এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বই পছন্দসই

  • হীরেন সিংহ রায়-এর ‘আমার জার্মানি’ - একটি আলোচনা (দ্বিতীয় পর্ব)

    মিলন দাস
    পড়াবই | বই পছন্দসই | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১১৩ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব


    বোম্বে (মুম্বাই) থেকে থানে অবধি প্রথম ট্রেন চলে ১৮৫৩ সালে। শুধু ভারতের নয়, এশিয়ার প্রথম। তার আঠেরো বছর আগে জার্মানিতে ট্রেন চলে ১৮৩৫ সালে। নুরেমবেরগ থেকে ফুরথ , আট কিলোমিটার। তার ইঞ্জিনের নাম ঈগল (আডলার)। এসেছিল নিউ ক্যাসেলের স্টিভেন্সন কোম্পানি থেকে। জার্মান ট্রেনের প্রথম ইঞ্জিন ব্রিটিশ। প্রথম চালক জার্মান নন, ব্রিটিশ। উইলিয়াম উইলসন। ফুরথের উরসেল (উশী) হীরেনকে সেটি দেখাতে নিয়ে যান। তারা ফুরথের আদি বাসিন্দা। বাবা স্টাডলার (স্টেডলার) নামক বিখ্যাত পেন্সিল কোম্পানির কর্মকর্তা। ফুরথের পুরোনো ট্রেন লাইনে এখন ট্রাম চলে। ভারতে বোম্বে-থানের লাইনে ট্রেন।

    হীরেনের প্রিয় শহর নুরেমবেরগ। পেগনিতস নদী বড়ো আদরে ঘিরে রেখেছে নুরেমবেরগকে। নুরেমবেরগে দুনিয়ার একশো রকমের বিয়ার পাওয়া যায়। এখানে একটা তুলনা টেনেছেন। শিষ্য বুদ্ধ তরুণ তরুণী। হালকা তুষারপাত। সব টুপিতে জমে অছে সাদা বরফ। এটা একটা বিয়ারের মেলা। অন্তত একশো রকমের বিয়ার। ভাজাভুজিও পাওয়া যায়। সসেজ। মোটাসোটা জার্মান সসেজ নয়। নুরেমবেরগের সসেজ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে অত্যন্ত শীর্ণ। সেই একটা দুটো নয়, ৬, ৮, ১০, ১২টি অর্ডার করা স্থানীয় প্রথার সঙ্গে মিলে যাবে। মশলাপাতি মিশিয়ে গ্লু ওয়াইন প্রস্তুত করা হয়। সেটা গরম করে ছোটো ছোটো গ্লাসে বণ্টন করা হয়। কেকের দোকান। ছোটো ছোটো সুভেনিরের দোকান। ছোটোদের নাগরদোলা। আর বড়দিনের অন্যান্য বস্তু লেবকুখেন। যাকে বলে জিঞ্জার ব্রেড। কিন্তু শুধু আদা নয়। আছে আরো মশলাপাতি। লেব কখেন (কেক) আজ জার্মানির ক্রিসমাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

    নুরেমবেরগ শহরের কেন্দ্রে লোরেঞ্জ গির্জা। যুদ্ধের কোনো বোমা গুলিগোলা কোনো অলৌকিক কারণে তাকে স্পর্শ করেনি। ঘড়িতে ঘণ্টা বাজার সময় নানান মূর্তি এসে চক্কর কেটে যায়। একটু এগোলেই টাউন হল। সেবালড গির্জার প্রশস্ত প্রাঙ্গণে কেউ না কেউ বাঁশি বা গিটার বাজাচ্ছে।
    এটা ইতিহাস নয়। টুকরো ইতিহাস। কিন্তু আনন্দের ইতিহাস। ড্রেসক্রিপসনটা এত সুন্দর চোখ খোলা রেখে পড়লেও পুরো মেলাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। লেবকুখেন আর গ্লু ওয়াইনের গন্ধ নাকে মনে ঢুকে যায়।

    হীরেনের মা এসেছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্ট। ছ-মাস থেকে ফিরেছেন মার্চ ১৯৭৯। মা চিঠি লিখতেন, হীরেনও মাকে। মায়ের যে শেষ চিঠি হীরেন পেয়েছিলেন, তাতে জানতে জানতে চেয়েছেন, কত শিগগির দেশে ফিরবেন।

    নুরেমবেরগ থেকে ফিরে গিয়ে হীরেন দাদার টেলেক্স পেলেন। ‘মা উডল্যান্ডস নার্সিংহোমে। শিগগির যেন ফিরে আসি।’
    দিন ২৮শে নভেম্বর ১৯৭৯। মায়ের কি হয়েছে জানা নেই। ‘আলবেয়ার কামুর কথা ভাবব? আউটসাইডার ? এমন একটা সময় আসে মনটাকে শূন্য করে দেওয়া যায়। সহজ নয় তবু।
    মস্কো বিমানবন্দরে বিরতির সময় খেতে দেয়। ফ্রাঙ্কফুর্টের আশিসদা এই রুটে যাওয়া আসা করেন। সাবধান করে দিয়েছিলেন ‘ওরা কেউ ইংরেজি বলে না’, হীরেন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে কি বলব’। আশিসদা বললেন, ‘বাংলা বলবেন। ওরা জানে আপনি একটাই প্রশ্ন করতে পারে , খাওয়াটা কথা দিচ্ছে?’ সে রাতে এক রাশিয়ান মহিলাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মা জননী কোথায় খেতে দিচ্ছে?’ তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কোথায়।

    হীরেনের ভ্রাতুষ্পুত্র পিনাকী এসেছিল দমদমে। বললেন, ‘ঠাকুরমার কি হয়েছে জানো? খুব কঠিন লিউকেমিয়া।’
    নার্সিংহোমের ঘরে মা শুয়ে আছেন। প্রসন্ন মুখ। কোনো যন্ত্রণার ছাপ নেই। কিন্তু কথা বলতে পারছেন না। চারিদিকে পুত্রকন্যা, নাতি-নাতনি—সকলে হাজির। শুধু বাকি ছিলেন হীরেন। এসেছেন বিলম্বে। হীরেনকে চিনলেন, কথা বলতে পারলেন না। কিছুক্ষণ বাদে চলে গেলেন। হীরেনের ভাষায় ‘অন্য কোথা, অন্য কোনখানে। আমার দেখা হওয়াটা বিধাতা নির্দিষ্ট ছিল। মা তারই অপেক্ষায় ছিলেন।’

    হীরেন ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছান ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৭ সালে। মা চলে গেলেন ২৯শে নভেম্বর ১৯৭৯ সালে। দু-বছর বাদে ঠিক ওই বৃহস্পতিবার হীরেনের দেশে ফেরার কথা ছিল।
    মায়ের চলে যাবার পর একদিন শ্রী বিজয় অটল, স্টেট ব্যাঙ্কের একজন বড়ো সাহেব, এলেন খুবই বিমর্ষ মুখে। হীরেন আর শ্রীধরের দেশে ফেরার সময় হয়েছে। দুজন যুবক অফিসার, হায়দরাবাদের গজপতি রাও আর বম্বে সার্কেলের উত্তম সিং, এদের হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করতে হবে। তবে জার্মান ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটা সেন্ট্রাল অফিস নাকচ করে দিয়েছে। ভাঙা ভাঙা জার্মান ভাষায় (স্টাটারিং অফ জার্মান শুড বি এনাফ) কাজ চালিয়ে নেবে। অটল সাহেব কিন্তু নিজে খুব ভালো জার্মান বলতেন।
    হীরেন দু-বছরের জন্য এসেছিলেন। তিন বছর কেটে গেল। এবারে ভারতে ফেরা। কোথায় পাঠাবে? কলকাতা না কালনা? কামাক্ষ্যাও হতে পারে।
    অটল সাহেব একদিন শ্রীধর আর হীরেনকে সান্ধ্যভোজনে ডাকলেন। মিসেস অটল যত্ন করে ওদের খাওয়ালেন। খাওয়ার শেষে অটল সাহেব বললেন, ‘বোসো, আমার সঙ্গে একটু হুইস্কি খাও।’ শ্রীধর একটু মাথা চুলকে নিল যেন এটা মহা অপরাধ হবে বড়ো সাহেবের সঙ্গে মদ্যপান করা।

    অটল সাহেব বললেন, ‘দেশে না ফিরে যদি জার্মানিতে থেকে যেতে চাও, আমি তোমাদের নতুন করে কাজে বহাল করবো। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসারের পদটি ত্যাগ করলে, তোমাদের আমি স্থানীয় অফিসার হিসাবে কাজ দিতে পারি। তোমরা যতদিন ইচ্ছা জার্মানিতে থাকতে পারবে। স্টেট ব্যাঙ্কে কাজ করলে ভিসার কোনো সমস্যা নেই। অসুবিধা এই যে দেশে ফেরার রাস্তা বন্ধ। এখান থেকে বোম্বে বাঙ্গালোর কলকাতা বদলি সম্ভব হবে না। ভেবে জবাব দিও।’
    শ্রীধর তৎক্ষণাৎ জবাব দিল সে দেশে ফিরতে চায়। হীরেন তার মায়ের মৃত্যুর পর দেশে ফেরার কোনো আকর্ষণ বা কারণ খুঁজে পেল না। হীরেন ভাবছে, ‘জানি আজকের কাজ ছাড়লে স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসারদের বাঁধানো প্রগতির পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সে ঝুঁকি নিতে রাজি আছি। জীবন চলুক বৃত্তে নয়। সরলরেখায়।’
    অটল সাহেব হীরেনকে অত্যধিক স্নেহ করতেন। কোন মন্ত্রবলে হীরেনের লেখা বন্ডের ১ লক্ষ টাকা রেয়াত করলেন। বলা ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে চাকরি ছাড়লে, সেই অঙ্কের টাকা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, উনি বললেন দু-সপ্তাহের জন্য গো আন্ডারগ্রাউন্ড। একটু পরে আসছি। বিহার সার্কেলের পরিমল দেশে ফিরে গেলে তাঁকে ছাপরা কৃষি বিকাশ কেন্দ্র শাখায় পাঠানো হলো। পরিমলের পরনে প্যান্ট-শার্ট। ম্যানেজার বললেন, আপনি কুর্তা (পাঞ্জাবি) পাজামা আর চটি পরে আসবেন। রাস্তায় জল জমে প্রায়।
    সরকারি হিসেবে দু-মাস বাদে হীরেনের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা, ব্যাঙ্কের খরচায়। সেই যাবার আদেশটি আসবে তার আগেই যেন দু-সপ্তাহের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। তারপর অকস্মাৎ হীরেন তাঁর (অটল সাহেবের) সামনে এসে যেন নতুন কাজটি গ্রহণ করেন। দুটো কাগজ তৈরি থাকবে। একটি পদত্যাগের, অন্যটি নতুন পদ গ্রহণের ইচ্ছা। সেই পদের কি কাজ, তার বিবৃতি বর্ণনা স্থির করে ররাখবেন। কত মাইনে হবে সেটাও জানিয়ে দিতে চান।

    চাকরিটি স্টেট ব্যাঙ্কেরই স্থানীয় কর্মচারী হিসাবে। জার্মানিতে কাজ করলে, যা মাইনে পাওয়া যায় তার এক-তৃতীয়াংশ যায় সরকারি খাতে। সব বিবেচনা করে যে বেতন ধার্য করেছেন, সেটি জানালেন। হীরেনের বর্তমান বেতন যা তার শতকরা তেতাল্লিশ ভাগ বেশি। হীরেনে চুটকি ‘অটল সাহেবের পদচুম্বনের আকাঙ্ক্ষা অবদমন করে শুধু ধন্যবাদ জানালাম।’
    হীরেনের ফ্ল্যাটের নোটিশ দেওয়া হল। সেখানে নিজস্ব ফ্রিজ, টিভি, রান্নার উনুন, কিছু আসবাব ছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের হরফানউলা স্বামীজি বললেন (উনি জানতেন হীরেন যাচ্ছেন না) ‘আপনার জিনিসগুলি আমার বন্ধুদের বলেছি তারা এগুলো রেখে দেবে সেলারে। পরে কাজে লাগবে।’ বসার ঘরের সোফাটি কেউ দয়া করে তুলে নিয়ে গেছেন।

    হীরেন যে বিভাগে কাজ করতেন, সেই বিদেশ বিভাগে কাজ করবেন অরটউইনের অধীনে। সাময়িকভাবে হীরেন একটা ঘর নিয়েছেন ফ্রাঙ্কফুর্টের এক কোণায়। ফ্রাঙ্কফুরটার আলগেমাইনে নামের একটা খবরের কাগজে বিবিধ ফ্ল্যাটের সন্ধান থাকত। যে আগে ফোন করতে পারবে তার সুযোগ তত বেশি। টেলিফোন করাতে, আগের বাড়ির কাছাকাছি, ফ্রাঙ্কফুর্টে একটা বাসা জুটল। তার ঠিকানা জানডভেগ ১১৫। শ্রীস্বামীর বন্ধুজনদের সেলার থেকে রান্নার উনুন টিভি খাট আলটারি একটা প্লেট দুটো চামচ একটা কাঁটা, ছুরি দিয়ে সংসার স্থাপন হলো।
    অরটউইন স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে একটি কানাডিয়ান ব্যাঙ্কে যোগ দিয়েছে। হীরেনকে এবার স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়তে হবে। চাকরি চাই। অর‍টউইন জানাল হীরেন যেন কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্কের জয়েন্ট ডিরেক্টর হানস বেলাউএর সঙ্গে দেখা করেন। ফরেন ডিপার্টমেন্টে একজন দ্বিভাষিক (দুভাষা) লোক খুঁজছে। হানস অরটউইনের প্রতিবেশী। আগের শনিবার তার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করেছে। হানসের কাছে অরটউইন হীরেনের কথা বলে সোমবার। হানস বলেছে তুমি যখন বলছ ওনাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।

    ব্যাঙ্কে ফোন করলেন। যিনি তুললেন তাঁর নাম মিসেস বারনেট, স্বামী ব্রিটিশ। হীরেনের কথায় ‘খুব কম জার্মানকে দেখেছি বিলিতি অ্যাকসেনটে ইংরেজি বলতে... ব্যাঙ্কের এক পার্টিতে গেয়েছিলেন ইটস এ লঙ লঙ ওয়ে টু টি পারারি। সেই প্রথম আইরিশ লোকসঙ্গীতের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মিসেস বারনেট আমার সঙ্গে ইংরেজি বললেন হয়তো পরিহাস, কিন্তু শেষে বললেন ‘ইংরেজি জ্ঞানের পরীক্ষায় পাশ করেছেন।’
    কি মজার পরীক্ষা!
    হানসের সঙ্গে সময় ঠিক করে দিলেন। হানস বেলাউ জার্মান। অসম্ভব পরিষ্কার। উঁচু জার্মানে কথা বলেন। ব্যাঙ্কের সরকারি ভাষা ইংরেজি। জার্মান ভাষায় চিঠিপত্র কম লেখা হয়। তবে অফিসের ভিতর মুখের ভাষা জার্মান। পনেরো মিনিটের সংলাপ। পরবর্তী মিটিং জয়েন্ট ডিরেক্টর ইওরগ শেফারের সঙ্গে পরের সপ্তাহে। শেফার কোনো প্রশ্ন করলেন না, আনলেন একেবারে অন্য প্রসঙ্গ। ব্যাঙ্কের ফ্রাঙ্কফুর্ট অফিসে এখনও পর্যন্ত কোনো ভারতীয় কাজ করেননি। তিনজন পাকিস্তানি এখন কর্মরত। সে পরিস্থিতিতে হীরেনের পক্ষে কাজ করা সম্ভব?’ হীরেন বললেন কোনো অসুবিধা নেই। শেফার সন্তুষ্ট হলেন। হীরেন বলছেন, ‘আমার সরাসরি আধিকারিক কারেল সেভি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকার আরও সংক্ষিপ্ত। তিনি হেসে বললেন ‘বড়ো সাহেব হ্যাঁ বলেছেন। তাঁর বিশেষ কোনো প্রশ্ন নেই।’
    হীরেনের কারণে হেড অফিসের সঙ্গে অটল সাহেবের অশান্তি চলছে। যদিও অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাননি তবুও হীরেন গেলেন অটল সাহেবের বাড়িতে। একটা কাজের সম্ভাবনার কথা বললেন। অটল সাহেব বললেন, ‘তোমাকে আর কি বলব? সেন্ট্রাল অফিস নানান ফ্যাকড়া তুলছে... আমি চলে গেলে তোমারও অসুবিধে হতে পারে। আমারও মনে হয় এটা ভালো হবে।’ অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যেদিন দেখা করতে যাই, আর একজন ভারতীয় অফিসার শ্রীধর পারানডে উপস্থিত ছিলেন অফিসে। অটল সাহেব খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘পারানডে কি ইচ্ছে করছে জানো? এই চিঠির একটা কপি সেন্ট্রাল অফিসে পাঠিয়ে দিই। তারা দেখুক কেমন একটি ছেলেকে ব্যাঙ্ক হারাল আজ।’
    কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্কের অধ্যক্ষ ছিলেন প্রথমে ইওরগ (জর্জ) শেফার। পরে ডক্টর অ্যালবার্ট। দুজনেই জার্মান। শিকাগো থেকে আসা তিনজন আমেরিকান ছিলেন তাঁর নীচে। হীরেনের বস একজন মহিলা। নাম শেরি দে ফ্রিস। শিকাগো থেকে এসেছেন সোজা ফ্রাঙ্কফুর্ট। বংশসূত্রে শেরি যে ডাচ সেটি তাঁর উচ্চতায় বোঝা যায়। কণ্ঠস্বরের উচ্চগ্রাম মধ্য-পশ্চিম আমেরিকানদের সঙ্গে খাপ খায়। কর্মজীবন শুরু করেন আমেরিকান সৈন্য বাহিনীতে। ইংরেজি ছাড়া আর কোনো ভাষা জানতেন না। বিশ্বের যে কোনো জায়গায় কাজ করার কোনো বাধা হয় নি তাতে ।
    শেরি তাঁর ওয়েস্ট এন্ডের বিশাল বাসভবনে নিমন্ত্রণ করলেন হীরেন এবং আরও অনেককে। খুবই গল্পপ্রিয় মহিলা। হীরেন ততদিনে বসকে নাম ধরে ডাকাটা অভ্যাস করে ফেলেছেন। গল্পের আনন্দ তো আছেই আর ছিল উচ্চস্তরের কারণ সুধা।
    জার্মানিতে অফিসের বসেরা সহকর্মীদের আকছার নিমন্ত্রণ করেন না। দুটো সমস্যা তাঁদের। শেরির বাড়িতে গেলে ইংরেজি বলতে হবে। আখিম ফিশার হীরেনের ফরেন ডিপার্টমেন্টের কর্তা, ভালো ইংরেজি বলে। অন্যেরা অস্বস্তিতে পড়ে। কারোলা হীরেনকে খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শেরির বাড়িতে গেলে আমাকেও কি তাঁকে একদিন নিমন্ত্রণ করতে হবে?’ হীরেন বললেন, না না ওরকম কিছুই না।
    কেউ কেউ আসে। কিন্তু হীরেনের যাওয়া খামতি পড়ে না। এক সন্ধ্যায় আলাপ হলো শেরির বাবা ডেভিডের সঙ্গে। আমেরিকার সৈন্য বাহিনীতে ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। ৭০ বছর পেরিয়েছেন সবে। বিপত্নীক। কথা বলেন উচ্চস্বরে। হাসেন আরও জোরে। জার্মান ভাষাটা জানেন না বলে আফশোস করলেন। ইতিহাসে আগ্রহ আছে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হীরেনেরও তাই। কাজেই গল্পগুজবের সময় আরও বেড়ে গেল। শেরি একদিন হীরেনকে বললেন, ‘আমার বাবা তোমাকে খুব পছন্দ করেন।’
    একটা কথা বলে রাখা ভালো, ১৯২৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ইতিহাস সেকালে জার্মানির স্কুলে পড়ানো হতো না।
    ফ্রাঙ্কফুর্ট জার্মানি পঞ্চম বৃহৎ শহর। ছ-লাখ লোকের বাস। এখন সোয়া সাত লাখ। এক ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্যাঙ্ক হেঁটে যাওয়া যায়। আগের অফিস স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। পশ্চিম প্রান্তে কন্টিনেনটাল ব্যাঙ্ক, হীরেনের বর্তমান অফিস। যুদ্ধবিধ্বস্ত অপেরা হাউস পুনর্নির্মিত হয়েছে। অপেরা থেকে পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি পথ। গাড়ি চলার অনুমোদন নেই। তার নাম ফ্রেসগাসে। পথটি ৫০০ মিটার লম্বা ৫০ মিটার চওড়া। সে পথ যেখানে শেষ হয়, সেখানেই তসাইল, ফ্রাঙ্কফুর্টের অক্সফোর্ড স্ট্রিট।
    এর দুপাশে শুধু পাব আর রেস্তোরাঁ। পালা পার্বণে খোলা রাস্তার ওপর দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসে। যেমন বড়দিনের বাজার। সেপ্টেম্বরের শেষে অক্টোবরের শুরুতে পুরো রাস্তার ওপরে বসে রাইন অঞ্চলের ‘দ্রাক্ষারসের কারবারিদের ছোটো ছোটো স্টল। আঙুর পাতা লাল হতে শুরু করেছে। মনে হয় যেন আগুন লেগেছে। সব স্টলেই পাওয়া যায় নতুন ওয়াইন। ঢালা হয় বিশেষ আকারের গ্লাসে। তাতে নাম লেখা আছে প্রস্তুতকারীর বা বিশেষ অঞ্চলটির। এক মার্কের বিনিময়ে আপনি সেটার মালিকানা অর্জন করতে পারেন। এটা ১৯৮৩।
    ফ্রেসগাসের মধ্যিখানে পেতে দেওয়া হয় লম্বা লম্বা কাঠের টেবিল। তার পাশ বরাবর টানা বেঞ্চে। এ পাশে ও পাশে। এখানে বোঝা যায় উত্তর ও দক্ষিণ জার্মানির তফাৎ। হামবুর্গ হ্যানোভারের পাবে একজন ঢুকে খোঁজ করে কোন টেবিলটা খালি আছে। দক্ষিণ জার্মানিতে একজন মানুষ ঢুকে ধাওয়া করে সেই টেবিল যেখানে চারজন বসে আছে। সেখানে গিয়ে সে বলে আর একজনের জায়গা হবে?
    এই প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। অফিসে শেরি একদিন বলল ‘আমার বাবা তোমাকে খুব পছন্দ করে।’ হীরেনের স্বগতোক্তি মানে আবার সেই চুটকি। ‘খুশ হলাম। কিন্তু এও জানি আমার বোনাসের পরিমাণ নির্ধারণের সহায়ক হবে না।’
    একদিন সন্ধ্যায় অফিসের পথে হীরেন আর কয়েক বন্ধু, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের জনাপাঁচেক লোক গুলতানি শুরু করেছি। একজন দুজন করে আসতে আরম্ভ করে। ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ বলে একটু খেজুরে করে বসে পড়ে। চলতে থাকে ওয়াইন ভর্তি গ্লাস। কে কিনছে তার খবর নেওয়াটাও ঝকমারি।
    এই ওয়াইন পানকারি জনতার মাঝে হঠাৎ শেরি এলেন, সঙ্গে পিতা ডেভিড। শেরি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ডেভিড বসলেন হীরেনের মুখোমুখি। উচ্চ আমেরিকান ইংরেজি কথা বলা শুরু করলেন। কে বুঝল কে বুঝল না তাতে ওনার বয়েই গেল। অ্যাংলো স্যাক্সনদের ধারণা বিশ্বশুদ্ধ সব লোক ইংরেজি বলে বা বলা উচিত।
    ডেভিড শুরু করলেন তাঁর জার্মানদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের গল্প। টেবিলের কোনো একজন চলনসই ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল ‘আপনার সঙ্গে জার্মানদের মোলাকাত কোথায়?’ ডেভিড বললেন, ‘মনটে কাসিনো, ইতালি ১৯৪৪ সালের বসন্তকালে’।
    এবার হীরেন ভাবছেন তাঁর প্রমাদ গোনবার পালা।
    ফলটি টাওয়ার নামের একটি ব্রিটিশ কমেডি সিরিজ খুব জনপ্রিয় হয়। সাতের দশক। প্রধান চরিত্র একটি হোটেল চালান ইংল্যান্ডের কর্নওয়াল এলাকায়। ছিটগ্রস্ত সে চরিত্রে অভিনয় করেন জন ক্লিজ। তার এক পর্বে হোটেলে আসেন কয়েকজন জার্মান টুরিস্ট। জন ক্লিজ বলেন, আমরা কিছুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা তুলব না। (ডু নট মেনশন দি ওয়ার) বাকি সময়টুকু তিনি কেবলই যুদ্ধের কথা তোলেন। একসময় এক জার্মান মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেই থেকে ডু নট মেনশন দি ওয়ার ইংরেজি সেনটেন্‌স্ গঠনের একটা অঙ্গ হয়ে গেছে। হীরেন বলছেন ‘আমি আমার জার্মান প্রবাসকালে জ্ঞানত যুদ্ধের কথা তুলিনি। যেটা আগে বলেছিলাম যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিতে ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ সালের ইতিহাস পড়ানো হত না।’ ভাইমার সংবিধান থেকে এক লাফে চলে যেত যুদ্ধ পরবর্তী জার্মান সংবিধান রচনার কাহিনিতে।
    উপরের গৌরচন্দ্রিকাটা করা হলো একটি গল্পের কারণে।
    পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মানি আক্রমণ করে পোল্যান্ড পশ্চিমদিক থেকে আর পূর্ব দিক থেকে রাশিয়া। স্পেন পর্তুগাল সুইডেন আয়ারল্যান্ড নিরপেক্ষ ছিল। পালটা লড়াইয়ের প্রথম পর্ব সিসিলি দ্বীপে মিত্র শক্তির অবতরণ জুলাই ১৯৪৩ এবং মুসোলিনির পতন। এর পরের পালায় মিত্র শক্তির আক্রমণ মনটে ক্যাসিনো। নেপলস আর রোমের মাঝামাঝি তার পাহাড় (মনটে) চুড়োয় ১৩শ শতাব্দীর বেনেডিকটিন মঠ। ১৯৪৪ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে মে অবধি কঠিন যুদ্ধ চলে। জার্মানরা পাহাড়ের চুড়োয় বসে খুব সহজেই বন্দুক চালাতে থাকে সমতল থেকে উঠে আসা মিত্রশক্তির বাহিনীর দিকে। মঠ প্রায় গুঁড়িয়ে যায় মিত্রশক্তির বোমায়। জার্মানরা কোনো অসুবিধায় পড়ল না। সেই ভগ্নস্তূপের আড়ালে বসে কয়েক মাস তারা টার্গেট প্র্যাক্টিস করল।
    মে মাস নাগাদ যুদ্ধের মোড় ঘোরে মার্ক ক্লার্কের পঞ্চমবাহিনী ও পোলিশ সৈন্য অসীম বীরত্বের সঙ্গে এ চুড়ো বিজয় করে।
    ডেভিডের গল্প শুনছে অনেকে। হয়তো সবটা বুঝছেন না। হীরেন বলছেন, ‘ডেভিডের বলার ধরণটা আমার মন ছুঁয়ে গেল...আমি এই করছি, সেই করেছি... এমন কোনো বীরত্বের বড়াই নয়।’
    ডেভিড বারবার বললেন তিনি কোনো বীর পুরুষ নন। লড়াই করেছেন সেটা পেশা বলে। এটা কোনো যুদ্ধই ছিল না। একটা পাহাড়কে জয় করার লড়াই? রোমে পৌঁছোনোর জন্য আর কোনো রাস্তা ছিল না? যে কোনো যুদ্ধকে তিনি মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন। পৃথিবীর কোনো মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। ডেভিড শেষ করলেন সব যুদ্ধ অর্থহীন, সব প্রাণ মূল্যবান।
    হীরেনের উলটো দিকে কয়েকজনের পরে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসেছিলেন। তিনি একটু জোরে প্রায় চেঁচিয়ে জার্মান ভাষায় বললেন, ‘আমি এঁর কথা শুনলাম। আমি ইংরেজি তেমন জানি না। তবে কিছুটা বুঝেছি আমার একটা প্রশ্ন আছে, আপনি একটু অনুবাদ করে তাঁকে বলবেন?’
    ..... মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কি ইনি সেখানে ছিলেন?
    অনুবাদ করে দেওয়ার পর ডেভিড বললেন, ১৯শে মে অবধি সেখানে ছিলেন। পোলিশ সৈন্যরা মিত্রশক্তির পতাকা তোলে ১৮ তারিখ।’ বয়স্ক জার্মান আবার প্রশ্ন করলেন, ‘ইনি কি মনে করতে পারেন সেদিন একজন শত্রুপক্ষের সৈন্যকে গুলি না করে গ্রেফতার করেছিলেন?

    ডেভিড বললেন, ‘হীরেন এই জন্যে আমি বারবার বলি সব যুদ্ধ অর্থহীন। না আমি সেদিন কাউকে গুলি করিনি। জানি আমার সাথীরা অন্যরকম আচরণ করেছে। যুদ্ধে সব হয়। তবে একজন নিরস্ত্র জার্মান সৈন্যকে আমি আমার ওপরওয়ালার হাতে তুলে দিয়েছি, এ প্রশ্ন উঠল কেন হঠাৎ?’
    বয়স্ক জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, আমিই সেই জার্মান সৈনিক। ডেভিড সেটা বুঝলেন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। উনচল্লিশ বছর আগে ইলিনয়ের ডেভিড দে ফ্রিস অস্ত্র হাতে জার্মানির হেসেনের এক পরাস্ত জার্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চারদিকে যখন খুন কা বদলা খুন হচ্ছে, সেখানে অস্ত্রহীন জার্মানকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তার ওপরওয়ালার অফিসে। তার পরিচয়পত্র নাম ইত্যাদি নথিবদ্ধ করে, তাকে যুদ্ধবন্দির সম্মান দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের শেষে বিজেতারা ফিরেছেন শিকাগো ইলিনয়, আর বিজিত ফিরেছেন হেসেন, জার্মানি।
    জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন প্রথমে। ডেভিডও ততক্ষণে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়েছেন। চার দশক আগের দুই শত্রু। একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। হীরেন বলছেন ‘তখন ক্যামেরা কোনো ছিল না। প্রয়োজনও ছিল না। ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্রেসগাসের ওয়াইন উৎসবে এই দুই সৈন্যের মিলন দৃশ্য আমার মনে গেঁথে রয়ে গেছে। সে আজও অমলিন।’ এবারে দার্শনিক হীরেন, ‘যুদ্ধ শেষ হয় একদিন। মানুষ মানুষের কাছে ফেরে।‘

    কন্টিনেন্টাল ইলিনয় ব্যাঙ্কের অবস্থা কতটা জটিল যখন শ্রীধর মুকুন্দ পারানডে সাঁতার কেটে গরম জলের সুইমিং পুলে সাঁতার কেটে হীরেনের কাছে এলেন। গোঁফের ফাঁকে মুচকি হেঁসে বললেন তোমার ব্যাঙ্কের অবস্থা তো খুব খারাপ হে।’
    তিন বছর আগে যখন কন্টিনেন্টাল ইলিনয় ব্যাঙ্কে যোগ দেন, শিকাগোর এই ব্যাঙ্ক তখন আমেরিকার অষ্টম বৃহত্তম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে চেয়ারম্যান হয়েছেন রজার অ্যানডারসেন। ব্যাঙ্কের গাড়ি নয়, ট্রেনে চড়ে অফিস যেতেন। তখন ব্যাঙ্কের অ্যাসেটের পরিমাণ ২০০০ কোটি ডলার। ১৯৮১ সালে ব্যালেন্স শিটে পরিসম্পদ (অ্যাসেট) ৪৫০০ কোটি ডলার। রজার অ্যানডারসেন ওয়াল স্ট্রিটের পত্রপত্রিকার দ্বারা সম্মানিত হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ সুপরিচালিত ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রূপে।
    হীরেনের বিয়ে হয় ১৯৮২ সালে। হীরেনের প্রথম সন্তান ঐন্দ্রিলা জন্মায় ১৯৮৩ সালে। ইউরোপে আসার পরে হীরেনের প্রথম গাড়ি কেনা ফিয়াট মিরাফিওরি, দাম দুশো মার্ক বা ন’শো টাকায়। প্রথম লম্বা সফর আমস্টারডাম।

    জাকসেন হাউসেনের আফেনটোর প্লাতসে হল যোগাড় করে অনেক বন্ধুবান্ধব যোগাড় করে ঐন্দ্রিলার প্রথম জন্মদিন পালন হল।
    ব্রিটিশ কনসুলেটের ওপরে, ম্যানুফ্যাকচারার্স হানোভার ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক নানান হাত ঘুরে জেপি মরগান ব্যাঙ্ক নামে পরিচিত হল।
    কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্কের কেনা শতকরা ৮৫ ভাগ ঋণ অনাদায়ী সাব্যস্ত হয়েছে। অপরাধী কে? জন লিটল আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ। কয়েকজনকে বিদায় দেওয়া হল। জন লিটলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হল।
    রজার অ্যান্ডারসন, যিনি পরপর তিন বছর শ্রেষ্ঠ পরিচালিত ব্যাঙ্কের সম্মানে সম্মানিত, তাঁকে বিতাড়িত করল বোর্ড। রজার অ্যান্ডারসনই কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ককে আমেরিকার পঞ্চম স্থানে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর দশ বছরের রাজত্বকালে। চলে গেলেন বার্ষিক পাঁচ (৫) লক্ষ ডলারের আজীবন পেনশন নিয়ে।
    এলেন জন লিটল। তাঁর কার্যকলাপ আগেই বলা হয়েছে। দেড় হাজার কোটি ডলারের লোকসান নিয়ে কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ক আজ দেউলিয়া, আমেরিকান ব্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে, তিন দশকের বিশ্বব্যাপী মন্দার পরে সবচেয়ে বড়ো বিপর্যয়।
    হীরেনের ভ্রাতুষ্পুত্র পিনাকীর বিয়ে। দেশে ব্যাঙ্কের সঙ্কট নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করলেন না। বাইরে দূরে কি ঘটছে তা কাউকে ভাবায় না। একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন হীরেন। মর্টগেজে। থাকতে তো হবে। আর একলা নয়। এখন মেয়ে-বউ। ব্যাঙ্কের অবস্থা এত খারাপ, যে পঞ্চম বৃহত্তম আমেরিকান ব্যাঙ্ককে না বাঁচালে আমেরিকান ব্যাঙ্কের বিরাট সমস্যা হতে পারে। সমস্ত আমানতকারীকে মার্কিন সরকার গ্যারান্টি দিলেন। কারোর টাকা মার যাবে না। কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত হল।
    নতুন চাকরি খুঁজতে গিয়েও রসিকতা। বউ যাতে এই চাকরি-সঙ্কট না বুঝতে পারে তার জন্য হীরেন ওর বউকে বললেন, ‘তুমি এখন বাপের বাড়ি যাও। পুজোর পরে তোমাকে নিয়ে আসব। শ্বশুরবাড়ি লন্ডনে।

    ফোন নম্বর যোগাড় করে প্রথমে পার্সোনেল ডিপার্টমেন্ট এবং অনুরোধে যোগাযোগ হল সিটি ব্যাঙ্কে লোরেন ট্রেনারের সঙ্গে। সেই মহিলা বললেন, যেন আগামীকাল তাঁর সঙ্গে সিটি ব্যাঙ্ক ৩৩৬ স্ট্র্যান্ড এই ঠিকানায় দেখা করেন।
    হীরেন একটু আগে বেরিয়েছেন। মিনিট ৪৫ আগে টানব্রিজ ওয়েলসে পৌঁছেছেন দশটায়। পরে জানা গেল টানব্রিজ ওয়েলস নয়। অফিসটা টানব্রিজে। এখনও হীরেন কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্কে আছে। বছরের শেষ। কাজের চাপ। ব্যাঙ্কের খাতা মেলানোর।
    ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে লোরেনের ফোন এলো। সিটি ব্যাঙ্ক হীরেনকে ম্যানেজার পদে কাজ দেবার প্রস্তাব করবেন। লিখিতভাবে সেটি পাঠানোর আগে তিনি হীরেনের মতামত জানতে চান। সংক্ষেপে কাজের ফিরিস্তি, বেতন ইত্যাদি জানালেন। সম্মতি জানালেন হীরেন। লোরেন জানালেন বাড়ি বদলের ব্যাপারে ব্যাঙ্ক সাহায্য করবে। ২৯ নভেম্বর ১৯৭৭ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট এসেছিলেন। দু-বছর বাদে দেশে ফেরার কথা ছিল। সাত বছর বাদে জার্মানি ছাড়ার দিন এসে গেল। এবারে পশ্চিমে, শুক্রবার ২৬ জানুয়ারি ১৯৮৫। কাজে যোগ দিলেন ৩১ জানুয়ারি।
    হীরেন কাজের একটা লিস্ট করেছেন। যেমন—কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্কে পদত্যাগ, সে ব্যাঙ্কে যে মর্টগেজ ছিল, সেটিকে স্থানান্তর করে ড্রেসনার ব্যাঙ্কে নিয়ে যাওয়া, ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া, সরকারের ট্যাক্স, ট্রাকের ব্যবস্থা যাতে গাড়িটিও উঠবে। চলে যাবে ইংল্যান্ডের দিকে। স্ত্রী-কন্যা সহ সকলে মিলে চললেন লন্ডন।
    ওয়াল্টার রিসটন সিটি ব্যাঙ্কের প্রধান ছিলেন দীর্ঘদিন। তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই হয় জন রিড ও টমাস থিওবলড-এর মধ্যে। জন রিড সিটি ব্যাঙ্কের সিইও হলেন। টমাস থিওবলড গেলেন কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্কের প্রধান হয়ে। শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা সিটি কিনে তাঁকে ও কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ককে সমস্ত বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিল। কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ইতিহাসের পাতায় চলে গেল।

    এবারে একেবারে অন্য প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গে রসিকতা ও ইতিহাসের রসায়নটি প্রণিধানযোগ্য।
    গাম্বিয়া থেকে দাস ব্যবসায়ীরা ১৭ বছরের ছেলে ‘কুনটা কিনটে’-কে নিয়ে এসে আমেরিকায় বেচে দিল। তখন স্লেভের খুব রমরম বাজার। আড়াইশো বছর পরে আমেরিকার লেখক-সাংবাদিক অ্যালেক্স হেইলি নিজের পারিবারিক ইতিহাসের খোঁজ শুরু করেন। চাকরি-বাকরি সব ছেড়ে চলে যান আফ্রিকা। অ্যালেক্স হেলি ‘কুনটা কিনটের’ দ্বাদশ বংশধর। খুঁজে বের করার পর যে বইটা লিখলেন তার নাম ‘রুটস’। শিকড়। শিকড়ের সন্ধানে দশ বছর অতিবাহিত করেন আফ্রিকাতে। একটি সাড়া জাগানো বই। সারা বিশ্বে।
    এবারে আর একটি ইতিহাস। তেরোশো বছর আগে ফ্রাঙ্কেনিয়াম রাজকুমার শারলামেন, জার্মানদের সম্রাট, আজকে ইউরোপের অন্তত দু-শতাংশ (২%) ইউরোপিয়ানদের বৃদ্ধ প্রপিতামহ। তাঁর পাঁচটা স্ত্রী। সরকারিভাবে শারলামেনের ১৮টি সন্তান। সেই আঠেরোটি সন্তান, বেশিও হতে পারে, তারা বংশবিস্তার আরম্ভ করল। দেখা গেল বা তাঁকে নাম দেওয়া হলো ইউরোপের পিতা।

    দেখা যাক ভিতরে কি আছে। ১৮৭১-এর বিসমার্কের কথা মনে আছে, যিনি জার্মান জাতিকে একত্রিত করেছিলেন? তেরোশো বছর আগে শারলামেন আজকের হল্যান্ড, বেলজিয়াম, উত্তর ফ্রান্স, আলসাস লোরেন, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডের জার্মানভাষী মানুষদের নিয়ে, বিসমার্কের চেয়ে বড়ো, এক জাতি এক দেশ গড়ে, সেখানে খ্রিস্টধর্মের প্রসার সাধন করেন। তাঁর ছত্রছায়ায় পণ্ডিত ব্যক্তিরা সমবেত হয়েছিলেন। তারঁদের একজন হলেন ইয়র্ক শহরের পণ্ডিত আলকুইন। যিনি শিখিয়েছিলেন ছোটো আর বড়ো হাতের হরফ লিখতে। (ABCD....abcd...)
    ঘটনাটা একটু অন্য জায়গায়। নবম শতাব্দীর গোড়ায় পোপ তৃতীয় লিও টাকা-পয়সা আর নারী ঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। শারলামেন রোমে গেলেন পোপের পাশে দাঁড়াতে। কেউ কোনো রা কাটল না। পোপা শারলামেনের মাথায় একটি মুকুট চড়িয়ে দিলেন, বললেন আজ থেকে তুমি জার্মান জাতির পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হলে।
    হীরেনের ব্যাঙ্গোক্তি, ‘পোপ তাঁর মাথায় জর্ডন নদীর জল ছিটিয়ে পবিত্র করায় তাঁর জমি জায়গির কিছু বাড়ল না। ওই রোমান অ্যাখ্যাটি যোগ হল। এবার তিনি নতুন মুদ্রায় নিজেকে সম্রাট (ইম্পেরায়ে) বলে ঘোষণা করলেন।
    আখেনকে করলেন তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী। সঠিক নাম ‘বাদ আখেন ’। শহর কর্তৃপক্ষ ‘বাদ’ শব্দটি বাদ দিয়েছেন। আখেন একটি উষ্ণ প্রস্রবন কেন্দ্র। সর্বত্র বইছে এই জলের ধারা। পাঁচশোর বেশি ছোটো বড়ো জলের কল লাগিয়েছেন নগর পিতারা। সেই জলে হাড় ও গাঁটের ব্যথা সারত!
    নিয়মিত লড়াই করে ‘তাঁর গাত্রে হলো ব্যথা’। (ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যথা) সেই উষ্ণ বারিধারায় তাঁর দেহের আরাম হলো। নিজের আত্মার শান্তির জন্য বানালেন প্রকাণ্ড এক ক্যাথিড্রাল। আল্পসের উত্তরে উচ্চতম। রোম থেকে কারিগর আনিয়েছিলেন। এখানে কতকগুলো জ্যামিতিক নকশা আছে। চার নম্বরের খেলা। চ্যাপেলের মাথা আট কোণ। কুলুঙ্গি ষোলোটি। বছরের বিশেষ দিনে সূর্যের আলো এসে পড়ে শারলামেনের সিংহাসনে।

    এবারে হীরেন, ‘এগুলো অবিশ্যি শ্রী ড্যান ব্রাউনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া ভালো। ডা ভিঞ্চি কোডের মতন শারলামেনের গোপন কোড একদিন নিশ্চিত প্রকাশিত করবেন। আর এক বেস্ট সেলারের অপেক্ষায় থাকি।’
    এর হাজার বছর পর নেপোলিয়ন, যখন রাজ্য জয়ে ব্যস্ত, পোপ তখন তাঁর মাথায় মুকুট পরাতে গেলেন। নেপোলিয়ন মুকুটটা নিয়ে নিজেই পরে ফেললেন (১৮০৬)।
    ইসমোবিলিয়েন তসাইতুং নামে একটি খবরের কাগজে জমিজমা স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কোনো রাজনীতি নয়। শেয়ার বাজারে হীরেনের অনিহা। কাগজটির পাতা ওল্টাতে ওনার চোখে পড়ল, ইভো নামে এক ক্রোয়েশিয়ান শিল্পী তাঁর আঙুর ক্ষেত বিক্রি করতে চান। রাইন নদীর ওপরে লোরেলাই রকের নীচে। ইভোর কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য দামে আঙুর ক্ষেত কেনা হল।
    ইয়েনস বলে একজন অভিজ্ঞ কৃষক, যিনি ৫০০০ বাৎসরিক ইউরোতে চাষ করতে রাজি হলেন। ফসল খুব ভালো হয়নি। ইয়েনস ফসল তুলল রালকের ফার্মে। রালফ বানালে প্রথম ওয়াইন। হীরেন নাম দিলেন ‘সিংহরায়’।
    এসে গেছে পদুমার নাম, হীরেনের গ্রাম। তার প্রাণ, তার মাটি। সেই মাটির খোঁজেই এই আঙুর ক্ষেত। পদুমা গ্রামে যে পুকুরে ঠাকুর বিসর্জ্জন হতো, তার পাড়েই ছিল একটা বটগাছ। হীরেনের জামাই সেই বটগাছটার একটা স্কেচ করে। সেটা দিয়েই যে ‘সিংহরায়’ লেবেল বানানো হল তাতে ওয়াইনের নাম, বটগাছের লোগো, হীরেনের গ্রাম, রাইন জার্মানি সব মিলেমিশে একাকার। হীরেনের কথায় ‘পদুমার সঙ্গে জার্মানির আত্মিক মিলন।’ রালফ সেই লেবেল ছাপিয়ে বোতলে লাগিয়েছে।
    শেষ করার আগে অরটউইন সম্পর্কে না বললে অনেক কিছুই বাকি থেকে যাবে। অরটউইন স্টেট ব্যাঙ্ক ছেড়ে একটি কানাডিয়ান ব্যাঙ্কে যোগ দেন। হীরেন স্টেট ব্যাঙ্ক ছেড়ে আমেরিকান ব্যাঙ্ক কন্টিনেন্টাল ইলিনয় ব্যাঙ্কে। সেটা সম্ভব হয়েছিল অরটউইনের মহতি চেষ্টায়।

    অরটউইন আর এলিজাবেথের ছাড়াছাড়ি হল। হীরেনের ঘর-সংসার ভাঙল। ওরা দুজনে সুখে-দুঃখে একসঙ্গে বসে বিয়ার পান করেছেন।
    অরটউইন অসুস্থ। ফ্রাঙ্কফুট ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। হীরেনকে বললেন ওনার জন্যে যেন হেনিঙ্গার বিয়ার নিয়ে আসি। স্ত্রী বললেন, রোগী দেখতে যাবে বিয়ার নিয়ে? হীরেন বললেন অর‍টউইনের অসুখটা হাড়ের। বিয়ার খাওয়া যায়। ছটা বোতলের প্যাক নিয়ে হীরেন গেলেন অরটউইনের কাছে। হীরেন দিলেন ছটা বিয়ারের প্যাক। আর অরটউইন হীরেনকে দিলেন চারটে বোতল ভর্তি কমলালেবু আর আপেলের জুস। স্ত্রী বললেন, ‘রোগী পেল বিয়ার আর সুস্থ মানুষ পেল ফলের রস।’
    হীরেন বললেন, ‘শুল্ক দফতরকে ফাঁকি দয়ে দু-প্যাকেট লর্ড সিগারেট এনেছি।’
    অরটউইন বললেন, ‘আমার সিগারেট খাওয়া বারণ। ডাক্তাররা আমার রোগ নির্ণয় করেছেন। কলনের ক্যান্সার, দু-সপ্তাহ কেমোথেরাপি চলবে।
    হীরেন গাড়ি এনেছিল। অরটউইন আর হীরেন দাপিয়ে ঘুরিছেন ঘুরল।
    হীরেন ব্যাঙ্কের কাজে কাতারে গেছে। গভীর রাতে বন্ধু অটোর ফোন পেল। একঘণ্টা আগে অরটউইন সকলকে ছেড়ে চলে গেছে। ১০ এপ্রিল ২০১৫। জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৯৪৫।
    পরিশেষে জার্মান ভারত সব একাকার হয়ে গেল। যেন কোনো নিকট আত্মীয়ের বিয়োগ হয়েছে। আঘাতটা সরাসরি আমাদের বুকে লাগে।



    আমার জার্মানি
    প্রকাশক দে পাবলিকেশন
    ১৩ বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিট
    কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া
    কলকাতা ৭০০ ০৭৩

    প্রাপ্তিস্থান
    দে পাবলিকেশন ( আদি দে বুক স্টোর)
    দেজ পাবলিশিং ও দে বুক স্টোর ( দিপু)
    হোয়াটসঅ্যাপ +৯১ ৮৩৩৫০ ৩২৫৪৫ ( তপন দে )
    অর্ডার: deypublications.com
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
  • পড়াবই | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আশীষ সিংহরায়। | 45.25.***.*** | ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩৬527328
  • চমৎকার। পড়ে আনন্দ পেলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন