শঙ্খ ঘোষ সূক্ষ্ম ইঙ্গিতের কবি। তাঁরই সমসাময়িক ‘হাংরি কবিদের’ মতো কর্কশ উচ্চকিত কিংবা রংদার নন। মৌলিক ভাবে তাঁর কবিতা লিরিকধর্মী, মনের নানা রকমফের, নানা অনুভূতির কবিতা। যদিও সেসব কবিতা সর্বদাই তাঁর শানিত ধী, বিচারবুদ্ধির ছাঁকনিতে ছাঁকা, নিয়ন্ত্রিত— আর সেখানেই রোমান্টিক আর পাঁচজন কবির থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য ভাবে পৃথক।
আবার, তিনি আখ্যান-কথক কবিও নন, যদিও কখনো-কখনো তাঁর কবিতায় থাকে আখ্যানের প্রেক্ষিত, নানা প্রশ্ন, কথোপকথন এবং আটপৌরে অভিব্যক্তি।
তাঁর সমসাময়িক কোনো কবির সঙ্গে তাঁর তুলনা করা কঠিন, এমনকি যাঁরা তাঁর পূর্বজ বা অনুজ, যাঁরা লেখালিখি করেছেন তাঁর আগে বা পরে, তুলনা করা কঠিন তাঁদের সঙ্গেও।রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারকে তিনি আধুনিক করে তুলেছেন বাচনভঙ্গিকে পরিশ্রুত করে। জীবনানন্দের মতো রূপকল্পময় হয়ে উঠতে পারেন তিনি, কিন্তু তেমন স্মৃতিমেদুরতা তাঁর কবিতায় বিরল। তিনি শক্তির (চট্টোপাধ্যায়) মতো চমকিত করতে পারেন, কিন্তু আরও সংযমী। এমনটা হতেই পারে যে, তিনি ফরাসি সিম্বলিস্টদের কাছ থেকে আহরণ করেছেন, কিন্তু সে প্রভাব তির্যক, পরোক্ষ। মাথার চারপাশে কল্পিত দীপ্তিবলয় শোভিত কবিদের মতো তিনি নিজেকে কদাচ জাহির করেন না। এমনকি তাঁর বিপুল পাণ্ডিত্যও তিনি ধারণ করেন অনায়াস স্বচ্ছন্দে, হালকা চালে।
আমাদের দুজনের যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ, আদানপ্রদান হয় তা মোটেই নয়। কখনো-সখনো হয়। কিন্তু চমৎকার একজন কবি এবং নিষ্কলঙ্ক সৎ একজন মানুষ হিসেবে আমি তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা করে এসেছি বহু দশক আগে ভূপালের ভারত ভবনে তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের পর থেকেই। তাঁর কবিতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞসুলভ মন্তব্য আমি করতে পারি না, কারণ আমি বাংলায় সুপণ্ডিত নই। কিন্তু এও তো ঠিক যে, বহু ইউরোপীয় লেখকের বিষয়ে আমরা আলোচনা করি, এমনকি তাঁদের নিয়ে গবেষণাপত্রও লিখে ফেলি প্রায়শই এমন নানা তরজমা পড়ে, যেগুলিকে মোটেই যথাযথ বলা যায় না। এই যে অপরাধটি আমি করছি তাকে ক্ষমা করা যেতে পারে ওই একটিমাত্র যুক্তিতেই!
কবিতায় আমি মৌলিক দুটি গুণ খুঁজি— চিত্ররূপ ও মেটাফরের তরতাজা নতুনত্ব এবং বাক্যবিন্যাস ও গঠনশৈলীর মাধ্যমে সৃষ্ট বিস্ময়, বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নয়। এবং শঙ্খর একটি কবিতাও এই দুই নিরিখে আমাকে হতাশ করেনি। সমসাময়িক বহু কবি যে সুনির্দিষ্ট বিবৃতি পছন্দ করেন কবিতায়, তাঁর কবিতা তা থেকে মুক্ত। তাঁর কবিতায় যে অমীমাংসিত অনিশ্চয়তা থাকে সেটিই আমি ভালোবাসি। মোটা দাগের কোনো কিছু থাকে না তাঁর কবিতায়। তিনি ভাষা নিয়ে কাজ করেন যেন মূর্তি গড়ছেন কোনো ভাস্কর— তাকে যতদূর সম্ভব নিখুঁত করে তোলার খোদাই কর্মে তিনি ক্লান্তিহীন। যে-কোনো মহান কবির প্রধান দুটি গুণ হিসেবে টি এস এলিয়ট যে প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্যের কথা বলেছেন, তা আপনি শঙ্খর কবিতায় নাও পেতে পারেন, কারণ তিনি ইচ্ছে করেই নিজের পরিসর সীমিত রেখেছেন। কিন্তু এলিয়ট তৃতীয় একটি গুণের কথাও বলেছিলেন— যোগ্যতা। তা শঙ্খর শুধু যে আছে তাই নয়, অঢেল আছে। তিনি অননুকরণীয় নিজস্বতায় পরীক্ষানিরীক্ষা চালান, কিন্তু আভঁ-গার্দ উত্তরাধুনিক কবিদের মধ্যে অনেকে যে বিপজ্জনক পরিসরে বিচরণ করেন সেখানে পা রাখার পক্ষে তিনি বেশ মৃদু। এর অর্থ যদি এই হয় যে, তিনি পরম্পরাপন্থী, তাহলে হ্যাঁ, তাঁর কাব্যকলার ধারণা, উপলব্ধি সত্যিই পরম্পরাপন্থী, এবং তাকেই তিনি নিজস্ব শিল্পের জোরের জায়গা করে তুলতে পারেন, বাঁধা পরম্পরার সফল তোতাদের মতো তিনি মোটেই নন। তিনি প্রাণবন্ত কিন্তু উচ্ছল নন।
‘বাড়ি’ কবিতাটির কথা ধরা যাক—
বাড়ি
আমি একটি বাড়ি খুঁজছি বহুদিন—
মনে-মনে।
আলোর তরল জলে ভেসে যাব কবে।
বাড়ি কি পেয়েছ তুমি?
বাড়ি তো পেয়েছি আমি বহুদিন—
মনে-মনে,
বাড়ি চাই বাহির-ভুবনে।
কবি বলছেন তাঁর মনে সর্বদাই একটা বাড়ির ভাবনা ছিল, কিন্তু এখন তিনি একটা বাড়ি চাইছেন ‘বাহির-ভুবনে’। তাঁর ভয় অচিরেই তিনি ‘আলোর তরল জলে’ ভেসে যাবেন। তিনি উৎকণ্ঠিত মৃত্যু নিয়ে, যে মৃত্যুকে কবি দেখেন অস্তিত্বের ছটার চিরন্তন স্রোতের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যাওয়ার মতো, আর তাইতেই একটি পাকাপোক্ত বাড়ি, যা নিতান্তই কল্পিত নয়, তা পাওয়ার জন্য তাঁর উৎকণ্ঠা। এখানে পাকাপোক্ত এবং তরলতার মধ্যে একটা ডায়ালেক্টিক সম্পর্কে তারা উপস্থাপিত হয়।
তেমনই দেখুন ‘প্রতিহিংসা’ কবিতাটা—
প্রতিহিংসা
যুবতী কিছু জানে না, শুধু
প্রেমের কথা ব’লে
দেহ আমার সাজিয়েছিল
প্রাচীন বল্কলে।
আমিও পরিবর্তে তার
রেখেছি সব কথা:
শরীর ভরে ঢেলে দিয়েছি
আগুন, প্রবণতা।
মেয়েটি কেবলই ‘প্রেমের কথা’ বলে তার প্রেমিকের দেহ ‘সাজিয়েছিল প্রাচীন বল্কলে’, প্রতিদানে যুবকটি তার শরীর ভরে ঢেলে দিয়েছে ‘আগুন’। কোথাও কিন্তু কবি দাবানল বা মৃত্যুর কথা বলছেন না। তবু শুধুমাত্র একে অপরের অনুষঙ্গের জেরে মনের মধ্যে একটি জ্বলন্ত গাছের ছবি তুলে আনে। তুলে আনে মৃত্যুর ছবিও যেখানে কাঠ এবং শরীর একত্র হয়ে আগুন প্রজ্বলিত করে মহাকালে।
একটি কবিতার নাম ‘খাল’—
খাল
ভাঙা নৌকা পড়ে আছে খালের কিনারভরা
এখন সন্ধ্যায় শত নাম;
তুমি আমি মুখোমুখি নই আর।
অবসাদ দিয়েছিলে মনে পড়ে, শুধু মনে পড়ে না কখন
অপরের হাত ধরে চলে গেছ নদীর জোয়ারে।
চারিদিকে সব জল ঠিক আছে নীরবতাময়।
মাঝে-মাঝে যেন কোনো হঠাৎ শুশুক
ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে যায় ব্যবহৃত সময়ের টান—
আমি যার নাম জানি সে কি জানে আমার হৃদয়?
খাল থেকে ছোটো খাল
আরও ছো্টো ছোটো সব খালের ভিতরে
কিছু আর মুখোমুখি নয়
আড়ালে অদৃশ্য জালে ঢাকা আছে বীজাণুর কাল—
এখন নদীর দিকে ভালোবাসা প্রতিহত হয়।
এ কবিতার উপজীব্য প্রেম ও বিরহ, এবং এ কবিতায় কবি মনের নানা জটিল অবস্থা উপস্থাপিত করতে ফের ব্যবহার করছেন জল ও তার জটিল নানা রূপ, আনুষঙ্গিক নানা জিনিস, পশু, নদী, ভাঙা নৌকো, ডলফিন, খাল। বিষাদকে সহনীয় করছে সময়, যেখানে মুখোমুখি সংঘাত জায়গা করে দেয় প্রান্তিক স্মৃতিকে।
এবারে ধরুন এই কবিতা দুটি—
পুতুলনাচ
এই কি তবে ঠিক হলো যে দশ আঙুলের সুতোয় তুমি
ঝুলিয়ে নেবে আমায়
আর আমাকে গাইতে হবে হুকুমমতো গান?
এই কি তবে ঠিক হলো যে বৃষ্টিভেজা রথের মেলায়
সবার সামনে বলবে ডেকে, ‘এসো
মরণকূপে ঝাঁপাও’?
আমার ছিল পায়ে পায়ে মুক্তি, আমার সহজ যাওয়া
এ গলি ওই গলি
আমার ছিল পথশ্রমের নিশানতোলা শহরতলি
উত্তরে-দক্ষিণে
আমার চলা ছিল আমার নিজস্ব, তাই কেউ কখনো
নেয়নি আমায় কিনে
এমন সময় তুমি আবিল হাত বাড়িয়ে যা পাও
স্বাধীনতায় দিচ্ছ গোপন টান—
এই কি তবে ঠিক হলো যে আমার মুখেও জাগিয়ে দেবে
আদিমতার নগ্ন প্রতিমান?
এবং
নিগ্রো বন্ধুকে চিঠি
রিচার্ড, তোমার নাম আমার শব্দের মধ্যে আছে
রিচার্ড রিচার্ড।
কে রিচার্ড? কেউ নয়। রিচার্ড আমার শব্দ নয়।
রিচার্ড, তোমার নাম আমার স্বপ্নের মধ্যে আছে
রিচার্ড রিচার্ড।
কে রিচার্ড? কেউ নয়। রিচার্ড আমার স্বপ্ন নয়।
রিচার্ড, তোমার নাম আমার দুঃখের মধ্যে আছে
রিচার্ড রিচার্ড।
কে রিচার্ড? কেউ নয়। রিচার্ড আমার দুঃখ নয়।
এই সব কবিতায় আগের কবিতাগুলির দমবন্ধ পরিসর থেকে বেরিয়ে তিনি স্বাধীনতা, সাম্য এবং স্বাধীকারের মতো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। ১৯৭০-এর দশকে যে অসংখ্য প্রতিবাদী স্বর উঠে এসেছিল, এ কবিতাগুলির মাধ্যমে নিজের মতো করে তাতেই তিনি স্বর মেলাচ্ছিলেন, জোর দিয়ে এ কথা বলার মতো তাঁর কবিতা আমার যথেষ্ট পড়া নেই, কিন্তু শঙ্খর নিজস্ব নান্দনিক বোধ অনুযায়ী মৃদু হলেও এ স্বর যে প্রতিবাদী তা নিশ্চিত। পুতুলনাচ যিনি দেখান তাঁর দক্ষ আঙুলের টানে নাচতে রাজি নন কবি, কিংবা ফরমায়েশি কবিতা লিখতে। ‘‘আমার চলা ছিল আমার নিজস্ব, তাই কেউ কখনো/নেয়নি আমায় কিনে’’। কিন্তু ঠিক এই সময়েই ‘আবিল’ হাত কবির মুখেও জাগিয়ে দিতে চায় ‘আদিমতার নগ্ন প্রতিমান’। সেই ‘আবিল’ হাত হয়তো কোনো ক্ষমতার হাত যাতে রক্ত লেগে আছে। দাসত্বের কুয়োয় ঝাঁপ দিতে তিনি অস্বীকার করেন।
‘নিগ্রো বন্ধুকে লেখা চিঠি’ সহমর্মিতা প্রকাশ করে সহমর্মী হওয়া কী কঠিন তা বর্ণনা করে: একটা দূরত্ব যা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে চিরকাল ‘অজ্ঞাতনামা’ করে রাখবে: রিচার্ড কবির শব্দ নয়, স্বপ্ন নয়, দুঃখ নয়। মেকি সহানুভূতি আর প্রতিবাদের প্রদর্শন সহজ, মানুষের দুঃখকষ্টের প্রকৃত সহমর্মী হওয়া যে কী কঠিন তা কেবল খাঁটি সত্য উচ্চারণকারীর পক্ষেই ব্যক্ত করা সম্ভব। ‘শাদাকালো’ শীর্ষক কবিতাটিতেও তিনি জাতি-বর্ণের প্রশ্নে ফিরে গিয়েছেন। সেখানে এক কৃষ্ণাঙ্গ ‘‘থুত্থুরে/ছেঁড়া বুকে ঢিল খেতে খেতে তবু যে আঙুল তুলে বলেছিল ‘শোনো/আই অ্যাম ব্ল্যাক/ও ইয়েস, আই অ্যাম ব্ল্যাক/বাট্ মাই ওয়াইফ ইজ হোয়াইট!’’’
‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ আমাদের এই সময়ের ধারালো সমালোচনা, যে-সময়ে আমাদের উপর রাজত্ব করে বাণিজ্য এবং বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকাকেও পরস্পরের থেকে আড়াল করে রাখে। বাজারের নীরস যুক্তি ঢুকে পড়ে আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতির মধ্যেও। বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায় আমাদের আর ‘মুখোশ শুধু/ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে’।
কিছুটা সতর্ক, প্রচ্ছন্নভাবে একই ইঙ্গিত করে আরও একটি কবিতা—
চিতা
আজ সকাল থেকে কেউ আমাকে সত্যি কথা বলেনি
কেউ না
চিতা, জ্বলে ওঠো
সকলেরই চোখ ছিল লোভে লোভে মণিময়
মুখে ফোটে খই
চিতা, জ্বলে ওঠো
যা, পালিয়ে যা
বলতে বলতে বেঁকে যায় শরীর
চিতা
একা একা এসেছি গঙ্গায়
জ্বলে ওঠো
অথবা চণ্ডাল
দেখাও যেভাবে চাও সমীচীন ছাইমাখা নাচ।
সমবেত অন্যান্যরা যখন চায় দ্রুত ‘চিতা জ্বলে ওঠো’, যাতে তারা সত্তর ফিরে যেতে পারে আত্মপ্রসাদের পুরানো অস্তিত্বে, মৃত চায় গঙ্গাতীরে চণ্ডাল দেখাক তার তাণ্ডব নাচ। ‘ধর্ম’ কবিতায় যে ‘নাম-না-জানা মুণ্ডমালা’ পরে থাকে ‘শূন্য’ তা থেকে ধর্ম ঝরে পড়ে যায় মৃতের শীতল দেহে।
আরও একটি কবিতায় ফিরে আসে চিতা—
হৃৎকমল
চিতা যখন জ্বলছে
তোমরা চাও আমি তখন আলোর কথা বলি
বলব আলোর কথা।
বলব যে, ভাই, আরো কিছুক্ষণ
এ ওর মুখের উল্কি দেখে
কাটিয়ে দেব সময়। বলব আলোর কথা।
চণ্ডালকেই মুক্তি ভেবে খুঁচিয়ে দেব আগুন
ফুলকি দেখে দেখে বলব আলোর কথা
ভাবব ওই তো জয়ধ্বজা, শ্মশান, বড়ো ধুম লেগেছে হৃৎকমলে
চিতা যখন জ্বলছে, আমার হৃৎকমলে
ধুম লেগেছে, ঘুম লেগেছে চরাচরে, পাপড়ি জ্বলে
এই তো আমার
এই তো আমার জন্মভূমির আলোর কথা।
কিছুটা পরবর্তীকালে রচিত এ কবিতা নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এই দিনকালে। মানুষ এখন যে-আলোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা যে আমাদের দেশের চিতার আগুনের আলো তা তারা দেখতে পায় না। ‘ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার’ যে আছে তা আমরা ক্বচিৎ দেখতে পাই। আমরা মৃতদেহ বয়ে বেড়াই এবং সামনে যা দেখি তা নেহাতই আমাদের নিজস্ব আয়না-ই নয়, বহু দেহ ক্ষতবিক্ষত করা শানিত কাচের টুকরো। সমাজব্যক্তিকে ঘিরে বৃত্ত আঁকতেই থাকে, আর যত বার তা আঁকা হয় বৃত্তগুলো ছোটো, আরও ছোটো হতেই থাকে।
শঙ্খ পছন্দ করেন প্রাকৃতিক প্রতীক— আগুন, জল, মাটি, পশু, গাছ। ‘ব্যাঙ’ কবিতাতেও সেটাই দেখি। পরিপাটি বাড়ি, সব ঠিকঠাক ওপরে-ওপরে, কেবল ‘বুকের মধ্যে কাচে/আসলে লাফায় বুড়ো ব্যাঙ’।
দেখি এই কবিতাটা—
রক্তের দোষ
বিশ্বের প্রভু কে সে তো সকলেই জানে, আমরা ঋণী
সে-মহাকেন্দ্রের কাছে। তারই থেকে আলো এসে পড়ে
আমাদের মাংসে, হাড়ে; আমাদের শোকে ও সংগমে
নিজেদের মানে আমরা তাকে ছাড়া বুঝতেও পারিনি।
সে যদি না শুনতে পেত আমাদের চমকপ্রদ বাণী
যদি না বাহবা দিত তাথই বিভঙ্গে তালি দিয়ে
তাহলে কোথায় আমরা কোথায়-বা আমাদের স্বর—
বিপথেই ঝরে থাকত গলে-যাওয়া মজ্জা সবখানি।
সেই আমরা আছি তাই দেশ তবু বেঁচেবর্তে আছে
মানচিত্রে ভেসে উঠে পেয়ে গেছে তবু কিছু মান।
আর ওকে দেখো আজও অকাতরে আপন ভাষায়
গাঁয়ে বসে খুঁটে খায় খুদকুঁড়ো, অথবা বিজনে
হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকে আলপথে গরমে বা শীতে—
রক্তে তো ইংরেজি নেই, বাঁচবে কীভাবে পৃথিবীতে।
কবি সেই ভারতের দিকে আমাদের দৃষ্টি টানেন যা ‘মানচিত্রে ভেসে উঠে পেয়ে গেছে তবু কিছু মান’, আর সেই দেশেই যদি এখনও মানুষ ‘গাঁয়ে বসে খুঁটে খায় খুদকুঁড়ো’ তার কারণ হতেই হবে ‘রক্তে তো ইংরেজি নেই’! এই স্যাটায়ারের স্বর মৃদু, কিন্তু যথেষ্ট ধারালো— উঠে আসে কীভাবে আমাদের ভোগ করা যাবতীয় সুযোগসুবিধার মূলে রয়েছে কোনো ঔপনিবেশিক মনোভাব।
কবিতা নিয়ে শঙ্খর ধারণা কী, তা প্রধানত প্রকাশিত হয় তার কবিতাগুলির মাধ্যমেই। তবে কখনো-কখনো তিনি তা তুলে আনেন সরাসরি—
কবিতার প্রসাধন
মুখর প্রচ্ছদ ভেঙে দেখা যায় না মুখের আদল
অধিকাংশ দিন।
শুধু
কখনো কখনো
স্নানশেষে ঘরে ফিরে এলে
হঠাৎ তোমাকে দেখে মনে হয় সেজে আছো খুব।
কবির অবলোকনে কবিতা প্রায়শই দেখা যায় দূরে বহুদূরে কোথাও, আবছা। প্রেরণার আকস্মিক কিছু মুহূর্তেই কেবল তা ধরা দেয় তার স্পষ্ট উজ্জ্বল অবয়বে। কবিতা সততই কবির অন্তরে বিরাজমান, তবে অধিকাংশ সময়েই তা থাকে আংশিক অবগুণ্ঠিত কিংবা সম্পূর্ণ অন্তরালে।
ব্যভিচার
পূজাবাড়ি মনে পড়ে? কী করে বা হবে, তুমি গাঁয়েই যাওনি।
ওকে না কি গ্রাম বলে?
ডিমি ডিমি দ্রিদিম দ্রিদিম
তা ছাড়া ঢাকেরও কোনো তালজ্ঞান নেই।
এত যে প্রণয় করো, অতীতের জলস্রোত এড়াতে পারো না।
যদি বলি, এসো, বড়ো এক ব্রিজ বাঁধা যাক—
কেঁপে ওঠো। ভাবো এই অতল পাতালে ফেলে জলধারা কোথায় পালাবে।
যদি বলি, গল্প বলো, তোমার নিজের গল্প বলো—
চিবুকে পাষান জাগে
নীরবতা শীতল দেবতা।
পূজাবাড়ি মনে পড়ে? নবমীর বলি?
কী করে বা হবে
তোমার স্মৃতিতে জমে অন্য ব্যভিচার
আমি তার কিছু দান চাই।
এই কবিতাটিতে ‘পূজাবাড়ি’-র সঙ্গে ব্যভিচারের স্মৃতি জড়িয়ে ফেলাকে ঈশ্বরবিশ্বাসীর কাছে ঈশ্বরবিরোধী মনে হতে পারে, কিন্তু যে প্রেমিকা তার প্রিয়তমর কাছে যেতে সময়ের জলস্রোতের উপরে (এ কিন্তু চিরাচরিত জল ও সময়ের সম্পর্কের কথা নয়) ‘বড়ো এক ব্রিজ’ বাঁধতে চায়, তার নিজস্ব গ্রাম, রক্তশূন্য হৃদয়ের স্পন্দনের মতো তালজ্ঞানহীন ঢাকের শব্দময় পূজাবাড়ি, এ সবকিছুই ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই যুক্ত হয়ে যায় তৃতীয় কোনো জনের ভাবনার সঙ্গে। সেই তৃতীয় জন দুজনের মধ্যে এসে সে ব্রিজ বাঁধা চিরকালের মতো অসম্পূর্ণ করে রাখে।
‘শরীর’ নামের কবিতায় আয়নার সামনে বসে কবির শরীরে যে ‘গোধূলির আভা’ ফুটে ওঠে তা অবিশ্বাসীর মনে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর অশুভ ভাবনার অচেতনে সন্তর্পণে ঢুকে পড়া হতেই পারে।
হওয়া
হলে হলো, না হলে নেই।
এইভাবেই
জীবনটাকে রেখো।
তাছাড়া, কিছু শেখো
পথেবসানো ওই
উলঙ্গিনী ভিখারিনীর
দু-চোখে ধীর
প্রতিবাদের কাছে
আছে, এসবও আছে।
“হলে হলো, না হলে নেই।/এইভাবেই/জীবনটাকে রেখো।”—কবিতাটির এমন সব পঙ্ক্তি মনে হতে পারে হওয়া এবং শূন্যতার মধ্যে আটকে পড়া কোনো মানুষের শান্ত মেনে নেওয়া। কিন্তু কবিতাটায় পোরা রয়েছে আরও অনেক কিছু। এ কবিতা বিষণ্ণ চিন্তায় ডুবে থাকা মানুষকে পরামর্শ দেয় ‘ভিখিরিনীর/দু-চোখ ধীর/প্রতিবাদের কাছে’ কিছু শিখতে।
না
এর কোনও মানে নেই। একদিনের পর দু-দিন, দু-দিনের পর তিনদিন
কিন্তু তারপর কী?
একজনের পর দু-জন, সুজনের পর দুর্জন
কিন্তু তারপর কী?
এই মুখ ওই মুখ সব মুখ সমান।
তুমি বলেছিলে ঘর হবে, ঘর হলো
তারপর কী?
তুমি বলেছিলে স্নেহ হবে, স্নেহ হলো
তারপর?
কতদূরে নিতে পারে স্নেহ? অন্ধকারও আমাকে সন্দেহ
করেনি কখনো
বুকে বসে আছে তার এত বড়ো প্রতিস্পর্ধী কোনো!
না-এর পর না, না-এর পর না, না-এর পর না
তারপর কী?
পা থেকে মাথা, মাথা থেকে পা
তারপর?
এ কবিতা উৎকণ্ঠার, যে উৎকণ্ঠা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায় যাবতীয় আশা, এমনকি অস্তিত্বেরই অর্থহীনতার বিষয়ে সচেতনতায়। এ যেন পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে তার কেন্দ্রে পৌঁছানোর মতো। যে অর্থ আমরা খুঁজে বেড়াই তাই হয়তো এক অলীক মায়া।
মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়
ঘরে ফিরে মনে হয় বড়ো বেশি কথা বলা হলো?
চতুরতা, ক্লান্ত লাগে খুব?
মনে হয় ফিরে এসে স্নান করে ধূপ জ্বেলে চুপ করে নীলকুঠুরিতে
বসে থাকি?
মনে হয় পিশাচ পোশাক খুলে পরে নিই
মানবশরীর একবার?
দ্রাবিত সময় ঘরে বয়ে আনে জলীয়তা, তার
ভেসে-ওঠা ভেলা জুড়ে অনন্তশয়ন লাগে ভালো?
যদি তাই লাগে তবে ফিরে এসো। চতুরতা, যাও।
কী-বা আসে যায়
লোকে বলবে মূর্খ বড়ো, লোকে বলবে সামাজিক নয়!
এ কবিতা এমন একটা বিষয়কে ঘিরে যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের সকলকে: আমাদের চালাকি দেখে মনে হয় আমরা দারুণ বুদ্ধিমান, মঞ্চে, অন্যান্য মানুষের সামনে দুরন্ত, কিন্তু একবার ঘরে ফিরে এলে মনে হয় মুখের রং তুলে ফেলি। মুখোমুখি তখন নিজের নিঃসঙ্গ, অসামাজিক, মূর্খ সত্তা। এই শ্লেষ দেখি ‘বাজি’ নামের কবিতাটিতেও। যে সন্ন্যাসী সব ছেড়ে দিতে পেরে বাজি জিতে গিয়েছে, তার আর কোথাও কোথাও যাওয়ার নেই, কারণ সে তার যাবতীয় মূল ছিন্ন করে ফেলেছে।
আবার নীচের কবিতাটিতে আমরা দেখব এক ভিন্ন সংকট—
ধ্বংস করো ধ্বজা
আমি বলতে চাই, নিপাত যাও
এখনই
বলতে চাই, চুপ
তবু
বলতে পারি না। আর তাই
নিজেকে ছিঁড়ে ফেলি দিনের পর দিন।
বলতে চাই, জানি
জানি যে আমার মজ্জার মধ্য দিয়ে তোমার
ঘিরে ঘিরে পাক দেওয়া টান
বলতে চাই তোমার শেষ নেই, কেবল জল, লবণ
তোমার চোখ নেই স্নায়ু নেই
শুধু কুসুম
শুধু পরাগ, আবর্তন, শুধু ঘূর্ণি
শুধু গহ্বর
বলতে চাই, নিপাত যাও—ধ্বংস হও—ভাঙো
কিন্তু বলতে পারি না, কেননা তার আগেই
তুমি নিজে
নিজের হাতে ধ্বংস করো আমার ধ্বজা, আমার আত্মা।
যে আপনার প্রতিস্পর্ধী তাকে আপনি বলতে চাইছেন চুপ করতে, বলতে চাইছেন— নিপাত যাও, বলতে চাইছেন যে, তার কোনো শুরু বা শেষ নেই, কেবল লবণ আর জল, স্নায়ুহীন, চোখহীন, কিন্তু তার আগেই সে আপনার ধ্বজা ধ্বংস করে দেয়। অন্যের সঙ্গে, এমনকি নিজের সত্তার সঙ্গেও আমাদের সংঘাত এমনই। ‘ভিখারি ছেলের অভিমান’ কবিতায় উঠে আসে এই দুনিয়ায় কবির জায়গাটা কত নড়বড়ে। আগে তাকে গান গাইতে বলা হয়, তারপরেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তার থেকে বরং ভেক ধরাই ভালো—দূরে রেখে নিজেকে অন্যের ‘দরদভরা টান’ কল্পনা করে নেওয়া।
শূন্যের ভিতরে ঢেউ
বলিনি কখনো?
আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে।
এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে
সেই এক বলা
কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়ো
কোনো ভাষা নেই
কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে
যতদূর মুছে নিতে জানে
দীর্ঘ চরাচর,
তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই
কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম
সকলেই চেয়েছে আশ্রয়
সেকথা বলিনি? তবে কী ভাবে তাকাল এতদিন
জলের কিনারে নিচু জবা?
শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে
সেকথা জানো না?
এ কবিতা আমাদের উপলব্ধি করায় ‘শরীরের চেয়ে আরো বড়ো/কোনো ভাষা নেই’ এবং ‘দীর্ঘ চরাচর/ তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই’। উপলব্ধি করায় শূন্য বহুস্তরীয়, যেমন মৃত্যুর পর ‘দেহহীন উত্থানে’ এবং ‘জলের কিনারে নিচু জবা’-র আত্মগ্রাসী দীর্ঘ তাকানো।
‘বাঘ’ আমাদের সাবধান করে। কাগুজে বাঘকেও লাগামে রাখো। হোক না কাগুজে তবু তো বাঘ! এক অর্থে এ কবিতা লেখনীর ক্ষমতার কথা বলে এবং ইঙ্গিত দেয় রংনির্বিশেষে শাসকমাত্রেই কেন লেখকদের ভয়ে ভীত।
আর এই কবিতায় কবি যেন জাদুকর—
পুনর্বাসন
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
ঘাসপাথর
সরীসৃপ
ভাঙা মন্দির
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
নির্বাসন
কথামালা
একলা সূর্যাস্ত
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
ধ্বস
তীরবল্লম
ভিটেমাটি
সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিমমুখে
স্মৃতি যেন দীর্ঘযাত্রী দলদঙ্গল
ভাঙা বাক্স পড়ে থাকে আমগাছের ছায়ায়
এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে হঠাৎ সব বাস্তুহীন।
যা কিছু আমার চারপাশে আছে
শেয়ালদা
ভরদুপুর
উলকি দেয়াল
যা কিছু আমার চারপাশে আছে
কানাগলি
স্লোগান
মনুমেণ্ট
যা কিছু আমার চারপাশে আছে
শরশয্যা
ল্যাম্পোস্ট
লাল গঙ্গা
সমস্ত একসঙ্গে ঘিরে ধরে মজ্জার অন্ধকার
তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজে জলতরঙ্গ
চূড়োয় শূন্য তুলে ধরে হাওড়া ব্রিজ
পায়ের নীচে গড়িয়ে যায় আবহমান।
যা কিছু আমার চারপাশে ঝর্না
উড়ন্ত চুল
উদোম পথ
ঝোড়ো মশাল
যা কিছু আমার চারপাশে স্বচ্ছ
ভোরের শব্দ
স্নাত শরীর
শ্মশানশিব
যা কিছু আমার চারপাশে মৃত্যু
একেক দিন
হাজার দিন
জন্মদিন
সমস্ত একসঙ্গে ঘুরে আসে স্মৃতির হাতে
অল্প আলোয় বসে-থাকা পথভিখারি
যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে
জ্বালিয়ে নেয় প্রতিদিনের পুনর্বাসন।
জাদুকরের মতোই তিনি ভূতে-পাওয়া কোনো ব্যক্তিকে সারিয়ে তোলেন, সব ভূত তাড়িয়ে— তার পূর্বজদের ভূত, স্মৃতির, বিবিধ জিনিসের, ভয়ের, সংকোচের, সময়ের। লক্ষ করি এই পঙ্ক্তিগুলি— অল্প আলোয় বসে-থাকা পথভিখারি/ যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে/জ্বালিয়ে নেয় প্রতিদিনের পুনর্বাসন।
‘ত্রিতাল’ কবিতায় কবি ও পাঠক একত্রে উপলব্ধি করেন সময়ের ক্রম মাত্র তিনটি তালে বাঁধা। অন্যরা যখন মদ খেয়ে মাতাল হয়, ‘কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল’।
খেলা
যারা আমাকে অপমান করেছে
যারা আমাকে ভুল বুঝেছে
এমনকী যারা আমাকে ভুল বুঝিয়েছে
সবাই আজ একসঙ্গে এসে বসেছে গ্যালারিতে
কোন্ খেলা এবার খেলব তারা দেখবে।
কিন্তু
মাঠের ঠিক মাঝখানে
হঠাৎ আমার খুব ঘুম পেয়ে যায়
রেফারির বাঁশিবাজানো আর ওদের হো হো শব্দের মধ্য দিয়ে
যেন একটা সরু নদীর ওপর
হালকা হয়ে ভাসতে থাকে আমার শরীর।
এ কবিতায় স্পষ্টতই একজন মানুষের ‘খেলা’-র উপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে সেইসব মানুষেরা, যারা তার জীবন অতিষ্ঠ করেছে একসময়। সেই মানুষটির হঠাৎ ‘খুব ঘুম পেয়ে যায়/রেফারির বাঁশি বাজানো আর ওদের হোহো শব্দের’ মধ্যে। এ মানুষটি আপনি হতেই পারেন কিংবা আমি—সর্বত্র সর্বক্ষণ উপস্থিত সমাজের নজরে, কিংবা হতে পারেন একজন কবিও, সমালোচকদের চাপে, অধিকতর এবং উন্নততর সৃষ্টির দাবিতে যাঁর সৃজনশীলতা শেষ হয়ে যায়।
একেবারে শেষের দিকে এসে, ‘যা ঘটবার ঘটতে থাকে’ কবিতায় কবি যেন শত প্রতিবাদের পরেও কিছুই পরিবর্তিত না হওয়ায়, দুনিয়া যেমন চলছিল তেমনই চলতে থাকায় আমাদের হস্তক্ষেপের নিরর্থকতা তুলে ধরেন।
শঙ্খ ঘোষের কবিতা ব্যক্তিগত ও সামাজিকের মধ্যে এক চমৎকার সামঞ্জস্য সাধন করে। তা করতে কবি প্রায়শই ব্যবহার করেন প্রকৃতি থেকে আহরিত উপাদান। তাঁর কবিতা মৌলিক ভাবে লিরিকধর্মী ও সর্বদাই গভীর অনুধ্যানের পথরেখা অনুসারী, এমনকি তাঁর যে কবিতাগুলিতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা পরিস্থিতির রূপে নানা আখ্যান সুপ্ত থাকে, সেগুলিতেও। এ কবিতা হৃদয় থেকে উৎসারিত। এ কবিতা আমাদের মুগ্ধ করে, ব্যথিত করে, যে জীবন আমরা কাটাচ্ছি তা নিয়ে ভাবতে প্ররোচিত করে। কিন্তু এ কবিতা কদাচ উচ্চকিত নয়, কর্কশ নয়।
কে সচ্চিদানন্দন কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক ও তরজমাকার। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, কেরালা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত। পেশায় ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক।
ইংরেজি থেকে বাংলায় তরজমা : নীলাঞ্জন হাজরা
শঙ্খ ঘোষের স্কেচটি এঁকেছেন হিরণ মিত্র।
শঙ্খ ঘোষের ছবি সৌজন্য সন্দীপন চক্রবর্তী ও ফেসবুকের ‘শঙ্খ ঘোষ পেজ’
সম্পাদনা : নীলাঞ্জন হাজরা