আজন্ম পরিচিত কিন্তু ছুঁয়েও না দ্যাখা তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, খোয়াবনামা যেভাবে আলমারিতে এসেছিল, হারবার্ট সেভাবে আসেনি। হারবার্টকে আনা হয়েছিল নিজের হাতে, সচেতনে। নতুন শিখতে থাকা পাখিপড়া তত্ত্বজ্ঞানের বুদবুদ মাথায় নিয়ে,অন্যের পরামর্শে হারবার্ট পড়তে বসা হয়েছিল আট বছর আগে। উদ্দেশ্য নিয়ে হারবার্ট পড়ার কারণ হলো, এতে নাকি মূলধারার বাইরের প্রথাবিরোধী প্রতিষ্ঠানবিরোধী উত্তরাধুনিক নানা জ্ঞানের সমাহার রয়েছে। তাছাড়া, নবারুণের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ লাইনটি সংসদ থেকে ফুটপাথ, ডান থেকে বাম, সবাই যে যার সুবিধামতন যেভাবে মুখস্থ আওড়ায় তাতে মনে হয়েছিল সে বেশ কেওকেটা লেখক হয়ে থাকবে! নাম দেখে অনুবাদ বই বলে ভুল করা মহাজ্ঞানী ‘আমি’ উপন্যাসের কোত্থাও কোনো তত্ত্বের উল্লেখ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। বড় বড় তত্ত্ব শেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বসে, আনকোরা অনভিজ্ঞ মাথা আর বাছা বাছা মজার খাবার খাওয়া জিবে সোয়াদ নিলে কোন বই থেকে কতখানিই বা শেখা যায়!
আট বছর ধরে হারবার্ট পড়ে রইলো আলমারিতে। এই আট বছর অন্য বই, ভিন্ন স্বাদের বই, না-পড়া বই, না-ছোঁয়া বই পড়া হলো। চেনা পূজাবার্ষিকীর সাথে অচেনা পত্রিকাও পড়া হলো। এবার ফের হারবার্ট পড়তে বসে মনে হলো আট বছর আগে অন্য কেউ হয়ত পড়ে থাকবে বইটি, আমি নই কোনোভাবেই! এইবারে নিজের পাখিপড়া বিদ্যায় অর্জিত অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট, মেইনস্ট্রিম লিটারেচার, অ্যানার্কিজম, ক্যাপিটালিজম, নিতান্ত পরিচিত হেলাভরা ‘কম্যুনিজম’ ইত্যাদি নানানরকম ‘ইজম’ এবং উচিত-অনুচিত মার্কা যত হেলদোল আছে তার সব বাদ দিয়ে হারবার্ট পড়া হলো। এমনকি নবারুণ নিজস্ব ধারায় কতখানি প্রথাবিরোধীতা দেখিয়ে গেছেন তা জানার আগ্রহ বাদ দিয়ে কেবল নিজেকে পুকুরে ছোঁড়া একখানা ঢিল ভেবে তলিয়ে যাওয়াই ছিল এইবারের উদ্দেশ্য। এইবার একেবারে কোনোরকম জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য ছিল না।
পুকুরে তলিয়ে যেতে যেতে ব্যাঙাচির ঝাঁক, ঘোলা পানিতে জন্মানো রাজ্যের শ্যাওলা আর গেঁড়িগুগলিতে ডুবতে ডুবতে গায়ে ধাক্কা দেয় খোড়োরবির লাশ। তারপর উনিশ বছুরে হারবার্টের মতন করে এই লাশ একপাশে সরিয়ে রেখে চিলছাদে বসে ঘুড়ি, এরোপ্লেন, ঝড়বৃষ্টি, ঝুলঝাড়ু, মানুষ, পাখি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া। ‘অথচ শত শত বছর ধরে চাঁদের আলোয় বা শীতের ভোরে কুয়াশায় তার প্রেম নিয়ে খোড়োরবি ঐ মরণজলে ভেসে থাকবে। তাকে ঘিরে মৎস্যকন্যারা ওলটপালট করবে যারা কাঁদলেও তাদের চোখের জল কেউ দেখতে পাবে না।’
শীতের কুয়াশা সরলে দেখা যায় কৃপণের ধনের মতো যত্নে রাখা অতীব প্রয়োজনীয় দুটি বই ‘পরলোকের কথা’ ও ‘পরলোক রহস্য’ উল্টেপাল্টে নাছোড়বান্দা ধুলোবালি আগাছার মতন হারবার্ট বাড়ছে তার চিলছাদ জুড়ে। গঙ্গাজলের ট্যাংকে কুচোচিংড়ি ধরে আর আকাশ জুড়ে ঘুড়ির কীর্তন দেখে দেখে। পাশের ছাদে হয়ত বুকি এসে দাঁড়ায় ফ্রক বাতাসে উড়িয়ে, হেসে হেসে হাত নেড়ে সেও খোড়োরবির মতন হারবার্টের জীবনের একপাশে পড়ে রয়। বাড়ি বদলায় বুকিরা। আর তার অনেক দিন পরে বিনু আসে বইপত্তর নিয়ে কলকাতায় পড়তে। বিনুর বন্ধুদের কাছে আগাছা হারবার্ট শুনতে পায় ‘কমরেড’ ডাক। (নিজেকে মানুষ মানুষ লাগে নাকি তার!)
প্রতিদিনকার নিয়মের মতো পুলিশ গুলি করে বিনুকে, একাত্তরের এক রাতে। পুলিশের গাড়িতে আর হাসপাতালে শরীরের সব রক্ত ঢেলে দিতে দিতে মারা যায় বিনু। গুলি লাগা ছেলের পায়েও পুলিশ লোহার শিকল পরিয়ে রাখে! হারবার্ট আবার সঙ্গী হারায়। রয়ে যায় শুধু ‘পরলোকের কথা’ ও ‘পরলোক-রহস্য’।
আবার সেই থিতিয়ে যাওয়া জীবন হাতড়াতে হয় বলে হাতড়ানো, উগ্র-বৈষয়িক নিষ্ঠুর ধন্নাদাদা, প্রায়-নির্বাক জ্যাঠামশাই, চিরকাল স্নেহঢালা জ্যাঠাইমা। স্বপ্নে পাওয়া বিনুর লুকানো ডায়েরি হারবার্টকে ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’ অফিস বসাতে প্রেরণা দেয়। যেহেতু পরলোক আছে এবং পরলোকে যথেষ্ট রহস্য আছে তাই সে ভুলেই গিয়েছিল হাসপাতালে শুয়ে আধমরা রক্তশূন্য বিনু ঘড়ঘড়ে গলায় শহীদ সমীর মিত্রের কবিতার লাইনের সাথে সাথে ডায়েরির কথাও বলে গেছিলো। তাছাড়া একটা নিথর লাশের পাশে অত পুলিশ দেখলে কার মাথাই বা ঠিক থাকে! দুপুরবেলা বাড়ি বয়ে ঝগড়া করতে আসা ‘যুক্তিবাদী সংঘ’ এসে হাজির হবার আগে ঠাণ্ডা মাথাতেই সে মৃতের সাথে জীবিতের যোগাযোগ ঘটানোর মিডিয়াম হিসেবে কাজ করে গেছে নিষ্ঠার সাথে। মৃত প্রতিবেশির প্রিয় চাঁপা গাছটা সে মরার পর কেউ জল দিচ্ছিল না বলে মরে যাচ্ছে, এর যত্ন না নিলে মৃত ব্যক্তির রোষ বাড়ির জীবিতদের উপর পড়বেই- এইসব কথায় কারই বা কী ক্ষতি হচ্ছিল! (চাঁপা গাছটার কপালে একটু পানি জুটেছিল কেবল!) হারবার্ট এসব করে কাউকে ফুসলায়নি, উস্কানি দেয়নি এবং বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করেনি। যুক্তিবাদীরা এসে তার শেষ সঙ্গী ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’–কেও কেড়ে নিতে চায়। ভয় দেখায় পুলিশের, যে পুলিশ বিনুকে গুলি করে মেরেছে। তাই পুলিশের গুলির কাছে আত্মসমর্পন না করে নিজের হাতের রগটাই কেটে দেয় সে। বিরানব্বইয়ের এক দুপুরে চল্লিশে পড়া হারবার্ট।
শ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লিতে তোশকবালিশসহ পুড়ে সবাই যেমন ছাই হয়ে যায় দ্রুত, তেমন না হয়ে ফেটে পড়ল হারবার্ট। বিস্ফোরণে উড়ে গেল আশপাশ। সেই কতবছর আগে বিনুর লুকানো ডিনামাইট চুপচাপ ঘুমিয়ে ছিল কমরেড হারবার্টের তোশকের ভাঁজে, কখনো জ্বলে উঠবে বলে।
হারবার্ট নিজে মূলস্রোতে বাস করা উদ্দেশ্যহীন অকিঞ্চিৎকর এক মানুষ। তার গল্পটা নবারুণ এঁকেছে নিরাসক্ত কৌতুকময় এক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। কোনো ‘আমি’র অস্তিত্ব চোখে পড়ে না, কিন্তু প্রতিটি লাইনে লেখক উপস্থিত। গল্পটা নির্মেদ, বাড়িয়ে বলার ইচ্ছাই করা হয়নি। তেতো অবিচল ভঙ্গির প্রতিটি লাইন অভিশাপের মতো আঘাত করে।পড়ার সুযোগ হওয়া নবারুণের বেশিরভাগ লেখাই এমন লেগেছে অবশ্য। সত্য শোনার অনভ্যস্ততায়, পড়তে পড়তে, আজীবন ঘোমটার তলে খ্যামটা নাচ নেচে জনসমক্ষে ভদ্র সেজে থাকার শিক্ষায় পাওয়া মজ্জাগত ভন্ডামির তাড়নায় চেঁচাতে ইচ্ছে হয়, ‘ওরে, লোকটা কীসব বলছে! ওর মুখে বস্তা চাপা দে!’
স্পষ্টত আমি বিপ্লবী নই। আমার কথায়, কর্মে,স্বপ্নে,চিন্তায়, জীবনে ফারাক স্পষ্ট। ঘুম ও জাগরণে ফারাক নেই বললেই চলে। আমার বোকা বোকা মাথায় প্রথাবিরোধিতার উদাহরণ হয়ে ঢুকে রয়েছে আন্দেরসেনের রূপকথায় পড়া কুচ্ছিত হাঁসছানাটির সাথে বেড়াল আর মুরগির মতের অমিল ঘটায় চমৎকার ওমঅলা নিরাপদ ঘরটি ছেড়ে বিপৎসঙ্কুল বড় পৃথিবী দেখতে বেরিয়ে পড়ার গল্প। বহু সংগ্রাম করে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে ফেলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম আমার কাছে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জ্যান্ত উদাহরণ, মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে রক্ত ঝরা বিপ্লবের উদাহরণ।
আমি আজও এসবকে গ্র্যান্ড-ন্যারেটিভ, আদার-ন্যারেটিভ , বার্ডস-আই- ভিউ দিয়ে চিন্তা করে উঠতে পারি না তত্ত্বের কুয়ো খুঁড়ে খুঁড়ে। কিন্তু এই ঘোরতর মূলস্রোতে বাস করে, খেয়ে পরে রোজগার করে, এসটাবলিশমেন্টের স্তুতি গেয়েটেয়ে সন্তুষ্ট মনে যখন স্বপ্ন দেখার সময় হয় তখন আমার মতো মানুষদের জন্য চিরকাল অপেক্ষা করে আদি অকৃত্রিম সেই বন্ধু - স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। প্রথা বনে যাওয়া প্রতিদিনকার অন্যায় আমাদের মত সাধারণের মনের মধ্যে গুমরায় গজরায়, ইচ্ছে করে ভেঙ্গেচুরে দিতে। এই কারণে প্রথাবিরোধীদের সাথে বস্তুত কোনো বিরোধ থাকতেই পারে না, আমাদের না দেখতে পারা বা চুপচাপ দেখে যাওয়া নানা স্বপ্ন তারাই জোরেশোরে দেখে দেয় কীনা! নিদেনপক্ষে সাহিত্যরচনা করে দিতে পারে এরা অন্যরকম শব্দের আগুন দিয়ে।
আমরা সবাই বিনু হই না। আমাদের মতন হাত-পা বাঁধা কিছু হারবার্ট,খোড়োরবি, জ্যাঠাইমাদের জন্য দিন বদলানোর বিরাট বড় অ-ব্যক্তিগত স্বপ্ন দেখে দেবার কথা বিনুর মত প্রথাবিরোধিদেরই। রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতির কাঠামোর কিচ্ছু ঠিকঠাক চলছে না, সবকিছু চলছে ক্ষমতাধরদের মতন করে। তাই সব বদলে ভেঙ্গেচুরে নতুন কাঠামো দাঁড়া করাবার ইচ্ছা কি প্রতিদিনের ডাল ভাত মাখার মতন সহজে আমাদের দ্বারা হয়! (তাহলে কে চিলছাদে ঘুড়ি ওড়াবে? কে প্রেমে হাবুডুবু খাবে? কে আচার দেবে? সবাই একরকম হয় নাকি? সবকিছু একদিনেই বদলে ফেলা যায় নাকি?)
বাংলাদেশের ক্রান্তিকালের যে অংশে আমি আমার নিজের চিলছাদ, ঘুড়ি লাটাই, বইপত্র,প্রেম ইত্যাদি হাবিজাবি নিয়ে বাস করি, সেইখানে বসে বাকস্বাধীনতাময় সোশ্যাল-মিডিয়াময় উত্তরাধুনিক যুগের প্রথাবিরোধিতা চর্চার পচাগলা বাস্তবতাও দেখতে হয়। যেভাবে হারবার্ট খোড়োরবির পানিতে ভাসমান ‘লাশ’টাকে দ্যাখে বা যেভাবে সে বিনুর গুলিখাওয়া ঘড়ঘড়ে গলায় প্রলাপের মতন বকা কবিতা শোনে, ঠিক সেইভাবে।
প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা যাদের কাছে ফ্যাশন মাত্র, কাব্যময় সুবিধাবাদই তাদের মূল কাজ এখন। অনবরত মার্ক্স,এঙ্গেল, হেগেল,ভেবার,লেনিন,মাওয়ের তত্ত্ব কপচিয়ে প্রবলমাত্রায় শ্রেনীসচেতন ব্যক্তিটি করছে সামাজিক শ্রেণী প্রথার বিরুদ্ধে লেখালিখি। নিজের শিশুকে আনন্দময় জীবনমুখী শিক্ষার চূড়ান্ত সুবিধাভোগী করে অন্যের শিশুদের সুবিধাবঞ্চিত ক্ষণস্থায়ী জীবনের মুক্তি পাবার পথ হিসেবে পরকাল কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা দেখিয়ে জীবনবিমুখ করছে সুশীল গলাবাজ প্রাক্তন বাম। আদর্শের জন্য রক্ত দেয়ার সাথে আতংকবাদ সৃষ্টির জন্য উগ্র ধর্মান্ধদের এজেন্ডা করে ঘটানো রক্তপাতকে এক পাল্লায় দেখিয়ে কলম ধরছে প্রাক্তন কবি ও বর্তমান এনজিওজীবী। বিরোধিতার নিমিত্তে বিরোধিতার আদর্শহীন প্রয়োগ ঘৃণ্য মৌলবাদীতে পরিণত করেছে এককালের নামকরা প্রথাবিরোধীটিকে । (এখানেও কি রাষ্ট্রের করা অন্যায়ের দোষ দিয়ে হাত মুছে ফেলা যায়?)
‘খানদানি’ প্রথাবিরোধিরা ক্ষমতার কাঠামোয় ঘেরা প্রতিষ্ঠানের করা প্রতিদিনকার অন্যায়সমূহ নিয়ে সদাদ্রোহী সদাবিপ্লবী ভাবনাসমূহ ভাবার সময়ই পাচ্ছে না মোটে, বরং নিজেরাই ক্ষমতার আশেপাশে থাকতে চাইছে আপোষের নানা ছলাকলায়। মূলস্রোতকে ‘হ্যাঁ’ বলা যাবে না, এইরকম মোটা-দাগের প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তায় তাড়িত ‘বনেদি’ প্রথাবিরোধী চক্রগুলো মূলস্রোতের ভিতর থেকেই আওয়াজ ওঠা ‘মানবতা’, ‘অসাম্প্রদায়িকতার’ মতো আকাঙ্ক্ষিত রবের বিপরীতে ‘সাম্প্রদায়িকতার’ রব তুলতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না। মর্ষকামীতার চূড়ান্তে পৌঁছে পৃথিবী ছেয়ে ফেলা ধর্মীয় উগ্রপন্থাকেও কম্যুনিস্ট আন্দোলনের আদলে ব্যাখ্যা করতে তাদের আদর্শে বাধছে না এতটুকুও। দ্বিধা করছে না নিজেদের গোষ্ঠী তৈরি করে প্রথাবিরোধিতার চর্চা গোষ্ঠীর মধ্যেই কুক্ষিগত করতে। (ব্যাপারটা অনেকটা এমন, প্রথা ভাঙবো আমি, ও ভাঙবে কেন? আমি নির্দেশ করব প্রথাবিরোধি সাহিত্য, ও কেন?) নিজ গোষ্ঠীর বাইরের মানুষদের ছিন্ন রক্তাক্ত মস্তিষ্ক উগ্র ধর্মান্ধদের চাপাতির আঘাতে রাস্তায় পড়ে থাকলে সেই রক্ত চেটে নিয়ে মৃতদেহের করা প্রথাবিরোধিতার অপরাধ প্রমাণ করতে প্রথাগত ‘ধর্মানুভূতি’ নামক যুক্তি দিয়ে কলম ধরতে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধে ভুগছে না। নিজেরদের প্রথাবিরোধী পরিচয়টুকু ছাড়া এদের থাকছে না দ্রোহ, আদর্শ, স্বপ্ন, সাহিত্য অথবা আর যা কিছু থাকার কথা তার কিছুই। বুকে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার লেবেল লটকে রেখে মর্মান্তিকভাবে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। এ এক নিদারুণ অবক্ষয়, মস্তিষ্কের ভয়াবহ পচন!
এদের নির্লজ্জ ভণ্ড আচরণে আমার আশিরনখর কেঁপে ওঠে ভয়ে। ভয় হয় একজন জরদ্গব উদ্দেশ্যহীন আগাছা হারবার্টের মতই। আমার ভয় হতেই থাকে! কবে এরা মানবতাকে প্রথা ধরে নিয়ে এরই বিরোধিতা করা শুরু করে দেয় কে জানে! (তিলোত্তমা মজুমদারের এক গল্পে পড়েছিলাম পোড়ানোর মতন লাশ না পেয়ে অভ্যাসবশত ডোম টেনেহিঁচড়ে ডোমনিকেই পোড়াতে নিয়ে যায়!) আমার মত অকিঞ্চিৎকরেরা তখন কি হারবার্টই থাকবে নাকি বিনু হয়ে উঠবে কে জানে! যার জেগে থাকার কথা সে জেগে জেগে ঘুমের ভান করলে দুনিয়ার দরকারি কাজগুলো কি অন্যেরা ফেলে রাখে? এত এত দ্রোহের উত্তাপ ছড়ানো লাইন লেখা নবারুণ এইসব নিয়ে কী খসখস করতে পারতেন বেঁচে থাকলে তার কলমে কে জানে! এইসব তাকেও ভাবাতো কীনা কে জানে! এইবার হারবার্টকে আগাছা না বানিয়ে গলায় জোরঅলা এক প্রতিবাদী বিবেক বানাতেন কীনা এইসব কুলীন প্রথাবিরোধি নওটাংকিদের যাত্রাপালায় তাই বা কে জানে!
আশা করি নবারুণের লুকানো ডিনামাইট নতুন কোনো কলমে বিস্ফোরিত হবে নতুন আগুন নিয়ে। এইসব আগুনে পুরনো জঞ্জাল পুড়ে যায় কীনা জানি না, তবে কিছুটা তাপ তো ছড়ায় জঞ্জালের মুখে!
আর, হ্যাঁ, চিতায় আগুনের ছোঁয়া পেয়ে মৃত হারবার্টরাই রাস্তায় বিস্ফোরিত হয়েছিল নাকি সেদিন শাহবাগে? ২০১৩র এক শীতের বিকেলে?