জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।"
৫২ সেকেন্ড গান গেয়ে নিলাম। আইন সদা পরিবর্তনশীল, আজ প্রেক্ষাগৃহে বাধ্যতামূলক হয়েছে, কাল লেখালেখিতেও হতেই পারে। প্রগতিশীল মানুষ যে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কাজ করবে তা বলাইবাহুল্য, তাই, একটু গেয়েই নিলাম। কি আর যায় আসে। ক্ষতি তো কিছুই নেই। হ্যাঁ, "মানতে ক্ষতি কি", এই যুক্তিতেই তো আজকাল সমস্ত বিতর্ক ধামা চাপা পরে যাচ্ছে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি যদি কিছু মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে? হোক না বাধ্যতামূলক, ক্ষতি তো কিছু নেই। মোটের ওপর এইভাবেই শুরু ও শেষ হয় সমস্ত ডান-পন্থী মানুষের যুক্তি। রাষ্ট্রের শাসন মানবে না কোনো? কেনো সব ব্যাপারে প্রশ্ন করবে, এতো কিসের সমস্যা? বাড়িতে বাবার শাসন মানোনা? জানোনা শাসন মানুষ হওয়ার পথে এক অপরিহার্য আনুষাঙ্গিক? কৈ, সিয়াচেনে -৪০ ডিগ্রী গরমে পাহারারত সৈনিকরা তো প্রশ্ন করছে না? তোমার তো সবেতেই সমস্যা, দুনিয়ার কোন রাষ্ট্র পারফেক্ট? এইসব আজকাল যেকোনো আলোচনায় দু-একজন বন্ধুবান্ধব বলেই ফ্যালেন। যেমন কথায় কথায় প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশাত্মবোধে, দেশপ্রেমে, দেশের প্রতি ভালোবাসায়। মৃদুস্বরে ধরুন ভুলবসত বলেই ফেল্লেন, "যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই", ব্যাস, হয়ে গেলেন পাকিস্তান-পন্থী ! হয়ে পড়লেন দেশ-বিরোধী, হ্যাঁ, ওই একটা বাক্যেই একসাথে হয়ে গেলেন, উন্নয়নবিমুখ থেকে এন্টি-ন্যাশনাল হয়ে একদম, জেহাদি অব্দি। তা হোক, ক্ষতি কি? সার্জিকাল স্ট্রাইকে কয়েকটা কল্যাটেরাল ড্যামেজ হয়েই থাকে।
এই লেখা যখন লিখছি, ইন্টারনেট তখন উত্তপ্ত আলোচনায় ব্যস্ত। তিরিশে নভেম্বর, দুহাজার ষোলোর যুগান্তকারী রায়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত শোনানো হবে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি? এতে যখন ক্ষতি কিছু নেই, তাহলে আলোচনাতেও ক্ষতি নেই। মূল আলোচনা শুরু করবার আগে দু-চার বাজে কথা বলে রাখা যেকোনো ভালো লেখার লক্ষণ। যেমন ধরুন, শোনা যায়, চীন-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে, নিয়ম করে জাতীয় সংগীত শোনানো হতো। এই নিয়মের চল নাকি ছিল সত্তর দশকেও। না, এ ধরণের কোনো রায় এর আগে কোনো আদালত না দিয়ে থাকলেও, সরকারবাহাদুর মাঝে মধ্যেই এজাতীয় নীতি বা নিয়ম তৈরি করে থাকে। বস্তুত, এই নীতি নির্ধারণের কাজ সরকারেরই, বা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আইন সভার। নীতি নির্ধারণে কোনো ভুল হচ্ছেনা কিনা, এবং, নির্ধারিত নীতি না মানবার শাস্তি দেয়ার কাজ আদালতের। প্রশাসনের কাজ, চোখ বুঝে নির্ধারিত নীতির প্রয়োগ, এবং প্রয়োগের পথে বাধা এলে, আদালতের সামনে সমর্পন। সফল গণতন্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে বাদ রয়ে গেলো সাংবাদিকতা। যেহেতু রাভিস কুমাররা ক্ষণজন্মা এবং অর্ণব গোস্বামীরাই দাপিয়ে বেড়ান, সেহেতু, আপাতত সাংবাদিকতাকে এই চর্চার বাইরেই রাখলাম। এদের মধ্যে আইন সভা আর আদালতের মধ্যে মাঝে মাঝেই বিবাদ লাগে, দেশ জুড়ে তর্ক ওঠে, "জুডিশিয়াল এক্টিভিসিম" নিয়ে। এই আলোচনা সে নিয়ে নয়। এ আলোচনা আরো নির্দিষ্ট করে, ব্যক্তির জীবন ধরণের অধিকার নিয়ে। মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে, এবং অবশ্যই বিরুদ্ধ মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে। আসুন, বুঝেনি, তিরিশে নভেম্বর, দুহাজার ষোলোর যুগান্তকারী রায় ঠিক কি নিয়ে, আর কোনোই বা তা জরুরি।
ফিরে যেতে হবে, দু হাজার তিন সালে। ফিরে যেতে হবে, বলিউডে। করণ জোহরের "কভি খুশি কভি গম"। চলচ্চিত্রটির একটি দৃশ্যে অভিনেতা শাহরুখ খানের ছেলে, তার ইংল্যান্ডের স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে ভারতের জাতীয় সংগীত গাইতেই, প্রথমে শুধু শাহরুখ খানের পরিবার একমাত্র ভারতীয় হিসেবে উঠে দাঁড়ালেও, আস্তে আস্তে ভারতের জাতীয় সংগীতের সম্মানে উঠে দাঁড়ালেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত দর্শক। কিন্তু উঠলেননা প্রেক্ষাগৃহে বসে থাকা দর্শকেরা। যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জনৈক শ্যাম নারায়ণ চৌকসি। আধ্যাতিক ও ধর্ম-কর্মে ব্যস্ত থাকা এই ভদ্রলোক কেন ও কি কারণে হটাৎ চলচ্চিত্র দেখতে গেছিলেন জানা যায়নি, তবে, জানা গেছে তার রাগ এবং দুঃখের কথা। দুইয়ের কেন্দ্রেই ওই উঠে না দাঁড়ানো দর্শককুল। নিজে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন পেছনে বসা দর্শকদের থেকে, তারপর প্রথমে, প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছে অনুযোগ, তারপর প্রেক্ষাগৃহের বাইরে সত্যাগ্রহ, তারপর পুলিশের কাছে অভিযোগ। এছাড়াও আরো নানান ভাবে তিনি জনসাধারণকে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং সেই চেষ্টায় বিফল হয়ে, শেষে মামলা করেছিলেন, মহামান্য মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে। প্রতিপক্ষ, কেন্দ্রীয় এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারের সাথে সাথে সেন্সর বোর্ড আর চলচ্চিত্রটির প্রযোজকেরাও। যুক্তি ছিল, যেহেতু, ভারতবর্ষের সংবিধানে ও ১৯৭১ সালের ন্যাশনাল অনার এক্টে, জাতীয় সংগীতের অবমাননার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং যেহেতু, জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভ আইনত দণ্ডনীয়, সেহেতু, চলচ্চিত্রর অংশ হিসেবে জাতীয় সংগীতকে রাখা যাবেনা, এবং চলচ্চিত্রটিকে সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে হবে, এই বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া অব্দি। ওনার রিট পিটিশন আদতে ছিল, একটি জনস্বার্থ মামলা।
জাতীয় সংস্কৃতির রক্ষক ও দেশপ্রেমের দায়িত্বে ব্রতী, শ্যাম নারায়ণ চৌকসিকে এচোখেই দেখেছিলেন মহামান্য বিচারপতি দীপক মিশ্র ও এ. কে. শ্রীবাস্তভের ডিভিশন বেঞ্চ। শ্যাম নারায়ণ চৌকসির অভিযোগের উত্তরে সেন্সর বোর্ড জানায়, ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তারা উক্ত চলচ্চিত্রটি দেখেছিলেন, এবং, চলচ্চিত্রটিতে আপত্তিজনক কিছু পাননি। আর, চলচ্চিত্র চলাকালীন দর্শকদের উঠে দাঁড়ানর নির্দেশ দেওয়ার অধিকার যেহেতু সেন্সর বোর্ডের নেই, তাই, তাদের মতে, চলচ্চিত্রটি বিনা বাধায় চলতে দেওয়া উচিত। দর্শক উঠে দাঁড়াবে কিনা, তা দর্শকদের বিচার্য, সেন্সর বোর্ডের না। সব থেকে বেশি, স্বাভাবিক ভাবেই লড়ে গেছিলাম চলচ্চিত্রের প্রযোজকেরা। তারা, ব্যক্তির মত প্রকাশের অধিকার, ছবিতে উপস্থিত কলা-কুশলীদের জাতীয় সংগীত চলাকালীন উঠে দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন, জোর করে সম্মান তৈরি করা যায়না, ব্যক্তিগত পছন্দ এবং অপছন্দ কে রাষ্ট্র বা আদালত কেন গুরুত্ব দেবে, ইত্যাদি নানান প্রশ্ন তুলে ধরে ও শেষে হেরে যায়। কারণ প্রশ্ন তো দেশের সম্মান রক্ষার, জাতীয় সংগীতের অপমান, আসলে তো দেশের অপমান। তাই এতো সহজে মেটেনি ব্যাপারটা। স্বল্প কোথায় বলতে গেলে, মামলার পুরো আলোচনা হয়েছিল, দুটি প্রশ্নের ওপর, এই চলচ্চিত্রে জাতীয় সংগীতের ব্যবহার দ্যাখানো যায় কিনা, এবং দ্যাখালে, দর্শকদের উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক কিনা। বিচারের শেষে মহামান্য বিচারপতিদ্বয় রায় দেন যে, উক্ত চলচ্চিত্রে আর জাতীয় সংগীতের ব্যবহার দ্যাখানো যাবেনা, এবং, যতক্ষণনা অব্দি ওই দৃশ্য উক্ত চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে, ততক্ষন চলচ্চিত্রটি, কোনো প্রেক্ষাগৃহে, টিভি চ্যানেলে, ভিডিও ক্যাসেটে ও লোকাল কেবিলে দেখানো যাবেনা। প্রথম প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তরের ফলে, দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর আর খোজ হয়নি।
চমকে না গিয়ে, উক্ত চলচ্চিত্রটি যেকোনো মাধ্যমে দেখুন, সেই দৃশ্য আজও সমান সম্মান সহকারে দেখানো হয়ে থাকে। কারণ, যথাযথ কারণে, মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ওই রায়কে, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, বাতিল করে দেয় এবং, উক্ত চলচ্চিত্রটি পুনরায় একই ভাবে চলবার অনুমতি পায়।
কিন্তু, চাকা ফিরে আসে, কপালের লিখন খণ্ডানো অসম্ভব, ইত্যাদি ইত্যাদি। তেরো বছর পরে, সুপ্রিম কোর্টে সেই একই শ্যাম নারায়ণ চৌকসির সাথে আবার দ্যাখা হয়ে যায়, মাননীয় বিচারপতি দীপক মিশ্রর। বিষয়ও আবার একই, জাতীয় সংগীতের অবমাননা। কাকতালীয়, নাকি, এক হাতে তালি বাজেনা, সে তর্কে না গিয়েও বলা যায়, ঘটনা হিসেবেই বিরল। তা সে যাই হোক, এবার আর কোনো নির্দিষ্ট চলচ্চিত্র নয়, অন্য কিছু ছোটোখাটো নাম-মাত্র আর্জির সাথে সাথে, সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত প্রদর্শনের আর্জিও ছিল। মামলায় একমাত্র প্রতিপক্ষ হলো কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম শুনানির দিন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদ্বয় জাস্টিস দীপক মিশ্র ও অমিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ, সরকারের বক্তব্য শুনতে চায়, ও সেই মর্মে নির্দেশ দেয়। এর পরেই আসে তিরিশে নভেম্বর, ২০১৬।
তিরিশে নভেম্বর মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলো যে, (১) জাতীয় সংগীতের থেকে ব্যবসায়িক লাভ করা যাবেনা, (২) জাতীয় সংগীত নাটকীয় ভাবে প্রদর্শন করা যাবেনা, (৩) অসম্মান হতে পারে, এমন কোনো ভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়া বা লেখা যাবেনা, (৪) ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত চালাতে হবে, এবং, উপস্থিত দর্শকেরা উঠে দাঁড়াতে বাধিত থাকবে, (৫) জাতীয় সংগীত চলাকালীন যাতে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি না হয় তাই প্রেক্ষাগৃহের দরজা বন্ধ থাকবে, (৬) জাতীয় সংগীত চলাকালীন পর্দায় জাতীয় পতাকার ছবি থাকবে আর, (৭) জাতীয় সংগীতের সংক্ষিপ্ত প্রয়োগ করা যাবেনা।
এই রায় দেয়ার আগে বা পরে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায়ের স্বপক্ষে বিশেষ কোনো কারণ দেখায়নি, বলেছে শুধু একটি কথা। এ দেশের প্রতিটা মানুষের দেশের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত এবং, ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কিত ভিন্নমতের চিন্তাভাবনার কোনো অবকাশ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা মামলার বিষয়ে একটি কথাও না বলে, শুধু রায়টি কার্যকর করবার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছে, আর কিভাবে তাড়াতাড়ি এই রায় কার্যকর করা যায় সেই নিয়ে বক্তব্য জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরো বলা উচিত, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়, যা দুহাজার সতেরো সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী অব্দি বলবৎ থাকবে।
অর্থাৎ, মামলার শুনানি শেষ হওয়ার আগেই, মামলার মূল আর্জি মেনে নেয়া হলো। এরকম হয়েই থাকে, যখন বাদী এবং বিবাদী দুপক্ষই মামলার মূল আর্জির ব্যাপারে সহমত পোষণ করে। বর্তমান পরিস্থিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে, ভিন্ন কোনো আশা, ডান ও বাম নির্বিশেষে, আমাদের কারোরই নেই বলেই আমার বিশ্বাস।
শেষের পরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। এই রায়ের মূল অংশে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, "অল দি সিনেমা হলস ইন ইন্ডিয়া শ্যাল প্লে দি ন্যাশনাল এন্থেম বিফোর দি ফীচার ফিল্ম স্টার্টস এন্ড অল প্রেসেন্ট ইন দি হল আর অবলাইজড টু স্ট্যান্ড আপ টু শো রেস্পেক্ট টু দি ন্যাশনাল এন্থেম"। অর্থাৎ, একই বাক্যে একবার "শ্যাল" আর আরেকবার "অবলাইজড" ব্যবহার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমটি জাতীয় সংগীত প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে এবং দ্বিতীয়টি জাতীয় সংগীত চলাকালীন উঠে দাঁড়ানোর প্রেক্ষিতে। এইখানেই প্রশ্ন থেকে যায়, মহামায় আদালতের কাছে যখন "শ্যাল", "ম্যান্ডাটরিলি", "হ্যাভ টু" জাতীয় নানান শব্দ ব্যবহারে কোনো বাধা ছিলোনা, তখন শুধু "অবলাইজড" কেন, যখন "অবলাইজেড" শব্দের আরো বিবিধ অর্থ যেকোনো অভিধানে সহজলভ্য !
এই ছোট্ট কথাটি বলেই আমার বক্তব্য শেষ করতে পারতাম, কিন্তু, তার সাথে সাথে থেকে যাক কয়েকটা অদরকারি কথা। যেহেতু এই রায় অন্তর্বর্তীকালীন, অর্থাৎ, মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি, সেহেতু, পরবর্তী শুনানির দিন, যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি এই মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন করতে পারেন, চেষ্টা করতে পারেন অন্তরর্তীকালীন এই রায় কে বাতিল করার, যেহেতু কোনো সত্যিকারের বিরোধীপক্ষ মামলায় নেই, সেহেতু, বিরোধী হিসেবে মামলায় যোগদান করা যায়। এ যাবৎ এই বিষয়ে তৈরি হওয়া কোনো আইনেই বিশেষ কিছু স্থান বা ঘটনা ছাড়া বাধ্যতামূলক জাতীয়সংগীতের প্রদর্শন নিয়ে কিছু বলা ছিলোনা, এই রায় আসবার পরে, বলা যেতে পারে, এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। আশা করবো, শেষ শুনানির আগে, অন্তত একবার, সম্পূর্ণ বিষয়টি আলোচনা হবে।
ভারত সরকারের জাতীয় সংগীত বিষয়ক বর্তমান নিয়মাবলী থেকে স্পষ্ট যে, কোনো খবরের অংশ হিসেবে, বা তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে যদি জাতীয় সংগীত প্রদর্শিত হয়, তাহলে, উপস্থিত দর্শকদের দ্বারা উঠে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই, কারণ উঠে দাঁড়ালে তা তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীকেই শুধু যে বিঘ্নিত করবে তাই নয়, তা জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান বাড়ানোর জায়গায় বিশৃখনলা তৈরি করবে।
এই প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হওয়া সঠিক ইংরিজি বাক্যটি এরম "Whenever the Anthem is sung or played, the audience shall stand to attention. However, when in the course of a newsreel or documentary the Anthem is played as a part of the film, it is not expected of the audience to stand as standing is bound to interrupt the exhibition of the film and would create disorder and confusion rather than add to the dignity of the Anthem."
ব্যক্তির মত প্রকাশের অধিকার ও রাষ্ট্রের মতামত মানা বা না মানার অধিকার নিয়ে যেটুকু কথা এই রায়ে বলা হয়েছে তা সবই, পর্যবেক্ষণ, কোনো সিদ্ধান্ত নয়, কারণ, আদালত, সিদ্ধান্ত একমাত্র সেই বিষয়েই জানাতে পারে, যা তার সামনে প্রশ্ন হিসেবে উঠে এসেছে। এই মামলায় শেষ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখনো বাকি যেমন বাকি, শেষ প্রশ্নের পরের ধাপ গুলো।
তথ্যসূত্রঃ
১. AIR 2003 MP 233
২. Writ Petition(s)(Civil) No(s). 855/2016
৩.