এই লেখার আগে আমার কয়েকজন শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, তখন একজন উল্লেখ করেছিলেন যে, এই শিক্ষানীতিটি একটি বড়ো সুযোগ, এবং সময় উপযোগী, আমরা এতদিন যা ভুল করে এসেছি তা শুধরে নেবার সুযোগ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে একজন শিক্ষাবিদ অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন যে এই শিক্ষানীতি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রর আগে থেকে পরামর্শ হয়নি। আবার প্রভাত পট্টনায়েক (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ সোশ্যাল সায়েন্সে ইকোনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিং-এ প্রাক্তন শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ) মন্তব্য করেছেন এই নতুন শিক্ষানীতি হল ‘পশ্চাদ্দিকবর্তী উল্লম্ফন’! সুতরাং, মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ভিন্ন মতামত প্রত্যাশিত।
নীতিটি পড়তে পড়তে সামগ্রিকভাবে আমার মনে হয়েছে, আকাশছোঁয়া অভীষ্ট, বিশাল একটা ক্ষেত্রকে ধরা হচ্ছে, যা বাস্তবিক নয়। এই নীতিতে শুধুই লক্ষ্য; কীভাবে তা সম্পাদন হবে, কার দ্বারা হবে, এসব কোনো ব্যাখ্যা নেই। ফলত, নীতিটি পড়ে পাঠক তার মনশ্চক্ষুতে কিছু কল্পনা করতে পারবে না, বরং একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। অতএব, এত বড়ো রূপান্তরের যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার কোন্ পর্যায়টি, কখন, কীভাবে এবং কেন প্রয়োগ করা হবে তা সবই অনিশ্চত, উল্লেখ নেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থ সংগ্রহের উপায়। কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশ নেই বলে, এই অনিশ্চিত জায়গাগুলো অনেক প্রশ্ন তৈরি করছে। কিছু প্রসঙ্গ বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। অনর্থক পুনরাবৃত্তি কিছুক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক হলেও প্রভাত পট্টনায়েক সমালোচনা করছেন এই নীতিতে ‘education is a public good’, ‘6 per cent of GDP should be earmarked for education’ এই বাক্যগুলি পুনরাবৃত্তি হলেও তা কেবলমাত্র প্রতারণা। পট্টনায়েক আরও যোগ করছেন যে, নব্য-উদারবাদী পুঁজিবাদের অধীনে একটি শিক্ষানীতিটির উদ্দেশ্য হল কেবল প্রয়োজনটুকু শিক্ষিত করা এবং সর্বজনীন শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা নানা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া। এখানে ইংল্যান্ডের শিক্ষানীতি নিয়ে ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী এস যে বলের একটি সমালোচনা প্রাসাঙ্গিক, তিনি সাম্প্রতিককালে The tragedy of state education in England এই রচনাটিতে মন্তব্য করেন ‘some political preoccupations and structural inequalities that underpin this messy apparatus, and historically constitute and reproduce its messiness’ (বল, ২০১৮)। শুধু তাই নয় তিনি যোগ করেন যে ইংল্যান্ডের সরকার শিক্ষানীতি ভুলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । সুতরাং শিক্ষানীতিতে যা বলা হয় আর যেভাবে তা প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে অনেক বৈষম্য ও কৌশল লুকিয়ে থাকে যেটি ক্ষমতা (power) তার দরকার মতো ভাবে ব্যবহার করে।
আমি বলেছিলাম এই কিস্তিতে আমরা কয়েকটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এই শিক্ষানীতিটি খুঁটিয়ে পড়ার সময় আমি লক্ষ করছিলাম যে, অস্পষ্টতা ছাড়াও মূল গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ নেই, উপরন্তু রয়েছে স্ববিরোধিতা। একটি নথি হিসেবেই আমার কাছে এটি অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা যদি দৃষ্টি দিই কেবলমাত্র ২৬ তম বিষয়বস্তুর পাতাগুলিতে, যেখানে বাস্তবায়ন (Implementation) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাবজেক্ট লাইনে বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কী কী বলা হচ্ছে দেখে নেওয়া যাক। এই নীতির বাস্তাবায়নে যে প্রচুর লোকবল, প্রচুর কমিটি, এবং বিপুল অর্থ দরকার, কীভাবে সম্পাদিত হবে তা ব্যাখ্যা হচ্ছে না। এই শিক্ষানীতিতে নানাধাপের শিক্ষা নিয়ে অনেক লক্ষ্যের উল্লেখ করা হয়েছে যা ৩০ এবং ৪০ সালে পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করা হবে। এই নথিপত্রের একদম শেষ বাক্যটিতে বলা হচ্ছে ‘In the decade of 2030-40, the entire policy will be in an operational mode, following which another comprehensive review will be undertaken’ (p:60, NEP 2020)। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তারজন্য ৭টি পদক্ষেপ নির্দেশ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম পদক্ষেপটির অন্তর্নিহিত মর্ম আমার বোধগম্য হয়নি, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘First, implementation of the spirit and intent of the Policy will be the most critical matter’ (p:60, NEP 2020)। দ্বিতীয়টি একটু পরিষ্কার করে বলা হয়েছে; উদ্যোগগুলি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হবে। যেহেতু নীতির বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে তাই পূর্ববর্তী পদক্ষেপটি সফলভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তৃতীয় পদক্ষেপে অগ্রাধিকার গুরুত্ব পাবে এবং একটি শক্তপোক্ত ভিত্তি নির্মাণ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি ব্যবস্থা প্রথমে গৃহীত হবে। তবে, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ কোন্টি এবং ‘জরুরি ব্যবস্থা’ কীভাবে এবং কার দ্বারা গৃহীত হবে তা বলা হয়নি। আবার চতুর্থ বিষয় বলা হয়েছে, যেহেতু এই নীতিটি আন্তঃসংযুক্ত সেহেতু সামগ্রিকভাবে এই নীতির বাস্তাবায়ন হবে। পুনরায় এই বাক্যটির অন্তর্নিহিত মর্ম নিয়ে আমার অনেকগুলি প্রশ্ন রয়েছে; আন্তঃসংযুক্ত বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কোন্টির সঙ্গে কোন্টি সংযুক্ত? একটু আগেই যেখানে পর্যায়ক্রম এবং অগ্রাধিকার-এর উল্লেখ হয়েছে সেখানে কীভাবে সামগ্রিক ভাবে করা সম্ভব ? পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বিষয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ ভূমিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে; ‘careful planning, joint monitoring, and collaborative implementation between the Centre and States’ (p:60, NEP 2020)। দারুণ উদ্যোগ, কিন্তু কীভাবে তা করা হবে, কবে থেকে তা শুরু হবে, তার কাঠামো কেমন হবে, কতগুলি স্তরের অনুক্রম তৈরি হবে? ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন কিন্তু ঘিরে আছে, শুধু তাই নয় জোর দেওয়া হয়েছে ‘satisfactory execution’ সন্তোষজনক বাস্তাবায়নে। এই ‘সন্তোষজনক বাস্তাবায়নে’র ব্যাখ্যা কী? সন্তোষের মাত্রা কী তাও কোথাও বলা হয়নি। সর্বশেষ বিষয়টিও সম্পূর্ণ বোধগম্য হয়নি, যেখানে বলা হয়েছে ‘finally, careful analysis and review of the linkages between multiple parallel implementation steps will be necessary in order to ensure effective dovetailing of all initiatives’ (p:59 NEP 2020). সুতরাং এই নথিটির কেবলমাত্র ২৬ তম বিষয়বস্তু বাস্তবায়নের অল্প অংশটিতেই উদাহারণ হিসেবে আমরা দেখতে পেলাম অনেক অস্পষ্টতা।
কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়নি, ধরা যাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিডের মতো কোনো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বহাল রাখা যাবে? বন্যা অথবা ঝড় হলে (একটি শহর যেভাবে মোকাবিলা করবে একটি প্র্যত্যন্ত গ্রাম সেভাবে বাস্তবিকভাবেই পারবে না, কোনো দুর্গম অঞ্চলে অবস্থা আরও শোচনীয়) বা এজাতীয় কোনো অস্বাভাবিক ও কঠিন সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? জুলাই মাসে যখন এই নীতিটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন কোভিডের সর্বাধিক সীমা ছোঁওয়ার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, মাসের পর মাস যেখানে স্কুল বন্ধ, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় কী বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার, এমতাবস্থায় শিক্ষকরা কীভাবে পড়াবেন এরকম কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। অনলাইন এবং অফলাইন লার্নিং-এর কী পদ্ধতি এরকম পরিস্থিতিতে কেমনভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার কোনো উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট না থাকলে শিক্ষা কীভবে বহাল থাকবে? এরকম কোনো বিষয়ই উঠে আসেনি। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি আপ্লুত, যে কোভিডের এই আস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আজ সফল। এই কঠিন সময়ে, কোনো সাহায্য ব্যতীত, নিজস্ব উদ্যোগে নতুন শিক্ষণকৌশল উদ্ভাবন করে শিশুদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছেন।
আমি আবার আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু প্রাথমিক শিক্ষায় ফিরে আসি। আমি এখানে, কন্যাসন্তান, দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষাদান, মিড ডে মিল, বা অর্থের আলোচনায় প্রবেশ করছি না, কারণ এরকম অনেকগুলি বিষয় আছে যা প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু পৃথক সমস্যা, অতএব সেগুলি স্বতন্ত্রভাবে চর্চা করার বিষয়।
প্রাথমিক শিক্ষা যে অবহেলিত, তা আমরা দেখে আসছি। জন্ম থেকে ১১ বছর বয়স অবধি শিশু কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ধাপ পেরতে থাকে, তাই প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ভিত্তি। প্রাথমিক শিক্ষার গুণমান পড়ে গেছে তা স্বীকার করা হয়েছে এই নীতিতে, কিন্তু কীভবে সেই গুণগতমান উন্নত করা যাবে তার ব্যখ্যা নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে ‘global standard education’ কিন্তু সেই বৈশ্বিক মানের শিক্ষাব্যবস্থাটি কীরকম তা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে না। ২.২ অংশে বলা হচ্ছে ‘Attaining foundational literacy and numeracy for all children must receive an urgent national attention’ এর সঙ্গে এও বলা হচ্ছে, ‘The very highest priority of the education system will be to achieve universal foundational literacy and numeracy in primary school’ (NEP-final-for-circulation.pdf)। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এখন জরুরি আওতার মধ্যে সব শিশুর ‘foundational literacy and number’ আনা হচ্ছে, এবং তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপূর্ণ। এবার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা ‘foundational literacy and number’ বলতে কী বুঝছি, এর মাত্রা কী? কী করেই বা নির্ধারিত হবে যে কোন্ শিশু সফলভাবে এটি রপ্ত করেছে? সকল শিশু শিক্ষাকে গ্রহণ করার একই অবস্থানে থাকে না, শিক্ষাবিজ্ঞান অনুসারে তার মধ্যেও কয়েকটি ধাপ আছে। সুতরাং সকল শিশুকে সামানভাবে শিক্ষাদান করা যাবে না। পড়াশোনায় শিশুর শক্তি এবং দুর্বলতা জানতে হবে, ফলত, প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে আলাদা। ২.৫ অংশটি আমার বেশ কৌতূহলোদ্দীপক লেগেছে, সেখানে রাজ্যগুলিকে এই ‘সংকটকালে’ বিবেচনা করতে বলা হয়েছে ‘peer-tutoring and volunteer activities’-কে উৎসাহ দেবার জন্য। কিন্তু, কোনো প্রয়োগকৌশল বলা নেই, কীভাবে তা হবে, কবে শুরু হবে? ৪.৩১-এর বিষয়বস্তু আমার বেশ ভালোলেগেছে; যেখানে মুখস্থ বিদ্যা নয় বরং বিশ্লেষণ, সমালোচনা চিন্তাভাবনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাঠক্রমের নতুন পরিকল্পনার প্রস্তাবও বেশ, যদিও তার কীভাবে ও কখন শুরু হবে সেসব ধোঁয়াশা। এখন প্রকল্পভিত্তিক সমস্যা, বা সমস্যাভিত্তিক শিক্ষণের সূচনা হলে পাঠক্রম তো ঢেলে সাজাতেই হবে, বয়স অনুসারে প্রতিটি ধাপের জন্য উপযুক্ত পাঠ্যসূচি তৈরি করতে হবে, তার জন্য যথেষ্ট পর্যেষণার দরকার। এই পর্যায়ে আমার আগ্রহ রইল রাজ্যসরকার কীভাবে নতুন পাঠ্যক্রমটি পারিকল্পনা করছেন তা জানার।
শিক্ষাতত্ত্বে আলোচিত হয়েছে নানারকম খেলা শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সীমিত পরিসরের কারণে আমি এই বিষয়গুলির বিশদ বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। সহজ কিছু শিক্ষণ কৌশলের উদাহরণ দিচ্ছি যা বাস্তবে অনায়াসে ব্যবহারযোগ্য এবং এর দ্বারা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হবে এবং শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ সফলভাবে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা যাবে। এই সহজ উপায়গুলি শিশুদের জন্য একটি নিরুদ্বেগ পরিবেশ সৃষ্টি করবে, এবং তার সৃজনশীল চিন্তার ও বিকাশ ঘটবে।
•সর্বপ্রথম শিশুদের ওপরে যে-কোনোরকম শারীরিক শাস্তি নিবৃত্ত করতে হবে।
•মানসিকভাবেও শিশুরা যাতে খুশি থাকে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
•শিশুদের মধ্যে কোনো তুলনা করা যাবে না।
•শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে এবং কিছু অর্জন করলে তাকে পুরস্কৃত করতে হবে (পেনসিল, স্টিকার, বই ইত্যাদি হতে পারে)।
•শিশুর ভালো গুণগুলি তার বাড়িতে জানাতে হবে।
•যদি কোনো শিশু অস্বাভাবিক আচরণ করে, তাহলে তা জানতে হবে এর কারণ ও পটভূমি কী?
•কিছু পড়ার পর শিশুরা যাতে পারস্পরিক প্রশ্ন করতে পারে এরকম কিছুটা সময় ধরে রাখতে হবে।
•গল্পপাঠের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
•নানারকম বিষয়ে রচনা লিখতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
•নানারকম বোর্ড গেম ও অনলাইন গেমের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
•নানারকম খেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
•শিশুটিকে প্রকল্পভিত্তিক সমস্যা সমাধান করতে দিতে হবে।
•শিশুটিকে বাস্তব সমস্যা সমাধান করতে দিতে হবে।
•শিশুটি যাতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, দুই বছর আগে আমার পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্কুলে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল, তখন কলকাতার একদম গায়ে একটি স্কুলে একজন সিনিয়র শিক্ষককে দেখেছিলাম একটি ছাত্রকে বেধড়ক মারতে, অন্যদিকে আর-একজন সিনিয়র শিক্ষক পরম স্নেহে ছাত্রছাত্রীকে লালন করছেন। যখন একজন শিক্ষক তাঁর পারিশ্রমিক নিয়ে হা-হুতাশ করছেন তখন আর-একজন শিক্ষক নিজের অর্থে তার স্কুলের বাচ্চাদের জন্য দিনের পর দিন পানীয় জল কিনছেন! এরকম হাজারো উদাহরণ পাশাপাশি রয়েছে, উদাহরণ রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজের সন্তানের মতো পরম স্নেহে কীভাবে স্কুলের শিশুদের বড়ো করছেন। তাই একটি প্রাথমিক স্কুল শুধুমাত্র শিক্ষাতত্ত্ব, শিক্ষানীতি বা কেন্দ্র বা রাজ্যের জটিলতার ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে না। সেই স্কুলটির প্রতিটি শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি, আর শিক্ষাদানের প্রয়োগকৌশলের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে। শিক্ষানীতিতে আলোচিত এইরকম নানাবিষয় নিয়ে আমি বিশিষ্ট শিক্ষকদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম, পরের কিস্তিতে তাঁদের মুখ থেকেই শুনব তাঁরা এই নিয়ে কী ভাবছেন।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়।