সমাজকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে, তার প্রমাণ এই বাইশে জানুয়ারি দুহাজার চব্বিশ।
এবারে ভাবুন একটা ফ্যাসিস্ট, ধর্মান্ধ, প্রাগৈতিহাসিক হিন্দুরাষ্ট্রে কীভাবে বাঁচবেন।
মুসলমানরা ও মহিলারা বিশেষ করে ভাবুন। যাঁরা বিজ্ঞানে ও আধুনিকতায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা বিশেষভাবে ভাবুন।
ভাবুন কীভাবে, কেমন দেশে সন্তানদের মানুষ করবেন। কাজকর্ম, চাকরি অথবা ব্যবসা বাণিজ্য করবেন।
গণতন্ত্র শেষ। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ শেষ। সমানাধিকারের ধ্যানধারণা একেবারেই শেষ। মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন জীবনযাত্রার কনসেপ্ট এদেশে এখন শেষ হলো।
ইসলামী ধর্মান্ধরা যে রাস্তায় যাবে, সে রাস্তায় গেলে বাঁচার আর কোনো রাস্তা থাকবেনা, ফিরে আসার কোনো রাস্তা থাকবেনা। আগেই সাবধান করে দিলাম।
মোদী আরএসএস বিজেপি কিন্তু অনেক বেশি সৎ, কারণ ওরা কখনো নিজেদের হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। ওরা মুখে মার্ক্সবাদের কথা আর কাজে দুর্গাপুজোর প্রেসিডেন্ট হয়নি। কাজ না করে শুধু বড় বড় কথা বলেনি। অর্থনীতিকে ডুবিয়ে রাজনীতি করেনি।
ওরা ভারতের কথা নিজেদের মতো করে বলেছে, যা সাধারণ মানুষ সহজ ভাষায় বুঝতে পারে। ওরা আঁতলামি করেনি।
এবং সাধারণ মানুষ -- মেজরিটি হিন্দু -- বিরাটভাবে সাড়া দিয়েছে। দলিতরা এসসি এসটি ওবিসিরা পুরোনো নির্মম অত্যাচার অপমান অসম্মানের কথা ভুলে গিয়ে ওদের এখন সমর্থন করছে -- আশার ছলনায়।
ওরা দেশের ইতিহাস, দেশের ধর্ম, দেশের মনীষীদের ভুলে গিয়ে ফাঁপা আন্তর্জাতিকতার কথা কখনো বলেনি। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করে শেষ হয়ে যায়নি। পশ্চিমবঙ্গে একুশটা বামপন্থী দল ওদের কখনো হয়নি।
সেদিক থেকে দেখতে গেলে ওদের আমি বিশালভাবে কংগ্র্যাচুলেট করবো।
একশো বছর ধরে আরএসএস এই সময়টার জন্যে অপেক্ষা করেছে, এবং নিরলসভাবে কাজ করে গেছে। ওদের আমি সারা জীবন খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার বাবা জিতেন্দ্রনাথের সারা জীবনের ত্যাগ ও ডেডিকেশন দেখেছি। আরো অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ খুব কাছ থেকে দেখেছি। সেসব কথা লিখে রেখেছি আমার বইগুলোতে।
ওদের আদর্শ ভয়ঙ্কর, ফ্যাসিস্ট আদর্শ। ওরা ঘৃণা, হিংসা, প্রাগৈতিহাসিকতায় বিশ্বাস করে। কিন্তু সে বিশ্বাসে ওরা অচল, অটল থেকেছে।
ভারতবর্ষ এবং তার কয়েকশো বছরের সামাজিক প্রগতিকে ওরা আজ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দিলো।
এ ক্ষতি শুধু এ এদেশের ক্ষতি নয়। মানবজাতির ক্ষতি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।