

প্রথমেই বলে রাখা ভাল, ম্যাকবেথ আমার কস্মিনকালেও ভালো লাগেনি। তার মূল কারণ হল, সাইকোলজিকাল থ্রিলার, যেখানে জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে লোফালুফি খেলা হয়েছে, অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং অ্যাকশান, শৌর্য এবং শঠতা যেখানে পাশাপাশি থাকে, তা, আমাদের সময়ের লেখালিখি এবং সিনেমার অন্যতম অভিজ্ঞান। এ নিয়ে বিস্তর কলাসৃষ্টি হয়ে গেছে। নানারকম কোল্ড-ওয়ার মুভি থেকে শুরু করে একদম হাল আমলের কম-বাজেটের ছবি সার্কল অবধি, ভাল-খারাপ যেমনই হোক, সবেতেই এসবের ছড়াছড়ি। বাস্তবতায়ও এসবের কমতি নেই। কিম ফিলবি, বা এলি কোহেন, বাস্তব চরিত্র, তাঁদের ওঠানামা চলার পথ, সব কিছু নিয়েই সিনেমা বা সিরিজ হয়েছে। তা এত নাটকীয়, এতই জটিল, যে, জায়গায় জায়গায় অলীক মনে হয়। কিন্তু বিংশ শতক এরকমই পরাবাস্তবতার কারখানা, তার হিংসা, অন্তর্দ্ন্দ্ব, স্বার্থের সংঘাত, ক্রোধ-ঘৃণা-প্রেম-যৌনতা-ছলনা-রিরংসার যে নক্সীকাঁথা, তার পাশে কয়েক শতক আগের ম্যাকবেথকে ম্যাড়ম্যাড়েই লাগে। এতে শেক্সপিয়ারের কোনো দোষ বা গুণ নেই। তিনি যে নাটক লিখেছিলেন, তা সময়ের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু সমস্যা হল, জল গড়িয়ে গেছে বিস্তর। সময় যে চেহারা নিয়েছে, তা শেক্সপিয়ারের পক্ষে ছোঁওয়া সম্ভব ছিলনা।
তার পরেও ম্যাকবেথের নানা চিত্রায়ণ আমি দেখেছি। তারও মূল কারণ একটাই। অ্যাডাপ্টেশন বা অবলম্বনে তৈরি শিল্পকীর্তি তো একজন শিল্পী এই জন্য বানান না, যে, ভাই, আগের ম্যাকবেথগুলো তেমন ভালো হয়নি, এবার একটু ভালো করে বানানো যাক। তাঁর কারণটা থাকে অন্য। তিনি কোনো একটা বা একাধিক বিশেষ জিনিস হঠাৎ আবিষ্কার করেন মান্ধাতার আমলের ওই নাটকে, যা, ইতিপূর্বে কেউ দেখতে পাননি। একজন দর্শক হিসেবে আমার আকর্ষণের জায়গাও ওইটাই। কী এমন জিনিস আবিষ্কার হয়ে গেল, যে, নতুন করে আবার বানাতে হচ্ছে, ওই মান্ধাতার আমলের নাটককে? কুরোসাওয়া ম্যাকবেথ অবলম্বনে বহুকাল আগে বানিয়েছিলেন 'রক্তসিংহাসন'। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, যে, স্কটল্যান্ডের এক পুরোনো আখ্যানকে সম্পূর্ণ জাপানি আখ্যান হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব। এবং সম্পূর্ণ প্রাচ্য পটভূমিতে, জাপানি কায়দায়, নিজস্ব আঙ্গিকে তিনি বানিয়ে ফেলেছিলেন ওই সিনেমা। কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, সে এমনকি হাতিঘোড়া আবিষ্কার, ইউরোপ থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে দূর প্রাচ্য পর্যন্ত রাজারাজড়ার ষড়যন্ত্র, ক্ষমতা দখলের লড়াই, এই গল্প তো একই। প্রশ্নটা যৌক্তিকও, কিন্তু কুরোসাওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল ওইটাই। আরেক বিশ্বখ্যাত পরিচালক, পোলানস্কি ম্যাকবেথ বানিয়েছিলেন, কাহিনী, পটভূমি, এবং সংলাপ প্রায় অক্ষুণ্ণ রেখে। তাঁর রাজা ডানকান, সেনাপতি ম্যাকবেথ, সবাই মূলানুগ, সময়ও প্রাচীন, তারা কথাও বলে শেক্সপিয়ারীয় ভাষায়। কেবল তিনি হিংসা এবং অন্তর্দ্বন্দ্বকে করে তোলেন সমসাময়িক। প্রতিযোগিতা, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এবং নির্মম সংঘর্ষই সেখানে নিয়তি। এই নৈতিকতা বিংশ শতকের, যদিও পটভূমি এবং সংলাপ সবই কয়েক শতকের পুরোনো। এখানেও সেই একই প্রশ্ন আসে, কেন? দর্শকরা নিরুচ্চারে এই প্রশ্নই তোলেন, যে, বিংশ শতকের বাস্তবতা, শেক্সপিয়ারীয় সংলাপ এবং ঘটনাপরম্পরার চেয়ে অধিক কিছু দাবী করেনা কি? যে কারণে সিনেমাটা তেমন চলেনি। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিল। এর কারণ একেবারেই এই নয়, যে, পুরোনো রাজরাজড়ার কাহিনী দেখতে লোকে অপছন্দ করে। প্রসঙ্গত এর বছর কুড়ি-পঁচিশ পরে বানানো অতিপুরোনো স্কটিশ বিদ্রোহের কাহিনী ব্রেভহার্ট সুপারহিট হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে। ফলে, কাহিনী পুরোনো না নতুন, শেক্সপিয়ারের নাকি অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিনের, সেটা ব্যাপারই নয়। ম্যাকবেথ দেখতে বসে, দর্শকদের মনে যে প্রশ্ন ছিল, থাকে, তা, সংক্ষেপে, ১)কেন ম্যাকবেথ? ২)ম্যাকবেথ কি আদৌ সমসাময়িক?
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। শুধু শুরুর দৃশ্যে নয়, উঁচু-নিচু রুক্ষ-সবুজ জমির যে নক্সা এবং তার মধ্যে দিয়ে ঘোড়সওয়ারদের দৌড়ে যাওয়া, সেই একই রকম নক্সা পরপর পাওয়া যায় নানা দৃশ্যে। দৃশ্যগুলো নিঃসন্দেহে পোলানস্কির সিনেমার থেকে বেশি উপভোগ্য, পোলানস্কির হাতে এত ভাল ক্যামেরা বা ড্রোন কোনোটাই ছিলনা। বলে রাখা ভাল, এসব ঠিক টুকে দেওয়া নয়, বরং প্রভাব বলাই ভাল, যার থেকে আন্দাজ পাওয়া যায়, ম্যাকবেথকে ঘিরে তৈরি হতে চলেছে, পোলানস্কির মতোই রুক্ষ এই সময়ের এক আখ্যান, যা একাধারে তীব্র এবং হিংস্র।
তবে এ সবই খুচরো সমস্যা। যৌনতা থেকে রুক্ষতা, ভেড়ির হিংস্রতা থেকে দুনিয়ার নির্মমতা, সমকালীনতাকে যেভাবে তুলে ধরার কথা ভেবেছেন পরিচালক, ঠিক সেভাবেই তুলে ধরেছেন। নিসর্গের সঙ্গে খাপ খেয়েছে আবহ। যৌনতার সঙ্গে মিশে গেছে হিংস্রতা। প্রায় প্রতিটি অভিনয়ই মাপমতো। সম্পাদনা খুবই ভালো। কয়েকটা জায়গায় ফ্রেমে কিছু জিনিস অত্যন্ত দাগিয়ে দেখানো হয়, যেমন লায়লি আর মন্দারের মধ্যের ফাটল বোঝানোর জন্য যে দৃশ্য, তাতে দেখানো হয়, মধ্যিখানে একটা বাঁশ, তার দুদিকে মন্দার আর লায়লি। এই এক আধটা জিনিস বাদ দিলে পরিচালনাও চমৎকার। লায়লির ঘরকে সবসময় অন্ধকার করে রাখা হয়, কীকরম একটা চোখে লাগে সেটা, এতদ্ভিন্ন আলোকসম্পাতও খুবই ভাল। এসবে কোনো সমস্যা নেই, বস্তুত সমকালীনতার প্রশ্নে একে দশে সাড়ে-নয়ই দেওয়া যায়।
কিন্তু এ সিরিজের সমস্যা অন্যত্র। সমস্যা হল, স্বয়ং ম্যাকবেথ। দর্শক হিসেবে মূল প্রশ্ন যদি এটা হয়, যে, কেন ম্যাকবেথ? কী এমন পুনরাবিষ্কার হল, যে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে আবার ম্যাকবেথই করতে হল, সমকালকে ধরার জন্য? এর উত্তর খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রথম থেকেই নির্মাতারা জোর দিয়েছেন এই প্রশ্নের উত্তরে নয়, এটা যাতে 'যথার্থ' ম্যাকবেথ হয়ে ওঠে সেই দিকে। এর শুরুতে লেখা "বেসড অন ম্যাকবেথ"। প্রতিটি চরিত্রে ম'র অনুপ্রাসের ছড়াছড়ি। যাতে কেউ পাছে বুঝতে না পারে, তাই ম্যাকবেথ হয়েছে মন্দার, ডানকান ডাব্লু, বঙ্কো বঙ্কা, ইত্যাদি প্রভৃতি। এরকম আগে হয়নি তা অবশ্য নয়। যেমন ম্যাকবেথের পটভূমিকা বদলে বানানো হাল আমলের 'স্কটল্যান্ড, পিএ' তে মূল নাটকের প্রতিটি চরিত্রের নাম অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। কিন্তু তার একটা শিল্পসঙ্গত কারণ ছিল। সেই সিনেমা ফাস্টফুড চেন তৈরির পটভূমিকায় বানানো। সেখানে ম্যাকডোনাল্ডসের অনুকরণে তৈরি হয়েছে ম্যাকবেথস (সঙ্গের ছবিতে বানান এবং ফন্ট দেখে নিন)।
অর্থাৎ, সোজা কথায়, ম্যাকবেথই এখানে রাজা। আমার সমসময়কে ধরার প্রকল্পে তাকে আমি ব্যবহার করছিনা। বরং নৃপতি ম্যাকবেথ এসেছেন মেদিনিপুরের মাটিতে, তাঁর আপ্যায়নে যেটুকু সমসময়কে গুঁজে দেওয়া যায়, সেটুকু দেব, কিন্তু নৃপতির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্নচিহ্নের অবকাশই নেই। এই আধা-ঔপনিবেশিক মনোভঙ্গী জ্বলজ্বল করতে থাকে গোটা সিরিজ জুড়ে। ম্যাকবেথের কম্পোজিশনকে যে প্রশ্ন করা যেতে পারে, দরকারে উল্টে-পাল্টে দেওয়া যেতে পারে, দরকারে 'স্কটল্যান্ড, পিএ'র মতো খিল্লি করা যেতে পারে, এইটা তাঁরা ভেবে উঠতে পারেননি। একটা সহজ এবং মোটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ম্যাকবেথ নাটকের মূল আখ্যানের উপসংহারেই একটা সমস্যা আছে। কী সেটা? না, ডাইনিদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, বঙ্কোর ছেলে হবে রাজা। অথচ রাজা কে হল? ডানকানের ছেলে। তাহলে কি ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে হল? আমার ম্যাকবেথ কাহিনীর ভূমিকা পড়া বিদ্যেয় যা জানি, তা হল, শেক্সপিয়ারের সময় দর্শকদের কাছে ওটা কোনো সমস্যাই ছিলনা। কারণ সে সময় 'সাধারণজ্ঞান' ছিল, যে, পরবর্তীতে বঙ্কোর ছেলেরাই বংশপরম্পরায় রাজা হয়। কিন্তু 'সমসাময়িকতা' সে সুযোগ বিংশ বা একবিংশ শতকের স্রষ্টাদের নেই। ফলে তাঁরা নানাভাবে এই সমস্যাটার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। পোলানস্কির এই সুযোগ ছিলনা। তিনি হুবহু নাটকটাকেই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কুরোসাওয়া কে রাজা হল, ব্যাপারটাকেই উড়িয়ে দিয়েছেন। ম্যাকবেথের মৃত্যুতেই তাঁর গল্প শেষ। অন্যত্র, কোথাও এই ভবিষ্যৎবাণীটাকেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে, কোথাও অন্য কোনো সমাধান ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দারের ক্ষেত্রে কী হয়েছে? পোলানস্কির মতোই, মন্দারেও ডাব্লু তথা ডানকানের ছেলেই রাজা হচ্ছে। কেন, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। সিরিজের সিজন টু হলে (শেষ দেখে সেরকমই মনে হল) অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব, কিন্তু সেটা 'বেসড অন ম্যাকবেথ' হবেনা।
এটা উল্লেখ করা হল, এই কারণে, যে, শুধু এই দৃশ্যে নয়, গোটা সিরিজের প্রতিটি পর্বেই কাহিনীনির্মাতা এবং পরিচালককে প্রমাণ করে চলতে হয়েছে, তাঁরা এলেবেলে কিছু বানাচ্ছেননা। ম্যাকবেথ বানাচ্ছেন। এবং তাতে বাস্তবতাকে গুঁজছেন। বাস্তবতার কারণে ম্যাকবেথ ব্যবহার নয়, বরং ম্যাকবেথ করতে হবে, এইটা ধরে, তাতে সমকালীনতাকে গোঁজার চেষ্টা হয়েছে। তাঁরা কি মূল কাহিনী থেকে সরেননি? সরেছেন। কিন্তু তারপরই, নার্ভাস গায়ক যেমন ঝপ করে কোনোমতে সমে ফিরে আসে, তাঁরা ফিরে এসেছেন কোনো একটি ম্যাকবেথীয় অনুষঙ্গে। যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে, এটা যথার্থ ম্যাকবেথ নয়। এতে করে কাহিনী ঝুলেছে নানা জায়গায়, এমন অনেক জিনিস ঢুকে গেছে, যা না থাকলেও হত। বস্তুত সত্যবাদী কোনো ডাইনি না থেকে স্রেফ একটি পাগল, যে আটভাট বকে, কোনোটা মেলে কোনোটা মেলেনা, এমন হলে এ আখ্যানের মনে হয় উপকারই হত। কিন্তু ডাইনি রাখতে হয়েছে। কারণ ম্যাকবেথে আছে। এ অনেকটা কোটপ্যান্ট পরা রেস্টুরেন্টে গাঁয়ের লোকের নার্ভাসনেস। কেউ যেন না ভেবে বসে, আমি ইংরিজি জানিনা। আমি ম্যাকবেথ পড়িনি। ফলে, কেন ম্যাকবেথ, এই প্রশ্নানুসন্ধানটাই এখানে বাদ পড়ে গেছে। অথচ সত্যি বলতে কি, জরুরি প্রশ্ন সেটাই। ম্যাকবেথ কি আদৌ তার কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখে এই সময়কে ধরতে সক্ষম? এর সরাসরি হ্যাঁ-নাতে উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে যুক্তি বলে, তেমনটা হওয়া কঠিন। কারণ, ম্যাকবেথের কাহিনীটাই এমন, যাতে করে প্রথম থেকেই মনে হয়, সে পতনের জন্যই জন্মেছে। কুরোসাওয়া যেমন দেখিয়েছেন, সে রাজা হয়, নেহাৎই ঘটনাপরম্পরার ঘাত-প্রতিঘাতে, নিয়তির খেলায়। পতনেই এর শেষ হতে পারত। গণতন্ত্র এবং উপনিবেশ পত্তনের আগে, পৃথিবী সম্পর্কে, ট্র্যাজেডি সম্পর্কে, মানুষের সম্ভবত এইরকম ধারণাই ছিল। সেটা আজ আর নেই। কয়েকটা বিশ্বযুদ্ধ, লম্বা ঠান্ডা লড়াই এবং তারপর এই এককেন্দ্রিক দুনিয়া, আমাদের নৈতিকতার ধারণাকে বিলকুল বদলে দিয়েছে। আমরা এখন জানি, জানি মানে তথ্য নয়, মর্মে মর্মে জানি, হাড়ে হাড়ে জানি, ষড়যন্ত্রের নায়ক মাত্রেই বলিপ্রদত্ত নয়। আমরা জানি, ইরাক যুদ্ধটা মিথ্যে কথা বলে ঘটানোর পরও, সেসব ধরা পড়ে যাবার পরেও, তার নায়ক আরামকেদারায় বসে জ্ঞান বিতরণ করেন। আমরা জানি, কিম ফিলবি হোক, এলি কোহেন হোক, এমনকি হালের ড্রাগসম্রাট এসকোবার, এরা কেউকেউ ট্র্যাজেডির নায়ক হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কেউই বলিপ্রদত্ত ছিলেন না। এঁদের নিয়ে লেখা বা চলচ্চিত্র, ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন, তাতে এঁদের এই দিকটা পরিষ্কার করে তুলে ধরা থাকে। ম্যাকবেথ রাজা হয়ে একটা যুদ্ধও জেতেনা, কিন্তু 'বাস্তবধর্মী' আধুনিক ট্র্যাজেডির নায়ক একটাও যুদ্ধ না জিতলে তাকে নিয়ে লেখা বা সিনেমাই হবেনা। সে ততটা দুষ্টু হয়ে উঠতে পারেনি, যাতে সে ট্রাজেডির নায়ক হতে পারে -- এমনটাই ভাবা হবে। সমসময়ের এই তীব্রতা এবং নৈতিকতা ম্যাকবেথে নেই। ফলত ম্যাকবেথকে আক্রমণ না করে, ভেঙেচুরে না ফেলে, শ্রদ্ধায় নতমস্তক হয়ে থাকলে, তাকে নিয়ে সমসময়ের আখ্যান সম্ভব নয়।
সিএস | 103.99.***.*** | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১২:১৬501450
b | 14.139.***.*** | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১২:৪২501451
প্রতিভা | 2401:4900:1047:fc0:0:41:ea20:***:*** | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৩:০৮501454
Sobuj Chatterjee | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৩২501461
anandaB | 50.125.***.*** | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৫১501464
অনিন্দিতা | ২৭ নভেম্বর ২০২১ ২২:১৯501485
&/ | 151.14.***.*** | ২৮ নভেম্বর ২০২১ ০৪:২৭501489
আকাশ দীপ গগি বোস | 2402:3a80:a66:d90d:0:62:af68:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:১৫501805
Shibir | 106.2.***.*** | ০২ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৩৪502437
Neptune_Pluto | 45.125.***.*** | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০১:০৮504140