রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, ঠুমরি, গজল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, সারিগান—বাংলায় গানের রকমফেরের শেষ নেই। কিন্তু ফুঃ-ফুঃ? আমরা ক-জন শুনেছি এমনতর গানের নাম? গায়ক, গায়কই শুধু নন বাদকও, তাঁর হাতে বাঁশকঞ্চির ঝুড়ি ও হাতখানেক লম্বা মোটা বাঁশকঞ্চিকে দু-ফালা করা দুটি ডাং বা কাঠি। প্রথমে গলা ছেড়ে গান ধরলেন তিনি—‘মাছ পুড়াইতে আগুনে দিলে/লাফাই উঠলেক চ্যাঙ।/এক সতিনে কপাল ঠুকে/লাকাড়ে উঠে ব্যাঙ।’ আর তারপরে নিজেই হাঁটু মুড়ে লাফ দিয়ে ঝুড়িতে তাল দিতে থাকলেন তিনি। এমন করে এক-একটি গান গাইবেন আর প্রতি গানের শেষে উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠবেন—এই লা ফুঃ-ফুঃ। এই লা ফুঃ-ফুঃ। আশ্চর্য এই রঙিন বাঙালি সংগীত-সংস্কৃতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে, প্রায়। তবে বর্ধমান বীরভূম অঞ্চলে ট্রেনে চড়লে এখনও কিছু কিছু এই গান শোনা যায়, যদিও তার আঙ্গিক বদলে গেছে অনেকটাই।
লোকগানের আকরভূমি রাঢ়বাংলা। এমনি ভাবেই বহুলাংশে হারিয়ে গেছে বাঁকুড়া মেদিনীপুরের বালিকাসংগীত, মেছুয়াগান, কাঁদনগীতি।
এইরূপ বহু গান সংযোজিত হয়েছে এবং তার পদ্ধতি ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন শিবরাম পণ্ডা তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধে। শিরোনাম ‘লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতি ফুঃ ফুঃ গান’। প্রবন্ধটি পড়তে হলে সংগ্রহ করতে হবে একটি সম্প্রতি-প্রকাশিত বই—‘রাঢ়বাংলার লোকসংস্কৃতি’। সম্পাদনা করেছেন সব্যসাচী মণ্ডল।
সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদিভূমি রাঢ়ভূম। বহু প্রাচীন গ্রন্থে ‘রাঢ়’ নামের উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল জৈন ধর্মগ্রন্থ ‘আচারঙ্গসূত্ত’, ‘সিংহলি পালিগ্রন্থ’, ‘দীপবংশ ও মহাবংশ’, শ্রীধর আচার্যের ‘ন্যায়কন্দলী’, দ্বাদশ শতকের নাট্যকার কৃষ্ণ মিশ্রর নাটক ‘প্রবোধ চন্দ্রোদয়’ ইত্যাদি এবং গঙ্গরাজ দেবেন্দ্রবর্মণের লিপি। রাঢ়ের প্রাচীনত্ব নিয়ে সংশয় না থাকলেও, এর সীমানা সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্নরকম বলেছেন। অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রাঢ়ের চতুঃসীমাকে চিহ্নিত করেছেন—উত্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণে মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, পূর্বে হাওড়া, কলকাতা থেকে পশ্চিমে পুরুলিয়া সাঁওতাল পরগনা। অধ্যাপক সুকুমারী সেনের মতে, ‘একদা রাঢ়দেশ বলতে, গঙ্গার ওপারের কিছু অংশ এবং এপারের দামোদরের প্রাচীন খাত বাঁকাবল্লুকা (বেহুলা) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল’। প্রকৃতপক্ষে বৃহত্তর রাঢ় অঞ্চল বলতে এক বিস্তৃত অঞ্চলকে চিহ্নিত করা যায়। যার উত্তরে বীরভূমের ময়ূরাক্ষী সীমা, দক্ষিণ-পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম জেলা, পশ্চিমে পুরুলিয়া সীমান্ত। অর্থাৎ মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশ বাদে সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ সমেত বিহার ও উড়িষ্যার সংলগ্ন অংশগুলি নিয়ে বৃহত্তর রাঢ় অঞ্চল।
এই বৃহৎ অঞ্চলের মধ্যে যে সংস্কৃতির বৈচিত্র্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আর এই বিপুল বৈচিত্র্যের কারণেই এখানকার সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা বেশ জটিল। আবার এই অঞ্চলের সংস্কৃতির বৈচিত্র্য বারবারই প্রলুব্ধও করেছে গবেষকদের। তাই গবেষণার জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছেন আশুতোষ ভট্টাচার্য, মানিকলাল সিংহ, সুধীরকুমার করণ, মিহির চৌধুরী কামিল্য প্রমুখ। ঠিক এই দুরূহ কাজটিরেই এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্প্রতিতে চেষ্টা করেছেন সব্যসাচী মণ্ডল তাঁর সম্পাদিত বইটিতে। সুরঞ্জন মিদ্দের প্রাককথন এবং শান্তি সিংহের পুরোবাক সংযোজিত ৩২০ পাতার এই বইয়ে সংকলিত হয়েছে সাতাশ জন প্রাবন্ধিকের সাতাশটি মূল্যবান প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলির পরিধি বিস্তর, বিস্তার ব্যাপক।
শান্তিসিংহ ‘বাঁকুড়া পুরুলিয়ার লোককথা ও জাদু-বাস্তবতা’ প্রবন্ধে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন বাংলা লোককথা সংগ্রহের ইতিহাস। পুরুলিয়ার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ম্যাজিক রিয়ালিজমের গল্পের ভাণ্ডারটির সন্ধান দিয়েছেন এই প্রবন্ধে। এ প্রবন্ধে আলোচিত প্রায় হারিয়ে যাওয়া এরকমের নানা গল্পের শেষে রয়েছে আমাদের ছেলেবেলায় শোনা গল্পকথকের গলায় বলা প্রশ্নোত্তরধর্মী ছড়া—‘আমার কথাটি ফুরাল্য/লইট্যা গাছটি মুড়াল্য…’।
সুরঞ্জন মিদ্দে রবীন্দ্রনাথের লোকশিল্প চর্চা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম ‘বাংলার কৃষ্টি ঐতিহ্য: রবীন্দ্রনাথের লোকশিল্প চর্চা’। প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে রবীন্দ্রসাহিত্যে লোকসহিত্যের অন্যতম প্রধান উপাদান ‘ছেলেভুলানো ছড়া’-র প্রভাব এবং লোকশিল্প চর্চা ও লোকশিল্প-ভাবনার বিষয়ে।
সীমান্ত বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রামায়ণ পালা, ষষ্ঠীমঙ্গল, সীতাচুরি পালা, ঝুমুরনাচ, রাধাকৃষ্ণ পালা, লোকযাত্রা পালা, পুতুলনাটক ইত্যাদিতে ‘ছো’-সহ যে বিভিন্ন ধরনের নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। তার উর্বর ভূমি পুরুলিয়া জেলা। এই লোকনাটক নিয়েই আলোচনা করেছেন মিলনকান্তি সৎপথী। এই বইয়ের অন্তর্গত তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম ‘লোকনাটক: প্রসঙ্গে পুরুলিয়া জেলা’। এ প্রবন্ধের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন লোকনাটক বিশেষত ছো, মাছানি, কাঁদনা ইত্যদির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত গানগুলো।
বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের তৈরি পোড়ামাটির মনসার চালি (ছবিটি সীমা অবস্তীর ব্লগ থেকে নেওয়া: https://seemaawasthiblog.wordpress.com)
পুরুলিয়া জেলার ছো নাচের মুখোশ (ছবিটি বিশ্বরূপ সরকারের ওয়েবপোস্ট থেকে নেওয়া: https://www.flickr.com/photos/56819064@N05/32553513812)
‘পশ্চিম প্রান্তিক রাঢ়ভূমির ছড়া: সমাজ সংসার’ শিরোনামের প্রবন্ধে শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের আলোচনায় মিলবে বহু হারিয়ে যাওয়া ছড়া। ছোট্ট একটি উদাহরণ—‘বুঢ়ির বেলি ছিঁড়া কাঁথা/ ঢেঁকিশালের গড়ে/ বহুর বেলি খাটপালঙ/ তিনটা বালিশ পড়ে।’
বাঁকুড়া জেলার হারিয়ে যাওয়া কবিগান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন রামপ্রসাদ বিশ্বাস। তাঁর প্রবন্ধটি ক্ষেত্র-সমীক্ষামূলক, শিরোনাম ‘ক্ষেত্রসমীক্ষা: বাঁকুড়া জেলার কবিয়াল’। সঙ্গে রয়েছে কবিগানের কবিয়ালদের তালিকা ও গানের নমুনা। কবিগান আজও হারিয়ে যায়নি দিলীপ নায়কের মতো কবিয়ালদের জন্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোল বদলেছে কবিগান। আগে বিষয়বস্তু ছিল সতীর দেহত্যাগ, রাজতন্ত্র ইত্যাদি। বর্তমানে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্যসরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মতো বিষয়ে। সুদর্শন চক্রবর্তী তাঁর লেখা ‘আলৌকিক ব্যক্তির লৌকিক ভাবনা’ নামক প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত এবং লুপ্তপ্রায় লোকচিকিৎসার বিষয়ে। ‘লোককথার আঙিনায় ইতিহাসের প্রসঙ্গ: হুগলি জেলা’ এই শিরোনামে পার্থ চট্টোপাধ্যায় আলোচনা করেছেন হুগলি জেলার প্রচলিত লোককথা। যেমন, হুগলি জেলার রাজা হরিপাল ও রঘুডাকাতের কাহিনি, তারকেশ্বরের কাহিনি ইত্যদি। ধীরেন্দ্রনাথ কর আলোচনা করেছেন লোকসংস্কৃতি চর্চায় ক্ষেত্রসমীক্ষার গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে। আবার প্রাবন্ধিক অমিয়কুমার সেনগুপ্ত লিখেছেন বিশ্বায়নের আগ্রাসী থাবা কীভাবে বিপন্ন করে তুলেছে লোকসংস্কৃতিকে। গোরা পাগলার দেহতত্ত্বের গান নিয়ে আলোচনা করেছেন নিতাই নাগ।
বাঁকুড়া পুরুলিয়া জেলায় ছড়িয়ে থাকা অন্যতম আদিম জনজাতি শবর। ব্রিটিশ সরকার এদের অপরাধপ্রবণ জাতি বলে চিহ্নিত করেছিল। দেশ স্বাধীন হবার পরেও ওই ভাবনার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। শবরজাতির উৎপত্তি, গোত্র, লোকাচার, সামাজিক বিধান ইত্যাদি মূল্যবান তথ্য সংযোজিত হয়েছে প্রণব হাজার লিখিত তাঁর ‘শবর লোকসংস্কৃতি’ প্রবন্ধে। এ প্রসঙ্গে তাদের সমাজে প্রচলিত একটি গান তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না, ‘খাঁইছি রে বঁধু গাঁজার কলি/পথে যাতে যাতে ঢুলিয়ে পড়ি/ঢুলিয়া পড়িছে শ্যামের গায়/ঢুলিয়ে পড়িছে বঁধার গায়/তবুও বঁধা ফিরে না চায়’!
লোক-জলসেচযন্ত্র প্রবন্ধে মেঘদূত ভুঁই আলোচনা করেছেন প্রাচীনকাল থেকে জনজীবনে ব্যবহৃত হয়ে আসা বিভিন্ন ধরনের জলসেচযন্ত্র সম্পর্কে।এ প্রসঙ্গে এসেছে সিউনির কথা,আকশলা, লাদনা ইত্যাদির কথা ও এগুলি বানানোর নির্মাণকৌশল। রয়েছে জলসেচ সম্পর্কিত বিভিন্ন লোকছড়া। যেমন— ‘শুনু পেটে কেনে যাস/লঙ্কাপড়া ইচলি খাস/জাম ভরতি পান্তা ভাত/যত পারবি ততই খাট।’
রাঢ়বাংলার প্রাচীনতম নাচ রণনৃত্য। এই নাচের উপকরণগুলি হল শক্ত সরু বাঁশের লাঠি। পরনে নীচে ঘাংরার পোশাক, উপরে সৈনিকের পোশাক, কোমরবন্ধ ইত্যাদি। এই নিয়েই অচিন্ত্য জানা আলোচনা করেছেন তাঁর প্রবন্ধে।
হুগলি জেলার অপসৃতপ্রায় লোকসংস্কৃতি আঙ্গিক তরজা, হাপু, ঘেঁটুগান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন চণ্ডী ঘোষ। তরজা মূলত গ্রামবাংলায় লোকশিক্ষা প্রচার। তর্ক এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে তার বিস্তার ও পরিসমাপ্তি। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে অবলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্য একটি শাখা হাপুগান সম্পর্কে। এই হাপুগান সম্পর্কে বলতে গিয়ে একজন পণ্ডিত বলেছিলেন, ‘Folk love is an echo of the past but at the same time it is also vigorous voice of the present.’ এ উক্তি কার? হদিশ দেননি প্রবন্ধের লেখা। বস্তুত, প্রবন্ধটির কোনোই পাদটীকা বা অন্তটীকা নেই। থাকলে ভালো হত। খুব জনপ্রিয় একটি গান প্রাবন্ধিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন— আমি সে ভোলানাথ নই রে/সে ভোলানাথ নই/তবে সবাই পুজে ভোলারচরণ/আমার চরণ পূজে কই/আমি যে ময়রা ভোলা/হরির চেলা/বাগবাজারে রই। প্রসঙ্গত, এই গানটি এন্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমায় কবিগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
আশিস মিত্রর প্রবন্ধের বিষয় বাংলার লোকক্রীড়া। রান্নাবাড়ি, পুতুলবিয়ে, চান্দামাছ, মনপরি, লাল লাঠি-সহ হারিয়ে যেতে বসা প্রায় ৫১ টি গ্রাম্য ক্রীড়ার লেখার পদ্ধতি এবং উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তিনি। বীরভূম জেলার খেলাধুলার গান, মাটির গান উঠে এসেছে প্রাবন্ধিক তৈমুর খানের প্রবন্ধে। শুধু শিশুদের জন্য নয়, বড়োদের ছড়া ও গান সংকলিত হয়েছে প্রবন্ধটিতে।
কীর্তন ও বাউল বীরভূমের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মধ্যেই রয়েছে। সেইসব নিয়েই প্রণতি গায়েন আলোচনা করেছেন, ‘লোকসংস্কৃতির অঙ্গনে বীরভূম জেলা: কীর্তন ও বাউল’ নামের প্রবন্ধে। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজে অতিপ্রচলিত ‘তিস্তাবুড়ি ও হুদুমদাও ঠাকুরের পুজো’। এই বিষয়ে লিখেছেন অলোকানন্দ দাস। জৈন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি কীভাবে হিন্দু দেবদেবীতে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং স্থানীয় সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব নিয়ে সংযোজিত হয়েছে দুটি প্রবন্ধ। যেমন, জৈন তীর্থংকর পার্শ্বনাথ কোথাও পূজিত হচ্ছেন মনসা রূপে, কোথাও খাঁদাসিনি রূপে। অনুরূপ ভাবে ঋষভনাথ পূজিত হচ্ছেন ভৈরব রূপে।
মেয়েলি ব্রতের ছড়াছড়ি রাঢ়বঙ্গে। ষষ্ঠী, শীতলা, তোষলা ইত্যাদি। এইরকমই এক গুরুত্বপূর্ণ মেয়েলি ব্রত জিতাষ্টমীর উৎপত্তি থেকে বর্তমান রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন পরিমল পাল। লোকসংস্কৃতির আলোয় বাঁকুড়ার শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন অমলেন্দু মণ্ডল। জনজাতি সাঁওতাল বিবাহরীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন রোহিতেশ্বর কিস্কু। লোকায়ত জীবন ও লৌকিক উৎসব নিয়ে আলোকপাত করেছেন স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর আলোচনা সীমাবদ্ধ থেকেছে সুপুর অঞ্চলে। শিল্পী চন্দন রায়ের প্রবন্ধের বিষয় রাঢ়বাংলার মনসাভক্তি। বর্ণনা করেছেন মনসার চালির বিভিন্ন রূপ। প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পের কথাও। পুজোয় ব্যবহৃত মনসা চালির বিবর্তিত রূপ। শিল্পীদের শ্রম ও কষ্টসাধ্য জীবনের কথা। বইয়ের শেষে রয়েছে সব্যসাচী মণ্ডলের প্রবন্ধ—‘ফিরে দেখা: দক্ষিণ বাঁকুড়ার প্রত্নস্থল ধডাঙ্গা গ্রামের লৌকিক দেবী মা পার্বতী’ ।
রাঢ়বঙ্গের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সংকলন এই বই। পাতায় পাতায় প্রতিফলিত হয়েছে প্রাবন্ধিকদের নিষ্ঠা এবং ক্ষেত্রসমীক্ষা জ্ঞান। তবে প্রবন্ধগুলির সঙ্গে কিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ চিত্রের দরকার ছিল। দৃষ্টিনন্দন এবং মানানসই প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দর বাঁধাই এবং ঝকঝকে মুদ্রণ পাঠে আরাম দেয়।
বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
দারুণ পাঠ-আলোচনা। বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শবর জনজাতির সংস্কৃতি ও জীবনাচার সম্পর্কে আরও জানাতে চাই। এ নিয়ে কেউ কোনো আলাদা বইপত্রের খোঁজ দিতে পারেন?
এই আলোচনা পড়ার পর বইটি সংগ্রহ না করার বা পুুুুরো বই না পড়েে থাকার আর কোন উপায় রইল না, এমনই আকর্ষণীয় এই আলোচনা। 'ফুঃ ফুঃ' র জাদুকাঠিির ছোঁঁয়ায় বইটি পড়ার অনিবার্য আগ্রহ তৈরি হল। 'পড়াবই' নামকরনের মধ্যে নিহিত দ্বিমাত্রিক 'পান'টি সার্থক। একদিিকে পড়া বইটির আলোচনা, অন্যদিকে সেই আলোচনা পাঠ এবং অবশেষে আলোচিত বইটিি পড়ার মুুুচলেকা পাঠকের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়ায় বিভাগীয় শিরোনামের সার্থকতা।