এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  মোচ্ছব

  • মিউজিক, ফুড অফ লাভ??

    Supratik Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | মোচ্ছব | ২০ মার্চ ২০২৫ | ৪৯ বার পঠিত
  • সেদিন পৌঁছে গেছিলাম এক ঘুপচি দোকানে। বাদ্যযন্ত্রে ঠাসাঠাসি। সরস্বতীর মন্দির! তাকিয়ে থাকতে বেশ লাগে। ফিজিক অফ ইনস্ট্রুমেন্ট। তালবাদ্য। ডাম্ব মেলোডি। শরীর!  আঙ্গুল ছোঁয়ালেই অরগাজমিক প্লেজার! কাম অ্যান্ড ফিল ইট। বাঁশিটা হাতে নিন। ফিল করুন এর কাঠের চামড়া! হাওয়া চুরি করে বাজনা বাজায় বাঁশি!  রাখালের মতো দুষ্টু।
    বৃদ্ধ বিক্রেতা। বাজনার বাজারদর কেমন?  
    আশি বছরের পুরনো দোকান। পিন্টু ভটচার্য আসতেন একসময়। আড্ডা মারতেন। কী মেসমেরাইজিং গলা! "এক তাজমহল গড়ো.. "
    বাবার প্রতিদিনের সঙ্গী ছিল গান। পিন্টু তরুন অখিলবন্ধু! চোরা চাহনিতে যখন মাতোয়ারা আমার জীবনের অলিগলি তখন হারমোনিয়াম বাগিয়ে এলেন গোলাম আলী।মুসাফির কা রাহো..
    সরস্বতী হিন্দুদের দেবী? বিসমিল্লার সানাইয়ে তাহলে অন্য কোনো দেবী থাকেন? বড়ে গোলাম আলী যখন দেশ রাগ ধরেন তাতে কোন দেবীর বাস?
    স্যাঁতলা ধরা তবলার গাব। লোকে বলে উটের চামড়া দিয়ে তৈরী। লক্ষণ দা তবলা সারাত। তবলার শরীর সারাত! সেই তবলার ওপর তাল সেঁটে দিতাম আমরা! ডুগিতে ক্লিঞ্চ করলে একটা অদ্ভুত শব্দ হয়।
    বাবা বলত এটা বম্বের দান!
    বোন মাত্রা গুনত! কাহারবা ক' মাত্রা?? তেওড়া?? একতাল?? দ্রুত দাদরা?
    বৃদ্ধ বাদ্যযন্ত্র! বৃদ্ধ বিক্রেতা! মহম্মদ রফির হাসি মুখ। হলুদ কভার। ধুলো পড়েছে।

     তানপুরা ভেঙে গেছিল রাঙামার! 
    লহড়ার বিহান! রবীন্দ্রভবন! 
    কায়দাবাজি! চার লয়! তুমুল হাততালি! বাবার ডানহাতে কড়া।
    আজকের এই দোকানটায় বসে আমার এসব মনে পড়ছে। বৃদ্ধের ঘোলা ফ্রেমের চশমা! একটু বসতে পারি এখানে দাদু??
    - বসো। কিছু কিনবে?
    - নাহ। দেখব। 
    ওই মর্বিড শরীর গুলো দেখব! তারসানাই,বেহালা,তানপুরা,সরোদ,মৃদঙ্গদের দেখব।জড় পদার্থ? অবজেকটিভ? অবোলা? 
    বৃদ্ধ বললেন "তুমি কিছু বাজাতে পারো?"
    - শুধু তবলা  আর মাউথঅর্গান! সরোদ শেখার খুব ইচ্ছে।
    - কেন? শিখবে কেন?
    এই প্রশ্নের উত্তর হয়না। 
    "আপনি সলিল চৌধুরীকে দেখেছেন?"
    - বহুবার। উনি বাজাতে পারতেন না এমন যন্ত্র আমার দোকানে একটাও নেই।

    আজকের কলকাতা আর সলিলের কলকাতা কতটা আলাদা? আজকের সুর আর গতকালের সুর?
    থুপথুপে কুয়াশা বাইরে। সোডিয়াম ভেপারের আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে লেকগার্ডনের রাস্তাটা। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পা আটকে গেছিল আমার আর বাবার। অনেক দিন আগে। ইনটারনেট আসার অনেক আগে। বাবা বলেছিল " গানটা পুরোটা শুনেই যাই.."
    পাশের কোনো এক বাড়ি থেকে ভেসে আসছিল "কথা দাও আবার আসবে..." 
    বিস্ময় জাগে। এখনের মানুষ এভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে? এখনের সংগীত পথিকের পা জড়িয়ে ধরতে পারে?
    একটা গান শেষ হয়, আরেকটা গান শুরু হয়। প্রিলিউডে বুঝে যাই গানের গোটা শরীর। গান ফেড আউট করে আসার আগে যেন গানের শরীরটায় বার্ধক্য ঘনিয়ে আসে। খন্ড খন্ড বাদ্যযন্ত্র, সুর-প্রত্যঙ্গ,অনাবিল বিচরণ! ভাব আর ভাষার মেলবন্ধন। 
    একদিন হঠাৎ অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে গেল রাস্তা। লতা গাইলেন  ও সজনা বরখা বাহার লায়ি..
    তার আগে টুকরো স্বর্গের মতো এক পিস তারসানাই। প্রিলিউড!
    সমুদ্রের ঢেউ! সংগীত তখন সাক্ষাৎ জ্যান্ত শরীর! কামনা! আশ্লেষ!  Where words fail,music speaks....
    সলিল নিজে বাজিয়েছিলেন ওটা।

    মৃত্যু নেই! জরা নেই! শুধু আছে এই ভেজা ভেজা জীবনটা আর সংগীত! Music is the universal language....সর্বজয়া আর হরিহরের আর্তনাদ...মানুষ নয়! ওটা মাটির কান্না! একমাত্র সংগীত পারে।

    বিক্রেতা নুয়ে পড়েছেন একটা ধুম্রতার দিকে!  ধূসর আড়ম্বরের দিকে!  Music is the food of love..
     সেই কবে পুরনো ক্যাসেটের দোকান থেকে বাবা এনেছিল মুকেশের গান! মুকেশ! এক পৃথিবী প্যাথোস যার গলায়..যিনি জর্জর বিকেলে ভেসে আসেন মধ্যবিত্ত ব্যালকনিতে.. ফুলদানি ছুঁয়ে যান! জানলার পর্দা দুলিয়ে দিয়ে যান। কয়ি দুর যব দিন ঢল যায়ে...আমরা তখন কেমন একটা হয়ে উঠি! ঘর দোর, সংসার গেরস্থের ওপর মায়ার মেঘ ঘনায়। আমরা যেন নেই, আবার ভীষণ রকম ভাবে আছি। 
    স্কুল থেকে রোজ সেই ক্যাসেটের দোকান যেতাম। রাঙা মা  লোডশেডিংয়ে গেয়ে উঠতেন "রহে না রহে হাম.."
    অন্ধকার এত স্বর্গীয়, এত স্বপ্নালু হয়?? 
    মেহবুব কাকু শুক্রবার করে বাড়িতে আসতেন। রফিকন্ঠী। এক পা খোঁড়া। এক সকালে গাইলেন "মেরা তো জো ভি কদম হ্যায়..."

    দোকানের বাদ্যযন্ত্র গুলো একটু যেন নড়ে উঠল! মিছিলের মাথা গুলোর মতো। একটু সন্ত্রস্ত।
    "দাদু, এখন  কমপিউটারেই সব হয়"
    বৃদ্ধ তাকালেন। হাসি ফ্যাকাশে! হেরে যাওয়া সম্রাটের মতো বিনম্র।
     "কী আর করা যাবে ভাই!" 
    খয়েরি ফ্রেমের চশমা! বৃদ্ধ সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন সুরের শরীরগুলোকে! ধুলো ঝেড়ে দিচ্ছেন বারবার একটা ময়লা রুমাল দিয়ে।

    দোকান বন্ধ হয়ে গেলে ওঁর সাথেই হেঁটে হেঁটে ফিরি সেলিমপুরের দিকে। হঠাৎ থেমে যান বৃদ্ধ। "শুনতে পাচ্ছ গানটা?"
    - হ্যাঁ। 
    আমার এ গান সুনীল সাগর কূলে
    মুকতা খোঁজে শুধু যে ঝিনুক তুলে...
    - কার গান বলতে পারবে?
    - সন্ধ্যা মুখার্জী! 
    - ভেরি গুড! তোমাদের কম্পিউটারকে বোলো এরকম একটা গান তৈরী করতে।

    বৃদ্ধ চলে গেলেন অন্যদিকে!অবসোলিট হয়ে যাওয়া একটা অক্ষাংশের দিকে!নিভৃত কনসার্টের দিকে! গোটা কলকাতা নীরব হলে আমাদের সমবেত মৃত্যুর সামনে সন্তুর বেজে ওঠে। জাকির ঘোড়া ছুটিয়ে চলেন তবলায়। কোন এক অলীক অলিন্দে মুখোমুখি বসেন মেনুহিন, রবিশঙ্কর আর হ্যারিসন। মুগ্ধতা! সরস্বতীর অঞ্জলি! বিলায়েত খান! অতল স্নায়ুগহ্বর! খুঁড়তে খুঁড়তে... আহ পৃথিবী! একজন বিসমিল্লা দিয়েছিলে আমাদের! হ্যারিসন রোড ধরে হেঁটে যায় তরুন গিটারিস্ট। এক বৃত্তের কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা ক্লভিয়ার। পিয়ানিস্ট! পোলানস্কির ছবিটা! আঙ্গুল জেনে গেছে সংগীতের বিভঙ্গ! উন্মত্ত কলরোল পেরিয়ে হাঁটি! কত পাল্টে গেছে পৃথিবী! তবু তো বধির বেঠোভেন বসেই থাকেন পিয়ানোর সামনে! "  Music is like dream.one I cannot hear". শিল্পী চলে যান। শিল্প থেকে যায়। বৃদ্ধ হেমন্ত যখন সলিল চৌধুরীকে বলেন " আমি আর গাইতে পারি না.." থরথর কেঁপে ওঠে মানুষের শ্রুতির ইতিহাস।  গমের উপত্যকায় জেগে থাকে মেক্সিকান ইয়ুডলিং এখোনো! বহু জন্ম আগে দেখা সেই নিগ্রো কৃষকের মেলোডি! জল মাটির সেই আর্ত সঙ্গীত! সব আছে,সব থাকে।

    হাঁটি। হেঁটেই যাই। সরস্বতীর ধর্ম হয় না কোনো। সব সাধনাই সারস্বত। সব সৃষ্টিই সারস্বত।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ২০ মার্চ ২০২৫ | ৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৩541799
  • অসম্ভব ভালো লাগলো। এই লেখাটা শুধু পড়ার নয়। এক একটা লাইন পড়ে কিছুক্ষণ গ্যাপ দিতে হয়। ভাবতে হয়। না, ঠিক ভাবতে হয়না, অনুভব করতে হয়, সেখানে 'ভাবার' জায়গা নেই। অনুভব অন্য জিনিষ। যেমন লেখক গানের শরীরকে অনুভব করেছেন, এক একটা বাদ্যযন্ত্রের শরীরকে অনুভব করেছেন। বিসমিল্লার সানাইয়ে কোন দেবী থাকেন, সংগীত পা জড়িয়ে ধরে, শেষ হয়ে আসার আগে গানের বার্ধক্য ঘনিয়ে আসে -- এই সব অনুভূতি মস্তিষ্কের অন্য এক জায়গা থেকে আসে। শুধু লেখা, পড়া, ভাবা দিয়ে যার মাপ করা যায়না। লেখককে একটা স্যালুট ঠুকে গেলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন