*****************************************************************************************
*********************************************************************************
জনি সিং
উর্জা
একদা একটি ছেলে ছিল যার নাম জনি। জনি খুব দুষ্টু ছিল। একদিন জনি খুব সুন্দর একটা ছবি এঁকেছিল।ছবিতে একটি বাচ্চা ছেলে এবং মেয়ে ছিল।হঠাত জনির মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। সে ছেলে এবং মেয়েটির মাথায় শিং এঁকে দিল। তারপর জনি যখন ঘুমাচ্ছিল তখন ছবির ওই ছেলে এবং মেয়েটি জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে " কি দুষ্টু ছেলে দেখ, কত সুন্দর করে প্রথমে আমাদের একেছিল কিন্তু শিং লাগিয়ে কি বিশ্রী বানিয়ে দিয়েছে আমাদের। তখন তারা ম্যাজিক করে জনির মাথায়ও শিং লাগিয়ে দিল।পরদিন সকালবেলা জনি যখন খেলতে গেছে সবাই ওকে দেখে পালাতে শুরু করেছে। জনি ত কিছুই বুঝতে পারছে না যে কেন এমনটি ঘটছে। সে বাড়ি ফিরে আয়নায় নিজেকে মাথায় শিং অবস্থায় দেখে তার মাকে তাড়াতাড়ি ডাকলো
এবং নিজের অবস্থাটা দেখালো। তার মাও কিছুই বুঝতে পারছিল না যে ব্যাপারটা কি করে ঘটল। অবশেষে জনি তার মাকে নিজের আঁকা ছবিটি দেখাতেই তার মা বুঝে গেল ঠিক কেন এইরকম হয়েছে। মা জনিকে বললেন "তুমি দুষ্টু বলে তোমার সাথে এইরকম হয়েছে, এখুনি ওদের শিং মুছে দাও এবং ওদের সরি বল"। জনি ঠিক তাই করলো। সঙ্গে সঙ্গে ছবির ছেলে- মেয়েটিও জনির শিং ফিরিয়ে নিল. সেদিনের পর থেকে জনি খুব ভালো ছেলে হয়ে গেছিল।
ছবি-সোনালি সেনগুপ্ত
_____________________________________________________
****************************************************************************
আমায় বকরাক্ষস হতে বোলো না
মৈত্রেয়
একটা ছেলে ছিল। ছেলেটা খুব রোগা ছিল। ছেলেটার নিজের কোনো দুঃখ ছিল না। ছেলেটাকে দেখলেই বড়রা ওকে বলত, "খাও খাও। বেশি বেশি খাও । ভালো ভালো খাবার খাও।" ছেলেটা যেখানে যেত, বড়রা সবসময় ওকে খেতে বলত। ছেলেটা বুঝতে পারত না ছেলেটা রোগা বলে বড়দের কেন এত দুঃখ হয়। বড়রা ছেলেটাকে ভালো ভালো খাবার খেতে বলে ওকে খেতে দিত সব স্মেলি আর স্লাইমি খাবার। কলা, ডিমসেদ্ধ, দুধ, দুধের সর, মাখন, ঘি, ভিন্ডি, ডাল, গলা ভাত, ইলিশ মাছ, রুই মাছ এইসব খাবার। আবার মাছের মাথাও খেতে বলত। মাছের মাথা খুব খারাপ খাবার। হাতে আর মুখে মোটা মোটা কাঁটায় ব্যথা লাগে। আর মাছের ব্রেনটার মত অত স্লাইমি আর খারাপ কোনো খাবার হয় না। এইসব খাবার কোনো ছেলেরই ভালো লাগতে পারে না। তাই এইগুলো খেতে গেলেই ছেলেটার বমি হয়ে যেত। বড়রা এইভাবে ছেলেটাকে দুঃখ দিতে থাকল। ছেলেটার যেসব খাবার ভালো লাগত, সেগুলো খেতে চাইলে সবাই ওকে বলত "ওগুলো খাবে না, ওগুলো খেলে পেটে ব্যথা হবে।" ছেলেটা বড়রা না থাকলে সেই খাবারগুলো খেয়ে দেখেছে। সেগুলো খেলে পেটে ব্যথাও হত না, বমিও হত না। ছেলেটা বুঝে গেল বড়রা কোন খাবার খেলে কী হয় সেটা ঠিক করে জানে না। না জেনে খেতে বলে। খাওয়ার সময় হলে ছেলেটার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করত। কারণ ওকে কেউ ওর ভালোলাগা খাবারগুলো খেতে দিত না। নিজেদের ভালোলাগা খাবারগুলো খেতে দিত। আর বড়দের ভালোলাগা খাবারগুলোর এত খারাপ গন্ধ হত, যে ছেলেটার বমি পেয়ে যেত। ওকে তখন জোর করে গাল ধরে হাঁ করিয়ে ওর মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিত বড়রা। ছেলেটার গলায় কাঁটা আটকে গেলে ওকে তখন গলা ভাত, কলা এইসব খাবার খেতে বলত। গলায় কাঁটা ফুটে ব্যথা করছে, সেই সময় কেউ কলা খেতে পারে? স্কুলে যেতে ছেলেটার খুব ভালো লাগত। ওর টিফিনটা ও ওর স্কুলের বন্ধুদের খেতে দিত। রোজ টিফিনের সময় ওদের স্কুলের মাঠের উপর কয়েকটা চিল উড়ত। কোনো কোনো দিন ওর টিফিনে এত খারাপ খাবার দেওয়া হত, ওর বন্ধুরা খেতে চাইত না। সেইসব দিন ও ডিমসেদ্ধ, মাখন মাখিয়ে মাখিয়ে স্লাইমি করে দেওয়া রুটি, ভিন্ডির তরকারি এগুলো সব গোল গোল বল বানিয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিত, আর চিলগুলো উড়তে উড়তেই ঠোঁটে করে খাবারের বলগুলো ক্যাচ নিয়ে নিত। চিলদের এভাবে ক্যাচ নেওয়া দেখতে ছেলেটার খুব ভালো লাগত। তাই ওকে টিফিনে খারাপ খাবার দিলেও ও মানা করত না।
একদিন ওর স্কুলের এক স্যার দেখে নিল চিলদের খাওয়ানো। তারপর ওকে টিচারস রুমে ডেকে খুব বকল। তারপর থেকে টিফিনের সময়ে ওকে বাইরে খেতে যেতে দিত না। ক্লাসে বসে খেতে হত। একদিন ওদের স্কুলে ল্যাঙ্গুয়েজ ডে সেলিব্রেট করা হবে বলে ঠিক করা হল। ল্যাঙ্গুয়েজ ডে তে সব ছেলেকে নিজেদের ভাষায় একটা করে নাটক অভিনয় করতে হবে। ওদের বাংলার টিচার বলল, ওরা বাংলায় যে নাটকটা করবে, সেটার জন্য সিলেকশন হবে টিফিনের সময়। টিফিনের সময় ও ক্লাসে বসে খাচ্ছিল, তখন বাংলার টিচার ক্লাসে এসে ওকে বলল "তুমি এত ধীরে ধীরে খাও! খাবারটা তাড়াতাড়ি শেষ কর।" ছেলেটা খুব চেষ্টা করল তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করার। কিন্তু পারল না। তারপর বাংলার টিচার অন্যদের বলল তারা কে কোনটা হবে। কাউকে বলল "তুমি নকুল হবে", কাউকে বলল "তুমি অর্জুন হবে", কাউকে বলল "তুমি যুধিষ্ঠির হবে"। তখন একটা ছেলে জিজ্ঞেস করল "ম্যাম, আমরা কি জানে ভি দো ইয়ারোর মহাভারতটা অ্যাক্টিং করব?" বাংলার টিচার বলল "বাংলা ক্লাসে হিন্দি বলবে না।" টিচার তারপর একটা ছেলেকে বলল "তোমাকে একটা রাক্ষস হতে হবে, তার নাম বকরাক্ষস" আর দুটো ছোট ছেলেকে বলল "তোমাদের নাম আঁটলো আর বাঁটলো।" বাংলার টিচার ওর ধীরে ধীরে খাওয়াটা দেখে বলল "তোমাকে এমন একটা ক্যারেক্টার সেজে অভিনয় করতে হবে, যেখানে তোমাকে অনেক খেতে হবে আর মারামারি করতে হবে।" ওকে খেতে হবে আর মারামারি করতে হবে শুনে ওর বন্ধুরা খুব খুব হাসতে লাগল। ওর একটুও হাসি পাচ্ছিল না। ওর বন্ধুরা আরো অনেকে অনেক কিছু হতে লাগল। কিন্তু নাটকে অ্যাক্টিং করার সময়েও ওকে খেতে হবে শুনে ওর আর ভালো লাগছিল না। রোজ ওদের টিফিনের পর দুটো পিরিয়ড ধরে রিহার্সাল হত। ও দেখল, বাংলার টিচার ওকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছিলেন। ওকে সত্যি সত্যি খেতে হত না। সত্যি সত্যি মারামারিও করতে হত না। ওগুলো করার অ্যাক্টিং করতে হত। নাটকটায় খুব ঝগড়া আর মারামারি ছিল। সব ক্যারেক্টারগুলো সবার সঙ্গে ঝগড়া করত। নাটকটায় একটা ঝগড়ার ঠাকুরও ছিল, তার নাম নারদ। ডায়লগগুলো এত মজার ছিল যে ওরা বলতে গিয়েই হেসে ফেলত। হাসতে হাসতে ডায়লগই ভুলে যেত। তখন টিচার ওদের বলল "আমি পর্দার পাশে বসে থাকব আর ডায়লগগুলো রিডিং পড়ব। তোমরা ভুলে গেলে, আমি কী বলছি শুনে নিয়ে সেটা জোরে জোরে বলবে। ভয় পাবে না।" রিহার্সালের সময় ওর সামনে দুটো খালি বাস্কেট রেখে ওকে মিছিমিছি করে খেতে বলত। ওর মজাই লাগত মিথ্যে খাওয়ার অ্যাক্টিং করতে। বকরাক্ষসকেও ওকে মিথ্যে করে কিল মারতে হত। মিথ্যে করে চুল ধরে টানতে হত। ল্যাঙ্গুয়েজ ডের আগের দিন ওদের ফাইনাল রিহার্সাল হল। তখন টিচার ওর সামনের বাস্কেটে অনেকগুলো মাটির ফল রেখে ওকে সেগুলো খাওয়ার অ্যাক্টিং করতে বলল। ওর তখনও খুব মজা লেগেছিল।
ল্যাঙ্গুয়েজ ডের দিন ও ড্রেস পরে যখন অ্যাক্টিং করতে গেছে, তখন ও অনেক খাবারের গন্ধ পাচ্ছিল। ওর খাওয়ার সীনটা যখন এল, তখন ও দেখে ওর সামনে রাখা এক থালা পোলাও, এক হাঁড়ি বিরিয়ানি, আর দুই থালা ভর্তি মিষ্টি। সব সত্যিকারের খাবার। ও যেই বাংলা টিচারকে জিজ্ঞেস করতে গেছে, আজ কেন সত্যিকারের খাবার। তখন টিচার ওকে বলেছে "আজকে সত্যিকারের খাবার খেতেই হবে, মিথ্যে খাওয়ার অ্যাক্টিং করতে হবে না।" ওর সেই শুনে খুব রাগ হয়ে গেছে ওকে এইভাবে ট্রিক করার জন্য। ও একটু একটু করে খাচ্ছিল আর ডায়লগগুলো বলছিল। আঁটলো, বাঁটলো আর হিড়িম্বাকে বকছিল। বকরাক্ষসের বন্ধু রাক্ষসগুলোর সঙ্গেও ঝগড়া করছিল। কিন্তু ঝগড়া করার সময়ে আর বকার সময়ে ও বুঝতে পারছিল আজ ওকে মিথ্যে করে বকতে আর ঝগড়া করতে হচ্ছে না। ওর সত্যি সত্যি রাগ হচ্ছে। তারপর যেই বকরাক্ষস এসে ওর পিঠে লাফিয়ে পড়তে গেছে, ও তখন এত জোরে পিঠঝাড়া দিয়ে বকরাক্ষসকে ফেলে দিয়েছে, যে বকরাক্ষসের খুব জোরে ব্যথা লেগে গেছে। সত্যিকারের ব্যথা। তখন বকরাক্ষস ব্যথায় আর উঠতে পারছে না। সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গাছ আনতে গেছে। কিন্তু এত ব্যথা করছে যে সত্যিকারের গাছ আনতে পারছে না। তখন ঐ সিনটা ওখানেই পর্দা ফেলে শেষ করে দিতে হয়েছে। ওদের টিচার যেই এসে ওকে জিজ্ঞেস করেছে "তুমি ওকে এত জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে কেন? ও এখন আর অ্যাক্টিং করতে পারছে না! এখন কী হবে?" ও খুব খুব রেগে গিয়ে বলেছে "আমাকে সত্যি করে খেতে হলে আমি সত্যি করেই মারব। মারার অ্যাক্টিং করব না।" টিচার ওকে বলল "আমি খাবারগুলো সরিয়ে নিলে তো তুমি আর সত্যি করে মারবে না?" বলেছে "হ্যাঁ আমাকে যদি সত্যি করে খেতে না হয়, তাহলে আমার রাগ হবে না। আমি মারব না।" তারপর ওরা সবাই ভালো করে অ্যাক্টিং করল। মিথ্যে করে মারামারির অ্যাক্টিংটাও খুব ভালো করে করল। বকরাক্ষসেরও ব্যথা কমে গেছিল। সবাই খুব হেসেছিল ওদের অ্যাক্টিং দেখে।
নাটকটার নাম ছিল "বকবধপালা" আর ও যে ক্যারেক্টারটা করেছিল তার নাম ভীম। ছেলেটার সত্যিকারের নাম? যতবার লিখতাম ততবার য-ফলা লিখতে হত।
[বাংলা টেক্সট বইয়ে বকবধ পালা পড়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া, মায়ের কাছে এক রোগা মামাকে ভীম সাজতে হয়েছিল এই নাটকে, সেকথা শুনে ফিকফিক হাসা আর মায়ের সঙ্গে জানে ভি দো ইয়ারো দেখতে যাওয়া, এই তিনটে ঘটনা লেখকের মনে খুবই প্রভাব ফেলে। তাই এই গল্পে এই তিন ঘটনার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়]
__________________________________________
ছবি - তিতির
***************************************************************
রহস্যের ভুলভুলাইয়া
অনসূয়া
আইসক্রিমের কোণ চাটতে চাটতে দুগ্গা ঠাকুর দেখছিলাম। এমন সময় পকেটে কি যেন খরখর করে উঠলো। মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেখলাম। আমার পকেটের থেকে উদ্ধার হলো একটা কাগজ যার উপর কাটাকাটা এবং পরিষ্কার হাতের লেখায় লেখা ছিলো:
4!2!চি TERArGenTina
এটা আমার পকেটে কোত্থেকে এলো? মনে তো হচ্ছে একটা কোড! এই সংকেতে বেশী পাত্তা না দিলেও কেমন যেন একটা খটকা লাগছিলো। নম্বরের পাশে বিস্ময়বোধক চিহ্নটা খুবই চেনা চেনা। বাড়ি ফিরে আমার বইয়ের তাকটা ঘাঁটতে গিয়ে পেয়ে গেলাম একটা permutations and combinations এর বই,– নাম-৪!, ৩!, ২!, ১!,Permutations and Combinations By G.J.Das. বইটার প্রথম পাতায় লেখা ছিলো – n(n-1) …..3.2.1 কে লেখা যায় n!।
তার মানে এই যে, ৪!২! এর মানে হলো ৪৮। ৪৮ বললে অনেক কিছুই মনে আসে – যেমন, সাল ১৯৪৮, কারোর জামার নম্বর ৪৮, ম্যাগ্যাজিনের ইস্যু নাম্বার ৪৮, আর -------আর আমার বইয়ের র্যাক নাম্বার ৪৮। আমি আমার বইয়ের তাকের নাম্বারিং করে রাখি।
কোডটার একটা অংশ ক্র্যাক করতে পেরে একটু খুশী-খুশী লাগছিলো। কিন্তু আমার ভাবনাটা ঠিক কিনা সেটা জানার জন্য কোডের বাকী অংশের মানেটা জানা জরুরী। 4!2! টা ছেড়ে দিলে রয়ে যায় চি TERArGenTina।
এই বাকী কোডটাকে আমি অনেক রকম ভাবে ভাগ করার চেষ্টা করছিলাম। চি - TERAr- GenTina? চি T - ERA – rGenTina? চি - TER – ArGenTina!
শেষটার কোন মানে থাকলেও থাকতে পারে। তাই আপাতত শেষটার ব্যাপারেই ভাবলাম। বিকেলবেলা একটু চা খেতে বাইরে বেরোলাম। আমার পাশের বাড়ির দোতালার ছাতে একজন বৃদ্ধা শিক্ষিকা বিজ্ঞান পড়ান। ওনার পড়ানো শুনে কোডের আরেকটা অংশ নিমেষেই পরিষ্কার হয়ে গেলো। উনি বলছিলেন “নোট করে নাও -- Copper – Cuprum, Gold – Aurum and Silver – Argentum”। আমি ভাবলাম – ও মা! এ জিনিস তো আমার অনেক আগেই বোঝার কথা ছিলো। Silver কে ল্যাটিনে বলে Argentum যেটা কিনা Argentina থেকে এসেছে। কিন্তু এখন আমি রুপো কোথায় খুঁজি?
চা আর খাওয়া হলো না। বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখি একজন মহিলা বাড়ীর বেলটা ক্রমাগত বাজিয়ে যাচ্ছেন। আমি পিছন থেকে এসে জিজ্ঞেস করলাম – “আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?” হতাশ মুখে তাকিয়ে মহিলাটি বললেন “ইরা নামের কেউ কি এখানে থাকে?” আমি নিজের পরিচয়টা দিয়ে ওনাকে ঘরের ভেতরে আসতে বললাম। ওনাকে চা খাওয়ার কথা বলতে উনি বললেন যে উনি একটি সামান্য জিনিস জানতে এসেছেন। একটু তাড়ায় আছেন। তাই চা খাওয়ার ইচ্ছে নেই। এবার উনি প্রশ্ন করলেন -“ আপনি কি রিমা বসু নামে কাউকে চেনেন?” আমি অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে উনি চলে গেলেন।
উনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমার রান্নার লোকটি এলো। কয়েকটা রুটি আর মাংস বানিয়ে সে চলে গেলো। ওর চলে যাওয়ার পরে আমি এমন একটা জিনিস দেখলাম, যেটা কিছুক্ষণ আগেও লক্ষ্য করিনি। আমার বইয়ের আলমারীর ৪৮ নম্বর তাকে একটা লাল রঙের চুম্বক আটকে আছে। আমি ঐ তাকটা খোঁজা শুরু করলাম। কি আশ্চর্য্য! ঐ তাকেরই এককোণে একটা রুপোর ব্রেসলেট !
এটা আবার এখানে কোত্থেকে এলো? মনের ভুলে কি ওখানে রেখেছি? ব্রেসলেটটা হাতে তোলা মাত্রই বেরিয়ে পড়ল একটা খাম । এখন কোডটা পুরো পরিষ্কার হয়ে গেল। চিঠির ইংরাজী হলো letter, কৌশলে এটাকে লেখা যায় চিTER।
চিঠিটা পড়তেই সব বুঝতে পারা গেল। ওতে লেখা ছিলো –
ইরা,
একটু ঠাট্টা করতে গিয়ে বোধহয় তোমার অসুবিধারই সৃষ্টি করলাম। আমায় সেজন্য ক্ষমা কোরো। কয়েকদিন আগে তোমাদের পাড়ায় এসেছিলাম। রাস্তায় তোমাকে দেখে খুব চেনা চেনা লাগলো। এর পরে তোমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে তুমি কলকাতাতেই আছো। পরের দিন যখন তুমি পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট রিনিউ করাতে গেলে তখন তোমাকে ফলো করে আমিও গেলাম। তোমার ছোটোবেলর একটা ফটো তোমার পুরনো পাসপোর্টে ছিলো, যেটা তুমি কাউন্টারে দেখালে। সেটা দেখেই আমি একেবারে নিশ্চিত হলাম।
তার পরের দিন সকাল বেলা তুমি ঠাকুর দেখতে গেছিলে। আমি তাড়াতাড়ি একট কোড লিখে তোমার কূর্তার পকেটে আস্তে করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। তোমার বাড়িতে তোমাকে দেখতেও এসেছিলাম। কিন্তু, তুমি তো আমাকে চিনতেই পারলে না! তার পরের মুহুর্তেই তোমার কাজের লোক তোমার বাড়িতে ঢুকলো। আমি ওর হাতে এই চিঠি আর ব্রেসলেটটা পাঠিয়ে দিচ্ছি । তোমার বাড়িতে ছোটবেলাও অনেক বার এসেছি। তাকের নাম্বারের ব্যাপারে তাই আগে থেকেই জানতাম। তার পরের ব্যাপার তো তুমিই জানো!
আমি তোমার পুরোনো স্কুলের বন্ধু, রিমা বসু। মনে পড়ে তোমার? আমার বাবা চেন্নাই তে বদলি হয়ে গেছিলো । পুজোর নাচের প্রোগ্রামে পরার জন্য তুমি আমাকে এই ব্রেসলেটটা ধার দিয়েছিলে। হঠাৎ করে বাবার বদলি হওয়ায় সেটা তখন ফেরত দেওয়া হয়নি। সেটাই ফেরত দিতে এসেছিলাম। কিন্তু দেখলে তো? এতো দিন পরে আমি তোমাকে চিনতে পারলাম, তুমি আমাকে চিনতেই পারলে না! আমার সঙ্গে দেখা না করতে পারো, একবার ফোন অন্তত কোরো।
আমার মোবাইল নং- +৯১৯২৭৩৬৪৫০২৪।
ইতি,
তোমার পুরনো বন্ধু
রিমা বসু।
____________________________________________________
ছবি -লেখক
***************************************************************************