এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  মনে রবে

  • মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: লেখচিত্র

    হিমানী বন্দ্যোপাধ্যায়
    পড়াবই | মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ২৩২৪ বার পঠিত
  • মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানত অনুবাদক বলেই পরিচিত তাই এই আলোচনা সে বিষয়েই শুরু হবে। অনুবাদ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা যে অনুবাদ গৌণ ধরনের সৃষ্টি, যার স্থান মৌলিক কলাশিল্পের একটু তলায়। অনুবাদের ঘাড়ে চেপে আছে মৌলিকের ভার। এই বিভাগ ও বিচারের মধ্যে ধারণা কাজ করে চলেছে যে মৌলিক রচনা মনের গভীর থেকে ডুবুরির মতো তুলে আনতে হয় কিন্তু অনুবাদ শুধু ভাষার হেরফের—আসল কথা তো মূল বইতেই লেখা রয়েছে। পাঠকের কাছে ভাষান্তর করে পৌঁছে দেওয়া মূল লেখকের বক্তব্য। এই ধারণা যে অমূলক তা অনেকদিন আগেই বলে গিয়েছেন ওয়াল্টার বেনিয়ামিন ‘The Task of the Translator’ প্রবন্ধে অথবা রবার্ট লোয়ের তাঁর নিজের ও অন্যদের কবিতার অনুবাদ প্রসঙ্গে ‘Imitation’ নামের বইটিতে। এইসব লেখালেখি সত্ত্বেও অনুবাদের গুরুত্ব, দায়িত্ব ও শিল্পকৌশলের সমস্যা অনেক দিন তত বড়ো করে দেখা দেয়নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষের দশকগুলোতে অনুবাদ নিয়ে অনেক আলোচনা চলেছে। এখন বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুবাদের ওপর গবেষণা হয় এবং বিভাগও খোলা হয়েছে—নানা সাহিত্যপত্রিকা বেরোচ্ছে। এ সত্ত্বেও সাধারণ চিন্তায় অনুবাদ বিষয়ে একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছে যার দরুন আমরা অনুবাদকে প্রায়ই একটি জানালার কাচের মতো স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করি। এবং তার শিল্পত্ব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাই না।

    মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদ নিয়ে কিছু বলতে গেলে, বাংলাসাহিত্যে তার অবদান সম্পর্কে কিছু লিখতে হলে, আমার উপরের কথাগুলো না ভেবে থাকা যায় না। তখন শব্দ ও অর্থ, ভাষা, ভাবনা ও অনুভব, অনুষঙ্গের কথা এসেই পড়ে। একটি ভাষাকে অন্য ভাষার জানালা বা আয়না ছাড়াও অনেক কিছু ভাবতে হয়। এর মধ্যে খুব বড়ো করে এসে পড়ে যে ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে তার কথা। অনুবাদ সেই ভাষার, এই ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার, নূতন সম্ভাবনা, তার বহুব্যবহৃত শব্দে ও syntax-এ নূতন ও অন্য ব্যবহারের রাস্তা খুলে দেয়। মানবেন্দ্র তাঁর অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে এইভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।

    এই বক্তব্য পরিষ্কার করার জন্য আমরা মানবেন্দ্রর অনুবাদের একটি সংক্ষিপ্ত ম্যাপ তৈরি করব। ‘ডক্টর জিভাগো’-র যুগ্ম অনুবাদ বাদ দিয়ে আমরা এগোব তাঁর অত্যল্প বয়সে জেমস ফেনিমোর কুপারের অনুবাদ থেকে। তারপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে; তার সাক্ষ্য রেখে মানবেন্দ্রর অক্লান্ত লেখা। জুল ভের্ন, শার্লক হোমস তো আছেনই, কিন্তু তার চেয়েও বড়ো করে আছে আমাদের তখনকার স্বল্প-পরিচিত দেশের সাহিত্য। ল্যাটিন আমেরিকান, ক্যারিবিয়ান ও আফ্রিকান সাহিত্য তো এসেইছে, তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের লেখকরা। আমরা এসে পড়েছি সারভান্তেসের ছোটো নভেল ও ব্রাজিলের ছোটো গল্পের লেখক ক্লারিস লিস্‌পেকটারের গল্পে। পশ্চিম এশিয়ার লেখকদের তিনি দূরে রাখেননি আবার তাদের সঙ্গে এনেছেন হানস ক্রিশ্চিয়ান আন্ডারসেন ও অস্কার ওয়াইল্ডের গল্পও। আরও অনেকের লেখাই অনুবাদ করেছেন তিনি—ফর্দ শেষ করা শক্ত। তিনি নিজে যা পড়ে আনন্দ পেয়েছেন, তা তিনি সবসময় ভাগ করে নিয়েছেন বাঙালি পাঠকের সঙ্গে।

    মানবেন্দ্রর এই অনুবাদ শুধু বিভিন্ন দেশের সঞ্চিত ধন নয়, তারা বাংলা ভাষাকেও দিয়েছে আর-একরকম অভিজ্ঞতা ও মাত্রা। এই লেখাগুলোর মধ্যে একই সঙ্গে পাওয়া যাবে বিদেশি ও বাংলা সাহিত্যের স্বাদ ও ভাবের অনুরণন, বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য। মানবেন্দ্র সবসময়েই চেষ্টা করেছেন একটি মিশ্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখতে। তাঁর অনুবাদগুলি তাদের বৈদেশিকতা বা আবহাওয়া না হারিয়েই আমাদের কাছে অর্থপূর্ণ ও আকর্ষণের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মিলের দিশা পাই, আমাদের সাহিত্যের মতোই, কিন্তু অন্য ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানসিকতা ও ভাবের দ্বারা আচ্ছন্ন। এইসব উপাদান মিলেমিশে একটি নূতন বাংলা সাহিত্য রচিত হয়—যেমন ধরা যাক, মানবেন্দ্রর অনুদিত সারভান্তেসের নভেলার অনুবাদ। এইখানে মানবেন্দ্র যে বাংলা ব্যবহার করেছেন তা আমরা আগে শুনিনি। দেশ-কাল-পাত্রের পরিপ্রেক্ষায় সারভান্তেসকে ধরে ফেলেছেন তিনি। তিনি বাংলা ভাষায় আর সাহিত্যবোধে মূর্ত করেছেন এক জগৎ যা হয়তো আগেকার দিনের কিস্‌সা বা কাহানিতে খানিকটা পাওয়া যেত কিন্তু এখন অপ্রচলিত। তিনি একত্রে এনেছেন স্পেনের মুরিশ সভ্যতার রেশ, স্পেনের সামন্ততান্ত্রিক জীবনযাপন, আমোদ ও বিলাস, সারভান্তেসের নেতিবাদী দর্শন। তিনি কথ্য ও অকথ্য, দিশি ও সাধু বাংলার সঙ্গে মিশিয়েছেন আরবি, ফারসি ও অনুদিত বাংলা বাইবেলের শব্দ ও বাচনভঙ্গি। আমাদের সামনে উঠে দাঁড়িয়েছে একটি ‘বারোক’ সৃষ্টি দু-চার আঁশলা ভাষায়। একটি নভেলার কথক হচ্ছে(ন) দুটি দার্শনিক, গম্ভীর ও স্মৃতিনিপীড়িত কুকুর যারা এখন বৃদ্ধ ও ক্রিশ্চিয়ান সন্তদের অনাথআশ্রম ও গরিবের রাত-আশ্রয়ের পাহারাদার।

    এই একই কথা বলা যাবে মানবেন্দ্রর অন্য অনুবাদের ব্যাপারেও। গার্সিয়া মার্কেজ, হুয়ান রুলফো, আলেহো কার্পেনতিয়ার ও আরও অনেকের বেলায়। এই সূত্রে এও জানাতে হবে যে একজনকে বাদ দিলে মানবেন্দ্রর অনুদিত লেখকরা এখনও সুপরিচি তনন। যখন আমরা মানবেন্দ্রর কাছে মার্কেজের নাম শুনি তখন শুধু ভারতবর্যে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি সুপরিচিত নন ও নোবেল প্রাইজ পাননি। আজ যে শৈলী ম্যাজিক রিয়েলিজম (magic realism) নামে চেনা ও বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত—তার সঙ্গেও মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরোনো সম্পর্ক।

    অনুবাদের কথা বলতে গেলে রাজনীতির কথা স্বভাবতই এসে পড়ে। সে রাজনীতি অনুবাদক স্পষ্ট করে ঘোষণা করতে পারেন বা না-ও করতে পারেন। যদি না-ই করেন, তবু তাঁর লেখক ও বই বাছাই থেকে আমরা বুঝতে পারি মানবেন্দ্রর ক্ষেত্রে দুই-ই সুস্পষ্ট। এই বিষয়ে প্রথমেই বলতে হবে যে তিনি তৃতীয় বিশ্বের সাহিত্যের ওপরে অনেকটা জোর দিয়েছেন। তাঁর কানাডা-বাসের সুফল এতে বড়ো করে দেখা দিয়েছে। তিনি ১৯৭০-এর দশকের অনেকটা সময় সেখানে ছিলেন। এইসময় সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশিক অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ‘সিভিল রাইটস্‌’-এর আন্দোলন চলছে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-রা তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বর্ণবিদ্বেষ ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রতিবাদে, American Indian Movement আক্রমণ করছে কানাডা ও আমেরিকার নানা জায়গায়। তার সঙ্গে চলছে ভিয়েনাম যুদ্ধ ও বহু আমেরিকান তরুণদের দেশ ছেড়ে কানাডায় আশ্রয় নেওয়া। এই লড়াইগুলো প্রবল ও কিছু কিছু সাফল্যমণ্ডিত। তৃতীয় বিশ্বের বহু লোকজন কানাডাতে এসে পড়েছেন এবং নানারকম আন্দোলন গড়ে তুলছেন। Solidarity গ্রুপগুলো সক্রিয় ও বহুদেশের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ পাঠাচ্ছে। শুধু কিউবার সাহিত্য ও গান নয়, তার সঙ্গে চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলির, যেমন, জামাইকা, ত্রিনিদাদ, বারবাডোজ ও ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির উথালপাথাল। গানে, কবিতায়, উপন্যাসে ও ছোটোগল্পে এইসবের প্রকাশ তখন। এই সংগ্রাম ও প্রতিবাদের সংস্কৃতি মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যবোধ ও চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। তখন স্প্যানিশ, পোর্তুগিজ বইয়ের প্রচুর অনুবাদ বেরোচ্ছিল এবং Heinemann Publication-এর মাধ্যমে মানবেন্দ্র আকৃষ্ট হয়েছিলেন আফ্রিকান সাহিত্যের প্রতি। কেনিয়া, উগান্ডা, ঘানা, লাইবেরিয়া ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশের লেখার অনুবাদ করেন ও সক্রিয় ভাবে অন্যদের পড়াবার চেষ্টা করেন। এইসময় ল্যাটিন আমেরিকানদের লেখা, তাদের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে চারদিকে ছড়াচ্ছে। এইসবের মধ্যে মানবেন্দ্রর সাহিত্যিক হিসাবে নূতন জন্ম হল, তিনি বিশ্বসাহিত্য আবিষ্কার করলেন। তিনি বুদ্ধি ও অনুভব দ্বারা এইসব সাহিত্যের সঙ্গে ভারতীয় সাহিত্যের মিল বুঝতে পারলেন। তাঁর এই তীব্র আগ্রহ অনুবাদে পরিণত হল। নিজে তো এই কাজ করলেনই, তা ছাড়া একটানা ও প্রাণপণ উদ্যমে তাঁর সহকর্মী ও বন্ধুদের দিয়েও অনুবাদ করালেন। তাঁর দেশবিদেশের গল্পসংগ্রহগুলি তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও দৈনিক জীবনের প্রতিফলন। অনেক খুঁজলেও এইধরনের সংগ্রহ বোধহয় খুব একটা চোখে পড়বে না। এইভাবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়—যারা বাংলা সাহিত্যে উৎসাহী এবং সাহিত্য ও রাজনীতির একাত্মতা খোঁজেন—তাঁদের দেখার চোখ ও ভাষার মাত্রা মানবেন্দ্র পালটে দিয়েছেন। তাঁর অনুবাদগ্রন্থগুলি ও তাদের ভূমিকা একই সঙ্গে জগৎকে বোঝার ও বদলাবার চেষ্টা। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিতার অনুবাদ করেছেন—যেমন এইমে সেজেয়ারের ‘দেশে ফেরার খাতা’ (দেবলীনা ঘোষের সঙ্গে), পাবলো নেরুদার ‘মাচুপিচুর শিখর থেকে’, এডওয়ার্ড কামাউ ব্রাফেট বা ব্রেইথওয়েটের একাধিক দীর্ঘ এপিক স্টাইলের কবিতা, ডেরেক ওয়ালকটের একাধিক কবিতা এবং আরও অনেক। মানবেন্দ্রর এইসব অনুবাদ পড়বার পর বাঙালি পাঠকরা ‘একশো বছরের (ঐতিহাসিক) নিঃসঙ্গতা’তে আর ফিরতে পারবেন না। এই পাঠক ও মার্কেসের চরিত্র আউরেলিয়ানোর মতোই অন্ধকার ঘরে বসেও বিদেশি সাহিত্যকে মাতৃভাষার মতো সহজ স্বচ্ছতায় পড়তে পারবেন, উপলব্ধি করতে পারবেন। এতগুলি দেশের সাহিত্যিক একাত্মতা থেকে নূতন সাহিত্য হয়ে উঠবে এবং তা হচ্ছেও।

    এবার আমাদের তৃতীয় বিশ্ব ছেড়ে ইউরোপের দিকে তাকাতে হবে। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষের প্রথম তুলনামূলক বিভাগের প্রথম ছাত্রদের একজন। তাঁর সাহিত্যবোধ সমৃদ্ধ হয়েছে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও বুদ্ধদেব বসুর লেখা ও অনুবাদ দ্বারা। তিনি নিজেও ইউরোপীয় সাহিত্য থেকে দূরে থাকেননি। ইউরোপের সব সাহিত্যকে colonial discourse মনে করেননি। তিনি বেছে নিয়েছেন পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কিছু কবিকে। জার্মান কবি ও ইংরেজ নাট্যকারের দিকেও নজর দিয়েছেন। এঁদের লেখার ধাঁচ একেবারেই তৃতীয় বিশ্বের যেসব লেখককে মানবেন্দ্র অনুবাদ করেছেন তাঁদের মতো নয়। এঁরাও প্রতিবাদী কিন্তু বিপ্লবী নন। বরং ধূসর ও বিষণ্ণ—তাদের রাগ সমাজ, রাষ্ট্র, বর্ণবিদ্বেষ, পুঁজিবাদের বস্তু লিপ্সা ও জেলখানার বিরুদ্ধে। তাদের কারোর কবিতা নাৎসি concentration camp-এর স্মৃতির দুঃস্বপ্ন থেকে উঠে এসেছে। সকলের লেখাই নাগরিক, তীক্ষ্ণ ও আঁটো irony ও ব্যঙ্গপূর্ণ। এরা সকলের সঙ্গে মিলে প্রতিবাদ ও লড়াই করতে চান না। প্রত্যক্ষ সৌহার্দ্য প্রকাশ করেন না। কিন্তু নিজের অবস্থা একেবারে অন্যদের চাইতে আলাদাও মনে করেন না। তাদের পরিচিতি তৃতীয় বিশ্বের লেখকদের মতো বিস্তৃত নয়। নাম করতে হয় কয়েকজনের, যেমন, ভাসকো পোপা, ভাস্লাভ হোলুব, চেশোয়াভ মিউস, তাদেউস রুজেভিচ, ভিইয়োভা সিমবোরস্কা, হানস মাগনুস এনসেন্সবার্গার, পেটার হান্টকে, প্রমুখ। এঁদের সঙ্গে আরও দুজনের নাম করতে হবে যাঁরা কবি নন—পোল্যান্ডের স্তানিসোয়াভলেম ও ইংল্যান্ডের এডওয়ার্ড বন্ড। লেম সায়েন্স ফিকশন লিখতেন আমাদের পরিচিত ধরনে নয়। তার চরিত্র জুল ভের্নের নায়কের মতো (উড়ো) জাহাজে চড়ে চলে পৃথিবীকে বাঁচাতে। তার ছোটো রোবট ক্লারাৎসিউস মানুষ ও সভ্যতার সাহায্যকারী, ধ্বংসকারী সাম্রাজ্যবাদী নয়। এডওয়ার্ড বন্ডের যে নটকগুলি মানবেন্দ্র অনুবাদ করেছেন সেগুলি পুঁজিবাদের বিকলাঙ্গ করা হিংস্র বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরূদ্ধে জ্বলন্ত প্রতিবাদ। এই নাটকগুলো এখনও অভিনীত হবার অপেক্ষায় আছে।

    মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখচিত্র অসম্পূর্ণ থাকবে যদি ছোটোদের জন্য তার স্নেহপূর্ণ অনুবাদের কথা না বলি। শুধু নিজের গল্পে নয়, মাইয়া সভ্যতার দলিল ‘পোপোল বু’র অনুবাদেও নয়, তিনি অজস্র অনুবাদ করেছেন তাদের জন্য। তার হানস ক্রিশ্চান আন্ডারসেনের গল্পের কথা অনেকেই জানেন, যেমন জানেন তার অস্কার ওয়াইল্ডের অনুবাদের কথা। এই লেখার অনেকগুলোই হচ্ছে ছোটোদের অসহায়তা ও করুণ নিঃসঙ্গতার ছবি। কিন্তু তারই সঙ্গে তাকে আকর্ষণ করেছে ছড়ার ছন্দ আর মজা, যেমনটি আছে তার এডওয়ার্ড লিয়ার ও লাফনটেনের অনুবাদে। অনুবাদে সেই লেখার হাসি ও তাল কাটেনি। লিয়ারের মূল লেখার কথা না জানলেও এই ছড়াগুলোর মূল্য তাদের নিজেদের জন্য। এই বালক ও শিশু-সচেতনতা থেকেই তিনি লেখেন ‘রবীন্দ্রনাথ ও শিশুসাহিত্য’।

    এবার আমরা নজর দেব মানবেন্দ্রের নিজের লেখার দিকে—বিশেষ করে তাঁর কবিতার দিকে। আমি বলছি না যে অনুবাদগুলো তার নিজের লেখার বাইরে। তবু এটা ঠিক যে অনুবাদক হিসেবে তার খ্যাতির জন্য তার কবিতা যতটা চোখে পড়ার ছিল ততটা পড়েনি। তা ছাড়া অন্য কারণও আছে যা হচ্ছে আমাদের মানসিক অভ্যাস সবকিছুকেই খোপে খোপে গুছিয়ে রাখার। ভাসকো পোপার ভাষায় আমরা কেবলই ছোটো ছোটো বাক্স তৈরি করি ও জগৎটাকে ভাগ ভাগ করে তাতে পুরে রাখি। এই অভ্যাস যদি ছাড়ি তাহলে দেখব যে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় চুপিসারেই অনেক কবিতা, গল্প ও ছোটো উপন্যাস লিখেছেন। যদিও তাদের প্রভাব কিছুটা পড়েছে তবু মানবেন্দ্রর অনূদিত সাহিত্য তার কবিতার নিজস্ব চরিত্র কেড়ে নেয়নি বরং তাকে সমৃদ্ধ করেছে। এই কবিতাগুলির আরও পাঠকের দরকার। এগুলি বহুলাংশে সার্থক ও জরুরি। কবিতা পড়ার চিরাচরিত অভ্যাস থেকে সরে এসে পাঠককে অন্য মানসিকতা ও বাচনভঙ্গিতে প্রবেশ করতে হবে। এমনকি শেষপর্যন্ত এই প্রশ্নও তুলতে হবে—আমরা কোন্‌ ধরনের লেখাকে কবিতা বলি? কবিতার অভিজ্ঞতা কী?

    মানবেন্দ্রর কবিতার বই পাঁচটি—‘অর্ধেক শিকারী’ (১৯৭৪); ‘বাঁচা কাহিনী’ (১৯৭৬); ‘সাপলুডো অথবা ঘরবাড়ি’ (১৯৯৯); ‘এইসময় শনির’ (২০০৩); ‘চোরকাঁটা’। তা ছাড়া রয়েছে প্রকাশিত কিন্তু অগ্রন্থিত অনেক রচনা।

    এই বইগুলি পাশাপাশি রেখে পড়লে আধুনিক বাংলা কবিতার সম্পর্কেও কিছু বলা যাবে। সাধারণত থিম বা বিষয় যাই হোক না কেন, বাংলা কবিতা অনেকাংশে লিরিকধর্মী—তাতে ছন্দ বা মিল সোজাসুজি থাকতে পারে, না থাকতেও পারে। অনেক কবিতাই অন্তর্মুখী বা স্বগতোক্তি—বিষণ্ণতা, একাকিত্ব, উপভাস ও আত্মপ্রকাশ, একটি সামগ্রিক দূরত্ব বোধ, সবই তার অন্তর্গত হতে পারে। মানবেন্দ্রর প্রথম পর্বের কবিতা সেইরকম, যেমন ‘অর্ধেক শিকারী’-তে। সেখানে রয়েছে ক্লাসিক লিরিকধর্মী কবিতা। বিষয়: প্রেমের আবিষ্কার, তা হারানো, জ্বলন্ত বিষাদ, প্রবাস ও একটি শূন্য জগতে ফিরে আসা। এই কবিতার অনেক কটিই নিখুঁত, সম্পূর্ণ এবং স্বমুখী। অন্য অনেক বাংলা কবিতার মতোই সেখানে ‘তুমি’ শব্দটি একটি বিভক্ত ‘আমি’র নাম বা কোনো অচিহ্নিত অপরজনের ইঙ্গিত।

    এইভাবে কিছুদিন চলার পর মানবেন্দ্রর কবিতার বিষয় ও শৈলী আস্তে আস্তে পালটায় কিন্তু পালটায় সুনিশ্চিত ভাবেই। পরবর্তী কবিতাগুলিতে ‘তুমি’ সবসময়ই উপস্থিত কিন্তু তার উপস্থিতি ও পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক অন্যরকম। এখানে ‘তুমি' সত্যই অপরজন ও লেখকের বক্তব্য তার পক্ষেও জরুরি। কবি তাঁর বক্তব্য ও বিষয়ে সজ্ঞান ও দায়িত্বশীল। ইতিহাসের দলিল ও বিশ্বচেতনা বেড়েই চলে। তাঁর কবিতায় সরাসরি উঠে আসে উপনিবেশবাদ, সাধাজ্যবাদ ও তাদের উৎস পুঁজিবাদের সমালোচনা থেকে কলম্বাসের মারাত্মক সমুদ্রযাত্রা ও তা থেকে উদ্ভূত ক্রীতদাস প্রথা, উপনিবেশের জন্ম, অবদমিত ও কালো মানুষের মুক্তিযুদ্ধ, নাবিকের হই-হুল্লোড়, সবই তার বর্ণনার বিষয় হয়। তিনি একইসঙ্গে দেখেন পুঁজিবাদের বিশ্বায়নের মৃত্যুছন্দ ও তার বিশ্বজোড়া প্রতিবাদ। মানবেন্দ্রর এই প্রতিবাদী কবিতার মধ্যে রাগ, দুঃখ ও লড়াইয়ের আনন্দ। এইভাবে মানবেন্দ্রর কবিতায় গদ্য ও পদ্য, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অনুভব পরস্পরকে জড়িয়ে আছে এবং কখনো-কখনো এক হয়ে গিয়েছে। তার ক্ষোভ, রাগ, ব্যঙ্গ, আক্ষেপ ও সৌহর্দ্যের ডাক প্রতিফলিত হয়েছে অজস্র প্রশ্নচিহ্নে। তিনি বারবার জিজ্ঞাসা করেছেন, “তুমি কী জান? তুমি কী দেখেছ বা শুনেছ?” এই প্রশ্নোত্তরের ভঙ্গিতে তিনি বারবার ইতিহাসকে আমাদের কাছে হাজির করেছেন, তাকে সাক্ষী মেনেছেন। তিনি লিখেছেন পুঁজিবাদের অস্বাভাবিকতার কথা, যা স্বাভাবিক প্রাত্যহিককে বিকৃত ও বিকলাঙ্গ করে ফেলে, প্রকৃতিকে উলটে দেয়। কলম্বাস, কোর্তেজ বা দা গামার স্বপ্ন কীভাবে পৃথিবীর দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে তার কথা লেখেন। তাই জল তাঁর কবিতায় শান্ত, স্নিগ্ধ নয়—তা জ্বলন্ত সিসা বা লাভার মতো। পায়ের তলার পৃথিবী স্থির ও সুনিশ্চিত নয়—তা প্লাবনে, ভূমিকম্পে ও অগ্ন্যুৎপাতে বিধ্বস্ত, আণবিক বিস্ফোরণে আলোড়িত। যদি আমরা জীবনানন্দের প্রশ্ন মনে রাখি ‘এ আগুন, এত রক্ত’ ইতিহাস বা মধ্যযুগ কখনও দেখেছে কি না, তাহলে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার একটি সামগ্রিক রূপ পাই।

    এবার আমরা মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের গদ্যকবিতা বা anti-poetry-র কথা বলব। তিনি অনুবাদ করেছিলেন হানস মাগনুস এনসেন্সবার্গারের বড়ো কবিতা ‘Poetry for People Who didn’t Like Poetry’। এই প্রকল্পটি মানবেন্দ্র সফল করেছেন ‘সাপলুডো অথবা ঘরবাড়ি’ বইতে। এখানে রয়েছে নির্মাণ ও বিনির্মাণের দ্বান্দ্বিক খেলা, আকাঙ্ক্ষা ও নিরাশাও। এখানে কবি একইসঙ্গে ‘বাড়ির বিষয়ে খুব কম’ জানেন (প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত) আবার প্রচুর জানেন। ঘরবাড়ি বানাবার ও সাজাবার সবকিছুই বা সব কায়দা তার একেবারে চূড়ান্ত করে ফর্দ করা আছে। ‘এতটুকু বাসা করেছিনু আশা’র অর্থ এই বইটিতে বিস্তারিত। আমরা বুঝতে পারি যে এ শুধু একজন ব্যক্তির বাড়ির বৃত্তান্ত নয়—বহু নির্মাণ প্রচেষ্টারই আরম্ভ ও শেষ। মনে মনে বাড়িটিকে তিনি ঘরে পরিণত করলেন তার প্রতিটি ইট-কাঠ দরজা-জানালা সমেত কিন্তু এই কাল্পনিক বাড়ির কল্পনাটুকুও উধাও হয়ে গেল এক নিমেষে। এই বইটি anti poetry-র একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত, মস্ত মুনশিয়ানার প্রমাণ। মার্কস বলেছিলেন যে বাড়িতে কেউ বসবাস করে না তা বাড়ি নয়, যে জামা কেউ গায়ে দেয় না সে জামা-ই নয়। অর্থাৎ ব্যবহারই সৃষ্ট বস্তুর অর্থ ও যাথার্থ্য দেয়। এখানে ব্যাপারটা আরও গুরুতর, আরও ভয়ানক। কল্পনা তার মূর্ত বস্তুরূপই পেল না—তার ব্যবহার তো দূরে থাক; একটি সর্বাঙ্গীণ অসম্পূর্ণতা, একটি না-হওয়া হয়ে উঠল ও কোনো শাবলের আঘাত ছাড়াই ম্যাজিকের মতো হাওয়া হয়ে গেল। এই তাহলে আসল magic realism-এর মজা?

    আমি শেষ করব মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদিত গল্পসংগ্রহ ও অন্য একটি সংকলন ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’ দিয়ে। গল্পসংগ্রহের মধ্যে আছে ভারতবর্ষের নানা প্রদেশের ও নানা বিদেশের গল্প । দাঙ্গা পার্টিশনের ভেদ-বিভেদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তাক্ত কাহিনি। এই সংকলনগুলি অনেক লোকের লেখা ও অনুবাদ দিয়ে তৈরি। বহুজনকে একত্রে মিলিয়ে সম্পাদক/ অনুবাদক/ লেখক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিষ্ঠা প্রমাণ করেছেন। আজকের দিনে যখন ফ্যাসিবাদ নানা নামে পৃথিবীর নানা জায়গায় মাথা চাড়া দিচ্ছে, যখন চতুর্দিকে বোমাবর্ষণ ও রক্তের ছড়াছড়ি, ঘর ভাঙা ও জ্বালানো, উদ্‌বাস্তুকরণ, ধর্ষণ ও খুনের সীমা-সংখ্যা নেই—তখন এই সংকলনগুলো ও মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবরকম সৃজনকীর্তিই আমাদের কাজে লাগবে। মার্কস বলেছেন, মানুষ নিশ্চয়ই তার ইতিহাস তৈরি করবে তবে তার ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত সত্তা বা খেয়ালখুশিতে নয়। ইতিহাসকে মনে রেখে, অতীত ও বর্তমানকে ঠিক মতো বুঝে, ভুলভ্রান্তি জেনে ও সংশোধন করে, তবেই আমরা এগোতে পারব। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক সেই কাজটিতেই আমাদের সাহায্য করছেন এবং করবেন।



    ১৫ জুন ২০১৮, টরন্টো।




    ‘মানবেন্দ্র ২০১৮। আশি বছর বয়সে বন্ধুদের শুভেচ্ছা। সংকলন ও সম্পাদনা: তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।’ বইটি থেকে এই লেখাটি সংগ্রহ করে পুনর্প্রকাশিত হলো।


    মানবেন্দ্রবাবুর স্কেচ: হিরণ মিত্র
    থাম্বনেল গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ২৩২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 2607:fcc8:ec45:b800:38b8:1cee:1f91:***:*** | ১০ আগস্ট ২০২০ ১২:৩৩96124
  • পড়লাম। ফিরে পড়ার ও রীতিমত ভাবিয়ে তোলার মত লেখা। বিশেষ করে অনুবাদসাহিত্য নিয়ে আলোচনা ও তার অবদানের যে জায়গাটা তেমন গুরুত্ব পায়না, সেই বিশ্লেষণ খুবই ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন