WHO তথা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগকে প্রথম ধাপে PHEIC বা পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সিজ অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন এবং পরবর্তী সময়ে প্যান্ডেমিক বা অতিমারী বলে ঘোষণা করেছে। WHO-র তরফে দেওয়া পরপর চারদিনের আন্তর্জাতিক তথ্য দেখে নেওয়া যাক। ১৫ মার্চ – ১৫৩৫১৭ জন আক্রান্ত (এর মধ্যে ১০৯৮২ নতুন রোগী), মৃত্যু হয়েছে ৫৭৩৫ জনের। ১৬ মার্চ – ১৬৭৫১৫ জন আক্রান্ত (১৩৯০৩ জন নতুন রোগী), মৃত্যু হয়েছে ৬৬০৬ জনের। ১৭ মার্চ – ১৭৯১১২ জন আক্রান্ত (নতুন রোগী ১১৫২৬), মৃত্যু হয়েছে ৭৪২৬ জনের, ১৮ মার্চ – ১৯,১১,১২৭ জন আক্রান্ত (নতুন আক্রান্ত ১৫,১২৩), মৃত্যু হয়েছে ৭৮০৭ জনের। ১৮ মার্চ, ২০২০-র হু রিপোর্টে হু জানাচ্ছে – Onenew country/territory/area (European Region [1]) has reported cases of COVID-19.
হু-র এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে রোগের তীব্রতা অদূর ভবিষ্যতে কমার কোন লক্ষণ নেই। বরঞ্চ প্রতিদিনই বাড়ছে। পৃথিবীর প্রায় ১৭০টি দেশ আক্রান্ত। অনেকগুলো দেশে পূর্ণত “লকডাউন” চলছে। চিনের পরে ইতালি এবং ইরান খুবই খারাপভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এ দু’দেশেই স্বাস্থ্য পরিষেবার যে সংস্থান রয়েছে তা দিয়ে রোগির সংখ্যার সাথে তাল মেলানো যাচ্ছেনা। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মুখে। এ খবরগুলো এখন কমবেশি সবাই জানে। এখানে যেটা উল্লেখ করা দরকার যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮১%-এর ক্ষেত্রে হয় মৃদু কিংবা জটিলতাহীন সংক্রমণ ঘটে, ১৪%-এর ক্ষেত্রে অসুস্থতা গুরুতর চেহারা নেয় এবং হসপিটালে ভর্তি ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হয়, আর মাত্র ৫%-এর ক্ষেত্রে আইসিউ অ্যাডমিশন করাতে হয়। যদিও নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর (১৩ মার্চ, ২০২০) খবর অনুযায়ী চিনে দুজন ২৯ বছর বয়স্ক চিকিৎসক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, এবং একজন মারা গিয়েছেন।
উল্লেখ করার মতো যে ২০০২-২০০৩ সালে SARS-এর যে সংক্রমণ চিন সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়েছিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা শুধু চিনেই এখনও অব্দি তার চেয়ে বেশি। WHO-র দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, SARS-এর আক্রমণে ২৯টি দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮,০৯৮ – মৃত্যুহার প্রায় ১০%। এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮,৬৫২ জন – মৃত্যুহার প্রায় ৫০%। এ দুটির তুলনায় করোনাভাইরাস বা COVID-19-এর মৃত্যুহার অনেক কম ৩-৪%। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি এবং অত্যন্ত দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ – যার সাথে তাপমাত্রার কোন যোগাযোগ নেই। ঠাণ্ডা দেশেও যেভাবে ছড়াচ্ছে গরম দেশেও সেভাবেই ছড়িয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে কেবল ৫৬* সেলসিয়াস এর গতি প্রতিহত হবে, যে তাপমাত্রায় আমাদের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল গত ৩-৪ দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার বৃদ্ধি ৩০%-এরও বেশি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ দ্রুত পরীক্ষা করার মতো test kit-এর ঘাটতি পড়েছে। WHO-র তরফে জানুয়ারি মাসের বক্তব্য ছিল – Over 9200 additional novel coronavirus cases in China are suspected, the WHO reports. There have been 132 related deaths, all in China. Outside of China, 68 cases have been confirmed. A WHO committee will reconsider whether to declare a Public Health Emergency of International Concern (PHIC) on Thursday. এর সাথে মিলিয়ে নিন হু-র দেওয়া ১৭ মার্চের পরিসংখ্যান। ফারাকটা প্রকটভাবে চোখে পড়বে।
চিকিৎসার জগৎ এ ভাইরাস নিয়ে কি বলে?
(করোনা ভাইরাস – চারপাশে সূর্যের ছটার মতো – এজন্য এই নাম)
২৪ জানুয়ারি, ২০২০, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এর সম্পাদকীয় হল – Another Decade, Another Coronavirus। এ ভাইরাসকে সেসময়ে 2019-nCoV নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল, পরে নাম দেওয়া হয় COVID-19। ২০০২-৩-এর SARS (severe acute respiratory syndrome – SARS-CoV) এবং ২০০৯-এর MERS-CoV (Middle East respiratory syndrome coronavirus)-এর এটা তৃতীয় অতিবৃহৎ সংক্রমণ। করোনাভাইরাস একধরনের RNA virus। RNA virus হবার জন্য এই ভাইরাস সহজেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নতুন করে সংক্রমণ ছড়াতে পারে কারণ এতে আছে “error-prone RNA-dependent RNA polymerases” যার ফলে “mutations and recombinations” খুব ঘন ঘন হতে পারে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এ ভাইরাসের গায়ে খেলোয়াড়দের বুটের নীচের স্পাইকের মতো “স্পাইক প্রোটিন” আছে যার ফলে আক্রান্ত কোষের গায়ে ভালোভাবে লেগে থাকতে পারে। আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শুষ্ক শ্বাসনালীর উপরিস্তরের কোষে (epithelium) এরা সহজে বেঁধে যেতে পারে। এজন্য চিকিৎসকেরা বারেবারে অল্প অল্প জল (১০০ মিলি পর্যন্ত) পান করতে বলেন, যাতে গলা এবং শ্বাসনালীশুকিয়ে না যায়। এবং অবশ্যই সংক্রমণের পরিস্থিতি তৈরি হলে তবেই এ নির্দেশ পালন করার কথা, সাধারণ অবস্থায় নয়।
এছাড়াও যেগুলো সহজে পালন করা যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো অল্প কথায় বললে –
(১) সাবান আর পরিস্কার জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। দেখা গেছে করোনাভাইরাসকে ১ মিনিটের মধ্যে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যায় যদি হাত বা অন্য কোন স্থানে ৬২-৭১% অ্যালকোহল বা ০.৫% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বা সাধারণ ব্লিচিং এজেন্ট যাতে ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহার করা যায়।
(২) হাত পরিস্কার না করে চোখ-মুখ-নাকে হাত দেওয়া অনুচিত।
(৩) হাঁচি কাশি পেলে রুমাল বা টিসু পেপার ব্যবহার করুন এবং একবার ব্যবহারের পরে রুমাল হলে ভালো করে সাবান জলে ধুয়ে নিতে হবে, টিসু পেপার হলে ফেলে দিন।
(৪) নাক মুখ ঢাকা মাস্ক ব্যবহার করুন। অসুস্থ রোগীদের কাছে যাওয়া পরিহার করুন।
(৫) প্রতিদিনের অবশ্য ব্যবহার্য জিনিসগুলি বারবার পরিস্কার করতে হবে, জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
(৬) নিজের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষ্মণ দেখা গেলে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যখন একজন ব্যক্তির মাঝে অসুখ আছে তখন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ ঘটার যে transmission chain সেটাকে কেটে দেওয়া। এটা সফলভাবে করতে পারলে এখন যে ২য় পর্যায়ে রোগের অবস্থান সেখানে আটকে রাখা যাবে। এটা সফলভাবে না করতে পারলে প্রবেশ করবে ৩য় ধাপে বা স্তরে – অর্থাৎ রোগ তখন আর ব্যক্তির মাঝে আটকে নেই, সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের R(0) 2.3-2.5। অর্থাৎ একজন করোনা আক্রান্ত প্রায় ৩ জনকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে – নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়। অনিয়ন্ত্রিত হলে যে সংখ্যাটা কত হবে তা অনুমান সাপেক্ষ। সে এক দুঃস্বপ্নময় ভয়ঙ্কর অবস্থা! এজন্য এখনই এই কঠোর সতর্কতা একান্ত জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।
কেন ঘটবে এরকম? এটাও লুকিয়ে রয়েছে ভাইরাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাঝে। আক্রান্ত রোগির একবার কাশি থেকে ৩,০০০ জলীয় ছোট বিন্দু (droplet) তৈরি হয়। এই dropletগুলো অন্য মানুষ, জামাকাপড় বা চারপাশের যেকোন surface বা উপরিস্তরে জমে যায়। এ প্রমাণও আছে আক্রান্তের মলে ভাইরাস বেশি দিন ধরে থাকতে পারে। ঠিক কতদিন COVID-19 মানুষের শরীরে থাকতে পারে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। এটা দেখা গেছে কোন শক্ত উপরিস্তরে এ ভাইরাস কার্ডবোর্ড বা তামার পাত্রের চেয়ে বেশিদিন বাঁচে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিউটস অব হেলথ-এর বিজ্ঞানী Neeltje van Doremalen তাঁর প্রকাশিত-হবার-মুখে একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন – কাশির পরে droplet-এর মাঝে থাকা ভাইরাস ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে বেঁচে থাকতে পারে। সেসব droplet-এর আকার ১-১৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের চেয়ে ৩০গুণ কম চওড়া) স্থির বাতাসে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। যদি বাতাসে আলোড়িত হয় তাহলে এই জলীয় বিন্দুগুলো আরও তাড়াতাড়ি উপরিস্তরে ঘাঁটি গাড়ে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও জানেনা ঠিক কিভাবে মানুষের দেহের ভেতরে কোষের সাথে এই ভাইরাস জোড় বাঁধে এবং সংক্রমণ শুরু করে। জানেনা সংক্রমণ নিয়েও কিভাবে একজন মানুষ একেবারেই কোন উপসর্গহীন অবস্থায় থাকতে পারে, আবার একজন মরে যায়। যদিও মনে রাখা দরকার যারা মারা গেছে তাদের এক বড় সংখ্যক বার্ধক্য, টিবি, ডায়াবেটিস বা অন্য কোন ধরনের অসুখে যা শরীরের ইমিউনিটিকে দুর্বল করে দেয় সেরকম অসুখে ভুগছিল। কিন্তু য়ুহানের রিপোর্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে বড়ো সংখ্যক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে মাল্টি অরগ্যান ফেইলিওরের ফলে।
সমাজের যে অংশের মানুষেরা বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে তারা হল – (১) ৬০ বা এর চেয়ে বেশি বয়সী, (২) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা নিউমোনিয়ার মতো অন্য কোন রোগে আক্রান্ত, (৩) যারা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ খাচ্ছে ইত্যাদি। এখনও অব্দি তুলনায় শিশু এবং মহিলারা নিরাপদ। করোনাভাইরাসে যাদের মৃত্যু ঘটে তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুটি – (১) ডাক্তারি পরিভাষায় বললে “cytokine storm syndrome” যখন অত্যন্ত মাত্রাছাড়াভাবে শরীরের আভ্যন্তরীন ইমিউন রেস্পন্স তৈরি হয় যার ফলে আক্রান্তের ফুসফুস চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং (২) “fulminant myocarditis” যার ফলে অতি দ্রুত এবং মারাত্মক হার্ট ফেইলিউর হয় যাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসাধ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ACE2 inhibitor নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু ১৭ মার্চ, ২০২০-তে প্রকাশিত জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর একটি গবেষণাপত্রের শিরোনাম “Patients taking ACE-i and ARBs who contract COVID-19 should continue treatment, unless otherwise advised by their physician”। ব্যথা কমানোর ওষুধ ইবিউপ্রোফেন নিয়েও একই কথা। একমাত্র তাড়াহুড়ো করে লেখা ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটি চিঠি ছাড়া আর কোথাও একে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এ নিয়ে ১৭ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে।
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ১৯ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় হল – Covid-19 – The Search for Effective Therapy. এ লেখায় খানিকটা বেদনার স্বরেই বলা হয়েছে - What we lack is a specific antiviral agent to treat the infected and, optimally, decrease viral shedding and subsequent transmission. ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় একটি খবর বেরিয়েছে “Flu drug Avigan speeds up coronavirus recovery in early trials”। কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও!
প্রায় দু’মাস আগে ২৯ জানুয়ারি, ২০২০-এ ল্যান্সেট পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট বলেছিল - The 2019-nCoV infection ... is more likely to affect older males with comorbidities, and can result in severe and even fatal respiratory diseases such as acute respiratory distress syndrome. একই দিনে ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত আরেকটি গবেষণার শিরোনাম “Genomic characterisation and epidemiology of 2019 novel coronavirus: implications for virus origins and receptor binding”। এখানে জিন স্টাডি করে দেখা যাচ্ছে যে ভাইরাসের উৎস, আগের দুবারের মতো্, খুব সম্ভবত বাদুর - 2019-nCoV is sufficiently divergent from SARS-CoV to be considered a new human-infecting betacoronavirus. Although our phylogenetic analysis suggests that bats might be the original host of this virus, an animal sold at the seafood market in Wuhan might represent an intermediate host facilitating the emergence of the virus in humans.
হু এবং করোনাভাইরাস
১৬ মার্চ হু-র ডিরেক্টর জেনারেল এখনও আমরা যে জায়গায় উপযুক্ত ফোকাস করতে পারছিনা সেদিকে দৃঢ়ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন –
(১) টেস্টের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো,
(২) আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন আক্রান্তকে আলাদা/বিচ্ছিন্ন করে রাখা, এবং
(৩) যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। তাঁর ভাষায় - Social distancing measures can help to reduce transmission and enable health systems to cope... But the most effective way to prevent infections and save lives is breaking the chains of transmission. And to do that, you must test and isolate. তাঁর সর্বশেষ আহ্বান - Once again, our key message is: test, test, test. হু-র তরফে ১২০টি দেশে দেড় কোটি টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল স্মরণ করিয়েছেন, এরকম সংকটের সময়েই মানুষের মহত্তম এবং কুৎসিৎতম দুটি চেহারাই ধরা পড়ে।
মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে হু-র নির্দিষ্ট বক্তব্য হচ্ছে –
• আপনি যদি সুস্থ হন তাহলে কেবলমাত্র করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনের দেখাশোনার সময়ে পরা দরকার।
• যদি আপনার হাঁচি কাশি থাকে তাহলে মাস্ক পরতে হবে।
• মাস্ক পরা তখনই কার্যকরী যখন বারংবার সাবান জল দিয়ে হাত ধোয়া হবে কিংবা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করা হবে।
• মাস্ক ব্যবহার করলে কানতে হবে কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হয় এবং ব্যাবহারের পরে ফেলে দিতে হয়।
করোনাভাইরাসের সময় সারণী
●ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে করোনা ভাইরাসের খবর আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পৌঁছয়। চিন সরকার দ্রুত এ খবর WHO-র কাছে পাঠায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য।
● ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সংবাদ অনুযায়ী মোট ১৮টিরও বেশি দেশে এ রোগ আক্রমণ করেছে। সংখ্যা অনুযায়ী – চিনঃ ৭,৭০০; থাইল্যান্ডঃ ১৪; হংকংঃ ১০; তাইওয়ান, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াঃ প্রত্যেকক্ষেত্রে ৭-৮ জন করে; আমেরিকাঃ ৫; অস্ট্রেলিয়াঃ ৫; সৌদি আরবঃ ৪; ফ্রান্সঃ ৪, জার্মানিঃ ৪, ইত্যাদি।
●ওয়াশিংটন পোস্টের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯-র খবর জানাচ্ছে - Experts debunk fringe theory linking China’s coronavirus to weapons research। ১৭ মার্চ, ২০২০-র Science Daily পত্রিকার শিরোনাম – “COVID-19 coronavirus epidemic has a natural origin”। পরে আরও ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে - The analysis of public genome sequence data from SARS-CoV-2 and related viruses found no evidence that the virus was made in a laboratory or otherwise engineered.
● ২৭ জানুয়ারি, ২০২০, অস্ট্রেলিয়া কৃত্রিমভাবে নভেল করোনা ভাইরাস তৈরি করতে সফল হয়েছে। ফলে ভবিষ্যৎ গবেষণার সুবিধে হবে।
● এর পরবর্তী সময়ের ইতিহাস আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম।
● কিন্তু এক ভাইরাসের গুঁতোয় বিশ্বসুদ্ধ গেল গেল রব পড়ে গেছে – কি মেডিসিনে, কি পর্যটনে, কি বিশ্ব অর্থনীতিতে। একেই বলে গ্লোবালাইজেশন – “আওয়াজ খানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা”।
করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন এবং কর্পোরেট পুঁজির রাজনীতি
১৬ মার্চ, ২০২০-র খবর হচ্ছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথ-এর তরফে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাক্সিন সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে mRNA-1273।
একটি খবরের শিরোনাম হচ্ছে – Trump reportedly offered $1 B to poach coronavirus vax for US use only। জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি CureVac জানুয়ারি মাস থেকে ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এই CureVac-এর ভ্যাক্সিন কেনার জন্য ট্রম্পের এই প্রলোভন দেখানো। আমেরিকায় বিতর্ক শুরু হয়েছে – জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায় যে রিসার্চ হয় সে রিসার্চের ফল কেন বাণিজ্যিকভাবে বিপুল মুনাফার জন্য কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? রয়টার্স-এর খবর (১৫ মার্চ, ২০২০) অনুযায়ী – Germany tries to halt U.S. interest in firm working on coronavirus vaccine। সে খবরেই বলা হয়েছে যে CureVac-এর প্রধান লগ্নীকারী Horst Seehofer জানাচ্ছেন যে তিনি ভ্যাক্সিন বিক্রি করবেন না এবং এই ভ্যাক্সিনের লক্ষ্য হবে “help people not just regionally but in solidarity across the world”।
আমেরিকার আরেকজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন তিনি নির্বাচিত হলে এই ভাক্সিনকে সম্পূর্ণত বিনামূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-তে ৪৬ জন ডেমোক্র্যাটের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি ট্রাম্পকে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে - We write to ask you to ensure that any vaccine or treatment developed with U.S. taxpayer dollars be accessible, available, and affordable. That goal cannot be met if pharmaceutical corporations are given authority to set prices and determine distribution, putting profit-making interests ahead of public health priorities. Americans deserve to know that they will benefit from the fruits of their public investments.
মানুষের বাঁচার জীয়ন কাঠিও কর্পোরেট পুঁজির আবর্তে পড়ে গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, বর্তমান অর্থনীতির এই ধ্বসের মাঝেও আমেরিকান বহুজাতিক ফার্মা কোম্পানি ইলি লিলি-র শেয়ার লাভের মুখ দেখেছে কারণ এরা সর্বসাধারণ্যে বিবৃতি দিয়েছে যে করোনাভাইরাসের নতুন চিকিৎসা নিয়ে আসছে।
বুঝ জন, যে জানো সন্ধান!
(লেখক চিকিৎসক, গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী)
"কাশির পরে droplet-এর মাঝে থাকা ভাইরাস ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে বেঁচে থাকতে পারে। সেসব droplet-এর আকার ১-১৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের চেয়ে ৩০গুণ কম চওড়া) স্থির বাতাসে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। যদি বাতাসে আলোড়িত হয় তাহলে এই জলীয় বিন্দুগুলো আরও তাড়াতাড়ি উপরিস্তরে ঘাঁটি গাড়ে।"
আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাতাসে যদি তিন ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে তাহলে মাস্ক শুধু আক্রান্ত রোগী বা আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলেই কেন পরতে হবে? যিনি জানেন না যে তিনি আক্রান্ত হয়েছে, তিনি যদি হাঁচি দিয়ে চলে জান আর আমি তারপরে গিয়ে হাজির হই ওই জায়গায় তখন আমি আক্রান্ত হব না বাতাসে থাকা ওই ভাইরাসে? তাহলে সকলের মাস্ক পরা জরুরি না?