১৯৯৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী রক্ত বা রক্তের কোনো অংশ অর্থের বিনিময়ে ' দান ' করা আইনত অপরাধ। অথচ সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, দেশের একটি রাজ্যে কোভিড আক্রান্ত কিছু পরিবার সদ্য কোভিড থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের কাছে প্লাজমা দানের আর্জি জানাচ্ছেন - তাও অর্থের বিনিময়ে! ৪০০ মিলিলিটার প্লাজমার দাম ৩ লক্ষ টাকা! বোঝা যাচ্ছে কতটা অসহায়তা? বোঝা যাচ্ছে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি! বোঝা যাচ্ছে ঠিক কতটা প্রয়োজন এই প্লাজমার! আর সেই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে paid donation এর মতো অপরাধ করছেন মানুষ।
কেন এই প্লাজমা ডোনেশন? আমাদের রাজ্যের অবস্থাটাই বা ঠিক কী রকম?
আমরা জানি সদ্য কোভিডমুক্ত হওয়া কোনো মানুষের শরীর থেকে প্লাজমা নিয়ে কোভিড আক্রান্ত কোনো মুমূর্ষু রোগীর শরীরে প্রবেশ করালে রোগীকে সুস্থ করা যেতে পারে। আমাদের রাজ্যে এটি ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, CSIR - ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি এবং বেলেঘাটা আইডির উদ্যোগে কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপির ট্রায়াল করা হচ্ছে। প্লাজমা সংগ্রহের কাজটি চলছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসার মানুষের বড়ো অভাব। না, এক্ষেত্রে সংক্রমণের কোনো ভয় নেই; দুর্বল হয়ে পড়ার ভয়ও নেই। যেটা নেই সেটা হলো সচেতনতা। রাজ্যে কোভিডমুক্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু প্লাজমা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছেন ক'জন! এতদিনে মাত্র সতেরো জন প্লাজমা দিয়েছেন। হ্যাঁ, সবটাই বিনামূল্যে! তবে বিনামূল্যে বলেই কি মানুষ এগিয়ে আসছেন না? নাকি একবার কোভিড থেকে বেঁচে গেছেন বলে সমস্ত সামাজিক দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন! আপনার বন্ধু, অবন্ধু কোভিডমুক্ত হলে বলুন প্লাজমা দেওয়ার কথা। যাঁরা এখনও কোভিড আক্রান্ত হননি এখন থেকেই বরং অঙ্গীকার করে নিন যে আপনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলে প্লাজমা দিয়ে অন্যকেও জিতিয়ে দেবেন। যাই হোক, আমাদের রাজ্যে বর্তমানে প্লাজমা ব্যাংক তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যের মানুষের সুস্থতার হার দেখে এটুকু স্বপ্ন দেখি চলুন যে আগামী দিনে মানুষ সচেতন হবেন এবং প্লাজমা দেওয়ার বিষয়টি আরও প্রচারের আলোয় আসবে আমাদের সকলের উদ্যোগেই। কেউ প্লাজমা দিতে আগ্রহী হলে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন এই বিষয়ে দায়িত্বে থাকা ড. সন্দীপ পাল মহাশয়ের সঙ্গে (ফোন নম্বর: 8583916488)। সাধারণত কোভিডমুক্ত হওয়ার ২৮ দিন পর প্লাজমা দেওয়া যায়, এক্ষেত্রে আগে দেখে নেওয়া হবে আপনি প্লাজমা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা এবং প্লাজমা দেওয়ার বিষয়টা অত্যন্ত সহজ। ভয় না পেয়ে অসহায় মানুষগুলোর কথা ভেবে দয়া করে এগিয়ে আসুন! একসঙ্গে লড়াই করাই শুধু নয়, একসঙ্গে জেতার সময় এসে গেছে! তাই সুস্থ হওয়ার পর বাড়ির বাইরে যদি ঘুরতেই যেতে হয় মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঘুরে আসুন, প্লাজমা দিন - লকডাউনের বাজারে ওটা এখন অমরনাথ যাত্রার থেকে কম কিছু নয়! আপনার বাড়ির দরজার সামনে থেকে আপনাকে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আবার বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেওয়া অবধি আপনাকে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হবেনা - সব দায়িত্ব IICB এর।
এবার আসি আরও একটি বিষয়ে। আমরা প্রথম থেকেই শুনে আসছি যে কোভিড মানেই হয়তো মৃত্যু এবং নেগেটিভ খবর শুনতে শুনতে বাঁচার ইচ্ছেটুকুও কবর দিয়ে ফেলেছি বোধ হয়! এই ধারণা থেকে বেরোনোর সময় এসেছে। এই মুহূর্তে যা অবস্থা তাতে কখন করোনা হবে আপনি জানেন না। আর এটাও জানেন না কখন হয়তো আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন! এমন তো হতেই পারে যিনি বর্তমানে এই লেখাটি পড়ছেন, তিনিও অজান্তেই অনেক আগে করোনা জয় করে ফেলেছেন! হতেই পারে তিনি অ্যাসিম্পটম্যাটিক ছিলেন। অযথা প্যানিক না করে সতর্কতা বজায় রেখে বাইরে বেরোন। মৃত্যুর হারের তুলনায় চোখ রাখুন সুস্থতার হারের দিকে, পজিটিভ থাকুন। সবকিছুর আগে নিজের মন ভালো রাখা প্রয়োজন, ভেবে নিন কোভিড হলে কী হবে? লড়ে নিতে হবে! আর ভয় পেলে বা করোনা সংক্রান্ত যে কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন যোগাযোগ করুন কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সঙ্গে। ২৪/৭ পরিষেবা দিচ্ছে এই এনজিও। প্রায় ৮৫ জনের বেশি সংখ্যক ডাক্তার এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। আপনার জ্বর এলে কী করবেন, কোথায় টেস্ট করানো যেতে পারে, কোনো সিম্পটম দেখতে পেলে সেই মুহূর্তে আপনার কী করা উচিৎ এই সকল বিষয়ে আপনার পাশে থাকবে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক, একেবারে বন্ধুর মতো। এমনকি সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হলেও জানাতে পারেন এখানে। যোগাযোগের জন্য আছে ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট এবং হেল্পলাইন নম্বর আছে যেখানে ফোন করলে সরাসরি ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলা যাবে। নম্বর : 18008891819
ভয় পাবেন না। আমরা করবো জয় নিশ্চয়!
সেই আদিকাল থেকে আজকে এসে পৌঁছেছি যখন,
তখন নিশ্চয়ই পৌঁছাবো আগামী তে...
হতাশাগ্রস্ত সময়
খানিক বল পেলাম আপনার লেখায়।।
আমি একজন ৭৬ বছরের বৃদ্ধ। কোভিডের ব্যাপক প্রসারে চব্বিশ ঘণ্টা যে অসহায়তার মধ্যে বাস করছি, তার মধ্যে আপনাদের প্রয়াস এক ঝলক টাটকা বাতাসের মতো। আপনাদের প্রচেষ্টা সার্থক হোক। প্রত্যক্ষ না হোক পরোক্ষভাবেও আমায় কোনও কাজে লাগাতে পারলে, জানাবেন।