ইউভাল নোয়াহ হারারির দুটি বিখ্যাত বই 'স্যাপিয়েন্স' এবং 'হোমো দিউস' যথাক্রমে মানবসভ্যতার ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের ওপর আধারিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বই 'টুয়েন্টি ওয়ান লেসন্স ফর দা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি'তে তিনি বর্তমান এবং নিকট ভবিষ্যতের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি তাঁর মতামতের একটা সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করব কয়েকটি পর্বে।
১৯৩৮ সাল। মানবজাতির সামনে তিনটে আখ্যান – ফ্যাসিবাদ, কম্যুনিজম, উদারবাদ। এই উদারবাদ মানে অবশ্য এখনকার বাম ঘেঁষা লিবারাল নয়। এর মানে মুক্ত বাজার, মুক্ত সংসদীয় গণতন্ত্র এবং স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম। বাস্তবে কোথায় কতটুকু কী ছিল সেটা আলাদা আলোচনার বিষয়। কিন্তু গল্পটা মোটামুটি তিন ধরণের। ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের পর থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত দুটো গল্প, কম্যুনিজম বনাম উদারবাদ। সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে একটাই গল্প উদারবাদ। ২০০৮ সালে মহা মন্দার পর থেকে সেই গল্পটারও ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া। ট্রাম্প জেতার পর ষোলোকলা পূর্ণ। আর কোনো গল্পই নেই। লিবারাল ডেমোক্রেসির সব মূল্যবোধও ধূলায় লুটাচ্ছে- ট্রাম্প, পুতিন, এরদোগান, নেতানিয়াহু, মোদি। জমে ক্ষীর একেবারে। উদারবাদের কাছে উত্তর নেই দুটি বড় সমস্যার- পরিবেশগত বিপর্যয় ও প্রযুক্তিগত বিচলন। পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে অনেক আলোচনা শুনে আমরা এটুকু বুঝেছি যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলেও তাতে পরিবেশগত বিপর্যয় আটকাবে না, বরং সেই বৃদ্ধিই এই বিপর্যয়ের কারণ। কিন্তু প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা তুলনায় কম সচেতন। কারণ কৃত্রিম মেধা এবং জৈবপ্রযুক্তির সম্মেলনে যে সম্ভাবনা বড় হয়ে উঠছে তা হল- গণ কর্মহীনতা। কৃত্রিম মেধা বিপ্লব কম্পিউটারকে আরো ‘ফাস্ট আর স্মার্ট’ বানাচ্ছে এমনটা নয়, মানুষের মেধা সত্বের অনেক দখলদারিতে ভাগ বসাচ্ছে। যেমন ধরা যাক আমাদের বহু গর্বের ‘ইনটিউশন’ বস্তুটি। ওটি কোনো স্বাধীন ইচ্ছার ফসল নয়, কোটি কোটি নিউরনের সেকেন্ডের ভগ্নাংশে করা হিসেবের ফসল। তাই ভাল ড্রাইভার, ব্যাংকার বা উকিলরা বাস্তবে যেটা করেন তা হল ‘প্যাটার্ন রেকগনিশন’। এরপরও তাঁরা যে ভুল করেন না তা নয় কারণ তাঁদের মস্তিষ্কের কলন বিধি (Algorithm) বহু প্রাচীন এবং নিয়ত পরিবর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সবসময় উপযোগী হয়ে উঠতে পারে না। অর্থাৎ এই ইনটিউশনের ক্ষেত্রেও উন্নততর কলন বিধির মাধ্যমে কৃত্রিম মেধা মানুষকে পেছনে ফেলে দিতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয় অন্যের ইনটিউশন নিখুঁতভাবে বোঝা। একজন ড্রাইভার আরেকজন ড্রাইভারের গতিবিধি অনুমান করতে পারে মাত্র। কিন্তু কৃত্রিম মেধার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক সংযুক্তির ফলে সেটা নিখুঁত হওয়া সম্ভব। তাই মানুষ চালকের তুলনায় এ আই চালিত চালকহীন গাড়ির দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য (মানে চালকের চাকরি এবং গাড়ি বীমা দুটোরই সংকট)। শুধু ইনটিউশনই নয়, মানুষের আবেগ এবং কামনাগুলি যদি জৈব-রাসায়নিক কলন বিধি ছাড়া কিছু না হয় তাহলে কম্পিউটার সেগুলিকে উদ্ধার করতে পারবে না ভাবার কোনো কারণ নেই, হয়ত আরো ভাল ভাবে পারবে। নেটওয়ার্ক ছাড়াও মানুষের তুলনায় কম্পিউটারের দ্বিতীয় যে সুবিধা আছে তা হল আপডেবিলিটি। পৃথিবীর কোথাও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো অগ্রগতি বা আবিষ্কার হলে সেটা পৃথিবীর সব ডাক্তারকে আপডেট করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী দশ কোটি এ আই ডক্টরকে সেটা নিমেষের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব। এতে আগামী দিনে আরো উন্নত এবং সস্তা চিকিৎসাব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এই মুহূর্তে কলকাতাতেই অ্যাপোলো হাসপাতালে কৃত্রিম মেধা ভিত্তিক আই বি এম কোম্পানির সফটওয়ার ওয়াটসন ক্যান্সার চিকিৎসায় লাগানো হচ্ছে। জেনে রাখুন ওয়াটসন সেকেন্ডে ৫০০ জিবি অর্থাৎ দশ লক্ষ ডাক্তারি বই বা জার্নাল প্রসেস করে রোগের সনাক্তকরণ বা চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। তার সঙ্গে মানুষের স্বাভাবিক ভাষা (সাধারণ কম্পিউটারের বাইনারি ভাষা নয়) বা ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এ অনেকটাই দক্ষ ওয়াটসন। তার মানে ডাক্তারের পেশা আর থাকবে না তা নয়। মানুষের মায়া-মমতা, সেবা-যত্ন যেখানে বেশি লাগে, যেমন নার্সের চাকরি সেখানে একটা চাহিদা থাকবেই, কিন্তু কোনো জীবিকাই আর নিরাপদ থাকবে না। এমনকি শিল্পীর অনেক কাজও। মানে সৃষ্টিশীল শিল্পের কাজ হয়ত অ্যালগরিদম দিয়ে হবে না। কিন্তু বাজার সফল কিছুটা ফর্মুলা ভিত্তিক বিনোদন শিল্পের কাজ বেশ ভালই হবে, যেমন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে। তারই মধ্যে ব্যক্তিগত রুচি অনুযায়ী নানা কাস্টমাইজেশন করা যাবে সহজেই। এমন নয় যে নতুন কাজ কিছুই তৈরি হবে না। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তার চরিত্র পাল্টাচ্ছে আর পালটাবে যে খুব কম সংখ্যক মানুষের সেই কাজ করার প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকবে, আর এত ঘন ঘন পেশার চরিত্র পাল্টাতে হবে যে মানুষ সে দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে। তাই শেষ পর্যন্ত একটা বিরাট শ্রেণীর উদ্ভব হতে পারে যারা গঠন করবে ‘ইউজলেস ক্লাস’। এদের জন্যই সর্বজনীন মৌলিক আয় (universal basic income) ইত্যাদির কথা ভাবতে আরম্ভ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এদের লড়াইটা শোষণের বিরুদ্ধে হবে না, হবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার বিরুদ্ধে। কারণ যে মানুষের অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই তার আঘাত করার ক্ষমতাও থাকে না।
তার মানে কি, এইসবই হবে, এই ছক মেনেই? না, সেকথা হারারি বলছেন না। কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি রূপায়ণের গতিকে প্রয়োজনে শ্লথ করতে পারে। কিন্তু হবে না, সেকথাও বলা যাবে না। কারণ, প্রযুক্তির গতিকে অর্থনীতির স্বার্থে দীর্ঘদিন আটকে রাখা মুশকিল। সেইজন্য বেশ কিছু কাজ যে অবলুপ্ত হবে সেকথা চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়। তাই কিছু সরকার, ইয়োরোপে, নীতি নিয়েছে, ‘কর্মীকে রক্ষা কর, কাজকে নয়’। সেখানে বাতিল কর্মীদের নতুন প্রযুক্তিতে শিক্ষিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। সে না হয় হল, তৃতীয় বিশ্বে এর ফল কী হবে সেকথা ভাবলে থই পাওয়া মুশকিল। এমনিতে যদি অর্থনৈতিক সু-রক্ষাকবচ থাকে, সবল কম্যুনিটি থাকে (জুকারবার্গ বলেছেন এটা আগামী দিনে তাঁদের অগ্রাধিকার) এবং অর্থ বহুল শখ আহ্লাদ থাকে, তাহলে কাজ না থাকাটা খুব একটা খারাপ কিছু না। ধরুন, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার হওয়া, কারো জীবনে কোনো অর্থযুক্ত করে না। তবু সেইসব অর্থহীন কাজেই তো আমরা কাটিয়ে দিই জীবন। কিন্তু সর্বজনীন, মৌলিক- এগুলির মাপকাঠি ঠিক করবে কে? ঠিক করলেও তা দিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর তো হবে না, আরো বেড়ে যেতে পারে। তারপর কম জনসংখ্যার ইয়োরোপ যা করতে পারবে সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশে তার কতটুকু করা যাবে সে সংশয় আছে। আবার রয়েছে ডিজিটাল স্বৈরতন্ত্রের ভয়। এর আগে কেন্দ্রীভূত শাসনের সঙ্গে তুলনায় বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার একটা সুবিধা ছিল। কেন্দ্রীভূত এক-নায়কত্বের কাছে তথ্যের ঘাটতি থাকত, ভ্রান্তি থাকত বেশি। কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থায় একনায়কদের বা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছেই যাবতীয় প্রায় অভ্রান্ত তথ্যের ভাণ্ডার থাকতে পারে। ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের ২৫ লক্ষ অধিবাসীর প্রতিটি ডিজিটাল হস্ত চালনকে এভাবেই খুঁটিয়ে দেখে, এখনই। আগামী দিনে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা হবে কীভাবে?
জাতীয়তাবাদ, ধর্ম এবং নিকট ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ: হারারি ভাষ্য
পরিবেশগত বা প্রযুক্তিগত বিপদের সম্ভাবনাকে মোকাবিলা করবে কে? এর জন্য তো একটা আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া লাগবে। কিন্তু এই সময়েই আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন থেকে শুরু করে চীন, ভারত, তুরস্ক- সব জায়গায় শুরু হয়েছে জাতীয়তাবাদী বিচ্ছিন্নতার জয়গান। ঐতিহাসিক হিসেবে ইউভাল নোয়াহ হারারি এটা বলতে বাধ্য যে জাতীয়তাবাদের ইতিহাস মানবসভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসের সাপেক্ষে নেহাতই অর্বাচীন। ধরুন আপনি কতজন স্বদেশবাসীকে ভাল করে চেনেন? মেরে কেটে শ-দেড়েক? অথচ আপনাকে ১২১ কোটি মানুষ, যাদের সঙ্গে আপনার জীবনে দেখা হবে না, তাদের সঙ্গে এক ‘অচ্ছেদ্য বন্ধন’ কল্পনা করে নিতে হবে। আর এই কল্পনাকে জোরদার করার জন্য রাষ্ট্রকে চালাতে হবে এক বিরাট ব্যবস্থা- শিক্ষা, প্রচার, পতাকা, জাতীয় প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ আরো কত কী!
তার মানে হারারি জাতীয়তাবাদের নিন্দে করছেন এমন নয়। একটা বিশাল ব্যবস্থা গণ আনুগত্য ছাড়া চলতে পারে না। জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমরা সবাই স্বর্গে বাস করতাম এটা ভাবলে ভুল হবে। বরং আমরা গোষ্ঠী সংঘর্ষের মধ্যে বাস করতাম নিশ্চয়। কারণ এই সময়ে দাঁড়িয়ে যে রাষ্ট্রগুলিকে আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করি তার সবগুলিতেই জাতীয়তাবাদী চিন্তার অভাব আছে। আবার যে রাষ্ট্রগুলি এমনকি যুদ্ধে বিধ্বস্ত হবার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে উন্নতি করেছে তারা জাতীয়তাবাদী চিন্তায় প্রেরণা পেয়েছে। মুশকিল হয় যখন নিজের দেশকে অনন্য ভাবার বদলে শ্রেষ্ঠ বা মহত্তম ভেবে নেওয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ আমরা দেখেছি। এখন প্রশ্ন হল যে, একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলোর উত্তর জাতীয়তাবাদের কাছে আছে কী? নেই যে, তা বুঝতে পেরেই বিশ্ব জনমত বলে একটা ব্যাপার গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছিল, গত শতাব্দীতেই, যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক যুদ্ধ আটকানো। সেই কাজে আপাতত সফলতা পাওয়া গেলেও সে আশঙ্কা দূর হয় নি পুরোপুরি। বিশেষত বিশ্বায়নের প্রথম দশার পর যখন “সবার আগে আমার দেশ” এই ধুয়া প্রবল হয়ে উঠছে। এছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চ্যালেঞ্জ যেটা কোনো দেশের পক্ষে এককভাবে সামলানো মুশকিল। পরিবেশের ক্ষেত্রে হাজার হাজার বছর ধরে হোমো স্যাপিয়েন্স সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় ছিল, এখন সে গণ হত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ফলশ্রুতি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত একেবারে দোরগোড়ায় হাজির হয়েছে আমাদের। একটা সময় আসবে যখন কয়লা, তেল আর গ্যাসের ব্যবহার কমিয়েও আর কিছু হবে না। কারণ মেরু বরফ গলতে শুরু করলে পৃথিবী থেকে কম সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে। ফলে পৃথিবী আরো গরম হয়ে আরো বরফ গলবে। সেই তুঙ্গ মুহূর্তটাকে অতিক্রম করার আগেই যা কিছু করার করতে হবে। কিন্তু গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ফসিল ফুয়েল ব্যবহার একদম কমিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে একাধিক দেশ মিলে ম্যানহাটন প্রকল্পের মত ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার। শুধু বিকল্প শক্তির সন্ধান নয়, প্রযুক্তি আরো অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাহায্য করতে পারে। যেমন কৃত্রিম মাংস উৎপাদন। অন্যতম দূষণকারী এই মাংস শিল্প। দু-পাউন্ড গরুর মাংস পাওয়ার জন্য আমাদের চার হাজার গ্যালন জল খরচ করতে হয় যেখানে একই পরিমাণ আলুর জন্য লাগে ৭৫ গ্যালন জল। এখন মানুষকে তো আর মাংস খাওয়া বন্ধ করতে বলা যাবে না। যেটা করা যেতে পারে তা হল, প্রাণীহত্যা না করে মাংস খাওয়া। ২০১৩ সালে কোষ থেকে তৈরি করা মাংস থেকে হ্যামবার্গার তৈরি করে খাওয়া হয়। খরচ পড়ে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। চার বছরের গবেষণায় সেই খরচ নেমে আসে প্রতিটি হ্যামবার্গারে ১১ ডলারে। এক দশকের মধ্যে কাটা মাংসের তুলনায় কম দামে কারখানায় তৈরি মাংস পাওয়া যাবে। পৃথিবী অনেকখানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আসলে অনেক স্তরে অনেক কিছুই করার আছে। কিন্তু গ্লোবাল স্তরে না করতে পারলে কোনো রাষ্ট্র সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও পরিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। যেমন ফসিল ফুয়েলের ওপর যাদের অর্থনীতি নির্ভরশীল সেই দেশগুলি চাইবে না তার ব্যবহার কমুক। আবার রাশিয়ার মত কিছু দেশ বিশ্ব উষ্ণায়নে লাভবানও হতে পারে। আর তাই কি সব দেশের জাতীয়তাবাদী দক্ষিণ-পন্থীরাই মূলত পরিবেশ সমস্যাকে লঘু করে দেখা বা পুরোপুরি উপেক্ষা করার পক্ষে? কারণ একটা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া একে মোকাবিলা করা যাবে না, তা একটি দেশ আলাদা করে যতই পরিবেশ বান্ধব নীতি গ্রহণ করুক না কেন।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। ডিজিটাল এক নায়কত্ব বা গ্লোবাল ইউজলেস ক্লাসের কথা আমরা আগে আলোচনা করেছি। কৃত্রিম মেধা এবং জৈব প্রযুক্তির মিলনে উদ্ভব হতে পারে এমন বিপদগুলির কথাও ইঙ্গিত দিয়েছি। কিন্তু জাতীয়তাবাদের কাছে এসবেরও কোনো উত্তর নেই। ধরুন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে মানব ভ্রূণের ওপর কোনো গবেষণা করা আমেরিকায় নিষিদ্ধ করা হল, কিন্তু চীন সেটা মানবে তার কোনো মানে নেই। এবার সেই গবেষণায় চীন যদি কোনো অর্থনৈতিক বা সামরিক সুবিধা পায়, সেক্ষেত্রে আমেরিকাও সে নিষেধ উঠিয়ে দিয়ে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। শুধু আমেরিকা বা চীন কেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। এটা থামাতে গেলে জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে একটা বিশ্বজনীন আইডেন্টিটি লাগবে। এর জন্য বড় মাপের চিন্তা দরকার। কারণ চারশো কোটি বছরের জৈব প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাল কাটিয়ে কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে আমরা অজৈব, বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন (চেতনা সম্পন্ন নয়, বুদ্ধি আর চেতনা আলাদা) অভিব্যক্তির জগতে প্রবেশ করছি কৃত্রিম মেধার দৌলতে। আমরা ভবিষ্যতে চরম বুদ্ধিমান কিন্তু চেতনারহিত সত্তার দ্বারা শাসিত হতে পারি। ঘটতে পারে শাসক হোমো স্যাপিয়েন্সের বিলুপ্তি। তাই জাতীয়তাবাদ বা জাতীয় সংস্কৃতি থাকলেও কোনো একটা বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। কে দেবে সেই দৃষ্টিভঙ্গি? ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে কি তা পাওয়া যেতে পারে?
হারারি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের তিনটি ভূমিকার কথা আলোচনা করেছেন।
(১) টেকনিকাল
(২) নীতিসংক্রান্ত,
(৩) পরিচিতি সংক্রান্ত।
টেকনিকাল বলতে ধর্মের আদি ভূমিকা যখন কৃষির ফলন বাড়াতে বা রোগ-তাপ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ধর্মের দ্বারস্থ হত। এটা এখন পুরোপুরি কৃষি বা চিকিৎসাবিজ্ঞান দখল করেছে। লোকে মানত টানত করলেও ডাক্তারের কাছে ছোটে, কৃষি আধিকারিকের কথা মন দিয়ে শোনে। নীতিগত ক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা বা অর্থনীতি ধর্মশাস্ত্রের নির্দেশে চালাতে গেলে যে ছড়িয়ে লাট হবে সেটা সব দেশের শাসকরা বোঝে। কারণ বাইবেল, কোরান বা বেদে অর্থনৈতিক নীতি কিছু নেই আর থাকলেও তা যুগোপযোগী নয়। এখন একবিংশ শতাব্দীর বড় প্রশ্নগুলোর মোকাবিলা প্রথাগত ধর্মগুলো কীভাবে করবে? আর যাই করুক না কেন একই ধর্মের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাখ্যাও যে আসবে সেটাও স্বাভাবিক। ধরুন, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রশ্ন। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সরব অথচ আমেরিকান ইভ্যাঞ্জেলিকাল চার্চ পরিবেশ বিধি বেঁধে দেওয়ার বিরুদ্ধে। আসলে ধর্মে এসবের উত্তর নেই। তবে ধর্ম যেটা পারে সেটা হল একটা গণ পরিচিতি তৈরি করা। এই গণ পরিচিতি ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে গণ সহযোগিতা, গণ উদ্যোগ ইত্যাদি। কিন্তু সব গণ পরিচিতি কাল্পনিক আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এর ভিত্তিতেই মানুষ ঠিক করে কে ‘আমরা’ আর কে ‘ওরা’। কাকে আমি ফুল দেব আর কাকে ছুঁড়ব বোমা। কিন্তু বুঝব কি করে, কে কী? তার জন্য দরকার কৃত্য, প্রথা, অনুষ্ঠান। আলাদা পোশাক, প্রার্থনা মন্ত্র, আলাদা ট্যাবু। এই প্রথার অনেকগুলো জীবনকে অপার্থিব সৌন্দর্য দেয়। কতগুলো আবার খারাপ কুশ্রীতা শেখায়। ধরুন, ধর্ম সঞ্জাত নারী বিদ্বেষ বা জাতিপ্রথার পক্ষে কিই বা বলার থাকতে পারে। কিন্তু ভাল হোক আর মন্দ, এই ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো কিছু মানুষকে একত্রিত করে আবার তাদের প্রতিবেশীর থেকে আলাদা করে। আর ধর্ম যত প্রাচীন হোক না কেন তাকে কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তি আর আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় তার অনেক উদাহরণ আছে। তাই বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন সন্তরা থাকলেও বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাব যৎসামান্য। বরং ধর্মের বিভাজক ভূমিকাই বর্তমানে এবং আগামীতে বিশ্ব সমস্যার সমাধানে অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে, কোনো সমাধান সূত্র দেওয়ার বদলে।
ঈশ্বর, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আগামী বিশ্ব: হারারি ভাষ্য
এক ঈশ্বর আছেন যিনি দার্শনিকদের ঈশ্বর। আমরা যখন জীবনের মানে নিয়ে চিন্তা করি, ভাবি কেন সব কিছু আছে যা, না থাকতেও পারত। চেতনা কোথা থেকে আসে, প্রকৃতির সূত্রগুলোকে কে বাঁধল? তখন এই সব ধাঁধার সমাধান হিসেবে আমরা এক ঈশ্বরের কল্পনা করি। আরেক ঈশ্বর আছেন যিনি কঠোর আইন প্রণেতা। এর সম্বন্ধে আমরা আবার খুব বেশি জানি। এই ঈশ্বর ফ্যাশন, খাদ্য, যৌনতা, রাজনীতি সব সম্বন্ধে ভাবেন। এই রাগী পুরুষটিকে আমরা লক্ষ নিয়ম, বিধি, অনুশাসন এবং দ্বন্দ্বের বৈধতা দানের জন্য আবাহন করি। মেয়েরা ছোটো পোশাক পড়বে কিনা, দুজন পুরুষ যৌনসম্পর্কে যাবে কিনা, টিন-এজাররা আত্মরতি করবে কিনা সব নিয়ে তাঁর ভীষণ দুশ্চিন্তা। তিনি নাকি চান না আমরা মদ খাই এমনটাই এক ধর্মের মানুষ বলে। আবার অন্য ধর্মের কিছু মানুষ বলেন যে তিনি চান আমরা শুক্রবার রাতে বা সোমবার সকালে নিয়ম করে ওয়াইনে চুমুক দিই। এই ঈশ্বর হচ্ছেন ক্রুসেডদের, জেহাদিদের, ইনকিউজিটরদের, নারী বিদ্বেষী এবং সমকামী বিদ্বেষীদের। এদের মতটা হল “বিজ্ঞান সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে না, তাই জগত ঈশ্বরের অবদান”। এরপর মহাজাগতিক রহস্য থেকে তারা টুক করে বিধান প্রণেতা ঈশ্বরে নেমে আসে। যেহেতু আমরা বিগ ব্যাং রহস্য ব্যাখ্যা করতে পারিনি তাই আমাদের অমুক অমুক প্রথা মেনে চলতে হবে। আরে, বিশ্ব বিধান যদি ঈশ্বরই তৈরি করে থাকেন তাহলে তিনি কে মাথায় কাপড় দিল, কে কিসের মাংস খেল এসব তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামাবেন? তিনি E = MC2 তৈরি করছেন, ইলেকট্রন, প্রোটনের ভর ঠিক করছেন আবার মেয়েরা বিকিনি পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন সেটা কেমন হাস্যকর না? অনেকে ভয় পান ঈশ্বরের ভয় না থাকলে সমাজ থেকে নৈতিকতা হারিয়ে যাবে। নৈতিকতার মানেটা ঠিকঠাক বুঝলে সে ভয় পাওয়ার কথা নয়। কারণ নৈতিকতা মানে কিছু বিধান মেনে চলা নয়, নৈতিকতা মানে মানুষের যন্ত্রণা কমানোর চেষ্টা করা। তার জন্য যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করার বোধকে অনুশীলন করা দরকার। তার জন্য ঈশ্বরবিশ্বাস আবশ্যিক নয়। আপনি বলতে পারেন, মানুষ নিজের যন্ত্রণা নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে, অন্যের যন্ত্রণা নিয়ে ভাববে কেন যদিনা ঈশ্বর তাকে ভাবতে বলেন। মানুষ কিন্তু ভাবে, কারণ সে সামাজিক জীব। তার সুখ অনেক পরিমাণে অন্য সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।পরিবার, বন্ধু, সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ সুখী হতে পারে না। আর একটা জাগতিক নিয়ম, অন্যকে কষ্ট দিলে তা আমাকেও মানসিক কষ্ট দেবে। খুন, ধর্ষণ, চুরি- এই কাজগুলি করার জন্য যে নেগেটিভ ইমোশন গুলো দরকার হয় (লোভ, হিংসা, রাগ, ঘৃণা) তা আঘাতকারীর শান্তি ও সুস্থিতিকে নষ্ট করে। তবে ধর্ম কি করুণা, দয়া এসবের কথা বলে না? বলে বৈকি। আবার সময়মত হিংসা ও ক্রোধের কথাও বলে। অন্তত ধর্মের অনুগামীরা সেটাই বারবার প্রমাণ করে ছেড়েছেন। তাই নৈতিকতা সম্পন্ন জীবনযাপনের জন্য অন্তত ঈশ্বরের নামগানের প্রয়োজন নেই। সেকুলারিজমই আমাদের প্রয়োজনীয় মূল্যবোধে দীক্ষিত করতে পারে।
হারারি যেটা করেছেন তা হল সেকুলারিজমকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা। আমরা সাধারণভাবে সেকুলারিজমকে শুধু ধর্ম-হীনতা দিয়ে চিহ্নিত করে থাকি। সেকুলাররা ঈশ্বর বা ঠাকুর দেবতা মানে না, উপাসনালয়ে যায় না, রিচ্যুয়াল মানে না। শুধু না, না আর নায়ের যোগফল। হারারি সেকুলারকে দেখেন অনেক বিশ্বাস, অনেক হ্যাঁ-এর সমষ্টি হিসেবে। যেমন আইডেন্টিটি। সেকুলার অনেক আইডেন্টিটির মধ্যে বাঁচে। কিন্তু সেকুলার অবশ্যই সত্য আর বিশ্বাসকে গুলিয়ে ফেলে না। সেকুলার সত্যের ঠিকাদার হিসেবে কোনো গোষ্ঠী, ব্যক্তি বা গ্রন্থকে মেনে নেয় না। এটাকে বলা যায় সত্যের প্রতি তার দায়বদ্ধতা। এই দায়বদ্ধতা থেকেই বিজ্ঞান এগিয়েছে। কিন্তু হারারি সেকুলারদের আরেকটি দায়বদ্ধতা হিসেবে সহমর্মিতাকে চিহ্নিত করলেন। শুধু তাই নয়, সেকুলার হতে গেলে তাকে দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। যেমন আধুনিকতার সুফলগুলি যে মানুষেরই সৃষ্টি সেকথা বুঝলেই শুধু হবে না, আধুনিকতার কুফল যেমন, গণ হত্যা থেকে প্রাকৃতিক দূষণ তার জন্য মানুষ হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে, তার প্রতিকারের কথা ভাবতে হবে।
কিন্তু আধুনিক নাস্তিক্যবাদদের সঙ্গে হারারির বক্তব্যের যেখানে তফাৎ হয়ে যাচ্ছে তা হল, তাঁর মতে ঈশ্বর বিশ্বাসী, প্রথানুসারী, পোষাক-বিধি মেনে চলা মানুষও সেকুলার হতে পারেন যদি সেকুলার মূল্যবোধগুলির সঙ্গে তাঁর বিরোধ না থাকে এবং কোনো বিরোধের ক্ষেত্রে তিনি ধর্মীয় নয়, সেকুলার কোডগুলিকেই মেনে নেন। একই ভাবে সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা বলতে হারারি যেটা বোঝেন সেটা বাচ্চাদের ঈশ্বরে অবিশ্বাস করতে শেখানো বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা নয়। এর মানে তাদের বিশ্বাস আর সত্যের পার্থক্য করতে শেখানো, সব যন্ত্রণা জর্জর সত্তার প্রতি সহমর্মিতার বিকাশ ঘটানো, গোটা পৃথিবীর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে কদর করতে শেখানো, অজানার ভয়কে জয় করে স্বাধীনভাবে ভাবতে এবং নিজের ও সামগ্রিকভাবে বিশ্বের কর্মকাণ্ডের প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে শেখানো। অর্থাৎ এই সেকুলারিজম মানে না নয়, অনেকগুলো হ্যাঁ। এই সংজ্ঞানুসারে অনেক ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষও সেকুলার নন যদি না তাঁরা বাকি মাপকাঠিগুলি পূরণ করেন।
সব ধর্ম, মতাদর্শের একটা ছায়া থাকে। এই ছায়াটাকে স্বীকার করা, তাকে প্রশ্ন করার কথা হারারি বলেন। যীশু এত ভালবাসার কথা বলেছেন কিন্তু ইনকিউজিশন, ক্রুসেড, বিশ্বজুড়ে দেশীয় সংস্কৃতির দমন এসবের দায় কার? খ্রিস্টানরা বলতে পারেন বাইবেলের শিক্ষাকে ভুল বোঝা হয়েছিল কিন্তু সেই শিক্ষা এতটা বিকৃত হওয়ার সুযোগ পায় কী করে এবং এতবার?
প্রটেস্টান্টরা বলবেন, ওসব ক্যাথলিক ফ্যানাটিকদের কীর্তি। তখন ভাবতে হবে আয়ারল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকায় প্রটেস্টান্ট ঔপনিবেশিকতা-বাদীদের কীর্তি। মার্কসবাদীদের ভাবতে হবে মার্কসের শিক্ষা থেকে কী করে গুলাগের উৎপত্তি হয়, বিজ্ঞানীদের ভাবতে হবে বৈজ্ঞানিক প্রকল্প কীভাবে এত সহজে বিশ্ব বাস্তুতন্ত্রকে মায়ের ভোগে পাঠাতে বসল, জিন-বিজ্ঞানীদের মনে রাখতে হবে নাজিরা কীভাবে ডারউইনের তত্ত্বকে হাইজ্যাক করেছিল। এরই মধ্যে ধর্মের তুলনায় বিজ্ঞান কিছুটা এগিয়ে থাকে কারণ সে অন্তত তার ছায়াকে ভয় পায় না, তার অস্তিত্ব, ভ্রান্তিকে স্বীকার করে। ‘আপনার ধর্ম, মতাদর্শ বা বিশ্ব দৃষ্টির সবচেয়ে বড় ভুল কী?’ এই প্রশ্নটি আপনি নিজেই করুন সেটা হারারি চান। আপনি যদি সেরকম কিছু খুঁজে না পান, আপনি নিজেকে ধার্মিক বা সেকুলার যাই ভাবুন না কেন, আপনার ওপর আস্থা রাখা গেল না।
21 lessons for the 21st Century
Yuval Noah Harari
প্রকাশক: Spiegel & Grau, Jonathan Cape
মুদ্রিত মূল্য : ২৯৩ টাকা (পেপারব্যাক)
১৭৮০ টাকা (হার্ডকভার)
প্রাপ্তিস্থান :
অনলাইনে — কলেজস্ট্রীট ডট নেট
বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।