সারা দেশ জুড়ে যখন মৃতদেহের পাহাড়, লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে গঙ্গায়, তখন আমাদের বোধহয় একবার বুঝে নেওয়া দরকার এই গভীর গাড্ডায় আমরা পড়লাম কেন? কিছুই কি করার ছিল না? সেটা বোঝার জন্য প্রথমে কিছু প্রামাণ্য তথ্যে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক:
৫ই মে, ২০২১। ভারতবর্ষে দৈনিক আক্রান্ত আর মৃত – ৪.১২ লাখ / ৪ হাজার। বিশ্বে প্রথম। দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল, সেখানে সংখ্যাগুলো ৭৬ হাজার / ২.৮ হাজার। আমেরিকা তৃতীয় স্থানে -- ৪৬ হাজার / ৭৫০। বাকি কোনো দেশেই সংখ্যাটা ২০ হাজার / ৪০০ র বেশি নয়।
এ তো গেলো পরিসংখ্যান। এর ওপর ভিত্তি করে "আমরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্য সরকারকে দায়ী করা মোটেই উচিত নয়!” – ভক্তদের এই প্রচার নিশ্চয়ই আপনার মোবাইলস্ক্রিনে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু বার। ভক্তদের চরিত্রই হল অর্ধসত্যর উপর নিজেদের নির্মাণকে খাড়া করা। ওপরের তথ্যটাই যদি আপনি দেশের জনসংখ্যার নিরিখে দেখেন, তাহলে, একদম শুরু, মানে ২০২০-র প্রথম থেকে ৬ মে ২০২১ পর্যন্ত ভারতে ১০ লাখ মানুষ প্রতি (per million) সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা *১৫,৪২৯ / ১৬৮*। বিশ্বে আমাদের স্থান *১১৩ / ১১০* নম্বরে। এই পরিসংখ্যান অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার কতজন সংক্রমিত / মৃত - অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে একবার দেখে নেওয়া যাক:
ইতালি ৬৭,৬০০ / ২,০২৫
ইংল্যান্ড ৬৫,০০০ / ১,৮৭১
ফ্রান্স ৮৭,২৬০ / ১,৬১৫
স্পেন ৭৬,০০০ / ১,৬৮৩
সারা বিশ্ব ২০,৫৬০ / ৪২৭
সোজা কথায় সরকারের নিজের দেওয়া তথ্য অনুযাযী যখন জনসংখ্যাকে হিসেবের মধ্যে নেব, তখন কিন্তু কিছুতেই বলা যাবে না যে ভাইরাস আমাদের ওপর অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে আক্রমণ করেছে। বরং সংখ্যাগুলো খুব পরিষ্কার করে দেখাচ্ছে যে আমাদের দেশে ভাইরাসের প্রকোপ অনেক অনেক কম।
না একেবারেই নয়। নাগপুরের সিলেবাসে না থাকলেও মানবসভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী:
১। অতিমারীতে একাধিক ঢেউ থাকবেই থাকবে
২। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ হবে অনেক বেশি এবং তা হবে খুব কম সময়ের মধ্যে
৩। সংক্রমণ বহু গুণ বেশি হবেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে কিন্তু রোগের তীব্রতা হয়ত কম হবে।
৪। যদি দেশ প্রস্তুত না থাকে তাহলে কিন্তু তীব্রতা কম হলেও সংক্রমণের মাত্রা বহু গুণ বেশি হবে বলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হবার সম্ভাবনা – ঠিক যা হয়েছে আমাদের দেশে।
ইউরোপ অসভ্য মহাদেশ! ব্যাটারা গোচোনা খায় না, গোবর মাখে না, কিন্তু তারা জানত যে দ্বিতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী আর সেই জন্য তার প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর ঠিক সেই কারনেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর হার এত কমাতে পেরেছে।
এখন একটা প্রচার চলছে যে দ্বিতীয় ঢেউ আচমকা এসেছে কোথাও কোন বিপদ সঙ্কেত বাজে নি। ! এ যে কত বড় মিথ্যা তা নিচের সংখ্যাগুলো প্রমান করে। {ব্র্যাকেট এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের দৈনিক সংক্রমণ আর বাইরে সারা ভারতের}
আর তার সঙ্গে মহান নেতাদের কর্মকাণ্ডের দু একটা উদাহরণ:
• ২৮ জানুয়ারি: ভারত বিশ্বকে ধ্বংসের থেকে বাঁচিয়েছে - প্রধানমন্ত্রী
• ০৯.০২.২০২১: ১০,৭৩১ (২,৫১৫)
• ১৬.০২.২০২১: ১১,৫৯২ (৩,৬৬৩)
• ১৯ ফেব্রুয়ারি: রামদেব বাবার ওষুধ করোনিল-এর উদ্বোধনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
• ২৩.০২.২০২১: ১৩,৬৮২ (৬,২১৮)
• ২৬শে ফেব্রুয়ারি: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা – বাংলায় ভোট ৮ দফায়
• ০২.০৩.২০২১: ১৪,৯৯৮ (৭,৮৬৩)
• ৭ই মার্চ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন "আমরা করোনা লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে”
• ০৯.০৩.২০২১: ১৭,৮৭৩ (১৩,৬৫৯)
• ১৬.০৩.২০২১: ২৮,৮৬৯ (১৮,৬৪৪)
• ২১ মার্চ: প্রধানমন্ত্রী সবাইকে কুম্ভে স্বাগত জানালেন
• ২৩.০৩.২০২১: ৪৭,২৩৯ (২৮,৬৯৯)
• ৩০ মার্চ: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে
• ৩০.০৩.২০২১: ৫৩,২৩৭ (৩৯,৫৪১)
• ১ আর ৬ এপ্রিল: বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সমাবেশ
• ৪ই এপ্রিল: আসামে কোভিড নেই, মাস্ক পরার কোনও প্রয়োজন নেই – জানালেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (আজকের মুখ্যমন্ত্রী)
• ০৬.০৪.২০২১: ১,১৫,৩১২ (৫৫,৪৬৯)
• ১০ আর ১২ এপ্রিল: আবার বাংলায় প্রধানমন্ত্রীজির নির্বাচনী সভা
• ১২ এপ্রিল: কুম্ভে স্নান করলেন ৩৫ লাখ মানুষ
• ১৩.০৪.২০২১: ১,৮৫,৩০৬ (৬০,২১২)
• ১৪ই এপ্রিল: উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বললেন মা গঙ্গার আশীর্বাদে কুম্ভ থেকে কারো কোভিড হবে না
• ১৭ এপ্রিল: নির্বাচনী সভায় কেন্দ্রীয় শাসকদলের নেতাদের সোল্লাস ঘোষণা এতো বড় জনসমাবেশ তাঁরা আগে দেখেন নি।
• ২০.০৪.২০২১: ২,৯৪,৩৭৮ (৬২,০৯৭)
• ২৭শে এপ্রিল: যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে জানালেন যে সোশ্যাল মিডিয়াতে অক্সিজেনের অভাবের কথা বললে গ্রেপ্তার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে
• ২৭.০৪.২০২১: ৩,৬২,৯১৩ (৬৬,৩৫৮)
• ০৬.০৫.২০২১: ৪,১৪,২৮০ (৬২,১৯৪)
১। ইউরোপ ১০০ বছর আগের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রথম ঢেউয়ের পরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য। সরকার টানা সাবধান করে গেছে মানুষকে, তৈরি করেছে পরিকাঠামো। আর বিশাল জনসমাগমে উৎসাহ দেওয়া দূরের কথা - ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। এরপর যখন দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে তখন একদম শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে। ফল কী হয়েছে সে পরিসংখ্যান তো লেখার শুরুতেই দেওয়া হয়েছে।
২। আমাদের ১০০ বছর আগের ইউরোপ থেকে শিক্ষা নেবার দরকার ছিল না। আমাদের হাতের কাছে উদাহরণ ছিল এইসময়ের ইউরোপে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ কিভাবে অতি কম সময়ে বহু মানুষকে কাত করেছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ যে প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে তা ইউরোপ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল।
ইউরোপের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের যা করার কথা ছিল কিন্তু করলেন না
(ক) প্রচুর পরিমাণ টিকার বরাত দেওয়া, এটা নিশ্চিত করা যাতে Serum Institute of India, Pune আর Bharat Biotech, Hyderabad এই বরাতের টাকা কাজে লাগিয়ে যুদ্ধকালীন উদ্যোগ নিয়ে উৎপাদন বাড়ায়। ভুলে গেলে হবে না, আমরাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ।
(খ) দেশ জুড়ে লাগাতার প্রচার চালানো বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝ থেকে, যখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো যে দ্বিতীয় ঢেউ আসছে।
(গ) সমস্ত বড় জনসমাবেশ কড়া হাতে বন্ধ করা।
(ঘ) দেশের বিভিন্ন কোণে নমুনা সংগ্রহ ও RTPCR পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
(গ) হাসপাতাল শয্যা ও অক্সিজেন এর উৎপাদন বাড়ানো।
তার বদলে তাঁরা যা করলেন
(ক) টিকার বরাত দিলেন অতি সামান্য, আর একটা বিশাল বড় অংশ রপ্তানি করলেন বিদেশে।
(খ) মোবাইলের রিং টোন ছাড়া আর সমস্ত কোভিড সংক্রান্ত প্রচার বন্ধ করে কুম্ভ আর নির্বাচনী প্রচারে মাতলেন। নেতাদের কথা শুনে সবাই ভাবলেন ভারত কোভিড জয় করে ফেলেছে।
(গ) কোভিড পরীক্ষা বা হাসপাতালের বেড বা অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নিলেন না - চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থাকলো।
(ঘ) শত শত নেতা নির্বাচনী প্ৰচারে নেমে পড়লেন।
(ঙ) central vista র নির্মাণকেই রাখলেন সবচেয়ে জরুরি কাজ হিসেবে।
(চ) এটা বলতেই হবে, ভারতে টিকাকরণ শুরু হয়েছিলো দুর্দান্ত ভাবে। প্রথমে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য সামনের সারির কর্মীরা টিকা পেলেন। তারপরে শুরু হল বয়স্ক নাগরিক এবং ৪৫ ঊর্ধ্ব সেই সব মানুষদের টিকা দেওয়া যাঁদের ঝুঁকি বেশি। তারপর শুরু হল সব ৪৫ ঊর্ধ্ব মানুষের টিকাকরণ। এই অব্দি সুন্দর ভাবে চলছিলো। কিন্তু ওই যে মূল কাজটাই করা হয়নি তো। টিকার বরাত দেওয়া নেই কাজেই জোগানে সঙ্কট। এই জোগানে সঙ্কট শুরু হতেই জোগান বাড়ানোর চেষ্টা না করে মন্ত্রীমশাই টিকার দরজা উন্মুক্ত করে দিলেন সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য। তার ফল কী হল জানতে চাইলে cowin app এ একবার চোখ বোলালেই হবে।
ফল কী হল
(ক) টিকাকরণ দিয়েই শুরু করি। ৭ দিনের গড় হিসাব নিলে দেখা যাবে ১০ এপ্রিল নাগাদ প্রায় ৩৭ লাখ মানুষের টিকা হয়েছে ১ দিনে। তারপর শুধুই নিম্নগামী কার্ভ - ৬ মে তে ১৭.৫০ লাখ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক। কে কোথা থেকে টিকা কিনবে, কী হবে তার দাম, কেউ জানে না। শুধু ঘোষণা আর চটকদার টিকা উৎসব। আর কিছুই না।
(খ) দ্বিতীয় ঢেউ ঠিক যেভাবে আছড়ে পরার কথা ছিল ঠিক সেইরকম কপিবুক স্টাইলেই এলো, যেভাবে ইউরোপে এসেছিল। কিন্তু আমরা তো এর মধ্যে বুক বাজিয়ে তালে তালে নাচছিলাম। কুম্ভ, ৮ দফায় নির্বাচন, তার সঙ্গে আশ্বাস আমরা কোভিডকে হারিয়ে দিয়েছি। কাজেই তীব্রতা কম হলেও মারা গেছেন, যাচ্ছেন এবং যাবেন প্রচুর মানুষ। টেস্ট করানোর কোন সুযোগ গ্রামে গঞ্জে তো নেই বটেই, শহরেও লেগে যাচ্ছে দিন সাতেক। তার মধ্যেই বহু মানুষ শেষ। যদি বা টেস্ট করানো গেলো তার পরেও হাসপাতালে জায়গা নেই, জায়গা পেলে অক্সিজেন নেই, কাজেই বেঘোরে মৃত্যুই ভবিতব্য। আর ভাগ্য ভালো হলে নিজে থেকেই ভাল হয়ে উঠছেন অধিকাংশ মানুষ। আমরা কী করলাম? মৃত্যুর পরিসংখ্যানটা জাল করলাম। একটা উদাহরণ নিলেই বোঝা যাবে। ১ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সরকারি হিসেবে কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা ৬৬,৭২৩। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি হলে ২০ হাজার মানুষ প্রতি একজন মারা গেছেন এই সময়ে। এমন একজন মানুষকেও সারা দেশে আপনি পাবেন না যিনি তার প্রিয়জন / পরিচিত একাধিক মানুষকে হারাননি এই সময়েই। কাজেই এই মৃত্যু মিছিল সর্বব্যাপী, কিছু ব্যাতিক্রমী ঘটনা নয়।
তাহলে কিন্তু সোজা অঙ্কের হিসেবে যদি আপনি ৩ জন পরিচিত বা প্রিয়জনকে হারিয়ে থাকেন তাহলে অন্তত ২০,০০০ × ৩ = ৬০,০০০ মানুষ কারুর না কারুর পরিচিত বা প্রিয়জন। হয় এটা সত্যি অথবা মৃত্যুর যে সরকারি সংখ্যা তার থেকে বহুগুণ বেশি মানুষ মারা গেছেন ও মারা যাচ্ছেন।
(গ) IT Cell-এর ভাইটির প্রচার – নেতিবাচক নয় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে আর বিশ্বের সেরা প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে হবে। এদের সবসময়ের প্রচার “হিন্দু খতরে মে হ্যায়” এবার কিন্তু ফলে গেছে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু, কাজেই এই চূড়ান্ত সরকারি অপদার্থতায় তাঁরাই বেশি সংখ্যায় মারা গেছেন। অনেক চেষ্টা করেও ভাইরাসকে খাকি জাঙিয়া পরিয়ে লেফট রাইট করান যায় নি যে!
(ঘ) ও হ্যাঁ। সংক্রমণ ঠেকাতে একটা অভিনব উদ্যোগ AIIMS এর। ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে দেখা হচ্ছে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করে কোভিড থেকে বাঁচা যায় কিনা। এর সঙ্গে গোবর মেখে গোচনা পান করে, থালা বাজিয়ে ভাইরাস তাড়ানোর চেষ্টা তো আছেই।
নিজের নিয়ম মেনেই এই দ্বিতীয় ঢেউ এক সময় থামবে, তার আগে আমাদের দেশে কয়েক লক্ষ নাগরিক যাবেন মহাপ্রস্থানের পথে,তার ব্যাপ্তি হবে এতটাই যে আমরা নিজেরা অনেকে চলে যাব এবং একজন মানুষও থাকবেন না এই দেশে যিনি কোন প্রিয়জনকে হারাবেন না। কারণ একটাই। সর্বব্যাপী চূড়ান্ত অপদার্থতা আর মিথ্যাচার। ফলে যা হচ্ছে তাকে গণহত্যা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না কি?
কিন্তু তাতে কী? যে ভাবে আমরা নোট বাতিল ভুলে গেছি, মনে রাখিনি চার ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে দেশ জুড়ে লকডাউন ও পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, ভুলে গেছি অসংখ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, মেনে নিয়েছি শুধু পয়সার জোরে মানুষের রায়কে পালটে দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে সরকার তৈরি করা, দানবীয় আইন প্রয়োগ করে বিরোধী মুখকে জেলে ভরে রাখা, মিথ্যে মামলার জালে ছাত্র, ছাত্রী, সাংবাদিকদের জেলে ঢুকিয়ে রাখা, কৃষকদের আন্দোলনকে পাত্তা না দেওয়া, তীব্র বেকারত্ব, মানুষে মানুষে বিষময় বিভাজন তৈরি করা – ঠিক সেইরকম ভুলে যাব এই সাথী হারানোর যন্ত্রণা। আবার নাচব সেন্ট্রাল ভিস্তায়, ধুনো দেবো রাম মন্দিরে, ভিডিও দেখবো বুলেট ট্রেনের, সকাল বিকেল গালি দেবো পাকিস্তানকে, হাঁ করে দেখবো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু, আর মন দিয়ে শুনব ঝুরি ঝুরি মিথ্যে কথা।
শুধু কেউ কেউ হয়ত বলবেন - হে ভক্তকুল তোমাদের হাত আজ রক্তে মাখা মাখি, দেশদ্রোহীর রক্ত নয়, ছোট্ট শিশুর মায়ের রক্ত, বুড়ি মায়ের সন্তানের রক্ত, লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষের রক্ত - যাঁরা শুধু শ্বাস না নিতে পেরে চলে গেলেন, গঙ্গায় ভেসে গেলো মরদেহ, শবদাহ হল কুকুরের কবরখানায়। হে ভক্ত, ইতিহাস পড়লে দেখবেন এক জার্মান গুঁফোর ভক্তকুলের হাতেও লেগেছিল কোটি কোটি মানুষের রক্ত। সেদিন তাদের কিছু যায় আসে নি, আজ আপনাদেরও কিছু এসে যাবে না।
রোম পুড়িতেছিল, নীরো বেহালা বাজাইতেছিল।
প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ সবই ক্ষমতাসীনদের জন্য অবিমিশ্র সৌভাগ্য।
অসাধারণ লেখা। এমন তথ্যসমৃদ্ধ লেখা লক্ষ-লক্ষ মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ুক।
হার্দিক অভিনন্দন।