ঘটনা ১
গ্রামের নাম এদেসমেত্তা, জেলা বিজাপুর, ছত্তিসগড়। জেলাশহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ১৭-১৮ মে, ২০১৩র রাতে গ্রামের ৩০-৪০ জন মানুষ বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য মিলিত হয়েছে। বীজ পান্ডুম হচ্ছে ফসলের বীজের মাধ্যমে নতুন জীবনের আগমনকে উদযাপিত করা। প্রায় হাজার জনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে, নির্বিচারে গুলি চালায়; ৮ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন নাবালক। মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোবরা ইউনিট উল্লসিত, তাঁরা উগ্রপন্থীদের একটি দলকে নিকেশ করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ মানতে নারাজ, তাঁরা বলেন যে এঁরা সবাই ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, কেউ মাওবাদী নন। তুমুল হৈচৈ হয়। তখন রাজ্যে রমন সিংয়ের বিজেপি সরকার যাদের প্রবল দমন-পীড়নে আদিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এতো সাড়া পড়ে যায় যে সেই সরকারও বাধ্য হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে।
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন বিচারপতি ভি.কে.আগরওয়ালের নেতৃত্বে সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আট বছর বাদে গত ৮ই সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে আসে। রিপোর্ট বলছে সেই ভয়ঙ্কর রাতে যাঁরা উৎসবের জন্য জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না, যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের কেউও মাওবাদী নন, তাঁদের কারো কাছে কোনও অস্ত্রশস্ত্রও ছিল না। এরপর রিপোর্ট নানা অছিলায় বাহিনীকে আড়াল করার চেষ্টা করে। জওয়ানরা নাকি স্রেফ আতঙ্কিত হয়ে গিয়ে ৪৪ রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেয়। তাঁরা নাকি শত্রু চিনতে ভুল করেছিলো এবং নার্ভাস প্রতিক্রিয়ার কারণে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে দিয়েছিল। এলাকায় এই ধরণের অপারেশন করাতে বিচারপতি ভুল কিছু দেখছেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন বাহিনীর আরও উন্নত সরঞ্জাম থাকা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের ভুল না হয়; যেমন শত্রুর অবস্থান বোঝার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা উচিত! রিপোর্টে নিহত গ্রামবাসীদের জন্য ক্ষতিপূরণ বা ফায়ারিংয়ের জন্য দায়ী অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়নি। রিপোর্টটি কংগ্রেস মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট অনুমোদন করেছে।
ঘটনা ২
গ্রামের নাম সারকেগুড়া, জেলা বিজাপুর। ঘটনা একই রকম ভাবে ভয়াবহ। সেই বীজ পান্ডুম উৎসব। তারিখ-২৭-২৮ জুন, ২০১২। উৎসবের আয়োজন করার জন্য তিনটি গ্রামের মানুষ একটি খোলা মাঠে মিলিত হয়েছিল। আধা-সামরিক বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে গুলি চালায়; ১৭ জন মারা যান, যার মধ্যে তিন জন শিশু। তখনো জাস্টিস আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়েছিলো যেটির রিপোর্ট সাত বছর বাদে অক্টোবর, ২০১৯এ সরকারের কাছে জমা পড়ে এবং যেটি দু মাস বাদে ডিসেম্বরে বিধানসভায় পেশ করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনাটি পুরো সাজানো এবং নিরস্ত্র ও নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপরে বিনা কারণে গুলি চালানো হয়েছিলো।
ঐ গণহত্যার স্মরণে ঘটনার নয় বছর পূর্তিতে সারকেগুড়া গ্রামে প্রায় ৫০০০ আদিবাসী মানুষ জড়ো হন। রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর দেড় বছর কেটে গেছে কিন্তু সরকার এখনো দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি। মৃতদের সম্মান জানাতে এবং তাঁরা যাতে বিচার পান তা নিশ্চিত করতে ‘মূল নিবাসী বাঁচাও মঞ্চ’ এই সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাঁরা বলেন মাসের পর মাস আমাদের খালি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে কিছু হচ্ছে না। এই জঙ্গলের মধ্যে এতো চওড়া রাস্তা কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে? পুলিস কার নির্দেশে গুলি চালিয়েছিল? আমাদের কথা কেউ শুনছে না কেন? সরকার নানা বাহানা দেখাচ্ছে। তাঁরা বলছেন আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি…
ঘটনা-৩
ছত্তিসগড়ের সুকমা জেলার বুর্কাপাল গ্রামে কোনও পুরুষ নেই। কিছু প্রবীণ মানুষ আছেন, বাকি সবাই নারী এবং শিশু। ২৪শে এপ্রিল, ২০১৭, আদিবাসীরা বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। গ্রামে তখন রাস্তা খোঁড়ার কাজ চলছে, সিআরপিএফ পাহারা দিচ্ছে। আদিবাসীরা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেন কারণ উৎসবের দিনে মাটি খোঁড়া অমঙ্গল বয়ে আনে। তাঁরা এটাও বাহিনীকে জানিয়ে দেন যে এলাকায় কিছু অচেনা মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জওয়ানরা তাঁদের কথা পাত্তা দেয় না। কিছুক্ষণ বাদে সশস্ত্র একটি দল তাঁদের ঘিরে ফেলে, গোলাগুলি চলে ২৫ জন জওয়ান মারা যান। গ্রামবাসীরা তখন দু-কিলোমিটার দূরে একটি খোলা মাঠে তাঁদের উৎসবে মজে আছেন, তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কী সাংঘাতিক কান্ড হয়ে গেছে। পরের দিন যখন তাঁরা ঐ মারণঘাতি আক্রমণের কথা অন্যদের থেকে জানতে পারেন, ততক্ষণে প্রত্যাঘাত শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, দু দিন বাদে প্লাস্টিকে মোড়া তাঁর মাংসপিন্ড তাঁর মায়ের কাছে ফিরে আসে। সে নকশাল টকশাল কিছুই জানতো না, কোনও রকমে করে কর্মে খেতো, তাঁর ক্রন্দনরত মায়ের বক্তব্য। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে সর্বসমক্ষে বেদম মারধোর শুরু হয়, তা দেখে বাকি সব পুরুষ আতঙ্কে গ্রাম থেকে পলায়ন করে। বাহিনী কয়েক দিন অপেক্ষা করে তাঁদের ফিরে আসার জন্য, তারপর মহিলাদের ফুসলাতে শুরু করে: চাষের সময় হয়ে গেলো, মরদ ফিরে না এলে খাবি কি? চিন্তা নেই কেউ তাঁদের কেশাগ্রও ছোঁবে না, তাঁরা আশ্বস্ত করে। মহিলারা খুঁজেপেতে আশেপাশের গ্রাম থেকে বাপ, স্বামী, ছেলেদের ঘরে নিয়ে এল। পুলিশ কথা রাখল না। দোসরা মে পুরুষরা ফিরে আসা মাত্র তাঁদের গ্রেপ্তার করে মারতে মারতে থানায় নিয়ে গেল। ১২০ জন গ্রেপ্তার হল এবং নিউজলন্ড্রির ১৮ জুন, ২০২০র রিপোর্ট অনুযায়ী এখন অবধি কেউ ছাড়া পাননি। অনেককে দাগী অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করা হল যদিও তাঁদের কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। অনেকের নাম পালটে এলাকার পরিচিত মাওবাদীদের নাম দিয়ে দেওয়া হল যাতে তাঁদের সহজেই মাওবাদী হিসাবে প্রমাণিত করা যায়। ৩০শে অক্টোবর, ২০১৭, ঘটনার ছয় মাস বাদে পুলিশ প্রথম চার্জশীট পেশ করে। তিন বছর হয়ে যাওয়ার পরেও কাউকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আদালত আদেশ জারি করে একসাথে সবাইকে কোর্টে হাজির না করতে পারলে, গ্রুপ করে তাঁদের যেন আদালতে হাজির করা হয়। শেষ খবর অনুযায়ী ১২০ জনের মধ্যে ১০৫ জনের চার্জশীট প্রস্তুত হয়েছে।
এরকম ঘটনা ছত্তিসগড়ে আকছার ঘটছে। স্কুলে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বাহিনী কিশোর কিশোরীদের পাকড়াও করলো, বলল তোরা মাওবাদীদের চর, তাঁদেরকে খবর পাচার করিস। দু দিন হাজতবাস করার পর ছাড়া পেল। বিয়েবাড়ি সামগ্রী পৌঁছানোর পথে পাকড়াও, মারধোর; কাছেপিঠে মাওবাদীরা নাকি কাকে খুন করেছে, সে নাকি তাতে জড়িত। জেলে চালান, কবে যে ছাড়া পাবে কোনও ঠিক নেই। বাড়ির চাল ঠিক করে নীচে নেমে এসেছে, দেখল সারা বাড়ি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার, অনির্দিষ্ট কালের জন্য হাজতবাস। যে কারও ওপর যখন তখন যে কোন অজুহাতে মাওবাদী, নকশাল তকমা সেঁটে দেওয়া যেতে পারে, গরিব গুর্বো মানুষ পুরোপুরি অসহায়। আইনজীবীদের পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই, ৬০০ টাকা খরচ করে জগদলপুরে গিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করার কথাও তাঁরা ভাবতে পারেন না।
মাওবাদী, নকশাল ছাপ্পা মেরে হত্যা করা, গ্রেপ্তার করা, মেয়েদের ধর্ষণ করা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, এসবই করা হয় একটা লক্ষ্যে---জমি, প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী সনি সোরি বলেন। বাস্তবে তাই, জমি লুটের লড়াই চলছে ছত্তিসগড় বা ঝাড়খণ্ডের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে। আদিবাসীদের জমি বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করা সাংবিধানিক ভাবে বেআইনি। তাই জোর জবরদস্তি করে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়, আর না হয় লিজ নেওয়ার নাম করে সরকারের মধ্যস্থতায় জমি দখল নিয়ে নেওয়া হয়। ছত্তিসগড় রাজ্য গঠন হওয়ার পাঁচ বছর বাদেই টাটা কোম্পানি বস্তারে ১৫০০০ কোটি টাকার একটি স্টিল প্ল্যান্ট স্থাপিত করার কথা ঘোষণা করে। রাজ্য সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় ২ জুন, ২০০৫। সেই দিন থেকেই সমস্যার শুরু। বস্তার অঞ্চলকে ধরে নেওয়া হয় শিল্পায়নের লীলাক্ষেত্র। উক্ত প্রকল্পের জন্য ২০৪৩.৪৫ হেক্টর জমি প্রয়োজন হয়, যার ফলে ১০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ১৭০৭ জন কৃষিজীবী উচ্ছেদ হবেন। টাটা সরকারের কাছে ৭৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ জমাও করে দেয়। ২০০৮ সাল থেকে ক্ষতিপূরণ বিলি এবং উচ্ছেদ শুরু হয়। ১১৬৫ জন ক্ষতিপূরণ নিয়ে নেন, বাকিরা প্রতিরোধ করে। দীর্ঘ আট বছর ধরে লড়াই চলে। জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষিজীবীদের অনমনীয় মনোভাবে ও তাঁদের ধারাবাহিক প্রতিবাদ আন্দোলনের ফলে ২০১৬ সালে টাটা এই প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্য সরকার অধিগৃহীত জমি ফেরত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। আঞ্চলিক পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র উপেক্ষা করে, সর্বোপরি মানুষের জীবন, মাটি ভিটের অধিকার নস্যাৎ করে দিয়ে মুনাফা-সর্বস্ব এই উন্নয়ন বা শিল্পায়নের বিরুদ্ধে বস্তারের মানুষদের এই প্রতিরোধ, উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। শাসক সিঁদুরে মেঘ দেখে। সেই থেকে ছলেবলে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার সরকার-কর্পোরেট প্রচেষ্টা আজও জারি আছে।
একই গল্প ঝাড়খণ্ডে। সেখানে তো জমির কদর আরও বেশি; দেশের ৪০% খনিজ পদার্থ এখানে পাওয়া যায়। তাই এখানে আদিবাসীদের জমি রক্ষা করার জন্য সমস্ত রক্ষাকবচ (ছোটোনাগপুর এবং সাঁওতাল পরগণা টেনান্সি অ্যাক্ট, জমি অধিগ্রহণ আইন) উপেক্ষা করে, সংশোধন করে, গ্রাম সভা বা গ্রামবাসীদের অন্ধকারে রেখে বারবার নানা MOU সই করে শিল্পপতিদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মানুষ প্রতিরোধ করেন, কোথাও সফল হন, কোথাও ব্যর্থ। আর্সেলর-মিত্তাল কোম্পানিকে যেমন খুন্তিতে ১২০০০ একর জমি দেওয়া হয়েছিলো স্টিল প্ল্যান্টের জন্য। গ্রামবাসীদের সাথে এই ব্যাপারে কোনও আলোচনাই হয়নি। স্বনামধন্য সমাজকর্মী দয়ামণি বার্লা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রচার করেছেন। এই অভিযানে কাজ হয়। মানুষ মিলিত ভাবে জমি অধিগ্রহণ রুখে দেন। কোম্পানি তখন বিভিন্ন গ্রামে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সম্বলিত এ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে শুরু করে। বলাই বাহুল্য এই সব দীনদরিদ্র এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রায় নেই বললেই চলে। কোম্পানি ভেবেছিলো স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করা যাবে। তারা ভুল ভেবেছিল। গ্রামবাসীরা তাদের তাড়িয়ে দেয়, তাদের থেকে পরিষেবা নিতে অস্বীকার করে। ১২০০০ একর থেকে মিত্তলের দাবী ৮০০ একরে নেমে আসে; মানুষ সেটাও ছাড়তে অস্বীকার করেন। মিত্তাল রণে ভঙ্গ দেয়।
ঝাড়খণ্ডে উন্নয়নের ঠেলায় যত মানুষ উচ্ছেদ হয়েছে, আর কোনও রাজ্যে তা হয়েছে কিনা সন্দেহ। কয়লা খনি, বক্সাইট খনি, মাইথন, চান্ডিল, মসেঞ্জোর সহ ছোটো বড় বহু বাঁধ, নানা কারখানা ইত্যাদিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তু চ্যুত, জীবিকা চ্যুত হয়েছেন। তাঁরা আজ চা বাগানে মজদুরি করছেন, শহরে লোকের বাড়ি কাজ করছেন, বেশির ভাগই অভাব ও ক্ষুধার অন্ধকার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেন। আর এসবের বিরোধিতা করলেই, তুমি নকশাল, মাওবাদী! আমরা জানি ফাদার স্ট্যান স্বামী এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তাঁর হিসাবে ৩০০০ আদিবাসী, ২০০০ দলিত ভুয়ো অভিযোগে রাজ্যের জেলে বছরের পর বছর হাজতবাস করছেন। এঁদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য তিনি হাইকোর্টে PIL করেন। আদালত প্রতিটি জেল থেকে তথ্য চেয়ে পাঠান; ব্যস ঐ পর্যন্তই। ফাদার ১০২ জন বিচারাধীন ‘নকশাল’ বন্দীদের সাথে কথা বলেছেন। বলছেন এঁদের মধ্যে ৯৭% নিরীহ এবং তাঁরা এতো হত দরিদ্র যে তাঁদের পক্ষে সঠিক বিচার পাওয়া অসম্ভব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ২৪শে সেপ্টেম্বর ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মাওবাদী সমস্যা নিয়ে মিটিং করেছেন। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে এঁদের উপস্থিতি এখন মাত্র ৪৫টি জেলায় সীমাবদ্ধ। তিনি এঁদের অর্থের উৎস বন্ধ করার ওপর জোর দেন এবং এক বছরের মধ্যে এই সমস্যা নিকেশ করার নিদান দেন। তিনি বলেন গণতন্ত্র প্রসারিত করার জন্য এই সব এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তোলা প্রয়োজন।
এখনো প্রচলিত ধারণা হচ্ছে দমন পীড়ন করেই সমস্যার সমাধান সম্ভব, সারকেগুড়ার সমাবেশে উপস্থিত ছত্তিসগড়ের কংগ্রেস নেতা অরবিন্দ নেতম বলেন। আদিবাসী সংস্কৃতির বিভিন্ন স্মারক, স্মৃতিস্তম্ভ যেগুলি তাঁদের খুব প্রিয় সেইসব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাইরের মানুষ আমাদের সংস্কৃতি জানে না, সমাজ জানে না, আমাদের রীতিনীতি, আজন্ম লালিত বিশ্বাসে তাঁরা বারবার আঘাত করে, সেগুলোকে কোনও গুরুত্বই দেয় না। সমাবেশে উপস্থিত এক কিশোর বুঝে উঠতে পারেন না কোন উন্নয়নের কথা সরকার বলে। তারা কি কোনও দিন আমাদের জিজ্ঞাসা করেছে কী ধরণের উন্নয়ন আমরা চাই? এটা অন্যায়, ভুল! গণতন্ত্র কি এভাবে কাজ করে?