প্রাককথন –
প্রথমে একবালপুরের সি.এম.আর.আই হাসপাতালে দাবিমত টাকা দিতে না পারার জন্য ১৪ বছরের কিশোরীকে ভর্তি করেও চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা। ফলত পরের দিন ভোররাত্রে কিশোরীর মৃত্যু এবং উত্তেজিত জনতার দ্বারা ওই বেসরকারি হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর এবনহ স্বাস্থ্যকর্মীদের গণধোলাই। তার মাত্র দুদিনের মধ্যেই পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত যুবককে টাকা বাকি থাকার জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার গুরুতর (এবং প্রমাণিত) অভিযোগ শহরের সবচেয়ে মহার্ঘ্য এই সারা ভারতে শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে রাখা অ্যাপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ফলে রোগীর মৃত্যু। ক্রমে ক্রমে জানা গেল মাত্র সাতদিনে খরচের মিটার উঠেছিল প্রায় আট লক্ষ টাকা। রোগীর পরিবার ৭৫% টাকা মিটিয়ে দেবার পরও তাঁদের বাধ্য করা হয় অর্থলগ্নি সংক্রান্ত শংসাপত্র (Fixed Deposit) জমা রাখতে। তদন্ত জোরালো হলে আস্তে আস্তে উন্মোচিত হচ্ছে নানা ভয়াবহ তথ্য। যেমন যে ‘অ্যাঞ্জিওএম্বলিজম’ প্রক্রিয়া করাই হয়নি (এবং জাল তথ্য ও চিত্র স্বাস্থ্য দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে) তার জন্য পৌনে তিন লক্ষ টাকা আদায় করা, পাঁচ মিনিটের মধ্যে চারবার অজ্ঞান করা হয়েছে বলে খরচ দেখানো, ২৪ ঘন্টায় ৩৬ বোতল স্যালাইন দেওয়া হয়েছে বলে বিল ধরানো ইত্যাদি, প্রভৃতি।
বন্যার জলের মত অভিযোগ আসতে লাগল। ভুল চিকিৎসায় পা কেটে বাদ দেওয়া, যে সব চিকিৎসা করাই হয়নি তার অর্থ আদায় করা, বিদেশে ভ্রমণরত...... , মৃত রোগীকে বাড়ির লোকের অমতে ভেন্টিলেটরে চাপিয়ে দশ লক্ষ টাকার ফর্দ ধরানো, হৃদধমনীর মধ্যে যে ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে বলে টাকা নেওয়া হয়েছে – রোগীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে সেই বস্তুগুলির অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া, এককথায় গুণতে গেলে গুণের নাই শেষ। বহু দিনের পুঞ্জীভূত অবরুদ্ধ অভিযোগ, অশ্রু, ক্ষোভ, ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় স্বজন হারানর যন্ত্রণা এবং বারবার প্রতারিত হওয়ার ক্রোধ হড়পা বানের মতো নেমে এল মুদ্রিত ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পাতায় পাতায়। সাংবাদিক মহলে হৈ হৈ পড়ে গেল – কে কত রোমাঞ্চকর, অশ্রুসিক্ত, ভয়াবহ ঘটনা তুলে ধরতে পারেন এই বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে।
বেসরকারি হাসপাতালের এই চূড়ান্ত প্রতারণা, অমানবিকতা, লুঠতরাজ ও রোগীমেধ যজ্ঞের পাশাপাশি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিরও বেহাল অবস্থা, প্রবল দায়িত্বহীনতা, রোগীদের সম্পর্কে তাচ্ছিল্য ও ভিক্ষুকের মতো তাঁদের দেখা এবং সবার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রবল ঢক্কানিনাদের অন্তরালে মহকুমা থেকে জেলাসদর হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির অপদার্থতার কাহিনীগুলিও কম বিবমিষা উদ্রেককারী নয়। হাসপাতালে ভ্রতি হতে না পেয়ে রাস্তায় প্রসূতির গর্ভমোচন, পাঁচ সরকারি হাসপাতালে ঘুরে শয্যা না পেয়ে পথেই রোগীর মৃত্যু, প্রসূতি বিভাগ থেকে শিশুচুরি, হঠাৎ হঠাৎ সংক্রমণে নবজাতকদের মৃত্যুর মিছিল, রোগীর আত্মীয় – বহিরাগত এবং জুনিয়ার ডা.ক্তারদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, নিঃশুল্ক পরিষেবা নিতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর আঁকাবাঁকা লাইনে হয়তো ক্রমবর্ধমান জনরোষ আঁচ করেই সরকার নড়েচড়ে বসলেন এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেন। ফেব্রুয়ারী মাসের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীস্বয়ং নবান্নতে এক বিচারসভা বসালেন। টেবিলের একদিকে মুখ্যমন্ত্রী সহ মন্ত্রীপরিষদের কিছু নামীদামী সদস্য, বড় বড় সচিব পর্যায়ের আধিকারিক এবং অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা। টেবিলের অপরদিকে কলকাতার ‘নামকরা’ প্রায় সমস্ত হাসপাতালের মালিক, মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং অন্যান্য প্রতিনিধিবর্গ।
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে জানিয়ে দিলেন চিকিৎসা ব্যবসা নয়, সেবা এবং তাতে লাভ করা যেতেই পারে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ হারালে চলবে না। রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে এবং প্যাকেজের তোয়াক্কা না করে আকাশছোঁয়া বিল করা, অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, পরীক্ষানিরীক্ষা এবং ঔষধের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসা ব্যবসাকে করতে হবে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত। টাকা না দিতে পাড়ার অজুহাতে জরুরী পরিষেবা না দেওয়া, চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা চলবে না। অনাদায়ী অর্থের জন্য রোগীর দেহ আটকে রাখা চলবে না ইত্যাদি। বিশেষ বিশেষ হাসপাতালের নাম করে কারুর ‘কিডনি চক্র কেমন চলছে’, ‘ভেন্টিলেটরে মস্তিষ্ক মৃত (Brain Death) ব্যক্তিকে দিনের পর দিন আটকে রেখে টাকা আদায় বন্ধ হয়েছে কি না’ এসব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নতশির করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত (Live Telecast) হচ্ছিল। ফলে এতদিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারা প্রতারিত হতাশ, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ জনগণ চমৎকৃত হয়ে গেলেন যে এইবার সরকার নড়ে বসেছেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের তঞ্চকতা নিশ্চয় বন্ধ হবে। সাধারণভাবে চিকিৎসকদের একাংশের রোগীর প্রতি দুর্ব্যবহার এবং তার পাশাপাশি বাড়ি-গাড়ি-বিদেশভ্রমণ (অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ কোম্পানী পোষিত) সাধারণভাবে মানুষ অসুখে পড়লে চিকিৎসকের পা জড়িয়ে ধরলেও তাঁদের ‘গণশত্রু’ বলেই মনে করেন। নোট বাতিলের ধাক্কায় নাজেহাল নিম্নমধ্যবিত্ত যেমন নিজের আর্থিক লাঞ্ছনা সত্ত্বেও ধনী প্রতিবেশীর ‘কালাধন’ ধ্বংস হবার আশায় উল্লসিত হয়েছিলেন, তেমনই মনোভাব চিকিৎসকদের সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিকদের।
অধ্যায় – ২
পশ্চিমবঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র (নিবন্ধীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা) আইন, ২০১৭
মুখ্যমন্ত্রী আগেই আভাস দিয়েছিলেন যে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর আইন লাগু করার। সেই পথেই এই প্রস্তাবিত বিল বিধানসভায় পেশ হল ৮ই মার্চ এবং তেমন কোন আলোচনার সুযোগ ছাড়াই ... সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গৃহীত হল। ১৬ তারিখে রাজ্যপালের স্বাক্ষর পর এই বিল আইনে পরিণত হল, যে বিলের নাম, ‘The West Bengal Clinical Establishment (Registration, Regulation and Transparency) Bill, 2017.
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
এই নতুন আইনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হিসেবে সরকার বলেছেন, এর আগের আইন অর্থাৎ ২০১০ সালে পাশ হওয়া আইনে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়নি। সেই জন্য এই নতুন আইনের অবতারণা যা সরকারের মতে এক দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, রোগীবান্ধব এবং উচ্চ গুণমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বাধ্য করবে কেননা সকার মনে করেন যে বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবসা হলেও আসলে তা একধরণের সেবা এবং বেসরকারি হাসপাতালরা মুনাফা করতেই পারেন কিন্তু সেবার মনোবৃত্তি নিয়েই তাদের মুনাফা করতে হবে।
এবার মূল আইনটিতে আসা যাক। আইনটিতে বলা হয়েছে সরকার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবে গভীরভাবে চিন্তিত। যেভাবে এইসব চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনকে নানা লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয় এবং প্রচুর অর্থব্যয় করতে হয় তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। সেই জন্য সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র বা Clinical Establishment এর ক্ষেত্রে এই নতুন আইন লাগু করা হচ্ছে। Clinical Establishment এর ক্ষেত্রে পড়বে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ডিসপেনসারী, পলিক্লিনিক, টীকা দানকেন্দ্র, রোগীদের ভর্তি রাখার জন্য স্যানাটোরিয়াম, ফিজিওথেরাপী সেন্টার, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ কেন্দ্র এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার।
কোন ধরণের সংস্থাগুলি পরিচালিত হাসপাতালগুলি এর আওতায় আসবে
কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই আইনের আওতায় আসবে না
আইনটির উল্লেখযোগ্য ধারাসমূহ
নিয়ামক সংস্থা প্রতিষ্ঠা
এই আইনের প্রয়োগ এবং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাজ্য সরকার একটি বাঁ নিয়ামক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন যারা সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে এবং রোগী ও তার পরিজনেরা যে কোনো অভিযোগ নিয়ে দ্রুত সুবিচারের জন্য সেই সংস্থার দারস্থ হতে পারবেন।
নিয়ামক সংস্থা বা কমিশনের চেয়ারম্যান ঘোষিত হয়েছেন বিচারপতি শ্রী অসীম কুমার রায়, সহ-সভাপতি একজন বরিষ্ঠ সচিব, সভাপতির অনুপস্থিতিতে যিনি কাজ চালাবেন। কমিশনের বাকি সদস্যরা হলেন – চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা, আইন, সমাজসেবা, অর্থনীতি প্রভৃতি থেকে ‘মনোনীত’ ১১ জন ব্যক্তিত্ব। এভাবে প্রস্তাবিত কমিশনের সদস্য হয়েছেন ডা. সুকুমার মুখার্জী, ডা. গোপালকৃষ্ণ ঢালি, ডা. অভিজিৎ চৌধুরী, ডা. মাখনলাল সাহা, ডা. মধুসূদন সাহা, ডা. মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী। এছাড়া থাকছেন – সংঘমিত্রা ঘোষ, অনুজ শর্মা, প্রবীণ ত্রিপাঠি ও মাধবী দাস।
এই কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ গ্রহণ ও সে বিষয়ে তদন্ত করতে এবং অভিযুক্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানটিকে বা ব্যক্তিকে লাইসেন্স বাতিল, জেল এবং জরিমানা (পঞ্চাশ হাজার থেকে পঞ্চাশ লাখ পর্যন্ত) লাগু করতে। এই কমিশন এত শক্তিশালী যে তাদের রায়ের ওপর কোনো দেওয়ানি আদালতে(Civil Court) আর্জি বা মোকদ্দমা করা যাবে না।
সংশয় এবং বিরোধিতা
সরকারের এই ‘অভূতপূর্ব’ পদক্ষেপে এতদিন ধরে বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চক্রবূহ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত। নিয়ামক কমিশন কেবল ঘোষিত হয়েছে মাত্র। এখনো তার কার্যালয় বা পরিকাঠামো কিছুই তৈরি হয়নি। সংবাদে প্রকাশ, মাত্র এক মাসের মধ্যে কয়েক হাজার অভিযোগপত্র নবান্নে স্বাস্থ্যদপ্তরে জমা পড়েছে, যা নিয়ে সেখানকার অধস্তন কর্মচারীরা দিশাহারা।
অপরপক্ষে, চিকিৎসকদের একটি বৃহৎ অংশ, বিশেষত যেসব চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস অথবা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন আইএমএ উল্লেখযোগ্য ভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে। একদিকে সরকারপন্থী চিকিৎসকরা (যাঁদের অনেকেই অবশ্য কিল খেয়ে কিল হজম করছেন), অন্যদিকে বিদ্রোহী ডা.ক্তারকুল। রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে Doctors for Democracy, Doctors for Patients, West Bengal Doctors’ Forum প্রভৃতি সংস্থা, যারা ডা.ক্তারদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষা করতে তৎপর। এঁদের অনেকেই এই বিলের ফলে চিকিৎসক রোগীর ‘মধুর’ সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কায় পথে নেমেছেন বলে দাবী করেছেন। ডা.ক্তারদের কয়েকটি সংগঠন সংঘবদ্ধভাবে আদালতে যাওয়া স্থির করেছেন। চিকিৎসকদের পেশাগত দ্বন্দ্ব ছাড়াও এই আইনেড় বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে। যথা –
লেখকের মত –
বেসরকারি হাসপাতালে যে সব রোগীরা ভিড় জমান, তাদের ৮০ শতাংশই সেখানে যেতে বাধ্য হন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে, পরিকাঠামোর অভাবে, বিছানা না পেয়ে, রোগনির্ণয় পরীক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে, জীবনদায়ী অস্ত্রোপচারে অস্বাভাবিক দেরীর জন্য বা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে। প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচাতে তাদের জমিবাড়ি, হাল-বলদ, সোনাদানা বিক্রি করে দিতে হয়, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়, পারিবারিক অনুষ্ঠান বাতিল করে দিতে হয় – যাকে বলে এক বিপর্যস্ত অবস্থা। ওই বিপর্যয়ের অভিঘাতে ভারতবর্ষের প্রায় তিনকোটি মানুষ প্রতি বছর দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যান।
নতুন আইন এই অতলান্তিক সমস্যার অতি ক্ষুদ্র সমাধান, যদি তা সৎ উদ্দেশ্যেও করা হয়ে থাকে – ‘তোলাবাজি’র জন্য নয়। প্রকৃত সমাধান হল সরকারি পরিকাঠামোর উন্নতি এবং স্বাস্থ্য চিকিৎসাকে নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মেনে নেওয়া। যাকে বলে সবার জন্য স্বাস্থ্য বা Universal Health Care তার ব্যবস্থা করে। ২০১০-২০১১ সালে ডা. শ্রীনাথ রেড্ডি কমিটি বা HLEG-র সুপারিশ অনুযায়ীও এই সর্বজনীন নিঃশুল্ক সরকারি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়া, মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়টিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করার, ‘ভালো করার’, অন্য কোনো শর্টকাট পথ নেই। বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সাধারণ মাপের কিছু সংস্কার তো নয়ই। চাই সবার জন্য স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের অধিকার। নান্যপন্থা বিদ্যতে।