এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  শিক্ষা

  • শিক্ষা হয় নাই, খাঁচা তো হইল...

    মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়
    আলোচনা | শিক্ষা | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ১০৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্যান্য স্কুল থেকে আসা ছাত্রদের একাংশ চেয়ার টেবিল ভেঙে কল ভেঙে পাখা বেঁকিয়ে এক ধরনের অদ্ভুত উল্লাস করে থাকে। এর জন্য ইদানীং স্কুলে প্রশাসন ও স্কুলের তরফে শেষ দিনে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া ছেলেদের আটকানোর জন্য। কিন্তু ঘটে যায় এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ছেলেরা কিছু করতে পারল না, কিন্তু মেয়েরা যাদের কাছে এহেন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করেনি তারাই এক ফাঁকে পাখা দুমড়ে বাল্ব খুলে নিয়ে চলে গেছে।

    এখন এই সমান ভাবনার যুগে মেয়েদের এত সাহস ইত্যাদি প্রশ্নে না গিয়ে যে কথাটা ভাবিয়ে তুলছে সেটা হল কেন এই অত্যাচার! সাধারণভাবে এখন স্কুলের উপর দিকে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি।‌ পরীক্ষাতেও তো তাই দেখা যায়। কিন্তু কী এমন হল যে মেয়েদেরও লেখাপড়া নিয়ে এমন অদ্ভুত ‌বিতৃষ্ণা দেখা দিয়েছে। মেয়েদের স্কুলে আনার জন্য, লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্য এখন কত রকমের ব্যবস্থা। আর্থিক অনুদান, প্রশাসনিক সাহায্য, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সক্রিয়তা তবু কোথাও যেন ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। আমরা যা দেখছি যা শুনছি, তার অনেকটাই যে জল মিশানো সেটা আমরা জানি। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি হল তা নিয়ে আমাদের তলিয়ে দেখার সময় নেই। আর দেখাবেই বা কে?

    জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫ (২০১৯-২১)শেষ যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে সেখানে স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার প্রধান কারণ দারিদ্র বা বাল্যবিবাহ নয়, কারণ এরা পড়াশোনায় আগ্রহী নয়। এর মধ্যে ছাত্রদের প্রায় ৩৫.৭ শতাংশ আর ছাত্রীদের ২১.৪ শতাংশ আছে। এই অনাগ্রহের কারণ কী?

    বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার আইন বলে একটি আইন হয়েছিল এই দেশে। তার পরই সকলের জন্য শিক্ষার বিষয়টা নিয়ে ভালোরকম নাড়াচাড়া হয়। স্কুলের পরিকাঠামোর কিছু উন্নতি হয়, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হয়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তো বটেই তার পরেও বিনামূল্যে বই খাতা দেওয়া হয়। মিড ডে মিল ইত্যাদি তো আছেই। এই সময় থেকে ছাত্রছাত্রী সংখ্যাও বাড়ে। যাবতীয় সরকারি দপ্তরে সংবেদনশীলতা বাড়ানো হয়, হিসাব রাখার জন্য পোর্টাল খোলা হয়, প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর ইউনিক আইডি দেওয়া হয়।‌ পালানোর পথ নেই। ছাত্রছাত্রীরাও আসছিল, প্রত্যন্ত এলাকাতেও স্কুল পৌঁছে গেল। আজকাল যে মাঝে মাঝে শহরের কাগজে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম দেখে ইংলিশ মিডিয়ামের বাবা মায়েদের চোখ কপালে ওঠে, তারা কখনও বুঝতে পারবেন না এ দেশে তথা এ রাজ্যে এমন জনপদ আছে, সেখানে গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রীই আছে। ঘরের কাছে স্কুল না থাকলে তাদের বহু পথ পেরিয়ে দূরের স্কুলে যেতে হতো, অনেকেই যেত না। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি ২০২০ অবশ্য শহুরে ভাবনার অনুগামী, তাদের প্রস্তাবে তারা এইসব স্কুল গুলিকে উঠিয়ে এক জায়গায় এনে ফেলবেন বলেছেন, ছেলেমেয়েরা কী করে উঠে আসবে সেটা অবশ্য কিছু বলা নেই।

    যাই হোক, এত কান্ডের পর শিক্ষা পৌঁছেছিল তার কাছেই ' যে শিশু জন্ম নিল শিক্ষার বহু দূরে'। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ প্রণেতারা কল্যাণকারী রাষ্ট্রের মুখোজ্জ্বল করার সাথে শিক্ষাক্ষেত্রে বাণিজ্যের দরজাটিও হাট করে দিলেন। শিক্ষা যে একটি চমৎকার মুনাফাদায়ী ব্যবসা এটা বুঝে নিয়ে বহু বণিক এতে লগ্নী করলেন আর শিক্ষান্তে সুনাগরিক সক্ষম মানুষ হওয়ার যে সব প্রতিশ্রুতি ছিল, সব উড়ে যেতে লাগল। শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মুক্তি জাতীয় ভাবনা তো আগেই উবে গেছে। শিক্ষার শেষ লক্ষ্য হল আর্থিক সমৃদ্ধি, যার একমাত্র পথ প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকা। যে শিক্ষা পণ্য, তার জন্য চকচকে মোড়ক লাগবে। তার একেবারে বাইরে জড়িয়ে দেওয়া হল ইংরেজি জানার কেতা। সংক্রামক ব্যাধির মত উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত বিপ্লবী আদর্শবাদী নীতিবাগীশ সবাই ছেলেমেয়েকে এদের হাতেই সমর্পণ করলেন।‌ যার যতটুকু সামর্থ্য সব এদিকেই গেল। এখন যে কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারে গেলেই বাড়ির শিশুটিকে হাত পা নেড়ে রাইম শোনাতে হবে, হেড, আই, নোজ দেখাতে হবে নাহলে অভ্যাগত বা শিশু কারোরই নিস্তার নেই।

    বাকি যে বিপুল অংশ রইল, পশ্চিমবঙ্গে সৌভাগ্য জনক ভাবে যে সংখ্যাটি ৮৬ শতাংশ, তারা কিন্তু সরকারি স্কুলেই এল। কিন্তু ব্যবস্থা বদলালো না। একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। পঠন পাঠনের আধুনিকতম পদ্ধতি নিয়ে কথা হলেও বেশিরভাগ স্কুলেই এখনো প্রসন্ন গুরু মহাশয়ের মতই ক্লাস হয়। স্যার বলেন পড়ো, ছেলেমেয়েরা পড়ে। তিনি বলেন লেখো,সবাই লেখে। বোঝাবুঝির কোনো ব্যাপার নেই। সেটার জন্য প্রাইভেট টিউশনি ভরসা যেটি আরেকটি শিক্ষা সংকোচনের কেন্দ্র। মাছের মাথা বা লেজ কিছু সম্পর্কে কোনো ধারণা না দিয়েই সেখানে মাছের মাঝখানটুকু নিয়ে নোট দিয়ে দেওয়া হয়, যেহেতু সেটা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক বড় পরীক্ষার আগে রাজ্য জুড়ে মিনিটে মিনিটে সাজেশান বিক্রি হয়, বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে ছড়ানো হয়, এমনকি শিক্ষকরাও দিয়ে থাকেন এটা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যে সাজেশনের সাজেশন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে তার মূল পড়াটাই তো ফাঁকি থেকে গেল। তারপর গদগদ স্তরে প্রথম স্থানাধিকারী বিজ্ঞাপন দেবেন আমার সাফল্যের মূলে অমুক প্রকাশনীর তমুক বটিকা এবং গুচ্ছের গৃহশিক্ষক। গৃহেই সব শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে বলে 'ভালো' ছেলেমেয়েদের শনিবার বা অনুষ্ঠানের দিনে স্কুলে দেখা মেলে না। সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করাকে কেউ আর শিক্ষার উপাদান বলে মনে করেন না।

    অথচ মূল্যায়ন প্রসঙ্গে কথা ছিন সার্বিক নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন অর্থাৎ গোটা বছর জুড়ে ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়া সহ অন্যান্য বিভিন্ন গুণাবলীর বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে তার মূল্যায়ন। এ নিয়ে বহু শিক্ষক কিন্তু ভেবেছিলেন, কিন্তু নম্বর সর্বস্ব সমাজ কিছুতেই এটি মানতে নারাজ, শিক্ষকদের এক অংশও বছরের শেষে গোঁজামিল দিয়ে এই ফর্মেটিভ অংশটি পার করে দেন। অভিভাবক ছাত্রী বা শিক্ষক কারো মাথাব্যথা নেই ছাত্রীর নান্দনিকতা, সমানুভূতি উপস্থিতি ইত্যাদির মুল্যায়নে।

    নম্বরের রমরমায় আবার ফিরে যাওয়া হচ্ছে পাশ ফেল জাতীয় কুৎসিত প্রথায় যেখানে লিখিত পরীক্ষায় ভালো না করতে পারাই একমাত্র বিচার্য এবং এর সমস্ত দায় ছাত্রীর, অন্যদিকে বিদ্যালয় জুড়ে মহা মহা মণীষীর শিক্ষা সংক্রান্ত অসামান্য উপলব্ধির বাণী লিখে রেখেও শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য চাকরি সেটা প্রতিষ্ঠা করা। বহুকাল আগেই মনে হয় গান্ধীহত্যার পরে পরেই কায়িক শ্রমের সাথে মেধার বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। যারা শ্রমজীবী পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠান তারাও ভাবেন লেখাপড়া শিখে এরা অফিসার হবে, আর অন্যদিকে শিক্ষকেরা ভাবেন এদের দ্বারা কিছুই হবে না। যত বেশি প্রান্তিক মানুষ তত বেশি তার প্রতি তাচ্ছিল্য। প্রতিদিন ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে এই তাচ্ছিল্যের শিকার হয়, আর আজকের সময়ে হিন্দুত্বের প্রচণ্ড আগ্রাসী প্রচারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আরো অনেক বিদ্বেষের সম্মুখীন হতে হয়। তার উপর সিলেবাসের বোঝা। ভিত তৈরি হতে না হতেই তার উপর চেপে বসছে কঠিন পড়াশোনার ভার, শিক্ষা থেকে ক্রমেই সে দূরে চলে যাচ্ছে। তার জীবনের লড়াই, তার প্রশ্ন, অভিজ্ঞতা কোনো কিছুই মেলেনা ঐ স্কুল ঘরের সাথে বা কোনো বইয়ের পাতায়। টুকলি দেখে লিখে দেয়, কোনোটাই মাথায় পৌঁছায় না। তীব্র অসহায়তা তৈরি করে বিক্ষোভ।

    সবাই হাত গুটিয়ে নিয়েছে কিন্তু বিপুল এক শিক্ষা কাঠামো আছে, বহু স্তরের মানুষের অন্ন সংস্থান হয় সেখানে, কিন্তু হাত দিয়ে সেটুকু তুলে নেওয়া ছাড়া সত্যিই কি আর কিছু ভাবা হয়? এত যে শিক্ষক সংগঠন তাদের দাবি দাওয়ায় শিক্ষার এই হাল নিয়ে কোনো দাবি দেখা যায়! শুধু বেতন নিয়ে প্রশ্ন। কখনো শোনা যায় পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং যথেষ্ট উদ্বেগজনক কিন্তু এটাও প্রমাণিত হয়নি যে যথেষ্ট শিক্ষক থাকলেই পড়াশোনা ভালো হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র বা জুনিয়র হাই স্কুল বন্ধ করার কথা তাহলে ভাবতে হতো না।

    ওদিকে শিক্ষাদপ্তর আধুনিকতম হওয়ার জন্য একই তথ্য বিভিন্ন রকম অনলাইন ফর্মে প্রতিনিয়ত চেয়ে যাচ্ছেন, স্কুলের দুএকজন কে এখন ঐ কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। ছেলেমেয়েদের বেশ কয়েকজনের কাছে ফোন আছে, তা দিয়ে রিলস আর ফ্রি ফায়ার চলছে।‌ অদ্ভুত এক সময় এখন।

    তবু বহু প্রয়াস চলছে। এত কিছুর মধ্যেও বহু শিক্ষক আপন তাগিদে পড়াচ্ছেন, শিক্ষা দপ্তরের প্রতিদিনের নতুন নতুন দাবির সাথে তাল মেলাচ্ছেন, স্কুল না আসা ছেলেমেয়েদের বাড়িতে যাচ্ছেন, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও শিক্ষার্থীদের সময় দিচ্ছেন।‌ কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ কম।‌ শিক্ষার গোটা সংজ্ঞাই যে বদলে গেছে তা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা নেই।

    তোতা কাহিনী মনে পড়ে।

    'শিক্ষা যদি নাও হয়, খাঁচা তো হইল। পাখির কী কপাল।'


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ১০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | 103.252.***.*** | ১৪ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৩541684
  •  
    ঘটনা ১: পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে টোটোয় বসেই শুরু হল বইখাতা ছিঁড়ে ফেলা। সে সব উড়িয়ে দেওয়া হল পথে। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা শেষে, কোচবিহারের দিনহাটার রংপুর রোড জুড়ে ছড়িয়ে রইল বইয়ের পাতার টুকরো।
     
    ঘটনা ২: মুর্শিদাবাদের সুতিতে মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। বৃহস্পতিবার রাস্তার ধারে তখন উৎসবে মেতেছে এক দল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আচমকা কিছু বইখাতার টুকরো উড়ে এল ওই প্রৌঢ়ের মুখের সামনে। মোটরবাইক কোনও মতে সামলালেন তিনি।
     
    ঘটনা ৩: বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে হুগলির চন্দননগর জ্যোতির মোড়ের কাছে দাঁড়িয়ে এক দল পরীক্ষার্থী হঠাৎ পরস্পরের স্কুলের পোশাক ছিঁড়তে শুরু করে। ছেঁড়া জামার টুকরো ছড়িয়ে দেয় রাস্তায়। শুরু হয় নিজস্বী তোলা। পুলিশ ধমক দিলে বাড়ির পথ ধরে তারা।
     
    শুধু এই তিনটি ঘটনা নয়, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার বা নদিয়ার তেহট্টের রাস্তা, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুরের একাধিক স্কুলের সামনে, আলিপুরদুয়ারের রাস্তায় এমন ছেঁড়া বই-খাতার টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এমনই ছবি ধরা পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে শুরু করে বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায়। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা শেষের পরে, এ ভাবেই অনেক ছাত্রছাত্রী উল্লাস করেছে। যা দেখে, পরীক্ষা শেষ হওয়া উদ্‌যাপনে এ পন্থা কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। 
     
    জানা যাচ্ছে, এইসব জেলার বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির কাছাকাছি রাস্তা জুড়ে শুধুই বই এবং খাতার টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কার্যত বউয়ের ছেঁড়া পাতায় রাস্তা ঢেকে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু, কেন এভাবে বই ছিঁড়ে পরীক্ষা শেষ উদযাপন করল করল মাধ্যমিকের  পরীক্ষার্থীরা?
     
    এ বিষয়ে এক পড়ুয়ার বক্তব্য, যে এখন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেই পাশ করা যায়। তাই বই রেখে লাভ নেই। আবার আরও একজনের বক্তব্য, টুকলি করার জন্য বইয়ের পাতা ছিঁড়েছিল। কিন্তু, কড়া গার্ড থাকার কারণে তা করতে পারেনি।
     
    মুর্শিদাবাদের কাশিমনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘পরীক্ষা ভাল হলে ওরা ডিজে-বক্স বাজায়। খারাপ হলে স্কুলের ফ্যান ভাঙে। শিক্ষক হিসাবে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ আমাদের ব্যর্থতা। পরিবারের লোকেদেরও নজরদারি নেই!’’
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক | 117.194.***.*** | ১৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৬541693
  • শহরাঞ্চলে আগে একটা সহজ বক্তব্য ছিল পড়াশোনা শেখ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। এর বাইরে কোন গোল তৈরি করা সচরাচর হত না। মেয়েদের দু একটা স্কুল সোচ্চার ভাবে বলত ভাল মা হওয়ার জন্য পড়ানো। সে অবশ্য সরকারও বলত সাক্ষর মায়ের সন্তান নিরক্ষর নাহি রয়। আবার মেয়েদের একটা দুটো স্কুল এও বলত  আমাদের মেয়েরা শিক্ষক হবে বা নার্স হবে। মোটামুটি এর বাইরে সাধারণ স্কুলে মেয়েদের জন্য কিছু ভাবা হত না। ছেলেদের এত ভ্যান্তারা লাগত না। তাদের জন্য স্রেফ লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। গ্রামের দিকের স্কুলের তো চাষার ছেলে মুদির ছেলে বলে খ্যাচানো যা যা চাষ করগে যা এসব বলা খুব কমন ছিল।  তো সেখান থেকে যখন সর্বশিক্ষা চালু হল, শিক্ষার জাল আরও ছড়ালো তখন কি আদৌ এই মোটো কি পাল্টিয়েছে? এখনও কি আমরা সেই একই চাকরির গাজর দেখিয়ে পড়াতে চাইছি? কারণ ১৩-১৪ বছরের বাচ্চারাও জানে তারা কেউ কেউ ভাগ্যবান হলেও সবাই চাকরি পাবে না। সেটা পাওয়ার হলে তার বাবা গ্রাজুয়েট হয়েও পাড়ার মনোহারী দোকান চালাত না। বা গ্রামের ছোট ভাগচাষী হত না।  আমার বুঝতে ইচ্ছে করে শিক্ষকরা এখন কোন গাজর ঝোলান? দক্ষিণ ২৪ পরগণার এক নেতা স্থানীয় শিক্ষক দেখেছি এখনও পুর্ণ উদ্যমে চাকরিই শিক্ষার একমাত্র গন্তব্য এই মতই প্রচার করে যাচ্ছেন। সকল শিক্ষকই কি তাই বলেন?

    আর একটা বিষয় মনে হয়  মেয়েদের এমনিতেই ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে যৌনতার প্রতি আগ্রহ জাগে। আমাদেরও জেগেছে। তবে আরও ইন্টারেস্টিং জিনিস পেয়ে সেটা তলায় চাপা পড়েছে। যেখানে আশে পাশের পরিবেশ বিয়ে সংসার নিয়ে অবসেসড সেখানে মেয়েদের ওই অন্য কিছুর সন্ধান মেলা কঠিন।তাদের জীবনের সঙ্গে গ্রামের দিককার স্কুলের শিক্ষিকারা ইস্কুলের পড়া ব্যাপারটা কিভাবে রিলেট করেন? আমি যে কিছু সংখ্যক শিক্ষিকাকে চিনি,তাঁদের এই রিলেট করার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয়নি। শিক্ষাচ্ছু, বাড়ির পরিবেশে শিক্ষা আছে এমন মোটামুটি মেধা ওলা বাচ্চাকে  পড়ানো এক কথা আর প্রথম প্রজন্মের বাচ্চাকে পড়ানো দুটো কিন্তু ভিন্ন ব্যাপার। প্রথম জনের ভাবনা চিন্তার সঙ্গে দ্বিতীয় জনের ভাবনা চিন্তা মোটেই মেলে না। এটা ওই ছেলেদের সমস্যার সঙ্গে মুলে এক কিন্তু প্রকাশে ভিন্নতর।  এই সব বৈপরীত্যকে আমাদের স্কুল সিস্টেমে কিভাবে হ্যান্ডল করা হয়? নাকি পুরোটাই ওয়ান সাইজ ফিটস অল এর সমস্যা?       
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন