এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • যাঁরা বদলে দিতে পারেন (শেষ পর্ব)

    সায়ন্তন মাইতি লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২৮৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২ | শেষ পর্ব

    এই গুলিয়ে ফেলা থেকে আরো বড় বিভ্রান্তি জন্ম নেয়। মধ্য যৌনতায় (খেয়াল করবেন, ‘মধ্যলিঙ্গ’ বলি নি) অবস্থানকারী মানুষরা যেহেতু ‘ট্রান্সজেণ্ডার’ এর অংশ, তাই কেউ কেউ সমকামিতা আর অন্তর্বর্তী লিঙ্গকে একসূত্রে ফেলে দেয়। এদের উৎপাতেই ফেসবুকে ‘গে শি-মেল হিজড়ে’ নামের একাধিক পেজ অবস্থান করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সমানাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে, কিন্তু সাইটটাকে সাজানো হয় অন্তর্লিঙ্গ মানুষদের ছবি দিয়ে। অন্তর্লিঙ্গ ও সমপ্রেম দুটোই যেহেতু গোঁড়াদের বক্রদৃষ্টির আওতায়, তাই উদারপন্থীরা হিজড়ে ও সমকামীদের এক মঞ্চে বসিয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। চেতনা উদযাপক লেখায় অনেকে রূপান্তরিত, রূপান্তরকামী, ইউনাক, অ্যাণ্ড্রোজিনাস, বৃহন্নলা সব্বার কথা লিখে যান। বুঝি যে, তাঁরা দরদ দিয়ে লিখছেন, সমবেদনাও জাগাচ্ছেন পাঠকদের মধ্যে, কিন্তু উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে একের সাথে আরেকের পার্থক্য কিছুই বোঝাতে পারছেন না। ফলে ঠেলাগাড়ির ঠেলা খেয়ে সবাই গিয়ে পড়ছে ‘ট্রান্স’ বর্গে। ২০১৪-র এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে রীতিমতো গোপনীয়তার সাথে ‘রূপবান’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। পত্রিকা-কর্মীদের সক্রিয়তা প্রশংসনীয়, কিন্তু এখানেও সমকামী এবং হিজড়েদের জীবনযন্ত্রণার কথা এক আধারে রাখা হয়েছে। ২০১৫-র মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিজড়েদের উন্নয়নের জন্য আলাদা পর্ষদ গঠন করবেন বলে জানায়। এই অভিনব উদ্যোগ সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে একাধিক খবরের কাগজ দেখলাম হেডিং দিয়েছে, ‘রূপান্তরকামীদের উন্নয়নের জন্য বোর্ড গঠন করতে চলেছে সরকার’। পরের মাসেই প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন ফর্মের ‘সেক্স’ কলামে ছেলে, মেয়ের পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ অপশন চালু করার কথা জানায়। তখনো দেখি একই কাণ্ড। তার মানে, শারীরিক লিঙ্গভেদে মানুষের বৈচিত্র্য ও মনের যৌনতাভেদে মানুষের বৈচিত্র্য যে এক নয়, সেকথা এখনো অনেকের জানতে দেরি।


    সাহিত্যিকরা একরৈখিক চরিত্রায়ন ছেড়ে কি সংখ্যাগরিষ্ঠের এই ভুল ভাঙাতে পারেন না? ‘রূপান্তরকামী’ বা ‘লিঙ্গান্তরকামী’র সাথে মধ্যলিঙ্গদের (intersex) যে আকাশ পাতাল পার্থক্য সেটা আরো পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে পারেন না? সমকামিতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে কেউ যদি ঐসব ওয়েবসাইটের দ্বারা পরিচালিত হন, তাহলে তাঁরাও সেক্সুয়াল মাইনরিটি (তথাকথিত মাইনরিটি) ও জেণ্ডার মাইনরিটিকে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ছাড়বেন।  তাদের লেখায় ভুল বুঝবেন আরো অনেকে। কোথাও যেন ছেলে, মেয়ে দুইয়ের থেকেই ‘আলাদা’ – এই ভ্রান্তির সূত্রপাত এখান থেকেই হয়। অরবিন্দ নারিন ও গৌতম ভানের বিখ্যাত বই ‘বিকজ আই হ্যাভ আ ভয়েস’ ২৭ টা অসাধারণ প্রবন্ধ সম্বলিত। কিন্তু বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে প্রবন্ধের বক্তব্য  –  সবেই ঐ ‘বিসদৃশ মিশ্রণ’এর ছাপ রয়ে গেছে। দীপ প্রকাশনীর বইটার প্রশংসা আগেই করেছি। কিন্তু বইটার শেষের দিকে গিয়ে খারাপ লাগল। লেখকদ্বয় বইয়ের নাম দিয়েছেন ’সমপ্রেম’ অথচ হিজড়েদের নিয়ে গোটা একটা অধ্যায় লিখে ফেলেছেন। কী করে এর প্রাসঙ্গিকতা আসে আমার জানা নেই! গৌতম চক্রবর্তীর উল্লিখিত প্রবন্ধেও হঠাৎ করেই নপুংশকদের কথা এসেছে। মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অবমানব’ পত্রিকার (জেণ্ডার অ্যাক্টিভিস্ট) প্রত্যেকটা সংখ্যাই বৈজ্ঞানিক তথ্যসমৃদ্ধ, কিন্তু সেখানেও একই গণ্ডগোল  । অভিজিৎ রায় তাঁর বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়টা শুধুমাত্র উভলিঙ্গ মানুষের উপরেই লিখেছেন, সেখানে অন্যান্য অধ্যায়ের মতই বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন প্রাণীর উভলিঙ্গত্বর শিকড় খুঁড়ে দেখিয়েছেন ।  ‘সমকামিতা’ শিরোনামে যে বই, সেখানে উভলিঙ্গদের উপর একটা আলাদা অধ্যায় –এতে অনেক মানুষের বিভ্রান্তি বেড়ে যেতে পারে বলে আমি মনে করি । আর এসব কারণেই বিদেশী উপন্যাস পড়ার জন্য এত জোর দিচ্ছি। যৌনতা বিষয়টাকে এত শ্রেণীবিভক্তও করা নেই, কোনটা রূপান্তরকাম কোনটা লিঙ্গান্তরকাম, আচরণে কিংবা যৌনতায় কে কখন ছেলের আকার নিল, কখন মেয়ের আকার নিল – এত চুলচেরা বিশ্লেষণ নেই, অথচ আপনাকে পরিষ্কার করে কোন চরিত্র মননে কিরকম, বুঝিয়ে দেবে।


    আসলে LGBT-র ‘T’ নিয়েই অল্পবিস্তর বিভ্রান্তি তৈরী হয়েই রয়েছে। ‘T’ মানে যে আসলে কী, এটা অনেকের কাছেই ধোঁয়াশা। ‘T’ এর পুরো কথা Transgender, Transsex নয়। এর মধ্যে আছেন রূপান্তরকামী, লিঙ্গান্তরকামী ও মধ্য যৌনতায় অবস্থানকারী মানুষ। যৌনাঙ্গ নিরীখে যাঁরা ‘ট্রান্স’ তাঁরা এর মধ্যে পড়ছেন না। অথচ LGBT-র প্রসঙ্গে ‘ট্রান্স’ শব্দবন্ধটা এলেই দেখি সমকামিতার সমাক্ষরেখায় ‘ট্রান্সসেক্স’এর দিকে আলোচনা বাঁক নিচ্ছে। গুরুচণ্ডালির ‘আমার যৌনতা’ সংকলনে অধ্যাপক অনিরুদ্ধ   দত্ত প্রারম্ভিক প্রবন্ধে ‘T’-কে সূক্ষ্মভাবে কাটাছেঁড়া করেছেন।  কনফিউশন কাটানোর জন্য এই প্রবন্ধটা সবাইকে পড়ে নিতে বলব। তবে ঐ সংকলনে ও ‘অন্য যৌনতা’ সংখ্যায় কোনো কোনো লেখায় যোগসূত্র ধরে ‘ইণ্টারমিডিয়েট জেণ্ডার’এর কথা বলা কিংবা শিখণ্ডী, বৃহন্নলাদের আত্মজীবনী, কোতি ধুরানিদের কথা, লওণ্ডা নাচের ইতিকথা – এসব না রাখলেই ভালো হত। ঠিক যেমন আমি এই প্রবন্ধে অমর দাস উইলহেলমের সমকামিতা বিষয়ক বইয়ের নাম বলেছি, তৃতীয় প্রকৃতি সংক্রান্ত একটা বইয়ের নামও বলি নি। কবিতা সিংহের একটা ছোটগল্পের কথা বলেছি কিন্তু বহুল পরিচিত ‘পৌরুষ’ উপন্যাসটার কথা বলি নি। স্যাফোর ‘অবমানবচিত্র’ বইটার নাম বলি নি। ছেলে-মেয়ে-হিজড়ে এই বিভাজনটা লিঙ্গভিত্তিক আর সমকামী-বিষমকামী-উভকামী প্রভৃতি বিভাজন যৌনতাভিত্তিক, আর LGBT গোষ্ঠীটা তৈরী হয়েছে যৌনতা নিরীখে – এই সত্যগুলো গুরুচণ্ডালি যদি আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিত, তাহলে বইদুটো আরেকটু ‘পারফেক্ট’ হত বলে আমার মনে হয়। ঈপ্সিতা পালভৌমিক যেমন ‘অসুখ সারান’এ মূল প্রসঙ্গ থেকে একচুলও বিচ্যুত হন নি। পুরো বইটাই সমপ্রেমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।


    এ প্রসঙ্গে একটা ওয়েবসাইট সবাইকে দেখতে অনুরোধ করবঃ http://orinam.net/ । এত সুশৃঙ্খল আলোচনা খুব কম ওয়েবসাইটেই আছে। অন্যান্য বিভাগে যাওয়ার আগে ‘Friends and Family’ অংশের ‘terminology’ পেজটা পড়ে নিন। অনেক আপাত ‘জটিল’ জায়গা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া রয়েছে অনেক ‘কামিং আউট’ স্টোরি, প্রাত্যহিক খবরের যাবতীয় আপডেট, হোমোফোবিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার করার আবেদন, অনেকগুলো সাপোর্ট গ্রুপের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম – আরো অনেক কিছু।


    মূলস্রোত থেকে আলাদা লিঙ্গ ও আলাদা যৌনতা –সবকিছুকেই একত্রিত করে ‘ক্যুয়ের’ বা ‘তৃতীয়’ বর্গে ঠেলে দেওয়ার মিসকন্সেপশনের স্পষ্ট সদুত্তর রয়েছে দমদমের ‘চন্দ্রগ্রহণ’ পত্রিকার ১৪২১ পূজাবার্ষিকীতে। ড.বুলা ভদ্রর সাক্ষাৎকার এবং ডা.অনিন্দ্য কুমার রায়ের প্রবন্ধ। প্রথমজন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা, দ্বিতীয়জন আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজের ‘জেণ্ডার ট্রানজিশন রিলেটেড হেলথ সার্ভিসেস কমিটি’র নোডাল অফিসার ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। দুজনেই বলেছেন, বাংলা প্রতিশব্দ অভিন্ন হলেও sex এবং gender এক নয়। প্রথমটা জন্মার্জিত লিঙ্গ, দ্বিতীয়টা মানসিক অনুভূতি প্রসূত যৌন পরিচয় (খেয়াল করবেন, gender-এর বাংলা প্রতিশব্দে ‘লিঙ্গ’ কথাটা ব্যবহার করি নি, ‘যৌন পরিচয়’ বলেছি)। একজন মানুষ যে sex নিয়ে জন্মাবেন, gender-ও তার মতই হতে হবে এই ধারণাটা সম্পুর্ণ ভুল এবং সমাজ প্রত্যায়িত। বুলা ভদ্র আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘মনের লিঙ্গ’ বলে কিছু হয় না। তাঁর মতে, চেতনা বা আচরণে কে কোন লিঙ্গের মত এটা সম্পূর্ণ সমাজ আরোপিত এবং বাস্তবিক এই দ্বিভাজন ভিত্তিহীন। অনিন্দ্য কুমার রায় চিকিৎসাশাস্ত্রের আঙ্গিকে সেক্স ও জেণ্ডারের যাবতীয় পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করেছেন। সেক্স এবং জেণ্ডার- কোনটা কখন সিস্, কখন ট্রান্স – সব পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। অনুরোধ করব, এরপর যদি কোনো পত্রিকা সমপ্রেমকে বিষয় করে লিখতে চান, এই লেখাদুটো পুনর্মুদ্রণ করুন। বইটা পাতিরাম আর ধ্যানবিন্দুতে এখনো পাওয়া যাচ্ছে। চন্দ্রগ্রহণের থেকে স্বত্বাধিকার চেয়ে নিন। যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যম দিয়ে রাখলাম। ডাকযোগ- ‘৭, বরদাকান্ত রোড, দমদম, কলকাতা ৭০০০৩০’, মেল - chandragrahan2005@gmail.com, ফোন- ৯৮৩১৬৭৯৩৭৭।


    পাশাপাশি এই বইতে রয়েছে ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্ট প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায় এবং মামলা চলাকালীন সমস্ত সাক্ষ্যের বিস্তারিত অনুবাদ । বাড়তি দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক কবিতা। মন্দাক্রান্তা সেনের সাতটা কবিতাই মুগ্ধ করে দেওয়ার মত। অ্যাণ্ড্রোজিনাসদের নিয়ে লেখা সোহিনী ঘোষের ‘যে জন আছে মাঝখানে’ একাধারে তথ্যবহুল এবং মর্মস্পর্শী। কিন্তু এইসব সূচী সত্ত্বেও বইটার মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করতে পারছি না। কারণ সেই একই। সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন লেখায় গদ্যকাররা সমকামী আর হিজড়েদের এমনভাবে সহাবস্থানে রেখেছেন যে সাধারণ মস্তিষ্কের পাঠকরা দুটো আলাদা স্তম্ভকে ঘোঁট পাকিয়েই ছাড়বেন। যদিও চন্দ্রগ্রহণ সংখ্যাটার নামই দিয়েছে ‘তৃতীয় প্রকৃতি অথ বৃহন্নলা কথা’, অনেক পত্রিকা বা প্রবন্ধের মত সমকামিতা শিরোনাম দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের গল্প শোনায় নি। তা সত্ত্বেও হিজড়ে, বৃহন্নলাদের সাথে সমকামীদের এক ছাতার তলায় আনা যুক্তিসঙ্গত নয়। হয়তো চলতি কথায় ‘transgender’ আর ‘transsex’ প্রায় সমার্থক, কিন্তু উক্ত বিভ্রান্তিগুলো যখন এই চলতি প্রয়োগ থেকেই আসছে তখন আমার মনে হয় লেখক-লেখিকাদের এই ব্যাপারে আরো নিখুঁত হওয়া দরকার। চন্দ্রগ্রহণের গল্প, সাক্ষাৎকারগুলোতেও বারবার ট্র্যাক-বিচ্ছিন্ন হয়ে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কেন? ট্রান্সজেণ্ডারদের মধ্যে তো শুধুমাত্র রূপান্তরকামী, লিঙ্গান্তরকামী ও মধ্য যৌনতায় অবস্থানকারী মানুষেরা রয়েছেন, কারণ LGBT গোষ্ঠীটা ‘Gender’ বনিয়াদে তৈরী। সেখানে আমার মনে হয় না ‘Sex’ বিচারে ‘অপর’ মানুষরা এই গোষ্ঠীর অঙ্গ হতে পারেন । সবচেয়ে বড় ভণ্ডুল, এই সংখ্যায় বেনোজলের মত ঢুকে পড়েছে মলয় রায়চৌধুরীর ‘জুফিলিয়া বা পশুরতি’ নামের একটা প্রবন্ধ। সমকামিতা আর সোডোমি-কে ঘেঁটে ঘ বানানোর বিভ্রান্তি অনেকের আছে।  তাদের হাতে এই লেখা পড়লে ফল হিতে বিপরীত হবে।


    ‘কবিতা’ বলতে মনে পড়ল। ‘সমপ্রেম’এর কবিতা - এই ধারণাটা কোথাও যেন মনে হয় অবান্তর। কারণ, প্রেমের কবিতা মানেই তো সমপ্রেম, বিষমপ্রেম দুইই তার অংশ।  ‘বিষমপ্রেম’এর কবিতা বলে যদি আলাদা ঘরানাকে চিহ্নিত না করি, সেখানে ‘সমপ্রেম’ চিহ্নিত করব কেন? রবীন্দ্রনাথের বেশিরভাগ প্রেমের কবিতা পুরুষকণ্ঠে নারীকণ্ঠে সমান মানানসই। তাহলে যে প্রেম কবিতার ছত্রে ছত্রে উদ্বেলিত, তাকেও বা কেন একটা ছকের মধ্যে বেঁধে রাখব? আমার নিজেরই লেখা একটা বিরহের কবিতার একটা অনুচ্ছেদ শোনাচ্ছি-


    ‘কী ভেবে চলেছি, জানতে চাইছো? প্রশ্নগুলোর পাতাছেঁড়া।

    বেসামাল হয়ে হিসেবে হোঁচট খাচ্ছি।

    যা শোনালে সব হলেও মিথ্যে

    ভালোবাসা কেউ পারে না জিততে।

    ফালা-ফালা করা কথা-ভাঙা-গড়া আজ তাই বসে ভাবছি

    এখনো তোমায় আলগোছে ঠোঁটে মাখছি।’


    ....এবার বলুন তো, এ কবিতা কার জবানিতে বলা? আমার পরিচয় আপনার জানার দরকার নেই। আপনি দেখুন পুরুষ বা নারী – কাউকে নির্দিষ্ট করে এ কবিতার কাব্যকথক বলতে পারবেন কিনা! তা-ই যদি না পারেন, তাহলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিও নিশ্চয় জেণ্ডার-ইনডিপেণ্ডেণ্ট। আর সে ক্ষেত্রে নারীর প্রতি পুরুষ, পুরুষের প্রতি পুরুষ, নারীর প্রতি নারী, পুরুষের প্রতি নারী – চারটে সম্ভাবনাই প্রতীয়মান।


    অবশ্য অনেক কবিতাতেই কবি নিজলিঙ্গের বকলমে রোম্যাণ্টিকতা উজাড় করেন। বাংলা সাহিত্যে লিঙ্গ নিরপেক্ষ কবিতার সংখ্যা বেশি হলেও এঁদের ক্ষেত্রে ‘হেটারোসেক্সুয়্যাল’ প্রেমই প্রতিফলিত হয়। এখন, এক্সক্লুসিভ হেটারোসেক্সের মত পাল্লা দিয়ে এক্সক্লুসিভ হোমোসেক্সের কবিতা লিখতে গেলে সমস্যা হবেই। কবিতার নির্গলিতার্থ প্রেমে আবদ্ধ না থেকে এটা যে ‘সমপ্রেম’, সেই পয়েণ্টে এসে ঠোক্কর খাবেই। গল্পে এড়িয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু কবিতা নিজেই ভাবপ্রধান মাধ্যম বলে সেখানে এড়ানো যাবে না। বরং বেশি করে ফুটে উঠবে, কারণ সমপ্রেমীদের সমানাধিকার এখনো আন্দোলনের অংশ । তা সত্ত্বেও সাম্যরক্ষার কথা মাথায় রেখে বলছি, স্বতন্ত্র সমপ্রেমের কবিতায় অতিরিক্ত শরীরী উচ্ছ্বলতা পরিহার করুন (‘অতিরিক্ত’ কথাটা খেয়াল করবেন)  । গল্পের লম্বা পরিসরে উদ্দাম কামুকতা চলতে পারে  । কিন্তু কবিতায় যৌনক্রিয়ার চাকচিক্য বেড়ে গেলে প্রেমের মাধুর্য, লালিত্য যে বিষমপ্রেমের মত সমপ্রেমেও একই অনুরণনে বিদ্যমান, সেই বোধ থেকে কোথাও যেন পাঠকরা সরে যাবেন। বিশেষ করে সেই পাঠকরা, যারা সমপ্রেমকে সাহিত্যে দেখতে অভ্যস্ত নন।


    সমতা পরিব্যাপ্ত করতে চাইলে সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত সামনে রাখুন। ‘চন্দ্রগ্রহণ’এর LGBT সংখ্যাটায় মন্দাক্রান্তা সেনের কবিতা ছাড়াও অনেক কবিতাই শ্রুতিসুখকর। কিছু কবিতায় পরিমাণমত যৌন ইঙ্গিত রয়েছে। ‘চন্দ্রগ্রহণ’ বাদ দিলেও এদিক ওদিক থেকে অনেক কবিতা পাওয়া যাবে। স্যাফো পাবলিকেশনের কবিতা সংকলন ‘মানবী তোমার নাম’ ও ‘ট্যাণ্টালাস জানে’ কিনে নিতে পারেন। ১১.১২.১৩-র পর অনেক লেখক-লেখিকাকে দেখেছি সরাসরি ফেসবুক টাইমলাইনে সমপ্রেমের কবিতা লিখে প্রতিবাদ জানাতে। দেবায়ুধ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমাদের হোমো কবিতা’র কিছু অংশ না তুলে পারছি না। ‘প্রথমা’ পত্রিকায় ২০১৪-র ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিতঃ


    ‘....


    কেননা এই দেশ

    মায়াবী উপত্যকায় দেখে নি কীভাবে দুই নদ ইচ্ছেমতো মিলে যেতে পারে

    কীভাবে সমুদ্র আজও অহর্নিশ স্রোতটুকু টেনে বিলুপ্ত মাতাল থাকে

    সি বিচের বালিমাখা গায়ে

    আজও রোজ কাঁটাতার সীমানা পেরিয়ে

    ব্রহ্মপুত্রও যমুনা হয়, দেখেও দেখে নি তারা? বুঝেও কি আসলে বোঝে নি

    প্রতিটি পুরুষ কিন্তু ভেতরে ততই নারী, নারীও পুরুষ যত

    ভেতরে কেননা আজও

    ভালবাসা অথবা চাহিদা লিঙ্গের প্রসঙ্গে ঠিক

    আইনের তোয়াক্কা করে না?’


    বাংলা কবিতায় সমপ্রেমের ছাপ আগেও এসেছে। খণ্ড খণ্ড সেইসব উদাহরণ আমি পেয়েছি অর্ণব সাহা-র ‘সাহিত্যে সমপ্রেম’ প্রবন্ধ থেকে। ‘আগামীকাল’ পত্রিকার জানুয়ারী ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত। তবে তাদের আবেদন এমন কিছু জোরালো নয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আগামীকালের উক্ত সংখ্যায় আমারও একটা প্রবন্ধ ছিল সমকামিতার উপর। অথচ সংখ্যাটার প্রচ্ছদকথা ছিল ‘সেলফি’। অন্যান্য রকমারি বিষয়ের উপরও লেখা ছিল। তার মানে, সমকামিতার দিকে আঙুল তুলে ‘ক্যাটেগোরিটি’ আরোপ না করে অন্যতম বিষয় হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে  । বেশিরভাগ পত্রিকাই এই জায়গায় সমকামিতার উপর একটার বেশি দুটো প্রবন্ধ রাখলে বিষয়টাকে প্রচ্ছদে পাঠিয়ে দিত, বা আরো কিছু লেখা জোগাড় করে ‘বিশেষ LGBT সংখ্যা’ নাম দিত। কিন্তু আগামীকাল সেসব কিচ্ছু করে নি, সূচীপত্রে ‘প্রসঙ্গঃ সমকামিতা’ নামের কোনো সাব-হেডিং দিয়ে আমার আর অর্ণব সাহার নাম আলাদা করেও লেখে নি। আগামীকালের এই প্রকাশভঙ্গি কুর্নিশযোগ্য। মানুষকে সমদর্শী করতে চাইলে যে কোনো ‘জেণ্ডার অ্যাক্টিভিস্ট’ পত্রিকার থেকেও এটা অনেক বেশি অনুসরণীয়।


    গল্পের ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় এই অন্বয়ে এগোনো উচিত। আলাদা করে ‘সমকামী’দের গল্প না বানিয়ে অনেক চরিত্রের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ এখনই চালু হওয়া দরকার। শুধুমাত্র সমকামিতাকে উপজীব্য করে কাহিনী বানালে ব্যাপারটা চিহ্নিত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এভাবে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সহানুভুতির মাত্রা বাড়ানোর কোনো দরকার আছে কি? সমবেদনা জানানো যেতে পারে কোনো অবলুপ্তপ্রায় বিষয়কে,  মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নয়। তাই আবেগ-সম্পৃক্ত যে কটা বইয়ের নাম অনুবাদ বা অনুকরণের জন্য বলে এসেছি, সে কটাই যথেষ্ট। এগুলো ব্যতিরেখে সমপ্রেম দেখাতে চাইলে আপনি সাতরঙা ফুলের সাতটা পাপড়ির মধ্যে একটা রঙের উপর খোদাই করুন। পাঠকরা সেই ফুল শুঁকতে শুঁকতে আলাদা করে ঐ পাপড়িটাকে শনাক্ত করতে পারবে না। এভাবেই তাদের গ্রহণক্ষমতা বাড়বে। আর এক্ষেত্রেও পথিকৃৎ সায়ন্তনী পূততুণ্ডর ‘ছায়াগ্রহ’। সেখানে অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হিসেবে সমকামিতা এসেছে। ব্যক্তিগত মত জানাচ্ছি, ‘হলদে গোলাপ’, ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ’ প্রভৃতির থেকেও ‘ছায়াগ্রহ’কে আমার বেশি শক্তিশালী মনে হয়েছে (যদিও ‘হলদে গোলাপ’ নিঃসন্দেহে এই বিষয়ের উপর লেখা সবথেকে পরিশ্রমসাধ্য উপন্যাস)। কারণ বাকীরা ‘LGBT-সাহিত্য’ –এই গোষ্ঠীপরিচয় ছেড়ে বেরোতে পারে নি। কিন্তু ‘ছায়াগ্রহ’ সম্পর্কে সেই পুরানো কথাটা প্রযোজ্য- ‘not a great piece of gay literature, but a great piece of literature full stop’। হয়তো অনেকে একমত হবেন আমার সাথে, এই ধারাটাই আমাদের সমাজ বদলানোর ক্ষেত্রে সবথেকে কার্যকরী।


    প্রতিবাদী সৃষ্টিগুলোও এভাবেই হোক। একটা উদাহরণ দিই। জেণ্ডার অ্যাক্টিভিস্ট পত্রিকা ‘ফেমিনা’র ২০১৫-র ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় দেবায়ুধ একটা গল্প লিখেছিল ‘নতুন আলোর ঠিকানা’। PDA দমনে সাম্প্রতিক উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বর্বরতার বিরুদ্ধে বারুদবিক্ষোভ উজাড় করার গল্প । গল্পের মাঝে একটা অংশে জানা গেছে নায়িকার পূর্বে একজন প্রেমিকা ছিল। গল্পের নায়ক সেই ‘প্রেমিকা’কে দেখে সাময়িক ঈর্ষান্বিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই ঈর্ষা রোজকার ঘটে চলা হেটারোসেক্সুয়াল ত্রিকোণ প্রেমের মত । গার্লফ্রেণ্ড উভকামী বলে বাড়তি কোনো বিকর্ষণ কাজ করে নি। এখন, এমন ঘটনা তো বাস্তবে হয় না বললেই চলে। দেবায়ুধ তাও লিখেছে। এতে সমপ্রেম বিষমপ্রেমের মত নিরেট আকার পেয়েছে। বিশেষত সংশ্লিষ্ট চরিত্ররা যখন অত্যন্ত উদারমনস্ক এবং সঙ্ঘের সমস্ত নোংরামির বিরুদ্ধেই সমানভাবে জেহাদি। ...এইভাবেই স্ব-সংজ্ঞায়িত ‘সংস্কৃতিবান’দের আক্রমণ করে আরো কলম পিষতে হবে। তাতে ওরিয়েণ্টেশন নির্বিশেষে এমন ছেলেমেয়ে ঘরে ঘরে আরো তৈরী হবে, যারা ভালোবাসার মানুষের সাথে প্রকাশ্যে kiss of love-এ অংশ নেওয়ার জন্য কারোর চোখ রাঙানির পরোয়া করবে না  ।


    প্রতিবাদের লাভা ছড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু মনে রাখা দরকার, দিনের শেষে নিটোল প্রেমের বর্ণনাই মানুষের মানসিকতা বদলের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র। তাই নখদন্ত-বিকশিত প্রতিবাদের মধ্যেও প্রেমের ঝঙ্কার ব্যাপৃত হোক। আমার এক বন্ধু সম্প্রতি সবদিক বজায় রেখে একটা বাংলা উপন্যাস লিখছে, প্রকাশ পেতে অনেক দেরি বলে নাম উহ্য রাখলাম  । সেখানে বন্ধুত্ব, প্যাশন, বিষমপ্রেমের পাশাপাশি সমপ্রেমও আছে। প্রচলিত ধারণা ভেঙে ওর বানানো সমকামী চরিত্রটা একজন রমণীমোহন পুরুষ এবং দক্ষ খেলোয়াড়। প্রতিবাদ দেখাতে একটা এন.জি.ও.-কেও এনেছে যারা সমকামীদের সমানাধিকার নিয়ে লড়ছে। আমার নিজেরও কয়েকটা ছোটগল্পের প্লট মাথায় আছে । দু-একটাতে যেমন ঠিক করেছি, সমাজের কদর্যতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল করে লিখব, তেমনি বাকি গল্পে স্পর্শকাতরতা যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখব । একদিকে সমকামী মানুষদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক লড়াইয়ের কথা জানব, অন্যদিকে পরিচিত পরিসরে নিরন্তর যত নর-নারীর প্রেমের নজির দেখতে পাই, সেখান থেকেই সমপ্রেমে অনুবাদ করার চিত্রনাট্য খুঁজে নেব  । দুইয়ের মধ্যে অনুভূতির তো কোনো পার্থক্য নেই। একটা শুধু সমাজের চাপে অপ্রকাশিত থেকে যায়, এটুকুই যা তফাত। লেখকরা লেখনীর জগতে দুটোকেই সাবলীলভাবে প্রকাশ করুন। স্যাফোর দৌলতে ‘ছিঃ তুমি নাকি’ (সপ্তর্ষি প্রকাশন), ‘অফ হরাইজন্স অ্যাণ্ড বিয়ণ্ডস’-এর মত বই প্রকাশিত হয়েছে যেখানে সমকামী মানুষদের প্রেমের অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু নজর রাখতে হবে তেমন একটা দিনের দিকে, যেদিন সমকামীদের যৌনতা আর ভালোবাসার কথা ‘আলাদা করে’ বলার প্রয়োজন থাকবে না । ‘ওদের জীবন’, ‘ওদের ভালোবাসা’ এইজাতীয় নির্দেশক-সর্বনামখচিত প্রথমপুরুষের ব্যবহার এইসব বই থেকেই তো আসে। এই জাতীয় রিমার্কেশন মানুষকে এক জুতোয় পা গলিয়ে স্টেপ ফেলাতে পারবে কি? বলতে খারাপ লাগে, ‘গুডরীডস’, ‘আমাজন ডট কম’এর মত ওয়েবসাইটে বইয়ের প্রকার-বিভাজনের মধ্যে ‘Gay & Lesbian’ নামের একটা আলাদা বিভাগ দেওয়া আছে। কিন্তু কেন? ‘Romance’ বলে একটা বিভাগ যখন রয়েছেই তখন কেন ওটা তার মধ্যে থাকবে না?


    সুতরাং নামীদামী পত্রিকাদের অনুরোধ করব আপনারা উনিশ কুড়ি বা রোববারের মত মাঝে মাঝে গল্পগুচ্ছের মধ্যে সমকামিতা বিষয়ক লেখা রাখুন  । যেসব পাক্ষিক বা মাসিক পত্রিকা প্রচুর মানুষ কেনেন, মূলত গল্পের জন্য (দেশ, নবকল্লোল, আরম্ভ, শুভম, আলাপপর্ব ইত্যাদি) কিংবা সাহিত্য ছাড়া অন্যান্য আকর্ষণের জন্য (সানন্দা, আনন্দলোক) তাদের প্রতি আমার এই অনুরোধ। জেণ্ডার অ্যাক্টিভিস্ট পত্রিকাদের মত বাধ্যতামূলক করে দেখাতে বলছি না। প্রেম যদি একটা কাগজ হয় তাহলে সমপ্রেম আর বিষমপ্রেম তার পিঠোপিঠি দুটো পৃষ্ঠা  । সেক্ষেত্রে ‘লাভ স্টোরি’ বলতে আপনারা একপক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন কেন? আপনারাই বরং ব্যাপারটাকে স্বচ্ছ আকার দিতে অগ্রণী হোন। আর, বাংলায় নতুন গল্প কেউ লিখতে চাইলে তাকে আমি তিনটে অনুরোধ করব  । এক, নতুন নতুন ধরনের চরিত্র বানান। যতটা সম্ভব ভ্যারাইটি আনুন চরিত্রদের মধ্যে। দুই, এমন কাহিনী বানান যেখানে সমকামী মানুষ তাঁদের যৌনতার দ্বারা পরিচিত না হয়ে পরিচিত হবেন ব্যক্তিত্ব দ্বারা। তিন, গল্পে একাধিক সাবপ্লট যোগ করুন বা এটাকেই সাবপ্লটে পাঠিয়ে দিন। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্লটের মধ্যে বিষমপ্রেম অবশ্যই রাখুন। ....এই তিনটের জন্য যে পড়াশুনা আর সূচারু দর্শনের প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে সেটা শুরু করুন বিদেশী গল্পের মাধ্যমে। স্যামুয়েল ডেলনি ও মেলিসা স্কটের উপন্যাস কিংবা আমি এ যাবৎ যে যে উপন্যাসের নাম বলে এলাম, এক এক করে পড়লেই বুঝতে পারবেন, আপনার দর্শন দ্রুতগতিতে বিস্তার পাচ্ছে। পাঠকদের আপনি সহজেই তখন আধুনিকমনস্ক করে তুলতে পারবেন।


    চরিত্রে ভ্যারাইটি আনতে আরো কয়েকটা ছোটখাটো দিক মাথায় রাখতে পারেন। যেমন, একাধিক সমকামী চরিত্র থাকলে তাদের যে ‘ইণ্টার-রিলেটেড’ করতেই হবে তেমন নয়। বরং উপন্যাসে বা বড় গল্পে আপনি একাধিক পরিসর দেখানোর সুযোগ পেলে বিভিন্ন পরিসরে ছড়িয়ে দিন   । তারপর, দুই সমকামীর মধ্যে সবসময় প্রেম না দেখিয়ে নিবিড় বন্ধুত্ব দেখিয়েও গল্প লিখতে পারেন। এমন দুজনকে দেখাতে পারেন যারা একে অপরের সমস্ত গোপনীয়তার ভাগীদার, অথচ তাদের মধ্যে ‘তথাকথিত’ প্রেম নেই। তাছাড়া, ভুল বোঝাবুঝি কিংবা ম্যাল-অ্যাডজাস্টমেণ্টের কারণে সম্পর্কছেদও দেখান, যেমনটা আমরা পুরুষ-নারীর প্রেমে দেখতে অভ্যস্ত। সমকামীদের সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এরা এতই সংখ্যালঘু যে সমপ্রকৃতির মানুষ দেখলেই তাদের সাথে মিশে গোষ্ঠীগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের মধ্যে যৌনাচার করে। কিন্তু আদতে এরা সংখ্যালঘু নয়, এবং এদের মধ্যেও ‘রিলেশনশিপ ওরিয়েণ্টেড’এর সংখ্যাই বেশি। এরা ক্যাটায়ন-অ্যানায়নের মত দ্রবণে ঘুরে বেড়াচ্ছে না যে, পারমুটেশনের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দুটো জুড়ে দিলেই আয়নীয় যৌগ হয়ে যাবে। এদের মধ্যেও ‘এনজাইম-সাবস্ট্রেট ক্যাটালাইটিক রিঅ্যাকশন’ দেখা যায়, কারোর মধ্যে ‘ভ্যারিয়েবল ভ্যালেন্সি’ও দেখা যায়, কেউ আবার সময়বিশেষে দুরকম ভূমিকাতেই   থাকে  । অর্থাৎ ঠিক যেরকমটা আমরা হেটারোসেক্সুয়াল সম্পর্কে দেখতে পাই।  পুরুষ-নারী দ্বৈত সত্তার মত সম্পর্কের স্থায়িত্ব-অস্থায়িত্ব, শারীরিক চাহিদা-মানসিক চাহিদা প্রভৃতি নিয়েও হোমো-হেটারো-বাই নির্বিশেষে সবার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সত্তা কাজ করে। আপনি চেষ্টা করুন না সমাজের এই ভুলগুলোও ভাঙাতে। সামগ্রিকভাবে পুরুষ-নারীর প্রেম মানে ‘প্লেটোনিক’ ডমিনেট করবে আর সমপ্রেম মানে পশু যৌনক্রিয়ার মত বেলাগাম বেলেল্লা – এসব ধারণা তো আপনিই দূর করতে পারেন। যে তিনটে  নতুন পদ্ধতির কথা বললাম , তার সাথে আরো নতুন কিছু ভেবে দেখুন  ।


    আরো এক ধাপ এগিয়ে সাহিত্যিকরা একটা ইউটোপিয়ান সমাজের ছবি আঁকতে পারেন না? এতক্ষণ তো শুধু ‘বাস্তব’ চিত্রই দেখালাম, এবার একটু ‘অবাস্তব চিত্র’ বানাতে পারবেন না? যেখানে নির্বিঘ্নে নিঃসংকোচে সমকামীরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন? আর এমন গল্পে যেখানে সমকামিতা কোনোভাবেই প্রাধান্য পায় নি? দৃষ্টিব্যঞ্জক হিসেবে তো বাদই দিলাম, অন্যতম হিসেবেও নয়? ধরা যাক, আপনার গল্পে একটি গৌণ চরিত্র পেশায় আয়কর বিভাগের কর্মচারী। এবার, এই পেশাটা গল্পের সাথে কোনোভাবে সম্পর্কিত নয়। তবু আপনি লিখেছেন। কেন? না, কাহিনীর মঞ্চ সাজানোর জন্য অনেকখানি পার্শ্ব বিবরণের উপর নির্ভর করতে হয় । অপ্রাসঙ্গিকভাবেই (সাহিত্যে ‘অ্যাসাইডস’ বলতে যে অলঙ্কারকে বোঝায়)। অথবা চরিত্রটার ন্যূনতম ‘ডিটেইলিং’ দেওয়ার জন্যও দরকার হতে পারে। এইসব জায়গায় সমকামী চরিত্ররাও কি উঠে আসতে পারে না? হোটেলের ডাইনিং রুমে আপনার বানানো ছদ্মবেশী গোয়েন্দা দুটো মেয়ের সাথে ভাব জমিয়ে একটা জায়গার ঠিকানা জেনে নিল। মেয়েদুটোকে গল্পে আর কোথাও পাওয়া যায় নি। আপনি সাহস করে এদের লেসবিয়ান দেখিয়ে দিন। ....এভাবে অনেক সমকামী চরিত্র সিনেমায় দেখা দিয়েছে। তাদের আগমন ‘কমিক রিলিফ’ দিতে। আমাদের মস্তিষ্কের রসোৎপাদক অংশটা এদের চিবানোর জন্য সবসময় তৈরী থাকে কিনা! আর পরিচালকও তার ব্যবহার করতে ছাড়েন না। কিন্তু আপনি দেখান সিরিয়াসভাবে (তার মানেই সব সময় স্পর্শকাতরভাবে নয়)  । কারণ আপনি সাহিত্যিক। সমাজের থেকে আপনার বয়স বেশি। আজ আপনি ক্লাসরুমে টিচারের ডাস্টার ঝাড়া, জ্যামের ভিতর দিয়ে ব্যস্ত অফিসযাত্রীর রাস্তা পেরোনো কিংবা ফুচকার স্টলে বিকেলে ভীড়ের মত করে সমকামীদের স্বাভাবিক বিচরণের চিত্র এঁকে দিন। দেখবেন, সময় সরণি বেয়ে একদিন আমরা সবাই এরকম একটা সমাজে পৌঁছে গেছি- যেখানে মুদি দোকানদারের ‘প্যাকেট, না লুজ?’ এর মত ‘হোমো, হেটারো, না বাই?’ –  এই প্রশ্নটাও চলতি হয়ে গিয়েছে।


    আইন আইনের পথে চলুক। সমাজ গড়ার কারিগর সাহিত্যিকরা নিজেদের পথে চলুন।    নতুন নতুন সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যযুগীয় মানসিকতার মূল উপড়াতে পারবেন তাঁরাই  । লেখক নীল মুখার্জী একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “মহিলা ঔপন্যাসিক কথাটার যেমন আর অস্তিত্ব নেই, তেমনি অদূর ভবিষ্যতে গে নভেল কিংবা গে নভেলিস্ট কথাগুলোও অর্বাচীন ও অপ্রচলিত হয়ে যাবে।” ....আপনাদের, বিশেষ করে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের হাত ধরে এভাবেই একটা প্রাকৃতিক অথচ অবহেলিত বিষয় সমাদৃত হোক। আর মানসিকভাবে নিষ্পেষিত সমকামীদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা প্রকাশ্যে আসুন। সমানাধিকার ‘চেয়ে’ গলা ফাটানোর পরিবর্তে নিঃশব্দে ‘আদায়’ করে নিন। যেমনটা করে দেখিয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, আমাদের পিছিয়ে পড়া সমাজে দাঁড়িয়েও।


     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১ | পর্ব ২ | শেষ পর্ব
  • ধারাবাহিক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২৮৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৮86033
  • উফ্ফ, এতক্ষণে লেখার বাক্স এল, নইলে লিখতেই পারছিলাম না ! আগের কমেন্টটা আধখানা হবার পরেই ভুল ক'রে সাবমিট হয়ে গেছিল।

    হ্যাঁ, যা বলছিলাম। তো, কথা হয়েছিল, উপজীব্যই কেন হতে হবে, বরং একটা দুটো চরিত্র হোক, আর সব চরিত্রের সাথে মিশে থাকুক, আর সব চরিত্রের মতই ভাল খারপ মিশিয়ে চরিত্রায়ণ হোক, বাস্তবে যেমনটি হয়। নইলে তো আর্ট ফর্ম না হয়ে স্লোগান, মিছিল, সভার মত ব্যাপার হয়ে যাবে। সমকামী বা অন্য রকম যৌনতা, সেক্স এর মানুষের জীবনকে আমাদের মধ্যেরই একজন চরিত্র ক'রে দেখানো নয় কেন, অন্য নানা চরিত্রের সাথে ?
    আর তাঁদের লড়াইটাই দেখাতে হবে বা যৌনতা জনিত কারণেই তাঁদের লড়াই, এরকম ভাবেই দেখাতে হবে, এমনও নয়।
    এই ভাল খারাপ চরিত্রায়ণ নিয়েই মনে পড়লো, বর্ন ফ্রি বোধহয় এক সময় বলেছিল, কোন গে চরিত্রকে নেগেটিভ লাইটে দেখানো ( টিপিক্যাল টেন্ডেন্সি কমিক ক্যারাক্টার ক'রে দেখানো নয়), হয়েছিল কোন সিনেমায়, তাই নিয়ে গে কম্যুনিটির লোকজন ক্ষুব্ধ। এটাই বা কেন ? তাঁদের অন্য পরিচয়কে স্বীকৃতি দেওয়া মানে সেটাকেই ট্যাগ করে তাঁদের মডেল চরিত্র হিসেবে দেখাতে হবে, এমন তো কথা নেই। হলে সেটা ভালোও নয়। মেইনস্ট্রেমে এভাবে মেশা যায় না,

    যাহোক, আর দুটো কথা।
    'অন্য যৌনতা' বইতে 'ইণ্টারমিডিয়েট জেণ্ডার’এর কথা বলা কিংবা শিখণ্ডী, বৃহন্নলাদের আত্মজীবনী, কোতি ধুরানিদের কথা, লওণ্ডা নাচের ইতিকথা – এসব না রাখলেই ভালো হত।' , এটা নিয়ে পরে লিখবো, ঐ ট্রান্সসেক্স আর ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে। 'অন্য যৌনতা' খখনৈ শুধু ট্রান্স্জেন্ডারকে ধরতে চেয়েছে। ট্রান্সসেক্সকে ন, তাঁদের যৌনতাকে নয়, এমন নয়। যাহোক এনিয়ে পরে।

    খালি একটা তথ্য আপাতত। চন্দ্রগ্রহণ এর ঐ ইস্যুতে 'যেজন আছে মাঝখানে' প্রথমে গুরুতে প্রকাশিত লেখা। সাইটেও আছে। ঐ বইয়ের আরো সাত /আটটি লেখা গুরুচণ্ডালির ম্যাগাজিন ইস্যু ও অন্য যৌনতা বই থেকে নেওয়া। আমাদের বলেই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, লেখাগুলির অনেকগুলির নিচেই সেটার কোন উল্লেখ নেই। কিছু জায়গায় বই আর ম্যাগজিন নিয়ে ভুল উল্লেখ আছে। এগুলো ওঁদের ভুল হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
  • সায়ন্তন মাইতি | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৭86031
  • খবরের কাগজের 'মধ্যলিঙ্গ' আর 'মধ্য যৌনতা' গুলিয়ে ফেলার আরো একটা উদাহরণ এখানে দিয়ে রাখলাম। 'এই সময়'এর মত জনপ্রিয় দৈনিকও এরকম ভুল করছেঃ

    http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/minister-wants-to-opt-for-transgenders-as-mob-controller-at-pujas/articleshow/48905563.cms

    খুঁজলে প্রায় প্রত্যেকটা কাগজেই এই জাতীয় অল্পবিদ্যার প্রয়োগ দেখা যাবে।
  • pi | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:৩২86032
  • ' আলাদা করে ‘সমকামী’দের গল্প না বানিয়ে অনেক চরিত্রের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ এখনই চালু হওয়া দরকার। শুধুমাত্র সমকামিতাকে উপজীব্য করে কাহিনী বানালে ব্যাপারটা চিহ্নিত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এভাবে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সহানুভুতির মাত্রা বাড়ানোর কোনো দরকার আছে কি? সমবেদনা জানানো যেতে পারে কোনো অবলুপ্তপ্রায় বিষয়কে, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নয়। তাই আবেগ-সম্পৃক্ত যে কটা বইয়ের নাম অনুবাদ বা অনুকরণের জন্য বলে এসেছি, সে কটাই যথেষ্ট। এগুলো ব্যতিরেখে সমপ্রেম দেখাতে চাইলে আপনি সাতরঙা ফুলের সাতটা পাপড়ির মধ্যে একটা রঙের উপর খোদাই করুন। পাঠকরা সেই ফুল শুঁকতে শুঁকতে আলাদা করে ঐ পাপড়িটাকে শনাক্ত করতে পারবে না। এভাবেই তাদের গ্রহণক্ষমতা বাড়বে। '

    এই বক্তব্যের সাথে ভীষণভাবে একমত। দেবশঙ্কর হালদারের সাথে একবার কথা হয়েছে, নাটকে সমকামিতা উপজীব্য হওয়া নিয়ে। তো, কথা হয়েছিল, উপজীব্যই কেন হতে হবে, বরং একটা দুটো চরিত্র হোক, আর সব চরিত্রের সাথে মিশে থাকুক, আর সব চরিত্রের মতই ভাল খারপ মিশিয়ে
  • বর্ণালী রায় | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৮:২৭86034
  • খুব সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ একটি প্রবন্ধ....আশা করা যায় বিষয়টি নিয়ে মানুষের মনের অন্ধকার অনেকটা দূর হবে
  • | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৯86035
  • ভাল লাগল তো বটেই, উপকৃতও হলাম। এই T নিয়ে আমার ভালই কনফিউশান ছিল। এই প্রবন্ধ পড়ে বেশ কিছুটা কেটেছে। আর রেফারেন্সগুলোও দরকারী।

    ধন্যবাদ জানবেন।
  • siyam | ***:*** | ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৫86036
  • Sayantan Maity, simply hats off to u
  • kk | ***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:০৫86038
  • সায়ন্তন,খুব ভালো লাগলো। আমি যা যা বলতে চেয়েছিলাম, পাই তাঁর প্রথম পোস্টে পুরোটাই বলে দিয়েছেন,তাই আর রিপিট করলামনা। আপনার আরো লেখা পড়তে পারলে ভালো লাগবে।
  • Hazra | ***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৫১86037
  • এরকম লেখা আগে কখনো পড়ি নি। খুব সময়োপযোগী লেখা। এর পরে কেউ এই বিষয় নিয়ে লিখতে চাইলে এই লেখাটা তাদের কাছে একটা গাইডলাইন হয়ে থাকবে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সমকামিতা বিষয়ে আমার পড়া সেরা লেখা এটি
  • Zavel | ***:*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৭86039
  • তিনটে পর্বই পড়ে ফেললাম এক নিঃশ্বাসে। পড়তে পড়তে অনেকপগুলো জায়গাই এত ভালো লেগেছে যে, ভেবেছিলাম তাই নিয়ে কিছু লিখব। কিন্তু পড়ার ফ্লোতে সেটা হয়ে ওঠে নি। শেষ করার পর আর পিছন ফিরে সেই জায়গাগুলোকে খুঁজে বের করতে পারলাম না, গোটাটাই এত ভালো লাগল। সায়ন্তন মাইতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আগামীকালে যে লেখাটার কথা আপনি বলেছেন, তার টাইটল সম্ভবত 'তৃতীয় বলে সত্যি কিছু নেই'। ঐ প্রবন্ধের মাধ্যমেই প্রথম আপনার লেখার সাথে প্রথম পরিচয়। এখন এখানে নামটা দেখেই চিনতে পারলাম। ঐ লেখাতে একদম নতুন ধরনের অনেক কথা বলেছেন। আর এখানেও সেরকম চিন্তাভাবনার পরিচয় পেলাম। বিশেষ করে আপনার একটা মতামত আমি খুব সমর্থন করি, সেটা হল আলাদা করে LGBT স্ট্যাম্প দিয়ে বর্গীকরণ করাটা। আপনার লেখাটা এই আঙ্গিক ধরে রেখেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে, এটা 'আলাদা' কিছু নয়। শুধু যৌন কামনা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি না হয়ে সমলিঙ্গের প্রতি - এই যা তফাত।

    আবারও বলছি, আপনার কথাবার্তা একেবারে নতুন ধরনের লাগল। এই দিকগুলো সত্যি ভেবে দেখা দরকার। আপনি আরপ লিখুন।
  • অভিষেক | ***:*** | ০৩ জুন ২০১৭ ০৩:৩২86040
  • অসম্ভব ভালো লেখা। পুরো লেখাটার কথাই বলছি, শুধু এই পর্বটা নয়।
    এ ধরণের লেখা যদি আরো বেরোয়, তাহলে সমাজটা বেশিদিন কূপমণ্ডুক থাকবে না। একটা সত্যিকে সবাই মেনে নিতে শিখবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন