এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য

  • মাতলার চর: অন্তহীন আবর্ত - পর্ব এক

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    অন্যান্য | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪০৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • পর্ব এক | পর্ব দুই
    দীনু মণ্ডল প্রায় তিন পুরুষ ধরে মাতলা নদীর এই চরের এক ফালি জমি নিয়ে ভাগে চাষ করে। চাষের কিছু অংশ বাবুদের দিয়ে ভাগচাষীদের যতটুকু থাকে তা দিয়ে কোন রকমে চারজনের সংসার চলে যায় দীনুর। তাছাড়া মাতলার জলে মাছের অভাব নেই। দু এক খেপ জাল ফেললে হরেক রকমের মাছ উঠে আসে। মাছ বেচেও দু এক পয়সা আসে। মাতলা নদীতে হঠাৎ কখন কখনও ছোট বড় চর উঠে – এক একটা ক্ষুদে দ্বীপের মত। দাদুর মুখে শুনেছিলো এমনই এক চর উঠেছিল এই মাতলার বুকে অনেক কাল আগে। লোকমুখে নাম হয়ে যায়, সরকারদের চর। এমন নাম কি করে হল তা নিয়ে অনেক গল্প আছে। তবে যে গল্পটা বিশ্বাস যোগ্য বলে মনে হয় সেটা এই রকম।

    এ অঞ্চলের বিত্তবান ও প্রতিপত্তিশালী জমিদার ছিলেন চন্দ্রশেখর সরকার। জমিদার হিসেবে তাঁর যেমন সুনাম ছিল বদনামও ছিল তেমনই। দুঃস্থ প্রজার মেয়ের বিয়েতে টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন। আবার সুযোগ পেলে প্রতিবেশী দুর্বল জোতদারের জমি ছলে-বলে-কৌশলে দখল করতেন। যদিও নায়েব গোমস্থারাই খাজনা আদায় ও জমিদারি দেখাশোনার সব কাজই করতো তবুও চন্দ্রশেখর কাছে দূরের জমিদারিতে গিয়ে প্রজাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। চন্দ্রশেখরের অনেকগুলো নৌকো আর একটা বেশ ভাল বজরা ছিল। তিনি সাধারনত বজরা নিয়েই দূরের জমিদারীতে যেতেন। নদীতে জোয়ার এলে তবেই বজরা ছাড়ত, তা সে কখনো মাঝ রাতে কখনো বা ভর দুপুরে। একবার বজরা ছাড়তে দেরী হোল, তখন প্রায় জোয়ার শেষ হয়ে এসেছে। বজরাটা বেশ ধার ঘেঁসে যাচ্ছিল, জোয়ার শেষ হয়ে ভাঁটা আসছে, ধীরে ধীরে জল কমছে। চন্দ্রশেখর তাড়া দিলেন, তাড়াতাড়ি বজরা মাঝ নদীতে নিয়ে চল। আকবর আলি সবচেয়ে অভিজ্ঞ মাঝি, আজ তিন পুরুষ ধরে জমিদার বাড়ির বজরার মাঝি। ওদেরই পরিবারের লোক আকবর আলি চন্দ্রশেখরের পিতার আমলের মাঝি, বয়স হয়েছে অনেক, প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বারও শরীরটা ভাল নেই, তাই চন্দ্রশেখরের সঙ্গে আসতে পারে নি। ছেলে সাহেব আলি এবারে হেড মাঝি হয়ে এসেছে, সঙ্গে আছে অবশ্য আরো চার জন। পাঁচ জন মাঝি ছাড়াও চন্দ্রশেখরের সঙ্গে আরও কিছু লোকজন আছে – নায়েব মশাই, রাঁধুনি, লাঠিয়াল কালু সর্দার আর তাঁর সব সময়ের সঙ্গী রজত রায়। রজত রায় চন্দ্রশেখরের বন্ধু ও বিবেক, রাজত রায় সুগায়ক এবং পরামর্শদাতা। ইনি চন্দ্রশেখরের স্পঞ্জ --- রাগ, দুঃখ, যন্ত্রণা, অকাজ-কুকাজ সব কিছু শুষে নেন। রজত রায়ের প্রচন্ড আপত্তি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত চন্দ্রশখরের অর্থানুকূল্যে রজত রায়ের জীবন ও সংসার চলে ভালই।

    সাহেব আলি তিরিশের কাছাকাছি, পোক্ত মাঝি কিন্তু অভিজ্ঞতা কম, এরকমের অবস্থায় পড়েনি কখনো। হাওয়া বেশ জোরে বইছে। দাঁড়ে আছে সাহেব, কিন্তু বজরাটাকে ঠিকমত সামলাতে পারছে না। কি হল বুঝতে পারল না, হঠাৎ দেখল নদীর বুক থেকে উঠে আসা একটা বালির ঢিবিতে বজরা আটকে গেছে। এখন পুরো ভাঁটা, বজরা নড়বে না আর। চন্দ্রশেখর রজত রায়কে সঙ্গে নিয়ে বজরার ছাদে উঠলেন। উপর থেকে চারিদিক দেখে রজত রায় বললেন, ‘সরকার মশাই, মনে হচ্ছে মাতলার বুকে নতুন চর উঠছে।’ জোয়ার না এলে বজরা ভাসবে না, আর জোয়ার আসতে এখনো প্রায় ছ’ঘন্টা বাকি। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলেছে। রজত বাবু নীচে থেকে তানপুরাটা আনিয়ে একটা গৌড় সারঙ ধরলেন। চন্দ্রশেখর দেখলেন নদীর বুক জুড়ে চিক চিক করছে এক সাদা পিণ্ড। চারিদিক দেখে একটু অবাক হয়ে গেলেন। দেখলেন জলের মধ্যে থেকে মাথা উঁচু করে উঠছে এক টুকরো বালির ঢিবি। বুঝলেন মাতলার বুকে আস্তে আস্তে একটা নতুন চর জন্ম নিচ্ছে – একটা নতুন পথিবীর সৃষ্টি হচ্ছে। এখন ভাঁটা তাই দেখা যাচ্ছে, জোয়ার এলে জলের মধ্যে ডুবে যাবে, আর দেখা যাবে না। চন্দ্রশেখর বরাবর জোয়ারের সময়ই এই দিক দিয়ে যাতায়াত করেছে তাই কখনো চোখে পড়ে নি।
    জোয়ার এলে মাঝিকে বললেন বজরা ঘোরাও, বাড়ী চল।

    ফিরে এসে পরেরদিন কিছু লোকজন আর লম্বা লম্বা বাঁশ ও একটা খড়ের চালা নিয়ে নৌকো করে চললেন সেই চরের দিকে। চরে গিয়ে সেই লম্বা বাঁশ গুলো বালিতে এমনভাবে পোঁতার ব্যবস্থা করলেন যাতে জোয়ার এলেও যেন বাঁশের শীর্ষ প্রান্ত দূর থেকে দেখা যায়। তারপর সেই বাঁশগুলোর উপর মাচার মতো করে খড়ের চালাটা বেঁধে দিলেন। সেই শুরু। তারপর যতবারই এইদিক দিয়ে যান লক্ষ্য করেন চরটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, ঘাস হচ্ছে, আগাছা জন্মাচ্ছে ; একটা বড়সড় পরিসরের জমির আকার নিচ্ছে। চরের উপর পলি মাটি পড়ে পড়ে জমিটা খুব উর্বর হয়ে উঠবে, আশা করলেন চন্দ্রশেখর। একদিন সুযোগ বুঝে কিনু মণ্ডলের ঠাকুরদা মতি মল্ডলকে বসিয়ে দিলেন একটা মাটির কুঁড়ে ঘরে।

    ক্রমে ক্রমে চরটা বাড়তে বাড়তে একটা ক্ষুদে দ্বীপের আকার নিল। চর ও মূল গ্রামের মধ্যবর্তী জলপ্রবাহ আস্তে আস্তে ক্ষীণকায় হতে লাগলো। কয়েক বছর পর দেখা গেল ভাঁটার সময় গ্রামের লোকেরা হেঁটে হেঁটেই চরে আসতে শুরু করেছে। দিনে দিনে নদীর অন্য পাড়ের জলস্রোত প্রখর হল এবং নদীর প্রধান স্রোতধারা এই পাড়কেই ভরসা করে বইতে থাকল। মাতলা তার গতিপথ পরিবর্তন করল। মাতলা এখন আরো দুর্দান্ত আরো প্রশস্ত; ভরা জোয়ারে এ-পার ও-পার দেখা যায় না। মাতলার এখন মাতলামি বেড়েছে বেশি, আরো বেশি আগ্রাসী, খেয়ালী। কখনো এ পাড় ভাঙছে, কখনো ও পাড়।

    কিনু মণ্ডল কিন্তু এসব কিছুই দেখেনি। সরকারদের চর বলে জায়গাটার নাম শুনেছে, বাপ-ঠাকুরদার কাছে, শুনেছে এর জন্ম বৃত্তান্ত, সেই পর্যন্ত। ও যখন বড় হয়েছে তখন থেকেই দেখছে সরকারদের চর গ্রাম গোবিন্দপুরের একটা অংশ।

    সে দিন সকাল থেকে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। সারা আকাশটা মুখ গোমড়া করে আছে। ভাত রান্না করার হাঁড়ির তলার মত কালো মেঘ যেন সারা পৃথিবী ছেয়ে ফেলেছে। কানুর কোন কাজ নেই আজ। নতুন কাজের খোঁজেও যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে দাওয়াতে মাদুর বিছিয়ে মাতলার জলের উথাল পাথাল দেখে আর বিদ্যুতের চমকে চম্কে উঠে সারা দিনটা অলসভাবে কাটিয়ে দেয়। কানু একটা বিড়ি ধরিয়ে জোরে হাঁক দিল – ‘ও ভানুর মা, একটু চা দিবা নাকি?’ কানুর বৌয়ের বিয়ের আগে একটা নাম ছিল। কিন্তু সেটা অনেক দিনের অব্যবহারে হারিয়ে গেছে।

    কানুর বৌয়ের মুখটা বেশ গোল গোল, হাসি হাসি। তার বাবা নাম রেখেছিলো চাঁদনি। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেল আর বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাচ্চা হল --- ভানু। ভানু জন্মাবার পর থেকেই সকলে ওকে ‘ভানুর মা’ বলে ডাকে। সেই থেকেই পাড়াপড়শী বাড়ীর সকলের কাছেই ও ‘ভানুর মা’। ডাক শুনে ভানুর মা জবাব দিল --- ‘একটু সবুর কর, জল বসায়ছি।’ মিনিট দশেক পরে ভানুর মা একটা ছোট গামলাতে তেল মাখা পেঁয়াজ মুড়ি ও একটা এলুমিনিয়াম মগে চা নিয়ে কানুর সামনে রাখল। ‘এই নাও, আজ কাজে যাবা না?’

    সারাদিন ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কাটল। সন্ধ্যের দিকে ঝড়ের গতি আরো বাড়ল, গাছগুলো যেন সদ্য স্বামীহারা রমনীর মত আছুড়ি বিছুড়ি খাচ্ছে। তালে তাল দিয়ে মাতলাও ভয়ংকরী হয়ে উঠেছে,যেন সব ভাঙার পণ নিয়ে নটরাজের সঙ্গে প্রলয় নৃত্যে মেতেছে। ঘরের মধ্যে একটা হারিকেন জ্বেলে দিনু আর ভানুর মা ভানুকে গল্প বলার চেস্টা করছিল। কিন্তু প্রকৃতির এই দুর্যোগে কারোরই আর মন বসছিল না, কেমন যেন ভয় ভয় করছে। ওরা তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় চলে গেল। মাঝ রাতে এক প্রচন্ড শব্দে দিনুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনে হল যেন বিছানার কাছে মাতলার জল এসে আছড়ে পড়ছে, যেন হাজার বিষাক্ত সাপ ফনা তুলে তার ভিটেবাড়িতে ছোবল দিছে।

    চন্দ্রশেখর সরকারের মৃত্যুর পর জমিদার পরিবারের পতন শুরু হল। চন্দ্রশেখররা ছিলেন চার ভাই। ভাইদের মধ্যে সদ্ভাবও ছিল যথেষ্ট। একান্নবর্তী পরিবার --- সকলে মিলে শ্রম ও বুদ্ধি দিয়ে জমিদারি বাড়িয়ে ছিলেন প্রচুর। চার ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই বিবাহিত ছিলেন না। তাই বাকি তিন ভাইদের সন্তান সন্ততিরাই এই অবিভক্ত জমিদারির মালিক। পরের দুই পুরুষের কারও মধ্যেই সেই জীবন দর্শন, উদ্যোগ, মানসিকতা, বুদ্ধি বা মনবল কিছুই ছিল না। আলস্য ও দায়িত্বহীনতা সকলকে গ্রাস করেছিল। ইতিমধ্যে সব সংসার মিলে মানুষ যত বাড়তে থাকল জমিদারির জমি বা আয় তত বৃদ্ধি পেল না। ফলে জীবনযাত্রার মান ক্রমশঃ কমতে লাগল এবং একদা স্বচ্ছল জমিদার পরিবারে দারিদ্র্যের ছায়া নেমে এল। একান্নবর্তী পরিবার আস্তে আস্তে ভেঙে গেল। সমষ্টিগত উন্নতির কথা চিন্তা করে না কেউ আর। ছোট ছোট পরিবারগুলো নিছক বেঁচে থাকার তাগিদে স্বার্থপরতাকে আঁকড়ে ধরল। বহু দিনের অযত্নে সেই বিরাট জমিদার বাড়ী – অন্দর মহল, বাহির মহল, পূজোবাড়ী – সব ভাঙতে সুরু করল। দক্ষিণের বড় ঘর ও দালান, যে ঘরে চন্দ্রশেখর থাকতেন, সেই ঘরের ছাদ ফেটে জল পড়তে সুরু করল। বাড়ীর যে অংশ এখনো বাসযোগ্য আছে সে অংশের ঘরগুলো যে যা পারে সে দখল করে বসল। যার ও বাড়ীতে স্থান হল না বা যার একটু অবস্থা ভাল সে অবিভক্ত ভিটে বাড়ীর জমিতেই নিচুমানের কংক্রিটের ছোট ছোট বাড়ী তৈরি করে নিল। ঘর মানে একজনের কাছে একটা মাথা গুঁজার ঠাঁই, আর অন্যজনের কাছে একটা শিল্প। চন্দ্রশেখরের পূর্ব পুরুষ যে বাড়ী তৈরি করেছিলেন তা ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, উঁচু মানের। তাঁদের যে রুচি ছিল, স্থাপত্যশিল্পবোধ ছিল তার পরিচয় রেখে গিয়েছিলেন এই বাড়ীর পরিকল্পনায়। বাড়ীর সঙ্গে লাগানো পুকুর, চারিদিক ঘিরে হরেক রকমের ফল ফুলের গাছ গাছাড়ী। এই প্রজন্মের মানুষের সেই রুচি ও শিল্পবোধ ছিল না, বা সেই সামর্থ্যও ছিল না। সরকার বংশের অধোপতনের অন্যতম আরো এক কারণ ছিল বোধহয়; চন্দ্রশেখরের মত ব্যক্তিত্ব উত্তরসূরীদের মধ্যে দেখা গেল না।

    চন্দ্রশেখরের চতুর্থ প্রজন্ম বিধুশেখরের বয়স যখন দশ বারো তখন থেকেই ও বহির্মুখী, এই গন্ডি থেকে বের হতে হবে। ছোট বেলা থেকেই পড়তে ভালবাসে খুব। হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়েই বসে যায়; আর পড়তে পড়তে স্বপ্ন দেখে। আদি বাড়ীর পুবের দুটো নোনাধরা ঘর নিয়ে বিধুশেখর বাবা মার সঙ্গে থাকে। একটা ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, যে কোনো দিন দেয়ালটা ফাঁক হয়ে ছাদ ধ্বসে পড়তে পারে। যথা সময়ে বিধুশেখর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল। কিনু মন্ডল ও বিধুশেখর প্রায় একই বয়সী। সেই একই দিনে কিনুও ভর্তি হল গ্রামের সেই স্কুলে। প্রথম শ্রেণীতে ছাত্র সংখ্যা কম। সকলে একসঙ্গে খেলাধুলা করে। সমবয়সি ও সহপাঠী বিধুশেখর ও কিনুর মধ্যে একটা সখ্যতা গড়ে উঠল। বিধুশেখর পড়াশুনায় ভাল, মন দিয়ে পড়াশুনা করে; মাস্টারমশায়ের প্রিয় ছাত্র। কিনুর মস্তিস্ক অত পরিস্কার নয়, পাঠ্য বিষয় সব সময় বুঝতে পারে না, তবে যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে ও সময় দিয়ে প্রতিদিনের পড়া করতে চেস্টা করে। বিধুশেখর ওকে সাহায্য করে। বিধুশেখর স্বপ্ন দেখে, কল্পনার জগতে বিচরণ করে। কিনুর মন পড়ে থাকে ধানের ক্ষেতে, জমির কাজে বাবার কাছে। প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ হল। পাঁচ বছর এক সঙ্গে পড়াশুনা খেলাধুলা করার পর দুজনের পথ দুদিকে চলে গেল। কিনুর পড়াশুনা করার ইচ্ছা বা সামর্থ্য কোনটাই নেই। নাম সই করতে পারে, মোটামুটি যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করতে পারে, এই যথেস্ট। ওর একটা বোন হয়েছে, সংসারের খরচ বেড়েছে। বাবার কাজে একটু সাহায্য করলে, আরো দুচারটে মাছ ধরলে সংসারে একটু সুরাহা হয়। কিনু বাবার সঙ্গে কাজে লেগে গেল।

    বিধুশেখরের বাবা-মা চায় ওদের যত কস্টই হোক বিধুশেখর যতদিন চায় ততদিন পড়াশুনা করুক, যতদূর যেতে চায় যাক। যদিও ওরা ভালভাবেই জানে এ-দেশে উচ্চ শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ পেশাদারি বিদ্যাশিক্ষার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সে অর্থ তাদের নেই। যাহোক এই মুহূর্তে সে কথা ভেবে কিছু লাভ নেই। গ্রাম থেকে একটু দূরে একটা সেকেন্ডারি স্কুল আছে। বিধুশেখর সেই স্কুলে ভর্তি হল। প্রথম দিনেই এই স্কুলটা খুব ভাল লেগে গেল ওর। বিশেষ করে একটা কারণে। এখানে লাইব্রেরি আছে, আর সেখান থেকে বই বাড়ীতে নিয়ে আসা যায় এবং এখানে প্রতিদিন খবরের কাগজ আসে। এতো স্বপ্ন – বিনা পয়সায় বই পড়া যাবে, কাগজ পড়া যাবে। নতুন উদ্যমে পড়াশুনা সুরু করল। তবে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বইতেই ওর আকর্ষণ বেশি। গুছিয়ে কথা বলতে পারত ভাল। আর বিভিন্ন ধরণের বই ও নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ার ফলে ওর কথাবার্তার মধ্যে নতুন নতুন বিষয় ও বৈচিত্র্য থাকতো। বুদ্ধিমান ছাত্র বলে ওর খ্যাতি ছিল, জ্ঞানের ব্যাপ্তি ও গভীরতা ওর মধ্যে যা ছিল তা ওর সমবয়সী ছাত্রদের মধ্যে ছিল না। ফলে শিক্ষক মহলের কাছে ও খুব প্রিয় ছিল। সৎ, সহৃদয় ও নমনীয় স্বভাবের জন্য সকলেই ওর বন্ধুত্ব কামনা করত। ক্রমে ক্রমে সেকেন্ডারি স্কুলের দিন শেষ হল। শেষ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। বেশ ভাল ভাবে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হল সে।

    সমস্যা শুরু হল এবার। কোথায় পড়বে? কি পড়বে? ও মনে মনে ঠিক করেছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে, কিন্তু কোথায়? বাড়ী থেকে যাতায়াত করা যায় এমন দূরত্বের মধ্যে কোন ভাল কলেজ নেই। একটু ভাল কলেজে পড়তে গেলে কলকাতা যেতে হয়। কলকাতার কোনো কলেজে পড়া মানে ওখানে কোন ছাত্রাবাসে থাকতে হয়। তেমন সামর্থ্য নেই ওদের। কাছাকাছি যে কলেজটা আছে সেটা প্রায় দশ মাইল দূরে। নবনগর কলেজ। রায়বাহাদুর মুনাফ আলি খানের পরিবার এ অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী পরিবার। শোনা যায় এঁরা কোন এক নবাবের বংশধর। এই মহকুমা শহরের পশ্চিম দিকে প্রচুর জমির উপর মস্তবড় অট্টালিকা এঁদের। কলকাতাতেও কয়েকটা বাড়ী আছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংরেজ রাজকে খুশী করে রায়বাহাদুর খেতাব পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি জিন্নার দলে যোগ দিয়ে মুসলিম লীগের এক ছোট খাটো নেতা হয়েছিলেন। ঊনিশ্যসাতচল্লিশে দেশ বিভাগের কিছুদিন আগেই কলকাতার সব বাড়ী বিক্রি করে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান রায়বাহাদুর মুনাফ আলি। কিন্তু যাওয়ার আগে মহকুমা শহরের জমিজমা বাড়ীঘরের কিছু গতি করে যেতে পারেন নি। শেষ মুহূর্তে রায় বাহাদুর মুনাফ আলি খান ও তাঁর পরিবার মহকুমা শহরের এই সৌধ ফেলে রেখে চলে গেলেন। অল্প কিছুকাল পরে শহরের পৌরসভা এই জমি অধিকার করে নেয়। রায়বাহাদুরের এই সৌধ ও সংলগ্ন জমিজমা নিয়ে গড়ে উঠে এই কলেজ।

    এটি একটি মিউনিসিপ্যাল টাউন। নামে নবনগর কিন্তু নব্যতা স্পর্শ করেনি খুব একটা। এটি একটি বর্ধিষ্নু গ্রাম ছিল। ইংরেজ আমলে শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য এখানে কোর্ট কাছারি স্থাপন করে সহ মহকুমা অধিকারকের (এস ডি ও) অধীনে এই শহর তৈরি হয়। তখন থেকেই এর নাম নবনগর। সে বহুদিনের কথা। সেকালে অবশ্যই এ টি নতুন শহর ছিল --- কোর্ট কাছারি, এস ডি ও-র বাংলো, হাসপাতাল,থানা পুলিস, সিনেমা হল, টাউন হল, ছেলেদের স্কুল, মেয়েদের স্কুল, ছোট বড় এক তলা দুতলা পাকা বাড়ীতে ভরা ছোট্ট শহর। তবে কোনো কলেজ ছিল না। সাতচল্লিশ সালে ভারত ভাগের পর শহরের চেহারা পালটে গেল। রাতারাতি শহরের লোকসংখ্যা দ্বিগুন হয়ে গেল --- পুর্ব বংগ থেকে গৃহহারা শরণার্থীরা এসে ভরে দিল শহর।

    এই সময়ের কিছুদিন পরেই নবনগর কলেজ স্থাপিত হল রায় বাহাদুর মুনাফ আলি খান পরিবারের জমিতে। বিধুশেখর যখন এ কলেজে ভর্তি হল তখন নবনগর কলেজ একেবারে শিশু, মাত্র পাঁচ বছর আগে জন্ম নিয়েছে। বিধুশেখরের ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে,কিন্তু এ কলেজে এখনো বিজ্ঞান বিভাগ সুরু হয় নি। কলেজ কতৃপক্ষের হাতে যথেস্ট পয়সা নেই। কেন্দ্র ও পশ্চিম বংগ সারকার থেকে যা ভুরতুকি পাওয়া যায় তা দিয়ে কলেজ চালানো দুস্কর। বড় বড় পৃষ্ঠপোষকদের কাছে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু এটাই বড় সমস্যা নয়, এর থেকেও বড় সমস্যা যেটা তার আকার অন্য। সমাধান দূরূহ। প্রত্যন্ত শহর, নতুন কলেজের কোন নাম নেই খ্যাতি নেই। উচ্চমানের বা অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের আকর্ষণ করা প্রায় অসম্ভব। অনেক প্রচেস্টা সত্বেও কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকার সামগ্রিক গুণমান কলেজের খ্যাতি বা ভাল ছাত্র আকর্ষণ করার পক্ষে যথেস্ট নয়। এখানে অধ্যাপনার জন্য যাঁরা আবেদন করেন তাঁদের বেশির ভাগই হয় সদ্য স্নাকোত্তর ডিগ্রী বা পি এইচ ডি করেছেন এবং অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা করতে চাইছেন অথবা কতিপয় কিছু অভিজ্ঞ অধ্যাপক যাঁরা কোন কারণে বর্তমান কর্মে অসন্তুস্ট। ছাত্রদের পরিস্থিতি অন্যরকম। এ শহরের অবস্থাপন্ন ঘরের বা পেশাদার সম্প্রদায়ের অর্থাৎ ডাক্তার উকিল উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী পরিবারের ছেলেমেয়েরা কলকাতার ভাল কলেজে পড়তে যায়। বৃত্তি পাওয়া ছেলে মেয়েরাও অন্য অপেক্ষাকৃ্ত নামকরা কলেজে চলে যায়। ফলে এ কলেজে শুধু নিম্ন ও মধ্যমানের ছাত্রের ভীড়। স্কুল ফাইনালে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রের সংখ্যা কম। তাই বিধুশেখরের উপর চোখ পড়েছিল অধ্যাপকদের।

    বিধুশেখর কৃশ, ঋজু, দীর্ঘকায়, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা সীমিত। মনের যত জোর, গায়ে তত জোর নেই। ওর বাড়ী থেকে কলেজের দূরত্ব খুব বেশি নয় – প্রায় বারো মাইলের মত। কিন্তু যাতায়াত করতে অনেক রকমের যানবাহনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয়। বাড়ী থেকে প্রায় দু মাইল হেঁটে বড় রাস্তায় বাস ধরতে হবে। তারপর বাসে আট মাইল গিয়ে ফেরি করে নদী পার হতে হবে। ফেরিঘাট থেকে আরো দু মাইল হেঁটে তবে কলেজ। সব কিছু যদি সময়মত হয় তবে যেতে লাগে প্রায় দু ঘন্টা। প্রতিদিন শুধু যাতায়াতে সময় লাগত চার ঘন্টা। সারাদিন কলেজ করে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে ও খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ত। জলখাবার খেয়ে রাত্রে যখন বই নিয়ে বসত তখন দুচোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করত। বই-র পাতা ঝাপসা হয়ে উঠত, মস্তিষ্কের দরজা বন্ধ হয়ে যেত। পড়া হত না আর।

    কোন কোন মানুষের জীবনে কোন এক সময়ে কিছু কিছু মানুষ, জীবিত ও মৃত, এমন করে দেখা দেয় যে তার জীবনের লক্ষ্য, গতিপথ সব উলট পালট হয়ে যায়। প্রত্যন্ত এই ছোট্ট শহরে এই কলেজে সেবার এক অভাবিত ঘটনা ঘটল। হঠাৎ দুই অভিজ্ঞ ও গুণী অধ্যাপক একই সঙ্গে নবনগর কলেজে যোগ দিলেন। ডঃ অমিয় কুমার চাকলাদার ও ডঃ জগদীশ চন্দ্র হালদার। অমিয়বাবু অর্থনীতির অধ্যাপক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত কৃতি ছাত্র। এঁর প্রবন্ধ ও গবেষণা পত্র দেশী ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। জগদীশবাবু ইংরেজীর অধ্যাপক। ইনিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ছাত্র, এম এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন। ইংরেজী এবং বাংলা দুই ভাষাতেই কবিতা লেখেন। বাংলা সাহিত্য জগতে কবি হিসাবে পরিচয় আছে। এঁরা দুজনে বন্ধু। এ হেন অধ্যাপক যুগল এমন এক শিক্ষাপীঠে কেন যে এলেন সে এক বিস্ময়। শোনা যায় এঁদের বামপন্থী মতবাদ পূর্বতন কলেজ কতৃপক্ষকে অসন্তুস্ট করেছিল। যে কারণেই হোক না কেন একের লোকসান অন্যের লাভ। এঁদের যোগদানে নবনগর কলেজ ঋদ্ধ হোল।

    এই দুই মহারথীরা যখন নবনগর কলেজে এলেন তখন বিধুশেখর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সারা কলেজের মধ্যে বিধুশেখর বেশ জনপ্রিয় তার নানাবিধ কর্মের জন্য, বিশেষ করে ছাত্র প্রধিনিধি হিসেবে। স্টুডেন্ট ইউনিয়ন-এর ও এক অন্যতম কর্মী। ঠিক এই সময়ে ওর পৃথিবীতে ডঃ অমিয় কুমার চাকলাদার ও ডঃ জগদীশ চন্দ্র হালদার যুগলের আবির্ভাব হল।

    অমিয় বাবু ও জগদীশ বাবু যে পরিবেশে ছিলেন সেখানে সাহিত্যের আড্ডা ছিল। নানামতের বুদ্ধিজীবী মানুষের সংগে চিন্তা ভাবনা আদান প্রদানের সুযোগ ছিল। উচ্চমানের সংগীত শিল্পীদের আসর হত। সাংস্কৃতিক সম্মেলন হত, থিয়েটার ছিল, শিল্প ও ছবির প্রদর্শনী হত, উৎকৃষ্ট ফিল্ম দেখার সুযোগ ছিল, রাজনীতি আলোচনা চক্র ছিল, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বের বক্তৃতা শোনার সুযোগ ছিল। ছিল সেমিনার, সভা সমিতি, বক্তৃতা দেওয়ার আমন্তণ, বন্ধুদের আড্ডা। এখানে এসব কিছুই নেই। অবশ্য সব জেনে শুনেই এঁরা এই স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলেন। কলেজে পড়ানোর কাজে চাপ ছিল না বেশী। অবসর ছিল অনেক। দুজনেই নিজের নিজের লেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন। বাকি সময় কাটত বই পড়ে ও গান শুনে। স্থানীয় লোকজনের সংগে মেলা মেশা করার চেস্টা করেছিলেন, কিন্তু কারো সংগেই কোন বিষয়েই আলোচনা করে সুখ পান নি, দীর্ঘ সময় কাটানো তো দূরের কথা। দু একজন বুদ্ধিজীবী পেশাদার মানুষের আড্ডাতেও গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে যে সব আলোচনা হয় তাতে মন দিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। তাই সে প্রচেস্টা থেকে বিরত থেকেছেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নাগরিকের সঙ্গে ‘আপনি কেমন আছেন, আমি ভাল আছি’-র বেশী সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। বই পড়ে গান শুনে নিজেদের সঙ্গেই তর্কবিতর্ক করে সময় কাটছিল ভালোই। জায়গাটা নিরিবিলি শান্ত। সময়ে অসময়ে চেনা শোনা লোক, আত্মীয় স্বজন এসে দরজার কড়া নাড়ে না। নিশ্চিন্তে নীরবে লেখার কাজ সারা যায়, গান শোনা যায়, নিবিষ্ট মনে গভীর ভাবে প্রিয় কোন বই-র মধ্যে ডুবে থাকা যায়। এমনি করে ভালই কাটছিল। হঠাত দুজনের মনে হল এভাবে শুধু সরস্বতী সাধনায় ও নিজেদের ভাল লাগার বস্তু নিয়ে বেঁচে থাকাটা বড়ই স্বার্থপরতার কাজ। সমাজকে কিছু দিতে হবে। ওঁদের কি আছে, কি দেবে? জগদীশবাবু বললেন, ‘এস, আমরা কিছু ছাত্র বেছে নিয়ে তাদের পড়াই। আমরা যা শিখেছি, বুঝেছি তার অভিজ্ঞান রেখে যাই। এ প্রজন্মের অন্তত দুচারটি প্রাণের মাঝে আমাদের শিক্ষার বীজ বপন করে যাই। যদি পারে এরা ছড়িয়ে দেবে তার ফসল এই সমাজে, সারা বিশ্বে। এস, দু একটি “মানুষ” তৈরি করি।’

    ‘সৎ উদ্দেশ্য’ সায় দিয়ে বললেন অমিয়বাবু। অমিয়বাবু বাস্তববাদী, স্বপ্ন দেখেন কম, কল্পনার জগতে বাস করেন না। যোগ করলেন, ‘আমি আছি, এখানকার একঘেয়ে জীবনে একটু বৈচিত্র্য আসবে। তবে কল্পনার বেলুন উড়িও না আকাশে। আকাংক্ষাকে ছোট করো। আশাহত হলে আঘাত পাবে। তোমার পরিকল্পনা আমার ভাল লাগছে। এসো কাজ করি। মা ফলেষু কদাচন। ফলের জন্য ভেবো না।’

    ক্লাস শেষ হলে জগদীশবাবু বিধুশেখরকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘তোমার ইংরেজী রচনা ও প্রবন্ধগুলো দেখেছি। একটু মাজা ঘসা করা দরকার। কলেজ শেষ হওয়ার পর কি করছ? আমাদের বাড়ীতে চলে এস না, চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে।’

    কলেজের কাছেই একটা বাড়ী ভাড়া করে ওঁরা থাকেন। একতলা ছোট বাড়ী, দুটো শোবার ঘর, স্নানঘর, রান্নাঘর। আর আছে দক্ষিণদিকে এক প্রশস্ত খোলা বারান্দা। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ হাওয়ায় এ স্থানটি বড়ই মনোরম। একজন বয়স্কা মহিলা আছেন যিনি রান্না করেন ও সেই সংগে বাড়ীঘরদোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন। বিধুশেখর বসার ঘরে একটা চেয়ারে এসে বসল। ঘরে এক দেয়াল জুড়ে একটা দীর্ঘ চৌকি, তাতে গদীর উপর ধবধবে সাদা চাদর পাতা ও চারটে নীল রঙের তাকিয়া বালিশ। সামনে একটা কফি টেবিল। টেবিল ঘিরে চক্রাকারে গোটাছয়েক নীচু চেয়ার। অন্য দেয়াল কয়েকটা কাঠের তাকে ঢাকা। তার বেশীটাই বইয়ে ভরা। একদিকের তাকে বেশ কিছু গ্রামোফোন রেকর্ড। পাশে একটা টেবিলে পুরানো দিনের এইচ এম ভি-র গ্রামাফোন মেসিন আর ফিলিপ্সের রেডিও। উলটো দিকে দেয়ালের সামনে একটা ছোটো টেবিলে ফুলদানীতে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা। তার উপরে দেয়ালে দুটো ছবি। প্রথমটি এক বংগ গৃহবধূর, টানা টানা ডাগর চোখ মুখের সীমানা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে। ওর একটু অদ্ভুত লাগলো। অন্যটি এক শ্বেতাঙ্গ নৃত্যরতা নারীর। বিধুশেখর ছবিদুটো চিনতে পারলো না। এর আগে দেয়ালে ঝুলানো এ ধরণের ছবি দেখেনি কখনো। যা দেখেছে তা পেরেক থেকে ঝুলানো দেয়ালপঞ্জী আর ঠাকুর দেবতার ছবি। ও ছবিদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরে অবশ্য একদিন যখন জগদীশবাবু দেশ বিদেশের শিল্পী ও ছবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন বলেছিলেন ওই ছবিদুটো কোন শিল্পীর। একটি ছবি এক বাংগালী শিল্পী যামিনী রায়ের, অন্যটি এক ফরাসী শিল্পী দেগা-র ‘ফুলের তোড়া হাতে নর্তকী’ (Dancer with a Bouquet)। এ দুটো আসল নয়, কপি।

    কিছুপরে আরো তিনজন ছাত্র এসে যোগ দিল। জগদীশবাবু ও অমিয়বাবু এসে বসলেন। চা জলখাবার এলো। জগদীশবাবু সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এক এক জনকে আলাদা করে তার বাড়ীর কথা, পড়াশুনার ইতিহাস, কার কি ভালো লাগে ইত্যাদি জানতে চাইলেন। শেষে বললেন, ‘তোমরা যদি ইচ্ছা কর তবে সপ্তাহে দিনতিনেক এখানে আসতে পার কলেজ ছুটির পর। আমরা তোমাদের পড়ার কাজে সাহায্য করতে পারি। পারশ্রমিকের কোন প্রশ্ন নেই।’

    বিধুশেখর আকাশ থেকে পড়ল, এ কি আশ্চর্য প্রস্তাব। এ কি বদান্যতা ! ওরা জানে জগদীশবাবু-অমিয়বাবুরা যদি কোচিং ক্লাস করতেন তাহলে ছাত্র ও অর্থের কিছুরই অভাব হতো না। বিধুশেখর তার বিষ্ময় আর আবেগ দমন করতে পারছিলো না। অভিভূতের মত বলল ‘আচ্ছা স্যার, আমি আসব।’

    পরের সপ্তাহ থেকে শিক্ষা শুরু হলো। জগদীশবাবু অমিয়বাবুর কাছে সব ছাত্রই ওঁদের বন্ধু। সকলকে সন্তানের মত দেখেন। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ভালোবাসার, শ্রদ্ধার, নিজ নিজ মতামতের আদান-প্রদানের, নির্ভয়ে বক্তব্য রেখে তর্ক ও আলোচনা করার। প্রথমদিনে ওদের স্বাগত জানিয়ে বললেন,’ আমরা তোমাদের বেছে নিয়ে এখানে ডেকেছি শুধু ইংরেজী বা অর্থনীতির পরীক্ষায় ভালো ফল করতে তৈরি করার জন্য নয়। পরীক্ষায় ভালো ফল অবশ্যই কাম্য, কিন্তু সেটাই শিক্ষার একমাত্র মাপকাঠি নয়। শিক্ষা হবে সর্বতোমুখী। শিক্ষা তোমাদের প্রস্তুত করবে রুক্ষ কঠিন বাস্তব জগতে সততার সঙ্গে মোকাবিলা করতে। শিক্ষা তোমাদের সৎ, দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করবে। শিক্ষার স্বাক্ষর থাকবে তোমাদের চরিত্রে, চলনে-বলনে, আচারে-ব্যবহারে, তোমাদের কর্মে।

    এখানের পঠন-পাঠনের কোন নির্ধারিত কার্য সূচী থাকতো না। প্রতি পঠন-কালে বিষয় নির্বাচিত হত ছাত্র ও শিক্ষকের ইচ্ছা ও মতামত নিয়ে। কোন দিন জগদীশবাবু থাকতেন, কোনদিন অমিয়বাবু, কোনদিন দুজনেই।

    ইংরেজী শিক্ষণকালে জগদীশবাবু বললেন, ইংরেজী তোমার ভাষা নয়, তোমার চারিপাশে যে সব মানুষজন আছে, তুমি যে পরিবেশে বিচরণ কর সেখানে কেউ ইংরেজী বলে না। সুতরাং তোমার ইংরেজী ভাষায় কথা বলা ও শোনার সুযোগ কম। এতদিন পর্যন্ত তুমি যা ইংরেজী শিখেছ তা স্কুলে কলেজে, বই পড়ে। তোমার মাতৃভাষা বাংলা, এই ভাষাই সহজাত। যে কোন বিদেশী ভাষা তোমাকে আয়ত্ত করতে হোলে নিজের মাতৃভাষায় পারদর্শী হোতে হবে। ভালকরে বাংলা বলতে হবে, বাংলা ভাষা শিখতে হবে।

    জগদীশবাবু চমৎকার বাংলা বলেন। স্পস্ট শুদ্ধ উচ্চারণ। উনি মিতভাষী, কথা বলেন কম কিন্তু যখন বলতেন যা বলতেন তা মনের মধ্যে গেঁথে যেত। বিধুশেখর ওঁকে যত দেখত ততই মোহিত হয়ে যেত, শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। অজান্তে কখন জানে না, ও জগদীশবাবুকে অনুকরণ করতে শুরু করতে করেছে। বাংলা শব্দ স্পস্ট করে উচ্চারণ করতে চেস্টা করলো। ক্রমে ক্রমে সচেতন ভাবে শব্দ চয়নে ও উচ্চারণে গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব বর্জন করতে চেস্টা করলো। এই ক’মাসের মধ্যে ওর হাবভাব কথাবার্তার কি দারুণ পরিবর্তন হয়েছে তা দেখে ও নিজেই অবাক হয়ে গেলো।

    জগদীশবাবু শুধু ইংরেজী শিক্ষা দিতে শুরু করলেন না -- সেই সঙ্গে বাংলাও। লেখার থেকেও বেশী জোর দিলেন কথা বলা ও উচ্চারণের দিকে। স্বচ্ছ পরিস্কার ও দৃঢ়প্রত্যয়ে কথা বলতে হবে। গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে আস্তে আস্তে মূলস্রোতের বাংলা উচ্চারণ শেখাতে লাগলেন। হস্র ‘ই’ ও দীর্ঘ ‘ঈ’ – র মধ্যে পার্থক্য কি, তালব্য ‘শ’ আর দন্ত্য ‘স’ -র উচ্চারণ করে দেখালেন। ‘নৃত্য’ যেন ‘নিত্ত’ হয়ে না যায়। বোঝালেন ‘’ আবৃত্তি সর্বশাস্ত্রাণাং বোধাদপি গরিয়সী’’। সঠিক উচ্চারণ করো, যা বলতে চাইছ তার অর্থ যাতে শ্রোতার কাছে পৌঁছয় সেই মনে রেখে শব্দ চয়ণ করো, বাক্য রচনা করো। বাংলা ভাষার এক বিশেষ বৈশিস্ট্য আছে যা ইংরেজী ভাষায় নেই। তোমাকে মনে রাখতে হবে যে বাংলা অক্ষরের উচ্চারণ সর্বদাই একই তা সে যে শব্দের মধ্যেই থাকুক না কেন, যেখানেই অবস্থান করুক না কেন। ইংরেজীতে কিন্তু তেমন নয়। কোন অক্ষরের একক উচ্চারণ নেই। একই অক্ষর বিভিন্ন শব্দে বিভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন ধরো অক্ষর ‘U’ ; এর সাধারণ উচ্চারণ ‘ইউ’। ‘ইউ’ বিভিন্ন অবস্থানে কখনো ‘ইউ’, কখনো ‘ু’ কখনো বা ‘আ’। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, UNIVERSITY, PUT ও BUT। এই শব্দগুলোর উচ্চারণ যথাক্রমে ‘ইউনিভারসিটি’ ‘পুট’, এবং ‘বাট’। এ সব তোমরা স্কুলেই শিখেছ। কিন্তু এই অবতরনিকাটুকু না করলে আমার বক্তব্য স্পস্ট হবে না। কখনো কখনো শব্দের মধ্যে অনুচ্চারিত অক্ষরও থাকে। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। অভিজ্ঞতা তোমাকে শেখাবে। সুতরাং বই পড়ে সব শব্দ তুমি ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারবে না। তোমাকে শুনতে হবে, বার বার শুনতে হবে, পড়তে হবে, শুনতে হবে। জগদীশবাবু থামলেন। তারপর উঠে গিয়ে রেকর্ড ক্যাবিনেট থেকে একটা রেকর্ড নিয়ে গ্রামাফোনে চাপিয়ে দিলেন, বললেন, ‘শোনো’। রেকর্ড বাজতে থাকলো। বিধুশেখর মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো। বিদেশী ছাত্রদের ইংরেজী শিক্ষণের রেকর্ড।

    এমনি করে শিক্ষা চলতে থাকলো। জগদীশবাবু কখনো নিজে উপন্যাস বা নাটক বা কবিতা পড়েন। ব্যাখ্যা করেন। কখনো রেডিও চালিয়ে দিয়ে বলেন ‘শোনো’। বি বি সি তে বিশ্বখবর বা নাটক বা তাত্বিক আলোচনা চলতে থাকে। কখনো কখনো বাড়ীতে করার জন্য কাজ দিতেন।

    অমিয়বাবু এসে একদিন ওদের সঙ্গে বসলেন। অমিয়বাবু জগদীশবাবুর বিপরীত। কথা বলতে ভালবাসতেন। কোন আসরে তাঁর উপস্থিতি কারো অগোচরে থাকতো না। একাই কথা বলতেন বেশী, অন্যদের বলার সু্যোগ দিতেন না। হাসিখুসী স্বভাব, সবারই প্রিয়জন। যখন হাসতেন তখন প্রাণ খুলে হাসতেন।

    অমিয়বাবু জিগ্যেস করলেন, ‘তোমরা সবাই পৃথিবীর খবর রাখো? জানো আজকের দিনে কোন দেশে কি হচ্ছে?’ একটু থামলেন, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার শুরু করলেন। ‘কোরিয়ায় যুদ্ধ হচ্ছে জানো? উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিন কোরিয়ার মধ্যে। যুদ্ধটা খুব ঘোরতর রূপ নিয়েছে। যুদ্ধটা যদিও দুই কোরিয়ার ঘরোয়া ব্যাপার তবুও পৃথিবীর বহুদেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আছে সোভিয়েট ইউনিয়ন, চীন আর দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে লড়াই করছে আমেরিকা, ব্রিটেন ও আর কিছু দেশ।’ বিধুশেখরের মাথায় কিছু ঢুকছে না, তবু কাহিনীটা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে। ও কোরিয়ার নাম শুনেছে, কিন্তু ঠিক যে কোথায়, কেন যে কোরিয়া ভাগ হয়ে দুটো দেশ হলো আর কেনই বা সোভিয়েট ইউনিয়ন, চীন, আমেরিকা ও অন্য অ-কোরিয়ান দেশগুলো সে দেশে গিয়ে যুদ্ধ করতে গেলো, তা বুঝতে পারলো না। অমিয়বাবু বলে চলেছেন, ‘পৃথিবীর খবর রাখো। দূর প্রান্তে কোথাও যদি রাজনীতির আবহাওয়ার বদল হয় তবে সে হাওয়া তোমাকেও স্পর্শ করবে। সে বসন্তের দক্ষিণী হাওয়া হতে পারে বা কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে, সে বাতাস তোমার জীবনকে নাড়া দেবেই, তা তুমি যতই চোখকান বুজে নিজের দুর্গে বসে থাক না কেন?’

    পরের দিন কোরিয়া যুদ্ধের সূত্র ধরে অমিয়বাবু বলতে আরম্ভ করলেন সোভিয়েট ইউনিয়নের জন্ম বৃতান্ত, চীনের জাগরণ। পরিচয় করিয়ে দিলেন কার্ল মার্ক্স-লেনিন-মাও-র সঙ্গে। সাম্যবাদ, কমিউনিজম। দিলেন কিছু বই ও পত্রিকা। গোগ্রাসে পড়তে শুরু করলো বিধুশেখর। মার্স্কবাদে হাতেখড়ি হলো ওর।

    শুধু যে সাহিত্য, রাজনীতি,অর্থনীতি চর্চা হত, তা নয়। কোন কোন দিন গান হত। গান শুধু গান, আর কিছু নয়। জগদীশবাবু গান গাইতেন ভাল, সুরেলা গলা। বাড়ীতে গান বাজনার চর্চা ছিল। ছোটবেলায় মার্গ সংগীতে তালিম নিয়েছিলেম এক বিখ্যাত ওস্তাদের কাছে। একটু বয়স বাড়লে রবীন্দ্রসংগীতে আকৃষ্ট হন। কলেজে প্রবেশ করার পর সব ছেড়ে ছুড়ে শান্তনিকেতনে চলে যান রবীন্দ্রনাথের শুদ্ধ গান শিখতে। দুবছর কাটিয়ে শেষ পরীক্ষা না দিয়েই ফিরে আসেন আবার নিয়মিত কলেজ জীবনে। অমিয়বাবুও সংগীত চর্চা করেন। বেহালা বাদনে দক্ষতা আছে। গান বোঝেন খুব ভাল। তবলার হাতও মোটামুটি। জগদীশবাবু তানপুরা নিয়ে নীচুস্বরে আলাপ শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে আলাপ বন্ধ করে ধরলেন একটি রবীন্দ্রসংগীত।

    বিরস দিন, বিরল কাজ, প্রবল বিদ্রোহে
    এসেছ প্রেম এসেছ আজ কী মহা সমারোহে।
    ......

    অমিয়বাবু বেহালার সুরে যোগ দিলেন।

    --- ক্রমশঃ, পরের সংখ্যায় সমাপ্ত ---
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব এক | পর্ব দুই
  • অন্যান্য | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Bishakha deb | 24.19.***.*** | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৯540302
  • বাহ্ , খুব ভালো লাগলো শেষ পর্বের জন্য 
    অপেক্ষা korchi❤️
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন