স্টিফেন হকিং এর কোনো বই পড়তে গেলেই বোঝা যায় যে উনি একজন দুর্দান্ত শিক্ষক। ওঁর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম পড়তে গিয়েই সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। কোনো জটিলতম বিজ্ঞানের তত্ত্বকে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা,সরস পরিবেশন এবং অন্তর্দৃষ্টি—এসবই তাঁর সম্পদ। মৃত্যুর আগে লিখিত সর্বশেষ বই ব্রিফ আনসারস টু দ্য বিগ কোয়েশ্চেনসও তার ব্যতিক্রম নয়। দু একটি দুরূহতম জায়গা ছাড়া প্রায় সবটাই সাধারণ পাঠকের বোধগম্যতার ভিতর নিয়ে আসতে পারেন তিনি। সাধে কি আর ব্রিফ হিস্ট্রি বেস্ট সেলার হয়েছিল।
এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ইজ দেয়ার আ গড? এটা কিন্তু এখানে কোনো অস্তিত্ববাদী প্রশ্ন নয়, একজন বিজ্ঞানীর প্রশ্ন এবং খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। যে বিজ্ঞানী পদার্থবিদ্যা, ব্রহ্মাণ্ডতত্ত্ব এবং মানবপ্রজাতির ভবিষ্যৎ ভাবনায় ব্যাপৃত, যার গবেষণার বিষয় সৃষ্টিতত্ত্ব তিনি যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্নমুখর হবেন সেটাই স্বাভাবিক এবং বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর স্বধর্মে স্বনিষ্ঠ থেকেই তাঁকে এ নিয়ে ভাবতে হবে। সেই ভাবনারই কিছু ফসল ধরা আছে এই লেখার কিছু অংশে। বিধিসম্মত সতর্কীকরণের মত তিনি অবশ্য প্রথমে বলে নিয়েছেন যে কোনো আস্তিকের বিশ্বাসে আঘাত করার উদ্দেশ্য তাঁর নেই। তারপরই অবশ্য জগৎসৃষ্টির কারণ হিসেবে ঈশ্বর নামক প্রকল্পটির যে কোনো প্রয়োজন নেই সে কথা প্রতিপাদন করতে চেয়েছেন। অবশ্য এরকম যে তাঁর কোনো উদ্দেশ্য আছে সেকথা তিনি নিজে স্বীকার করেন নি। তাঁর ভাষায়’ঈশ্বরের ওপর আমার কোনো ঝাল মেটানোর ব্যাপার নেই। আমার কাজের সঙ্গে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমাণ করার কোন সম্পর্ক আছে এমন ধারনাও আমি দিতে চাই না। আমার কাজ হল আমাদের চারপাশের ব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার জন্য একটা যৌক্তিক কাঠামো তৈরী করা। ‘
যদি আমরা বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি তাহলে আমাকে মানতেই হবে যে প্রকৃতিতে কিছু নিয়ম আছে যেগুলি নিত্য মান্যতা পায়। এখন আমি ভাবতে পারি যে এই নিয়মগুলোই ঈশ্বরের সৃষ্টি। কিন্তু হকিং এর মতে এটা ঈশ্বরের সংজ্ঞা হল কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ নয়। এই প্রাকৃতিক নিয়মগুলি কিন্তু অনড়,অলংঘনীয় এবং সর্বজনীন। ঈশ্বর যদি এই নিয়মগুলির স্রষ্টাও হন তবু এগুলিকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা বা স্বাধীনতা তারও নেই। কারণ তাহলে আর সেগুলি নিয়ম থাকে না। তাহলে ঈশ্বরের জন্য পড়ে থাকে ব্রহ্মাণ্ডর আদি অবস্থাকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। কিন্তু সেখানেও যদি প্রাকৃতিক নিয়ম থাকে(যেটা আছে বলেই হকিং এর মনে হচ্ছে) তাহলে ঈশ্বরের আর কোনো স্বাধীনতাই থাকে না।
ম্যাটার,এনার্জি আর স্পেস। এর মধ্যে ভর আর শক্তিকে সমতুল্য ধরে নিলে স্পেস আর এনার্জি দিয়েই ব্রহ্মাণ্ড গড়ে উঠতে পারে। আর এ দুটোর সৃষ্টি মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং এর সময়। মহাবিস্ফোরণের সময় থেকেই স্পেস ফুলে চলেছে বেলুনের মত। কিন্তু এই স্পেস আর এনার্জি এলো কোথা থেকে? অনেকে বলবেন এখানেই ঈশ্বরের ভূমিকা। তিনিই এই স্পেস আর এনার্জির সৃষ্টিকর্তা। এখন বিজ্ঞানী হিসেবে হকিং দেখতে চান, স্বাভাবিকভাবেই, যে এটাই কি একমাত্র ব্যাখ্যা সৃষ্টিতত্ত্বর?
হকিংএর মতে অবশ্য এই বিপুল বিশাল ব্রহ্মাণ্ড, এই বিপুল এনার্জি আর স্পেস স্বয়ম্ভূ হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম দাবি করছে এক ঋণাত্মক শক্তির অস্তিত্ব যা এই রহস্যের চাবিকাঠি তুলে দিতে পারে আমাদের হাতে। হকিং এখানে একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কল্পনা করা যাক একজন মানুষ একটা সমতল জমির ওপর একটা পাহাড় নির্মাণের চেষ্টা করছে। ধরা যাক পাহাড়টাই এখানে ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিনিধিত্ব করছে। পাহাড়টা তৈরীর জন্য লোকটা মাটিতে গর্ত করছে আর সেই মাটি দিয়েই পাহাড়টা তৈরী করছে। তাহলে সে শুধু একটা পাহাড় তৈরী করছে তাই নয়, একটা গর্তও তৈরী করছে আর ঐ গর্তটা হচ্ছে ঐ পাহাড়ের একটা ঋণাত্মক সংস্করণ। যেটা ছিল গর্ত, সেটাই হল পাহাড়,এভাবেও বলা যেতে পারে। সৃষ্টির আদিতে এই সূত্রই ক্রিয়াশীল ছিল। মহাবিস্ফোরণে যখন প্রচুর ধনাত্মক এনার্জি তৈরী হয় একই সঙ্গে তা সমপরিমাণ ঋণাত্মক এনার্জি তৈরী করেছিল। এখন প্রশ্ন সেই নেগেটিভ এনার্জি গেলো কোথায়? শুনতে অবাক লাগলেও তা আছে ব্রহ্মাণ্ড নির্মাণের তৃতীয় উপাদান অর্থাৎ স্পেসে। বিজ্ঞানের প্রাচীন সূত্রগুলোর অন্যতম মহাকর্ষ আর গতিবিদ্যা সংক্রান্ত সূত্রগুলো থেকেই আমরা পাই যে স্পেস হচ্ছে এই ঋণাত্মক এনার্জির বিপুল ভাণ্ডার। কোটি কোটি গ্যালাক্সির সীমাহীন জাল যার মধ্যে পারস্পরিক মহাকর্ষ বল কাজ করে চলেছে, তা এক বিরাট স্টোরেজ ডিভাইসের কাজ করে চলেছে। যে ধনাত্মক দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে ভর ও শক্তি। সেটাকেই ধরে নিন পাহাড়। আর তার সাপেক্ষে যে গহ্বরটি খোঁড়া হয়েছে বা বস্তুসমূহের যে ঋণাত্মক দিক তাই ছড়িয়ে আছে স্পেস জুড়ে। তাহলে যোগবিয়োগের নীট ফল যদি হয় শূণ্য তাহলে ঈশ্বরের ভূমিকারও আর কোনো দরকার থাকে না। কিন্তু তাও প্রশ্ন থাকে এই মহাবিস্ফোরণটা ঘটালো কে?আর এই কারণের কারণ খুঁজতে খুঁজতে আমরা ঈশ্বরকল্পনায় পৌঁছে যাই। কিন্তু মহাবিস্ফোরণের আগে সময়ের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। অর্থাৎ একটি কার্যের কারণ হিসেবে উপস্থিতির কোনো উৎস ছিল না। কারণহীন সেই ঘটনাই বিগ ব্যাং যা নিজে নিজেই ঘটতে পারে। তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করা স্টিফেন হকিংএর মতে অর্থহীন।
সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় পদার্থবিদদের একটা প্রধান পর্যালোচনার বিষয় হল সময়। আর একটা সময় পর্যন্ত দার্শনিকদেরও এটা মাথাব্যাথার কারণ ছিল ভীষণভাবে। তাই হকিংএর আলোচনায় দার্শনিকদের কথা চলে আসে মাঝে মাঝে। তিনি তো বলে দিলেন বিগ ব্যাংএর আগে সময়ের অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু এই সময় অসময়ের বৃত্তান্তের ্দার্শনিক তাৎপর্য কী? অ্যারিস্টটল যেমন ভাবতেন ব্রহ্মাণ্ড চিরকালই এরকমটাই ছিল। কারণ নির্মিত কিছুর চেয়ে চিরায়ত কিছুর নিঁখুত হবার সুযোগ বেশি। যদি ব্রহ্মাণ্ড চিরকালই থাকে তাহলে আর ঈশ্বরকে আলাদা করে তাকে সক্রিয় করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে হয় না। বিপরীতপক্ষে যাঁরা বলেছেন ব্রহ্মাণ্ডের একটা শুরু ছিল তাঁরা প্রথম কারণ বা প্রথম চালক হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে এটাকে একটা যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন।
ব্রহ্মাণ্ডের শুরু ছিল বলে যদি ধরে নিই তাহলে প্রশ্ন ওঠে ঈশ্বর সেই শুরুর আগে কী করছিলেন? জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের কাছে এটা খুব জরূরী প্রশ্ন ছিল। যদি ব্রহ্মাণ্ডের শুরুই থাকবে, তাহলে শুরুর আগে তাকে শুরু হওয়ার জন্য কেন অনন্ত কাল অপেক্ষা করতে হল? আবার ব্রহ্মাণ্ড যদি চিরকাল থেকেই থাকবে তাহলে বর্তমান অবস্থায় আসার জন্য কেন তাকে অনন্ত সময় নিতে হল? এই প্রথম থিসিস আর দ্বিতীয় অ্যান্টিথিসিস দিয়ে কান্ট পরম সময়ের ধারণায় পৌঁছেছিলেন। তার মানে কোনো ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব ব্যতিরেকেই অনন্ত অতীত থেকে অনন্ত ভবিষ্যতের দিকে সময় ধাবিত হয়।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব স্থান ও কালের পরম ধারণার অবসান ঘটায়। স্থান ও কালকে একমাত্র ব্রহ্মাণ্ডের সাপেক্ষেই সংজ্ঞায়িত করা যায়। করা যায় ভর ও শক্তির সাপেক্ষে। সুতরাং ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে সময় সম্পর্কে আলোচনাই অর্থহীন। এটা ওই দক্ষিণ মেরুর পরেও দক্ষিণতম বিন্দু খোঁজার মত। যা অসংজ্ঞেয়। কিন্তু সৃষ্টির মুহূর্তে আপেক্ষিকতার তত্ত্বও ভেঙ্গে পড়ে। তাহলে কেন বা কিভাবে হল বিগ ব্যাং তা কি বিজ্ঞানের আওতার বাইরে? হকিং তা মনে করেন না। তার আগে বলা দরকার মহাবিস্ফোরণের কি প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। ১৯৬৫ সালে সমস্ত স্পেস জুড়ে মাইক্রোওয়েভের হালকা এক অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। আমরা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যে তরঙ্গ পাই সেটা একই কিন্তু প্রকৃতিরটা খুব দুর্বল। মানে আপনি ওই তরঙ্গ দিয়ে পিৎজা গরম করতে গেলে সেটা মাইনাস ২৭০.৪ ডিগ্রী পর্যন্ত গরম করা যাবে। আমাদের মধ্যে যাদের বয়স ৫০এর কাছে বা ছাড়িয়েছে তারা অ্যানালগ টেলিভিসনে যখন খালি চ্যানেলে টিভি সেট করেছি তখন যে ঝিরঝির করতে দেখেছি তার একটা অংশ ওই মাইক্রোওয়েভ। আদি,উত্তপ্ত এবং ঘন বিশ্বের বিকিরণ এটা যা ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণের সঙ্গে ঠান্ডা হয়ে এসেছে এবং যার হালকা অবশেষ আমরা টের পাচ্ছি।
১৯২৭ সালে হাইজেনবার্গের অনিয়শ্চয়তা তত্ত্ব হাজির হলে আইনস্টাইন তা মানতে পারেন নি। তাই তাঁর বিখ্যাত উক্তি’’ ঈশ্বর পাশা খেলেন না”। কিন্তু হকিং বলেন,ঈশ্বর পাশা শুধু খেলেন না,তিনি একজন বিরাট জুয়াড়ি। ব্রহ্মাণ্ডটা একটা বিরাট ক্যাসিনো, যেখানে প্রতি মুহূর্তে পাশার দান পড়ছে বা চাকা ঘোরানো হচ্ছে। এদিকে আগেই বলা হয়েছে যে বিগ ব্যাং এর সময় আপেক্ষিকতার তত্ত্ব খাটে না। তাই সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্বের সঙ্গে অনিশ্চয়তার সূত্রকে মেলানো খুব দরকার যে চেষ্টা ত্রিশ বছর ধরে চলছে এবং চূড়ান্ত সাফল্য না এলেও যে ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি ঘটানো গেছে। এরই সঙ্গে চলছে আপেক্ষিকতার তত্বের সঙ্গে রিচার্ড ফেইনম্যানের সম্ভাব্য ইতিহাসের তত্ত্বকে মেলানোর চেষ্টা। এতেই শেষ নয় আদি অবস্থাকে জানার জন্য আমাদের বাউণ্ডারি কনডিশনটাও বুঝতে হবে যা আসলে ব্রহ্মাণ্ডের সীমান্তকে বোঝা বা স্থান কালের সীমাকে। হকিং এবং আরো দুজন বিজ্ঞানীর প্রকল্প অনুসারে ব্রহ্মাণ্ডের স্থান কালের কোনো সীমা নেই। তাহলে মনে হতেই পারে হকিং তো এবার নিজের বিরুদ্ধাচরণ করছেন। তিনিই তো বলেছেন ব্রহ্মাণ্ডের একটা শুরু আছে, তাই সময়েরও আছে শুরু। কিন্তু এখানে একটা গল্প আছে। এই ‘ নো বাউন্ডারি’ প্রস্তাবটা তাঁরা দিয়েছেন কাল্পনিক সময়ে। তাতে বাউণ্ডারি কনডিশন খোঁজার দায় থেকে তাঁরা অব্যাহতি পেয়েছেন। এটার নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘নো বাউণ্ডারি প্রপোজাল’। ব্রহ্মাণ্ডের বাউণ্ডারি কনডিশন যদি এটাই হয় যে কাল্পনিক সময়ে তার কোনো বাউণ্ডারি কনডিশন নেই, তখন তার আর একটামাত্র ইতিহাস থাকে না। কাল্পনিক সময়ে তার হয়ে যায় বহু ইতিহাস এবং তাদের প্রতিটি তখন বাস্তব সময়ে একটি করে ইতিহাসকে নির্ধারণ করে। এই অনেকগুলি সম্ভাব্য ইতিহাসের মধ্যে যে বিশেষ ইতিহাসের মধ্যে আমরা আছি তাকে তখন খুঁজে বের করতে হবে। এর মধ্যে আমাদের সেই সাবসেটটি বেছে নিতে হবে যেগুলিতে নক্ষত্র এবং ছায়াপথ আছে, আছে বুদ্ধিমান অস্তিত্বের বিকাশের সম্ভাবনা(তা মানুষ না হলেও হবে)। আর যেটা লাগবে সেটা হচ্ছে জগতের ত্রিমাত্রিকতা। হকিংরা একটা তত্বের প্রস্তাবনা করেছেন যা এম থিয়োরি নামে খ্যাত। এই তত্বে এগারোটা ডাইমেনশন আছে যার দশটা হচ্ছে স্পেস আর একটা টাইম। এখন স্পেসের তিনটে বাদে বাকি ডাইমেনশনগুলো আমাদের চোখে পড়ে না কারণ সেগুলি ক্ষুদ্র এবং বক্র। যেমন একটা পানীয় খাবার স্ট্র আসলে দ্বিমাত্রিক, কিন্তু একটু দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে একমাত্রিক একটি রেখা। হকিং এরপর ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন কেন বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য ত্রিমাত্রিক অস্তিত্বই দরকার। শুধু তাই নয় গ্রহগুলি যাতে সুস্থিত কক্ষপথ পায় তার জন্যও এই ত্রিমাত্রিকতা দরকার। এই সম্ভাব্যতার সূত্র থেকেই অ্যান্থ্রোপিক প্রিন্সিপলের জন্ম যা সৃষ্টিতত্বের ব্যাখ্যায় গুরুত্বপূর্ণ।
এখন যে মাইক্রোওয়েভ প্রেক্ষাপটের কথা আগে আমরা আলোচনা করেছি তা স্পেসের সর্বত্র প্রায় সমান ভাবে ছড়ানো। আগেই বলেছি এই মাইক্রোওয়েভ হল বিগ ব্যাং এর প্রত্নস্বাক্ষর। কিন্তু যে সমতার সঙ্গে এই বিকিরণ ছড়ানো তা প্রমাণ করে আদি দশাতে ব্রহ্মাণ্ডের ভীষণ দ্রুত প্রসারণ। কিন্তু তা সত্বেও বিভিন্ন দিকে একটু হলেও(এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ) পার্থক্য আছে বৈকি। এই পার্থক্যটা কেন হল? ১৯৮২ সালে লেখা একটি পেপারে হকিং বলেছিলেন যে প্রসারণশীল অবস্থায় কোয়ান্টাম বিক্ষেপের ফলে এই পার্থক্য। অনিশ্চয়তার সূত্র অনুসারে এই কোয়ান্টাম বিক্ষেপ ঘটে। উপরন্তু, এই বিক্ষেপগুলিই আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের বীজঃছায়াপথ, নক্ষত্র সমেত আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডের। ১৯৯৩ সালে কোবে উপগ্রহ মাইক্রোওয়েভের এই বিক্ষেপ লক্ষ্য করে। ইতিমধ্যে কেম্ব্রিজে এক কনফারেন্সে হকিং দেখিয়েছেন ঘনত্বর পার্থক্য কীভাবে ছায়াপথ ইত্যাদির জন্ম দিতে পারে। ব্রহ্মাণ্ডের যে অংশে সামান্য উচ্চ ঘনত্ব সেখানে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ সেই অঞ্চলের প্রসারণকে কমিয়ে দিতে পারে যা শেষাবধি ছায়াপথ এবং নক্ষত্রের মধ্যে কোলাপ্স করতে পারে। ২০০৩ সালে WMAP উপগ্রহ মহাজাগতিক মাইক্রোতরঙ্গ আকাশের এক চমৎকার মানচিত্র তৈরী করেছে। এর দিকে ভালো করে তাকালে আমরা হয়ত আমাদের সৃষ্টির আদিকে দেখতে পাবো। আমরা আদি ব্রহ্মাণ্ডের কোয়ান্টাম বিক্ষেপের ফসল। ঈশ্বর সত্যিই পাশা খেলেন।