সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের থিয়েটারটা এবার বন্ধ হল বলে। না কোন ফ্রাস্টু খেয়ে কথা বলছি না। কিছু কারণ ও নিশ্চিত আশঙ্কার কথা বলছি।
আমাদের থিয়েটার ও ওদের থিয়েটার,
ওরা কাবাব
আমরা হাড্ডি।
ওরা ফিন্ফিনে
আমরা চাড্ডি
ওরা হাবিব
আমরা ইঁট
ওরা ননী
আমরা শিট্।
ন্যাকামো না করে থিয়েটারে এই বিভাজন মেনে নিয়ে বলছি অনেক ‘আমরা’দের ‘ওরা’ হয়ে ওঠার জন্য উলম্ফন গুলিও সত্য বর্তমান। হোক, তাতে কোন অসুবিধা নেই। সুজন হলে তেঁতুল পাতায় যেমন ন’জন হয় তেমনি পাশাপাশি এটাও জানি যে এভারেস্টের শিখরে স্থান বড়োই সঙ্কুলন। এবার সুজন না দুর্জন সেটা বাজারের কথা। হঠাৎ বাজারি কথা এলো কেন? কারণ বাংলা থিয়েটারটা একটা বাজার, শিল্পও আছে। যে সময় দেব-জিৎ এর ছবি হাউসফুল হয় সেই একই সময় সেই বাঙালী দর্শকদের মস্তিষ্কে হঠাৎ শুভশিল্পের হরমোনাল ক্ষরণে বাংলা থিয়েটারও হাউসফুল হয় এইরকম ফুলিশ ভাবনা আমার নেই। বাজারি ছবিতেও শিল্প আছে, থিয়েটারেও আছে।
এবার আরো কিছু অপ্রিয় কথায় আসা যাক। কিছুদিন আগে এক নাট্য প্রযোজক সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকে বললেন যে সরকারের উচিৎ আমাদের আরো বেশি ভর্তুকি দেওয়া, টিকিটের কর ছাড়ের কথাও বললেন যাতে প্রফিট করা যায়। আবার আরেক স্বনামধন্য নাট্যনির্দেশক বললেন যে – যদি কফির প্রতি কাপ ষাট টাকা হতে পারে তবে নাটকে টিকিটের দাম বাড়বে না কেন? কথাগুলি আপাত নিরীহ মনে হলেও এই উক্তির বক্তারা এই রাজনীতিটা বোঝেননা এতটা মূর্খ তো তারা নন। গ্রুপ থিয়েটারগুলো যে সোসাইটি এক্টে রেজিস্ট্রিকৃত সেখানে বলা হয় নন-প্রফিট মেকিং সংস্থা, প্রফিটমেকিং-এর কথা তারা বলতে পারেন কি করে আইনত ভাবে? আর তাছাড়া আপনি শিল্পর নামে ব্যবসা করবেন, প্রফিট করবেন সেখানে সরকার আমাদের ট্যাক্সের টাকায় আপনাকে ভর্তুকি দেবেন আর সেটা আমরা মেনে নেবো? আপনি লোন নিন, ব্যবসায়িক লোন। আর দ্বিতীয় উক্তির সম্পর্কে বলি কারা ষাটটাকার কফি খান? আমি খাইনা, সামর্থ্য নেই। তারমানে আপনার থিয়েটার আমার জন্য নয়। অথচ আমার ট্যাক্সের টাকার আপনার থিয়েটারে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আরেকজন নাট্যব্যক্তিত্ত্ব তো বলেই দিলেন, থিয়েটারে আর সেই দিন নেই যে কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে ছেলেরা নাটক করতে আসে। জানিনা কোন দেশের কথা উনি বলছেন। এখনো অনেক বড়ো বড়ো দলের ভালো অভিনেতারা ট্রেনের মান্থলির টাকাও জোগাড় করতে হিম্সিম খেয়ে যান।
আসলে কমার্শিয়াল থিয়েটার ও নন-প্রফিট গ্রুপ থিয়েটারকে তালেগোলে হরিবোলে গুলিয়ে দাও। ইচ্ছে ২০০, ৫০০ টাকার টিকিট হবে, হাউসফুল হবে নাটক। সবাই টাকা পাবে। কিন্তু কমার্শিয়াল থিয়েটার বলতে পারবো না কারণ গ্রুপথিয়েটার বললে একট্ বাঙালী ইন্টেলেক্চ্যুয়ালিজম্ এর সাদাপটচুল মাথায় পড়া যায়।
গ্রুপথিয়েটার প্রমোদকর ছাড় পেতো, যার ফলে তাকে দিতে হতো এক টাকা। এক বছর হলো সেটা হলো ৫০টাকা। সেটা কি সত্যি আমাদের সামর্থের বাইরে? না তা হয়তো নয়। সব কিছু সামর্থ্য দিয়ে বিচার করা যায় না। বিচার করতে হবে ছিল ১, হলো ৫০। অর্থাৎ ৫০গুণ বৃদ্ধি পেল – এইখানে নজর রাখতে হবে। অর্থনীতি এভাবেই বিচার করে। এরপর আশঙ্কার কথা বলি? ‘প্রফিট’, ‘হাউসফুল’, ‘২০০/-, ৫০০/- টিকিট’ – এর ডামাডোলে সরকার বলতেই পারন ‘এরপর আর ভর্তুকি দেওয়ার কী দরকার!’ খুবই ন্যায়সঙ্গত কথা। তারকাখচিত নাট্যগোষ্ঠীরা হয়তো মেনে নেবেন সে কথাও। মুশকিল হবে অন্য দলগুলির যাদের পক্ষে প্রতি শো বাবদ হল ভাড়া ছাড়াও অতিরিক্ত ২০০০টাকার প্রমোদকর দেওয়া ক্ষমতায় থাকবেনা। তাদের নাটক মঞ্চ থেকে বিদায় নেবে, যদি না তারা ‘ওরা’ হতে হন।
আমাদের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে সরকারের কাজই হল যেন নয়-ছয় করা। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বুলেট তৈরি করে গ্রিণহান্টের নামে ধাই করে আমাদের সহনাগরিকের বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া থেকে গ্রুপথিয়েটারে গ্রান্ট দেওয়া আর সেই থিয়েটারে ১০০টাকার টিকিট, আমাদের সামর্থ্যর বাইরে – কোথাও আমাদের কিছু বলারও নেই। ‘ভারত সরকারের আর্থিক সহযোগিতায়’ লেখাটি থাকা সত্ত্বেও আমরা নাটকটি দেখতে পাবোনা, আমরা ৭০% মানুষ তাহলে ট্যাক্স দিইনা! তাইতো? আমার ট্যাক্সের ১পয়সার ১০০ ভাগের এক ভাগও যেখানে খরচ হয় সেই সুযোগ গ্রহণ করা আমার অধিকারের মধ্যে পরে। সরকার (বা বলা যাক সিস্টেম) সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করে থাকে। আর সেই সিস্টেমকে যারা নাকি প্রশ্ন করে, মানে বাংলা গ্রুপথিয়েটার তারাও সেই একই প্র্যাক্টিস চালায়। আসলে আজকাল সবচেয়ে বিক্রি হচ্ছে র্যাডিক্যালিজম্।
এবার ধরা যাক কোন ছাত্র-ছাত্রীর কথা। কোন ছাত্র-ছাত্রীকেই সব বই কিনে পড়তে হয়না, লাইব্রেরী আছে। এখন যার পাঠ্য বিষয় নাটক তার নাটক দেখাটা পাঠ্যবইএরই সামিল। এবার একটা নাটক দেখতে হলে তার খরচটা ভাবা যাক। টিকিট ১০০+যাতায়াত ভাড়া কমকরে ৫০টাকা। অর্থাৎ সে যদি সপ্তাহে ২টি নাটক দেখে তবে তার খরচ হচ্ছে ৩০০/-। মাসে ১২০০ টাকা যা কিনা একটি বইএর থেকেও তিনগুণ এবং সেটা একমাসেই। তারমানে ফেলো কড়ি মাখো তেল ব্যবস্থায় নাট্যপাঠ তারাই করবে যাদের ঘরে কড়ি আছে। অর্থাৎ যাদের কড়ি নেই তারা নাটক নিয়ে পড়া, নাটক করা এবং নাটক দেখার থেকে তাদের দূর করে দেওয়া হচ্ছে। নাটকেও মলযুগ শুরু তবে!
নাটকের মতো একটা মাধ্যমকে যখন এইভাবে আর্থিক গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়া হয় তখন তার মধ্যেকার রাজনীতিটা কি সেটা আর জানতে বাকি থাকে না। জোর গলায় বলা যায় নবান্ন, দেবীগর্জন হবে না আর, তীর নাটকটিও কোনদিন মঞ্চস্থ হবে না। আর্কাইভ প্রিয় বাঙালী মাঝেমাঝে সেসব তাক থেকে মঞ্চে এনে নস্টালজিয়া হুজুগে নাচবেন, ব্যস্। আসলে আমাদের হাত থেকে থিয়েটার নামক মাধ্যমটি বেড়িয়ে গেছে প্রায়। আর যত ‘আমরা’ ‘ওদের’ মতো করে থিয়েটারটা করতে যাবো ততই থিয়েটার আরো আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। যে দর্শক বিশ্বাস করেন ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’ তাকে বলতে হবে কড়ি আপনি আগেই ফেলেছেন তাই নাটকটি মঞ্চস্থ করা সম্ভব হচ্ছে, আর টিকিট কেটে আপনি দ্বিতীয়বার কড়ি ঢালছেন। নাটকে সাম্যবাদের স্লোগান দেব, মেহনতী মানুষের পক্ষে মানুষের বিবেক জাগ্রত করবো আর অডিটোরিয়ামে বসার আসনে বেশীটাকার টিকিটে অগ্রাধিকার। এর থেকে যেকোন বাজারি ছবি অনেক সৎ। তাই আমাদের থিয়েটারেটা ওদের নকল না করে আমাদের মতন করেই করতে হবে, প্রযোজনার মানের সাথে আপোষ না করেই। এবং সেটা আমাদের করতে দেওয়া হবে না। না সরাসরি আটকাবে না, কারণ ক্ষমতা সরাসরি আটকায় না সবসময়। তার বিরোধীদের জন্য সে তা্র ব্যবস্থায় কিছু প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে রাখে।
আশির দশকে সরকারের কাছে প্রয়াত বাদল সরকার একটি লিখিত আবেদন করেছিলেন মুক্তমঞ্চের একটা বিকল্প স্থানের জন্য, বিকল্প থিয়েটারের জন্য। স্বাভাবিক ভাবেই সেই আবেদনের পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। শিল্প ও স্বরাষ্ট্র একই মন্ত্রীর কুক্ষিতে থাকলে এর থেকে বেশি কী বা পেতে পারি। এই বিকল্প থিয়েটারে টিকিট নেই, পুঁজি নেই, তাই মিডিয়া নেই এবং দর্শক সংখ্যাও ক্রমহ্রাসমান। এমন একটা নাট্যপদ্ধতি যেখানে রাষ্ট্রর নাকগলানোর কোন সু্যোগই নেই। প্রেক্ষগৃহে অভিনয় হয়না তাই যাবতীয় সরকারি কর, বিধিনিষেধের নাগালের বাইরে, পুঁজির জায়গাও নেই ফলে সেদিক থেকেও একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা, সর্বোপরি যেটা মারাত্মক সেটা হল দর্শক। এই নাটক এমন কিছু দর্শকের কাছে পৌঁছে যায় যাদের মঞ্চ ও অন্যান্য শিল্প থেকে রাষ্ট্র দূরে রাখাটাই নিরাপদ বোধ করে। এহেন একটি মাধ্যমকে কোন সরকারই তোল্লাই দিতে পারেনা। যে শিল্প রাষ্ট্রর নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে শিল্প সম্পর্কে রাষ্ট্র নিষ্ঠুর হতে বাধ্য। তৃতীয় ধারার নাটক সম্পর্কে বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলির মনোভাবও অবাক করার মতো। তাঁদের মতে নাটকগুলি কঠিন এবং মাঠে-ঘাটের মানষের পক্ষে নাকি দুর্বোধ্য। আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা জানান দেয় এই ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। এই নাটকের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে মাঠে-ঘাটের, গ্রামের মানুষদের কোন তাত্ত্বিক পড়াশোনা করতে হয়না। শহুরে লোকেদের হয়, কারণ শহরের মানুষরা উৎপাদনের সাথে যুক্ত নয়। বলাভালো ভালো শহুরে মানুষদের চোখে বাজারের ঠুলি গ্রমের মানুষদের থেকে বেশি এঁটে আছে। সে দিক থেকে দেখলে মানুষের নাটক, কথা বোঝার জন্য শহুরে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীরা অনেক পিছিয়ে। তাত্ত্বিকজ্ঞান ও ইন্টেলেকচ্যুয়ালিজমের ঔদ্ধত্যে অন্ধ বাঙালী বিপ্লবীরা তৃতীয়ধারার থিয়েটারের সমালোচনা করেন মানুষ বুঝবেনা, রিলেট করতে পারবেনা এই অজুহাতে আর তার সব বুঝে ‘শত্রুর শত্রুকে বন্ধু’ করতে গিয়ে এমন একটি দলের পাশে গিয়ে বসেন যে ভুলেই যান যে সেটা একটা দক্ষিণপন্থী দল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, নিজেদের অস্বিত্বকে বিপন্ন করে ব্যাপক মানুষের আন্দোলনকে ধ্বংস হয়ে সেই খেসারত দিয়ে চলেছেন। এই ভুল শহরের মানুষের দ্বারাই সম্ভব হল এত রাজনৈতিক সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও।
ঝিন্চ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না। মানুষের থিয়েটারকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবার থিয়েটারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে বলা হতো থিয়েটারে দর্শক হয়না। এখন হয়। কী এমন বিপ্লব ঘটিল। ঘটিল এটাই যে যে রস আগে বাজারি ছবি, কমেডি সার্কাসে, টিভিতে পাওয়া যেত সেই রস এখন থিয়েটারেও মিলছে। আমরা সবাই ড্যাংড্যাং করে নাচছি আর বলছি থিয়েটারের সুদিন এলো! হালে একটি নাটক (প্রায় আড়াই ঘন্টার) দেখে দর্শকরা উচ্ছসিত প্রশংসা করছেন। বলছেন অসাধারণ লাইট, দুর্ধষ্য সেট, কোরিওগ্র্যাফ, কি চমৎকার অভিনয়! সত্যি বলতে কি জঘন্য সংলাপ, অকারণে অভিনেতাদের পটুত্ব জাহির, কিছু সার্কাস-জিবনাস্টিক এবং ‘ওদের থিয়েটার’ এর মতন করার একটা অসফল প্রয়াস। দর্শক মুগ্ধ, কারণ ‘ঝিন্চ্যাক প্রোডাকশন’। ‘জীবনের সাথে সম্পর্কহীন এক abstraction এর চর্চা’।
“খুশি হবারই তো কথা ছিল যখন দেখি ছোটো ছোটো অসংখ্য নাটকের দল গড়ে উঠছে – সমর্থ, উৎসাহী, পরিশ্রমী। কিন্তু ভয় হয় যখন দেখি এসব দলের নাটক-নির্বাচনের ধরণ অথবা নাট্যপ্রয়োগের রীতি। কেন আবার খুঁজতে হয় এমনসব নাটক যেখানে অভিনয়চাতুর্যেরই সুযোগ মেলে বেশি, আত্মপ্রকাশের চেয়ে আত্ম-বিজ্ঞাপনের গরজ যেখানে বড়ো? কেন এঁদের প্রথম চিন্তাই ছুটে যায় সেট্এর কারুকর্মে, তার জটিলতায়? আর, এইসব উপকরণের মধ্য দিয়ে এক-একটি নাট্যদল ক্রমে বড়ো হয়ে ওঠে, ধরতে পারে কিছু দর্শকও হয়তো-বা, এবং আরো দর্শক পাবার আশায় সে এগিয়ে যায় অল্পে অল্পে। এইভাবেই একদিন আমাদের অজ্ঞাতে আমরা ঢুকে পড়ি ঝল্মলে এক রঙ্গশালায়। তার মঞ্চে এবং বাইরে সাজানোগোছানোর বহর দেখে মনে হতে থাকে যেন বসে আছি শিকাগো কিংবা মানহাইম কিংবা পৃথিবীর যে-কোনো এক প্রত্যন্তে। চারিদিকে বাঁধানো দেয়ালের মধ্যে ক্রমে একদিন পালটে যেতে থাকে দর্শকেরও শ্রেণী। অনেক ঝকমকে মানুষ ভেসে আসে হঠাৎ, কিন্তু হারিয়ে যেতে থাকে সেইসব উশকোখুশকো ছেলেমেয়েরা, যারা একদিন অনেক ভালোবাসা নিয়ে নাটক দেখতে আসত প্রায়ফাঁকা-ঘরে, যারা একদিন আশা করত থিয়েটার তাদের নতুন কিছু দেবে হয়তো – নতুন কোনো প্রকরণ নয়, নতুন এক বোধ।”#
বাংলা রঙ্গমঞ্চের দর্শককুল থেকে একে একে আমি ও আমার বন্ধুরা বিদায় নিলাম। যারা সবাই থিয়েটার করতাম, করি এবং করবোও – আমাদের থিয়েটার। যেখানে ঝিন্চ্যাক মঞ্চবিন্যাস, অভিনয়ের কেরামতি দিয়ে কিছু লুকোনোর চেষ্টা করা হবে না। হতেই পারে সেটা মঞ্চনাটক কিংবা মুক্তমঞ্চের নাটক। যে নাটক আমাদের দেখার সামর্থ্য নেই সেইরূপ নাট্যপ্রযোজনা আমাদের পক্ষে ভাবনাতেও অসম্ভব।
“তার মানে কি এই যে ভবিষ্যতের থিয়েটারে ফেলে দিতে হবে সব প্রকরণের ভাবনা, মঞ্চের সব আভরণ? একেবারেই নয়। …কিন্তু এর সবটা পরিচালকের সম্পূর্ণ অধিগত থাকবে বলেই তাকে অবিরাম ব্যবহার করবার প্রয়োজন হবে কম, ব্যবহারের সংযমই একে করে তুলবে তাৎপর্যময়। আর এই ব্যবহার – আলোর বা সুরের – বাস্তবকে নকল করার জন্য নয়, বাস্তবকে ভেঙে দেবার জন্য, ভেঙে দিয়ে তার ভিতরকার ছন্দ আবিষ্কারের জন্য।”#
(# শঙ্খ ঘোষ, গ্রন্থ- ‘আরোপ আর উদ্ভাবন’, পরিচ্ছেদ- ‘অলীক ভবিষ্যৎ’।)