এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • গ্রেডেশান প্রথা ও বর্তমান শিক্ষার ভবিষ্যত

    আমোদ বোষ্টুমি লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১৩২৫ বার পঠিত
  • বঙ্গীয় শিক্ষাব্যবস্থার নতি কোন অভিমূখে যাইতেছে, তাহা অধুনা প্রবর্তিত "গ্রেড" ব্যবস্থার ফলাফল হইতে অচিরেই নিরূপণ করা যাইবে।
    এমনিতেই "ছাত্রানামধ্যয়নং তপ:" - এই মূলমন্ত্রটি বর্তমান ছাত্রসমাজ সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হইয়াছে; তদুপরি উহাদিগের মন ভুলাইবার যাবতীয় সরঞ্জাম ইতোমধ্যেই সর্বত্র মজুদ।
    সর্বোপরি গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন, "গ্রেড" প্রথার প্রবর্তন।
    পরীক্ষায় ভালো ফল করিয়া, সহপাঠিদিগকে হারাইয়া দিয়া দু একটি নম্বরের ব্যবধানে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করিবার সেই স্বর্ণযুগ সমাপ্ত হইতে চলিল।
    একএকটি নম্বর লাভের জন্য ছাত্রকূলের মধ্যে যে স্বাস্থ্যকর রেষারেষি প্রচলিত ছিলো, তাহা বোধকরি বিলুপ্তির পথে। অন্যান্য রাজ্যে এই প্রথা আগেই গৃহীত হইয়াছিলো, অত:পর বঙ্গভূমেও তাহা শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্রমশ: গ্রাস করিয়া লইল।
    অলিম্পিকের দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দৌড়বাজের মুখের হাসিটি কখনো মন দিয়া লক্ষ্য করিয়াছেন কি? শুধু দৌড়বাজ কেন? সাঁতারে, জিমন্যাস্টিকে, লংজাম্পে, হাইজাম্পে, সর্বত্রই দ্বিতীয় স্থানাধিকারীদিগের হাসির মধ্যে একটি সূক্ষ্ম, অতি সুক্ষ্ম হইলেও প্রচ্ছন্ন আফশোসের রেখা ফুটিয়া উঠে। অতি অল্পের জন্য, প্রথম স্থানাধিকারী হইতে পিছাইয়া পড়িবার আফশোস। আবার, আরো গভীরে বিচার করিলে যে তৃতীয় স্থান পাইয়াছে তাহার মুখেও দ্বিগুণ আফশোস জমা হইতে থাকে। এইরূপে চতুর্থ, পঞ্চম ইত্যাদি, অর্থাৎ আরো পরে যাহাদিগের স্থান, তাহাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই আফশোস কম বেশি জমিতে থাকে।
    লম্ফ ঝম্ফ হউক বা পঠন পাঠন, কে না জানে যে, তুমুল প্রতিযোগিতা ও আফশোসের সহাবস্থানই প্রতিযোগিদিগের মধ্যে "আরো ভালো ফল" করিবার উৎসাহ চাগাইয়া দিয়া থাকে। প্রথম স্থান কেবল যে একজনেরই প্রাপ্য তাহা জানা সত্ত্বেও কাতারে কাতারে ছাত্র যে "খুড়োর কল" কে লক্ষ্য করিয়া ছুটিতে থাকিত, অদূর ভবিষ্যতে তাহার স্থান হইবে যাদুঘরে।
    গ্রেড প্রথায় পরীক্ষার ফলের সূক্ষ্ম বিচারের অবকাশ নাই; ইহা গড়পড়তা প্রাপ্ত নম্বরের ব্যবধানে এ, বি, সি, ডি ইত্যাদি গ্রেডে ফেলিয়া ছাত্রদিগের মেধা নির্ধারণের একটি গোদা পদ্ধতি মাত্র।
    ইহা প্রবর্তিত হইলে, কে প্রথম কে দ্বিতীয় তাহা লইয়া কাহারো মাথাব্যথা থাকিবে না। গর্ব করিয়া "আমার পুত্র তোমার কন্যা হইতে দু নম্বর বেশি পাইয়াছিলো" জাতীয় ফুটানি মারিবার অবকাশ আর থাকিবে না।
    "আমি অমুক সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অ্যাত্তো নম্বর পাইয়া অমুক র‌্যাঙ্ক করেছিলাম" - গর্ব করিয়া এইটুকু বলিতে পারিবার উপায়ও যদি অবশিষ্ট না রহিল, তবে আর বাকি রহিল কী? মুড়ি-মুড়কির মূল্য সমান হইয়া গেলে, পরীক্ষা ব্যবস্থাও ক্রমশ: অবনতির পথে যাইতে বাধ্য, যাইবেও, -ইহাতে আশ্চর্যের কিছু নাই। এই প্রথা পুরোদমে চালু হইলে হয়ত কম্পিটিশানের নিমিত্ত পথের কাঁটাস্বরূপ নিজের সহপাঠিকে অবলীলাক্রমে হত্যা করা, পরীক্ষায় কাঙ্খিত স্থান অধিকারে ব্যর্থ হওয়ায় সে গ্লানি মোচনে আত্মহত্যা, ইত্যাদি রোমাঞ্চকর ঘটনাবলী ক্রমশ: দ্রুতহারে হ্রাস পাইতে থাকিবে।
    তুমুল প্রতিযোগিতার নেশা নাই, হতাশার পরিনতি স্বরূপ রোমাঞ্চকর হত্যাকান্ড বা আত্মহত্যার সংবাদও ক্রমহ্রাসমান, এমনকি হয়ত ইহাও হইতে পারে যে, সারা রাজ্যব্যাপী একই দিনে সমস্ত ছাত্রকুলের পরীক্ষাগ্রহণ প্রথা, তাহাও রদ হইয়া গেল।
    লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর একই দিনে পরীক্ষা, প্রত্যেকের একই প্রশ্নপত্র, পরীক্ষাকেন্দ্রের সম্মুখে সশস্ত্র পুলিশবাহিনী, এইরূপ টানটান উত্তেজনাময় পরিবেশ, এই সমস্ত উৎকন্ঠাই এক যাদুমন্ত্র বলে হয়ত বিলুপ্ত হইয়া গেল। কিছুই অসম্ভব নহে।
    কে কহিতে পারে যে এই গ্রেড প্রথার প্রবর্তন সেই অশুভ দিনের সূচনারই সংকেত কিনা। হয়ত সেইদিন নিজ নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পরীক্ষা গ্রহণ পূর্বক ছাত্রদিগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করিবেন, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে তাঁহাদের সম্মুখে না থাকিবে কোনো প্রলোভন না থাকিবে কোনো প্রকার ভীতিভাব। সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণের পথে, ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে না থাকিবে কোনো দালাল, না থাকিবে কোনো উৎকোচ, না থাকিবে কোনো প্রাণনাশের হুমকি। এই প্রথা তেমন কলিকালেরই পূর্বাভাস কি না কে বলিতে পারে!

    পাঠকদিগের জ্ঞাতার্থে জানাইতেছি, যে সম্প্রতি খবরে প্রকাশ সিলেবাস অপরিবর্তিত রাখিয়াই আগামী শিক্ষাবর্ষ হইতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রবর্তিত হইতে চলিয়াছে গ্রেডেশান প্রথা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তথা শিক্ষক সংগঠন গুলির রায় - কালবিলম্ব না করিয়া এ প্রথা ষষ্ঠ শ্রেণী হইতেই চালু হউক।
    অত:পর অপেক্ষা শুধু সরকার বাহাদুরের প্রয়োজনীয় সম্মতি লইয়া শুভারম্ভ করিবার।
    প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে পাঁচটি স্তরে বিভক্ত হইয়াছে গ্রেডেশান ব্যবস্থা।
    ১০০-৮০(এ), ৭৯-৬০(বি), ৫৯-৪৫(সি), ৪৪-৩৫(ডি), ৩৪-২৫(ই)।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১৩২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন