(৩)
কাল রাতে যথারীতি মদটা বেশি খাওয়া হয়ে গিয়েছে। এই জন্যে বৌ রেগে যায়। কিন্তু অমিতাভ কী করবে! অনুরাগ আর জয়ন্তর সঙ্গে আগে রাতে বসতো যখন তখন অন্য রকম ব্যাপার ছিল। জয়ন্ত খুব নিয়ম মানা ছেলে। ঠিক সময়ে থেমে যেত। আর খেতে বসতো জয়ন্তর বাড়িতেই। তাই বেশি বাড়া যেত না। জয়ন্তর বৌ একটু হেসে মনে করিয়ে দিত বাড়ি যেতে হবে। সে আর অনুরাগ বেরিয়ে পড়ত। তার গাড়িতে আগে অনুরাগকে ছেড়ে সে ফিরতো। এখন তো আর তা না! জয়ন্ত পার্ক স্ট্রীট-এ আসে না। অনুরাগ কিছুদিন হল আলাদা। অবশ্য তারা জেনেবুঝেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিই কিছুদিন ধরে কাজের চাপ বাড়ছিল। তারপরে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট লাইসেন্স হয়ে যাওয়াতে আর চায়নার মাল আসতে শুরু করাতে আর কিছু করার ছিল না। অনুরাগ বললো ও কম্পিউটারটা দেখবে। চায়নায় সারে সারে শহরে ছোট ছোট ইউনিট করে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ তৈরী হচ্ছে। তারা আনছে। এখানে অ্যাসেম্বল করছে। মেড ইন ইন্ডিয়া ছাপ দিয়ে আলিবাবা কম্পিউটার ব্র্যান্ড করে বেচে দিচ্ছে।
অন্যদিকে আছে সফটওয়্যার আর বিপিও। সেটা এখন জয়ন্ত দেখছে। সঙ্গে নতুন কিছু ভাবছে। অমিতাভর এগুলোর চেয়ে ইন্টারেস্ট বেশি সিনেমায়। একসময় কলেজে পড়াকালীন স্বপ্ন দেখতো সে ঋত্বিক ঘটক হবে। সিনে ক্লাব, বার্গম্যান, ফেলিনি, কুরোসাওয়া অনেক করেছে। তাই মিডিয়া ডিভিশনের দায়িত্ব নিয়েছিল। তারপরে যা হয়। জয়ন্তর মনে হতে লাগলো মিডিয়া ডিভিশন খুব কাজের কিছু না। কবীর স্যান্যাল বেকার ডোবাচ্ছে।
কবীর স্যান্যাল, অমিতাভ আর জয়ন্ত- তিনজনে মিলে বানিয়েছিল কোম্পানি। কবীর তখন সবে ঘাড়ধাক্কা খেয়েছে সুখবাজার থেকে। বেশ ঘোড়েল মাল। সাধারণ সাংবাদিক ছিল। সেখান থেকে প্রথমে ধরলো শান্তি চ্যাটার্জীকে। সেবারের বিধানসভা নির্বাচনে শান্তি খুব মার খেল। তখনো ফেডারেশন ইন্ডিয়াতেই ছিল শান্তি। কেন্দ্রে তখন ফেডারেশন ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী তরুণ কুমার মারা গিয়ে দল চালাচ্ছে দক্ষিণের রামী রেড্ডি আর সীতারামাইয়া জোট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রলয় মুখার্জী। একমাত্র বাঙালি যার তখনো কিছু গুরুত্ব আছে দলে। আলো বসু আর শান্তি দুজনকেই সমান মদত দিলেন। মারমার কাটকাট লেগে গেল বাংলায়। প্রলয় খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে এই কাজটা করতে পারেন। তিনি নিজে কোনোদিন সংগঠন করেননি তেমন করে। তাঁর দলের মধ্যে গুরুত্ব আছে ম্যানেজমেন্ট-এর কাজে। দলের বাইরেও সে কাজ তিনি করে থাকেন। যে কারণে বিধানসভায় তিনি কক্ষণো নির্বাচনে দাঁড়ান না। প্রত্যেকবার রাজ্যসভার নির্বাচন যেতেন। সব দলই তাঁকে সহায়তা করে, তিনি সে সহায়তা সময় মতন ফেরত দিয়ে থাকেন বলে। আলো বসুকেও তিনি সহায়তা দিয়েছেন। আলো বসু-ও তাঁকে দেখে রাখেন। অন্যদিকে শান্তি তরুণ ঝড়। কালে কালে কোথায় যাবে বলা যায় না। তাছাড়া রাজ্যের অন্য নেতারা শান্তির উত্থানে এখন সঙ্কিত। এমনকি তাকে যারা উঠতে সাহায্য করেছে এককালে তারাও সমস্যায় পরে তাকে নিয়ে। সে কারোর কথা শোনে না। সুতরাং রাজ্যে শান্তির অবস্থা শাঁখের করাতের মতন। এই সুযোগটা তিনি নিয়েই থাকেন। শান্তিকেও তিনি কিছু মদত দিয়ে থাকেন। কালে কালে যদি ফসল ফলে তাহলে তিনি ভাগ পাবেন তার।
আলোকে তিনি দিলেন বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ার সুযোগ। শান্তির প্রত্যেকটা পদক্ষেপের ইনপুট-ও দিলেন। শান্তিকে জুড়ে দিলেন হিন্দু সঙ্ঘের রামনারায়ণ সিনহার সঙ্গে। সিনহা শান্তিকে টাকা দিল। মুঙ্গের থেকে দেশী অস্ত্র আর অ্যাকশনের ট্রেনিং-এর জন্য মধ্যপ্রদেশ থেকে ঠাকুর দর্পনারায়ণের কিছু ছেলেপুলেকে দিল রামনারায়ণ। নিজেরাও মাঠে নেমেছিল হিন্দু সঙ্ঘ। কিছু ফেডারেশন আর কিছু সমাজতন্ত্রীদের মাসল পাওয়ার কিনে নিয়েছিল অনেক টাকা ছড়িয়ে। তারা বাইক বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছিল। শান্তিও উত্তেজিত হয়েছিল খুব। ঘটা করে সমাজতন্ত্রীদের শ্রাদ্ধ করেছিল গঙ্গার ধারে। সেই সময় শান্তির সঙ্গে সঙ্গে ছায়ার মত সেঁটে ছিল কবীর। বিধানসভায় হারলো ফেডারেশন। অত যে মারপিট হল সিটের সংখ্যায় তার প্রভাব নেই বললেই চলে। কবীর বললো এই হল সায়েন্টিফিক রিগিং। সুখবাজারে বড় করে ব্যানার হেডলাইন বেরোলো।
খেলাটা সহজ। অনেক বছর আছে ক্ষমতায় সমাজতন্ত্রীরা। পুলিশ থেকে সরকারি কর্মচারি সর্বত্র তাদের ইউনিয়নই ক্ষমতায়। পোলিং-এ যারা আধিকারিক তারা বেশিরভাগ হয় তদের জন্য চাকরি পেয়েছে, নয় পেয়ে অনুগত। কাজেই ব্যাপক জালি ভোট। কাগজের ভোট তখন। আর যদি না হয় তাহলে বুথ দখল, ব্যালট বাক্স নষ্ট। না হলে বাক্স বদলে দেওয়া। লক্ষ্মী প্রেস শুধু মাধ্যমিকের প্রশ্ন ছাপে না, রাতারাতি ব্যালটও ছাপে। এ নিয়ে হইচই হল। সেই সার। ভোটের পরে কবীরের বই এল বইমেলায়, ‘আগুনের শান্তি’ নাম। তারপরে অনেক জল গড়িয়েছে গঙ্গা দিয়ে। কবীর শান্তির কোর্ট থেকে চলে এসেছে সিদ্ধার্থর দরবারে। শান্তির সন্দেহ ছিল যে কবীরই প্রলয়কে সব খবর দিয়েছে তার। প্রলয় সে খবর দিয়েছে আলো বসু-কে। তাই সে হেরেছে। কবীর দিল্লিতে প্রলয়ের সঙ্গে মিটিং করেছিল ঠিক-ই। খবরও দিয়েছিল। কিন্তু সে সুখবাজারের মালিক সম্পাদকের জন্যই করতে হয়েছিল। তাদের কাছে যা যা খবর সব প্রলয়কে দেওয়াটা কাগজের পলিসি ছিল যে! সুখবাজারের মালিক প্রলয়কে খুঁটি করে রেখেছেন।
সুখবাজারে মালিক সম্পাদকের পরেই তার ঠাঁই হয়েছিল ইতিমধ্যে। আলোর ঘনিষ্ঠ বি সি সেন জিউয়েল গ্রুপ করেছেন। চিটফান্ড এবং ধীরে ধীরে হাসপাতাল, হোটেল, হাউসিং আরো কত কী! তিনি আলোর পরে সিদ্ধার্থকে ধরলেন। সেই সুবাদে কবীরকেও। সে একটা ফ্ল্যাট পেল শান্তিনিকেতনে। কবিগুরুর জায়গা। তার কাজ হল জিউয়েল গ্রুপের বিরুদ্ধে খবর না করা।
সুখবাজারের মালিক সম্পাদক আলোক সরকার সব দেখেন। নোট রাখেন। সময়ে সে সব কাজে লাগান। এটা তিনি শিখেছিলেন তরুণ কুমারের মা নলিনী দেবীর থেকে। নলিনী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ফেডারেশনের সর্বেসর্বা তখন তিনি এই নোট ব্যবস্থায় মিনিস্ট্রির সব সামলে রাখতেন। কবীর-ও যখন একদিন দেখলো যে শান্তিও তাকে আর পোঁছে না এবং প্রলয়-ও একটু ঠান্ডাই তার প্রতি, তখন সে বুঝলো তার অ্যাম্বিশনের অন্ত হতে চলেছে। সিদ্ধার্থ তাকে যা যা করতে বলছে তা সুখবাজার করতে দিচ্ছে না সবটা। মালিকের চাপে আটকে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থ শুধু কলকাতার রাজা, দিল্লিতে তুশ্চু। অতএব তাকে নিয়ে এত মাতামাতির দরকার নেই। মাঝেমধ্যে একটু ফুটেজ দিলেই হবে। কিন্তু মাঝেমধ্যের ফুটেজের জন্য সিদ্ধার্থ তাকে জায়গা দেবে কেন? জায়গা না দিলে সে তরোয়াল ঘোরাতে পারছে না। রাজ্যেই যদি সে প্রাসঙ্গিক না থাকতে পারে তাহলে দেশের মধ্যে তার অবস্থান বিগ জিরো।
সুখবাজারে একদিন সে হইচই করলো, যে সেই সব কাজ করে অথচ আলোক সরকার হুকুম চালান, এ হতে পারে না। আলোক সরকার আসরে নামলেন। কবীরকে ডেকে বললেন শান্তিনিকেতনের ফ্ল্যাটটা সে টাকা দিয়ে কেনেনি। সাংবাদিকের পক্ষে আনেথিক্যাল কন্ডাক্ট। চাকরী গেল। জেন্টলম্যানস এগ্রিমেন্ট হল। বাইরে কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলবে না। কবীরকে পি এফ, গ্র্যাচুইটি সব মিটিয়ে তিন মাসের মাইনে হাতে ধরিয়ে বিদায় দেওয়া হল। বেরিয়েই সে বললো সে রিজাইন করেছে। আলোক সরকার খবরের ‘বাল’ বোঝে। বাপের সম্পত্তিতে জমিদারি চালাচ্ছে। এরকম সামন্ততান্ত্রিক ব্যাপার সে মানতে পারছে না।
বেরিয়ে কবীর অমিতাভদের সঙ্গে এই খবর কলকাতা বানালো। সিদ্ধার্থ মদত দিল। কবীর সুখবাজারে সিদ্ধার্থর এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ সব করতো। সিদ্ধার্থর পার্টির কাগজের সার্কুলেশন যেখানে মাত্র দু লাখ সেখানে সুখবাজারের ছিল ঘোষিত ন লাখ। আদতে ছয় লক্ষ মতন। বিজ্ঞাপন পেতে হলে একটু অমন বলতে হত। সিদ্ধার্থ মাইলেজ মনে রেখেছিল। জয়ন্ত নিজের সোর্সে কবীরের সুখবাজারের খবর জোগাড় করলো। বলা ভাল আলোক সরকার তাকে খবর পাঠিয়ে দিল। তদ্দিনে নানা কাজে-অকাজে কোটি খানেক ঢুকে গিয়েছে খবর কলকাতার। কবীরের ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু লোক ভাল কামিয়ে নিয়েছে। শহরে কবীরের বড় বড় হোর্ডিং। জয়ন্ত বা অমিতাভ আলোতে নেই। সবাই কবীরদা কবীরদা করছে। মন্ত্রী-সান্ত্রীরা সকাল বিকেল কবীরকে ফোন করে হ্যাজাচ্ছে। সিদ্ধার্থ সকালে ঠিকঠাক পায়খানা করলো কি না তার খবর চাই। নইলে মন্ত্রীসভায় তার মেজাজ কেমন থাকবে বোঝা যাবে না।
জয়ন্ত যখনই মিটিং-এ বলে টাকা যাচ্ছে কিন্তু আসছে না তখনই কবীর তাকে চিকেন হার্টেড না হওয়ার জ্ঞান দেয়। আগে টাকা ছড়াতে হবে তবে আসবে টাকা। জয়ন্ত বেঁকে বসলো। সেই মূল ফিনান্সার। মাইনে বন্ধ হয়ে গেল খবর কলকাতার শুরুর আটমাসের মধ্যেই। আর মাইনে বলে মাইনে। কবীর এ দিক থেকে রুস্তম। বাজারে যখন সাংবাদিকের মাইনে মাত্র পাঁচহাজার, তখন সুখবাজারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সে মাইনে সব করে দিল ন্যূনতম দশ হাজার। সুখবাজার থেকে দলে দলে এসেছিল ছেলেমেয়ে। চ্যানেল বন্ধ হব হব করছে। এমন সময় কবীর বললো এভাবে চলতে পারে না। জয়ন্ত এমন করবে জানলে সে সুখবাজার ছাড়তো না, বা সেখান থেকে এতজনকে আনতো না। সময়ক্রম, ঘটনাক্রম দুই গুলিয়ে দিল অবলীলায়। জয়ন্ত বললো সে ছেড়ে দিচ্ছে খবর কলকাতা। আর কবীরকে সুখবাজার যে তাড়িয়েছে তার সব প্রমাণ তার কাছে আছে। মিটিং খতম। অমিতাভর হাতে খবর কলকাতা। কবীর, জয়ন্ত দুজনেই দু দিকে হাওয়া।
অমিতাভ লোন নিয়েছিল। লোনটা পাইয়ে দিয়েছিল অনুরাগ। সিদ্ধার্থর দলের সঙ্গে তার সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠিতা। চীনের মাল আনার সুবাদে সকলেই দু পয়সা পেয়ে থাকে। সে ওই দলের ব্যাঙ্ক কর্মী ইউনিয়নের একজনকে ডেকে বলেছিল লোনটা করে দিতে। সে নেতা কেষ্টুবিষ্টু। লোন ম্যানেজারকে অন্য কেসে ফাঁসিয়ে দেবে ভড়কি দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের লোন করে দিল। লোন ম্যানেজার এবং ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার দুজনেই তখন বেশ কটা ঘাপলা করে ফেলেছে। সঙ্গে আবার লোন ম্যানেজারেরা একটু ইন্টুমিন্টু দোষ আছে। সে সব মোবাইলে তোলাও আছে। লোন না হলে বাজারে চলে আসবে হুমকিতে লোন হয়ে গেল। সেই টাকাতেই চলছে এখন। আজ অমিতাভকে আবার যেতে হবে ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্ক ডেকেছে। ব্যাঙ্কের ভয় হচ্ছে এই লোনটা বোধহয় এন পি এ হবে। নন পারফর্মিং অ্যাসেট হবে চাঁদিরহাটের জমিটা, সেটাই বন্ধক আছে। জমিটা অমিতাভ সরকারের থেকে পেয়েছিল এক টাকায়- কম্প্যুটার যন্ত্রাংশ বানাবে বলে, যা কোনোদিনই হল না আর।
পাশ ফিরলো সে। মাথায় শক্ত কি একটা লাগলো! খুব কষ্ট করে চোখ খুলে দেখলো নীতার ব্রা-এর হুক। নীতা পাশে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। একটু পাশ হয়ে নীতার উদোম বুকে হাত রাখলো। থলথল করছে বুক। কেমন যেন নেতিয়ে পরে আছে। নীতা তার চ্যানেলের একটা নতুন প্রোগ্রামের নতুন অ্যাঙ্কর। কাল রাতে পার্ক স্ট্রীট নিয়ে গেছিলো তাকে। সেখান থেকে সোজা এখানে, বাঙ্গুরের এই ফ্ল্যাটে। এটার কথা বউ-ও জানে না। নীতা বেশ ভাল মেয়ে এমনিতে। কোনো নখরা নেই। এখানে আসার কথা বলতে মিষ্টি হাসলো। তারপরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বরকে বলে দিল রাতে শ্যুটিং আছে বিশেষ। ফ্লোরে থাকবে, কথা বলতে পারবে না। বলে ফোন বন্ধ করে দিল। বাড়ি ফেরাটেরার কথা নিয়ে কোনো কথাই নেই। নীতার বুকটা টিপে ধরলো একবার। নাহ্! কোনো সাড়া নেই। ভাল্লাগলো না তার। কেমন ক্লান্ত লাগলো। আবার চোখটা বন্ধ করতেই ফ্ল্যাটের বেলটা বেজে উঠলো।
উফফ্! কে? ড্রাইভার সতীনাথ ছাড়া আর কেউ জানে না সে এখানে। বউ জানে সে আজ দিল্লীতে। বিশেষ মিটিং আছে। সতীনাথই হবে। শালা, শুয়োরের বাচ্চার কি দরকার এত সকালে? একবার ভাবলো চোখ বন্ধ করে শুয়েই থাকে। আবার বেল বাজতে বিরক্ত হয়ে উঠলো। নীতার সাড়া নেই এখনো। বেডরুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরের ঘড়িটা দেখল।
উমম্? একটা বাজে? যাহ শালা! শিট্! ব্যাঙ্ক!...মদটা না...
কোনো রকম টাল সামলে নিল। এখনো পায়ের জড়তা কাটেনি। দরজার আই হোলে চোখ রাখলো। ও কী? তাপস?
আই হোল থেকে চোখ সরিয়ে একবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। এতো তাপস! ঘুঘুবাজার অ্যান্টি রাউডি সেকশনের এস আই!
ঠিক কি ভাববে সে বুঝতে পারছিল না। বেল বেজেই চলেছে অধৈর্য্য। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে উঠে এসেছে। নীতা ন্যাংটো ঘুমোচ্ছে। বেশিক্ষণ অমন থাকলেই শীত করবে নিগঘাত। এসি চলছে ফুল।
এবারে দরজায় ধাক্কা। কোনো রকমে চাদরটা ঠিকঠাক কোমরের কাছে তুলেই দরজাটা খুললো। তাপস প্রায় ঝড়ের মত ঢুকলো। কোনো কথা না বলে ফোন বাড়িয়ে ধরলো। তাপসের মুখটা থমথমে। তাপস এমনিতে বেশ জলি ছেলে। অথচ...
ফোনটা হাত বাড়িয়ে ধরল।
-কথা বলুন।
ও প্রান্তে কেউ আছে তার মানে! কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে।
-হ্যাহ্...হ... হ্যালো
-সুইসাইড করার ইচ্ছে থাকলে ঘুমের ওষুধ খেতে না হয়! এভাবে মরার কোনো মানে হয়? তোমার চ্যানেলটা খোলো।
-হ্যাঁ।
যন্ত্রচালিতের মতন সে রিমোট খোঁজে। রিমোট তাপসের হাতে। টিভি অন হয়ে গিয়েছে। সে খেয়াল করেনি। চ্যানেল সার্ফ করছে তাপস।
-৩৬-এ, ৩৬-এ...
তাপস নির্বাক। ৩৬-এ দেয়। তাপসের চ্যানেল চেঞ্জ করার মধ্যেই তার মনে হয় গলাটা চেনা, কিন্তু খুব চেনা কি? তাকে তুমি বলছে মানে চেনাই। কে?
-দিচ্ছে। আপনি?
-মদ, মেয়েছেলে! মনে আর রাখবে কী করে?
-আপনি কে বলছেন?
তার এবারে একটু রাগ হয়। ছোটবেলা থেকেই সে একটু রগচটা। শালা, আমি কি করবো তা তুই ঠিক করবি নাকি?কে রে শুয়োরের বাচ্চা?
-অমানিশ। অমানিশ চক্রবর্তী।
চ্যানেল এসে গিয়েছে। মাথাটা তার এখনো...
লোক দৌড়চ্ছে। পেছনে তাড়া করে আসছে পুলিশ কতগুলো। এটা কী?কী হচ্ছে?
-এটা কী?
-তুমিই বল এটা কী? সিদ্ধার্থদার রাজত্বে বসে তুমি তাকেই বাঁশ দিচ্ছ? কাল এতবার কথা হয়েছে আশিষের সঙ্গে যে তোমরা এটা দেখাবে না। কেউ দেখাবে না। প্ল্যানেট সুখ পর্যন্ত দেখায়নি। তুমি দেখিয়ে দিলে?
এবারে বসে পড়ে অমিতাভ। ভাঙ্গুর? সর্বনাশ। এটা কী করে...
[ধারাবাহিক]