
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাব, পেছন থেকে তিতলি ডাকল– সোনাকাকু, স্বপনদাকে নিয়ে যাবে ওপরে? এই যে, এও কিন্তু নিমতার লোক।
হাল্কাভাবে ডানদিকে তাকিয়ে বললাম– আসুন, নিমতার কোথায় থাকেন?
– ঐ, পোস্ট-অফিসের স্টপেজে নেমেই আমাদের বাড়ি ছিল। এখন আর –
আমি চিনতে পারছি। পাশের পাড়া, সুজয়ের বন্ধু, একটা ঘোরের মতন বিস্ময় চেপে বসছে দেখছি। সেই পুরোনো বিবমিষাটা। কত বছর হয়ে গেল?
সিঁড়ির বাঁকে দাঁড়িয়ে পড়লাম একবার – ‘ওপরে উঠে যান ভাই। ঢুকে ডানদিকের ঘরে পাত্রী বসে আছে। সবাইকেই পেয়ে যাবেন।’
– ‘আপনি?’
–‘আপনি যান, আসছি।’
– ‘বাই দা ওয়ে, আপনি? আপনি কি –’
– ‘এক মিনিট। নিচ থেকে আসছি।’
দুদ্দাড় করে নেমে আসলাম সিঁড়ি দিয়ে। সুজয়ের বন্ধু। স্বপন। রাইট। পোস্টাপিসের পাশের গলি। মন্দির মাঠের পাশে দলটা বসে থাকত।
পেটের ওপর অসহ্য লাথি, দু-পা দু-হাত চ্যাংদোলা করে ধরে ধরল ভোলা বিজন আর কেউ। স্বপন এগিয়ে এলো। অনামিকায় আংটি ঘুরিয়ে নিয়ে থুতনিতে ঘুষি মারল। আমার জিভে রক্তের স্বাদ। মুখের ওপর এগিয়ে এসে একদলা থুতু ফেলে গেল। শুনতে পাচ্ছি সুজয়ের গলা – শান্তির পোলাডারে মাইর্যা ফ্যাল স্বপন।
কতদিন হবে, চল্লিশ – না আটতিরিশ বছর। ঘুমের মধ্যে, জাগার মধ্যে ফিরে ফিরে আসে এই ছবির পরম্পরা।
কষের পাশে কাটা দাগে আঙুল বুলিয়ে নিলাম। নাঃ, এসব থাকুক এখন। বিয়েবাড়িতে ঢুকি। থাকুক বললেই অবশ্য সবটা রাখা যায় না। কনফ্রন্ট করতেই হবে। ঠিক আছে, দ্যাখা তো হলই, কথাও হবে। খোঁজখবর নেব পুরোন পাড়ার, বদলে যাওয়া পথঘাট মানুষজনেরও।
একটা সিরসিরে অস্বস্তি নিয়ে উঠে এলাম। তলপেটের কাছ থেকে পা অবধি হালকা হয়ে আসছে। ওপরে জলজিরা দিচ্ছে তখন, ঘাসের দলার মতন কাবাব ইত্যাদি। ঐ তো তিতলি, – ‘তোর স্বপনদা কই?’
– ‘এই তো গিফট দিতে ঢুকল দেখলাম। দাঁড়াও দেখছি।’
– ‘তোমাকে ছোটকাকিমা খুঁজছিলেন। ওনার বোনের নাতি নাকি তোমাদের অফিসে ঢুকেছে।’ জয়িতা টেনে নিয়ে গেল।
– ‘সন্তু। তুই তো খবরই রাহস না কোনও। হেই গ্যালো দশমীতে আইছিলি। বাবলুরে কইতেছিলাম সন্তু অর কাকা বাইচ্যা থাকতে তো তাও বচ্ছরকার দিনগুলায় আইতহন।’
– ‘ছাড় কাকিমা। সামনের মাসেই যামু না হয়। আমার ও তো বয়স হইতাসে। তো তোমার কোন নাতি আমাগো ওহানে ঢুকল? বিজিমাসির বড়টা?’
কথাবার্তা যেমন চলে এইসব জায়গায়। অথচ ঘোরের মতন লাগছে, বিস্ময়ের মতন লাগছে। কিম্বা ভয়ের মতন, সেই ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়া। এখন মনে হচ্ছে পিছনে ভাঙা ইঁটের মতন কিছু বিঁধছিল আর কিচকিচে ভেজা মাটির একটা অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ছিল। না না, এতদিন – এতগুলো দিন পড়ে ওসব মনে থাকেনা, ভেবে নিচ্ছি হয়তো। কিন্তু তলপেটে লাথির দমক আর মুখের ওপর ঝুঁকে ফেলা থুতুর দলা, এখানে ভেবে নেওয়ার কিছু নেই।
ছোটকাকিমা বলে চলেছেন–
‘এই ডান হাঁটু, এইহানে– বাবলুর বন্ধু আছে– এফারসিএস ডাক্তার। তো হ্যায় কইল হাঁটু বদলায়েন মাসিমা। লাখ দুই নাকি লাগব। ক দেহি আর কয়দিন ই আছি–’
শিল্পী ছিল সুজয়ের বোন। সুজয় তখন যুবা করত। যুব কংগ্রেস। পাড়ার বিরাট মস্তান আর শিল্পীর পিছনে পরে গ্যালো আমাদের রমেন। রমেনরা তখন সর্দারপাড়ার দিকে বস্তিতে থাকে। উদ্বাস্তু বাড়ির দুর্দশা যেরকম হয়– বাবা মারা গ্যাছেন, ভাইগুলো ইস্কুলেও বোধহয় যায় না, তিনটে বোন আর রমেন নাকি প্রেমে পড়ে গেল! সুজয়ের বাবা রমেনদের বস্তিতে এসে চোটপাট করে গেলেন। সেই বস্তি আবার তখন কমিউনিস্ট পার্টির বেস, উলটে সব রুখে দাঁড়াল। এরপর সুজয় কেসটা হাতে নেয়।
সেদিন আমরা ফিরছিলাম ময়দানে খেলা দেখে। লিগ ম্যাচ, ফোকটে টিকিট জোগাড় করে দিয়েছিল কেউ। মেন লাইনের ট্রেনে বেলঘড়িয়া নেমে হেঁটে ফিরতাম আমরা। দু তিনদিন আগে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। বড় রাস্তায় বোধ হয় জল জমে থাকত, তাই নিমতা বাজারের থেকে ভেতরের পথ দিয়ে ফিরছিলাম। ব্যাপারটা যে পার্টির ঝামেলায় চলে গ্যাছে সেই ধারণাটাই ছিল না আমার।
– ‘অ সন্তু বলি হইল টা কী তোর? একহান সাজেশ্ন চাইতাছি, আর এ ছ্যামড়া দেহি কী ভাইব্যা যায়!’
– ‘ও অই হাঁটুর ব্যাদনা টা?’
– ‘এক্সকিউজ মি!’
কাঁধে টোকা পড়ে। ভূতগ্রস্তের মতন লোকটার দিকে এগিয়ে যাই আমি।
– ‘চিনতে পারছ? কেমন আছ?’
স্বপনের কথায় মনে হয় একটা চোরা বিদ্রুপ! কিন্তু, আমাকে খুব স্বাভাবিক থাকতে হবে। চল্লিশ বছর আগের মারধোরের ঘটনা কোনও স্মার্টলোক মনে রাখে না, পাত্তাই দ্যায় না– সেরকম।
– ‘হ্যাঁ, স্বপন। রাইট? ভুঁড়ি হয়েছে।’
– ‘ও সবার হয়, তোমারও। তবে টাক পড়েনি ভাগ্যিস। নাহলে হয় তো চিনতেই পারতাম না?’
– ‘তো তুমি এইখানে?’
– ‘এই তো, শ্বশুরবাড়ির দিকের প্রোগ্রাম। বউ আছে ছেলের কাছে সুরাটে। অগত্যা প্রতিনিধিত্ব।’
– ‘থাকো কোথায় আজকাল?’
– ‘বারাসাত, ফরচুন সিটি দেখেছ? একটু তাড়াতাড়ি রিটায়ারমেন্ট নিলাম, সেই থেকে ওখানেই। তুমি?’
– ‘এই এদিকেই। নিমতার দিকে আর যাও?’
– ‘খুব কম। ছিলাম তো অনেকদিন, বিয়েশাদিতে লোকজন ডাকে। তাও আজকাল সব হয়ে ওঠে না। আর সব পাল্টেও যাচ্ছে, জমিজায়গা লোকজন। মানুষ মরে নতুন মানুষ আসছে, বাড়ি মরে ফ্ল্যাট।’
–'হা হা, তা বলেছ ভালো। বাড়ি মরে ফ্ল্যাট।'
–'আমি ছেড়েছি ওই দু'হাজার নাগাদ, তখনই পুকুর টুকুর বোজানো নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। এবার তো দেখলাম সুজয়দের সেই বিরাট বাড়ি, বাগান টাগান শুদ্ধ হাউসিং হয়ে গ্যাছে।'
চামচা শালা, সুজয়ের নাম ঠিক নিতেই হবে। বলেই তেরছা তাকাচ্ছে দেখছি। ঠোঁটের দাগটা দেখছে তাই না? স্মার্টনেস চাই স্মার্টনেস। জাস্ট পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে যাবো এখন।
– ‘আরে, তিনবছর আগেও লোককে ডিরেকশন দিতাম টেলিফোন বুথ দিয়ে, এখন সেখানে ভেঙে টেঙে দেখি মুথুত ফিন্যান্স, রোজ পাল্টাচ্ছে, রোজ পাল্টাচ্ছে। কী একটা বাড়ি চিল বলো ওদের। সেই দোলের পুজো, রথ, লোকে বলে বাগানে হরিণ ঘুরত নাকি’
– ‘তা সুজয়দের খবর কী?’
– ‘সুজয় মারা গেছে, জানো না? সেও বছর দশেক হবে। প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার। কিছু করাই যায় নি। শেষে একদিন তোমার ব্যাপারটা নিয়ে বলেছিল।’
শুয়োরের বাচ্চা! জানি ঠিক তুলবে ঘটনা। এবার কী? জয়িতা, বুবলু ধারে কাছে নেই তো? এই মালকে এখান থেকে সরাতে হবে আগে।
– ‘তারপর শিল্পীর সঙ্গে শেষে রমেনেরই বিয়ে হলো জানো? সে তো শিল্পীর যত সম্বন্ধ আসে, আত্মীয়দের মধ্যে থেকেই ব্যাগড়া দিয়ে দেয়, তারপর ও চাকরি করতে গেল, সাউথে নাকি হোস্টেলে থাকত। এরপর একদিন দেখি রমেন আর শিল্পীর বিয়ে।’
– ‘হুঁ’
– ‘তা তুমি নিশ্চয়ই জানতে, রমেন তোমার যা বন্ধু ছিল। এখন আর যোগাযোগ নেই, তাই না?’
– ‘ওই আর কী!’
একটা ধূর্ত চাহনি খেলে যাচ্ছে স্বপনের চোখের চারপাশ দিয়ে।
– ‘মাঝখান থেকে তোমার সঙ্গেই ব্যাপারটা খারাপ হল। মনে রাখ নি তো সে সব;’
– ‘আরে ছাড় তো, ওইসব ছোটবেলার গল্প। এখন তো মজাই লাগে ভাবলে।’
মজা লাগেনা, মজা লাগেওনি, যখন নিউটাউনের রাস্তায় বাসে যেতে যেতে হঠাৎ মনে পড়ে সুজয়ের দলবল ঘিরে ধরেছে। ছুরির মতন আলো পড়ে চকচক করে উঠছে স্বপনের হাতের আংটি, মুখ ফাটিয়ে দিচ্ছে। অফিসের কাজে ট্যুরে গিয়ে কিম্বা ইন্টারভিউ টেবিলের একদিকে বসে হঠাৎ মৃত্যুভয়ের মতন দেখতে পাই পায়ের গোড়ালি দিয়ে বুকের ওপর মেরে যাচ্ছে ওরা। বুবলু যখন জন্মায়, লেবার রুমের বাইরে বসে মনে হচ্ছে ঠান্ডা হাতে ঘাড়টা ধরে নিয়ে যাবে কারা! মনে না রেখে পারা যায় না। কিন্তু এখন এ শালাকে এখান থেকে সরাতে হবে।
– ‘সিগারেট আছে? ছাদের দিকে গেলে হয়।’
– ‘আমি তো একটু আগে ফুঁকতে গেলাম, খুব অন্ধকার ওপরটা, বৃষ্টি হয়ে পিছল। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সেরে এলাম।’
– ‘আচ্ছা চল, সিঁড়িতেই যাই।’
সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু এর সামনে কাশলে চলবেনা। স্মার্টলি, খুব দক্ষের মতন শেষ করতে হবে ব্যাপারটা।
সিঁড়িটা সত্যিই অন্ধকার, সেদিন অন্ধকার ছিল? মার খেয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছি যখন– রমেন আর বাবু এসে পড়েছিল। রমেন সবচেয়ে কম মার খেয়েছিল ভবিষ্যৎ শ্বশুরবংশের হাতে আর বাবুর হাতটা মচকে দিয়েছিল। আঙুলেও বোধহয় ফ্র্যাকচার ছিল। চোটের থেকে কম ছিলনা লজ্জা অপমান রাগ। উলটে মার দিতে না পারা মুখ কলোনিতে দেখানো যায় নি। বাড়িতে বলেছিলাম রিক্সা থেকে পড়ে গেছি, পরের দিন ভোরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, স্টেশনে স্টেশনে রাত কাটিয়ে ঘা শুকিয়েছি। বিয়ে সময় সবচেয়ে ভয় ছিল জয়িতা জানবে না তো, ওর বর একধার থেকে মার খেয়ে কাতড়াতে কাতড়াতে রাস্তায় শুয়ে থেকেছে।
খুব স্মার্টলি নামাতে হবে। আজকেও কেউ জানবেনা। বাঁ পায়ের গোড়ালি ধরে উলটে ঘুরিয়ে দিয়েছিল ওরা। সিঁড়ির ধাপে এসে যেন কন্কন্ করে উঠছে। সিঁড়িটা সত্যিই অন্ধকার দরজার মুখে একটু আলো এসে পড়েছে। চকচক করে উঠলো স্বপনের আংটি। সেই আংটি? না ভাগ্য বদলের পাথর?
– ‘দেখে। তো তোমাদের বাকিদের খবর কী? বাবু, ভূতো?’
– ‘আমার একদমই যোগাযোগ নেই কারুর সাথে।’
– ‘ভূতোর সঙ্গে আমার কিন্তু দেখা হয়। বিরাটি স্টেশনের ওপর পান বিড়ির দোকান আছে। ভালো চলে দোকানটা।’
– ‘তোমাকে ফ্রিতে চা খাওয়ায় নাকি? ’
– ‘হা হা, আমার হাতে ক্যাল খেয়েছিল, আমাকে খাওয়াবে না? ’
– ‘না, ভূতো বোধহয় খায় নি।’
– ‘এই তুমি কিছু মনে কোরো না। তবে ওটা নিয়ে আমরা খুব মস্করা করতাম সেই কালে।’
– ‘তা করবে না? তোমরা জিতে গেছিলে। তবে পেছন থেকে মেরেছিলে, দল বেঁধে। জানিয়ে মারতে এলে আমরাও।’
– ‘কী করতে? আমাদের গ্রুপটার একটা এক্সপার্টাইজ ছিল। এই মনে কোরো না কিছু, তারপর না তোমাদের পাড়ায় রটানো হয়েছিল যে শিয়ালদা স্টেশনে পকেট মারতে গিয়ে তোমরা মার খেয়েছ।’
– ‘ভাল মজাই নিয়েছিলে তাহলে। তো আর তোমাদের সেই বাহিনীর খবর কী? খবরটবর আছে কারুর? ’
– ‘নিখিলকে মনে আছে? সে কাউন্সিলার হয়েছিল। পরিবর্তনের পর অবশ্য রিটায়ার্ড। বিজন কলেজে পড়াচ্ছে এখনও। মধ্যমগ্রামের দিকে থাকে, বিরাট টিউশনি।’
রাংচিতা বেড়ায় হেলান দিয়ে দাঁতে ঘাস কেটে কাটা জায়গায় লাগাচ্ছি। হাপরের মতন বুকটা উঠছে নামছে, বিজন ফিরে এসেছিল। – ফুঙ্গির পুত, আর যদি আমাগো মাইয়ারে লাইন করতে যাও, ধন কাইট্যা পোঙ্গায় গুঁইজ্যা দিমু। চিনো না আমারে হালায়! রমেন এগিয়ে যাচ্ছিল মারবে বলে। বাবু আটকায়। এরা এখন ক্রমে ভদ্রলোক হয়েছে, আমরাও শুদ্ধভাষায় এসে গেছি। বিজনকে সামলাতে আসে বিশ্ব।
– ‘নিখিলের ছেলের বড় ব্যবসা। খুব ইনফ্লুয়েন্সিয়াল শুনেছি।’
– ‘ওই ছেলেটা, বিশ্ব? ওর খবর কী?’
– ‘বিশ্ববাল? দাদু ছিল কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার। লালগঞ্জে নাকি তেভাগা লড়েছিলেন। নাতির নাম রাখলেন বিশ্বলাল। সব লাল হো জায়েগা। তো সে নাম হয়ে দাঁড়াল বিশ্ববাল।’
– ‘সে কোথায় এখন? ’
– ‘কোথায় আর? ওইখানেই আছে। কীসব ব্যবসা ট্যাবসা করত। আরে, সেই যেদিন তোমরা মার খেলে, একটা থাপ্পড় ও মেরে উঠতে পারে নি। ও আর করবেই বা কী? সুজয়ের সঙ্গে ল্যাংবোটের মতন ঘুরত।’
এবার অসহ্য হয়ে যাচ্ছে। এ মাল পারলে পুরো বিয়েবাড়ি জনে জনে ডেকে বলবে। থামাতে হবে। তখন আমরা থামাই নি। কাপুরুষের মত পালিয়ে গেছিলাম। আজ যখন আয়নার সামনে দাড়ি কামাতে গিয়ে কষের কাটা দাগ মাসের পর মাস বছরের পর বছর দগদগে হয়ে জ্বলে, ওই পালিয়ে যাওয়াটাই জ্বালা করার মতন লাগতে থাকে। এটা থামাতে হবে, একটা ধাক্কা দিতে হবে–
– ‘এই সন্তু, সরি বস্। মাইন্ড করছ না নিশ্চয়ই। এতদিনে এসব তামাদি হয়ে গেছে।’
– ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, মজাই লাগছে শুনতে। তবে তামাদি কিছু হয় না মনে হয়। হঠাৎ হঠাৎ করে পাওনাদারের মত এসে হুড়ো লাগায়।’
– ‘আর, রমেন আর শিল্পী বিয়ে করে বোধহয় দাদু ঠাকুমা অবধি হয়ে গ্যাছে। আর, আমরা আমার–তোমার তিক্ততা বাড়াচ্ছি।’
– ‘বাড়াচ্ছি না কিছুই, তিক্ততা যেটা ছিল বরং দ্যখা হয়ে মুছে ফেলা যাবে।’
– ‘বাঃ, সে তো সৌভাগ্যের। একদিন বরং ওপাড়ায় চলো। তোমার নাম্বারটা দাও’
– ‘হ্যাঁ, আর যা বলছিলাম, ঝামেলাটা তো আমার–তোমার ছিলও না’
– ‘আরে ছাড়ো।’
– ‘আবার হয়তো আমার তোমারই থেকে গ্যাছে। নাঃ ছাড়ো। সিগারেট দাও একটা।’
– ‘ছাদটা ন্যাড়া, বেশি ধারে যেও না।’
সময় খুব শ্লথ হয়ে গ্যাছে মনে হয়। খুব ধীরে ধীরে অনেকখানে ফ্রেম বানিয়ে দিচ্ছে। কষের কাটায় একবার হাত বুলিয়ে নিলাম। এটা এবার মুছে ফেলতে হবে। এখন যেন পুরো আটতিরিশ বছরের টাইমফ্রেম নতুন করে আঁকার অবকাশ পাচ্ছি।
– ‘আরে অত বুড়ো কেউ হইনি। সিগারেটটা দাও।’
দেশলাই ধরল, একবারেই। কাশি হল না, রিং করতে পারলাম আবার। আহ্
– ‘স্বপন, এদিকে এসো, একটা অদ্ভুত জিনিস’
স্বপন এগিয়ে এল। কিছুটা হতচকিত এবং ধাক্কা। রোগা লম্বাটে বডিটা ছতলা থেকে সামারসল্ট খেতে খেতে নিচে নেমে যাচ্ছে।
প্রতিশোধ।
সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালাম। সিগারেটটা শেষ করি। সময় খুব শ্লথ এখন। এরপর নিচে গিয়ে গল্পটা বলতে হবে। অ্যাক্সিডেন্টটা ফুলপ্রুফ হওয়া চাই।
pharida | unkwn.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৯:২০86083
b | unkwn.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৯:৩৮86084
পারমিতা | unkwn.***.*** | ০৩ মে ২০১৫ ০৬:০৭86085
রৌহিন | unkwn.***.*** | ০৫ মে ২০১৫ ০৬:২০86086
বাবুরাম সাপুড়ে | unkwn.***.*** | ০৫ মে ২০১৫ ০৯:২৯86087
তাপস | unkwn.***.*** | ০৬ মে ২০১৫ ০৬:৪৯86088
নিশান | unkwn.***.*** | ০৭ মে ২০১৫ ০২:০১86090
pinaki | unkwn.***.*** | ০৭ মে ২০১৫ ০২:৫৩86091
সোমনাথ | unkwn.***.*** | ০৭ মে ২০১৫ ০৮:৫১86089
Anupam | unkwn.***.*** | ২৫ জুন ২০১৫ ০৫:৪০86092