কোলাপুর। মারাঠা-সিংহ শিবাজীর ছোট ছেলে রাজারামের বংশধরেরা রাজত্ব করতেন এখানে। অবশ্য শিবাজীর বংশধর নামেই, রাজারাম আর তার দুই ছেলে, শিবাজী ও শম্ভাজীর পরেই সে বংশ শেষ। তারপর থেকেই দত্তক ছেলেরদল বসে সিংহাসনে। অবশ্য সেটাই ছিল যুগের নিয়ম। আর দশটা দেশজ রাজ্যের মতই ছিল ছোট্ট জায়গাটা। তেমন জবরদস্ত দীর্ঘজীবি রাজাও জোটেনি ভাগ্যে। আশেপাশের রাজ্যের সঙ্গে খেয়োখেয়ি, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া এইসব নিয়ে দিন গড়াত। তারপর ইংরেজদের ছাতার তলায় চলে যাওয়া। পরের গল্প আর কিছু বলার থাকত না, যদি না একটা ঘটনা ঘটত। চতুর্থ শিবাজীর মারা গেলেন। শোনা যায় সেই মৃত্যুর পিছনে তখনকার কোলাপুরের রিজেন্ট কাগাল-রাজ আবাসাহেব ঘাটকের একটা ভূমিকা ছিল। শিবাজীর রানী দশবছরের ছেলে যশোবন্তরাওকে দত্তক নিলেন। সাল ১৮৮৪। রিজেন্ট আবাসাহেব ঘাটকেরই ছেলে। শৈশবেই মাতৃহারা। পড়াশোনা শেষ করে ১৮৯৪ সালে তিনি রাজ্যভার হাতে পেলেন। নাম হল ছত্রপতি শাহু মহারাজ। রাজ্যে তখন ব্রাহ্মণদের জয়জয়কার। উচ্চপদ, অর্থ, শিক্ষা সবই তাদের করায়ত্ব – মারাঠা, কুর্মি প্রভৃতি রাজ্যের আদি বাসিন্দারা কোণঠাসা। দাসপ্রথার তুমুল প্রচলন, বিশেষত মেয়ে-দাসের খুবই ডিমান্ড। রাজ্যের সাধারণ মানুষরা মুলতঃ অশিক্ষিত, ঋণভারে জর্জরিত। মেয়েরা, থাক – মেয়েরা আবার মানুষ নাকি?
সিংহাসনে বসার সময় বক্তৃতা দিলেন যে প্রজাদের চিরসুখ-শান্তিই রাজার কাম্য। জনকল্যাণের জন্য রাজ্যভার হাতে পেয়েই একটা কমিটি গড়লেন রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য। শিক্ষার মাধ্যমে সবার উন্নতি ছিল তার লক্ষ্য। তারপর ছুটল তাঁর শিক্ষা-সংস্কারের রথ। শুধু শিক্ষা নয়, আরো বিভিন্ন ধরণের সংস্কার , দাসপ্রথা তুলে দেওয়া, দেবদাসী প্রথা রদ করা ইত্যাদি যাতে রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষের ভালো হয়। রথ থামল ১৯২২ সালে। তাঁর মৃত্যুতে। ততদিনে ব্রাহ্মণ্যেতর আন্দোলনের নেতা হিসেবে তিনি সর্বজনস্বীকৃত। অস্পৃশ্যতা এবং সব রকমের সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি। অব্রাহ্মণ শ্রেণীর সামাজিক সুবিচারের দাবীতে এক নিরলস প্রচারক। আর সেই যুদ্ধে তার হাতিয়ার শিক্ষা আর আইন। লক্ষ্যণীয় যে তাঁর উন্নতিমূলক কাজের আওতায় এসেছে মেয়েরাও। অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও পিছিয়ে পড়া জাতিদের নিয়ে তাঁর যে কাজ তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সে কাজের অভিঘাত এমনই ছিল যে একদিকে বালগঙ্গাধর তিলকের মত কংগ্রেসি নেতা আবার ডাঙ্গের মত কম্যুনিস্ট নেতা দুদলই ছিলেন তাঁর ঘোর বিরোধী। এমনকি গান্ধীও তাঁর বর্ণভেদ প্রথা তুলে দেওয়ার চেষ্টার বিরোধী। এই সব নাম-ডাকওলা বিরোধী নেতাদের জেরেই তাঁর নিম্নবর্গের লোকদের নিয়ে কাজের আলোচনা বা সমালোচনা দুই-ই হয়। তুলনায় তাঁর মেয়েদের জন্য করা কাজগুলো নিয়ে ততটা আলোচনা হয় না।
কী করেছিলেন তিনি মেয়েদের জন্য? প্রথমেই আসে শিক্ষার কথা। সত্যি কথা বলতে, শাহুকে দত্তক নেওয়ার সময় মানে ১৮৮৩-৮৪ সালেই কোলাপুর রাজ্যে প্রায় ১৯০ টা স্কুল আর তার মধ্যে আটটা স্কুল মেয়েদের। তবে সেগুলি সবই মূলতঃ সমাজের উচ্চশ্রেণীর দখলে। ১৮৯৬ সালে আট থেকে সংখ্যাটা বেড়ে হল ২৬। মোট ছাত্রী সংখ্যা ১৪০০র অল্প বেশি। এই মেয়ে-স্কুলের সংখ্যাটা ১৯২২ সালে শাহুর মৃত্যুর বছর দাঁড়ালো ৩৩ আর ছাত্রীসংখ্যা ১৯০০+। । তাঁর ব্যক্তিগত চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে যে রাজ্যাভিষেকের পরে পরেই তিনি মেয়েদের জন্য স্কুল খুলছেন। তবু নারী শিক্ষার প্রসার যে বড্ড ধীর গতিকে তা পরিসংখ্যান থেকে প্রমাণিত। শাহুর সমালোচকরা এই ঢিমে তালে এগোনকে তাঁর নারী-শিক্ষার প্রতি অবহেলা হিসেবে দেখেন। বিশেষতঃ তার রাজ্যে ১৯১২ সাল থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক - ১৯১৭ সালের তিনি আইন করে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক করলেন। কিন্তু সে আইনে তিনি শুধুই ছেলেদের কথা বললেন, যথেষ্ট অর্থের অভাবের জন্য মেয়েদের বাধ্যতামূলক শিক্ষার আইনের আওতার বাইরে রাখা হল। এর জন্য শাহু মহারাজের তুমুল সমালোচনাও হয়। সত্যের খাতিরে বলতেই হয়, একটা ছোট দেশীয় রাজ্যের তুলনায় তিনি শিক্ষাখাতে যা খরচ করেছেন, সেটা যথেষ্ট প্রশংসার। শিক্ষার খরচ জোগানোর জন্য সেই সময়ে শিক্ষা-সেস বসানর কথা ভাবতে পেরেছেন ( হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন ১৯১৮-১৯ সালে শিক্ষা-সেস ) – এও সময়ের তুলনায় বৈপ্লবিক। তবে কিনা যিনি বলেন ‘No cakes to few until all are served with bread’ তিনি যখন এমন গোটা মেয়েদের জাতটাকে অবৈতনিক শিক্ষার আওতা থেকে বাদ দিয়ে দিয়ে দেন ( যতই অর্থাভাবের অজুহাত থাক ), তখন গোটা ব্যাপারটার গা দিয়ে পিতৃতান্ত্রিক ভাবনার বদবাতাস বেরোয়! গুটিকয়েক মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ দিয়ে, স্কুলে স্কুলে মেয়েদের নিয়ে আসার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করে বা ব্যক্তিজীবনে নিজের বিধবা পুত্রবধূকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে সে দুর্গন্ধ ঢাকা যায় না।
অবশ্য ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল। বিলাসী জীবন যাপনে তেমন একটা মতি না থাকলেও, অন্য সব বাবদে আর দশটা রাজার মতই, দোষ-গুণ মিলিয়েই। তার উপর অসম্ভব রাজভক্ত। নিজের রাজ্যে যে কোন ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের সমূল উৎপাটন করেছেন সঙ্গে সঙ্গে। যদিও কিছুটা দু-নৌকায় পা দিয়ে চুপি চুপি আবার আলিপুর বোমা মামলার সময় অরবিন্দের ডিফেন্স ফান্ডে টাকা দিয়েছেন। সে সময়ে মেয়েদের নিয়ে তার ভাবনা চিন্তাতেও গতানুগতিকতার বাইরের বিশেষ কিছুর হদিশ মেলে না। তবে রাজ্যের আমজনতার ভালো করার একটা সৎ চেষ্টা প্রথম থেকেই ছিল। ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে তার লড়াই শুরু হয় এক ব্যক্তিগত অপমান থেকে ( বেদোক্ত বিতর্ক )। তাতে ঘৃতাহুতি পড়ে তাঁর অব্রাহ্মণ প্রজাদের ব্রাহ্মণদের হাতে হেনস্থা হওয়া দেখে। আর এ লড়াইতে তিনি এগিয়েছিলেন শুধুমাত্র ব্রিটিশদের সমর্থন পেয়েছিলেন বলেই। শাহু মহারাজের জীবনী পড়লে কেমন সন্দেহ হয় বোধহয় ঘোরতর ব্রাহ্মণ্যবাদী বালগঙ্গাধর তিলকের এবং রাজনীতি সচেতন উচ্চশ্রেণীর নেতাদের উপর চাপ তৈরি করার জন্যেই ইংরেজরা তাঁকে পিছিয়ে পড়া জাতের হয়ে লড়াই করার জন্য তোল্লাই দিয়েছিল।
তবে ঘোরতর অবাক লাগে শাহুর ১৯১৯-২০ সালে আনা খান-কতক আইনে। ব্রাহ্মণ্যবাদের – তথা – বর্ণভেদ প্রথার যে সব থেকে বড় সামাজিক প্রয়োগ, সেই বিয়ে ব্যাপারটার গোড়া ধরে টান মারলেন। এর আগে ১৯১৭ সালে নিজ রাজ্যে বিধবা বিয়েকে আইনতঃ সিদ্ধ বলে আইন চালু করেছেন। এবার এক কলমের খোঁচায় অসবর্ণ বিবাহ এমনকি আন্তঃধর্ম বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে দিলেন। আর যেহেতু অসবর্ণ বিয়ে তখন ধর্মমতে করানো দুস্কর, তাই বিবাহ রেজিস্ট্রেসনের ব্যবস্থা করলেন। ভাবা যায়! যদিও ভারতে আন্তঃবর্ণ বিয়ে সমর্থন করে আইন হয়েছে ১৮৭২ সালে, তবু তার ১৩০ বছর পরে ২০০৫-০৬ সালের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের থেকে জানা যাচ্ছে যে গোটা ভারতে অসবর্ণ বিয়ের ঘটনা মাত্র ১১% সেখানে মহারাষ্ট্রে অসবর্ণ বিয়ের ঘটনা ১৭%। সহজেই অনুমেয় যে শাহু মহারাজের এর পিছনে দুই সেন্ট হলেও অবদান আছে। এই আইনে তিনি আরো বললেন যে বিয়ে করতে হলে মেয়ের বয়েস ১৪ বা তার বেশি হতেই হবে – গোটা ব্রিটিশ ভারতে তখন বিয়ের বয়স কিন্তু ১২। ১২ র থেকে ১৬ হতে আরো প্রায় তিরিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। মনুস্মৃতির নারীর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকার বিধান উড়িয়ে দিয়ে বললেন যে মেয়ের ১৮ বছর হয়ে গেলে বিয়ের জন্য কারোর অনুমতি লাগবে না। ডানা মেলল স্বাধীনতা। এই আইনের আর একটা ইন্টারেস্টিং দিক হল এখানে সম্পর্ক-বিচ্ছিন্ন বা একপক্ষের মৃত্যুর আগেই বিবাহ করলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ধরা আছে। যেহেতু এই মূল গেজেটগুলির ইংরাজী আন্তর্জাল ভার্সন অমিল, তাই বোঝা যায় নি এই মোনোগ্যামির ধারাটা কি ছেলে মেয়ে দুই এর জন্যেই প্রযোজ্য কি না। এই আইন যত না মেয়েদের উপকারের জন্য, তার থেকে অনেক বেশি অবশ্য ব্রাহ্মণ্যবাদকে আঘাত করার জন্য। তবু মেয়েদের স্বাধীনতাকে তিনি বেশ অনেকটা জায়গা করে দিলেন।
দ্বিতীয় আইন করলেন মেয়েদের প্রতি হিংসা বন্ধের আইন। মেয়েদের প্রতি শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারকে এর আওতায় নিয়ে এলেন। সে আমলের ( বা এ আমলের ) আর সব রাজনৈতিক নেতাদের মত গার্হস্থ হিংসা রাষ্ট্রের নজরসীমার বাইরে বলে এড়িয়ে গেলেন না, বরং বললেন মেয়েদের উপর যেই কোন অত্যাচার করবে, সে বর বা অন্য কোন আত্মীয় যেই হোক, তারই ছ-মাসের জেল বা ২০০ টাকা ফাইন বা দুই-ই হবে। অত্যাচার হতে পারে শারীরিক বা মানসিক – বিধবা সৎ মাকে ধর্মের নামে নির্জলা উপবাস করতে বাধ্য করা , বৌকে উপেক্ষা করা, ভয় দেখানো ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের অপরাধ ছিল সেই তালিকার বাইরে। এই রকম একটা অশ্রুতপুর্ব আইন সেই সময়ের প্রেক্ষিতে একটা যুগান্তকারী ব্যাপার। শুধু ভারত না, সারা বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতেই। এর সমতুল্য একটি আইন পেতে স্বাধীন ভারতের মেয়েদের ২০০৫ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
১৯১৯ সালেই আনলেন তৃতীয় আইন, খ্রীস্টান আর পার্সি বাদে বাকী সব ধর্মের মেয়েদের জন্য ডিভোর্সের আইন। হ্যাঁ মুসলমান মেয়েরাও তার আওতায় পরে। কি কি হলে বিচ্ছিন্নতা সিদ্ধ তার খুঁটিনাটি আর বিয়েকে নাকচ করানর শর্তাবলীও রইল তাতে। মেয়েদের খোরপোষ, সন্তানের দায়িত্ব এইসব বিষয়েও এই আইন আলোকপাত করে। তখন এই সব বাবদে যে সমাজের দশজনের বিধান নেওয়ার চল ছিল, সেই ব্যবস্থার উচ্ছেদ চেয়েছিলেন তিনি। এই রকম একটা অভিন্ন আইন একশ বছর পরেও আমাদের দেশে চালু করা যায় নি। বছর দুয়েক আগে ছেলের মৃত্যু তাঁকে আমূল নাড়া দিয়েছিল। একটা অস্থিরতা চেপে বসেছিল – এই একগুচ্ছ আইন তারই ফল। কিন্তু তবু কিসের অনুপ্রেরণায় তিনি মেয়েদের নিয়ে এই আইনগুলো করলেন তা জানা যায় না। কি ছিল পিছনের চালিকাশক্তি? বর্ণভেদপ্রথা নিয়ে তাঁর ধ্যানধারণা যে সময়ের সঙ্গে আমূল বদলেছে সেটা তাঁর বক্তৃতা থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু সমাজে মেয়েদের স্থান নিয়ে তাঁর ধারণার তেমন কোন পরিচয় মেলে না। তাই এটা একটা অসীম কৌতূহলের জায়গা হয়ে দাঁড়ায় যে তিনি কেন এই পথে হাঁটলেন।
এতেই শেষ হল না। আনলেন দেবদাসী প্রথা বন্ধের জন্য আইন। কোলাপুরের সীমানার বাইরে বাকী ভারতে ব্রিটিশ সরকার বা অন্য কোন দেশীয় রাজ্য তখনও এ নিয়ে নড়ে বসে নি। তামিলনাড়ুতে মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি তখনও আসন্ন যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছেন – আসরে নামবেন আরো দশ বছর পরে। ১৯২০ সালে আনলেন সম্পত্তির অধিকার নিয়ে আইন। এতে পিতার সম্পত্তিতে বিবাহ-বহির্ভূত সন্তানদের দাবীকে আইন্সঙ্গত করার সাথে সাথে বললেন যে মেয়েদের দেবদাসী করা হয়েছে, তারাও পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী। ১৯২০ সালের পক্ষে কি নিতান্ত দুঃসাহসী পদক্ষেপ! পিতৃতন্ত্রকে একেবারে ছিড়ে-খুঁড়ে ফেলা! অবশ্য এটাকে গ্রামে গ্রামে কুলকার্ণি ব্রাহ্মনের বংশানুক্রমিক পরামর্শ দেওয়ার কায়েমী প্রথা তুলে দিয়ে ব্রাহ্মণদের কমজোরী করার মত আর একটা রাজনৈতিক চাল হিসেবেও দেখা যায়। দেবদাসী প্রথা উঠে গেলে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য আরো কমবে। সাধে কি আর কোলাপুরের ব্রাহ্মণরা সারাক্ষণ তাঁকে অভিশাপ দিত! বড্ড জানতে ইচ্ছে করে সে সময়ের অব্রাহ্মণরাও সবাই কিভাবে নিয়েছিল এই আইন – বা এই আইন মেনে সত্যিই কি কোন দেবদাসী কন্যা পিতার সম্পত্তিতে অধিকার দাবী করেছিলেন? সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা এই আইনগুলোর তখনকার দিনে সামাজিক প্রভাব নিয়ে কোন কাজ হয়েছে কিনা তাও জানা নেই। এরপর আর বেশি দিন বাঁচেন নি, ১৯২২ র মে মাসে মারা যান। তবে শুনেছি মারা যাওয়ার আগে ১৯২১ সালে একটি আদেশ দেন হোলি ইত্যাদির সময়ে মেয়েদের উদ্দেশ্যে সেক্সিস্ট কথা বন্ধ করার জন্যে।
ব্যক্তিজীবনে যিনি নিজের সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন জাত মেনেই, এমনকি নিজের বিধবা পুত্রবধূকে পড়াশোনা শেখালেও সেই সঙ্গে ত্যাগের মহিমা, নিজের কথা ভুলে গুরুজনদের প্রীতিসাধন করতে শেখাচ্ছেন, পুনর্বিবাহ তো দেন-ই নি, তিনিই আবার এই সব আইন আনছেন। বড্ড গোলমেলে লাগে! তাঁর একটি জীবনী আছে, ধনঞ্জয় কীরের লেখা – একটু অগোছাল আর বেশ ভাসা ভাসা। সেটি পড়ে এই দ্বন্দ্বের উপর কোন আলোকপাত হয় না। এ বি লাটঠের লেখা স্মৃতিকথাও আছে, তবে সেখানেও এ বিষয়ে কোন ক্লু নেই। তবে শুনেছি শাহু মহারাজের সব কাগজপত্র নিয়ে একটি সাত খন্ডের কালেক্টেড ওয়ার্কস বেরিয়েছে। চোখে দেখি নি অবশ্য এখনো। জানি না, হয়ত তাতে কোন হদিশ থাকলেও থাকতে পারে।
সব মিলিয়ে মানুষটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আমরা জ্যোতিবা ফুলের নাম যতটা শুনি, আমাদের বাঙ্গালীদের আড্ডা-আলোচনায় এঁর নাম ততটা কানে আসে না। ভাবতে অবাক লাগে, আজ থেকে একশ বছর আগে এক গোঁড়া, রক্ষণশীল সমাজে বসে একজন এই সব কামান দেগে যাচ্ছেন! এমনিতেই তো রাজা হয়ে তাঁর শুধু ইংরেজদের পদলেহন করলেই চলত, কি-ই বা দরকার পড়েছিল রাজ্যের লোকের সুখ-সুবিধা নিয়ে ভাবতে! কত কত রাজা সেভাবে জীবন কাটিয়ে গেল। তবু তিনি ভাবলেন এবং শুধু তাই নয়, আজ একশ বছর পরেও মেয়েদের নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো প্রাসঙ্গিক রয়ে গেল!